শুধু তোমারই জন্য পর্ব ৫

##শুধু_তোমারই_জন্য পর্ব ৫
#সাবানা খাতুন

অর্নব আর নয়না বসে আছে ক্যাফেতে।সকালের ঘটনায় নয়না এখনো রেগে আছে।আর অর্নব তাকে বোঝাচ্ছে,প্লিজ ট্রাই এন আন্ডারস্ট্যান্ড তুমি যা দেখেছো সব বানানো কাঁকন তোমাকে জ্বালানোর জন্য ঐসব করেছিল ।নয়না এবার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল ও তাই আর ইউ থিংক আই এম এ ম্যাড? খালি গায়ে একটা মেয়ের গায়ে তুমি পড়ে আছো আর আমি ভাবব তুমি ভাল।খুব সুন্দর একটা এক্সকিইউজ, আন্টি আমাকে সব বলেছে কি করেছো তুমি, জাস্ট আমি ডিভোর্সের ওয়েট করছিলাম আর তুমি তাকে নিজের রুমে নিয়ে লীলা খেলা করছ।ওকে নিজের রুমে থাকতে দিয়েছো কেন?অর্নব এবার শুকনো মুখ নিয়ে বলল কি করব ওর কথা না মানলে বলেছে আমাকে পুলিশে দেবে।তুমি ওকে চেনো না কি হাড় বজ্জাত মেয়ে, কলেজে কি রকম ডেঁপো ছিল, হোয়াট …. জোরে নয়না চেঁচিয়ে উঠল, সাহস তো কম নয় অর্নব চৌধুরিকে হুমকি দেয়,আর তুমি শুনে নিলে।
কি করব এখন তো সব দোষ আমার থাক বাদ দাও না এইসব কথা।ও নিজের মতো থাকে আর আমি আমার মতো থাকি।নয়না বলল বারুদ আর আগুন একসাথে থাকলে জানো কি হয়?দেখো তোমার আমাকে বিশ্বাস করতে হয় করো না হয় করোনা।সকাল সকাল যে কান্ড হল তার জন্য আমিও আপসেট হয়ে আছি।নয়না আমি সকালে টিফিন করিনি এখন এইসব কথা ভালো লাগছে না,কিছু অর্ডার করো ভীষন ক্ষিদে পাচ্ছে আর অফিসও যেতে হবে।নয়না বলল তুমি না খেয়ে আছো, ওকে বেবি আমি সব বুঝি কিন্ত তোমাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখব এটা ভাবতেই পারছি না,একদম ওর কাছে যাবে না বলে দিলাম ঠিক আছে অর্ডার করছি বাট বি কেয়ার ফুল স্টে আ্যওয়ে ফ্রম হার।অর্নব মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।

কাঁকন সকালে কিছুই খেল না,অর্নব না খেয়ে চলে গেল খুব খারাপ লাগছে তার।একি সে কি ভাবছে হঠাৎ অর্নবের জন্য তার মন খারাপ করছে কেন ,অর্নবের প্রতি তার পুরানো ভাল লাগাটা আবার ফিরে আসছে,না না সে তো তাকে এখানে শাস্তি দিতে এসেছে ।তাকে নিজেকে শক্ত করতেই হবে, না করলে তার মিশন সাকসেস ফুল হবে না, কাঁকন আকাশ পাতাল ভাবছে এমন সময় একজন চাকর এসে বলল দিদি মনি ঠাকুরমা আপনাকে ডাকছে।কাঁকন বলল আমাকে ? হ্যাঁ আপনাকে বলে চাকর চলে গেল ,কাঁকন মনে ভাবতে লাগল হঠাৎ আমাকে এবাড়ির কার প্রয়োজন হল।

রুমের সামনে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এল ভেতরে আয়।কাঁকন ভেতরে ঢুকে দেখল অর্নবের ঠাকুরমা খাটে বসে আছে,তাকে ইশারা করে নিজের কাছে ডাকল,কাঁকন যেতেই বলল বোস এখানে।কাঁকন সংকুচিত হয়ে বলল আপনি আমায় ডেকেছেন, কাননবালা বললেন তুমি বলবি আমাকে আর আমি তোকে তুই বলব,আমার কাছে দাদুভাই যেমন সেইরকম তুইও,কাঁকনের মনে হল কতদিন পরে নিজের আপন কারোর সাথে কথা বলছে।

