শালুক ফুলের লাজ নাই পর্ব -১১+১২

#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই(১১)

আদনানের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। আদনান নিজেও বুঝতে পারছে না সে এতো অস্থির হয়ে আছে কেনো।কেনো এমন কু ডাক ডাকছে তার মন।
না পারছে আশাকে কিছু বলতে আর না পারছে ধ্রুবকে কিছু বলতে।
ধ্রুবকে আদনান চেনে,ধ্রুব এরকম ছেলে না।কিন্তু আশা!
আশার কাছে তো এসব ছেলেখেলা।

আদনান জানে আশার কাছে রিলেশনশিপটা ভীষণ ইজি।তবুও আদনান মিষ্টি কথা দিয়ে আশাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে এতো দিন।আজ এই ছেলের সাথে কাল ওই ছেলের সাথে ডেটে যাওয়া সব হাসিমুখে সহ্য করেছে।শুধু একবার বিয়েটা হোক,সব হাতে আসুক।তারপর দুই লাত্থি মেরে সে এই মেয়েকে বিদায় করবে।এরকম ক্যারেক্টারলেস মেয়েকে বউ হিসেবে মানায় না।

অপশন হাতে রেখেই আদনান প্ল্যান করেছে।শালুক হচ্ছে তার সেকেন্ড অপশন। এজন্যই তো আমেরিকায় থাকাকালীন শালুকের সাথে মিষ্টি কথা বলে ওকে পটিয়ে রাখার টেকনিক এপ্লাই করে রেখেছে।

গোসল করে এসে আশা ধ্রুবর খোঁজে নিচতলায় স্টাডি রুমে গেলো। ধ্রুব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটা বই পড়ছে।
আশা ধ্রুবর সামনের চেয়ারে বসে বললো, “এটা কিসের বই ধ্রুব?”

ধ্রুব বইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, “মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখা।”

আশা আগ্রহী হয়ে বললো, “আমাকে গল্প বলো ধ্রুব,তোমাদের ফ্রিডম ফাইটারদের স্টোরি শুনতে চাই আমি। ”

ধ্রুব বললো, “ভাইয়ার কাছে যাও,ভাইয়া বলবে।সকাল থেকে আমার সাথে কথা বলছো ভাইয়ার মন খারাপ হবে।”

আশা হেসে বললো, “ধ্রুব,আদনান স্টোরি বলতে পারে না। ওর সব স্টোরি এক পর্যায়ে সেক্সুয়াল স্টোরিতে কনভার্ট হয়ে যায়। সবসময় তো আর এসব শুনতে ভালো লাগে না। ”

ধ্রুবর কান লাল হয়ে গেলো আশার কথা শুনে। এই বিষয়ে আর কথা বাড়ালো না ধ্রুব।কথা বলতে গেলে আশা হয়তো ফ্রি মাইন্ডে আরো অনেক কিছু শেয়ার করে ফেলবে।
আশার দোষ দেয় না ধ্রুব,তার ন্যাশনালিটি,তার দেশের কালচার যেমন সে তেমনই হবে।তবে অবাক লাগে তার আদনানের ব্যবহার।
আদনান কেমন যেনো রূপ বদলে ফেলার চেষ্টা করছে বলে ধ্রুবর মনে হয়। বাড়ির পিছনের পুকুরে আগে সবাই মিলে লাফঝাঁপ দিয়ে গোসল করতো। বিশাল পুকুরের এ মাথা থেকে ও মাথা সাঁতরে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করতো।
সকালে ভিজে বাড়িতে আসার পর ধ্রুব আদনানকে বলেছিলো পুকুরে গোসল করতে যাবার কথা।
শুনে আদনান হেসে বললো, “পাগল না-কি তুই?পুকুরের পানিতে যেই পরিমাণ জার্মস আছে,মাই গড!”

ধ্রুব মুচকি হেসে চলে গেলো গোসল করতে পুকুরে।কাক ময়ুরের পুচ্ছ লাগালে কি ময়ুর হতে পারে!

ধ্রুব নিচের দিকে তাকিয়ে গল্প বলতে লাগলো। আশাকে খুঁজতে খুঁজতে আদনান ও ধ্রুবর স্টাডি রুমে এসে হাজির হলো। আশার দিকে তাকিয়ে আদনান অবাক হলো। চিকন ফিতার একটা টপস আর স্কার্ট পরে আশা বসে আছে ধ্রুবর সামনে। দেহের অবয়ব স্পষ্ট হয়ে আছে ওর।
আদনান হাসিমুখে এসে আশার পাশে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গল্প শুনে তারপর বললো, “দূর,এসব কি বলছিস?এসব কি এখন বলার সময় না-কি? শোন,আমি গল্প বলি।আমেরিকায় যাওয়ার পরের গল্প শোন।”

ধ্রুব হেসে বললো, “গল্প শোনার আগ্রহ নেই ভাই আমার।তুমি বরং তোমার প্রাণপাখিটাকে নিয়ে গিয়ে গল্প করো আমি একটু পড়ি।”

