#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই(১৩)
সকাল থেকেই ঝলমলে রোদ।গাছের পাতায় সূর্যের আলো পড়তেই কেমন চকচক করছে সোনার মতো। শালুকদের বাড়িতে আজ রান্নার আয়োজন হচ্ছে বাবুর্চি দিয়ে।
আজকে আফিফার এনগেজমেন্ট।
দুই দিনেই আফিফার চেহারা অন্যরকম হয়ে গেছে।কেমন মলিন হাসছে আফিফা।শালুকের ভীষণ কষ্ট হলো আফিফার জন্য।এতো ভালোবাসলো কেনো আফিফা জহির ভাইকে!
পরক্ষণেই শালুকের মনে হলো সে কি আদনান কে ভালোবাসে নি?তাহলে তার কেনো এমন হয় নি অবস্থা?
সে কেনো পারে নি আফিফা আপার মতো আদনান ভাইয়ের মুখোমুখি হতে?বরং ধ্রুব ভাই বুঝিয়ে বলার পর থেকে শালুকের মাথা থেকেই বের হয়ে গেছে আদনানের ব্যাপারটা।
তবে শালুকের কি এটা ভালোবাসা ছিলো না?
মাথার মধ্যে শালুকের এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে লাগলো। কাকে জিজ্ঞেস করবে এই প্রশ্নের জবাব সে?
নিকটাত্মীয় কয়েকজনকে দাওয়াত করা হলো এনগেজমেন্টে।দুপুরের দিকে পাত্রপক্ষ এলো। আফিফাকে সাজাতে বসলো শাপলা শালুক আশা দিবা নয়না মিলে।আফিফার বিবর্ণমুখ কিছুতেই উজ্জ্বল হলো না এতো সাজের পরেও।
শালুকের বুক কাঁপতে থাকে। আফিফা আপা সুখী হবে তো!
শালুক সাজতে বসে থেমে গেলো। কেনো জানি সাজতে ইচ্ছে করছে না।সেদিন ধ্রুব ভাই বলেছিলো সাজলে ওকে নাকি জংলীদের মতো লাগে।তাকে যে সজারুর মতো লাগে তা তো শালুক বলে নি।
নিজেই হেসে ফেললো শালুক নিজের মিথ্যে কথায়।ধ্রুব ভাইকে কখনোই সজারুর মতো লাগে না। শ্যাম বর্ণের মায়াবী চেহারার মানুষটাকে দেখলেই অন্যদের থেকে আলাদা মনে হয়।
পাঞ্জাবী পরে,টুপি মাথায় দিয়ে যখন মসজিদ থেকে আসে,ধ্রব ভাইকে মনে হয় পৃথিবীর শুদ্ধতম পুরুষ।
শত্রুর ও সাধ্য নেই ধ্রুব ভাইকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার।মাঝেমাঝে শালুকের ভীষণ গর্ব হয় যখন ক্লাসে স্যারেরা ধ্রুবকে উদাহরণ হিসেবে দেখায়।শালুকের ইচ্ছে করে চিৎকার করে সবাইকে বলতে, “সে আমার ধ্রুব ভাই, আমার দেখা সেরা পুরুষ, শুদ্ধতম পুরুষ সে।”
যদিও কখনো ধ্রুবর সামনে এসব স্বীকার করে না কিন্তু ধ্রুবর মন খারাপ হলেই শালুকের এসব মনে পড়তে থাকে।
সাজলো না শালুক।সুতি একটা জামা গায়ে দিয়ে একটা কালো রঙের হিজাব পরে নিলো। বাগানে স্টেজ করা হয়েছে,বসার ব্যবস্থা ও বাগানে করা হয়েছে।
সকাল থেকে শালুক আর সেদিকে যায় নি।কিন্তু এখন সবাই মিলে নিচে গিয়ে অবাক হলো।
সবকিছু কেমন যেনো বেখাপ্পা লাগছে।সুন্দর করে সাজানো হয় নি কিছুই।
আফিফাকে নিয়ে আসা হলে আফিফার ও মন খারাপ হয়ে গেলো।
একে তো তার মনে ভীষণ কষ্ট তার উপর এমন মরা মরা সাজ দেখে মন আরো খারাপ হয়ে গেলো। কোনোমতে প্যান্ডেল করে চেয়ার টেবিল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে যেনো।
আশা এই প্রথম বাংলাদেশের বিয়ে দেখছে।সে নিজেও অবাক।এদের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান এভাবে করা হয়!
