শত ডানার প্রজাপতি পর্ব -১৪+১৫

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৪

আমি পলকহীন চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । কি চায় এই লোক ? আমাকে নিজের স্ত্রী মানে না ,আমার কোনো কিছুতেই উনার আসে যায় না । তবে কেন এই জেলাসি ? আমার চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে আমি তখনো অগ্নির দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি । অগ্নির চোখজোড়াও আমার চোখের মাঝে ডুবে । হ্ঠাৎ ই অগ্নি রাগে পাশে দেয়ালে জোরে আঘাত করে চলে যায় । আমি ঠায় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছি । খুব বেশি যন্ত্রনা করছে বুকটায় । সব ভেঙে চিৎকার করে কান্না আসছে । আমি জানি অগ্নি তার অতীতের পিছুটানের কথা মনে করে বার বার আমার কাছে এসেও সরে যায় । এতে আমি উনাকে দোষ দিতে পারিনা । ভালোবাসা তো আর খানিকেই ভুলা যায় না। এটা যে এক কঠিন ব্যথী । এর জখমে মানুষের অন্তর সারাজীবন পোড়ায়।নিজের ভাগ্যের উপর খুব বেশি আফসোস হচ্ছে আর সুপ্তির উপর খুব বেশি ঈর্ষা । কেন আমার জীবনে অগ্নি আরো আগে এলো না ? কেন সুপ্তির প্রতি অগ্নির ভালোবাসা আমার ভাগে হলোনা ? আমার ঈর্ষা হওয়াটা কি স্বাভাবিক না ? আমার স্বামী যাকে আমি ভালোবাসি । তার সাথে এক ছাদের নিচে এক বিছানায় থেকে তার মনে আমার জায়গা নেই । সেখানে অন্যকারো বসবাস । আমিও তো মাটির তৈরি মানুষ ,কোনো দেবী নই !
শ্বাস আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে । আমার এখন খুব কান্নার প্রয়োজন । খুবই বেশি । না হয় বুকের ভারী বোজ কমবে না ।
ছাদে চলে যাই । পুরো বাড়ি ভরা মানুষ কারো চোখে পড়লে বিভিন্ন প্রশ্ন করবে । তার চেয়ে বরং আকাশ আর তার বুকে চাঁদ তারাকে স্বাক্ষর রেখে খোলা আকাশের নিচে নিজের অশ্রু জল বিসর্জন দেই ।
ছাদে দাড়াতেই অপর পাশ থেকে কোনো মেয়ের কান্নাজড়িত ফিসফিস আওয়াজ পাই । পুরো ছাদ অন্ধকারে ঘেরা । দূর থেকে কিছু বুঝা যাচ্ছে না । আমি স্পষ্ট ভাবে দেখার জন্য সেদিকে অগ্রসর হই । কিন্তু সেখানে যেয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিলাম না । মুহূর্তেই আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে যায় । অগ্নির বুকে মাথা ঠেকিয়ে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে আভরিন ।কান্না করতে করতে বলছে ,

– “অগ্নি ভাইয়া তুমি হুর কে ছেড়ে দেও আমাকে বিয়ে করে নেও । আই প্রমিজ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসবো । তোমার খুব খেয়াল রাখবো । আর ,আর সব সময় তোমার সাথে এভাবে জড়িয়ে থাকবো । আমাকে বিয়ে করে নেও না প্লিজ আমাকে বিয়ে করে নেও । ”

বলেই আভরিন কান্না করতে লাগে । অগ্নি চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে ।আভরিন অগ্নির কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বলতে শুরু করে,

– “আচ্ছা ঠি ক আছে বিয়ে করতে হবে না । আমাকে শুধু একবার নিজের করে নেও । হুর তোমার বউ হয়ে ঘরে থাকবে আর আমি বাহিরে কখনো তোমার থেকে কোনো অধিকার চাইবো না শুধু নিজের করে নেও ..”