আদনান খুশি হলো ভীষণ। আশার হাত ধরে বললো, “চলো আশা।তোমার সাথে আজ সারাদিনে গল্প করা হয় নি।”

আশা বিরক্ত হয়ে বললো, “তোমার আর গল্প! তোমার গল্প শুরু হবে রুমের দরজা বন্ধ করে। রোমান্সে চলে যাবে,ঝাঁপিয়ে পড়বে তুমি আমার উপর। ”

ধ্রুব কানে হাত দিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদনান ভীষণ বিব্রত হলো।এই মেয়ের মুখে কোনো লাগাম নেই।

আশাকে রুমে এনে আদনান বললো, “পাগল হয়েছ তুমি আশা?কি বলছো এসব ধ্রুবর সামনে? আমার মান সম্মান আর রাখলে না।”

আশা বিরক্ত হয়ে বললো, “তুমি যা করো আমি তাই বলেছি আদনান। বাড়তি কিছু বলি নি।”

আদনান দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,”এমন ভাব করছো যেনো শুধু আমারই এসবে ইন্টারেস্ট, তোমার নেই?”

আশা হাসলো। তারপর বললো, “এটা ঠিক আমার ও এই ব্যাপারে আগ্রহ,তবে কি জানো আদনান, বাংলাদেশে আসার পর তোমাদের কালচার সম্পর্কে একটু আধটু জানার পর আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। এটা তো তোমার দেশ,তোমার দেশের কালচার তুমি ভালো জানো আমার চাইতে।তোমার উচিত ছিলো আমাকে বুঝানোর। তুমি তা কি করেছো?
সুযোগ পেলেই তুমি আমাকে বদ্ধ ঘরে নিয়ে আসতে চাইছো,আমি ও তাই তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে চাইছি।
তুমি মানুষটা কেমন যেনো আদনান। তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেক ডিফরেন্স।”

আদনানের মাথায় যেনো আগুন জ্বলে উঠলো। আশার হাত চেপে ধরে বললো, “কি ডিফরেন্স?”

আশা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “আজ যখন আমি বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম, ধ্রুব একবারের জন্যও আমার দিকে তাকায় নি।ওর সাথে হেটে এসেছি বাড়ি পর্যন্ত, ধ্রুবকে একবার ও দেখি নি আমার বডির দিকে তাকাতে।অথচ বাড়ি আসতেই তোমার নজর গিয়েছিল আমার বডিতে।
এই যে একটু আগে,আমি ধ্রুবর স্টাডি রুমে গিয়েছি।এটাও একটা এক্সপেরিমেন্ট ছিলো আমার। আমি এই টপস পরে যাওয়ায় ধ্রুব বইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো পুরোটা সময়। আমি ওকে বলেছিলাম আমাকে স্টোরি বলতে, ও তখনও তাকায় নি আমার দিকে।
তুমি কিন্তু ওর স্টাডি রুমে ঢুকেই আমার সারা শরীর স্ক্যান করে ফেলেছ।এজন্যই ধ্রুবকে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। ও একজন পারফেক্ট মানুষ। তোমার মতো করে কাউকে ইমপ্রেস করার মিথ্যা চেষ্টা ধ্রুব করে না।বরং ওর এই শুদ্ধতায় মানুষকে ওর প্রতি ইমপ্রেস করে। ”

আদনান কি বলবে ভেবে পেলো না। আশার কাছ থেকে আদনান এসব এক্সপেক্ট করে নি।আশা কি তবে ধ্রুবতে একেবারে মজে গেছে!

আদনানকে হতভম্ব অবস্থায় রেখে আশা বের হয়ে গেলো আফিফার রুমের দিকে।

দুপুরে খাবার টেবিলে ধ্রুব বসার পর ধ্রুবর বাবা সেলিম সাহেব এসে বসেছেন ধ্রুবর মুখোমুখি চেয়ারে।
ধ্রুব সবেমাত্র মুখে ভাতের লোকমা তুলেছে সেই সময় সেলিম সাহেব বললেন, “ধ্রুব,খাবার পর তুমি গিয়ে তোমার মা’কে দেখে আসবে।”

ধ্রুব ভাতের লোকমা রেখে দিয়ে বললো, “আমি কারো হুকুম মেনে চলার মানুষ নই।”

সেলিম সাহেবের ভীষণ রাগ উঠে আছে গতরাত থেকে দীপালির অসুস্থতার খবর জানার পর থেকে। ধ্রুবর এই বাঁকা কথা তার সহ্য হলো না। চিৎকার করে বললেন,”অবশ্যই মেনে চলবে তুমি আমার হুকুম।আমার ছেলে তুমি,আমার বাড়িতে থাকতে হলে,আমার বাড়িতে খেতে হলে তোমাকে আমার কথা মানতেই হবে। ”

