শিশিরের বিন্দু
৩য় পর্ব
শিশির ঘুরে তাকিয়ে দেখলো কণা হাত টেনে ধরেছে। শিশিরকে ঢোক গিলতে দেখে কনা হেসে উঠলো।
___ ” ভাইয়া বিয়েতে গায়ে হলুদে রেডি থাকবেন কিন্তু”।
___ ” রেডি থাকবো মানে? ”
শিশির জোর করে হেসে বলল। কণা চোখ টিপ দিয়ে বলল,
___ ” এক্সট্রা খাতির যত্ন করতে হবে তো আপনার “।
তখন শিশিরকে বাইরে থেকে ছোট ফুপি ডাক দিল। কোন মতে পড়িমরি করে শিশির এক ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলো। কনা আর শিশির কথা গুলো বিন্দু শুনছিল পর্দার ওপাশ থেকে। এত এত হাসি আসছিল যে ওর বলার মত না। সেদিন বাসায় আসার পর থেকে শিশির এত এত মন খারাপ করেছে যে বলার মত না। রুমের লাইট অফ করে শিশির আকাশ পাতাল ভাবছিল আর নিজের কপালের উপর নিজেরই আক্ষেপ করছিলে এই বলে যে, ” কোন খুশিতে যে বাবাকে এত ভয় পায় ও, ইচ্ছা করছে ওর সোজা বাবার সামনে যেয়ে বলে দিক এই বিয়ে ও করবে না। কিন্তু কিছুই করার নেই বাবাকে বলতেও পারবে না বিয়ে আটকাতেও পারবে না। এমন সময় দরজায় নক করল কে যেন,বাইরে শুনতে পেল ছোট চাচ্চুর গলা। রুমে ঢুকেই আগে লাইট জ্বালালো ছোট চাচ্চু। শিশিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” আচ্ছা বল তো তোর হইছেটা কি? ”
___ ” আমার আবার কি হবে? কিছুই হয় নাই! ”
___ ” যেদিন থেকে বিয়ে ঠিক হইছে সেদিন থেকে চেহারার এমন হাল বানায়ে রাখিছিস দেখলে মনে হচ্ছে কঠিন আমাশয় চলছে তোর “।
___ ” ফাউ কথা,বলো না তো চাচ্চু “।
___ ” তাহলে কাজের কথা শোন, কালকে বিয়ের শাড়ি কিনতে যাচ্ছি সবাই তুইও যাবি “।
___ ” বিয়েতে কি আমি শাড়ি পরব নাকি যে আমার শাড়ি কিনতে যেতে হবে “।
শিশির বিরক্ত হয়ে বলল। ছোট চাচ্চু ব্যাঙের মত মুখ করে বলল,
___ ” বাবা হারাধন বিয়ের শাড়ি কিনতে ছেলের যেতে হয় রেডি থাইকেন “।
এই বলেই চাচ্চু চলে গেলেন। শিশির গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসল ও করবেটা কি।
রাতে ভাত খাওয়ার সময় হাবিব সাহেব শিশিরকে বললেন, কালকে শপিংয়ে যেতে হবে সবার সাথে। শিশির ঘাড় নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে চুপ হয়ে গেল। খাওয়া শেষে ছাদে যেয়ে দোলনায় বসে আকাশ দেখতে লাগল শিশির।মনে হতে লাগল বিয়ে মানে জীবনটাই তেজপাতা হওয়ার পালা। মনে মনে ভাবলো যে করেই হোক এই বিয়ে ভাঙতেই হবে। কিন্তু কি ভাবে? অনেক ভেবে চিন্তে একটা প্লান বের করল ও। সাথে সাথে আবিরকে কল করে বলল, কালকে খুব সকালে যেন ও চলে আসে ওদের বাসায়। ইমপর্টেন্ট কাজ আছে। আবিরের বারেবার জিজ্ঞেসা করা স্বত্তেও শিশির বললনা যে ও কালকে করবেটা কি। ফোন রেখেই শিশিরের মন খুব ভাল হয়ে গেল। যদি এই প্লান কাজে লেগে যায় তো এই বিয়েটা আর ওকে করতে হবে না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বিছানায় গেল ও। গত দুই দিন একদম ঘুম হয় নি ওর চিন্তায় চিন্তায়। আজকে বড়ই শান্তির ঘুম হবে নির্ঘাৎ। এসব ভাবতে ভাবতেই শিশির তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।
