শালুক ফুলের লাজ নাই পর্ব -০৯+১০

#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই(০৯)

অলস বিকেলটা কেমন খাপছাড়া লাগছে আজকে।রোদ পড়ে গেছে,সন্ধ্যা নেমে আসবে ধরনীর বুকে।পলক চলে গেছে বিশ মিনিট আগে।আস্তে আস্তে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে।
শালুক বসে আছে নিজের রুমে। কিছু ভালো লাগছে না তার।লেখাপড়া ব্যাপারটা এতো জটিল কেনো শালুক ভেবে পায় না।
কি হতো লেখাপড়া মুক্ত পৃথিবী হলে?শালুক তখন মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে পারতো।

ধ্রুব এসে বিছানায় পা তুলে বসলো। তারপর শালুককে জিজ্ঞেস করলো, “কি সমস্যা তোর?বিজনেসম্যান হয়ে গেছিস?ডিল করা শিখেছিস?সাহস কতো তোর টিচারের সাথে ডিল করিস না পড়ার ব্যাপারে! ”

শালুক বিরসবদনে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো, “তোমার মনে রাখা উচিৎ পৃথিবীতে সবাই সব কিছুর জন্য আসে নি।আমি এসেছি অন্য কাজে।খাবো,ঘুরবো,উড়বো,বিয়ে করবো,সংসার করবো,বাচ্চা সামলাবো।এসব পড়ালেখায় সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয়!”

ধ্রুব কটমট করে তাকালো শালুকের দিকে।শালুকের ভীষণ ভয় লাগলো তবুও চেহারায় ডোন্ট কেয়ার ভাব ফুটিয়ে বসে রইলো।

ধ্রুব একটূ ভেবে মুচকি হেসে বললো, “ঠিক বলেছিস,তোর পড়ালেখার পিছনে অযথা এতো টাকা নষ্ট করার মানে হয় না।শোন,আমি চাচাকে বলে দিচ্ছি আফিফার বিয়ের পরেই তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতে। আমার জানাশোনা ভালো পাত্র আছে।আমার এক বন্ধুর বড় ভাইয়ের শুটকির ব্যবসায় আছে।বেশ অবস্থাপন্ন লোক ওরা।”

শালুক নাক কুঁচকে বললো, “কি বললে তুমি? শুটকি?
ওয়াক!”

ধ্রুব সরল মুখ করে বললো, “ওয়াক করছিস তুই?তুই জানিস কক্সবাজারে ওনার দুটো শুটকির আড়ৎ আছে।কতো টাকাপয়সাওয়ালা মানুষ ভেবেছিস?ধর,কক্সবাজারে থাকতে পারবি তুই,সেই সুবাদে আমরা ও যখন তখন ঘুরতে যেতে পারবো। হোটেল ভাড়া লাগবে না আমাদের। আচ্ছা এক কাজ করি,আমি চাচা চাচীর সাথে কথা বলি এই ব্যাপারে। ওদের ও তেমন কোনো ডিমান্ড নেই,শুধু একটা হাবাগোবা, বলদ টাইপের মেয়ে চাই।এক্ষেত্রে তোর চাইতে পারফেক্ট আর কাউকে পাবে বলে মনে হয় না। ”

শালুকের বুক ফেটে কান্না এলো।শুটকি শালুকের দুই চোখের বিষ।বাসায় শুটকি রান্না হলে শালুক সেদিন নিচতলায় খেতেও যায় না গন্ধের ভয়ে।অথচ সেখানে কি-না তার বিয়ের কথা বলছে এরকম একটা শুটকির ব্যবসায়ীর সাথে!
এই লোকের শরীর থেকে সবসময় শুটকির দুর্গন্ধ বের হবে,পারফিউমের বদলে এই লোক শুটকি গায়ে ঘষবে,ভবিষ্যতে শালুকের বাচ্চারা হবে শুটকি প্রেমী!

কল্পনায় এটুকু দেখেই শালুকের জ্ঞান হারাবার জোগাড়।

শালুকের কাঁদো কাঁদো চেহারার দিকে তাকিয়ে ধ্রুবর ভীষণ মায়া হলো।ইচ্ছে হলো চিবুকে হাত রেখে একবার বলে, “আমি আছি তো বোকা ফুল,তোকে অন্য কোথাও যেতে দিবো না।আমার মনের ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখবো। ”

