##শুধু_তোমারই_জন্য পর্ব ৬
##সাবানা খাতুন
অর্নব কাঁকনের কাছে গিয়ে বলল আমি শুনলাম তুমি নাকি খাওনি ?তাতে তোমার কি ?শ্লেষে বলল কাঁকন আমি মরি বা বাঁচি তোমাকে খবর রাখতে হবেনা। অর্নব বলল না তা নয় আসলে আমি চাইনা তুমি এ বাড়ি থেকে যখন যাও তখন যেন অসুস্থ না হয়ে পড়ো।আর অসুস্থ হলে আবার ছমাস যদি আটকিয়ে যাও।আর প্লিজ মরতে হলে অন্য কোথাও গিয়ে মরো না হলে লোকে বলবে চৌধুরি পরিবারে না খেয়ে কেউ মরেছে আমাদের রেপুটেশন খারাপ হয়ে যাবে।,কাঁকন রেগে উঠে বলল তুমি কি এখনো নিজের কথাই ভাববে স্বার্থপর কোথাকার। ঠিক আছে আমি খাব তোমাকে কোনো কষ্ট দেবোনা ।আর ছমাস পরেই যাবো বুঝলে,বলে কিচেন রুমে চলে গেল।অর্নব হাসছে এই দেখে যে কলেজের মতো কাঁকন এখনো আছে সোজা কথা বললে উল্টো করত তাই কথা উল্টো বলতে সোজা কাজটাই হলো😛।
কাঁকন খেয়ে এসে দেখল অর্নব অফিসের কাজে ব্যাস্ত ।কাঁকন বলল লাইট অফ করো আমি ঘুমাবো আলোতে আমার ঘুম আসে না,অর্নব বলল সরি আজ হবেনা আমার কাল বড় প্রেজেনটেশান আছে ।হয়তো সারারাত কাজ করতে হবে, কাঁকন বলল তাতে আমার কি? ওকে তুমি এক কাজ করো গেস্ট রুমে চলে যাও কারন আমি তো কাজ করব।কাঁকন বলল আমি কেন যাবো তুমি যাও আর তোমার যাতে খারাপটা হয় সেটাই আমি চাই, গো টু হেল।যেমন তুমি পেত্নি তেমন তোমার স্বভাব ।কি আমি পেত্নি আর তুমি একটা মাথা মোটা ভুত।কি বললে আমি মাথামোটা তবেরে দেখাচ্ছি বলে কাঁকনের দিকে অর্নব ছুটে যায় আর কাঁকনের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আবার দুজন কত কাছাকাছি চলে এল কলেজ টাইমের কথা মনে পড়ে গেল ,কয়েক মিনিট একে অপরের চোখে তাকিয়ে রইল চারিদিক যেন নিস্তব্ধ শুধু দুজনের নিশ্বাসের শব্দ আর বুকের ধুকপুক আওয়াজ চমক ফিরতেই কাঁকন বলল উঠো আমার উপর থেকে।অর্নব সসব্যাস্ত হয়ে উঠে পড়ল, কাঁকন শান্ত হয়ে বলল ঠিক আছে কাজ করো লাইট বন্ধ করতে হবে না।
মাঝরাতে কাঁকন ঘুম থেকে উঠে দেখল অর্নব টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে ।কাঁকন এক কাপ চা এনে তাতে ঘুমন্ত অর্নবের হাতের একটা আঙুল নিয়ে ডুবিয়ে দিতে অর্নব ঘুম থেকে চমকে উঠে দেখল কাঁকন চা নিয়ে দাঁড়িয়ে,আর ইউ ইডিয়েট ডাকতে পারো না উফ আঙুল টা পুড়িয়ে দিলে তো।কাঁকন বলল মর্দ কো দর্দ নহি হোতা। কাল তোমার প্রেজেনটেশান যে ঘুমাচ্ছো কেন? চা টা খেয়ে নাও , অর্নব বলল কি ব্যাপার স্ত্রী সাজছো যে, কাঁকন মুখ ভেটকে বলল আমি তোমার স্ত্রী এটা মনে হচ্ছে তুমি ভুলে গেছো।অর্নব কিছুনা বলে চা খেয়ে দেখল কাঁকনের হাতের স্বাদ সেই এক আছে, অর্নব বলতে যাচ্ছিল যে ধন্যবাদ দেখল কাঁকন ঘুমিয়ে পড়েছে।