ধ্রুব হেসে ফেললো শব্দ করে। তারপর বললো, “কি বললেন যেনো আপনি? আমি কে?আপনার ছেলে?
মিথ্যা কথা এটা।আমি কারো ছেলে নই।সেদিন মনে ছিলো না আমি আপনার ছেলে যেদিন আমি আপনার পা জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম বাবা আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।মা ও চলে গেছে আপনি ও চলে যাবেন আমাকে রেখে?
কই,সেদিন তো আপনার মনে পড়ে নি আমার কথা।

আপনার নতুন বউ যেদিন ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আমার কপাল ফাটিয়ে দিলো,সেদিন ও তো আপনার মনে ছিলো না আমি আপনার ছেলে।

ভীষণ জ্বরে কাঁদতে কাঁদতে যেদিন আপনাকে পাশে পেতে চেয়েছি সেদিন তো আপনি আসেন নি আমার কাছে। মতির মা’কে পাঠালেন আমার কাছে থাকতে।

ছোট ছিলাম কিন্তু অবুঝ ছিলাম না আমি।সব মনে আছে আমার। আরো শুনতে চান কিছু?
আর কি বললেন আপনি? আপনার বাড়িতে থাকতে হলে,খেতে হলে আপনার কথা শুনতে হবে?তবে বেশ,আমি আপনার বাড়ি ছেড়েই চলে যাচ্ছি। থাকবো না আপনার বাড়িতে।”

মুহুর্তেই যেনো একটা ভূমিকম্পের মতো সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। ধ্রুব দোতলায় গিয়ে একটা ব্যাগে নিজের শার্ট-প্যান্ট কিছু নিয়ে বের হয়ে এলো।

হাসনা বেগম গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ালেন।তিনি কিছু বলার আগেই ধ্রুব বললো, “তোমার পায়ে পরি চাচী,আমাকে তুমি থাকতে অনুরোধ করো না।তোমার অনুরোধ আমি ফেলতে পারবো না চাচী।তবে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে থাকতে হবে আমাকে।আমার নিজের কাছে নিজেকে তুমি ছোট করো না।”

এই কথার পর হাসনা বেগমের আর কিছু বলার থাকে না।ধ্রুব হনহনিয়ে চলে গেলো।

হাসনা বেগম সেলিম সাহেবের সামনে গিয়ে বললো, “খুশি হয়েছেন তো মেজো ভাইজান?আপদ বিদায় হয়েছে এবার শান্তি হলো তো আপনার? কিভাবে পারলেন ছেলেকে খোঁটা দিতে?ক্লাস এইটে উঠার পর থেকে ধ্রুব নিজে টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ নিজে চালায়।অনার্সে উঠে তো ঢাকা শহরেই চলে গেলো। আপনার একটা কানাকড়ি ও তার পিছনে খরচ করতে হয় নি।তবুও কিভাবে পারলেন ছেলেকে খোঁটা দিতে?
কার জন্য খোঁটা দিলেন?যে নিজের স্বামী সন্তান রেখে চলে গেলো এই বাড়ি থেকে,তার জন্য?
কিসের দায় ধ্রুবর তাকে দেখতে যাবার?ধ্রুব যেদিন মা মা করে পুরো বাগানে গড়াগড়ি খেয়ে কেঁদেছে সেদিন কি সে এসেছিলো ধ্রুবকে দেখতে?
স্কুল থেকে চুরি করে ধ্রুব দীপালির বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হলো,কই তখনও তো সে এলো না একবার ছেলেকে দেখতে।দীপালির পিসেমশায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আমার ধ্রুবকে বের করে দিলো।
বাড়িতে জানার পর আপনি ধ্রুবকে বাগানের আমগাছের সাথে বেঁধে মেরেছেন কেনো গেলো সেই বাড়িতে তার জন্য।

তখন তো কেউ এই ছেলেটার কথা ভাবেন নি।আজ কেনো তার উপর অধিকার দেখাতে আসছেন?”

পাথরের মূর্তির মতো সবাই থম মেরে বসে রইলো। সেলিম সাহেব জবাব দিলেন না।কি জবাব দিবেন তিনি?
রাগের মাথায় ছেলেকে এই কথা বলেছেন,মন থেকে তো বলেন নি।কাকে বুঝাবেন এখন এই কথা তিনি!

কারোর আর খাওয়া হলো না আদনান ছাড়া। আদনান মনে মনে ভীষণ খুশি হলো ধ্রুবর চলে যাওয়ায়।

শালুক স্কুল থেকে ফিরে দেখে পুরো বাড়ি কেমন থম মেরে আছে।কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারলো না। শাপলা ও কলেজে গেছে।কাকে জিজ্ঞেস করবে শালুক?
মায়ের কাছে গেলো একবার,গিয়ে দেখে মায়ের মুখ ভার।এটা হচ্ছে সতর্কতা সংকেত।মায়ের মুখ ভার দেখলে কেউ মা’কে ঘাটায় না।

