শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ৯+১০

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আমি আমার রুমের বেডের উপর বসে বসে গেম খেলছি।আচ্ছা উনি কি একবারও আমার খোঁজ নেন নি যে আমি কোথায় ? উফফ আমিও না। উনার কাছে থেকে এসব আশা করাটাই বোকামি। আমিও এসব চিন্তা বাদ দিয়ে বসে গেম খেলছি। হটাৎ মা রুমে এসে হন্তদন্ত হয়ে বললেন,

” ওই ইপশি , একটু রান্নাঘরে আয় তো । নুডলস করে দিবি ডিম দিয়ে। তোরটা খেতে ভালো হয়। জলদি আয়। সৌরভ বসে আছে। ”

বলেই মা আমার হাত ধরে রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন। আমি আর কি করবো । উনার সামনে না যাওয়ার পন টা ভেঙে মার সাথে পা মেলালাম। ড্রয়িং রুমে উনি বসে একধ্যানে ফোন টিপছেন।আচ্ছা উনার কি আর কোনো কাজ নেই ফোন টিপা ছাড়া। যেসময় দেখি ঐ হাতে যন্ত্রটা নিয়ে বসে পড়েন। যায় হোক আমার কি। আমি উনার থেকে মুখ ফিরিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম। নুডলস বানানোর সময় একটু টমেটো সস দিলাম । টেস্ট টা একটু ভালো আসবে। মা প্লেটে নুডলস সাজিয়ে একটা ট্রে নিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দেন। বলেন,

“যা দিয়ে আয়। ”

আমার এখন এই কথার উত্তরে মাকে হাজারটা কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু বলতে পারছি নাহলে মা আবার সন্দেহ করবে। তাই চুপচাপ মায়ের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে এগুলাম। সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দিলেন। আমি উনার সামনের টেবিলে ট্রে টা রেখে ক্ষীণ আওয়াজে বলি,

” নাস্তা টা খেয়ে নিন। ”

উনি আমার কথা শুনে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে নুডলসের প্লেট ত হাতে নিয়ে খেতে লাগলেন। বান্দা টা একবারও জিজ্ঞেস করলো না আমি খেয়েছি কিনা! উফফ ইপশী তুই বারবার ভুলে যাস কেনো উনার দ্বারা কখনোই এসব পসিবল না। আমি আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসলাম। ভালো লাগছে না কিছুই। রুমের বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছি। রাত হয়ে গেছে। অনেকে ঠান্ডা পড়েছে সাথে হিম বাতাস। তাই মাঝেমধ্যে শীতে কেপে কেপে উঠছিলাম আমি। তাই ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে রুমে গিয়ে কাবার্ড থেকে একটা চাদর নিয়ে ঐটা গায়ে জড়িয়ে আবার বেলকুনিতে এসে দাড়ালাম।

” এই ঠাণ্ডায় বাইরে দাঁড়িয়ে কি করছ ? কাশি হয়ে মরার শখ জাগছে নাকি ? ”

সৌরভ ভাইয়ার কথা শুনে আমি পিছন ফিরে তাকালাম। দরজায় হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুঁজে আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছেন । আমি উনাকে দেখে গলা উচিয়ে বলি,

” হ্যা আমি মরলে ত আপনি অনেক খুশি হবেন তাইনা ? ”

আমার কথা শুনে সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালেন। আমি আবার বলে উঠি,

” কি হলো বললেন না যে ? আপনি অনেক খুশি হবেন তাইনা ? ”

উনি আমার কথা শুনে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে কিছু না বলে রুমে ঢুকে গেলেন। আমিও উনার পিছুপিছু রুমে ঢুকলাম। উনি মনে হয় জবাবটা দিবেন না। না দিলে কি হলো আমি জানি উনার কি উত্তর হবে। সেদিন তো বলে দিয়েছেন যে উনি ক্ষণে ক্ষণে আমার মৃত্য কামনা করেন। আমি উনার এদিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি কিছু খুজছেন। আমি কি জিজ্ঞেস করব কি খুজছেন ? বাদ দে কেনো জিজ্ঞেস করব ? উনার দরকার উনি বলবে , আমি কেনো ? হটাৎ উনি আমার দিকে ফিরে বললেন,

