শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ৭+৮

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

চা টা টি টেবিলের উপর রেখে আমি উনাকে আলতো কণ্ঠে ডাক দেই। সৌরভ ভাইয়া আমার ডাক শুনে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে আবার অপরপাশে ফিরে ঘুমিয়ে যান। আমিও হাল ছাড়িনি। জানালার সামনে গিয়ে পর্দাটা মেলে দেই আর সকালের আবছা রোদ এসে উনার চোখে মুখে বাড়ি খায়। এতে উনি বিরক্ত হয়ে উনার হাত টা চোখের সামনে ধরেন। ধুরর বাবা । উনি তো উঠার নামই নিচ্ছে না। আমি যখন ছিলাম না তখন কিভাবে উঠতেন এই কুম্ভকর্ণ কে জানে। আমি গিয়ে উনার কানের সামনে হালকা জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলি,

” এই যে উঠুন , অফিস আছে না আপনার ? দেরি হয় যাবে তো ? ”

উনি আমার ডাক শুনে চোখ মুখ কচলে শুয়া থেকে উঠে বসলেন। কিন্তু চোখে মুখে এখনও বিরক্তির আভা স্পষ্ট। আমি খানিকটা মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলি,

” আপনি ঘুম থেকে উঠছিলেন না দেখে এইভাবে ডাক দিয়েছি। [ আস্তে আওয়াজে ] সরি। ”

উনি আমার দিকে বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু না বলে উঠে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান। তারপর সোজা ওয়াশরুমে চলে যান।

আমি ভাবী ” “যাক বাবা। আজ একটুও বকলো না। গজগজ ও করলো না এই নিকৃষ্ট ম্যান টা। ”

উনি ওয়াশরুমে যাওয়ার পর বিছানার উপর উনার শার্ট , ওয়াচ , টাই আর বাদবাকি জিনিসগুলা রেখে দিলাম। টি টেবিলের উপর রাখা চায়ের কাপটার দিকে তাকালাম আমি। চা টা নিশ্চই এতক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গেছে। উনার ঘুম থেকে উঠতেই তো যত লেট হলো। তাই আমি চায়ের কাপটা নিয়ে রান্নাঘরে গেলাম। চটজ লদি ওভেনে কাপটা দিয়ে গরম করে নিয়ে আবার রুমের দিকে এগুলাম। রুমে ঢুকে দেখি উনি শার্ট পড়ছেন।কিন্তু আমি যে শার্ট দিয়েছিলাম সেইটা না পড়ে অন্যটা পড়েছেন। আমি কিছুটা কষ্ট পেলেও কিছু না বলে আমি মাথা নিচু করে ধীরে পায়ে উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। চায়ের কাপটা উনার ডাক এগিয়ে দিয়ে বললাম,

” আপনার চা। ”

উনি আমার কথা শুনে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন। চায়ের কাপটা না নিয়েই বিছানার দিকে এগিয়ে আমার দেওয়া টাই টা একনজর দেখে আলমারি থেকে আরেকটা টাই নিয়ে বাঁধতে থাকেন। আমি উনার রেই ব্যাবহার আর নিতে পারছিনা। উনি ঠিকভাবে বলছেনও না আমার কি দোষ। কেনো উনি আমাকে এতটা ঘৃনা করেন। কি করেছি আমি ? আমি এসব ভাবনা কে প্রশ্রয় না দিয়ে চায়ের কাপটা উনা এদিকে আবার এগিয়ে দিয়ে বলি,

” আপনি কি চা খাবেন না। প্রত্যেকদিন তো ঠিকই খান । আজ কি হয়েছে ? ”

উনি টাই টা বাঁধতে বাঁধতে স্পষ্ট গলায় বললেন,

” কারণ এট তোমার বানানো। ”

উনা একথা শুনে আমার চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি বের হয়ে গেলো। এই চোখজোড়া না বড্ড বেহায়া। সবসময় বিশ্রী , অপছন্দনীয় লোকের কারণে জল গড়াতে থাকে।

আমি কিছু না বলে বেরিয়ে যেতে চাইলে উনি আমাকে শক্ত গলায় ডাক দেন। আমি ফিরে তাকালে উনি বলেন,,