ইচ্ছে হলেই সব কিছু করা যায় না।ধ্রুব ও করতে পারলো না। বরং হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে চাচীকে ডাকতে লাগলো। শালুক তড়িঘড়ি করে লাফিয়ে উঠে ধ্রুবর মুখ চেপে ধরলো। বিনীত ভঙ্গিতে বললো,”না ধ্রুব ভাই এই কাজ করো না।আমি ঠিকঠাক পড়বো।কিসের বিয়ে, কিসের সংসার!
অনলি লেখাপড়া করবে শালুক।শালুকের জন্ম হয়েছে পড়ালেখা করার জন্য।পড়তে পড়তে শহীদ হয়ে গিয়ে গিনেস বুকে নাম লেখানোর জন্য শালুকের জন্ম।

ধ্রুবর ভীষণ হাসি পেলো শালুকের কথা শুনে। এই যে শালুক তার মুখে হাত চেপে ধরে আছে,ধ্রুবর ভীষণ ভালো লাগছে।
বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা চাতক যেমন আনন্দিত হয় বৃষ্টির জল দেখে,ধ্রুবর ও তেমন আনন্দ হচ্ছে। তবুও ধ্রুব শালুকের হাত সরিয়ে দিলো। তারপর বললো, “আর কোনো দিন যেনো এসব কথা না শুনি আমি পলকের থেকে।”

ধ্রুব চলে যেতেই শালুক মাথার হিজাব খুলে ফেললো। উপরের পাটির দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ ভেবে একটা বুদ্ধি বের করলো।
ধ্রুবকে টাইট দেয়ার একটা দুষ্ট বুদ্ধি।

সন্ধ্যা বেলায় চা খাবার সময় শালুক কিচেন থেকে এক পিরিচে করে চিনি নিয়ে এলো কিছুটা। তারপর ধ্রুবর বেডরুমে গিয়ে বিছানার চাদরের চারদিকে ছিটিয়ে দিলো।
৩য় বিশ্বযুদ্ধে জয় লাভ করার মতো আনন্দ নিয়ে শালুক নিজের ঘরে গিয়ে ফিন্যান্স বই নিয়ে বসলো।
কিছুক্ষণ অর্থের সময় মূল্যের অংক করতে চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই মাথায় এতো সূত্র ঢুকলো না।

একবার ভাবলো ধ্রুবকে ডাকবে।পরক্ষণেই সেই চিন্তা বাতিল করে দিলো।যেই মানুষ তার জন্য শুটকি ব্যবসায়ী পাত্র পছন্দ করতে পারে সে আর যাই হোক,শালুকের শুভাকাঙ্ক্ষী কিছুতেই না।তার সাথে কিসের লেনাদেনা!

সবাই মিলে নিচতলায় গোল হয়ে বসেছে আফিফার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। আফিফার রুমে শাপলা, শালুক,আশা তিনজনই বসে আছে।
গতরাতের ঘটনার পর থেকে আদিবা বেগম আফিফাকে একা রাখতে ভীষণ ভয় পাচ্ছেন।পাছে মেয়ে যদি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় অথবা উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে এই ভয়ে!

ছেলের বাড়িঘর সবার পছন্দ হয়েছে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো ছেলেপক্ষকে জানাবে তাদের পছন্দের কথা।
সবার অনুরোধে শালুকের দাদা নিজে কল দিলেন চেয়ারম্যানকে।সব কথার শেষে সিদ্ধান্ত হলো, আগামী শুক্রবার অর্থাৎ আর ২ দিন পরে পাত্রপক্ষ আসবে এনগেজমেন্ট করতে।আর সেদিনই তারা বিয়ের তারিখ ফাইনাল করে যাবে।

আদনান কিছুটা স্বস্তি পেলো।আফিফাকে বিয়ে না দিয়ে নিজের বিয়ের কথা তুলতে পারছে না সে।এবার নিশ্চিন্ত হতে পারবে আফিফার বিয়ের পর। খালা খালুর সাথে কথা বলে ৩-৪ মাসের মধ্যে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলতে হবে।
আশা কে নিয়ে আদনানের ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আশাকে ভরসা করতে পারছে না আদনান।

রাতে সবাই যখন খেতে বসলো তখনই বাসার সদর দরজা নক করতে লাগলো কেউ একজন।মতির মা দরজা খুলে দিতেই দেখে ধুতি পাঞ্জাবী পরা একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে।
বিনীত ভঙ্গিতে বলছে,”ধ্রুব বাবু কি বাড়িতে আছেন?একবার ডেকে দিবেন?”

মতির মা মুখ বাঁকিয়ে এসে বললো, “ধ্রুব ভাইজানের কাছে এক লোক আসছে।দেখা করতে চায় ভাইজানের লগে।”

খাওয়া রেখে ধ্রুব উঠে গেলো, ধ্রুবর পিছন পিছন গেলো হাসনা বেগম।

হিন্দু লোকটাকে দেখেই ধ্রুব চমকে উঠলো যেমন, তেমন চমকালো হাসনা।এতো বছর পর কেনো এসেছে!