আর শুনার মত শক্তি আর সাহস আমার মাঝে নেই। আর একটু কিছু শুনলে হয়তো আমি শ্বাস আটকিয়ে মরে যাবো । চোখ থেকে গলগল করে অশ্রু ঝড়ছে । আমি তাড়াতাড়ি করে সরে যাই। আভরিনের প্রত্যেকটা কথা আর বিহেভিয়ার দেখে মনে হচ্ছিলো ও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ না । তার সাইকো বিহেভিয়ারে তা স্পষ্ট বলে দিচ্ছিলো যে সে বিগড়ে যাওয়া মস্তিষ্কের একটা সাইকো পেশেন্ট ।

___________________

আমি বাগানের সাইডে পুকুরের পাড়ে দাড়িয়ে । এক মনে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি । পুকুর পাড়ের হাল্কা লাইটের আলোতে অনেকটাই স্পষ্ট । কিছুতেই নিজের চোখের জল থামাতে পারছিনা । কেন আমার সাথেই এমন হয় ? আমি যে পারছিনা অগ্নির সাথে অন্যকাউকে সয্য করতে ! আমার ভিতরে যে সব কিছু জ্বলে পুড়ে যায় । আমি জানি আভরিন যা করেছে তাতে অগ্নির কোনো দোষ নেই কিন্তু কেন জানো খুব রাগ হচ্ছে । আমার স্বামীর বুকে কেন ঐ আভরিন মাথা রাখবে ? ঐ জায়গা তো আমার তাই না ! যেখানে আমি আজ পর্যন্ত আমি মাথা রাখতে পারিনি আর ঐ আভরিন আমার আগেই সেই জায়গায় মাথা রেখে ফেলল? আমার রাগ জেদ কান্না সব একসাথে আসছে ।
এসব মনে করেই আমার কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায় ।
এমন সময়ই হ্ঠাৎ কেউ পিছন থেকে আমার হাত মুচড়িয়ে ধরে । সাথে সাথে হাতের চুড়ি গুলো মটমট করে ভেঙে হাতে ডুকে যায় । আমি প্রচন্ড ব্যথায় আহ করে চিৎকার দিয়ে উঠি ।পিছনের মানুষটা একজন মেয়ে । আর তা যে আভরিন ই আমি নিশ্চিত । এখানে আমার প্রতি এত রাগ ,ক্ষোভ শুধু একজনেরই তা হলো আভরিনের ।
আমার থেকে লম্বা আর স্বাস্থ্যবান হওয়ায় আমি নিজেকে তার থেকে ছাড়াতে পারছি না ।ঘাড় পিছনের দিকে ফিরিয়ে আভরিনের দিকে তাকিয়ে বলি,

– “এসব তুমি কি করছো তোমার মাথা ঠিক আছে তো ?”

আভরিন আমার হাত আরো জোরে পেচিয়ে বলে ,

– “একদম ঠিক আছে । আমি নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করছি । তুমি আছো বলেই অগ্নি আমাকে মেনে নেয় না তুমি না থাকলে ঠিক মেনে নিবে । ”

-“আভরিন প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো । ভালোবাসা জোর করে হয় না । আর আমি থাকি আর থাকি তুমি অগ্নিকে কখনো নিজের করে পাবেনা । প্লিজ এসব পাগলামী করোনা । ”

আভরিনের চোখে মুখে কেমন জানো অস্থিরতা পাগলামো ।চোখে কাজল লেপ্টামো । মুখে কেমন জানো হিংস্রতার ছায়া ।আশেপাশে তাকিয়ে বাজে ভাবে হাসি দিয়ে বলল ,

– “তোমাকে বলতে হবেনা আমি কি করবো না করবো । আমি আমার ভালো বুঝি । আমি জানি কি করে আমার পথের কাটা সড়াতে হয় । তুমি বিকেলে বলেছিলেনা তুমি পানিকে খুব ভয় পাও । সাঁতার জানোনা ? তোমার মৃত্যু এই পানিতেই হবে । অগ্নি যদি আমার না হয় আমি তাকে তোমারও থাকতে দিবো না । ”

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আভরিন আমাকে জোরে পানিতে ধাক্কা মারে । আমি পানির গভীরে পড়ি । আমি উঠার সর্বস্ব চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না । বার বার তলিয়ে যাচ্ছি । বাঁচার জন্য চিৎকার করছি কিন্তু কেউ নেই আসে পাশে । আভরিন ধাক্কা দিয়ে পালিয়েছে । আমি বেশ পানি খেয়ে ফেলেছি । আস্তে আস্তে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে গভীর পানিতে তলিয়ে যেতে লাগি । শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার । এটাই হয়তো আমার শেষ সময় আর কোনো দিন অগ্নির সাথে দেখা হবেনা । আস্তে আস্তে আমার ক্লান্ত শরীর পানির গভীরে তলিয়ে যায় ।