কোনো ডেকোরেশন নেই,কেমন কেমন যেনো।
আফিফাকে সেই কথা জিজ্ঞেস করতেই আফিফা মন খারাপ করে বললো, “আমার কপাল খারাপ আশা।একে তো বিয়ে হচ্ছে যাকে আমার অপছন্দ তার সাথে।তার উপর ধ্রুব ও নেই।আজ যদি ধ্রুব থাকতো তাহলে দেখতে সব কিছু ম্যাজিক করে চেঞ্জ করে ফেলতো।আমার এমনই পোড়া কপাল যে এরকম সময়ে ধ্রুব ও চলে গেলো। ”
সমবয়সী হওয়ায় আফিফা ধ্রুবকে নাম ধরেই বলে।
আশা বুদ্ধি করে সবকিছুর ছবি তুলে ধ্রুবকে পাঠালো।সেই সাথে শালুকের ছবিও।
তারপর আদনানকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এভাবে এনগেজমেন্ট হচ্ছে কেনো?তুমি বড় ভাই আছো কেনো তাহলে? এসব সাজানোর রেসপনসেবলিটি তোমার না?”
আদনান বিরক্ত হলো। কবে আশাকে বিয়ে করতে পারবে তার মাথায় সেই চিন্তা এসব নিয়ে ভাবার সময় কই তার?
তাছাড়া এসব কিছু আদনান বুঝে ও না ভালো। সে এসব কাজকর্মের সময় পিছুটান দেয়।
আশা ধ্রুবকে কল দিয়ে বললো, “ধ্রুব,আফিফার ভীষণ মন খারাপ। ওর বিয়েটা একেবারে যাচ্ছেতাইভাবে হচ্ছে। ”
ধ্রুব জবাব দিলো না। কি বলবে সে?তার নিজের ও কি খারাপ লাগছে না?কিন্তু কি করার আছে তার এখন?
পাত্রপক্ষের কয়েকটি ছেলে আশাকে দেখে কথা বলার জন্য উৎসুক হয়ে গেলো। আশা সবার সাথে হাই হ্যালো করলো। কয়েকজনের সাথে সেলফি তুললো। দূর থেকে এসব দেখে আদনানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে আশাকে ক্যারেক্টারলেস বলে গালি দিয়ে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেলো নিজের রুমে।
আশা অবাক হলো আদনানের এই ব্যবহারে। তবুও কিছু বললো না। সে দেখতে চায় আদনান কি করে!পুরোটা সময় আদনান আশাকে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে রইলো।
মেহমানদের খাবার সময় আরেক ঝামেলা হলো। পাত্রপক্ষ খাবার আগে কনেপক্ষের দাওয়াত করা মেহমানেরা খেতে বসে গেলো। এই নিয়ে পাত্রপক্ষ রেগে আগুন হয়ে গেলো। নুরুল ইসলাম সাহেব সবাইকে কোনোমতে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠান্ডা করলেন।এরমধ্যে অনেকে অনেক কথা বলে ফেললো।
আদিবা বেগম বিপদ টের পেয়ে ধ্রুবকে কল দিলেন।এই দুই দিন ধ্রুব যদিও বাড়ির কারো কল রিসিভ করে নি আশা ছাড়া তবে এই মুহূর্তে বড় চাচীর কল রিসিভ না করে পারলো না।
আদিবা বেগম ধ্রুব কল রিসিভ করতেই হঠাৎ করেই ইমোশনাল হয়ে গেলেন।না চাইতেই কান্না চলে এলো তার। কান্নাজড়িত স্বরে ধ্রুবকে বললেন,”বাবা তুই কই?এদিকে তো মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার। তোর পায়ে পরি বাবা তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়।তোর বোনের বিয়েটা নয়তো ঝামেলাহীনভাবে হবে না।তোর বড় ভাই গাধা কোথায় গিয়ে বসে আছে। এদিকে পাত্রপক্ষ রাগারাগি করছে তাদের আগেই আমাদের দিকের মেহমান খেতে বসে গেছে বলে। ”
“আমি আসছি” বলে ধ্রুব দৌড়ে বাসা থেকে বের হলো। ধ্রুব উঠেছে তার এক বন্ধুর বাড়িতে।পরনের কুঁচকানো শার্ট, প্যান্ট পরেই ধ্রুব দৌড়ে এলো। রাস্তায় এসে একটা রিকশা পেয়ে লাফিয়ে উঠে বললো,”চাচা,তালুকদার বাড়ি চলেন।”
মোটরচালিত রিকশায় বাড়ি আসতে ধ্রুবর ১৫ মিনিট লাগলো।
পাত্রপক্ষ খেতে বসলো কিন্তু দেখা গেলো খাবার সার্ভ করার সময় মেয়েপক্ষের কেউ নেই।
বাবুর্চিদের লোকেরা তো আর বেড়ে দিবে না,তাদের কাজ টেবিলে খাবার পৌঁছে দেওয়া খাবার শেষ হয়ে গেলে।তাদের কাজ হচ্ছে ঢিমেতালে।