অর্নব সকালে যখন উঠল দেখল সাতটা বাজে ,নটায় প্রেজেনটেশান ধড়ফড় করে উঠে পড়ে রেডি হওয়ার জন্য। বিছানায় দেখল কাঁকন গভীর ঘুমে আছন্ন ।অর্নব কাঁকনের পাশে গিয়ে দেখল ঘুমন্ত কাঁকনকে কত সুন্দর লাগছে কত নিস্পাপ মুখ খানা।আগের থেকেও দেখতে ভাল হয়ে গিয়েছে ওকে,মুচকি হাসি দিয়ে বাথরুমে চলে যায়।অফিসে গিয়ে মনে পড়ল সে তো কাল প্রেজেনটেশান কমপ্লিট করেনি মিটিং হতে আর মাএ ১০ মিনিট বাকি এবার অর্নব ঘামতে থাকে এটা অনেক বড় প্রোজেক্ট হাতছাড়া হয়ে গেলে তার বাবা তাকে ছাড়বে না, এমনিতে ঐসব কান্ডের পর থেকে তার বাবা একদম কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে তার সাথে আজ আবার এই ভুল ক্ষমা যোগ্য হবে না।ভয়ে ভয়ে মিটিং রুমে ঢুকে দেখল সবাই বসে আছে, অর্নবের তো হাত ঘামছে,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে।ইসসস কি ভুলটাই না করল ঘুমিয়ে,ঠিক সেই সময় রিয়ার ফোন য়ফোন ধরবে না ভাবল তারপর কি ভেবে ফোন টা ধরতেই ওপাশ থেকে রিয়া বলে উঠল এই দাদা তোর প্রজেক্ট ফাইল নিয়ে যা আমি অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছি, অর্নব সাথে সাথে গিয়ে ফাইল নিয়ে এল।
নয়না আর অর্নব ক্যাফেতে বসে আছে,অর্নব বলল কাল তুমি বাড়িতে গিয়ে তামাশা করেছো কেন? নয়না বলল আমি কখন করলাম যা করেছে ঐ মেয়েটা ।আমাকে মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই আমি সব জানি ।তোমাকে এই সব কি মানায় তুমি হচ্ছো একজন ওয়েল বিহেভড এজুকেডেট বাড়ির মেয়ে আর কয়েকটা মাস তারপর আমরা তো একসাথে থাকব ।আর ফারদার তুমি ঐ বাড়িতে গিয়ে সমস্যা করবে না বুঝলে।এইবার নয়না ফোঁস করে উঠল, কি বলতে চাইছো তুমি? আর আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি ওর প্রেমে পড়েছো।লিশন আই এম হেয়ার ওনলি ফর ইউ ইউ নো দ্যাট নিজের ভাল ক্যারিয়ার এসপেক্ট সব ছেড়ে এলাম তোমার জন্য ।আর তুমি কিনা আমাকে এই ভাবে বলছো,আই এম ড্যাম সিওর ঐ মেয়ে তোমাকে যাদু করেছে। আর যদি তুমিও ওর প্রেমে পড়ে থাকো তাহলে বলে দাও আমিও ভাল ব্যবস্থা করতে জানি বিজনেসের ব্যাপারটা বোঝো তো ।অর্নব এইবার রেগে গেল এই শোনো তোমাকে যা বলেছি তাই করবে আর আমাকে ভয় দেখিও না , বলেই অর্নব ক্যাফে ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
