#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|অন্তিম পর্ব|
রেস্টুরেন্টের একটা কর্নারের টেবিলে বসে আছে আনিতা আহিয়ান অনিক আর কনা। সবাই চুপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কনা মাথা নিচু করে বসে আছে। আহিয়ান আর আনিতা বারবার একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। অনিক ওর মতো করে ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছে। অনিক ফোন পকেটে রেখে দাঁড়িয়ে বললো,
–“তোমাদের কিছু বলার হলে বলো নয়তো আমি আসছি। আমার হাতে বেশি সময় নেই।”
অনিকের কথায় কনা মাথা তুলে তাকালো অনিকের দিকে। আনিতা ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
–“আর একটু বসুন প্লিজ। বলছি এখুনি।”
আনিতার কথায় অনিক বসে পড়লো। পকেট থেকে আবারো ফোন বের করে ফোন স্ক্রল করতে করতে বললো,
–“ওকে যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
–“আপনার আর কনা আপুর তো অনেকগুলো বছরের সম্পর্ক। তাই না?”
অনিক নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
–“ছিলো, এখন আর নেই।”
আনিতা হাসিমুখে বললো,
–“কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কনা আপুকে? উনি আপনাকে সত্যিই খুব বেশি ভালোবাসে। প্লিজ সবটা ঠিক করে নিন।”
অনিক ফোন টেবিলে রেখে আনিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি। এখন আমি যদি বলি তুমি এমন কেন করছো? চলো সবটা ঠিক করে নেই আবার আগের মতো। তখন কি করবে তুমি?”
অনিকের এমন কথায় আনিতা চমকে আহিয়ানের দিকে তাকালো। রাগে আহিয়ানের কপালের রগ ততক্ষণে ফুটে উঠেছে। আহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“অনিক___”
অনিক শব্দ করে হেসে বললো,
–“রিল্যাক্স আহিয়ান। আ’ম জাস্ট কিডিং ইয়ার। আমি জানি এটা আর কখনো সম্ভব না।”
–“তাহলে যেটা সম্ভব সেটা এখনো কেন করছিস না? যে মেয়েটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেই মেয়েটাকে কেন এভাবে পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিস? ওর ভালোবাসাটা একবার বোঝার চেষ্টা কর অনিক।”
আহিয়ানের কথায় অনিক মৃদু হাসলো। কনার চোখ পানিতে ভরে উঠেছে। ও অনিককে সত্যিই অনেকটা ভালোবাসে। সেটা হয়তো অনিককে বোঝাতে ও ব্যর্থ। অনিক বললো,
–“বুঝি আমি ওর ভালোবাসাটা। আর বুঝি বলেই তো সরে এসেছি ও যাতে কষ্ট না পায়।”
এতক্ষণে কনা মুখ তুলে অনিকের দিকে তাকালো। কান্নাভেজা কন্ঠে বললো,
–“তুমি সরে গিয়ে আমাকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছো অনিক। তুমি আমার থেকে সরে যাওয়াতে আমি ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাচ্ছি।”
অনিক কিছু বললো না। আহিয়ান চুপচাপ দেখছে অনিককে। একটা মেয়ে ওকে এতটা ভালোবাসে তারপরও কিভাবে পারছে ও মেয়েটার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে? অনিক নিজেও তো একসময় ভালোবাসতো মেয়েটাকে। আনিতা বললো,
–“আপনার কথামতে আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাই তো?”