ধ্রুব কিছু বলার আগেই লোকটা বললো, “দীপালি মা বড়ই অসুস্থ বাবু,বারবার আপনার নাম নিচ্ছেন।আপনাকে একটু দেখতে চাচ্ছেন।”

ধ্রুব শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “দিপালী কে?আমি এই নামে কাউকে চিনি না।”

হাসনা পেছন থেকে ধ্রুবকে ধরে বললেন, “এভাবে বলতে নেই ধ্রুব।যাই হোক,জন্মদাত্রী মা তোর।”

ধ্রুবর রাগ হলো ভীষণ। চিৎকার করে বললো, “নেই,নেই।কেউ নেই আমার।আমার মা ও নেই,বাবা ও নেই।এতো বছর ধরে আমাকে যার প্রয়োজন হয় নি আজকেও আমাকে তার লাগবে না।আমি এমন কোনো রোগের ঔষধ না যে আমাকে দেখলে অসুস্থ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে।”

ধ্রুবর চিৎকার শুনে ডাইনিং টেবিলে বসা সবাই চমকে উঠলো। এতো রেগেছে কেনো ধ্রুব?

সবচেয়ে বেশি ভয় পেলো শালুক।এরকম চিৎকার করে কেউ কথা বললে শালুকের ভীষণ কান্না পায়,ভয়ে হাত পা কাঁপতে থাকে।

একে একে সবাই দরজার দিকে এগিয়ে এলো। সবাইকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ধ্রুব চলে গেলো নিজের রুমে।

ধ্রুবর বাবা সেলিম সাহেব এতোক্ষণ তার বাবার রুমে বসে ছিলেন।যেহেতু ধ্রুব তার মুখোমুখি হওয়া পছন্দ করে না তাই তিনিও ছেলের সামনে পড়তে চান না।ছেলে বাড়িতে যেই ক’টা দিন আছে যাতে নিজের মতো করে থাকতে পারে এজন্য নিজেই সরে সরে থাকেন।
ধ্রুবর চিৎকার শুনে তিনিও বের হয়ে এলেন।ধ্রুবকে উপরের দিকে যেতে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে?ধ্রুব এরকম চিৎকার করলো কেনো?”

হাসনা বেগম সবটা বলতেই সেলিম সাহেবের মুখ শুকিয়ে গেলো। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ফরিদার দিকে তাকালো। ফরিদার চোখ দুটো কি ছলছল করছে অশ্রুতে?
কে জানে,দূর থেকে তিনি বুঝতে পারলেন না তা।

হাসনা বেগম গিয়ে ধ্রুবকে ডাকলেন।ধ্রুব দরজা খুললো কিছুটা সময় নিয়ে। মোটা পিলারের আড়াল থেকে শালুক তাকিয়ে রইলো ধ্রুবর দিকে।

ধ্রুব হাসনা বেগমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর হুট করেই চাচীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো ছোট বাচ্চাদের মতো করে। সেদিনই শালুক প্রথম জানতে পারলো, “ধ্রুব নামক লৌহপদার্থের একটা মানুষের মতো মন আছে।”

ধ্রুব খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো। ভেজা স্বরটাকে লুকাতে পারলো না আর।অন্যদিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো, “কিছু বলবে চাচী?আর যাই বলো,আমাকে এক অনুরোধ করো না ওনাকে দেখতে যাই যেনো। এই দুনিয়ায় বাবা মা থাকার পরেও তো অনেকে অনাথ হয়,আমি ও তাদের দলের একজন। আমার কোনো পিছুটান নেই চাচী।”

হাসনা বেগম কোমল গলায় বললো,” সে যে জন্ম দিয়েছে বাবা।পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছে। ”

ধ্রুব রাগ হলো ভীষণ। চিৎকার করে বললো, “কেনো জন্ম দিলো চাচী?আমি কি নিজে থেকে এই দুনিয়ায় আসতে চেয়েছি?আমাকে কেনো তারা এই দুনিয়ার আলো দেখালো?আর তারপর দুজনের যখন দুজনের প্রতি আগ্রহ ফুরিয়ে গেলো তখন দুজনেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। কেউ ভাবলো না আমার কথা! ”

হাসনা বেগম কি জবাব দিবেন এই প্রশ্নের!
দীপালি এই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে ধ্রুব যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন।ধ্রুব এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।কিছুদিন পর অনার্স কমপ্লিট হবে তার।এতো বছর পর আজকে দীপালির মনে হলো ছেলের কথা!

