শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ১১+১২

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আমার রুমে এসে দেখি উনি বিছানায় বসে ফোন টিপছেন। আমি কাবার্ড থেকে একটা টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। সাওয়ার নেওয়া শেষে চুলে টাওয়েল টা পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। ওয়াশরুমে দরজা খুলার শব্দে সৌরভ ফিরে তাকায় সেদিকে। আর তার নজর আটকে যায় এক অপরূপ সিগ্ধ নারীর দিকে। ইপশিতাকে দেখে বারবার মাথায় হুমায়ূন আহমেদের উক্তি টা ঘুরছে সৌরভের।

” মেয়েরা যদি জানত যে গোসল করার পর মাথায় তোয়ালে পেঁচানো অবস্থাতে তাদের কি পরিমান সুন্দর লাগে তাহলে তারা সব বিয়ে বাড়িতে তোয়ালে পেচিয়ে যেত। পার্লার গুলোতে চুলে পেঁচিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার চল থাকতো। ”

আসলেই কথাটা যে উনি সম্পূর্ণ সত্য বলছেন তা সৌরভ মানতে বাধ্য। সৌরভের নজর যেনো ফিরাতেই পারছে না ইপশিতার উপর থেকে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাড়ালাম। আয়নার সামনের টুলে বসে বসে লোশন দিচ্ছি ঠিক তখনই আমার চোখ গেলো সৌরভ ভাইয়ার উপর। কিরকম ভাবে যেনো তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে এই চাহনিতে কোনো ঘৃনা নেই। শুধুই আছে একরাশ মুগ্ধতা। কিন্তু উনি আমার উপর কি কখনো মুগ্ধ হতে পারেন। কি জানি ? উনাকে বুঝা কোনোকালেই আমার দ্বারা সম্ভব হয়নি যে আজ হবে। আমি উনার থেকে মুখ ফিরিয়ে উঠে দাড়ালাম। আমার পরনের জামার উড়না লাগেজে রাখা। এখন মূলত আমি অন্য ড্রেসের উড়না গায়ে দিয়ে আছি। আমি আলমারির উপর থেকে লাগেজ টা নিতে যাবো তখন কোমরে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম। আর সেই স্পর্শে আমার গা পুরো কেপে উঠলো। কিন্তু রুমে তো আমি আর উনি ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে কি উনি ?? আমি হাতটা নামিয়ে নিয়ে ভয়ে জমে সেখানেই শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। উনি পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে ধীরে ধীরে ঠোঁট বুলাতে লাগলেন। আর এতে আমি অবাক চরম পর্যায়ে চলে গেলাম। উনি এই প্রথম আমার এতটা কাছে এসেছেন । কিন্তু উনি তো আমাকে পছন্দ করেন না। তাহলে ? আমি চোখ মুখ শক্ত করে কিছু বলতে যাবো তখনই উনি আমার কোমর জড়িয়ে নিজের দিকে ফিরান। আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই। উনি আমার চোখে গভীর ভাবে নিজের চোখ রাখেন। আচ্ছা আমি কেনো এই চোখের গভীরতা মাপতে পারছিনা ? কিন্তু আমার মনে হচ্ছে উনার মুখ যা বলে তা উনার চোখ বলে না। চোখের কথাটা পুরোই ভিন্ন উনার। উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে আমার চুল থেকে টাওয়েল টা খুলে দেন। আর এতে আমার চুলগুলো পিঠে আর কিছু ছোট চুল চোখের সামনে ছড়িয়ে পড়ে। উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে আলতো হাতে আমার চোখের সামনে পড়া চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেন। আর উনার এসব কাজে আমার কেনো যেনো ঘোর লেগে যাচ্ছে। আমি চাইছি উনাকে বাঁধা দেওয়ার। কিন্তু কেনো যেনো পারছি না। উনি নিজের মুখটা এগিয়ে আমার কপালে চুমু একে দেন। আর আমি সাথেসাথে চোখটা খিচে বন্ধ করে নেই। আমার বুকের ভিতর যেনো কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে। উনি আমার কপাল থেকে নিজের মুখ সরিয়ে এনে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে আমার ঠোঁটের দিকে তাকান। ততক্ষনে আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকাই। উনি কিছুক্ষণ আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজের মুখটা আমার দিকে এগিয়ে আনলে আমি কাপাকাপা গলায় বলি,

” আ.আপনি ক.কি কর.করছেন ??”

