শর্ত পর্ব -০৩

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৩

-“হোয়াটস রং উইথ ইউ?”

শিশিরের বলা কথায় রাত বলতে লাগলো,

-“আপনি শুধু টাওয়াল পেঁচিয়ে দরজা খুললেন কেন?বেশরম।”

-“হোয়াট বেশরম!”(রেগে)

-“ইয়েস বেশরম।ছিহ।আক্কেলহীন।”

তাড়াতাড়ি করে বলেই রাত শিশিরের দিকে না তাকিয়ে সায়ানের একপাশে গিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। শিশির সেদিকে তাকিয়ে ভাবলো,

-“পাগল নাকি!”

বেশ কিছুক্ষণ শাওয়ার নিয়ে বের হলো শিশির। বিছানার দিকে তাকিয়ে অবাক হলো সে।রাত লম্বা হয়ে শুয়ে ঘুম। বুকের ঠিক উপরে সায়ান।সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে আছে রাত। যেন না পড়ে। সায়ানও নিশ্চিন্তে ঘুম। এমন দৃশ্য শিশির আজ অবধি দেখেনি। মিতালি কখনো এভাবে বুকে নিয়ে ঘুমায়নি সায়ানকে। কাত হয়ে নিতো।কিন্তু কখনো রাতের মত এভাবে নেয়নি। আর পরের ছেলেকে তো না ই। তবে কি রাত মিতালির মত নয়!শিশির শুধু শুধু সেদিন কষ্ট দিয়ে ফেললো না তো রাতকে?শিশির মন ভরে দৃশ্য টা দেখছে।ফোন বের করে একটা ছবি তুলে নিলো। তারপর নিচে চলে গেল খাবার খেতে।

চৈতী বেগম ছেলের অপেক্ষায় এতক্ষণ টেবিলে বসে ছিলেন। ছেলেকে নামতে দেখে বললেন,

-“খেয়ে নে।”

শিশির মাথা দুলিয়ে বললো,

-“তুমি খেয়েছো?কেয়া?”

-“হুম সবাই খেয়েছে।”

শিশির আর কিছু না বলে াওয়া শুরু করলো। চৈতী বেগম ছেলের সামনে বসে বলতে লাগলেন,

-“আজকে না গেলে হত না?”

-“কোথায় মা?”(খেতে খেতে)

-“কলেজে।”

হাত থেমে গেল শিশিরের। খাবারের মধ্যেই হাত ধুতে ধুতে বললো,

-“বাহিরের মানুষের কথা ভেবে ঘরে বসে থাকার মত ছেলে আমি না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।”

চৈতী বেগম তাড়াতাড়ি করে উঠতে উঠতে অস্থির হয়ে বললেন,

-“খাবারটা নষ্ট করলি কেন?”

-“খেতে ইচ্ছে করছে না। ”

বলেই শিশির উপরে চলে গেল।চৈতী বেগম সেদিক পানে তাকিয়ে ভাবলেন,

-“নাহ!খাওয়ার সময় কথাগুলো তোলা উচিত হয়নি। ছেলেটা আমার না খেয়েই চলে গেল।”

রুমে এসে কিছুক্ষণ পায়চারী করতে লাগলো শিশির। আর ভাবতে লাগলো,

-“মা কেন এসব বলছে!আমার তো এখানে কোনো দোষত্রুটি নেই। যা করেছে, সবটাই মিতালি।আর ভালোই হয়েছে ও চলে গেছে। ওর মত মেয়ের থাকার থেকে না থাকাই ভালো।”

ভাবতে ভাবতে শিশিরের রাগ আরো বাড়তে লাগলো। মনে পড়তে লাগলো মিতালি আর নুশানের ঢলাঢলি করা আলাপগুলো। যেগুলোর জন্যে শিশির খুব রেগে ছিল।কিন্তু ওর মিতালির উপর আস্থা ছিল।তাই কখনো সরাসরি কিছু বলেনি।শিশির বাসায় না থাকায় নুশান অনেক সময়ই আসতো মিতালীর সাথে গল্প করতে। এমনই একদিন শিশির খুব তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে। ডুব্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পায় মিতালি আর নুশান অনেকটাই কাছাকাছি বসে চায়ের কাপ হাতে টিভি দেখতে ব্যস্ত। শিশির এগিয়ে গিয়ে হালকা কাশতেই মিতালী কিছুটা দূরে বসলো। চেহারায় ভয় স্পষ্ট। জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“ত..তুমি!এত তাড়াতাড়ি চলে এলে।”

শিশির রাগ কমাতে হাত ঘষতে ঘষতে বললো,

-“কেনো!খুশি হওনি?”