ধ্রুব নিজেকে সামলে নিতে বেশি একটা সময় নিলো না।মুচকি হেসে চাচীকে বললো, “আমি শুয়ে পড়ি চাচী।যাও তুমি। আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আমি খুব ভালো আছি চাচী। যাও তো এখন।”

হাসনা বেগম যন্ত্রের মতো নিচে নেমে এলো। নিচতলায় সবাই বসে আছে হাসনা বেগমের অপেক্ষায়। হাসনা বেগমকে বিমর্ষ হয়ে আসতে দেখে সবাই বুঝলো ধ্রুবকে মানাতে পারে নি হাসনা বেগম।

সেলিম সাহেব চোরের মতো মুখ করে বসে রইলেন।সমস্ত ব্যাপারে তিনি নিজেকে সবচেয়ে বড় অপরাধী ভাবেন।
আদিবা বেগম আপনমনে বলতে লাগলেন,”কেনো সেই সময় আবেগে পড়ে এরকম কাজ করলে মেজো ভাই?আমরা সবাই কতো নিষেধ করলাম।হিন্দু মুসলমানে বিয়ে না করতে সবাই কতো নিষেধ করলো।তবুও করলে।
তারপর আর তাকে ধরে রাখতে পারলে না কেনো?
সে তো বহতা নদীর জলস্রোত ছিলো, তোমার তো তার সাথে মেলামেশা করার সময় বুঝা উচিত ছিলো সে কেমন মানুষ।
তার পক্ষে কি হাতেপায়ে শিকল পরে সংসারী হওয়া সাজে না-কি!দেবীর মতো রূপ নিয়ে জন্ম নেওয়া মেয়ে তো আমাদের মতো হেঁশেল ঠেলতে আসে নি।”

সেলিম সাহেব ভীষণ রেগে গেলেন। আজ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না।চিৎকার করে বললেন,”দোষ কি আমার ছিলো ভাবী?তোমার সম্মানিত শ্বশুর কি কান্ড করেছে?তার মুখে না-কি চুনকালি পড়ে গেছে আমি হিন্দু মেয়ে বিয়ে করায়।দীপালি কি তোমাদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে নি ভাবী?
এতো বড় ঘরের মেয়ে হয়েও তো সে নিজেকে সবার মতো সাধারণ ভেবেছে।বাবা তার হাতের পানি খাবেন না,খাবার খাবেন না,তার ছায়া দেখলেও সরে যাবেন।সে যতো বাবা বাবা বলে আপন হতে চাইতো,বাবা ততোই তাকে ঘৃণা করতো।
এই পৃথিবীতে কি আর কেউ এরকম বিয়ে করে নি?”

নুরুল ইসলাম সাহেব জবাব দিতে গিয়েও দিলেন না।ছেলে এখন উত্তেজিত হয়ে আছে।এখন তিনি যৌক্তিক কথা বললেও সে বুঝবে না।এসব নিয়ে তিনি ভাবছেন ও না।তিনি শুধু ভাবছেন নিজের নাতির কথা।

ছেলেটা এক বুক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে।

দোতলার টানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে শালুক নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। ধ্রুবর যত অপরাধ, অন্যায় সব শালুক এক নিমিষেই ভুলে যায় ধ্রুবর মন খারাপ দেখলে।শালুকের ইচ্ছে করছে যেকোনো মূল্যে ধ্রুবর মন ভালো করে দিতে।

হঠাৎ করেই শালুকের মনে হলো ধ্রুবর বিছানায় ও চিনি ছিটিয়ে এসেছে রাগ করে যাতে ওকে পিপড়া কামড়ায়।এখন যদি সত্যি পিপড়া কামড়ায় ধ্রুবকে!
শালুকের কান্না পেলো ভীষণ। কেনো তখন এই কাজ করেছে?এখন কি করবে?
ধ্রুব কি দরজা খুলবে?

শালুক ধ্রুবর রুমের দরজা নক করলো।ধ্রুব ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করলো,”কি চাই?”