বেশ সকালে বিন্দু ঘুম থেকে উঠলো।প্রতিদিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠা ওর অভ্যাস।পাশে তাকিয়ে দেখলো কনা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে৷ প্রতিদিন সকালে বিন্দু ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষন ব্যায়াম করে ছাদে বসে। কানে হেড ফোন দিয়ে ছাদে এসে ব্যায়াম করা শুরু করল। বিন্দুদের বাউন্ডারির বাইরেই শিশির আর আবির গাড়ির ভিতরে বসা। বিন্দুকে টিশার্ট আর টাইসে দেখে শিশির এর তো চোখের পলকই পড়ে না সেই অবস্থা। মেদহীন ফিট বডি।দেখে মনে হচ্ছে মিনিমাম সাড়ে পাঁচ ফিট লম্বা আর চুল গুলো চূড়া করে ঘাড়ের উপরে উঠিয়ে বেঁধেছে। এত এত সুন্দর লাগছে ওকে দূর থেকে মনে হচ্ছে গ্রীক দেবী ভেনাসের মূর্তি। কেউ যেন পাথর কুঁদে তৈরি করেছে ওকে। হঠাৎ আবিরের কথায় ওর হুশ ফিরলো। আবির বলল,
___ ” মামারে তোর বউ তো, কি আর বলব ভাবি হয় না হলে কিছু তো একটা উপমা দিতাম। যাই হোক এই সাত সকাল বেল ঘুম থেকে উঠে ভাবির কোঁদাকুদি দেখতে আসাটা সার্থক হল।”
মুখে একটা হাসি টেনে বলল আবির।শিশির চোখ গরম দিয়ে বলল,
___ ” ওটা ভাবি হয় তোর সম্মান দিয়ে কথা বল।”
___ ” তো ভাবিরে কি যেন বলবি, দেবো ডাক উনারে “।
___ ” কিছু বলা লাগবে না বাসায় চল “।
আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল শিশিরের দিকে। শিশির ভেবেছিল আজকে বিন্দুকে বলবে, ও যেনো ওর বাবাকে বলে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে থাকুক না হোক না বিয়েটা। শিশির আনমনে গাড়ি চালাতে লাগল। বাসায় ঢুকে গাড়ি গ্যারেজে রাখতেই ও দেখলো চমক কোমরে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে৷ শিশিরের দিকে তাকিয়ে ও বলল,
___ ” ভাইয় তুই গেছিলি কই “।
___ ” জগিংয়ে গেছিলাম “।
দায় ছাড়া উওর দিল শিশির। চমক হেসে দিয়ে বলল,
___ ” গাড়ি নিয়ে জগিংয়ে যেতে এই কাউকে প্রথম শুনলাম।”
আবির মুখ টিপে হাসতে লাগল। শিশির আবিরের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গানি দিয়ে থামিয়ে দিল। নাস্তা খেয়ে জাহানারা বেগম আর ছোট ফুপি রেডি হল শপিং এ যাওয়ার জন্য। সাথে আছে আবির আর শিশির। জ্যাম ঠেলে বসুন্ধরায় আসতে আসতে ওদের প্রায় এগারোটা বেজে গেল। জাহানারা বেগম রাহেলাকে কল দিয়ে শুনলেন ওরা অনেক আগেই এসে বসে আছে। জাহানারা আর ছোট ফুপিকে বসুন্ধরার মেইন গেটে নামিয়ে দিয়ে শিশির আর আবির চলল বেইজমেন্টে গাড়ি পার্ক করার জন্য। আবির আর শিশির দুজনে গাড়ি পার্ক করে যখন উপরে উঠতে লাগল, তখন আবির বলল,