__________________________

জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটালের বিছানায় পাই । হাতে ক্যানোলা করা । অসয্য মাথা ব্যথা আর শরীর ব্যথা । হাত পা নাড়াতে পাড়ছি না ।
হ্ঠাৎ ই রাতের কথা মনে পরে যায় । আমি তো পানিতে ছিলাম এখানে কি করে আসলাম ? কে নিয়ে এসেছে ? মনে হাজারো প্রশ্ন জাগছে । আশেপাশে চোখ বুলাতেই দেখতে পাই অগ্নি আমার হাতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । চোখ গুলো ফুলে আছে । আমি হাত নাড়া দিতেই উনার ঘুম ভেঙে যায় ।ধরফর করে উঠে বসে । অস্থির হয়ে আমার গালে হাত রেখে একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলেন,

– “এখন কেমন লাগছে ? খুব খারাপ লাগছে কি ? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো ! ওয়েট আমি এখনি ডাক্টার কে ডেকে আনছি । ”

কথা শেষ করেই যেতে নেয় । আমি পিছন থেকে উনার হাত আটকিয়ে ফেলি । উনাকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে এই যে এই বুকে খুব ব্যথা করছে । আর এই ব্যথা আপনার ভালোবাসায় সেরে যাবে । কিন্তু তা বলতে পারিনা লজ্জা ভয় গলা চেপে ধরে ।
আমি কষ্ট করে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলি ,

– “যেতে হবে না আমি একদম ঠিক আছি । ”

উনি সস্থির নিশ্বাস ফেলে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে পরে । আমার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে মাথা নত করে তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে । আমি তার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে।উনি কিছু না বললেও । উনার নিরবতা অনেক কিছু বলছে ।
অগ্নির চোখ মুখ কালো মেঘে ভার হয়ে আছে । মনে হচ্ছে এইতো মাত্রই চোখজোড়া থেকে বৃষ্টি ঝড়বে ।টুপ করে এক ফোটা জল আমার হাতে উপর পরে । আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যায় ।
এই চোখের জল কেন ছিলো ? হারানোর ভয়ের ? নাকি ভালোবাসার অনুভূতির ?
আমার ভাবনায় ছেদ পরে সবার আগমনে ।এক এক করে বাহির থেকে সবাই রুমে ডুকছে । নানুজান সহ সবাই এসেছে । হিয়া আপু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয় । এই সময়ে এমন কান্নাকাটি আপুর জন্য একদম ভালো না । তাই অনেক কষ্টে আপুকে শান্ত করি ।
সবাই আমার হাল জিগ্যেস করছে । সবার সাথে আভরিনও এসেছে । এককোনায় দাড়িয়ে আছে । কিছুসময় পর অগ্নি কেবিনে আসে ।চোখ ভয়ংকর লাল হয়ে আছে ।
নানুজান আমার পাশে বসে আমার হাতে উপর হাত রেখে বললেন,

– “এখন কেমন লাগছে হুরবুড়ি ? ”

– “জি নানুজান ভালো । ”

– “এমন কি করে হলো ? পানিতে কি করে পরে গেলি ?আর এত রাতে কেন পুকুরপাড়ে গিয়েছিলি ? ”

– “আসলে নানুজান ইয়ে মা ..মানে ”

আমি কিছু বলতে পারছিনা । কি বলবো আভরিন আমাকে মারার চেষ্টা করেছে? মানবে সবাই আমার কথা ? যদি বাড়িতে বড় কোনো ঝামেলা হয়।তাহলে ? আমি তো চাইনা পরিবারে কোনো রকমের ফাটল ধরুক ।আর অন্তত আমার জন্য তো কখনোই না । আমি কিছু বলবো তার আগেই আভরীন বলে ,

– “দাদীজান আর কেন ইশান ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি ইশান ভাইয়া আর হুর কে পুকুরপাড়ে । একে অপরের খুব কাছাকাছি । তারা তো পুরো পার্টিতেও এক সাথে ছিলো সবাই দেখেছে ! ”

আমি আভরীনের কথায় যেন আকাশ থেকে পড়ি । এই মেয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার উপর এতো বড় অপবাদ দিতে পারলো ? এতো নিচ কেউ কি করে হয় ? আমি কান্না করতে লাগি । পাশ থেকে ইশান ভাইয়া রাগে চেঁচিয়ে বললেন ,

– “আভরিন কেন শুধু শুধু মিথ্যা বানিয়ে বলছো ? আমি পুকুরপাড়ে কখন ছিলাম? ”