আমার কথাটা শুনে উনি থেমে যান। কিছুসময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পরপরই আমার ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ান। আমি মাথাটা নিচু করে আছি। একটু আগের কাহিনীর গুলার জন্যে অনেক লজ্জা লাগছে আমার । উনি মাথাটা নিচু করে বলেন,

” I’m, I’m really sorry… আসলে আমি বুঝতে পারনি এরকম করে ফেলবো। Sorry.. ।”

বলেই উনি ঝটপট বারান্দাতে চলে যান। আর আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এই লোকটার চরিত্রে এত রহস্য কেনো ? বুঝতে পারছি উনি একটু আগের ঘটনার জন্যে লজ্জিত। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমি কেনো উনাকে বাঁধা দেইনি ?? কি হয়ে গিয়েছিল আমার ? কি জানি? আমি একপলক বারান্দার দিকে তাকাই। উনি বারান্দায় গ্রিলে হাত দিয়ে আনমনে কি যেনো ভাবছেন। যাক আমার কি ? যা ইচ্ছা তাই করুক । আমি চুলটা আঁচড়িয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

সৌরভ এর এখন নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে। মাঝেমধ্যে ও কিভাবে এত ফলিশ কাজ করতে পারে তা ওর মাথায় ঢুকছে না। কি হয়ে যায় যখন মেয়েটা ওর সামনে আসে। এরকম তো কথা ছিল না। ও তো ঈপ্সিতা কে বিয়েই করেছে যাতে ওকে কষ্ট দিতে পারে। একবার নয় বারবার ওর মন কে চূর্ণ করতে পারে। যাতে ওর মাধ্যমে কে একজন বুঝাতে পারে যে কারো সংসার ভাঙ্গা ঠিক কতটা কষ্টের। তাছাড়া সৌরভ তো ইপশিতা কে ভালোবাসার জন্যে বিয়ে করে নি। বিয়ে করেছে যাতে ওকে নিজের কাছে রেখে তিলে তিলে কষ্ট দিতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে নিজের এরকম অদ্ভুত ব্যাবহার ওকে বারবার চমকে দিচ্ছে। আজ সকালে যখন ও গান গেয়েছিল তখন ওর কেনো মনে হচ্ছিল গানের প্রতিটা সুর ইপ্সিতার নামে লেখা। কেনো ?? কেনো তখন ও নিজের চোখ কে ইপ্সিতার চোখ থেকে সরাতে পারেনি। কেনো ? বিয়ের রিসিপশনের দিন ইপসিতাকে এত সুন্দর লাগছিল যে ও না চাইতেও মুখ থেকে মাশাল্লাহ বের হয়ে যায়। ঈপ্সিতা এর উপর যাতে কারো নজর না লাগে তাই সে নজর ফোঁটা দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কেনো ? ঈপ্সিতা এর উপর কারো নজর লাগল তার কি ? কেনো এতো জ্বলে ওর ? উফফ সৌরভ জাস্ট কন্ট্রোল। ওকে তুই কোনোভাবেই ভালবাসতে পারিস না। ওকে বিয়ে করেছিস জাস্ট একটা মানুষকে বুঝানোর জন্যে যে কারো সংসার এ অশান্তি ক্রিয়েট করলে কি অনুভতি হয় ? কারও কাছ থেকে তার স্বামীকে কেড়ে নিলে কতোটা কষ্ট হয়। সৌরভ তোকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে। কোনোভাবেই এই মেয়েটার মায়ায় জড়ানো যাবে না। একদমই না। সৌরভ আরো কিছুসময় বারান্দাতে থাকে। নিজেকে এখন ওর সময় দেওয়া দরকার। বুঝা দরকার। আসলে ও কি চায়।