___ ” দোস্ত ভাবি কি আইছে রে “?
___ ” আমি কি করে বলব “।
শিশির গম্ভীর মুখে উওর দিল। আবির আর কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে লাগল। শপিং মলের মধ্যে ঢুকে শিশিরের হার্টবিট যেন বহুগুনে বেড়ে গেল। সামনে বিন্দু দাঁড়িয়ে আছে তাও সাদা ধবধবে একটা লং ফ্রক পরে এসেছে ও কাঁধের উপরে হালকা গোলাপী একটা ওড়না। মাথার চুল গুলো ছেড়ে এসেছে আর সেগুলো কোমড় ছাড়িয়ে নিচে নেমে গেছে। শিশিরের বুকের বাঁ পাশে যেয়ে যেন লাগল সেই অনুভূতি। বিন্দু লজ্জায় তাকাতেই পারছে না। বটল গ্রীন টিশার্ট আর কালো জিন্স পরা শিশিরকে দেখেই ওর বুকের ধকধকানি হাজার গুনে বেড়ে গেছে যে ভয় হচ্ছে সেই শব্দ বাইরের কেউ যেন শুনে না ফেলে। বিন্দু এখান থেকেই টের পাচ্ছে শিশিরের শরীরের কড়া পারফিউমের ঘ্রান।
জাহানারা আর রাহেলা দুজনেই তাড়া দিলেন অনেক কিছু কেনার বাকি। আজকে মার্কেটে প্রচুর ভিড়। ক্যাপসুল লিফটে একতিল মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা নেই। সবাই খুব চাপাচাপি করে উঠলো। বিন্দু একদম শিশিরের বুকের ঘেঁসে দাঁড়ালো। শিশির যেন একদম নট নড়ন নট চড়ন হয়ে গেল। ওদিকে আরো একজন মানুষ উঠলো দোতালা থেকে।বিন্দু আরো এগিয়ে গেল শিশিরের দিকে। বিন্দুর গরম নিঃশ্বাস পড়তে লাগল শিশিরের বুকে। শিশিরের আজ অন্য এক অনুভূতি হতে লাগল এমন তো আগে তো কখনও হয় নি ওর। হঠাৎ লিফট থামতেই বিন্দুর যেন কেমন লাগে ও খামচে ধরে শিশিরের টিশার্ট ধাক্কা সামলাতে না পেরে শিশির ওকে জড়িয়ে ধরে। মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের কাহিনী কিন্তু অসম্ভব এক ভাল লাগার রেশ রেখে গেল ওদের দুজনের মধ্যেই…..
চলবে
মারিয়া আফরিন নুপুর
আপনাদের কাছে অনুরোধ দয়া করে কেউ নাইস নেক্সট এসব কমেন্ট করবেন না। গঠন মূলক কমেন্ট করলে খুশি হব।
শিশিরের বিন্দু
৪ র্থ পর্ব
শিশির যেন ঘোরের মাঝে চলে গেছে। এই প্রথম কোন মেয়েকে এত এত কাছে পাওয়া। বিন্দু লজ্জায় বারেবার লাল নীল বেগুনী যত কালার আছে সবই হচ্ছে। আবির পুরো ঘটনাই দেখেছে পাশ থেকে। লিফট থেকে নেমে সবাই যখন শাড়ির দোকানে ঢুকতে লাগল তখন পেছন থেকে শিশিরকে লক্ষ্য করে আবির বলে উঠলো,
