শুধু তোমাকে চাই ৩য় ও শেষ পর্ব

গল্পঃ শুধু তোমাকে চাই। ( ৩য় ও শেষ পর্ব )

গতকাল হিমির এবং আমার মধ্যে এতকিছু ঘটে যাওয়া, এত কাছাকাছি চলে আসায় হিমি এবং আমি দুজনেই ভীষণ লজ্জিত, অবশ্য আমার চেয়ে হিমি অনেকটাই বেশী।

সকালে একবার চোখে চোখ পড়ায় চোখ সরিয়ে ঘুরে চলে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই আমি বললাম,– হিমি দাড়াও।

হিমি দাড়ালো।

আমি হিমির পেছনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম,– হিমি বর্ষা দিনে গ্রামের কাদাময় কাচা রাস্তায় হেটেছো কখনও? যদি না হেটে থাকো তবে যারা হেটেছে তারা জানে কাদা রাস্তায় কতটা হিসাব করে পা ফেলতে হয়। সাবধানতা অবলম্বন করে না চললে কাদায় স্লিপ করে পড়ে যাবার ভয় থাকে। একবার স্লিপ করে পড়লে কাদা মেখে জামাকাপড় নষ্ট, যাত্রা ভঙ্গ। প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রেও কমপক্ষে এতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। কাঁদায় আছাড় খেলে গোসল করে নতুন ড্রেস পড়ে আবার যাত্রা শুরু করা যায়, কিন্তু ভুল মানুষের প্রেমে আছাড় খেয়ে মন ভাঙলে আর কোনদিন জোড়া লাগেনা। সুতরাং এতক্ষণে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো আমি কি বুঝাতে চেয়েছি। আমার লেকচার শেষ, তুমি ভেবেচিন্তে আমাকে জানাতে পারো তোমার মতামত, অপেক্ষায়।

হিমি ঘুরে দাড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললো,– ওকে, চিন্তার কিছু নেই, উত্তর পেয়ে যাবেন, ধৈর্য ধরেন।

বিকেলে ছাদে দাড়িয়ে আছি একা একা। হঠাৎ খেয়াল করলাম হিমি ও তার সাথে একটি ময়ে দুজনে ছাদে এসে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

আমার কাছে এসে হিমি তার সাথের মেয়েটিকে দেখিয়ে বললো,– ইনি সায়েমা আপু, আপনাকে বলেছিলামনা সায়েমা আপুর গল্পগুলো খুব ভালো লাগে আমার, কারণ তার লেখায় বাস্তবতা আছে।

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,– কিন্তু তুমি তো বলেছিলে নুপুর নামে কারো কথা।

সায়েমা মিষ্টি হেসে বললো,– সেই নুপুর আমিই।

: মানে! আপনার ডাক নাম কি, মা বাবা কি নামে ডাকে?

: মা বাবা আমাকে সায়েমা নামেই ডাকে।

: আজব! তাহলে নুপুর নামে লেখালেখি কেন?

: আসলে নুপুর নাম দিয়ে মানে ছদ্মনামে ফেসবুকে লেখালেখি করি, গল্পের প্রয়োজনে এবং বাস্তবতা তুলে ধরতে নানান কথা লিখতে হয়, তো পরিচিতজনরা যদি জানে যে এগুলো আমারই লেখা তাহলে একটু কেমন কেমন লাগবেনা! এর জন্যই নুপুর নামে লেখালেখি।

যা-ই হোক, নুপুর ও সায়েমা রহস্যের সমাধান হলো।

হিমি সায়েমার ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে রাকিবের আইডি সার্চ দিয়ে বের করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলো।

আমি বললাম,– কি করছো হিমি?