“আমার লাগেজ কই ? ”

আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবার আলমারির দিকে এগিয়ে যাই। পা টা একটু উচু করে আলমারির উপর থেকে লাগেজ টা বের করে উনার হাতে দেই। উনি লাগেজটা আমার হাত থেকে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলেন,

” লাগেজ আলমারির উপর রাখে কেউ ? ”

” আমি রাখি। আসলে জায়গা ছিল না রাখার। আর অন্য কোথাও রাখলে দেখতে বিচ্ছিরি লাগতো। ”

উনি লাগেজ থেকে একটা জ্যাকেট বের করে আবার লাগেজটার চেইন লাগিয়ে দিলেন। জ্যাকেট টা গায়ে দিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকান। বলেন,

” তোমার থিওরি তোমার মতই রিডিকিউলাস। ”

বলেই উনি দরজার দিকে এগুন। হটাৎ আমি উনার কাধের শার্ট টা হাত দিয়ে চেপে ধরি। উনি প্রথমে চমকে যান। পরপরই রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকান। আমি এসবের তোয়াক্কা না করে গলা উচিয়ে বলি,

” আজ সকালে তো বড় মুখ করে বলেছেন যে আপনার কাপড় চোপড় যাতে আর রেডী করে না দেই। তাহলে আজ এখন যে এই জ্যাকেট টা যে গায়ে দিলেন । আমি যদি আপনার কাপড় লাগেজে না নিতাম তাহলে কিভাবে জ্যাকেট টা পরতেন ? বলুন। ”

উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার হাতটা ঝটকা মেরে নিজের কাধ থেকে ছাড়িয়ে নেন। আমি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার উনার দিকে তাকাই। উনি রাগী গলায় বলেন,

” Don’t you dare…next time আমার শার্ট চেপে ধরার দুঃসাহস দেখাবে না। got it ? ”

বলেই দরজা ঠাস করে খুলে রুম থেকে চলে গেলেন। আমি শুধু উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বুক ফাটবে কিন্তু নিজের দোষ কোনোদিনও স্বীকার করবেন না। হ্হ।

রাত প্রায় ৯:৩০ বেজে গেছে। উনি সেই যে ড্রয়িং রুমে গেছেন আর একবার এদিকে ফিরেও তাকান নি। উনি ড্রয়িং রুমে বসে ফোন টিপছেন। মা মনে হয় ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড দিয়েছেন উনাকে। আর আমি আমার রুমে বসে গেম খেলেছি। উনার মুখোমুখি আর হয়নি। না হলে নির্ঘাত আমার উপর মুখ খারাপ করবে। বদ লোক একটা।

হটাৎ কলিং বেল বাজে। এখন নিশ্চই বাবা এসেছেন। আমি আর দেরি না করে তারাতারি করে রুম থেকে বেরিয়ে উচ্ছল মন নিয়ে দরজাটা খুলে দেই। বাবা আমাকে দেখে মুখটা শুকনো করে আমাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে যান। আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে দরজাটা লাগিয়ে বাবার পিছুপিছু আসি। বাবা সোফায় সৌরভ ভাইয়া কে দেখে মুচকি হেসে উনার পাশে গিয়ে বসেন। আমি বাবার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি সৌরভ ভাইয়া কে বাবার খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না। আর তার কারণ সেই বিয়ের দিনের কাহিনী। আমি ওদের কথা বলতে দেখে রান্নাঘরে চলে আসলাম। মা রান্নাঘরে সালাদের থালা সাজাচ্ছেন। আমিও গিয়ে তরকারি গুলা একটা একটা করে বাটিতে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এনে রাখলাম। মা আর ময়না দিদি মিলে বাকি কাজ গুলা করে আমাকে ওদের ডেকে আনার জন্যে বলেন।

বাবা এখন পর্যন্ত আমার সাথে কোনো কথা বলেন নি। তাই আমার খুব ভয় পাচ্ছে। তবুও মনে সাহস সঞ্চয় করে ওদের সামনে গিয়ে বলি,