___ ” কি রে দোস্ত ভাবি কোন ব্র্যান্ডের পারফিউম ব্যবহার করে।”
___ ” ফালতু প্যাঁচাল বন্ধ করে তার কাছেই জিজ্ঞেস করে নে।”
শিশির বিরক্ত হয়ে বলল। আবির এক গাল হেসে বলল,
___ ” একটু আগে তো দেখলাম দুজন দুজনের গলা ধরে ঝুলতেছিস তাই জিগাইছিলাম “।
শিশির এবার চুপ হয়ে গেল কিছুক্ষন পরে আস্তে করে বলল,
___ ” গলা ধরে ঝুলি নাই লিফটে ভীড় বেশি ছিল তাই তাই কাছাকাছি দাঁড়িয়েছিলাম “।
___ ” হইছে তো দোস্ত বুঝি তো আমরা নাকি, আইজ বাদে কাইলকা বিয়া উফফ দোস্ত কন্ট্রোল, কন্ট্রোল “।
শিশির সব বাদ দিয়ে ভাবতে বসলো এর আগেও তো হিয়ার সাথে প্রায় দেড় বছরের রিলেশন ছিল কিন্তু এমন ফিল তো কখনও হয় নি ওর৷ হঠাৎ হিয়ার কথা ভাবতেই শিশিরের মেরুদন্ড বেয়ে ঠান্ডা শীতল এক স্রোত নেমে গেল। ভালবাসা মানেই আঘাতের পর আঘাত এটা শিশিরের খুব ভাল করেই জানা আছে। কিন্তুভে বিয়েটা আটকাবে কি করে। শিশিরের ঘোর ভাঙলো রাহেলার ডাকে,
___ ” বাবা এই কালারটা পছন্দ হয়েছে তোমার? ”
কালো খয়েরির মিশেলে একটা লেহেঙ্গা হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে বিন্দু। শিশির ভাল করে তাকাতেই বুঝতে পারলো এই ড্রেসটা যেন শুধু এই মেয়েটার জন্যই বানানো হয়েছে। বিন্দু আড়চোখে শিশিরকে দেখছে আর বারেবার লজ্জায় লাল হচ্ছে। আসলে প্রথম প্রেমের মত ভয়ংকর বুঝি আর কিছুই নেই। এই ছেলেটার প্রেমে ও পড়ছে বারেবার। শিশির হেসে বলল,
___ ” যেটা আপনাদের ভাল লাগে “।
এই কথা শুনে বিন্দুর মুখের উজ্জ্বল বাতি যেন ফিউজ হয়ে গেল। আর সেটা শিশিরের চোখ এড়ালো না। পিচ্চি মেয়ে হলে যা হয় আর কি, ও উঠে শাড়ি দেখার ছলে বিন্দুর কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
___ ” স্বর্গের একটা টুকরো পৃথিবীতে নেমে এসেছে মনে হয় “।
বিন্দুর মুখের সেই উৎফুল্ল ভাবটা আবার ফিরে এলো। বিয়ের লেহেঙা কিনে ওরা চলল কসমেটিক কিনতে। বিন্দু আগে আগে, শিশির দুহাত পকেটে দিয়ে উদাস ভাবে সবার পিছে পিছে। বিন্দুর খুব ইচ্ছা করছে ওই মানুষটার পাশাপাশি হাঁটতে। তাই ধীরে ধীরে পিছাতে শুরু করল। পিছনে যেয়ে শিশিরের পাশাপাশি হাঁটা ধরল। শিশির মুচকি হাসছে আর পাশাপাশি হাঁটছে। এবার ভাল করে তাকালো ও বিন্দুর দিকে সবে কৌশর পার করা এক উদ্দীপ্ত তরুনী। চোখ মুখে এখনও সেই বাচ্চামী ছটাটা রয়ে গেছে। আবীর পাশে এসে বিন্দুর সাথে আলাপ জমিয়ে দিল,