এদিকে মেয়ের বাবা,চাচা,দাদাকে বসতে হলো ছেলের চাচা,বোনের জামাই,মামা,ফুফাদের সাথে। তারা উঠে কিছু করতেও পারছেন না।ওদিকে আদিব,আকিফ,জাবির,দিব্য ছোট মানুষ। কাকে কোন আইটেম এগিয়ে দিবে তারা কিছু বুঝতে পারছে না।দেখা যায় সবাই মিলে এক টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অন্য টেবিলগুলোতে কেউ নেই। এই টেবিল থেকে একজন বলছে এখানে মাংস নেই তো ওই টেবিল থেকে বলছে কাচ্চি নেই।
কারো টেবিলে বোরহানি নেই।
আদনানও নেই এখানে।সব কেমন বিশৃঙ্খল হয়ে গেছে। মেয়ে পক্ষের মেহমান যারা ছিলো তারা খেয়ে দেয়ে ঘরে গিয়ে বসে আরাম করছে।লজ্জায় শালুকের দাদার মাথা নিচু হয়ে গেলো।
শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ধ্রুব খাসির মাংসের বাটি নিয়ে এগিয়ে এলো যেই টেবিলে পাত্রপক্ষের মামা চাচা দুলাভাইসহ প্রধান অভিভাবকেরা বসেছে।
সবার প্লেটে খাসির মাংস বেড়ে দিলো,ডেকোরেটরের লোকদের ডেকে কড়া গলায় হুকুম দিলো সবাই একটা একটা করে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য।যা শেষ হবে তা যেনো দ্রুত নিয়ে আসে।
পাত্রের দুলাভাইদের প্লেটে ডাবল রোস্ট তুলে দিয়ে হালকা হাসিমশকরা করার সাথে সাথে নিজের ভাই সবাইকে ডেকে বললো সবাই যেনো একটা একটা টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে কার প্লেটে কি লাগবে সেসব তুলে দেয়।ঠিকভাবে কাজ করতে পারলে সবাইকে আগামীকাল ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে।
পূর্ণ উদ্যমে সবাই কাজে লেগে গেলো এবার।ধ্রুবর কড়া কথায় ডেকোরেটরের লোকেরাও হাত লাগিয়ে কাজ করতে লাগলো।
ধ্রুবর দাদার মুখের কালো ছায়া সরে গেলো নিমিষেই। ধ্রুব ভোজবাজির মতো এই কাউকে রোস্ট তুলে দিচ্ছ এতো কারো জন্য কাচ্চি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কারো প্লেটে মাংস শেষ তো নিজ হাতে বেড়ে দিচ্ছে।
কারো বাচ্চা কান্না করছে তো আবার তাকে কাঁধে বসিয়ে সবার জন্য বোরহানির জগ নিয়ে ছুটছে।
কাজের মধ্যে সবার সাথে সমানতালে কথা ও বলে যাচ্ছে।
আগামী শুক্রবার বিয়ের তারিখ ধার্য করা হলো ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহরে।
পাত্রপক্ষ খাবার পর শালুকেরা বাসার সবাই আসলো খেতে।ধ্রুবকে দেখে শালুক চমকে গেলো। ধ্রুব ভাই বাড়িতে এসেছে!
কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে শালুকের।আফিফা অনেক আগেই ধ্রুবকে দেখেছে কিন্তু পাত্রের বোনেরা সাথে থাকায় কথা বলতে পারে নি। সবাই ঘরে বিশ্রাম নিতে যাওয়ায় আফিফা দৌড়ে এসে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
কে জানে কেনো,ধ্রুবর ও চোখ ভিজে উঠলো। আফিফা কাঁদতে কাঁদতে বললো, “ধ্রুব তুই কথা দে,তুই আমার বিয়ের সবগুলো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবি।তুই না থাকলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে।”
ধ্রুব হাসলো আফিফার কথায়।তারপর কথা দিলো বিয়ের সব অনুষ্ঠানে ধ্রুব অবশ্যই হাজির থাকবে।
খেতে এসে আদনান শুনলো এই কথা।ধ্রুবকে দেখে আশা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমি ভীষণ অবাক হয়েছি তোমাকে দেখে ধ্রুব।এতোক্ষণ সব অসম্পূর্ণ ছিলো যেনো তুমি না থাকায়।”
ধ্রুব মুচকি হেসে সন্তর্পণে আশাকে সরিয়ে দিলো।
আদনানের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। তারপর হুট করেই মাথায় একটা প্ল্যান চলে এলো আশার কাছ থেকে ধ্রুবকে দূরে সরাবার।নিজের বুদ্ধিতে আদনান নিজেই অবাক হলো এতো দারুণ প্ল্যান কিভাবে এলো তার মাথায়!