শালুক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বললো, “মা পাঠিয়েছে আপনার বিছানা ঝেড়ে দিতে।”

ধ্রুব দরজা না খুলেই বললো, “লাগবে না ভাগ এখান থেকে আমি এলোমেলো বিছানায় ঘুমাতে পছন্দ করি।”

শালুকের কান্না এসে গেলো। চোখের জল মুছে শালুক আবারও ডাকলো।ধ্রুব আর জবাব দিলো না।

ভেতরে ধ্রুব ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে যেতে লাগলো যন্ত্রণায়। এমন অদ্ভুত ভাগ্য কেনো তার!
কে দিবে এই জবাব?
#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই(১০)

সারারাত ধরে শালুক চটপট করে কাটিয়েছে।কি হচ্ছে ধ্রুবর রুমে,কে জানে!ধ্রুবর কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে?
আজ আর শালুককে সকাল বেলায় ডেকে হয়রান হতে হয় নি কারো।
শালুক নিজেই উঠে গেছে সাত সকালে।

ধ্রুব বের হলো একটা হলুদ টি-শার্ট পরে।শালুকের সাথে ধ্রুবর দেখা হলো সকালে নাশতার টেবিলে। বিপরীত চেয়ারে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলো ধ্রুবকে।

হাসনা বেগম চা দিতে দিতে ধ্রুবকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “এ কি অবস্থা তোর ধ্রুব?এসব কি?”

ধ্রুব ঘাড় চুলকে জবাব দিলো, “কি জানি চাচী,বুঝতেছি না।সারারাত এতো পিপড়া কামড়েছে কেনো জানি।”

শালুক দেখলো ধ্রুবর সারা শরীর লাল হয়ে গেছে পিপড়ার কামড়ে।দুচোখ দিয়ে আপনাতেই জল চলে এলো।
আদনান আর আশা ও এসে যোগ দিয়েছে নাশতার টেবিলে।

শালুকের চোখে পানি দেখে আদনান বললো, “কি রে,ফেলটুস।কাঁদছিস কেনো?”

শালুক দ্রুত চোখ মুছে নিলো।ধ্রুব এক নজর সেদিকে তাকিয়ে আবারও খেতে লাগলো।

আশা হেসে বললো, “শালুক,তোমাকে কেমন মনমরা লাগছে আজকে।”

শালুক জবাব দিলো না। তার আগেই আদনান হাসতে হাসতে বললো, “গিয়ে দেখো,কোনো পরীক্ষায় ফেইল করে বসে আছে। ওর পিছনে অযথা টাকা পয়সা ওয়েস্ট করা হচ্ছে। গাধা দিয়ে তো আর হালচাষ হয় না।ওরে দিয়েও আর পড়ালেখা হবে না।তুমি আমাদের আকিফকে আসার পর থেকে দেখেছো শালুকের মতো করতে?দুজনেই সেইম ক্লাসে পড়ে। আকিফকে তো পড়ার টেবিল থেকে নড়ানোই যায় না।আর শালুককে দেখো,যেখানে যাবে সেখানেই দেখবে শালুক হাজির নিজের এই বোঁচা নাক নিয়ে। ”

শালুক শক্ত হয়ে বসে রইলো। ধ্রুব বিরক্ত হয়ে আদনানের দিকে তাকালো। আদনান ধ্রুবর সেই দৃষ্টিকে পাত্তা দিলো না। বরং আশার সামনে কিছু বলতে পেরে খুশি হলো।

শালুকের এসব কিছুই কানে গেলো না।সে ভাবছে ধ্রুবর কথা।ধ্রুবর তো গতকাল এমনিতে মন খারাপ ছিলো। মনের কষ্টে হয়তো শরীরের এই কষ্টকে সে পাত্তা দেয় নি।
কেনো এমন একটা কাজ করলো শালুক!
এতো বোকা কেনো সে?

ভেবে পেলো না শালুক।

হাসনা এসে জিজ্ঞেস করলো, “বসে আছিস যে,স্কুলে যেতে হবে না?”

শালুক জবাব দেয়ার আগে আবারও আদনান বললো, “ওর আর স্কুলে গিয়ে কি লাভ চাচী!এরকম নিরেট গাধা কি আর এই দেশে আছে?
ওর মাথা সিটিস্ক্যান করে দেখা দরকার এই মাথায় আসলে কি আছে?
ও পড়ে কি হবে আর?পড়ালেখা বন্ধ করে মতির মায়ের সাথে কাজে লাগিয়ে দাও।”

ধ্রুবর প্রচন্ড রাগ হলো এসব শুনে।তবে শালুকের সামনে কিছু বললো না।শালুক এবার ভীষণ কষ্ট পেলো।এই লোকটা যখন তখন শালুককে ক্রিটিসাইজ করে কথা বলে। সব সময় সব দুষ্টুমি, মশকরা মানুষের হজম হয় না।যখন মন বিক্ষিপ্ত থাকে তখন এসব কথা গায়ে ভীষণ লাগে।
শালুকের ও লাগলো ভীষণ।আদনানের জন্য যেই অনুভূতি আগে হতো তার ছিটেফোঁটাও এখন আর মনে নেই।বরং আদনানকে শালুকের ভীষণ স্বার্থপর মনে হয়। সেদিন আফিফাকে কিভাবে ধমকেছে শালুক তা দেখেছে।