দাদীর ঘরে গিয়ে শালুক জিজ্ঞেস করলো দাদীকে সবাই এমন চুপ হয়ে আছে কেনো।

সিতারা বেগম কেঁদে উঠলেন।কেঁদে বললেন,”আমার ভাইয়ের যে পোড়া কপাল রে বইন,আমার ভাই রাগ কইরা কই যেনো গেছে গা।”

শালুকের বুক কেঁপে উঠলো। ধ্রুব ভাই নেই?রাগ করে চলে গেছে ধ্রুব ভাই?কিন্তু কোথায় গেছে?
শহরে তো যাবে না শালুক শিওর। হল বন্ধ গিয়ে থাকবে কোথায়?
তবে কোথায় গেলো?
চিন্তায়,উৎকন্ঠায় শালুক ও খেলো না। বাকিটা সময় শালুক অপেক্ষা করে রইলো ধ্রুব ভাই বাড়িতে আসার।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। কিন্তু ধ্রুব এলো না।

ঝাঁক বেঁধে পাখিরা নীড়ে ফিরতে লাগলো,চারদিকে কোলাহল থেমে যেতে লাগলো। বাগানে বসে একটা হুতুমপেঁচা ডাকতে লাগলো বড় করুণ সুরে।শালুকের বুক কাঁপতে লাগলো।
ধ্রুব কোথায়?ভালো আছে তো?
এতো কষ্ট কেনো তাকে দিলো সৃষ্টিকর্তা? কি হতো যদি আরেকটু কম কষ্ট দিতো!

রাত বাড়তে লাগলো, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো শালুকের বুকের চিনচিনে ব্যথা,উৎকন্ঠা।

তবুও ধ্রুব ফিরে এলো না।
#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই(১২)

নুরুল ইসলাম সাহেব হজ্জ করে ফিরেছেন সবেমাত্র এক সপ্তাহ হলো।এখনো গ্রামের মানুষজন তার সাথে দেখা করতে আসেন।তিনি সবার সাথে গল্প করেন।
নবীর দেশ,আরব দেশ ঘুরে এসেছেন। আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ থেকে এসেছেন, রাসুল (স.) এর রওজামুবারক জিয়ারত করে এসেছেন।
সবাই আগ্রহ নিয়ে শুনে সেই স্বপ্নের দেশের কথা।
শুনতে শুনতে কেউ চোখের পানি ফেলে।নুরুল ইসলাম সাহেব চোখ বন্ধ করে সেসব স্মৃতি রোমন্থন করেন।
দরাজ গলায় সবার কাছে সেসব বলেন।
এমনি এক বিকেল বেলায় সেলিম বাড়িতে এলো।

সেলিমকে উপেক্ষা করে সবার নজর গিয়ে পড়লো একটা লাল বেনারশী শাড়ি পরনের মেয়ের উপর। সবাই ভয়াবহভাবে চমকে উঠলো মেয়ের সিঁথিতে সিঁদুর দেখে।

সেলিম বাড়ির ভেতরে ঢুকে মাকে সালাম করলো, দীপালি প্রণাম করলো।সিতারা বেগম কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না।
সেলিম যখন বললো, “ও দীপালি,আমার স্ত্রী। আজ আমরা বিয়ে করেছি।” সেই মুহুর্তে সিতারা বেগম অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়লেন।

এলাকার লোকজন সবাই হাসাহাসি করতে লাগলো বাবা হজ্জ করে এসেছে অথচ ছেলে এদিকে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে এনেছে।

তেমনি ঝড় উঠলো দীপালির বাড়িতে। দীপালির বিয়ের পাকা কথা চলছে, সেই মুহুর্তে দীপালি একটা মুসলমান ছেলের হাত ধরে ঘর ছেড়েছে।লজ্জায়,অপমানে মাথা কাটা গেলো দীপালির পরিবারের।

একই গ্রামে দুই বাড়ি হওয়ায় লোকজন তামাশা করার ভালো খোরাক পেয়ে গেলো।
নুরুল ইসলাম সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলেকে তিনি ত্যাজ্য পুত্র করবেন। কিন্তু পারলেন না নিজের স্ত্রীর জন্য।সিতারা বেগম সেই সময় অসুস্থ হয়ে শয্যা নিলেন।ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করার কথা শুনে তার অসুস্থতা আরো বেড়ে গেলো।

দীপালির বাবা ও ভেঙে পড়লেন।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় বাবার নয়নের মণি ছিলো দীপালি। দুই ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন।রূপে,গুণে অতুলনীয়। দীপালির বাবা গর্ব করে বলতেন এ আমার মা দুর্গা।
বাস্তবিকই দীপালিকে দেখতে ছিলো দেবীর মতো।

প্রতিদিন গ্রামের বউ ঝিয়েরা আসতো দীপালিকে দেখতে।মোমের পুতুলের মতো দেখতে দীপালি,হাটু পর্যন্ত লম্বা তার ঘন কালো চুল।নিন্দে করার সাথে লোকে স্বীকার করতো, বউ পেয়েছে বটে সেলিম।বড় রূপবতী বউ পেয়েছে।এমন রূপবতী এই তল্লাটে দ্বিতীয় কেউ নেই।এরকম আগুন সুন্দরী হলে সন্নাসীর ও ধ্যান ভেঙে যাবে সেলিম সেখানে কি এমন!