খুঁজে পাতিল থেকে মুরগির লেগ পিস এনে ধ্রুব শালুকের পাতে দিয়ে বললো, “মন খারাপ করে রেখেছিস কেনো?তোর লেগ পিস লাগবে আমি তা ভুলি নি।চারটা লেগ পিস রেখেছি তোর জন্য।”
মেহমান বিদায় নেয়ার পর ধ্রুব ও চলে গেলো না খেয়ে।শত বলেও কেউ তাকে খাওয়াতে পারলো না।
রাতে শালুক আফিফাকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপা,কেউ যদি কাউকে ভালোবাসে,তবে কি তার পাশে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে? ”
আফিফা হাসলো।বড় করুণ সেই হাসি।তারপর বললো, “না রে শালুক,সেটা ভালোবাসা কিছুতেই নয়।ভালোবাসা হলে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার অধিকার আদায় করে নিতো। তাকে না দেখলে বুক চিনচিন করতো।অভিমানে চোখে জল আসতো।ভালোবাসার মানুষের কষ্টে নিজের কলিজা ছিড়ে যাবার মতো ব্যথা হয়।তার মুখে হাসি না থাকলে নিজের দুনিয়া অন্ধকার মনে হয়। নিজের সব আনন্দ হারিয়ে যায়।যেমন আমার হতো জহির ভাইয়ের জন্য।”
শালুক ভয়ংকরভাবে চমকালো এসব শুনে। তবে সে কাকে ভালোবেসেছে?
কোনটা ভালোবাসা কোনটা মোহ সে কি বুঝে নি?
না-কি কখনো ভালো বাসে নি!
#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (১৪)
পুরো বাড়ি গিজগিজ করছে মেহমানে।এতো বড় বাড়ি হওয়ার পরেও যেনো জায়গায় কুলুচ্ছে না।আজকে আফিফার গায়ে হলুদ।
শুরুতে কিছুক্ষণ বাকবিতন্ডা হলো হলুদের অনুষ্ঠান কোথায় হবে সেটা নিয়ে।
আদনান চাইছে ছাদে হবে কিন্তু ধ্রুব চাইছে নিচে বাগানে হবে।
রাগে আদনানের নাক লাল হয়ে গেছে। ধ্রুব কিছুতেই ছাদে অনুষ্ঠানের জন্য রাজি হচ্ছে না। অথচ আদনান ধ্রুবকে আশার জীবন থেকে সরানোর জন্য যেই প্ল্যান সাজিয়েছে তাতে ছাদে অনুষ্ঠান করা ভীষণ জরুরি।
ধ্রুবর কথা হচ্ছে, বয়স্করা বারবার ছাদে উঠানামা করতে পারবে না।বাচ্চারা ছাদে যাবে,কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়।তিন তলার ছাদ থেকে নিচে পড়লে আর রক্ষা নেই।তাই আগেই সচেতন হতে হবে।
বিশেষ করে ধ্রুবর দাদী সিতারা বেগম ছাদে উঠতে পারবেন না।ছাদের চাইতে বাগানে জায়গা বেশি তাই বাগানেই হবে অনুষ্ঠান।
আদনান ভীষণ রাগ হলো কিছুতেই ধ্রুবর সাথে পারছে না বলে।
একরোখা মানুষের মতো ধ্রুব নিজের সিদ্ধান্তেই অটল।একটু পর দেখা গেলো সবাই ধ্রুবর সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছে।
আদনানের সহ্য হলো না।চিৎকার করে বললো, “আমার বোনের বিয়ে অথচ আমার সিদ্ধান্তের কোনো দাম নেই দেখছি।”
কথাটা বলার সাথে সাথে আদনানের গালে সপাটে চড় পড়লো। ছোট,বড় অনেকের সামনে আদনান চড় খেয়ে লজ্জায় নীল হয়ে গেলো।
আদিবা বেগম বললেন, “এখন মনে পড়েছে বোনের বিয়ের কথা,কই যখন বোনের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান হলো,মেহমানদারি করা নিয়ে সবাই বিপদে পড়ে গেলো।তখন তো তুই পালিয়ে গেছিলি।ধ্রুব এসে সব সামলেছে। এখন আসছে এখানে মাতব্বরি দেখাতে।”
আশা একটা চেয়ারে বসে ফোন টিপতে টিপতে পা নাড়ছে আর খিলখিল করে হাসছে।আশার হাসির শব্দ আদনানের কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। এই মেয়েটার জন্যই তো এতো কিছু।
এই মেয়েটা যদি ধ্রুবর দিকে নজর না দিতো তবে কি আদনান এরকম উগ্র হতো!
আশা আদনানের চড় খাওয়া দেখে হাসছে শুধু।তারপর ডেকে বললো, “অযথা কেনো ধ্রুবর সাথে লাগতে যাও তুমি আমি বুঝি না।ধ্রুব ভুল সিদ্ধান্ত নেয় নি এটা তুমি ও জানো।তবে কেনো মানছ না?”