লেখাপড়ার জন্য ধ্রুব ও তো তাকে বকাঝকা করে, তা তো কখনো এমন হয় না যে শালুকের মনে আঘাত লাগে।

উঠে দাঁড়িয়ে শালুক আদনানকে বললো, “আমার মাথায় কি আছে সেটা নিয়ে না ভেবে নিজের কুৎসিত মনটাকে আগে পরিষ্কার করো।”

ধ্রুবর ভীষণ ভালো লাগলো শালুকের এই প্রতিবাদ। মাথা নিচু করে ধ্রুব মুচকি হাসতে লাগলো।
বাহিরে অন্ধকার হয়ে এসেছে। বৃষ্টি হবে যেকোনো মুহুর্তে।শালুক উপরে চলে গেলো।

আশা হেসে বললো, “ছোটদের সাথে আন্তরিক ব্যবহার করতে হয় আদনান। তোমার মধ্যে আমি সেই আন্তরিকতা দেখি নি কখনো। ওদের কে ভালোবেসে বুঝিয়ে কথা বলতে হয়।তুমি সবসময় শালুককে হার্ট করে কথা বলো। ধ্রুব ও কিন্তু শালুকের ব্যাপারে কনসার্নড।ইভেন সেদিন স্কুলে গিয়ে টিচারদের ও রিকুয়েস্ট করে এসেছে শালুককে যেনো একটু স্পেশাল কেয়ার নেওয়া হয়।
তুমি কেনো এমন বিহেভ করো আদনান? ”

আদনান জবাব দিতে পারলো না। কিছুটা রুষ্ট হলো আশার কথায়। সারাক্ষণ আশা ধ্রুবর প্রশংসা করে আদনানের তা সহ্য হলো না।

শালুক ঝড়ের বেগে উপরে গিয়ে স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ নিয়ে নেমে এলো। কোনোদিকে না তাকিয়ে হনহন করে বের হয়ে গেলো। টিফিনের টাকাও আজকে নিলো না শালুক।
ধ্রুব চেয়ার থেকে উঠে শালুককে ডাকলো কিন্তু শালুক দাঁড়ালো না।

আদনানের দিকে তাকিয়ে ধ্রুব বললো, “কথা বলার সময় ভেবে বলিও।শালুককে নিয়ে এরকম ফাজলামি যখন তখন করো না।সুন্দর করে কথা বলতে না পারলে তোমার কথা বলার দরকার নেই শালুকের সাথে।”

ধ্রুব দ্রুত উপরে গেলো।নিজের রুমে গিয়ে ছাতা নিয়ে বের হয়ে আসতেই আশা পথ আটকালো ধ্রুবর।জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাবে?আমি ও যাবো চলো।”

ধ্রুব উদ্বিগ্ন স্বরে বললো, “শালুককে ছাতা দিয়ে আসতে হবে।বৃষ্টির পানিতে শালুকের এলার্জি আছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে।”

ধ্রুব না দাঁড়িয়ে বের হয়ে গেলো, ধ্রুবর পিছু পিছু আশাও বের হয়ে গেলো। আদনান বসে বসে আশার ছুটে যাওয়া দেখলো।
আকাশ আরো অন্ধকার হয়ে আসছে।কেমন গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘনঘন। আশাকে ফেলে ধ্রুব ছুটে গেলো। শালুককে থামাতে হবে যেকোনো মূল্যে।
মেঘের ডাককে শালুক প্রচন্ড ভয় পায়। সেই ছোট বেলা থেকেই।একা থাকলে শালুক মারাত্মক ভয় পেতে পারে ভেবে ধ্রুব দৌড়াতে লাগলো। রাগের মাথায় হয়তো শালুক বৃষ্টিতে ভিজবে।

শালুক রেগে গিয়ে দ্রুত হাটছে,ধ্রুব দৌড়ে এসে শালুকের মাথায় ছাতা ধরতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো।

আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানালো ধ্রুব বৃষ্টি এই মুহুর্তে দেয়ায়।আর এক মুহুর্ত আগে হলেও শালুক ভিজে যেতো।
বৃষ্টি বেশ জোরেশোরে হচ্ছে দেখে ধ্রুব শালুকের হাত ধরে একটা বন্ধ দোকানের সামনে নিয়ে দাঁড়ালো। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য ছাতা খুলে শালুকের সামনে দিয়ে রাখলো যাতে সামনের দিক থেকে বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটা না আসে শালুকের গায়ে।