” আর কোনদিন আমার উপর কোনো অধিকার খাটাবে না। যেহেতু আমি তোমার উপর কখনো অধিকার খাটাই নি। তাই তুমিও খাটাবে না। আর সকালে ঘুম থেকে উঠানো , নিজ হাতে চা বানানো , আর ফাইনালি এসব, এই বিছানার উপর রেডী করা কাপড় । এইসব নেকামি এখন থেকে আর করবে না। কারণ আমি এসব পছন্দ করিনা। বুঝেছ ? মাথায় ঢুকিয়ে নাও কথাটা। ”

আমি উনার এসব তিক্ত কথা শুনে অনেক বেশিই কষ্ট পেলাম। মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না আমার। তবুও অনেক কষ্ট করে বলি

” ক.কেনো কর.করছেন এসব ? আ.আমার দোষটা কোথায় একটু বলবেন ? ”

উনি আমার কথার উত্তরে কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আর আমি নিজের চোখের জলগুলো মুছে নিয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে নিচে চলে গেলাম। রান্নাঘরের বেসিনে চায়ের কাপটা রেখে সকালের নাস্তা রেডী করতে লাগলাম। এরইমধ্যে আন্টি এসে তারাতারি চুলায় চা বসিয়ে আমার দিকে ফিরে বললেন,

” তুমি কি সৌরভ কে চা দেও নি ? পাগল হয়ে যাচ্ছে চার জন্যে। ওর নাকি দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রুটি গুলা চুলায় বসিয়ে দিলাম। আন্টিও তরিগরী করে চা বানিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে ছুটলেন। হটাত আন্টি আমাকে ড্রয়িং রুমে থেকে ডাক দিলেন। আমি মাথায় আঁচলটা দিয়ে ড্রয়িং রুমে এলে দেখি সবাই সোফায় বসে আছে মুখ গুলা ভার করে। আমি মাথা নিচু করে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার দাদী শাশুড়ি সৌরভ ভাইয়াকে বললেন,

” আজ মেয়ের বাসায় যেতে হবে সৌরভ । আর তুমি এখন অফিসে যাবে। কেনো ? জানোনা তোমায় নিজে যেতে হবে তোমার বউয়ের সাথে। ”

সৌরভ ভাইয়া চাতে চুমুক দিয়ে শান্ত গলায় বললেন,

” হুম যাবো তো । কিন্তু অফিস শেষে। ঈপ্সিতা চাইলে একা একা ড্রাইভারের সাথে চলে যেতে পারে। ”

আঙ্কেল উনার কথা শুনে বিরক্ত গলায় বলেন,

” বিয়ের পর প্রথম বার বউ ড্রাইভারের সাথে বাপের বাড়ি যাবে এটা কেমন কথা সৌরভ ? আক্কেল বুদ্ধি কি লোপ পাচ্ছে তোমার ? ”

সৌরভ ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,

” তাহলে আমি অফিস থেকে ফেরার পর নাহয় যাবে। কিন্তু আমার অফিসে আজ যাওয়া মাস্ট দরকার। অনকে কাজ জমা হয়ে আছে। ”

আমি শুধু শুনছি ওদের কথা। অফিসে কি এমন দরকারী কাজ আছে যেটা ওনার আজই করতে হবে। আঙ্কেল এসব নিয়ে সৌরভ ভাইয়াকে কিছু বলতে চাইলে আন্টি আঙ্কেলকে ইশারায় শান্ত হতে বলেন। সৌরভ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আন্টি বলেন,

” তোমার অফিস কয়টায় শেষ ? ”

” ৩ টায় । দেরীও হতে পারে। ঠিক নেই। ”

” তাহলে এক কাজ করো আজ তারাতারি কাজ টা শেষ করে ২ তার দিকে বাসায় এসে তারপর নাহয় ঈপ্সিতা কে নিয়ে বাপের বারি যাবে । ঠিক আছে ? ”

সৌরভ ভাইয়া সোফা থেকে উঠে দাড়ালেন। পিঠের ব্যাগ টা ঠিক করে বললেন,

” দেখা যাক। ”

বলেই চলে গেলেন উনি। আর আমি ভাবছি উনার আমাকে দেওয়ার মত এই টুকুও টাইম নেই। এতটা ব্যস্ত উনি ? আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“ঈপ্সিতা , ব্যাগ রেডী করে নাও। বিকালে তো তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে । ”