অনিক আনিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“বলতে চাচ্ছি না।”
–“আচ্ছা আমরা তো চাই আমাদের ভালোবাসার মানুষটা সুখে থাকুক তাই না? ভালোবাসার মানুষটার সুখ দেখেই তো আমরা সুখি হই তাই না? আপনিও নিশ্চয়ই এটাই চান। যে আপনাকে ভালোবাসে না তার জন্য কেন এমন একটা মানুষকে আপনি কষ্ট দিবেন যে আপনাকে ভালোবাসে? যে ভালোবাসে না আপনাকে তাকে মনে রেখে কি লাভ? যে আপনাকে এতটা ভালোবাসে তাকে আকঁড়ে ধরেই বাঁচতে শিখুন না। আপনিও তো কনা আপুকে একসময় প্রচন্ডভাবে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসাটা আবার ফিরিয়ে আনুন না প্লিজ।”
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অনিক আনিতার কথাগুলো ভাবলো। ও ভুল কিছুই বলেনি। সত্যিই বলেছে। বেশ কিছুটা সময় চুপ থেকে অনিক বললো,
–“চেষ্টা করে দেখবো।”
এই বলে অনিক চলে গেলো ওখান থেকে। কনা অশ্রুসিক্ত নয়নে অনিকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো৷ আনিতা আহিয়ান দুজনেই কনাকে বললো চিন্তা না করতে। অনিক যেহেতু বলেছে চিন্তা করে দেখবে তাহলে অবশ্যই পজেটিভ আন্সারই আসবে ওর দিক থেকে।
–
এর মাঝে চারটে মাস কেটে গেছে। অনিক সেদিন বাসায় ফিরে খুব ভেবে দেখেছিলো আনিতার কথাগুলো নিয়ে। সাতদিন বাদে অনিক আবার কনার সাথে সবটা ঠিক করে নেয়। কনা আর হারাতে চায়নি অনিককে তাই একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই বিয়ে করে ফেলেছে অনিককে। অনিক আর কনার বিয়ে হয়েছে তিন মাসের মতো হবে।
বিছানায় বসে আছে আনিতা। ওর এভাবে সারাদিনরাত বিছানায় বসে থাকতে একদমই ভালো লাগে না। বেবি কনসিভ করার আগে ডক্টর আবার ওদের যেতে বলেছিলো। তাই দু মাস আগে ওরা আবার ডক্টরের কাছে গিয়েছিলো। এতদিন ডক্টরের ট্রিটমেন্টেই ছিলো। দুই দিন আগে আনিতা জানতে পেরেছে ও আবার কনসিভ করেছে। তবুও সিউর হওয়ার জন্য ডক্টরের কাছে গেছিলো। তারা আল্ট্রা করে নিশ্চিত ভাবে জানায় আনিতা প্রেগন্যান্ট। ডক্টর এবারে আনিতাকে খুব সাবধানে থাকতে বলেছে। আর সেজন্যই আহিয়ান ওকে বিছানা থেকে নামতেই বারন করে দিয়েছে। যা লাগবে সব হাতের কাছে এনে দিবে। কিন্তু আনিতা বিছানা থেকে এক পা নামতে পারবে না। আগের বাবুটাকে হারিয়েছিলো। এবার আর ওরা কেউ-ই রিস্ক নিতে চায় না।
সাড়ে নয়টা বাজে। মুখ গোমড়া করে আনিতা বিছানায় শুয়ে আছে। আহিয়ান বের হয়েছিলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে ও। ফ্রেস হয়ে আনিতাকে বললো,
–“খাবে চলো।”
–“খাবো না আমি। আপনি গিয়ে খেয়ে আসুন।”
আহিয়ান আনিতার পাশে বসে ওকে তুলে বুকের উপর নিয়ে নিলো৷ আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“কি হয়েছে আমার বউটার?”
–“আচ্ছা আপনারা এমন কেন করছেন? আমি কি বাচ্চা? হাঁটতে পারি না আমি? সবসময় ধরে ধরে হাঁটাচলা করানো ভাল্লাগে না আমার। আমি বলেছি তো কেয়ারফুলি থাকবো। কিচ্ছু হবে না।”
আহিয়ান আনিতার মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
–“তবুও রিস্ক নিতে চাই না। একবার হারিয়েছি আর হারাতে পারবো না।”
আনিতা অসহায় চোখে তাকালো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান মৃদু হেসে বললো,
–“আচ্ছা যাও সব রুমে যেতে পারবে তবে ধীর পায়ে হাঁটতে হবে। আর ওয়াশরুমে একা একা যেতে পারবে না। ওয়াশরুমে পানি পড়ে থাকবে। কখন পা পিচলে যাবে বলা যায় না। একা একা কখনো ওয়াশরুমে যাবা না বলো।”
–“আচ্ছা।”
আহিয়ান আনিতাকে বসিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আনিতার হাত ধরে বললো,
–“অনেক কথা হয়েছে এবার খেতে চলো।”
এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় বেশ কিছু মাস। সামনে মাসের প্রথম সপ্তাহে আনিতার ডেলিভারি ডেট দেওয়া হয়েছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপর ওদের কোল জুড়ে ছোট্ট একটা রাজকন্যা আসবে। কতশত স্বপ্ন দুজনের এই বেবিটাকে নিয়ে। প্রায় প্রতিদিন দুজনে ঝগড়া করে মেয়ের নাম রাখা নিয়ে৷ শেষে দুজনে মিলে একটা নাম ঠিক করে রেখেছে।
আনিতা মাঝে মধ্যেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। আগের থেকে অনেকটা গোলুমোলু হয়েছে ও। আট মাসের পেটটা অনেকটা বড় হয়ে উঁচু হয়ে আছে। এখনো আনিতার এই শরীরে আহিয়ান প্রায়শই ওকে কোলে তুলে নিয়ে সারারুম ঘুরে বেড়ায়। আনিতা অবাক হয় মাঝে মাঝে। ওর এরকম ভারী শরীরটা কি করে কোলে তুলে নেয় আহিয়ান? কষ্ট হয় না ওর?