মিতালী কিছু বলার আগেই নুশান বলে উঠলো,

-“আরে ইয়ার। আমি এসে তোকে পেলাম না। তাই ভাবলাম ভাবীর সাথেই গল্প করি। তাই না ভাবী?”

মিতালী মাথা নাড়ায়। শিশির একবার মিতালী আর একবার নুশানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“কেন নুশান,তুই জানিস না যে আমি রাতে বাড়ি ফিরি?”

নুশান কি বলবে বুঝতে না পেরে হাসতে হাসতে শিশিরের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,

-“আমার কি অতো খেয়াল ছিল দোস্ত!”

-“ইদানিং তো তোর আমার বাসা ছাড়া কিছুই খেয়াল থাকে না নুশান।”

সেদিন মিতালির উপর বেশ ক্ষিপ্ত ছিল শিশির।কিন্তু বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে কোনো চেচামেচি করেনি।নুশানের সাথে মিতালির দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠতেই শিশিরের কপালের রগ ফুলে উঠলো। সামনে থাকা পানির গ্লাসটাকে চাপ দিতেই ভেঙে হাতে ঢুকে গেল। শব্দে উঠে গেলো রাত। সায়ানকে আগলে বিছানায় শোয়াতেই চোখ পড়লো সামনে। শিশিরের হাত থেকে টপ টপ করে রক্ত মাটিতে পড়ছে।চোখ বড় বড় হয়ে যায় রাতের। তাড়াহুড়া করে উঠে শিশিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগে,

-“এটা কিভাবে হলো স্যার?”

শিশির ভাবলেশহীন ভাবে ফ্লোরে তাকিয়ে। রাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে পাশে বসলো। হাত ধরে টান দিলো শিশিরের। ছাড়িয়ে নিলো শিশির।রাত জোর করে টেনে নিলো। শিশির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। রাত হাত থেকে কাচগুলো সাবধানে তুলতে লাগলো।কিন্তু শিশিরের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই।রাত রক্ত মুছে ঔষধ লাগাতে লাগাতে বললো,

-“ইশ, জ্বলছে তাই না?”

শিশির তখনো রাতের দিকে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। রাত হাতটা ব্যান্ডেজ করতে করতে বললো,

-“আপনার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। আপনার সাথে যা হয়েছে তা মোটেও ভালো হয়নি। এমনকি এই ছোট্ট বাচ্চাটা!ওকে দেখলে আমার কলিজা মোচর দিয়ে উঠে। ভীষণ মায়া হয় ওর জন্যে। ”

-“….”

-“কিন্তু আপনি যদি এখন এসব রাগ নিজের উপর দেখান তাহলে বাচ্চাটারও ক্ষতি হবে আর আপনারো। আপনার উচিত নিজের বাচ্চাকে আগলে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। এভাবে নিজেকে কষ্ট না দেয়া!বাচ্চাটা যদি এসব শব্দে উঠে পড়ত?কান্না করতো?”

শিশির ঠাণ্ডা গলায় বললো,

-“নিজেকে সামলানো এতই সহজ?”

-“না সহজ না। আমিও আপনার জায়গায় থাকলে পারতাম না।কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে।চেষ্টা না করলে তো হবে না। আল্লাহ খারাপকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এটার জন্যে শুকরিয়া আদায় করুন। কিন্তু এভাবে বসে রাগ করা,কান্না করাটা বোকামি।আর আপনি আমার স্যার হয়ে এমন বোকামি করবেন বুঝি?আশা রাখি না।”

রাত শিশিরের হাতটা শিশিরের কোলে সুন্দর করে রেখে মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল। শিশির হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,

-“রাতের উপর রাগ দেখানোটা উচিত হয়নি গতকাল।সরি বলতে হবে ওকে।”

কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় রাত। শিশির সায়ানকে আদর করছিলো। রাতকে বের হতে দেখে উঠে দাঁড়ালো। রাতের চোখে আবছা জল বোঝা যাচ্ছে। শিশির বেশ অবাক হলো। রাত মুচকি হেসে বললো,

-“আপনি এখানে ঘুমিয়ে পড়ুন৷ আমি সোফায় শুই।”

বলেই রাত চাদর নিয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ পিছন থেকে শিশির বলে উঠলো,

-“রাত দাঁড়াও।”

রাত দাঁড়িয়ে গেল।পিছনে ঘুরে বললো,

-“জ্বী?”

শিশির রাতের দিকে এগিয়ে এলো। তারপর বললো,

-“কিছু বলার ছিলো তোমায়।”

-“হুম?”