রাতে ঘরে ফিরতেই রুমাদেবী বলল বাবু কনগ্রাচুলেশন আমি জানতাম তুই পারবি তোর বাবা যে তোর উপর রেগে আছে একটু হলেও রাগটা কমবে।অর্নব হাসল মাএ, কিচেনরুম থেকে কাঁকন আর রিয়ার কথা বলার আওয়াজ পেল।রিয়া দেখা মাএ জিজ্ঞাসা করল দাদা প্রেজেনটেশান কেমন হলো?খুব ভাল মনে হচ্ছে ডিল টা আমাদের কোম্পানি পাবে ভাগ্যিস তুই ঠিক সময়ে ফাইলটা দিয়ে এসেছিস বলে প্রেজেনটেশান দিতে পারলাম। ওকে দাদা,রুমে যাওয়ার সময় অর্নব শুনল রিয়া কাঁকন কে বলছে তুমিতো একাউন্টেনসি তে ভাল,আমাকে পড়াবে।অর্নব চমকে উঠল এইভেবে যে রাতে তো সে আ্যকাউন্টের ফাইল ইনকমপ্লিট করে রেখেছিল, তাহলে কি কাঁকন প্রেজেনটেশান কমপ্লিট করল ,কিন্ত কখন আর কেন বড় ধন্ধে পড়ে গেল অর্নব।
কাঁকন কে জিজ্ঞাসা করল ,আমিতো কাল ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তো আমি করব বলল কাঁকন ।,তাহলে আমার ফাইলটা কি তুমি কমপ্লিট করেছো?কাঁকন উল্টো দিকে ঘুরে কাপড় গোছাতে গোছাতে বলল সকাল সকাল কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।আমি তোমার কাজের কি বুঝি যে তোমার হয়ে কাজ করব আমাকে সন্দেহ করা বন্ধ কর।অর্নব কাঁকনের ঘাড়ের কাছে মুখ এনে বলল ও তাই তুমি জানোনা ।কাঁকন চমকে উঠে পিছন ফিরতে যাবে তখনই অর্নবের ঠোঁটে কাঁকনের কপাল ঠেকে গেল, এই প্রথম দুজন দুজনের স্পর্শ পেল ।দুজনে লজ্জা পেয়ে সরে গেল 😍😍। দরজার আড়ালে রিয়া দাঁড়িয়ে দেখল আর মুচকি হেসে চলে গেল।
অর্নব বলল ঠিক আছে আমি রিয়াকে ডাকছি এখনি প্রমান হবে কে কাজ টা করেছে।বলেই অর্নব ডাকল রিয়া বলে।রিয়া এসে বলল হ্যাঁ দাদা ডাকছিস, রিয়া তুই কাল যে আমাকে ফাইল দিয়েছিস সেটা কি কাঁকন কমপ্লিট করেছিল ।আমি কাল তো কমপ্লিট করিনি আর তুই কি করে জানলিস যে ও আ্যকাউন্টসে ভালো।দাদা আমি জানিনা যে তোর ফাইল কে কমপ্লিট করেছে আরে আমাকে ফাইল টাতো মা দিল তোকে দেওয়ার জন্য ।এবার অর্নব সত্যি অবাক হলো যেন যাদু মনে হচ্ছে।কাঁকন বলল দেখেছো মিঃ চৌধুরি সত্যি টা জানতে পারলে তো তোমার ভাল খারাপ যাই হোক আই ডোন্ট কেয়ার । আমি আমার সার্টিফিকেট দেখিয়েছিলাম রিয়া কে,আরে দাদা তুইতো জানিস আমি একটু উইক ঐ সাবজেক্টে তাই একটু দেখাতে বললাম।কাঁকন বলল তোমাকে বা আমরা এত কৈফিয়ত কেন দিচ্ছি , অর্নব মুখ নিচু করে। আর দাঁড়ায় না অফিসের জন্য বেরিয়ে যায় ।
রিয়া এবার কাঁকনকে বলল তবে সকালে যে রোমান্টিক সিন দেখলাম তা ভুলতে পারব না।এই যে উপরে উপরে ঝগড়া করছ তোমরা আর ভেতরে ভেতরে এত ভালবাসা জানতাম না।কাঁকন বলল কি বলছ তুমি আমি বুঝতে পারছি না, রিয়া এইবার একটু ন্যাকা সেজে বলল ও তাই বুঝতে পারছ না।নিজের দাদা বৌদির লাভ সিন বলতে পারি,আমারই এত লজ্জা পাচ্ছে কি বলব।