ভিজতে ভিজতে আশা এগিয়ে এলো। আশার ভীষণ ভালো লাগছে ভিজতে।ধ্রুবকে ডেকে আশা বললো, “ভিজবে ধ্রুব?আসো।”

ধ্রুব হেসে বললো, “এখন না আশা।শালুক ভয় পেতে পারে। ”

হঠাৎ করেই বিকট শব্দে মেঘ ডাকলো,শালুক ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। ধ্রুব শালুকের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো, ” শালুক শোন কি হয়েছে একবার।আমাদের ভার্সিটির একটা গল্প বলি তোকে।”

শালুকের হঠাৎ করেই হাসি পেলো। মাথামোটা শালুক কিছু না বুঝলেও এটুকু বুঝে গেলো ধ্রুব ভাই আসলে গল্পটা বলতে চাইছে শালুক যেনো মেঘের গর্জনের ব্যাপারটা ভুলে যায়।
যার সাথে কথা বলতে গেলেও বিরক্ত হয়ে যায় সে কি-না এখন নিজ থেকেই শালুকের সাথে কথা বলছে অনবরত, শালুক ভয় পাচ্ছে দেখে দুই হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।

একটা মানুষ তার ব্যাপারে এতো কিছু ভাবে অথচ সে কি-না তাকে এভাবে কষ্ট দিলো?
কিভাবে পারলো শালুক এরকম করতে?

ধ্রুব বললো, “আচ্ছা তোকে একটা কৌতুক বলি শোন।রেলওয়েতে ইন্টারভিউ হচ্ছে। একটি চটপটে ছেলেকে সবাই একটু বাজিয়ে নিতে চাইলেন।
: ধরো, একটা দ্রুতগামী ট্রেন আসছে। হঠাৎ দেখলে লাইন ভাঙা। কী করবে তুমি?
– ট্রেন থামাতে লাল নিশান ওড়াব।
: যদি রাত হয়?
– লাল আলো দেখাব।
: লাল আলো যদি না থাকে?
– তা হলে আমার বোনকে ডাকব।
: বোনকে! কেন?
– ওর অনেক দিনের শখ একটা ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট দেখবে!”

আশা হেসে উঠলো শব্দ করে, শালুক মুচকি হাসলো।

ধ্রুব কিছুক্ষণ পর শালুককে বললো, “শালুক,লেখাপড়া ব্যাপারটা এমন কঠিন কিছু না।মানুষ চাইলেও পারে কিন্তু।মানুষের চেষ্টার কাছে অসাধ্য কিছু নেই।মানুষকে এজন্যই তো আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয় শালুক।সৃষ্টির সেরা জীব।তবে তুই কেনো এতো অবহেলা করছিস বল?
লেখাপড়া শুধু নিজের জন্য হয়।সব কিছু সবাইকে দেওয়া যায়,মানুষ ছিনিয়ে নিতে পারে। পারে না শুধু কারো জ্ঞানকে ছিনিয়ে নিতে। তুই তো এমন ছিলি না শালুক।ছোট বেলায় আমার হাত ধরেই তোর পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয়েছিল। তবে কেনো দিনেদিনে লেখাপড়ার ব্যাপারে এতো উদাসীন হয়ে যাচ্ছিস তুই?
তোর না স্বপ্ন ছিলো শালুক টিচার হবি।সেই স্বপ্ন নিয়ে একবার ভেবে দেখ।নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস কর কেনো এমন করছিস।এখনো সময় আছে শালুক।বাকী জীবন পড়ে আছে সামনে। ”

শালুক কিছু বললো না। আসলে ও শালুক জানে না ঠিক কিভাবে কিভাবে সে লেখাপড়ায় এতো পিছিয়ে পড়েছে। কেনো এতো অবহেলা পড়ালেখার ব্যাপারে তার!
হুট করেই শালুক সিদ্ধান্ত নিলো তাকে পড়তে হবে।বেশ ভালো করে পড়তে হবে।যাতে কেউ তাকে লজ্জা দিয়ে কথা বলতে না পারে।

মুহুর্তেই শালুকের মন ভালো হয়ে গেলো। সব কিছু ভালো লাগতে শুরু করলো। এই যে একটু দূরে আশা দাঁড়িয়ে আছে, আশাকে ও এখন শালুকের ভীষণ ভালো লাগছে।
ধ্রুব ভাইকে ভীষণ ভীষণ ভালো লাগছে।
এই যে এখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে তাও ভালো লাগছে শালুকের।

বৃষ্টি একটু কমতেই শালুক ছাতা নিয়ে স্কুলের দিকে গেলো। ধ্রুব আর আশা বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

কিছু দূর যাওয়ার পর আশা বললো, “ধ্রুব,শালুককে ভীষণ ভালোবাসো তুমি, না?”