নুরুল ইসলাম সাহেব ছেলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন।দীপালি আগ বাড়িয়ে শ্বশুরের সাথে কথা বলতে চাইতো,নুরুল ইসলাম সাহেব তার ছায়া ও মাড়াতো না।

বিয়ের দুই মাসের মাথায় দীপালি গর্ভবতী হলো।সবাই আস্তে আস্তে দীপালিকে মেনে নিতে চেষ্টা করলো শুধুমাত্র নুরুল ইসলাম সাহেব ছাড়া।

সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে বলতেন কেনো আল্লাহ তাকে এই দুনিয়া থেকে নিয়ে যাচ্ছে না।এই অনাচার দেখার জন্য কেনো বাঁচিয়ে রেখেছে। এর চাইতে মরন ও ভালো ছিলো।
তেমনি দীপালির বাবা মা ও ঠাকুরের কাছে দিনরাত প্রার্থনা করতেন।
গর্ভবতী হবার পর থেকে দীপালি বাবা মা’কে ভীষণ ভাবে মনে করতে শুরু করে। একটা বার বাবা মা’কে দেখার জন্য প্রাণ আনচান করে । মা হওয়া যে কি কষ্টের তা টের পেলো দীপালি আর সেই সাথে বুঝতে পারলো কি ভুল সে করে ফেলেছে।

মাঝেমাঝে বাড়ির টেলিফোনে কল দিতো,গম্ভীর সুরে বাবা হ্যালো বলতেই দীপালি রিসিভার নামিয়ে ফেলতো।
এক সময় ধ্রুব হলো, দীপালির মনের অপরাধবোধ আরো বেড়ে গেলো।
বাবা মায়ের আদর ও পাচ্ছে না,শ্বশুর শাশুড়ী ও তাকে মেনে নিচ্ছে না।দুই টানাপোড়েনে স্বামীর সাথে ও সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।
সারাক্ষণ শ্বশুরের আহাজারি শুনতে শুনতে দীপালির আর কিছুই ভালো লাগলো না।
মুক্তি পেতে চাইলো সব বন্ধন থেকে। এক দিন বাড়িতে কল দিতেই দীপালির মা কল রিসিভ করলো।
ভয়ে ভয়ে দীপালি একবার মা বলে ডাকলো।

তারপরও শুনতে পেলো মায়ের গঞ্জনা, অভিশাপ। এরপর থেকে দীপালি রোজ দুপুরে মা’কে কল দিতো।মা ও বুঝি দীপালির কলের অপেক্ষায় থাকতো। একবার রিং হতেই রিসিভ করতেন। মেয়ের সাথে স্বাভাবিক কোনো কথা বলতেন না শাপশাপান্ত ছাড়া।

ধ্রুব আস্তে আস্তে বড় হলো, দীপালির বাবার ভীষণ অসুখ হলো। মেয়েকে দেখার জন্য যেনো প্রাণপাখি দেহের খাঁচা ছেড়ে যেতে পারছে না এমন অবস্থার কথা সেদিন দীপালির মা নিজে কল দিয়ে জানালো দীপালিকে।মেয়ের মন মানলো না আর।স্বামী,সন্তান,সংসার সবকিছুর কথা ভুলে গিয়ে ছুটে গেলো।যাবার আগে ছেলেকে বুকের মধ্যে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো। মায়ের মন হয়তো বুঝে গেছে একবার বাবার বাড়ি গেলে আর ফিরে আসবে না হয়তো।
ধ্রুবর বাবার জন্য একটা চিঠি লিখে গেলো। সেই যে দীপালি গেলো আর ফিরে এলো না।

রাতে বাড়ি এসে চিঠি পড়লো ধ্রুবর বাবা।বেশি কিছু লিখে নি দীপালি, শুধু এ টুকু লিখেছে,”চলে যাচ্ছি, এই যাওয়া হয়তো শেষ যাওয়া।ভালো হলো তোমার সামনে থেকে যে যেতে হয় নি।আমার নাড়িছেঁড়া ধন রেখে গেলাম তোমার কাছে। আমাকে ঘৃণা করবে জানি,তবে ওকে অবহেলা করো না।এই কয়েক বছরে এটুকু বুঝতে পেরেছি, জীবনে শুধু ভালোবাসা থাকলেই হয় না।বাবা মায়ের ভালোবাসা, তাদের ও পাশে পাওয়া লাগে।দুই ধর্মের মানুষ হয়ে ভালোবাসা যায় হয়তো কিন্তু সংসার করা যায় না।”

প্রথম কয়েকদিন ধ্রুব মায়ের জন্য ভীষণ কাঁদতো।ধ্রুবর সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁদতো পিচ্চি শালুক।শালুক তখন ভীষণ ছোট, কারো কান্না দেখলেই সে কাঁদে।