আভরিন আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলল,

– “ছিঃ ভাইয়া আপনি মিথ্যা কেন বলছেন । আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনি হুর কে জড়িয়ে ধরে আছেন । ”

আমি কান্না করতে করতে বলি,

– “এসব কিছু মিথ্যা । বিশ্বাস করুন আমার সাথে ইশান ভাইয়া ছিলোনা ।আমার কথাটা একবার শুনুন ”

ছোট মামী আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলে ।সবার সামনে চেঁচিয়ে বললেন,

– “তোমার মত মিডেল ক্লাস মেয়েদের ন্যাচার সম্পর্কে জানা আছে ভালো করে । বড়লোক ছেলে দেখলেই রংঢং করে ফাসিয়ে ফেলো ! ”

মামীর কথা আমার কান্না আরো বেড়ে যায় । অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখি রাগে চোখ মুখ শক্ত করে আছে । তবে কি উনিও তাই মনে করে আমি ইশান ভাইয়ার সাথে ছিলাম । রাগ লজ্জায় আমি মাথা নত করে চোখের জল ফেলি ।
হ্ঠাৎ ই ঘর কাঁপিয়ে ঠাসস করে থাপ্পড়ের আওয়াজ কানে আসে । আমি সঙে সঙে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি । আভরিন নিচে পরে আছে । অগ্নি ভয়ংকর রেগে । উনার চোখ থেকে আগুনের ফুলকা বের হচ্ছে । অগ্নি আভরিনের কাছে যেয়ে আবার তার চুল টেনে উঠিয়ে আরেকটা থাপ্পড় মারে । কেবিনের কেউ অগ্নিকে আটকাতে পারছেনা । আমি হতবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে আছি ।
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৫

অগ্নি আভরিনের দিকে বার বার তেড়ে যাচ্ছে । তাকে মারার জন্য । কেবিনের সবাই তাকে ধরে বেঁধে রাখতে পারছে না । আশে পাশের মানুষজন ভিড় করেছে । আমার উঠে যাবার মত অবস্থা নেই । হাতে স্যালাইন চলছে । আমি বার বার চেঁচিয়ে অগ্নিকে থামতে বলছি কিন্তু কে শুনে কার কথা । ছোট মামী আভরীনের গাঁ ডাকা দিকে সামনে দাড়িয়ে আছে । অগ্নি চেঁচিয়ে বলছে ,

– “ওর সাহস কি করে হয় হুর কে এসব বলার ? ওর জিহ্বা আমি টেনে ছিড়বো ! ”

ছোট মামী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন ,

– “তোমার বউ রাতবেরাতে ছেলেদের সাথে ডলাডলি করবে আমার মেয়ে বললেই দোষ ?
আভরিন ভুল কি বলেছে ? ”

অগ্নি ধমকের স্বরে বললেন ,

-“ভুল কি বলেছে মানে ? হুরের সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার কিছু হন ।
আপনি আপনার মেয়ের কু কৃতীর সম্পর্কে সব জানেন । আপনার মেয়ে রাস্তার পতিতা থেকে নিচে নেমে গেছে ।
আপনার মেয়ে কাল রাতে হুরকে পানিতে ধাক্কা দিয়েছে । আমি ছাদ থেকে নিজ চোখে সবটা দেখেছি । আমি যখন দেখি ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে । আমি উপর থেকে চিৎকার করে আভরিনকে থামতে বলেছি কিন্তু আপনার সাইকো মেয়ের কানে পৌছায়নি ।”

অগ্নির কথা শুনে আমি স্থব্দ হয়ে যাই । তার মানে উনি কাল ছাদ থেকে সবটা দেখেছে ? অগ্নি আভরিনের দিকে রক্তচক্ষু তে তাকিয়ে আঙুল নাড়িয়ে বললেন ,

– “তোর সাহস কি করে হয় আমার বউয়ের উপর হাত দেওয়ার ? আবার এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিস ? আমার বউ কি তোর মত রাস্তার পতিতা ? তুই কি ভেবেছিস হুরকে মেরে ফেললেই আমি তোকে মেনে নিবো ! তুই তা ভাবলি কি করে ? দুনিয়ার শেষ মেয়ে হলেও তো আমি তোকে মেনে নিবো না । ক্যারেক্টারলেস মেয়ে একটা ।