এবার কনক বালা একটা বাক্স বের করে কাঁকনের হাতে দিল,কাঁকন খুলে দেখল এককৌটা সিঁদুর আর একজোড়া শাঁখাপলা।কাঁকন অবাক হয়ে গেল কনকবালা বললেন তুই আমার দাদুভাইয়ের বৌ আর হিন্দু বাড়ির বৌরা সিঁথি তে সিঁদুর আর হাতে শাঁখাপলা পরে ।তার স্বামীর মংগলের জন্য ,তুইও পরবি এইসব কেউ মানুক আর নাই মানুক আমি মেনে নিয়েছি তুই এই বাড়ির বৌ। কাঁকন বাক্স ফেরত দিয়ে বলল ঠাকুরমা একে পরার অধিকার আমার নেই,কনকবালা বললেন কেন? কারন তোমার নাতি আমায় ঠকিয়ে বিয়ে করেছে আর যেখানে বিয়েটা মিথ্যা সেখানে এত পবিএ জিনিসের অসম্মান আমি কি করে করিয়তাছাড়া একজন বিবাহিতা নারীর এটা গৌরব ,কিন্ত ছমাস পর সেই গৌরব আমার আর থাকবে না,তাই এইসব জিনিস আমার জন্য নয়। কনকবালা আর জোর করলেন না,বলে উঠলেন সত্যি করে বলতো তুই এখানে কেন এসেছিস? কাঁকন বলল সবই তো জানো আবার জিজ্ঞাসা করছো কেনো? কনকবালা কাঁকনের মুখের সামনে মুখ এনে মুচকি হেসে চিবুক ধরে বলল ছুঁড়ি তুই সবাইকে বোকা বানাতে পারিস কিন্ত এই বুড়িকে পারবি না।প্রেমের ভাষা আমিও বুঝি তোর দাদু শ্বশুর কে তো ভালবেসেই বিয়ে করেছিলাম বুঝলি, আমি দেখেছি যার প্রতি তোর এত ঘৃণা তার প্রতি তোর মনে ঘৃণার থেকে ভালবাসা অনেক বেশি ,কাঁকন চমকে উঠে কনকবালার কথা শুনে তার চুরি ধরা পড়ে গেল নাতো।

কাঁকন থতমত খেয়ে বলল ম….মানে কি বলছো তুমি? কনকবালা মুচকি মুচকি হাসছে, আমি ঠিক ধরেছি তুই আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছিস।কিন্ত কি সেটা একমাএ তুই জানিস আমি তোকে জিজ্ঞাসাও করব না শুধু একটি কথা বলতে চাই।মানুষের ঘৃণা এতটাও হওয়া উচিত নয় যে তার বর্তমানের সাথে সাথে ভবিষ্যৎকেও নষ্ট করে।কাঁকন বলল তুমি স্পষ্ট করে বলবে কি বলতে চাইছো? কনকবালা এবার বললেন তুই যেদিন প্রথম আসিস সেদিন পুলিশ কে সাথে করে নিয়ে আসতে পারতিস যদিও তোর কাছে সমস্ত প্রমান ছিল,তা তুই করিস নি ।তোর ডিভোর্স নিয়ে কথা আর বাড়ির যেখানে থাকলেও হতো কিন্তু তুই দাদুভাইয়ের রুমে থাকার জেদ করলিস। এতটা বলে থামলেন কনকবালা কাঁকনের মুখ নিচু হয়ে আছে,কনকবালা আবার বলা শুরু করলেন,এর মানে আমি যা বলছি সব ঠিক তাইতো? আর আজ সকালে টেবিলে টিফিনের সময় যা হলো সেটা থেকে আমি ঠিক ধরে ফেলেছি,ইচ্ছা করে চাকরকে তুই তোর খাওয়ারটা রুমে দিতে বললিস,যাতে করে কেউ একজন বলুক যে তুই তাদের সাথে খা।সেটা হলও আর দাদুভাই খায়নি এইজন্যই তুইও খাসনি, কাঁকন বলল এরমানে তুমি কি ধরলে আমার জানা নেই।

ওরে ছুঁড়ি কনকবালা চোখ বড়বড় করে বললেন এরমানে এই হল যে তুই এখানে এসেছিস দাদুভায়ের সাথে থাকার জন্য। তুই এখনো ওকে সমান ভালবাসিস।দেখ আমার দাদুভাই খুব ভাল কিন্ত তোর সাথে যা করেছে সেটা খুবই খারাপ। এইবার কাঁকন বলল না ঠাকুরমা তুমি ভুল ভাবছ ওকে ভালবাসাটাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমি অর্নবকে তার কৃতকর্মের সাজা দিতে এসেছি।কনকবালা বললেন মানছিরে তোকে ধোকা দিয়ে ও বিয়ে করেছে কিন্ত দিদুভাই শাস্তি টা যেন বেশি না হয় তাহলে ভাল জিনিসও খারাপ হয়ে দাঁড়াবে।ঘৃণা এতটাও হওয়া ভাল না যা তোর ভাল গুন কে খারাপে পরিনত করে।আর আমার মন বলছে তুই এই বাড়ির বৌ হয়ে থাকবি, কাঁকন বলল আমি ছমাস পরে চলে যাবো তুমি আর মায়া বাড়িও না আমি কোনোদিন এই বাড়ির বৌ হওয়ার স্বপও দেখিনা।ও আমার সাথে যা করেছে তার জন্য আমি ওকে ক্ষমা করলেও আমার খুব কাছের মানুষ ওর জন্য আজ আমার সাথে নেই,কনকবালা জিজ্ঞাসা করল কে?সেই সময় শোনা গেল কেউ একজন কাঁকনের নাম ধরে খুব জোরে ডাকছে।