” খাবার রেডি। ”

বাবা সৌরভ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি গিয়ে বসো। ”

উনি বাবার কথা শুনে উঠে দাড়ালেন। বাবা একবারও আমার দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। আর আমি টলমল দৃষ্টিতে বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আজ বাবা একবারও আমার সাথে কথা বললেন না। এতটাই পর হয়ে গেছি আমি ? আমি মাথাটা নিচু করে চুপচাপ ডাইনিং টেবিলে এসে বসলাম। সৌরভ ঈপ্সিতার যাওয়ার দিকে বিষন্ন মনে তাকায়। কিছুক্ষণ পর চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস টা ফেলে দিয়ে ইপ্সিতার পাশের চেয়ারে এসে বসে।

রাতের খাবার শেষ হয়। বাবা সবাইকে এটা ওটা বললেও আমার সাথে এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেন নি। সবার খাওয়া শেষ হলে আমি ডাইনিং টেবিলটা পরিষ্কার করে নিজের রুমে চলে এলাম। রুমে ঢুকে দেখি উনি বিছনায় হেলান দিয়ে ফোন টিপছেন। আমি কিছু না বলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ বিছনায় অপরপাশে ফিরে শুয়ে পড়লাম। সৌরভ ইপ্সিতার দিকে তাকিয়ে সেও বালিশ ঠিক করে শুয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে ঘড়িটার দেখে একবার চোখ বুলালাম। ৯:৫৬ বাজে। আমি চোখ মুখ কচলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে মুখে ক্রিম দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসি আমি। ড্রয়িং রুম এসে আমিতো অবাক হয়ে যাই। আমার সব কাজিনরা এসেছে। সংখ্যায় বলতে গেলে প্রায় ৪-৫ জন ।আমি ওদেরকে দেখে খুশিতে ওদের সাথে গিয়ে বসি। ওরা একেকজন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বিয়ের জন্যে শুভেচ্ছা জানায়। আমার চাচাতো বোন রিয়া বলে উঠে,

” কি গো আপুনি , এখন উঠার সময় হলো তোমার ? আমরা সেই ৮ টার দিকে এসেছি । ”

রিয়ার কথার মাঝখানে আরেক চাচাতো বোন আনিকা বলে উঠে,

” বুঝো না আপু। রাতভর আশিক বানায়া চলছিল। তাইনা আপু ? ”

আনিকার কথা শুনে আমি চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকাই। বলি,

” ওই কুত্তা , আমি তোর থেকে বড়। এসব কি কথা হে ? ”

আনিকা আমার রাগকে তোয়াক্কা না করে আবার বলে উঠে,

” হ্যা হ্যা জানি তুমি আমার থেকে বড়। তো কি হয়েছে। মজা তো আমারও নিতে পারি। তাইনা আপু ? ”

আমি আনিকার কথা শুনে ওর দিকে একটা বালিশ ছুঁড়ে দিলাম।

” আরে আপু মারছো কেনো ? সত্যিই তো বললাম। ”

আমি ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। আমার কথার মাঝখানে সাথী বলে,

” আপু জিজু এখনও ঘুম থেকে উঠেন নি ? ”

” আরে সাথী , উঠবে কেমন করে ? সারারাত হাম তুম এক কামরে মে বন্ধ হে। বুঝিস না নাকি ? ”

তাসনিম এর কথা শুনে শিবায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। আমি ওদের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। সব কটা অসভ্য হয়ে গেছে। উফফ কি জ্বালা।

রান্নাঘরে গিয়ে দেখি মা সকালের নাস্তা রেডি করেছেন। আমিও গিয়ে একটু হেল্প করে ডাইনিংয়ে রেডী করলাম সব। সব রেডী শেষে মা উনাকে ডেকে আনার জন্যে বললেন।

আমার রুমে এস দেখি উনি উপর হয়ে শুয়ে আছেন। আমি উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। চুলগুলো একটু এলোমেলো হয়ে আছে উনার। হাত বাড়িয়ে চুলটা ঠিক করতে গেলাম তখনই উনার দেওয়া সকল অপমানের কথা মনে পড়ে গেলো। আমি চোখ মুখ শক্ত করে উনাকে জোড়ে ডাক দিলাম।
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