আমি মার রুমে গিয়ে দেখি মা নেই। রান্নাঘরে বোধ হয়। আমি রান্নাঘরে গিয়ে দেখি মা পিঠা করছেন। সুজির পিঠা। জানি এসব উনার জামাইয়ের জন্যে। বেচারা মনে হয় আজ খেতে খেতেই পটল তুলবে। মা একটা প্লেটে কিছু সুজির পিঠা নিয়ে আমাকে এগুলা ভাজতে বলেন। আমি আর কি করবো মার কাজে হেল্প করতে লাগলাম। ভাজা শেষ হলে মা একটা ট্রে তে সুন্দর করে পিঠাগুলো সাজিয়ে আমার হাতে তুলে দিয়ে এগুলো উনার কাছে নিয়ে যেতে বলেন।আমিও উনার কথা শুনে ট্রে টা নিয়ে নিজের রুমে ছুটলাম। রুমে গিয়ে দেখি উনি এখনো বারান্দাতে দাড়িয়ে আছেন। আমি ট্রে টা টি টেবিলে রেখে বারান্দায় গিয়ে বলি,

” মা পিঠা করেছেন। খেতে আসুন। ”

সৌরভ ইপ্সিতার কথা শুনে ওর দিকে ফিরে তাকায়। মেয়েটাকে আজকে কেনো ওর এত সিগ্ধ লাগছে। কেনো জানি মেয়েটার দিকে তাকালে এখন ওর প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করে না। খুব করে ভালো ….উফফ সৌরভ তুই ভুলে যাস না এই বিয়ের রিসন কি ? উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে যান। আল্লাহ জানেন উনার ইদানিং কি হয়েছে। অনেক অদ্ভুদ ব্যাবহার করছেন। যায় হোক আমিও উনার পিছুপিছু রুমে ঢুকি। উনি টি টেবিলের উপর রাখা পিঠার প্লেটের দিকে তাকিয়ে এক বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বিছানার উপর বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” এসব আমার এখন খাওয়া সম্ভব না। পেট পুরো লোড। প্লিজ নিয়ে যাও এসব। ”

উনার অবস্থা দেখে আমার এখন হাসি পাচ্ছে। বেচারা খেতে খেতে অবস্থা পুরো বেহাল। তাও আমি উনার সামনে গিয়ে ট্রে থেকে প্লেট টা উনার দিকে এগিয়ে বলি,

” না না , মা এত কষ্ট করে বানিয়েছেন। খেতে তো হবেই। নেন শুরু করেন। ”

আমার কথা শুনে হটাৎ উনার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। দাতে দাত চেপে ধমকে বলেন,

” আমি খাবো না এটা। শুনতে পাও নি ? এক্ষণি এটা আমার সামনে থেকে সরাও। ”

আমি উনার ধমক শুনে কেপে উঠলাম। হটাৎ উনার কি হলো ? সামান্য পিঠাই তো । এত রেগে গেলেন কেনো উনি ? আমি একটু সাহস করে বলি,

” আ..আপনি ক..কেনো ..”

উনি আমার কথে মাঝখানে ঝট করে উঠে দাড়ালেন। আমার সামনে এসে আমার বাহু টা শক্ত করে ধরে বলেন,

” আমার জাস্ট সহ্য হচ্ছে না। এইজন্যে । বুঝেছ ? এক্ষণি এসব আমার সামনে থেকে সরাও। নাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা । ”

বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে উনি রুম থেকে চলে গেলেন। আর আমি টলমল চোখে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কি হয়েছে উনার ? এরকম ব্যাবহার কেনো করছেন উনি ? সমস্যা কি উনার ? কিন্তু আজ আমি কাদিনি। উনার এইসব ব্যাবহার এখন আমার সয়ে গেছে। আমি বিষন্ন মনে ট্রে টা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। মাকে এখন হাজারটা অজুহাত দিতে হবে।
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ট্রে টা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলাম। মা এখনও আরো পিঠা ভাজছেন। আমি গিয়ে ট্রে টা একটা জায়গায় রেখে দিয়ে মাকে বললাম,

” আর পিঠা ভাজা লাগবে না। উনি বলছেন উনার এই পিঠা পছন্দ নয়। ”

মা পিঠা ভাজা বন্ধ করে আমার দিকে ফিরে খানিকটা অবাক হয়ে বললেন,

” কিন্তু সাবিনা ( সৌরভ ভাইয়া মা ) যে বললো সৌরভ মিষ্টি জাতীয় পিঠা খেতে পছন্দ করে। ”

” হ্যা মিষ্টি জাতীয় পিঠা পছন্দ করে কিন্তু উনি এই পিঠাটা খান না বলছেন। তাই আমি আর জোড় করিনি। ”