রাত দেড়টা বাজে। হুট করেই আনিতার ঘুম ভেঙে যায়। ধীরে ধীরে উঠে বসে। আহিয়ান যেহেতু আনিতাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলো তাই আনিতা উঠে বসাতে আহিয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। তড়িঘড়ি করে আহিয়ান উঠে বসে আনিতাকে জিজ্ঞেস করে,
–“আনি? এই আনি কি হয়েছে তোমার? পেইন উঠেছে?”
–“শান্ত হোন। কিছু হয়নি আমার। ঠিক আছি আমি। এমনি ঘুম ভেঙে গিয়েছে।”
–“আচ্ছা। তাহলে শুয়ে পড়ো। আমি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি ঘুম এসে পড়বে।”
–“উঁহু। আমার ঘুম আসবে না এখন।”
–“চেষ্টা করে দেখো।”
–“আইসক্রিম খাবো আমি।”
–“কাল খেয়ো? এতরাতে আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে। এখন তুমি একা নও বুঝো একটু।”
–“লাগবে না। এই একটু আইসক্রিম খাবো বেশি না। প্লিজ প্লিজ।”
আহিয়ান মৃদু হেসে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। আনিতা প্রায়শই মাঝরাতে উঠে আইসক্রিম চকলেট খাওয়ার বায়না ধরে। তাই আহিয়ান এসব এনে ফ্রিজে রেখে দিয়েছে। আহিয়ান বাটিতে করে অল্প একটু আইসক্রিম এনে আনিতার সামনে দিলো। আনিতা দু চামোচ খেয়েই বাটিটা আবার আহিয়ানের হাতে দিয়ে বললো,
–“ভালো লাগছে না। খাবো না আমি।”
আহিয়ান বিনাবাক্যে বাটিটা বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললো,
–“আচ্ছা খেতে হবে না। এখন ঘুমাও তাহলে।”
–“উঁহু। এই শুনুন না।”
–“হ্যাঁ বলো।”
–“লুডু খেলবো আমি।”
আনিতার কথায় আহিয়ান হাসলো। অন্যকেউ হলে হয়তো এতক্ষণে বিরক্ত হয়ে যেতো। কিন্তু আহিয়ান বিরক্ত হচ্ছে না। এই সময়ে সবারই এরকম হয়। ও জানে আনিতার এখন মুড সুইং হচ্ছে। ও এটাও জানে আনিতা একটু বাদেই আবার অন্যকিছু করার বায়না ধরবে। আহিয়ান হেসে লুডু বের করে খেলতে শুরু করলো ওর সাথে। আহিয়ানের ভাবনাকে সত্যি করে দিয়ে আনিতা মিনিট সাতেক এর মাথাতেই বললো,
–“এই আমি আর খেলবো না। খুব ক্ষুধা লেগেছে আমার।”
–“কি খাবা?”