হাত বাড়িয়ে চুলটা ঠিক করতে গেলাম তখনই উনার দেওয়া সকল অপমানের কথা মনে পড়ে গেলো। আমি চোখ মুখ শক্ত করে উনার কানের কাছে গিয়ে জোড়ে শব্দ করে ডাক দিলাম।

” উঠুন । নাস্তা রেডি। ”

আমার ডাক শুনে উনি ঝটপট নিজের চোখ খুলেন। আমি চুপচাপ উনার সামনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। উনি কিছুটা সময় নেন চারপাশ টা বুঝতে। যখন পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারেন তখন আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকান। আমি উনার চাহনি তোয়াক্কা না করে বলি,

” ঢং না করে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন। খাবার রেডি। ”

উনি দাতে দাত চেপে বলেন,

” আমি ঢং করি ? ”

আমি কিছু না বলে মুখ ভেংচি দিলাম। হটাৎ উনি আমার হাত ধরে হেচকা টান দেন। এতে আমি ব্যালান্স হারিয়ে উনার বুকের উপর গিয়ে পরি। হটাৎ এসব হওয়ায় আমি চমকে চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই। উনি গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” কি যেনো বলেছিলে , আমি ঢং করি ? হুমম। ”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছি। ভয়ে বুকটা পুরো ধরফর ধরফর করছে আমার। সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে একপলক তাকিয়ে বলেন,

” উঠো। ”

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বলি,

” মানে ? ”

উনি ধমকের সুরে বলেন,

” আমার উপর থেকে উঠতে বলছি , ইডিয়ট । ”

আমি লজ্জা পেয়ে তারাতারি উনার উপর থেকে উঠে দাড়াই। আমি কি যেচে উনার উপর পড়েছি নাকি ?উনি নিজেইতো আমাকে টান দিয়েছেন। এখন ভাব দেখানো হচ্ছে । যত্তসব। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” আমার কাপড় বের করো । আমি সাওয়ার নিবো এখন । ”

আমি অবাক হয়ে বলি,

” এই শীতের সকালে সাওয়ার নিবেন আপনি ? ”

উনি চোখ ছোটো ছোট করে বলেন,

” তো ? ”

” না কিছু না । ”

আমি কথাটা বলেই আলমারির উপর থেকে লাগেজ বের করে উনার একটা টিশার্ট আর জিন্স বের করে বিছানার উপর রাখলাম। উনি একটা টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমি লাগেজ টা আলমারির উপ্র রেখে বিছানাটা সুন্দর করে গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। বাইরে বের হতেই দেখি বিচ্ছু কাজিন গুলা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই সবগুলা দাত কেলিয়ে আমার দিকে তাকায়। আমি খানিকটা সন্দেহের দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলি,

” আমার রুমের দরজার সামনে তোরা কি করছিলি ? ”

আনিকা দাত কেলিয়ে বলে উঠে,

” আমরা ? আমারতো গোয়েন্দাগিরি করছিলাম । তাইনা রিয়াপু ? ”

আমি চোখ ছোটো ছোটো করে বলি,

” আমার রুমে কিসের গোয়েন্দাগিরি তোদের ? ”

তাসনিম বলে,

” না মানে দেখছিলাম তুমি আর ভাইয়া রুমের ভিতর কি এমন ফুসুর ফুসুর করছিলে । ”

” আরে তাসি ফুসুর ফুসুর কি বলেছিস ? বল রোমান্স। দুষ্ট মিষ্টি রোমান্স। তাইনা ইপসি আপুনি ? ”

আনিকার কথা শুনে আমার ওদের মাথাটা জাস্ট ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। এতটা বদ হয়েছে একেকটা। বড় বোন বলতে কোনো সম্মান করছেই না আমাকে। আমি চোখ পাকিয়ে বলি,

” তোদের মুখ থেকে আর একটা বদ কথা বের হলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। একেকটা দিনতো দিন একেবারে বদ হচ্ছিস। ”