” ওহ। না খেলে কি আর করার। অন্য কিছু বানিয়ে দেই এখন ?? ”

আমি তাড়াতাড়ি করে বলি,

“না না , উনার পেট পুরো লোড। তাই আর না। অনেক হয়েছে। ”

মা কিছু না বলে পিঠা ভাজতে লাগলেন। আমি মার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলি,

” এখন আরো পিঠা ভাজছো কেনো ?? উনিতো খাবেন না বলেছেন। ”

মা কড়াইতে রাখা পিঠাগুলো নামিয়ে চুলার আগুনটা নিভিয়ে দেন। তারপর আমার দিকে ফিরে বলেন,

” তোমার উনি খাবেন না। তাই বলে তোমার বাপও কি খাবেন না ?? তোর আব্বু এটা শখ করে খায়। তাই আরো বানিয়ে রাখলাম। যেনো হুটহাট কিছু খেতে দিতে বললে এটা যাতে হাতে ধরিয়ে দিতে পারি। তাই। ”

বাবার কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই একটা মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসতেন। আর আজ আমাদের মধ্যে কতোটা দূরত্ব। ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি। মা হয়তো আমার অবস্থাটা বুঝছেন। তাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

” যা করেছিস। জানিনা উনি এরপর তোর সাথে ঠিকভাবে কথা বলবেন কিনা ? কিন্তু চেষ্টা করতে পারিস। ”

বলেই মা রেক থেকে একটা বয়াম বের করে পিঠাগুলো ওই বয়ামে রেখে দিলেন। আমাকে উনার কাছে যেতে বলে নিজের রুমে চলে গেলেন উনি। আমি আর কি করবো নিজের রুমের দিকে এগুলাম। উনি হয়তো আমার রুমে নেয়। একটু আগেইতো রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। উফফ সবসময় নাকের ডগায় রাগ যেনো জমা থাকে। সুযোগ পেলেই আমার উপর তার সো কোল্ড রাগ ঝাড়তে থাকে। বদ একটা। আমি রুমের সামনে গিয়ে দেখি রুমের দরজা হালকা ভিড়ানো। আমি সাতপাঁচ না ভেবে রুমে ঢুকি। রুমে ঢুকেই আমার চক্ষু পুরো চড়কগাছ। উনি রীতিমত উদোম শরীরে দাড়িয়ে আছেন টাওয়েল পড়া আছেন শুধু। শরীর থেকে বিন্দু বিন্দু পানি ঝরছে। চুলগুলো থেকেও পানি পড়ছে। উনাকে এই রকম উদোম শরীরে দেখে আমি অনেক লজ্জা পেলাম। আমি তারাতারি করে রুম থেকে বেরিয়ে যেত চাইলে উনি ডাক দেন আমায়,

“ঈপ্সিতা , দাড়াও। ”

আমি উনার ডাক শুনে দাড়িয়ে গেলাম। উনার দিকে ফিরে মাথা নিচু করে আছি। উনি বলে উঠলেন,

” আমার একটা টিশার্ট পাচ্ছি না কেনো লাগেজে ?? সব শুধু শার্ট। কোনো টিশার্ট আনোনি ?? ”

আমি উনার কথা শুনে দাত দিয়ে জিব কাটলাম। উফফ মনেই ছিল না আমার। আমি আমতা আমতা গলায় বলি,

” ম.মনে ছিল না । ”

উনি লাগেজটা ঠাস করে বন্ধ করে বলেন,

” ড্যাম। মন কোথায় থাকে তোমার আলওয়স ?? ”

আমি উনার কথা শুনে ঝাজালো গলায় বলি,

” আমার কি দোষ। একটাই এনেছি। আর আপনি তা এখন খুলে ফেলেছেন। আর এই দুপুর বেলায় আবার সাওয়ার নিলেন কেনো ?? শীতের প্রকোপে কি আপনার মাথাটা গেছে নাকি ?? ”

উনি দাতে দাত চেপে বলেন,

” আমার মাথা কেনো যাবে ইডিয়ট ? বাইরে গিয়েছিলাম। কোকাকোলা কিনেছিলাম আর ওটা খুলতে গিয়ে সব আমার উপর ছিটে পড়েছে। আঠালো আঠালো লাগছিলো তাই একেবারে সাওয়ার নিয়ে নিয়েছি। ”