–“পাস্তা।”
–“আচ্ছা বসো। আমি আসছি।”
–“নাহ আমিও যাবো আপনার সাথে।”
–“তুমি থাকো। আমি পনেরো মিনিটের মধ্যেই রুমে আসছি।”
–“নাহ আমিও যাবো।”
আর কোনো উপায় না পেয়ে আহিয়ান আনিতাকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো৷ আনিতাকে কিচেন কেবিনেটের উপর বসিয়ে দিলো আহিয়ান। তারপর গ্যাস অন করে এক চুলোতে পানি বসিয়ে ছুড়ি আর বোর্ড নিয়ে পেয়াজ মরিচ কুচি করতে লাগলো। সাথে কিছু সবজিও নিলো কাটার জন্য। পানি গরম হলে তাতে পাস্তা দিয়ে দিলো সেদ্ধ হওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ বাদে পাস্তা সেদ্ধ হয়ে গেলে পাস্তা তুলে অন্য একটা পাত্রে রাখলো। বেশ অনেকটা ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলো সেই পাত্রে। তারপর আবার পানি ঝড়িয়ে পাস্তাটা রেখে দিলো পাশে। ঠান্ডা পানি দেওয়ার কারন হলো পাস্তা যাতে একটার সাথে অন্যটা না লাগে৷ বেশ কিছুটা সময় বাদে আহিয়ান পাস্তা রান্না করে আনিতার সামনে নিয়ে গেলো৷ আনিতা এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আহিয়ানের রান্না করাটা দেখছিলো। আহিয়ান মুখে তুলে খাইয়ে দিলো আনিতাকে। আনিতাও সাথে আহিয়ানকে খাইয়ে দিয়েছে। বেশ কয়েক চামোচ খেয়ে আনিতা আর খেলো না। প্যানে অবশিষ্ট যে পাস্তা ছিলো সেটা একটা বাটিতে করে ফ্রিজে রেখে দিলো।
আনিতাকে নিয়ে আবার রুমে চলে এসেছে আহিয়ান। আনিতা আবারো বায়না ধরেছে ব্যালকোনিতে গিয়ে রাতের আকাশ দেখবে। অগ্যতা আহিয়ান আনিতাকে ব্যালকোনিতে নিয়ে গেলো। ব্যালকোনিতে রাখা দোলনায় বসে পড়লো দুজনে। আনিতা আহিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে রাতের আকাশ দেখছে। বেশ কিছুক্ষণ আহিয়ান আনিতার সারা না পেয়ে বুঝতে পারলো আনিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে এসে শুইয়ে দিলো। রুমের লাইট অফ করে আনিতার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আনিতার কপালে চুমু দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
–
সন্ধ্যায় আনিতা সকলের সাথে ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আড্ডার মাঝে হুট করেই আনিতার পেইন উঠে। আহিয়ান সেসময়ে সবে অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হচ্ছিলো। নাহিয়ান ওর পরিচিত একজন গাড়ির ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে ইমিডিয়েটলি বাসার নিচে আসতে বললো। আহিয়ান তড়িঘড়ি করে ফ্রেস হয়ে আনিতাকে কোলে তুলে নিয়ে লিফটে করে নিচে নেমে গেলো। ওরা নিচে নামার মিনিট দুয়েকের মাঝেই গাড়ি চলে আসলো। আনিতার সাথে আহিয়ান নাহিয়ান আর রুহি গেলো হসপিটালে। আহিয়ানের আম্মু অদ্রি আর নুজাইরাহকে নিয়ে বাসায় থেকে গেলেন৷ তিনিও যদি চলে যান তাহলে ওরা দুজন একা হয়ে যাবে। তাই আর উনি গেলেন না।
আনিতাকে অটিতে নিয়ে যাওয়া হবে এখন৷ কিন্তু আনিতা আহিয়ানের হাত কিছুতেই ছাড়ছে না। ওর খুব ভয় হচ্ছে। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে বললো,
–“আমার খুব ভয় লাগছে আহিয়ান। আমি আবার আপনার থেকে হারিয়ে যাবো না তো?”
আনিতার কথা শুনে আহিয়ানের বুক কেঁপে উঠলো। কিন্তু আনিতাকে সেটা বুঝতে না দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“কিচ্ছু হবে না। ভয় পেও না তুমি। আমি আছি তো তোমার পাশে। তোমার বা আমাদের বাবুর কিচ্ছু হবে না।”
নার্স আনিতাকে নিয়ে অটিতে চলে গেলো। আহিয়ানেরও একটু একটু ভয় লাগতে শুরু করলো। এমন অনেক হয়েছে অটিতে বাচ্চা বা মা যেকোনো একজন বেঁচেছে। এসব ভেবে আহিয়ানের ভয় হতে শুরু করলো। নাহিয়ান আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখতেই ও বললো,
–“ভাইয়া ও__ওর কিছু হবে না তো? ও আবার আমার কাছে ফিরবে তো?”