আমার কথা শুনে সবগুলা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। আমি ওদের দিকে চোখ পাকিয়ে চলে যেতে নিলে আনিকা জোড়ে বলে উঠে,

” আপু ভাইয়ার উপর শুয়ে কি করছিলে ? ”

আনিকা এত জোড়ে কথাটা বলেছে আমার কাছে মনে হয়েছে হয়তো বাবা মা পর্যন্ত কথাটা জেনে গেছেন। আমি জলদি গিয়ে ওর মুখ টা চেপে ধরে রাগী গলায় বলি,

” আরেকবার আরেকটা বদ কথা বললে তোকে জাস্ট খুন করে ফেলবো আমি। বুঝলি ? ”

আনিকা আমার রাগী রূপ দেখে ভয় পেয়ে মাথা নাড়ায়। আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোয়। মা নিশ্চই ওয়েট করছেন খাবার নিয়ে। আমি মায়ের কাছে গিয়ে বলি,

” উনি সাওয়ার নিয়ে আসবেন বলছেন । ”

মা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলেন। বাবা উনাকে ডাকছেন সেই কখন থেকে। আমি ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসি। আর বাকি কাজিনগুলা সুরসুর করে এসে টেবিলে বসে পড়ে। বাবা রেডী হয়ে খাবার টেবিলে আসেন। কিন্তু উনি এখনো আসছেন না। মেয়েদের মত সাওয়ারে এতসময় লাগে উনার। একটু পর উনি এসে আমার পাশে বসেন। আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকাই। সাওয়ার নেওয়ার পর সিগ্ধ লাগছে অনেক। যায় হোক বদটার আর কোনো গুন না থাকলেও চেহারার দিকে থেকে মাশাল্লাহ বলা যায়। কাজিনরা চুপচাপ বসে খাবার খাচ্ছে। বুঝলাম সেই সময়টার ডোজ ভালোই কাজে দিয়েছে । আমি উনার প্লেট টা নিয়ে তাতে পরোটা আর মুরগির গোস্ত দিয়ে উনার দিকে প্লেট টা এগিয়ে দেয়। বাবা মার সামনে এসব না করলে ওদের মনে নানা প্রশ্ন জাগতে পারে। আর আমি এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত নই। মা উনাকে রীতিমতো ঠেলেঠুলে খাবার খাওয়াচ্ছে।। উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি এতে প্রচন্ড বিরক্ত। কিন্তু তাতে আমার কি ? শ্বশুরবাড়ি আসলে সবারই এরকম খেতে হয়। আমি চুপচাপ খাওয়া শেষ করে সেখান থেকে চলে আসলাম। এখন ছাদে গেলে মন্দ হবে না। সকাল সকাল আবহাওয়া টাও অনেক ভালো আছে। তাই আর দেরি না করে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে রেলিংয়ের ভর দিয়ে চোখ বুজে অনুভব করছি এই ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া।

হটাৎ পিছন থেকে কাজিনদের শোরগোল ভেসে আসলো। আমি চোখটা খুলে পিছন ফিরে তাকালাম। ওদের সাথে সৌরভ ভাইয়াও আছেন। উনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে উনাকে রীতিমতো জোড় করে এখানে আনা হয়েছে। আনিকা উনাকে সাথে নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ায়। গদগদ গলায় বলে,

” আপুনি , চলো আড্ডা দেই । বড় আপু [ আমার বড় বোন ] তো রাতে আসবেন। ওরা আসলে নাহয় আরেকবার জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। চলো চলো। ”

বলেই একহাত দিতে আমার হাতটা ধরে অন্যহাত দিয়ে সৌরভ ভাইয়াকে ধরে একটা মাদুরের উপর বসায় আনিকা। আমাদের বসিয়ে আনিকা আরো মাদুর আনতে যায়। ও চলে যাওয়ার পর উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বলেন,

” এইসব ইরিটেটিং মেয়েগুলা কোথা থেকে উদয় হলো ? আগে তো কখনো তোমাদের বাসায় দেখেনি। ”