আভরিন ন্যাকা কান্না করতে করতে বললেন ,

– “আমার মাঝে কিসের কমতি আছে ? আমি কি সুন্দর ,শিক্ষিত ,স্মার্ট না?
আমার বাবার অনেক টাকা আছে । এই মেয়ের রুপ ছাড়া আর কি আছে ? ”

অগ্নি আভরিনের কথায় আরো বেশি রেগে যায় ।

– “তুই নিজের তুলনা কি করে হুরের সাথে করিস ?তোর এখনো এতো সাহস কি করে হয় এইসব কিছু বলার ?
হুরের পায়ের নখের যোগ্যতা ও তোর নেই ।সারাজীবন সকাল বিকেল হুরের পা ধোয়া পানি খেলেও তার মত হতে পারবিনা ।
আমি কাল রাত থেকে নিজের রাগ জিদ কে চেপে ধরে চুপ ছিলাম । শুধু হুরে জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় । আমার এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে তোকে কুচিকুচি করে কেটে কুকুর কে খাওয়াতে । ”

অগ্নির মুখে বার বার বউ ডাক শুনে মনে এক অন্য অনুভূতি শিহরণ করছিলো ।প্রত্যেকটা ডাক বুকে যেয়ে লাগছে ।
আমি ভেবেছিলাম হয়তো অগ্নি আমাকে ভুল বুঝবে । আমার জন্য যে অগ্নি এমন স্টেপ নিবে সত্য আমি ভাবতে পারছিলাম না ।
ছোট মামা অগ্নির কাছে এসে তার সামনে হাত জোর করে দুঃখী গলায় বললেন,

– “আভরিন যা করেছে তার জন্য আমি সত্যি খুব লজ্জিত । বাবা এবারের মত আভরিন কে ক্ষমা করে দেও । তুমি তো জানোই ও ছোট থেকে কত জেদি। এবারের মত ওকে ক্ষমা করে দেও । ”

অগ্নি রাগে ফুসতে ফুসতে বললেন ,

– “এই আপনাদের এই আস্কারার জন্যই ও এতো বেড়েছে । স্যরি টু স্যা মামা আপনারা আপনাদের মেয়েকে মানুষ করতে পারেনি । আস্ত অমানুষ হয়েছে । আর আভরিন তুই আমার থেকে আর আমার বউ থেকে একশো হাত দূরে থাকবি । তোর জন্য লাস্ট ওয়ার্নিং । ”

নানুজান সব শুনে বুকে হাত দিয়ে বসে আছে ।আভরিনের এমন কাজ নানুজানকে খুব লজ্জায় ফেলে দিয়েছে । বাড়ির সবাই অগ্নির রাগের সামনে মাথা নত করে চুপ হয়ে আছে । অগ্নির রাগ সম্পর্কে ছোট বড় সবার বেশ ভালো ধারনা আছে । অগ্নি সবাই কে জানিয়ে দেয় আমরা আর ঐ বাড়িতে ফিরছে না । হসপিটাল থেকেই ঢাকার জন্য রওনা হবে । তা শুনে নানুজান কান্না শুরু করে দেয় । সবাই অগ্নিকে বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু অগ্নি শুনতে নারাজ । ইয়াশা আপু খুব করে রিকোয়েস্ট করছে কিন্তু কে শুনে কার কথা । অগ্নি নিজে সিদ্ধান্তে অটল ।
এক এক করে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায় । আপু আর অগ্নি আমার পাশে বসে । এখনো রাগে ফসফস করছে ।
পরিস্থীতি খুব বাজে মোর নিচ্ছে দেখে আমি অগ্নিকে বললাম,

– “শুনুন না প্লিজ এমন করবেন না । কাল যা হয়েছে তা তো আভরিন করেছে এতে বাকি সবার দোষ কোথায় । প্লিজ এমন জিদ করবেন না । ”

উনি ঝাঁঝালো গলায় বললেন,

– “যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো ? ”

– “আমার কিছু হয়নি তো । এই দেখেন আমি একদম ঠি ক আছি । কিছুক্ষণ পর দৌড়াতে পারবো । ”

– “আমার সাথে ফাইজলামি করছো ? তোমার মনে হচ্ছে আমি ফাইজলামো করার মত মুডে আছি ? ”

আমি মাথা দু পাশে দুলিয়ে উত্তর দিলাম ,

– “না না একদম না । আপনি তো সবসময়ের মত একদম সিরিয়াস মুডে আছেন । আমি কি স্বাদে আপনার নাম রাক্ষসরাজ দিয়েছি ? ”