–“চিন্তা করছিস কেন পাগল? কিচ্ছু হবে না আনিতার। ও একদম ঠিক থাকবে। আর আমাদের আম্মুটাও ঠিক থাকবে বুঝলি? চিন্তা করিস না তো।”
একে একে ফাইয়াজ রোদেলা শুভ ওরা সকলেই হসপিটালে এসে উপস্থিত হলো৷ আনিতার আম্মু আর দাদুও আসছেন। আনিতার খবর পাওয়ার পরই তারা এখানে আসার জন্য বের হয়ে পরেছেন।
পয়তাল্লিশ মিনিট বাদে একজন নার্স অটি থেকে বের হয়ে এলেন। তার কোলে সাদা টাওয়াল দিয়ে মোড়ানো ছোট্ট একটা বাবু। নার্স এসে বাচ্চাটাকে রুহির কাছে দিতে গেলে রুহি ইশারায় আহিয়ানের কোলে দিতে বললেন। আহিয়ান কাঁপা কাঁপা হাতে বাবুটাকে কোলে নিলো। বাচ্চাটার গালের সাথে নিজের গাল ঠেকিয়ে খুশিতে কেঁদে দিলো আহিয়ান। নার্স বললো,
–“কংগ্রাচুলেশনস আপনার মেয়ে বাবু হয়েছে।”
আহিয়ান বাবুটাকে বুকে জড়িয়ে বললো,
–“আমার ওয়াইফ? ও ও ঠিক আছে তো?”
–“হ্যাঁ আপনার বউ বাচ্চা দুজনেই ঠিক আছেন। আপনার ওয়াইফকে এক্ষুনি কেবিনে শিফট করা হবে।”
এইটুকু বলেই নার্স চলে গেলো। কিছুক্ষণের মাঝে আনিতার আম্মু দাদুও চলে এলেন। আহিয়ানের আম্মু অদ্রি আর নুজাইরাহকে নিয়ে চলে এসেছেন। একে একে সবাই বাবুকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো। নার্স এসে জানালো আনিতার জ্ঞান ফিরেছে। তাই সবাই কেবিনে চলে গেলো ওর সাথে দেখা করতে। আহিয়ানও ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। আহিয়ান আনিতার পাশে ওদের মেয়েকে শুইয়ে দিলো। আনিতা এক হাতে মেয়েকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেলো। আহিয়ানও চেয়ার টেনে আনিতার পাশে বসলো। সকলে আনিতার সাথে দু/একটা কথা বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। আনিতা উঠে বসতে চাইলে আহিয়ান ওকে ধরে উঠে বসালো। বেডের সাথে বালিশ লাগিয়ে তাতে হেলান দিয়ে বসেছে আনিতা। কোলে ওর ছোট্ট মেয়ে। আনিতা ওর মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আমাদের মেয়ের কি নাম ঠিক করেছিলাম মনে আছে তো?”
–“আমার মেয়ের নাম আমার মনে থাকবে না। এটা কখনো হয় নাকি?”
–“তাহলে বলুন তো নামটা কি ছিলো?”
–“আশফিয়া আদৃত।”
কথাটা বলে আহিয়ান আনিতার পাশে বসে ওকে একহাতে জড়িয়ে নিলো। ওরা দুজনে মিলে ওদের মেয়ের জন্য এই নামটাই ঠিক করেছিলো। কতই না ঝগড়াঝাটি করেছে দুজনে নাম রাখা নিয়ে। শেষে দুজনে একসাথে মিলে এই নামটা ঠিক করে। এই দিনটার জন্য ওরা কত অপেক্ষা করেছে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত দিনটা এলো ওদের জীবনে। আহিয়ান ওর মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে তারপর আনিতার কপালে চুমু দিলো। আনিতাকে একহাতে জড়িয়ে নিলো। আনিতাও আলতো ভাবে আহিয়ানের কাঁধে মাথা রাখলো।
পরিশেষেঃ আনিতা আহিয়ান কল্পনাতেই বেশ সুন্দর। বাস্তবে ওরা দুজন দুজনের জন্য না। দোয়া করবেন সকলে গল্পের আনিতা আর আহিয়ান যেন এভাবেই সারাজীবন একে অপরের হয়ে থাকতে পারে। সুখে দুঃখে সারাজীবন যেন দুজনে একসাথেই বাঁচতে পারে।
|সমাপ্ত|
[