আমি বলি,

” ওরাতো ছিলই । আপনি মনে হয় খেয়াল করেন নি। এরা হলো আমাদের বংশের সবচেয়ে ফাজিল মেয়ে। ”

সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সামনে থাকান। বলেন,

” হুমম তাতো দেখতেই পাচ্ছি কিরকম ফাজিল। ”

আমি আর কিছু বললাম না। ওরা সবাই মিলে ছাদে মাদুর পেতে আরামসে বসে পড়লো। কিন্তু তাসনিম কই ? ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি তাসনিম একটা গিটার নিয়ে আসছে। আমি ভাবছি হয়তো গানের কলি খেলা হবে। কিন্তু উনি কি খেলবেন এসব খেলা। মনে তো হয় না। তাসনিম গিটার টা সৌরভ ভাইয়ার সামনে এনে রাখে। মাদুরের বসে উচ্ছল গলায় বলে,

” ভাইয়া , একটা গান হয়ে যাক। কি বলেন ? ”

সৌরভ ভাইয়া চোখ উচুঁ করে বলেন,

” অসম্ভব। আমি ভালো গাইতে পারিনা। ”

” ভাইয়া , এইখানে গানের জন্যে কোনো অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে না। তাই ভালো না গাইলেও চলবে। নাও শুরু করেন। ”

আনিকার কথা শুনে সৌরভ ভাইয়া না পেরে গিটার টা হাতে তুলে নেন। গিটারে গানের সুর তুলে আমার দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠেন,

.. ক্রমশ এই গল্পে আরো পাতা জুড়ে নিচ্ছি..
…দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুড়ে দিচ্ছি..
..আরো কিছুক্ষন যোগাযোগ ধরে রাখছি..
..আঙ্গুলে আঙ্গুল যেনো ভুল করে ডাকছি..
.. এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আকছি..

এটুকু গেয়েই উনি থামলেন। আর আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে গিটারটা বাজাতে লাগলেন। আমি উনার এই চাহনি সহ্য করতে পারছি না।কিরকম যেনো লাগছে আমার। একরকম অসস্তি অনুভতি ছুয়ে দিচ্ছে আমার মনে। আমি আর পারলাম না উনার থেকে চোখটা নামিয়ে ফেললাম।উনি আবার গেয়ে উঠলেন,

..তোমায় ছুবে বলে..আদর করবে বলে..
.. উড়ে উড়ে আসে এলোমেলো কিছু গান..
..ডেকে যায় তোমার আঁচল ধরে..
..তুমি ছুলে জল..আমি বৃত্ত হয়ে থাকছি..
..দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুড়ে দিচ্ছি..

এভাবেই উনি পুরোটা গান আমার চোখে চোখ রেখে গাইলেন। আমি কেনো যেনো উনার দিকে তাকাতে পারছি না। উনি গান থামালে সবাই একসঙ্গে বলে উঠে,

” ওহ জিও ভাইয়া। আসলেই খুব ভালো হয়েছে গানটা। ”

সৌরভ ভাইয়া ওদের কথা শুনে হালকা হাসলেন। রিয়া বলে উঠে,

” ওই একটা জিনিস দেখেছিস , ভাইয়া কিন্তু পুরোটা গান আপুনির দিকে তাকিয়ে গেয়েছেন । ”

সৌরভ ভাইয়া ওদের কথা শুনে অনেক অস্বস্তিতে পড়েছেন তা উনার মুখটা দেখেই বুঝতে পারছি। আমি তাই শক্ত কণ্ঠে বলি,

” সকালে কি ডোজ টা কম হয়েছিল রিয়া ? ”

আমার কথা শুনে সবাই চুপ করে গেল। সৌরভ ভাইয়া বলেন,

” আমার ফোন আসবে । আমি নিচে যাচ্ছি। তোমরা এনজয় করো। ”

বলেই উনি ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদ থেকে চলে যান। আমি বুঝলাম ওদের হাত থেকে রেহাই পেতেই উনি ফোনের দোহায় দিয়েছেন । বুদ্ধি আছে ভালোই। আমিও ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নিচে চলে এলাম।

চলবে..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here