___ ” ভাবী আর কি কি কেনার বাকি “।
___ ” আমি তো অত জানি না দেখি কি কি কেনে। ”
রিনরিনিয়ে উঠলো বিন্দুর স্বর।শিশির চুপ করে শুনছে আর হাঁটছে। আবীর তখন বলল,
___ ” জানেন ভাবী আমরা তিন বন্ধু আজকে বিপ্লব আসে নাই। আচ্ছা ভাবী আপনার একটা বোন আছে না! ওর নামটা যেন কি “?
আবীরের বলার ধরন শুনে বিন্দু হাসি আটকাতে পারলো না।হাসতে হাসতেই বলল,
___ ” ওর নাম কণা, আর হ্যাঁ বিপদজনক ১০০ হাত দূরত্ব বজায় রাখা স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী “।
এবার শিশিরও হেসে দিল বিন্দুর কথা শুনে আর আবির বলল,
___ ” গরম জিনিসের টেষ্ট বেশি হয় “।
ওদের এই সব খুনসুটির মধ্যেই শেষ হল শপিং। এক্সসেলেটরে নামতে যেয়ে বিন্দু আবারো পা পিছলালো পিছন থেকে শিশির খপ করে বিন্দুর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। সবাই সামনে ছিল আবির আর শিশির ছিল পিছনে। বিন্দু শিশিরের হাত শক্ত করে ধরে ফেললো। এত কাছাকাছি এলো যে দুজন দুজনের তপ্ত নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছে। শিশির বিন্দুকে সোজা করে দিয়ে হাত শক্ত করে ধরে রাখল। বিন্দুর যেন মনে হচ্ছিল এ যেন অধিকার শুধু তার খেয়াল রাখার। ভালবাসার অধিকার। শিশির একটু নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু মেয়েটা যাতে আবার না পড়ে তাই শক্ত করে ধরে রেখেছে। আবির শিশিরের পিছনে এক খোঁচা দিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে দুজনের হাতের দিকে ইশারা দিল। শিশির চোখ রাঙ্গানী দিয়ে আবিরের হাসি বন্ধ করল। এক্সসেলেটর থেকে নেমে শিশির বিন্দুর দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” সাবধানে “।
বিন্দু কিছু না বলে মাথা ঝাঁকালো। সবাই বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠার সময় বিন্দুর মন প্রচন্ড খারাপ হয় গেল। ইসস এই ভাল লাগার মূহুর্ত গুলো এত ছোট হয় কেন। বাসায় ফিরেও মুখ অন্ধকার করে রইল ও। কনা কলেজ থেকে এসে দেখলো বিন্দু চুপ করে চেয়ারে বসে উদাস নয়নে আকাশ দেখছে। কনা একটা কাশি দিয়ে বিন্দুর মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল,
___ ” আচ্ছা বুবু আকাশে কি শিশির আর তার বিন্দুর নাম দেখা যায় “।
___ ” কনা ফাজলামি করিস না যা এখান থেকে “।
বিন্দু মুখ হাঁড়ির মত করে কথা গুলো বলেই আবার আকাশ দেখায় মগ্ন হল। পেছন থেকে কনা বিন্দুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
___ ” আচ্ছা বুবু কি হইছে বল তো ভাইয়া কি কিছু বলেছে, শুধু এক্কবার বল কি হয়েছে দেখ ওই শিশিরকে রোদ হয়ে কেমনে উড়ায়ে দিয়ে আসি “।
___ ” উনাকে ছেড়ে আসার পর থেকেই কেমন যেন খারাপ লাগছে। মনটা একটুও ভাল লাগছে না “।
___ “ওরে আল্লাহ রে এই নি কথা এখনই এই পালা বিয়ের পর তো আমরা কে চিনবাই না “।
কনা ঠেস মেরে কথাটা বলল। বিন্দু চোক পাকিয়ে বলল,