শুরু হলো সেলিমের স্বভাব বদলে যাওয়া।ধ্রুব তখন তার চক্ষুশূল হয়ে গেলো। ধ্রুবর দিকে তাকালেই দীপালিকে দেখতে পেতো। তখনই তার মাথা গরম হয়ে যেতো।
কোনো কারণ ছাড়াই নিজের রাগ উঠলেই ধ্রুবকে ইচ্ছেমতো মারতেন।মার খেতে খেতে ধ্রুবর সারা শরীর কালসিটে পড়ে গেলো।
কেউ তাকে থামাতে পারতো না তখন,রুমের দরজা বন্ধ করে ছেলেকে ভীষণ মারতেন।উন্মাদ হয়ে যেতেন।

ছোট্ট ধ্রুব কি বুঝতে পারতো বাবার মনের কষ্ট?

কে জানে!

হয়তো বুঝতে পারতো, এজন্যই কাঁদতো না।মার খেয়ে ধ্রুব কিছুতেই কাঁদতো না।সে জানতো তার কান্না শুনলে দাদা দাদী বাবাকে গালাগালি করবে,বড় চাচা রাগারাগি করবে,শালুক কাঁদবে।
ছোট শালুক ঠোঁট বাঁকিয়ে কাঁদলে ধ্রুবর ভীষণ খারাপ লাগে।ছিঁচকাদুনে মেয়ে সারাদিন শুধু কাঁদে,খাবার খেতে গেলে কাঁদে,গোসল করাতে গেলে কাঁদে,কেউ কোলে না নিলে কাঁদে,কারো কান্না শুনলে দ্বিগুণ শব্দে কাঁদে।

পুতুলের মতো দেখতে ছোট মেয়েটার কান্নায় ছোট চাচী বিরক্ত হন ভীষণ। দুই বছরের বড় ছোট শাপলা শালুককে নিয়ে চাচীর তখন দিশেহারা অবস্থা এরমধ্যে শালুকের সারাক্ষণ কান্না চাচীকে আরো বিরক্ত করে। ধ্রুব বড় মানুষদের মতো সব বুঝতে পারলো।
বাবার যে মনে ভীষণ কষ্ট, সেই কষ্টে না হয় তাকে খানিকটা মারে।অসুবিধা কিসের তাতে!

সবার সমস্যার সমাধান ধ্রুবর কান্না না করলেই হলো। এরপর ধ্রুব আর কিছুতেই কাঁদে না।

সেলিম সাহেবের মাথায় রক্ত উঠে যেতো আরো বেশি যখন দেখতো ধ্রুব কাঁদছে না।
কেনো কাঁদবে না ধ্রুব!তাকে কাঁদতে হবে,আঘাতের পরিমাণ বেড়ে যেতো হাজার গুণ।

কিন্তু ছেলের গলা দিয়ে শব্দ বের হতো না । রাগের মাথায় ধ্রুবর গলা টিপে ধরতেন,টপাটপ করে চোখ দিয়ে অশ্রুপাত হতো কিন্তু ধ্রুব কাঁদতো না।

রাত হলেই আদুরে বিড়ালের মতো বাবার গা ঘেঁষে ধ্রুব শুয়ে পড়তো। মাঝরাতে সেলিম সাহেব ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেন।কিন্তু রাগের সময় সব ভুলে যেতেন আবার।তার উপর গ্রামের মানুষের হাসাহাসি তাকে নিয়ে, সবকিছুর ঝাল মিটাতেন বদ্ধ ঘরে ছেলেকে মেরে।

বাবার দেওয়া সব আঘাত ধ্রুব ভুলে যেতো বাবার গা ঘেঁষে ঘুমালেই।বাবার শরীর থেকে কেমন মায়ের ঘ্রাণ পেতো ধ্রুব।মায়ের জন্য ধ্রুবর ভীষণ মন কেমন করে সারাক্ষণ। তবে ধ্রুব বুঝে গেছে এই কথা কাউকে বলা যাবে না,কেউ জানতে পারলে হয়তো ঝামেলা হবে।

স্কুলের একটা ছেলে ধ্রুবকে বললো, ধ্রুবর মা কোথায় থাকে সে জানে সেটা। সেদিন ধ্রুব আকাশের চাঁদ হাতে পেলো যেনো। স্কুল ছুটির পর ছেলেটার সাথে ছুটে গেলো মা’কে দেখতে। ভাবলো মা’কে বাড়ি ফিরিয়ে আনলেই বাবা আবার ঠিক হয়ে যাবে।

বাড়ির সামনের গেইট খোলা ছিলো, ধ্রুব ভেতরে ঢুকেই মা মা করে ডাকতে শুরু করলো।
দোতলার ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে দীপালি ছেলেকে দেখে সব কিছু ভুলে গেলো। ছুটে আসতে চাইলো ছেলের কাছে কিন্তু পারলো না।তার আগেই নিজের দুই দাদা দীপালিকে ঘরে আটকে রাখলো।