আদনানের ইচ্ছে হলো আশাকে খুব বাজেভাবে কিছু গালি দিতে।
আদনানের কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতেই আশা আবারও বললো,”ধ্রুব দেখে যাও।আমি একটু আগে ফোনে ভিডিও করছিলাম তোমাদের এসব।সেখানে দেখা যাচ্ছে আন্টি কি দারুণভাবে আদনানকে চড় দিয়েছে।আমি এটা ড্যাডকে দেখাবো।ড্যাড ভীষণ হাসবে এটা দেখলে।”
সেই মুহুর্তে আদনানের কেমন রাগ হলো তা শুধু আদনান জানে।মনে মনে বললো, “ধ্রুব,ধ্রুব করে মুখের ফেনা তুলছিস।অপেক্ষা করে।আজ রাতেই ধ্রুবর চক্কর থেকে তোকে বের করে আনবো।”
ধ্রুব কিছু বললো না। সবাই মিলে হলুদের স্টেজ সাজালো।প্যান্ডেল সাজালো কাঁচাফুল আর মরিচ বাতি দিয়ে।
আশা অবাক হয়ে দেখছে।আস্তে আস্তে সাদামাটা একটা প্যান্ডেলের রূপ কিভাবে বদলে যাচ্ছে।
আদনান নিজের মামাতো, খালাতো ভাই ৫-৬জনকে ডাকলো।নিজের রুমে নিয়ে বিদেশ থেকে আনা ড্রিংকের বোতল বের করে ওদের সামনে রাখলো।উঠতি বয়সের ছেলে ওরা।
দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়লো টেস্ট করার জন্য। আদনান দিলো না।হেসে বললো,”আগে আমি যেভাবে বলেছি সেভাবে কাজ করতে হবে।আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হলে এই বোতল সব তোদের জন্য। এগুলো একেবারে অরিজিনাল, আসল টেস্ট পাবি।কতো ঝামেলা করে লুকিয়ে এনেছি দেশে জানিস তোরা।”
সবাই রাজি হলো আদনানের কথায়।গুটি হিসেবে আদনান শাপলাকে টার্গেট করলো।
সন্ধ্যা হতেই সারা বাড়ি ঝিকঝিক করতে লাগলো মরিচ বাতির নানা রঙের আলোতে।
আশার ভীষণ ভালো লাগছে এসব দেখতে।এসব সাধারণ জিনিসের মধ্যেও আশা নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছে।বাড়ির বাহিরে তিনটি গেইট লাগানো হয়েছে। অনেকটা পথ মরিচবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বিকেলে বাড়ির সামনের রাস্তার দুই পাশের গাছে চুন লাগানো হয়েছে। আশার এতো আনন্দ লাগছে এসব দেখে।
নানা রকম ফল কেটে বিভিন্ন ডিজাইন করা হচ্ছে। শালুক বসে বসে এসব কাটছে অন্যদের দেখিয়ে দিচ্ছে।একটা ফলের চেহারা কেমন করে শৈল্পিক রূপ ধারণ করছে তার সবটা ভিডিও করলো আশা।
৭টার দিকে আফিফার শ্বশুর বাড়ি থেকে মেহমান এলো আফিফাকে হলুদ লাগাতে।
সবাই মিলে হইচই, নাচ গানে পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রেখেছে। আশা নিজেও সবার সাথে তাল মিলিয়ে নেঁচে চলেছে।
শালুক নাচতে পারে না। তার ভীষণ মন খারাপ হলো। নয়না আপা আর শাপলা মিলে কি সুন্দর করে নাচলো। তাদের সাথে ধ্রুব ও যোগ দিচ্ছে একটু পর পর। শালুকের ইচ্ছে করলো নাচতে।কিন্তু লজ্জায় গেলো না।
আদনান এসে শালুকের পাশের চেয়ারে বসে বললো, “কি খবর শালুক রানী?”
চমকে উঠলো শালুক আদনানের কথায়।তারপর বিরক্ত হয়ে গেলো হঠাৎ আদনানকে তার পাশে বসতে দেখে।ভ্রু কুঁচকে বললো, “কি হয়েছে? ”
আদনান ফিসফিস করে বললো, “আমাকে এড়িয়ে চলছিস মনে হয় তুই?আমার সাথে তো দেখছি কথাই বলতে চাস না।তার উপর কিছু বললে ছ্যাত করে উঠিস।”
শালুক ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাব দিলো , “আপনার সাথে কথা বলতে হবে এরকম কোনো কমিটমেন্ট কখনো ছিলো বলে তো আমি জানি না।”
আদনান বললো,”ভাব দেখাচ্ছিস নাকি?”
শালুক আদনানের দিকে তাকালো তারপর বললো, ” ভাব দেখাতে হলেও একটা কারণ লাগে,আমি আপনাকে ভাব দেখাতে যাবো কেনো অকারণে? আপনি কে? ”
আদনান অবাক হলো শালুকের কথায়।শালুক এভাবে কথা বলছে কেনো?