ধ্রুব চমকালো ভীষণ। শালুক তার মনের মনিকোঠায় লুকিয়ে রাখা ভালোবাসার একমাত্র বোকা ফুলের নাম।যার কথা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না,কেউ বুঝে নি।যাকে সন্তর্পণে ধ্রুব লুকিয়ে রেখেছে নিজের মনে।

আশার প্রশ্নের জবাবে হেসে ফেললো ধ্রুব।তারপর বললো, “না তো,তেমন কোনো ব্যাপার না।”

আশা হাসলো।তারপর বললো, “আমি সাইকোলজি নিয়ে পড়ছি ধ্রুব।মানুষের মন খুব ভালো করে না পড়তে পারলে ও তোমার মনটা কিছুটা পড়তে পেরেছি। আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল না।তুমি অস্বীকার করতে চাইলে করতে পারো।তবে আমি ৯৯.৯% শিওর।তোমার মনে শালুকের জন্য একটা সফট কর্ণার আছে।
তুমি শালুককে প্রচন্ডরকম ভালোবাসো যেমন, তেমন নিজের ভালোবাসাকে ভীষণ সতর্কতার সাথে চেপে রেখেছ নিজের মধ্যে। তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে ধ্রুব।
তুমি আমার ফ্রেন্ড হবে?”

ধ্রুব হাসলো।হঠাৎ করে ভীষণ গম্ভীর স্বভাবের ধ্রুবর মনে হলো, কারো সাথে নিজের মনের কথাটা শেয়ার করে হালকা হওয়া দরকার। আশা অবশ্যই ভীষণ ভালো মেয়ে।তার সাথে শেয়ার করাই যায়,বিশেষ করে আশা যখন বুঝে গেছে ব্যাপারটা।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির জল হাতের মুঠোয় নিয়ে ধ্রুব বললো, “শালুককে আমি ভীষণ ভালোবাসি।ভীষণ মানে ভীষণ রকম। ঠিক যেমন করে ঝিনুক ভালোবেসে নিজের বুকের মধ্যে মুক্তোকে লুকিয়ে রাখে।তেমনই আমি ও মনের গোপনে শালুককে লুকিয়ে রেখেছি ভালোবেসে।”

আশা মুচকি হেসে বললো, “শালুক ভীষণ লাকি গার্ল।তাকে এরকম করে কেউ ভালোবাসে অথচ সে বুঝতেও পারছে না সেটা। ”

ধ্রুব বললো, “তুমি ও তো কম লাকি নও আশা।আদনান ভাইয়ের মতো একজন মানুষ পেয়েছ,আদনান ভাই ও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”

শুনে আশা হাসলো ভীষণ। তারপর বললো, “তোমার চোখে শালুকের জন্য যেমন ভালোবাসা প্রকাশ পায়,আদনানের চোখে আমি এখনো সেটা দেখি নি।যেদিন দেখবো সেদিন আমি নিজেই বলবো আমি ও লাকি।”

আদনান অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে আশা আর ধ্রুব ফিরে আসার। দুজন ভিজে বাড়ি ফিরলো অনেকক্ষণ পরে।আদনান দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলো দুজন হেসে হেসে কথা বলছে।বৃষ্টিতে ভেজার কারণে আশার গায়ের সাথে ওর ফতুয়া লেপ্টে আছে।আশাকে ভীষণ কামনীয় লাগছে।

আদনানের ভীষণ রাগ লাগলো। ধ্রুব কি আশার প্রেমে পড়ে গেছে? আশা যে ধ্রুবর প্রেমে পড়েছে তা আদনান বুঝে গেছে।
যে করেই হোক ধ্রুবকে পথ থেকে সরাতে হবে।

আশা এসে আদনানকে হালকা একটা হাগ দিয়ে বললো, “দারুণ মজা লেগেছে আজকে জানো।এরকম বৃষ্টি তো আগে দেখি নি। ভীষণ এনজয় করেছি।”

আদনানের ইচ্ছে করলো একবার বলতে,”পুরুষ মানুষের সাথে রংঢং করেছিস বৃষ্টির মধ্যে, এনজয় তো করবি।”

কিন্তু বললো না। আশাকে এসব কিছু বলে হাতছাড়া করতে চায় না আদনান।

চলবে……

রাজিয়া রহমান
চলবে…….
রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here