দীপালির পিসেমশাই ধ্রুবর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাহিরে নিয়ে ফেলে দিয়ে বললো, “এই বাড়ির আশেপাশে আর যদি দেখেছি তবে খুন করে নদীতে ফেলে দিবো।”

এসব শুনে সেলিম বাড়ির বাহিরে আম গাছের সাথে বেঁধে ধ্রুবকে বেধড়ক মারধর করলো। ধ্রুবর কানে শুধু ভেসে এসেছে সেদিন শালুকের কান্না।
যেই শালুক ধ্রুবর ব্যথায় ব্যথিত হয়েছে, তাকে কি ভালো না বেসে পারতো ধ্রুব?

নিজের সাথে নিজে আর যুদ্ধ করে পারলেন না সেলিম সাহেব। প্রতিদিন ছেলেকে এভাবে মেরে ও তার রাগ কমলো না।দীপালিকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলেন।

খবর পেলো দীপালির বিয়ে হয়েছে। এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেও বিয়ে করবেন।
ধ্রুব কতোবার বাবার পায়ে পড়েছে,যাতে বাবা নতুন মা না আনেন।কেননা স্কুলে আসা যাওয়া করতে করতে লোকে ধ্রুবকে বলতো তোর বাপে বিয়ে করলে তো তোরে আর দেখতে পারবে না।তোকে ও বের করে দিবে বাড়ি থেকে।

ধ্রুবর ভয় হলো,রাতে যদি বাবার সাথে ঘুমাতে না পারে সেই ভয় ধ্রুব বাবার কাছে কতো অনুনয় করলো।
নুরুল ইসলাম সাহেব ততদিনে নাতির জন্য পাগল হয়ে গেছেন।সবাই ভাবলো আবার বিয়ে করলে ধ্রুবর উপর অত্যাচার কমে যাবে,ঘরে বউ এলে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।নাতির এই কষ্ট দেখে নিজে অনুশোচনা করেন নুরুল ইসলাম সাহেব।

কিন্তু তার কি করার ছিলো?

দোষ তো করেছে ছেলে।কেনো এরকম একটা কান্ড ঘটালো সে?
কিভাবে পারলো অন্য ধর্মের একটা মেয়েকে বিয়ে করতে।দুই ধর্মের অপমান করলো তারা।ধর্ম তো ছেলেখেলা করার মতো ব্যাপার নয়।

ফরিদাকে বিয়ে করে আনলেন সেলিম। অল্পবয়সী ফরিদা সতীনের ছেলেকে দুই চোখে দেখতে পারতেন না।বকাবকি, রাগারাগি, যখন তখন মার দেওয়া সবই করতেন শুধু ভালোবাসতেন না।
সেই সময় হাসনা এগিয়ে গেলেন,ফরিদার হাত থেক ধ্রুবকে তিনি বাঁচালেন।
সেলিম সাহেব কারো সামনে ফরিদাকে কিছু না বললে ও রাতে বকাঝকা, মারধর করতেন ধ্রুবর সাথে এরকম ব্যবহার করার জন্য।
আবার রাতে গঞ্জনা শুনে ফরিদা দিনে ধ্রুবকে মারতেন।

এক বছরের মধ্যে ধ্রুব বুঝে গিয়েছিল এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই।বাবা ও নেই, মা ও নেই।
বাবার কাছে ঘুমানোর জন্য কতো আবদার করতো কিন্তু বাবা তার দিকে তাকাতো ও না।কথা বলা তো দূর।

ধ্রুবর কি ভীষণ কষ্ট হতো তখন। একা বিছানায় ঘুমাতো ধ্রুব এরপর থেকে। আস্তে আস্তে বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো।
ধ্রুবর একাকী জীবন শুরু হলো তারপর থেকে। দশটা বছর কেটে গেলো ছেলে বাবাকে ডাকে না।

একটা সময় পর অল্পবয়সী ফরিদা বুঝতে পারলো ধ্রুবর সাথে সে অন্যায় করছে।ধ্রুবর কি দোষ!
কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। ধ্রুব আর তার দিকে ফিরে ও তাকায় না।

নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হয় সেলিম সাহেবের, কিন্তু কি করার আছে!
এতো ভালোবাসলো যাকে,বাবা মায়ের মান সম্মানের কথা না ভেবে যাকে বউ করে আনলো সে কি-না তাকে ছেড়ে চলে গেলো!
তার কষ্ট কি কম হতো!

সেলিম সাহেব জানতে পারলেন না,হয়তো কখনো আর জানবেন ও না যে সেদিনের পর দীপালিকে গৃহবন্দী করে ফেলা হয়।বাবার মিথ্যে অসুখের কথা বলে দীপালিকে বাড়িতে নেওয়া হয়।
না দীপালির আর বিয়ে হয় নি।তবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিছুদিন না যেতেই।তারপর থেকে দীপালির জীবন চার দেয়ালে বন্দী কাটছে।
এখন অবশ্য বন্দী করে রাখা লাগে না। বিছানার সাথে লেগে গেছে দেবীর মতো সেই মেয়ে।
কে বলবে এই সেই দীপালি!