উনি আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালেন । আমি ছোট ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললাম ,

– “ডোন্ট মাইন্ড আমি তো এমনিতেই মজা করছিলাম । আচ্ছা এসব ছাড়ুন শুনুন আমার কথা । ”

উনি আমার দিকে গোমরা মুখ করে তাকিয়ে আছে । আমি সেদিকে খুব একটা তেক্কার না করে আদুরে গলায় বলি ,

– “শুনুন না প্লিজ ! ”

– “হুম বলেন ,কি শুনাবেন ! ”

– “আমরা ইয়াশা আপুর বিয়ে পর ঢাকায় ফিরবো । প্লিজ না করতে পারবেন না । আপু সহ সবাই কত আশা নিয়ে আছে । যদি আমরা ঢাকায় ফিরে যাই তবে বিয়ে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে । প্লিজ আপনি এমন কিছু করবেন না । প্লিজজ্জ!!! ”

কথা শেষ করে আমি ঠোঁট উল্টিয়ে উনার দিকে চাতক পাখির মত তাকিয়ে আছি । উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় । আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই । নাচতে ইচ্ছে করছে যদি তা এই মুহূর্তে সম্ভব না ।আমি জানি উনি আমার কথা ফেলতে পারবে না । কারণ উনার অন্তর আত্মা তার অনুমতি তাকে দিবে না । না মানে এদমই দিবে না । এতো দিনে উনার সাথে থেকে এতোটুকু তো উনাকে চিনেছি ।
শত হোক আমিও তো আমার রাক্ষসরাজের হুররানী ।

_____________________________

আমি বেডে গাঁ হ্যালিয়ে বসে আছি । আপু আমার পাশে বসে আছে ।আপুর ডাকেতে আমি চোখ খুলি । আপু আমার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন ,

– “হুর একটা কথা বলবো ? ”

– “আপু অনুমতির কি আছে ? যাস্ট বলে ফেলো । ”

– “কাল আমার মনের অনেক বড় এক বোজ হালকা হয়েছে । তোর বিয়ের পরের দিন যেদিন আমরা বাড়িতে যাই আপুর সাথে তোর সেদিন ঝামেলা হওয়ায় জানতে পারি মা তোকে বিয়েতে ব্লাকমেইল করে বাধ্য করেছে । নিজেকে ভিতরে ভিতরে খুব অপরাধী মনে হয়েছিলো । আমার জন্য তোর জীবন নষ্ট হয়েছে । কিন্তু কালকের পর বুকের সব বোজ হালকা হয়েছে । মনে হচ্ছে যা হয়েছে ভালো হয়েছে । তুই এক পারফেক্ট লাইফপার্টনার পেয়েছিস । যে তোকে খুব ভালোবাসে আর সম্মান করে । কাল আমরা কেউ জানতাম না তুই পুকুকে পরেছিস অগ্নি ভাইয়ার চিৎকার চেঁচামেচি তে আমরা বাহিরে বেরিয়ে এসেছে । এসে দেখি অগ্নি ভাইয়া পাগলের মত তোকে ডেকে যাচ্ছে ।বিলাপ করছে । নিজের কোলে করে হসপিটাল পর্যন্ত নিয়ে আসে । এক সেকেন্ডের জন্যও নিজের থেকে তোকে আলাদা করে না । গাড়িতেও তোকে কোলে নিয়ে ছিলো । হসপিটালে সারারাত একপায়ে এই ভেজা কাপড়ে কেবিনের সামনে দাড়িয়ে ছিলো । জ্ঞান ফিরার আগ পর্যন্ত ছটফট করছিলো । বার বার ডাক্টারকে বার বার শুধু একটা কথা বলে যাচ্ছিলো ‘আমার হুরের জ্ঞান ফিরবে কখন ? আমার হুর ঠি ক আছে তো ? ‘ ”

আপুর কথা শুনে আমি স্থব্দ হয়ে বসে আছি । আপুকে কি বলবো বুঝতে পারছি না । আমার কি বলা উচিত আপুকে ? চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে । আর তা কষ্টের না ! তা পরম আনন্দের ।

(জানি পার্টটা ছোট হয়েছে । ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না । অনেকককক ব্যস্ততার মাঝে লিখেছি । নেক্সট পার্ট বড় করে দিবো )

চলবে …….❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here