___ ” পাকনামি বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে নে যা “।
___ ” মাঝে আর দুইটা দিন তারপরই তো গায়ে হলুদ আর বিয়ে। আর বাদ বাকিটা ছোট বোন হয়ে নাই বা বলি “।
___ ” তবে রে ফাজিল, দাঁড়া আজ তোর এক দিন কি আমার এক দিন “।
এই বলেই বিন্দু উঠে কনাকে ধরার জন্য ঘুরলো। আর কনাও খরগোশের মত ছুট লাগালো।
দেখতে দেখতে দুই দিন কেটে গেল আজকে শিশির আর বিন্দুর গায়ে হলুদ। দুই পরিবারই একসাথে গায়ে হলুদ দেওয়ার জন্য একটা খোলা মাঠে ডেকোরেশন করেছে। শিশিরের এখনও মনে হচ্ছে বিয়েটা না হওয়াই বুঝি ভাল। কারণ ও এখনও এই বিয়ের জন্য রেডি না। এদিকে বিন্দু মেয়েটার প্রতিও ওর ভাল লাগা কাজ করছে। কিন্তু কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না যে ও করবে টা কি। চমক এসে দেখলো শিশির পাঞ্জাবি হাতে আয়নার সামনে আনমনে কি যে ভাবছে। চমক একদম শিশিরের কানের কাছে যেয়ে জোরে জোরে বলল,
___ ” ভাইয়া এখানে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে ভাবির চিন্তা না করে তাড়াতাড়ি রেডি হ, তাইলে ভাবিরে দেখতে পাবি “।
___ ” এই ফাজিল মেয়েলোক আমি কি বয়ড়া নাকি যে কানের কাছে মাইকিং করছিস “।
শিশির কানে হাত চাপা দিয়ে বলল। চমক শাড়ি পরেছে আজকে অনেক বড় বড় দেখাচ্ছে ওকে। শিশির গালে টান দিয়ে বলল,
___ ” তোকে তো বুড়ি বুড়ি লাগছে?!”
___ ” আম্মুউউউউ দেখো ভাইয়া আমারে বুড়ি বলতেছে “।
চমক কান্না কান্না ভাব করে চলল জাহানারার কাছে বিচার দিতে। শিশির পাঞ্জাবি পরে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে দেখলো বিপ্লব আর আবির এসে হাজির। দুজনেই পাঞ্জাবী পরেছে। ভীষন হ্যান্ডসাম লাগছে। শিশির চোখ কুঁচকে তাকাতেই আবির বলল,
___ ” দোস্ত দেখতো ওই কাইল্লার চেয়ে আমাকে বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে না “।
বিপ্লব মুখে হাত দিয়ে হাসির ভাব এনে বলল,
___ ” চালুনী কয় সুঁইরে তোর পিছে ফুটো। ওই তুই নিজেরে আয়নায় দেখস কখনও? আফ্রিকার নিগ্রোরাও তোরে দেইখা ভয় পাবে। ”
___ ” হ হ তুই তো দুধে আলতা গায়ের বরণ নিয়ে আইসত “।
আবির টিপ্পনী কেটে উওর দিল। বিপ্লব আবিরের কথার পাত্তা না দিয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” দোস্ত তোর শালি পটবো নি আজকে আমার লুক দেইখা “।
___ ” আরিব্বাস এই নাকি কাহিনী তোদের। আমার শালিরে পটানোর জন্য ফেয়ার এন্ড লাভলী মাইখা আইছত “।
শিশির ড্রেস ঠিক করতে করতে বলল৷ বিপ্লব আর আবির হেসে উঠলো সাথে শিশিরও যোগ দিল।
বিন্দু যখন পার্লার থেকে সেজে বের হল কনা তো হাঁ করে তাকিয়ে রইল। আস্ত একটা পরীর মত লাগছে ওকে। লাল হলুদের মিশের শাড়ি আর ফুলের গয়নায় যেন পরীস্থানের পরীর মত লাগছে বিন্দুকে। কনা ভ্রুর এক কোণা উঁচু করে বলল,
___ ” আজ তেরা ইরাদা কিয়া হে রে বিন্দুরানী? তু তো মার ডালেগি শিশির কো “।
___ ” কনা তুই না আসলেই পাজি “।
বিন্দু লজ্জায় যেন মরে যায়। আবার মনে মনে উতলাও হচ্ছে শিশিরকে দেখার জন্য। সবাই মিলে আস্তে আস্তে আসলো গায়ে হলুদের মাঠে। সবাই এসে হাজির হাবিব সাহেব জাহানারা চমক। বিন্দু স্টেজে বসেই এদিক ওদিক খুঁজে লাগল। বিন্দুর এমন ঘাড় ঘুরানো দেখে চমক বলল………
চলবে
মারিয়া আফরিন নুপুর