আমি উনার কথা শুনে হেসে দিলাম। বললাম,

” সিরিয়াসলি আপনি সামান্য কোক এর ক্যাপ খুলতে পারেন না। আর পারবেন না বা কেনো ??এসব খুলতে গেলে টেকনিক লাগে , টেকনিক । যেটা আপনার নেই। সারাক্ষণ মুখ বাঙ্গালার সাতের মত রাখলে এসব কি আর মাথায় থাকে ? ”

বলেই আমি মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলাম। উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলেন,

” অনেক বেশি বাজে বকো তুমি। বেশি না বকে আমাকে টিশার্ট দেও। আমি এসব শার্ট পড়ব না। আর যেসব শার্ট এনেছ সবই জাস্ট অসহ্য। ভালো শার্ট ছিল না কাবার্ড এ , ইডিয়ট ? ”

আমি কপাল কুচকে কিছু একটা ভাবলাম। পরে মনে পড়ায় আমি জলদি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। সৌরভ ইপ্সিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

” মেয়েটা আমাকে পুরো পাগল করে ছাড়বে। ড্যাম। কোথায় গেলো এখন ?? ”

আমি বাবার রুমে গিয়ে একটা উনার একটা টিশার্ট নিয়ে আসলাম। বাবা আপুর বিয়েতে উনার জন্যে কিনেছিলেন। আমি টিশার্টটা নিয়ে রুমে গেলাম। উনি উদোম শরীরে বিছানায় বসে আঙ্গুল দিয়ে নিজের কপাল ঘষছেন। আমি গিয়ে উনার সামনে টিশার্টটা এগিয়ে দিয়ে বলি,

” নেন ধরেন। ”

উনি টিশার্টটার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,

” এটা কার ?? ”

” আপুর বিয়েতে বাবা আপনার জন্যে কিনেছিলেন। কিন্তু দেওয়া হয়নি । তো এখন এটা ছাড়া আর কোনো টিশার্ট নেই তাই এটাই নিয়ে এসেছি। ”

উনি আমার থেকে টিশার্ট টা নিয়ে আমার সামনেই পড়তে লাগলেন। আমি চোখ বড়বড় করে বলি,

” আপনি কি এখানে আমার সামনে চেঞ্জ করবেন ?? ”

উনি টিশার্ট টা গায়ে দিয়ে বলেন,

” আমি কোথায় তোমাকে সামনে চেঞ্জ করছি বরং তুমি আমার সামনে দাড়িয়ে থেকে আমার চেঞ্জ করা দেখছো। ”

আমি উনার কথা শুনে কটমট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। একটা কথাও ভালোভাবে বলা যায় না। সবসময় মুখটা কে খারাপ বানানোই লাগবে। আর কথায় কথায় ইডিয়ট , ড্যাম বলে চিল্লাবে । যত্তসব।

আমি আমাদের আরেকটা বেডরুমে গিয়ে দেখি আমার সব কাজিনরা রীতিমত পপকর্ন নিজে মুভি দেখছে। আমিও গিয়ে ওদের সাথে গিয়ে বসি। কিছুসময় মুভিটা দেখার পর বুঝতে পারি যে এটা হরর মুভি। নামটা হলো এনাবেলা। আমি অনেকবার এই মুভির কথা শুনেছি। অনেক ভয়ংকর নাকি মুভিটা। একটা পুতুলের কাহিনী। কিন্তু কখনো সাহস করে দেখা হয়নি মুভিটা। আজ সবাই একসাথে আছে তাই ভয়টা কম লাগবে। আমিও তাই সাতপাঁচ মা ভেবে মুভি দেখতে লাগলাম। আমিতো একটু পর পর ভয় কেপে কেপে উঠছিলাম। একটা পুতুল কি করে এতটা ভয়ংকর হয়। এই পুতুলটা নাকি কোন মিউজিয়ামে সাজানো আছে। তার মানে কি এগুলা সত্যি ?? আমার তো রীতিমত লোমকূপ দাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কাজিনরা খুব আনন্দের সাথে মুভি দেখছে। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে মুভিটা নিয়ে ডিসকাস করছে। আর আমি চুপ করে চোখ মুখ খিচে দেখছি। পুরোটা দেখতে পারলাম না। অর্ধেক দেখেই আমার জান শেষ। আমি ওদেরকে বলি,