কনকবালার রুম থেকে বেরিয়ে এসে কাঁকন দেখল সামনে নয়না দাঁড়িয়ে রাগে মুখ লাল হয়ে আছে, কাঁকনকে দেখতে পেয়ে বলল চিৎকার করে বলল কি ভেবেছো কি তুমি নিজেকে অ্যাঁ।অর্নব কে আমার কাছ থেকে কাড়াবে লিশন খুব ভাল করে মনে রাখো হি ইজ অনলি মাইন আর ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড ? আমাকে জ্বালানোর চেষ্টা করো না তুমি নিজে পুড়ে যাবে,কোথাকার কে ব্লাডি পুওর পিপল ,টাকা চাই না তোমার ? ঠিক আছে কত দরকার বল ,নিয়ে এই ঘর থেকে বেরিয়ে যাও,সব ভাল চলছিল তুমি কোথায় থেকে এলে ? অর্নবের কাছ থেকে দূরে থাকবে যেমন অতিথি হয়ে আছো সেইরকম থাকবে। একসাথে নয়না কথা গুলি বলে।কাঁকন এতক্ষন সব শুনছিল চুপচাপ এবার বলল এখনো বাকি আছে না শেষ হয়ে গিয়েছে, তাহলে আমি বলি প্রথম কথা হলো এখানে অসভ্যের মতো চেঁচাচ্ছো কেন? আর তুমি অর্নবের কে হও যে তাকে নিয়ে আমাকে ভাষণ দিচ্ছ? তুমি ওর গার্ল ফ্রেন্ড আর আমি ওর ওয়াইফ বলল কাঁকন ।মানে একজন অলিখিত আর একজন লিখিত, ওয়াইফ হিসাবে আমার ওর উপর ১০০% অধিকার আছে যা তোমার নেই,আমি ওকে নিয়ে যা করতে পারি তুমি বলার কেউ না, আজ সকালে যা দেখলে ওটাতো ট্রেলার পিকচর তো আভি বাকি হ্যায়, আমাকে বেশি ঘাঁটালে এমন আ্যডাল্ট সিন দেখাবো না ,যে তুমি সহ্য করতে পারবে না ।পাশে রিয়া দাঁড়িয়ে হেসে ফেলে,আর আমি এখানে নিজের ইচ্ছায় আসিনি এর জন্য তোমার প্রিয় বয়ফ্রেন্ড দায়ী বুঝলে ।আমি ছমাস পরে এখান থেকে যাবো তার আগে কেউ বললেও যাবো না কোটি টাকা দিলেও না জোর গলায় বলল কাঁকন । নয়না প্রতিহিংসায় বলল আমাকে ইনসাল্ট করার জন্য তুমি সিওর পানিশমেন্ট পাবে।

বাড়ির সবাই হাজির সেখানে,এই সময় রুমা দেবী কিছু গেস্ট নিয়ে ঘরে ঢুকছিলেন সবাই দেখল কাঁকন ঝগড়া করছে ,নয়না রুমা দেবী কে দেখে তার দিকে চোখে জল নিয়ে ছুটে গেল,আন্টি দেখো একটা আনসোশাল মেয়ে আমার সাথে কেমন ঝগড়া করছে।আমি তো কিছুই বলিনি তবুও আমার উপর চেঁচাচ্ছে,কাঁকন এই কথা শুনে অবাক হয়। রুমাদেবীর রক্ত চক্ষু দেখতে পায় কাঁকন।

রাতে রুমা দেবী ডিনার টেবিলে বললেন আজ যেভাবে আমি ইনসাল্ট হয়েছি কোনোদিন আগে এইরকম হয়নি ছিঃ ছিঃ এমন অসভ্য মেয়ের সাথে বাবু সম্পর্ক রেখেছিলো।অতগুলি লোকের সামনে আমার মাথা কাটা গেল।রিয়া বলল মা প্রথমে নয়নাদি এসে ঝগড়া করেছিল আর কাঁকন বৌদি তো এর কথার জবাব দিচ্ছিল।এক মিনিট ঐ মেয়েটা তোর বৌদি কবে হল? ভাল এরই মধ্যে সম্পর্ক গড়ে নিল,অত বৌদি বৌদি করতে হবে না ছমাস পরে তোর নতুন বৌদি হবে বুজেছিস, মা কি বলছ ও কিছুই বলেনি ,আমি বলছি অন্যায় কিন্ত নয়না দির,কাঁকন বৌদি নয়নাদির থেকে অনেক ভাল বুজেছো? ঠিক আছে চুপচাপ খা,কনকবালা বললেন রিয়া যা বলেছে সব ঠিক কথা,রুমাদেবী বললেন আপনি কিছু না বললে ভাল হয়,অভিরাজ বলল ঠিক আছে এখন সবাই খেয়ে নাও পরে এটা নিয়ে কথা হবে।কাঁকন সব শুনল কিছু না বলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল,অর্নব অফিস দিয়ে আসতেই কনকবালা বললেন সব ঘটনা। আর এও বললেন কাঁকন রাতে খায়নি।অর্নব রুমে গিয়ে দেখে কাঁকন পাশ ফিরে শুয়ে আছে, অর্নব পাশে যেতেই ফোঁপানির শব্দ পায় এর মানে কাঁকন কাঁদছে।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here