শালুক তো এতো চালাক ছিলো না। আদনান নয়ছয় যা বুঝিয়ে দিতো তাই তো বুঝতো।হঠাৎ করে কি বড় হয়ে গেলো না-কি?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আদনান তাকালো শালুকের দিকে।শালুকের নাকের ডগা তিরতির করে কাঁপছে।হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দেওয়া দুই ঠোঁট ভীষণ কোমল আর মোহনীয় লাগছে।মুখখানায় ফুটে উঠেছে কোমলতা।
একেবারে মাখনের মতো নরম যেনো শালুক।আদনান শালুকের হাতের দিকে তাকালো। হাতে মেহেদি দেওয়া।ফর্সা হাতে মেহেদির খয়েরী রঙ কি সুন্দর লাগছে।
এর চাইতে সুন্দর কোনো দৃশ্য আদনান যেনো আগে দেখে নি।আজ নতুন করে শালুককে আবিস্কার করলো আদনান।আর তাতেই অবাক হলো।
হঠাৎ করেই ধ্রুব এসে শালুকের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো স্টেজে।আনাড়ি শালুক নাচের কোনো মুদ্রা জানে না,হাত পা ছুড়ে চেষ্টা করলো সবার সাথে তাল মিলাতে।
আদনান তাকিয়ে দেখলো সবটা।আজকাল ধ্রুবকে তার ভীষণ হিংসে হয়।সবাই কেনো ধ্রুবর প্রতি ইমপ্রেস হচ্ছে?
এই যে শালুক এতোক্ষণ আদনানের সাথে কথা বলছিলো বিরক্ত হয়ে সেই শালুকের মুখে এখন লজ্জার হাসি।লাজুক ভঙ্গিতে শালুক হাসছে আর ধ্রুবর সাথে তাল মেলাচ্ছে।
কেনো?
কি আছে ধ্রুবর মাঝে?যেমন করে পোকারা ছুটে যায় আলোর দিকে,তেমনি মেয়েরা ধ্রুবর দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
অথচ ধ্রুবর চাইতে আদনানের গায়ের রঙ ফর্সা।তবে কেনো মেয়েরা সুন্দরের কদর না বুঝে শ্যামবর্ণ ওই ধ্রুবকে পছন্দ করছে?
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো রাত সাড়ে বারোটার দিকে।ধ্রুব চলে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আদনান সন্ধ্যা বেলায় আফিফাকে বলে দিলো এক ফাঁকে ধ্রুবকে যাতে যেতে না দেয়।ধ্রুব চলে গেলে বিয়েতে না ও আসতে পারে। একবার রেখে দিতে পারলে ওর রাগ কমে যাবে।
সেই কথা মনে রেখেই আফিফা কেঁদে চলেছে ধ্রুব চলে যাবে শুনে।
ধ্রুব দেখলো শালুক ও মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে।ধ্রুব জানে ভয়ে শালুক কিছু বলতে পারছে না।আফিফার এরকম কান্না দেখে যেই মুহুর্তে ধ্রুব বললো, থেকে যাবে শালুকের মুখের অন্ধকার কেটে গেলো।
মেহমানে সবার রুম ভরে গেছে।শাপলা শালুক আশা এক বিছানায় শুয়েছে।ইদানীং আশার সাথে শালুকের ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। শালুক জানে আশার এখানে কোনো দোষ নেই।অযথাই মেয়েটাকে অপছন্দ করার কোনো মানে হয় না।
সবাই শুয়ে পড়েছে,বিয়ে বাড়ির কোলাহল থেমে গেছে। নিচে বাবুর্চিরা তাদের কাজ করছে।
রাত দুটোর দিকে শাপলার রুমে এসে আদনান একটা বিরিয়ানির প্লেট শাপলার হাতে দিয়ে বললো, “ধ্রুব আসার পর থেকে কিছু খায় নি শাপলা।ওকে দিয়ে আসতে বলেছে মা।”
শাপলা লজ্জা পেলো কিছুটা। এমনি ধ্রুবকে দেখলে তার মধ্যে ভীষণ আনইজি লাগে।ধ্রুবর প্রতি অন্য রকম একটা ফিলিংস এক সময় জন্মেছে বলে শাপলা নিজেই লজ্জা পায়।এজন্য ধ্রুবর সাথে খুব একটা কথা বলে না।
আদনান চলে যেতেই আশা বললো,”শাপলা,আমার চুল তোমার মতো করে বেঁধে দাও না প্লিজ।শালুককে পাঠাও”
শাপলা স্বস্তি পেলো শুনে।তারপর শালুককে পাঠালো ধ্রুবর রুমে।
ধ্রুবর রুমে আদনানের কাজিনরা ঘুমাবে,ধ্রুবকে আদনান ছাদের রুমে ঘুমাতে বললো।
বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে শালুক ছাদে চলে গেলো। আদনান অপেক্ষা করছে ধ্রুব আর শাপলাকে জড়িয়ে একটা গুজব ছড়ানোর যাতে করে আশা ধ্রুবকে খারাপ ভাবতে বাধ্য হয়।
শালুক দরজায় নক করে ধ্রুবকে ডাকলো।ধ্রুব সবেমাত্র শুয়েছে।তন্দ্রা এসেছে সবে এই সময় শালুকের ডাক শুনে উঠে বসলো। তারপর বিরক্ত হয়ে দরজা খুললো। শালুক ভেতরে আসতেই ধ্রুব দরজা লাগিয়ে দিলো।
শালুক বারবার ধ্রুবকে খেতে বলছে কিন্তু ধ্রুব খাচ্ছে না।বিরক্ত হয়ে শালুককে খাবার নিয়ে যেতে বলছে।এরইমধ্যে কারেন্ট চলে গেলো। বিয়ে উপলক্ষে জেনারেটর আনা হয়েছে তাও চালু করছে না।
শালুকের ভয় করতে লাগলো অন্ধকারে। ছাদে যেনো কেউ ধুপধাপ করে হেটে বেড়াচ্ছে। ভয়ে শালুক ধ্রুবর হাত চেপে ধরলো। ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বললো, “হাত ছাড় না,আমি দেখি মোমবাতি আছে কি-না ড্রয়ারে। ”
শালুক হাত ছাড়লো না।বললো, “এক হাত দিয়ে খোঁজো।আমার ভয় করছে।”
নিজের ফোনটাও খুঁজে পাচ্ছে না ধ্রুব অন্ধকারে। হাতড়ে হাতড়ে টেবিলের কাছে চলে গেলো কিন্তু ড্রয়ারে মোম নেই।ধ্রুব অবাক হলো। ড্রয়ারে সে মোম রাখে সবসময়। কে নিলো মোমবাতি তাহলে?