শিশির দু মিনিটের মত চুপ রইলো।রাতও ঠায় দাঁড়িয়ে। শিশির কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

-“গতকাল রাতে তোমায় এতগুলো কথা বলেছি।”

বলেই থামলো শিশির। রাত জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“আরে না।আমি কিছু মনে করিনি। আমিই আপনাকে বারবার বিরক্ত করছিলাম।যে কারোরি রাগ হওয়ার…”

আর কিছু বলার আগেই শিশির কাঁপা গলায় বললো,

-” স..সরি রাত।”

রাত অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,

-“সরি বলতে হবে না। আপনি মিথ্যা তো বলেননি।”

-“সরি। আ’ম রিয়ালি ভেরি সরি রাত। আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। আমার বোঝার দরকার ছিল যে তোমারও কষ্ট লাগতে পারে। কিন্তু এদিকে তোমার কোনো দোষ নাই।”

রাত কি বলবে বুঝতে পারছে না।শিশির আবারো কাঁপা গলায় বললো,

-“পারলে এই বাজে মানুষটাকে ক্ষমা করে দিও।”

বলেই শিশির সেখান থেকে চলে গেল বারান্দার দিকে। রাত সেদিকে তাকিয়ে রইলো। আর ভাবলো,

-“মানুষটা তো খারাপ না।রেগে এতকিছু বলেছিল।”

রাত বারান্দায় এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

-“নিজেকে বাজে বললেন কেন?”

শিশির ঠাণ্ডা গলায় বললো,

-“বাজেই তো। আমার সাথে থাকা যায় না তো।”

-“কে বলেছে কথাটা?”

-“কিছু জিনিস বুঝে নিতে হয়।”

রাত এগিয়ে গেলো শিশিরের দিকে। শিশিরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,

-“কিছু চ্যালেন্জ দিবো শুনবেন?”

-“কিসের?”(ভ্রু কুঁচকে)

রাত নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর বলতে লাগলো,

-“প্রথম চ্যালেন্জ হলো, মাত্র কয়েকদিনের মাথায় মিতালি আপু ব্যাক করবেন।”

-“মানেহ!”(রেগে)

-“হ্যা। ফিরবেন। অবশ্যই ফিরবেন।”

-“কিন্তু ওকে মেনে নিবো না কখনোই। আর ডিভোর্স প্যাপারে সাইন করে গেছে ও। এসব প্ল্যান ছয়মাসেরও আগে থেকে আমার বিরুদ্ধে।”

-“মেনে নিবেন না সেটা আমিও জানি।কিন্তু উনি ফিরবে এটা মনে রাখবেন। ”

-“ফিরবেও না।”(শান্ত গলায়)

-“এনি রিজন?”

-“নুশানকে রেখে কেন আসবে?”

-“আসবে। আমার চ্যালেন্জ এটা।”

-“আচ্ছা!দেখা যাক।”(বাঁকা হেসে)

-“আমার সেকেন্ড চ্যালেন্জ হলো আপনি নিজে আমাকে বলবেন আপনার ফ্যামিলিকে আগলে রাখতে,আপনার কাছে থেকে যেতে। আজীবন।”

-“হোয়াট!”(চেঁচিয়ে)

-“ইয়াহ।”

-“ইম্পসিবল।”(অন্যদিকে তাকিয়ে)

-“আর লাস্ট চ্যালেন্জ হলো,খুব তাড়াতাড়ি আপনি আমাকে নিজের বউ হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন মিঃ শিশির চৌধুরী। ”

শিশির রাগ কন্ট্রোল করে বললো,

-“রাত! আমার সাথে জড়িয়ে নিজের জীবন নষ্ট করিও না। পরিস্থিতি ঠিক হলে আমি তোমায় ডিভোর্স… ”

শিশির বলতে বলতে রাত শিশিরের মুখে হাত দিয়ে বললো,

-“আমার বিয়ে একজনের সাথেই হয়েছে। অনেক ভাবলাম, আল্লাহ যার সাথে জুড়ে দিয়েছেন,তাকে ছাড়া সম্ভব নয়।”

শিশির আর কিছু না বলে রুমের দিকে পা বাড়ালো। সে রাতের সাথে কথা বলতেই চায় না। একটু ভালো ব্যবহার করেছে বলে রাত একদম মাথায় উঠে যাচ্ছে। শিশিরকে চ্যালেন্জ দিচ্ছে ও।শিশিরকে!একটা চ্যালেন্জও পূরণ হতে দিবে না শিশির। নেভার!

চলবে….

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন☺️💌)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here