————–

সকাল বেলা শালুক যখন রুম থেকে বের হলো তখন তার চোখমুখ অন্যরকম হয়ে গেছে।দুই চোখ ফোলাফোলা।গাল লাল হয়ে আছে।

আশা শালুককে দেখে অবাক হলো। এক রাতের মধ্যেই একটা মেয়ের চেহারা এমন হলো কিভাবে!
হাসনা বেগম শালুককে ডেকে বললেন, “নাশতা করবি না?”

শালুক জবাব দিলো না। তার কিছুই ভালো লাগছে না।স্কুলের দিকে চলে গেলো। দুপুরে টিফিন পিরিয়ডে শালুককে চমকে দিয়ে ধ্রুব শালুকের ক্লাসে এলো। শালুকের ইচ্ছে করলো এক ছুটে গিয়ে ধ্রুব ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
মনে হচ্ছে যেনো কতো লক্ষ,কোটি বছর পর ধ্রুব ভাইকে দেখেছে।চির দুঃখী এই ছেলেটার জন্য শালুকের মনে যে কি পরিমাণ মায়া জমে আছে তা শালুক টের পায় ধ্রুবর যখন মন খারাপ থাকে তখন।
ধ্রুবর উপর হওয়া রাগ,অভিমান,জেদ সব শালুক ভুলে যায় তখন।

ধ্রুব এসে বললো, “আয় আমার সাথে।একটা ফুসকার দোকান হয়েছে জানিস,ভীষণ ভালো ফুসকা বানায় ওরা।ভাবলাম তোর তো জিহ্বায় জল চলে আসে ফুসকার কথা শুনলে তাই তোকে খাওয়াই।”

শালুকের কান্না এলো হঠাৎ করে। ধ্রুব শালুকের কান্না দেখে বললো, “তোর ছিঁচকাদুনি স্বভাব বাদ দিবি তুই?ঢং করছিস তুই?”

শালুকের একটু ও কষ্ট হলো না এই কথা শুনে। উৎসাহী হয়ে গেলো ধ্রুবর সাথে।রিকশায় করে একটা রেস্টুরেন্টে গেলো।ফুসকার বদলে ধ্রুব ফ্রাইড রাইসের অর্ডার দিলো ধ্রুব।
তারপর শালুকের দিকে তাকিয়ে বললো, “তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেনো?বিয়ে হবে আফিফার,ও কাঁদবে।তোকে দেখে মনে হচ্ছে তোর বিয়ে আফিফার বদলে।তাই কেঁদেকেটে নাক মুখ চোখ সব ফুলিয়ে ফেলেছিস।কাঁদিস না, তোকে দূরে বিয়ে দিবো না যা।কাছাকাছি দিবো যাতে সবাইকে দেখিস।ওই শুঁটকির বেপারি ক্যানসেল।”

শালুক খিলখিল করে হাসলো।ধ্রুবর মনে হলো সে যেনো ঝর্ণার কুলকুল শব্দে বয়ে চলে শুনছে।কি মধুর সেই হাসির সুর!
শালুক জিজ্ঞেস করতে চাইলো একবার রাতে কোথায় ছিলো ধ্রুব কিন্তু ভয়ে জিজ্ঞেস করলো না। ধ্রুব যদি রেগে যায়।ধ্রুবকে রাগাতে চায় না শালুক।

খেতে খেতে ধ্রুব বললো, “ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবি।আমি কিন্তু সব খবর পাই তোর।পড়ালেখা যদি একটু অবহেলা হয় তো দেখবি খুব খারাপ হবে।”

শালুককে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে এলো আবার ধ্রুব।আগেই স্যারের থেকে টিফিন পিরিয়ডের পর এক ঘন্টা ছুটি নিয়ে রেখেছিলো ধ্রুব।

স্কুল থেকে বের হয়ে আশাকে একটা টেক্সট দিয়ে বললো, “তোমার কাছে কৃতজ্ঞ আমি,তুমি না বললে জানতাম না আমার বোকা ফুলটা কাল থেকে না খেয়ে আছে।”

আশা রিপ্লে দিলো, “তুমি আমাকে ফ্রেন্ড বানিয়েছ,আমি ফ্রেন্ডের কর্তব্য পালন করেছি ধ্রুব।”

চলবে……..

রাজিয়া রহমান

(দয়া করে কেউ ধর্ম টেনে বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না।আমি দুই ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়েই ওদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে দিয়েছি।আমি চাই নি এই ব্যাপারে কারো মনে হোক যে আমি কোনো ধর্মকে ছোট করতে চেয়েছি।আজকে অনেক বড় পর্ব দিয়েছি এটা ভুলে গেলে চলবে না😒)
চলবে…….

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here