আরে দাদা যে তোমাকে কিস করল 💋💋 , ওয়াও কি সিন ছিল,এবার কাঁকন লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে বলল রিয়া কি যাতা বলছ ,ও টা কিস ছিল না ভুলে কপাল ঠেকে গিয়েছিল।রিয়া এবার কাঁকন কে জড়িয়ে ধরে বলল আমি সব বুঝে গেছি। তোমরা এত ইউনিক আর ব্যাকডেটেড কেন যেখানে আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিয়ের আগে সব কিছু করে সেখানে তোমাদের লজ্জা মাখা মুৃখ দেখে মনে হচ্ছে তোমরা কোনোদিন একে অপরের হাতও ধরোনি ।কাঁকন বলল তোমার দাদা আমার সাথে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভালবাসার নাটক ও বিয়ে করল।তো সেখানে কিছু করার প্রশ্ন আসেনা, বৌদি এটা তুমি ভুল বললে প্রতিশোধ নিলে দাদা তোমাকে ইউজ করত তারপর ছেড়ে দিত আর সেখানে তোমাকে বিয়ে করল।নকল বা আসল যাই হোক মেয়েদের আসল হল সম্মান আর সেটা দাদা তোমার কাড়ায়নি ,আমার দাদা মেয়েদের সম্মান করতে জানে শুধু একটু আদরে বড় হয়েছে তাই ইগো একটু বেশি। মা বা আমি আর ঠাকুমা সবাই দাদার প্রান।
আর নয়না জিজ্ঞাসা করল কাঁকন ।আরে নয়না দি তো দাদার ছোটবেলার বান্ধবী ।বাবার বিজনেস পার্টনার সমর কাকুর মেয়ে, বাকি তুমি জানো।রিয়া চলে যেতেই কাঁকন ভাবতে বসল আসলেই কি অর্নব তার সাথে ভাল কাজ করেছে না খারাপ কাজ এখনো সে বুঝতে পারছে না। এটা সত্যি অর্নব কিছু করলে করতে পারত, জোর করে হলেও কাঁকন তো বাধা দিতে পারত না।কিন্ত বিয়ের আগে বা পরে তাকে একবার ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি, একবার মনে হয় অর্নবকে ভালবাসতে পরক্ষনেই তার বিশ্বাসঘাতকতা মনে পড়ে যায়।এই সব প্রশ্নের উওর তার একদম জানা নেই।কাঁকন সত্যি কি আবার একবার অর্নবের প্রেমে পড়ল কারন অর্নবের চোখে ও নিজেকে অন্য ভাবে দেখেছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে লাগল আর লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেল কাঁকনের।
রিয়া দেখে যে ডাইনিং হলের সোফায় নয়না বসে আছে,রিয়া কাছে গিয়ে বলল হাই নয়না দি কেমন আছো? নয়না বলল ভাল, আরে বাড়িতে কাউকে দেখছি না কেন? সবাই যে যার কাজে গিয়েছে ।রিয়া বলল এই নয়নাদি আজ জানো তো কি হয়েছে? রিয়া এবার সকালে কাঁকন আর অর্নবের মধ্যে রোমান্স বলতে লাগল,নয়নার মুখ শক্ত হয়ে এল ,সে রেগে উঠে চলে গেল।রিয়া হাসছে নয়নাকে জ্বালাতে পেরে।
কনকবালা কাঁকন আর অর্নবের কাছাকাছি আসার কথা জানতে পেরে খুব আনন্দিত হল,কাঁকনকে আশির্বাদ করে বললেন তোরা জীবনে অনেক সুখি হ,আমি জানতাম তোদের মধ্যের এই দূরত্ব ঘুচে যাবে।কাঁকন লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে টুপ করে কনকবালার পায়ে প্রনাম করল।
চলবে………