হিমি মুচকি হেসে বললো,– দেখতেই পারবেন, একটু অপেক্ষা করুন।

একটু পরেই সায়েমার ফোন থেকে দেয়া ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলো রাকিব।

“হাই হ্যান্ডসাম” লিখে হিমি মেসেজ দিলো রাকিবকে।

রিপ্লেতে রাকিব লিখলো, “হ্যালো।”

হিমি আবার লিখে পাঠালো, “ আর ইউ সিঙ্গেল।”

: “ সিঙ্গেল মানে, মারাত্মক সিঙ্গেল, খাট সিঙ্গেল তাই ঘুমও আসেনা রাতে, একা একা আর কতো।”

: “ তো মিস্টার রাকিব, ডবল হলে বুঝি ঘুম ভালো হয়!”

: “একদম।”

: “ কীভাবে শুনি।”

: “ সত্যি শুনবে! মাইন্ড করবেনা তো?”

: “ না না মাইন্ড করবো কেন, এসব শুনতে ভালোই লাগে, বলেন প্লিজ।”

: “ দুজন পাশাপাশি কাছাকাছি, আদর দেয়া নেয়া, তারপর চরম উত্তেজনায় মেতে উঠে যুদ্ধ শুরু, যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত হয়ে সেই মাপের একটা ঘুম।”

: “ আচ্ছা তাই বুঝি! তা যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধের শুরুতে যদি তোর বন্দুকের নলটা কেটে নেয়া হয় তখন কেমন লাগবে হারামজাদা বদ।”

: “ ইয়ে মানে কে, এই কে আপনি?”

হিমি ভীষণ বিরক্ত হয়ে লিখলো,– “ আমি তোর জম হিমি, শালা লুচ্চা! এগুলো স্ক্রিনশট দিয়ে রাখলাম, ফের যদি কখনও আমার সামনে আসিস তাহলে তোর খবর আছে খবিশ কোথাকার।” মেসেজটা পাঠিয়ে সাথে সাথে রাকিবকে ব্লক করে দিলো হিমি।

আমার ঢাকায় ফেরার দিন সামনে চলে এলো। আগামীকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করতে হবে।

সন্ধ্যায় রুমে জামাকাপড় গুছিয়ে ব্যাগ ভরছি এমন সময় হিমি এসে হাজির। ভীষণ চমকে গেলাম আমি! হিমি শাড়ী পরেছে, নীল শাড়ী। অবশ্য অনেক আগে আমি হিমিকে বলেছিলাম নীল শাড়ী পরে ছবি তুলে দিতে, হয়তো হিমি সেকথা ভোলেনি।

আমি হাতের কাপড় রেখে হিমির সামনে এগিয়ে এসে বললাম,– ভীষণ সুন্দর লাগছে যেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

হিমি আমার চোখে চোখ রেখে বললো,– ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলে অন্য ভাবেও প্রকাশ করতে পারেন, আজ মানা নেই।

আমি আগে পিছে না ভেবে হিমির ঠোঁটে চুমু খেলাম। হিমি মিষ্টি হেসে বললো,– এই যে মিস্টার, এই চুমুর স্বাদ আগে তো জানা ছিলনা, এখন তো আপনার মাধ্যমে জেনে গেলাম, খেতেও মনে চাইবে হয়তো, কিন্তু আপনি যদি আমাকে দ্রুত নিজের করে না নেন তবে খাবো কিকরে, নাকি আমাকে উপোস রাখবেন?

আমি মুচকি হেসে বললাম,– মানে?

হিমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,– মানে যত দ্রুত সম্ভব আমি আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে চাই, সম্পর্ক বৈধ হোক, তারপর ভাত না সারাদিন কিসমিস খাবো। বিষয়টি ক্লিয়ার? অন্য কাউকে নয়, আমার জীবন জুড়ে শুধু তোমাকে চাই।

তারপর আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হলো আমাদের, এখন আমরা কিসমিস খাই, আরও কতকিছু খাই। সবকথা তো আর বলা যায়না, লজ্জারও একটা বিষয় আছে।

তবে পাঠকদের বলবো,– আমাদের বিয়ের খুশিতে সবাই নিজ দায়িত্বে নিজের টাকায় মিষ্টি কিনে খাবেন, আর তাও যদি সম্ভব না হয় তবে এক চিমটি চিনি খেয়ে মিষ্টি মুখে আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

সমাপ্ত।

লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here