হঠাৎ করেই বাহিরে কয়েকটা ছেলের শোরগোল শোনা গেলো। ধ্রুবর রুমের দরজা বাহিরে দিয়ে বন্ধ করে দিলো ওরা।তারপর চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।
ধ্রুব হাতড়ে ফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট অন করলো। দেখলো ঘেমে গেছে শালুকের সারা শরীর ভয়ে।
দরজা খুলতে চেয়েও ধ্রুব পারলো না।বুঝতে পারলো বাহিরের দিক থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ছিটকিনি তুলে।ধ্রুব বুঝতে পারলো কিছু একটা ঝামেলা হতে চলেছে।
বাহিরে কয়েকজন মুরুব্বি ও এসে হৈচৈ শুরু করে দিলো।সবার চিৎকারে ধ্রুবর বাবা,চাচারা সবাই ছাদে এলো আদনানসহ। একটা ছেলে বললো, “আমরা ছাদে এসেছি এমনি হাটতে।এসে শুনি এই রুম থেকে দুজন ছেলেমেয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। বাজে শব্দ আসছে।”
আদনান জিজ্ঞেস করলো, “ভেতরে কে আছে?”
ছেলেটা বললো,”জানি না কে আছে।আমরা খারাপ কিছু হচ্ছে বুঝতে পেরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি বাহিরে থেকে।ওরা রুমটা ও অন্ধকার করে রেখেছিলো।”
মুরুব্বি একজন বললো, “নিশ্চয় ভেতরে কেউ আকাম করছে।”
আদনানের এতো আনন্দ হলো। সবার সামনে মহান সাজা ধ্রুবর আজকে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।কারেন্ট চলে এলো সেই মুহুর্তে।
দরজা খুলতেই ভেতর থেকে শালুক আর ধ্রুব বের হয়ে এলো।
আদনান চমকে উঠলো শালুককে দেখে।সে তো শাপলাকে পাঠিয়েছিলো তবে শালুক এলো কিভাবে!
মুহুর্তেই কানাঘুষা শুরু হয়ে গেলো, খবর আগুনের মতো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো সারা বাড়িতে।কয়েকজন রংচং মাখিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করলো,ধ্রুব আর শালুক দুজন সবাই শুয়ে পড়ার সুযোগে ছাদের ঘরে গিয়ে কি খারাপ কাজ করেছে।
শালুকের ব্যাপারটা বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। তারপর বুঝতে পেরে শালুক হতভম্ব হয়ে গেলো।
কেউ কেউ বললো, “বাপের মতো চরিত্র হইছে,বাপে যেমন হিন্দু মেয়ে বিয়ে করছে ছেলে ও তেমনই চরিত্রহীন হইছে।”
পৃথিবীর সব ভাষা যেনো ধ্রুবর কাছে এসে নির্বাক হয়ে গেলো। এই ঘৃণ্য অপবাদের জবাব ধ্রুব কি দিয়ে দিবে তাই ভেবে পেলো না। ধ্রুবর মাথা কাজ করলো না হঠাৎ করেই। শুধু অপলক তাকিয়ে রইলো শালুকের দিকে।
কিছুক্ষণ পর ধ্রুবর মাথায় বুদ্ধি আসতেই ধ্রুব কিছু বলতে চাইলো।কিন্তু নুরুল ইসলাম সাহেব ধ্রুব কে কথা বলতে নিষেধ করলেন।নাতির হাত চেপে ধরে বললেন, “তুমি হয়তো প্রমাণ করে দিবা সব মিথ্যা কিন্তু তাতে তোমার কোনো বদনাম থাকবে না,কিন্তু ৫ বছর পরেও আমার ছোট বুবুরে বিয়া দিতে গেলেও লোকে কইবো এই মাইয়ার চাচাতো ভাইয়ের লগে খারাপ সম্পর্ক ছিলো। দাগ থেকেই যাইবো আমার শালুক ফুলের গায়ে।”
ধ্রুব শালুকের হাত শক্ত করে ধরে বললো, “আমার কাছে প্রমাণ আছে দাদা।”
নুরুল ইসলাম সাহেব বললেন, “সবাই সব দেখবো,বিশ্বাস করবো,তারপর আবার ও আমার শালুকেরে নিন্দা করবো,ওরে খারাপ বলতে কেউ দুই বার চিন্তা করবো না।”
শালুকের বাবা মা দুজনেই হতভম্ব। সেই সাথে হতভম্ব শাপলা, আশা,নয়না,দিবা।
নুরুল ইসলাম সাহেব বললেন, “শালুকের জন্য তোমার চাইতে ভালো পাত্র অন্য কেউ হবে না।”
হাসনা বেগম উঠে বললেন,”কাজী ডেকে আনো,এখনই ওদের বিয়ে দিবো।”
নিশ্চুপ পাথরের মূর্তির মতো শালুক বসে রইলো নির্বাক হয়ে। সেই রাতেই কাজী এলো, দুজনের বিয়ে হলো।
হতবাক শালুক নিজেও বুঝতে পারলো না তার অপরাধ কি ছিলো!