” আমাকে হয়তো ডাকছেন উনি। তোরা দেখ। আমি আসছি। ”

আনিকা টিভির দিকে তাকিয়ে বলে ,

” হ্যা যাও যাও। তোমার উনি ত তোমাকে না দেখে রীতিমত ” পাগল হয়ে যাবো আমি পাগল হয়ে যাবো ” গানটা গায়ছেন। তাই জলদি যাও। ”

আনিকার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। আমিও ওদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে যাই। এখন তো এই বিকেল বেলাও আমার ভয় লাগছে। না জানি রাতে কি হবে ? কোনোমতে নিজের রুমে আসলাম। উনি ফোনে কথা বলছেন কার সাথে। আমি গিয়ে বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়লাম।

সৌরভ ফোন রেখে বিছানায় তাকিয়ে কাউকে ঘুমাতে দেখে। যেহেতু এটা ইপসিতার রুম। তাই ওই হবে। কিন্তু এই অবেলায় গুমাচ্ছে কেনো ? দুপুরে তো ও কোনোজিবনেই ঘুমায় না । তাহলে আজ ? শরীর খারাপ করলো নাকি ? সৌরভ বিছানায় বসে আলতো গলায় ডাক দেয় ঈপ্সিতা কে।
হটাৎ উনার ডাক শুনে আমি কম্বল থেকে মুখটা বের করি। উনি গম্ভীর গলায় বললেন,

” কি হয়েছে ? ঘুমাচ্ছ কেনো এভাবে ? ”

উনাকে ভূতের মুভির কথা বলা যাবে না। নাহলে পড়ে আমার দুর্বলতা সম্পর্কে জেনে যাবে উনি। তাই আমি হালকা হেসে বলি,

” ঘুম পাচ্ছে তাই .। ”

উনি কিছু না বলে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলেন। আমি আবার মুখটা ঢাকবো তখন আমার চোখ গেলেও বিছানার উপর রাখা টেডির উপর। আচ্ছা ও কি ভূত ? ওই পুতুলটার মত ? আমি একটা ঢুক গিলে টেডি টাকে দেখেতে লাগলাম।ভূতের কোনো আলামত পাচ্ছি না। কিন্তু তাতে কি ? প্রথম প্রথম তো ওই এনাবেলা ডলেও কোনো আলামত পায়নি। আমি ঝট করে বিছানা থেকে উঠে বসলাম। কাপা কাপা হাতে পুতুল টা নিয়ে বারান্দায় গেলাম।উনি ফোন টিপছেন। আমাকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন,

” ঘুম শেষ ? ”

আমি কিছু না বলে বারান্দা দিয়ে ফেলে দিলাম পুতুল টা। উনি চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” এটা তোমার প্রিয় পুতুল ছিল । ফেলে দিলে যে ? ”

আমি ভয় ভয় গলায় বলি,

” পরে যদি আমার প্রিয় পুতুল আমার উপরই চওড়া হয় তখন কি করবো আমি ? ভালো হয়েছে ফেলে দিয়েছি । ”

বলেই আমার বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালাম। পুতুলটা রাস্তায় পড়ে আছে। ময়লা হয়ে গেছে অনেক। উনি সন্দেহের দৃষ্টিতে বলেন,

” তোমার উপর চওড়া হয় মানে ? ”

আমি থতমত খেয়ে গেলাম উনার কথায়। তবুও বলি,

” আমার ভালো লাগে না এই পুতুল । তাই ফেলে দিয়েছি। আপনার কোনো সমস্যা ? ”

” না আমার সমস্যা হতে যাবে কেন ? কিন্তু তুমি বারান্দা দিয়ে ফেলেছ কেনো ? রাস্তা নোংরা কেনো করছো? ”

” রাস্তা কেনো নোংরা করবো ? পুতুলটা পেলে কেউ নিয়ে যাবে খেলার জন্যে। তাহলে আর ওয়াসট হবে না পুতুলটা। তাই বারান্দা দিয়ে ফেলেছি। ”

উনি আর কিছু বললেন না । আর আমি একবার পুতুলটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

চলবে..
চলবে… –

[ যান দিবো না ছোটো করে। প্রত্যেকদিন যেরকম দেই সেইরকমই দিবো পর্ব।

হ্যাপী রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here