ফজরের আজান হচ্ছে চারদিকে। কেউই ঘুমায় নি সারারাত আর।ধ্রুব ছাদের সেই ছেলেগুলোকে ডেকে আনলো।তারপর সবাইকে ছাদে বসতে বলে শালুকের হাত ধরে ছাদের সেই রুমে গিয়ে নিজের ল্যাপটপ বের করে আনলো।
দাদার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, “আমার কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আছে দাদা।তবুও আমি শালুকের বদনাম হবে বলে এভাবে বিয়ে করে নিয়েছি আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে। এবার এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখুন।ক্যামেরা লাগিয়েছি সেদিন আমার রুমে আমার অনুমতি ছাড়া দিব্যর আম্মু কারো একটা ছবি লাগিয়েছে বলে।যাতে কেউ আমার রুমে আমার অনুপস্থিতিতে আর এরকম কিছু করতে না পারে যা আমার রাগ হবার কারণ হয়।
এবার আপনি দেখুন ক্যামেরায়।
আদনান ভাই আমার রুম থেকে সব মোমবাতি নিয়ে গেছে বিকেলে দেখুন।
এই দেখুন শালুক এসেছিলো আমার জন্য খাবার নিয়ে। তখন কারেন্ট চলে যায়।তাই রুম অন্ধকার হয়ে যায়।আমার রুমে থাকা মোমবাতি ও কেউ সরিয়ে ফেলে।এজন্য রুম অন্ধকার হয়ে যায়।তারপর ও আমি ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে রাখি।এবার ওদের জিজ্ঞেস করেন কেনো ওরা এই মিথ্যে বলেছে তা না হলে দাদা আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না।সবকটাকে আমি জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো।”
ধ্রুবর তীব্র রাগ দেখে ভয়ে সবাই সত্যি কথা বলে দিলো।আদনানের কথামতো ওরা ছাদের রুমের ইলেকট্রিসিটি বন্ধ করে দিয়েছে। আদনান তাদের বলেছে এই বাগানে লুকিয়ে থাকতে, তারপর এই রুমের লাইট অফ হয়ে যেতেই যেনো দরজা বন্ধ করে দিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।তাহলে বিদেশ থেকে আনা বোতল ওদের দিবে।মেইন কালপ্রিট আদনান জানতে পেরে সবাই হতবাক হয়ে গেলো।
হাসনা বেগম কেঁদে ফেললেন শুনে।তেমনি হতভম্ব হলেন আদিবা বেগম। তার ছেলে এতটা নিচে নেমে গেছে ভাবতেই তার অবাক লাগছে।নিজের আপন চাচাতো ভাই বোনের সম্পর্কে এরকম মিথ্যা অপবাদ দিলো সে!
এভাবে ফেঁসে যাবে আদনান নিজেও ভাবতে পারে নি। বিশেষ করে শাপলার জায়গায় শালুককে দেখে আদনান সবচেয়ে বেশি শক পেয়েছে।
ধ্রুব কারো সাথে কোনো কথা বললো না।শালুকের সামনে গিয়ে বললো, “আজ থেকে তুই আমার স্ত্রী শালুক,তোর সব দায়িত্ব আজ থেকে আমার।আমি চাচ্ছি না আর এক মুহুর্ত এখানে থাকতে।তুই কি যাবি আমার সাথে এখান থেকে? এখানে থাকলে তুই ভালো থাকবি না শালুক।”
রাগে,অভিমানে,যন্ত্রণায় শালুকের বুক ভারী হয়ে গেলো। নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, “যাবো আমি তোমার সাথে। ”
কেউ আটকাতে পারলো না আর,শালুকের হাত ধরে এক কাপড়ে বের হয়ে গেলো ধ্রুব।
পিছনে রেখে গেলো এক বুক যন্ত্রণা, অভিমান।
চলবে…….
রাজিয়া রহমান
চলবে….
রাজিয়া রহমান