আমি উনার কথা শুনে আমার রুমে এসে জলদি ব্যাগ প্যাকিং করতে লাগলাম। খুব খুশি লাগছে । বাড়িতে যাবো বলে। আব্বুর রাগ ভাঙ্গানো যাবে ওখানে গেলে। মনে হচ্ছে কতদিন ওদের সাথে দেখা হয়না। উনার জামা কাপড়ও একটা লাগেজে করে নিয়ে নিলাম। আর ফোন করে বাসায় জানিয়ে দিলাম যে আমরা আসছি।

দুপুরের খাবারের জন্যে ডাইনিং টেবিলে বসে আছি। আজ আঙ্কেল আর উনি নেই খাবার টেবিলে। দুজনই কাজে গিয়েছেন। আর সুরভী ফ্রেন্ডের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে।

তাই আমি , আন্টি , দাদী আর শেলি [ আমাদের বাসায় কাজ করে ] খাবার টেবিলে বসে আছি। আমি সবাইকে খাবার সার্ভ করে এখন নিজে একটা প্লেটে ভাত আর শুটকি ভর্তা নিয়ে বসে পড়েছি। এতদিন গোস্ত খেতে খেতে একদম বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে। আর মুখের মজা কে ফিরিয়ে আনতেই এই শুটকি ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছি। আন্টি অবশ্য বলেছিলেন মাছ বা গোস্ত নেওয়ার জন্যে আমি ইচ্ছে করেই নেইনি। খাবারের মাঝখানে হটাৎ আমার দাদী শাশুড়ি বললেন,

” এই যে বউ , তোমার না আজ পায়েস বানানোর কথা ছিল। কই বানাইলা নাতো ? ”

আমি উনার কথা শুনে দাত দিয়ে জিবটা কাটলাম। আজ উনার সাথে এতকিছু। হয়েছে তাই এসব আর মনেই ছিল না। আমি আমতা আমতা করে বলি,

” আ..আসলে ম.মনে ……”

” মনে ছিল না তাইতো ? ”

দাদী কড়া গলায় বললেন। আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। আন্টি আমার ডাক একবার তাকিয়ে আবার দাদীর দিকে তাকান । বিনম্র গলায় বলেন,

” আম্মা , মনে ছিল না তো কি হয়েছে ? ওখান থেকে ফিরে এসে নাহয় বানিয়ে দিবে। ”

দাদী খাবার চিবুতে চিবুতে বলেন,

” হম। তাই যেনো হয়। আর একটা কথা আমি বুঝতে পারছিনা এই মেয়েটার মনে কেনো থাকল না ? কি এমন কাজ ছিল, যে মনে থাকবে না। ”

আমি কিছু না বলে ভাত টা নড়াচড়া করতে লাগলাম। কি বলবো উনাকে ? উনার ওই গুণধর নাতির জন্যেই তো সব হয়েছে। উনার যত দোষ এখন আমার ঘাড়ে চেপেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে আমি , আন্টি আর শেলি মিলে সব পরিষ্কার করে যার যার রুমে চলে এসেছি।

আমি রুম এসে ঘড়ির দিকে তাকালাম। প্রায় ৩ টা বাজে। কিন্তু এখনও উনি আসছেন না। বাসায় কখন যাবো কে জানে ? আমি তাই না পারতে উনাকে ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন বাজার সাথে সাথে উনি ফোন কেটে দিলেন। আমি আরেকবার ট্রাই করলে উনি আবার ফোন কেটে দেন। রাগে দুঃখে আমার কান্না পাচ্ছে। এতদিন পর বাসায় যাবো আর উনি আজ এত দেরি করছেন। আর আমার ফোনও ধরছেন না। কি শুরু করেছেন উনি। আমাকে কি ভালো না বাসলেও একটু কি ভালো রাখা যায় না। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে উনার ফোনের অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু প্রায় ৪ টা বেজে গেলো উনি এখনই আসার নামে নেই। আমি তাই না পারতে আন্টির রুমে গেলাম। আন্টি বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমাকে দেখে আন্টি উঠে বসলেন। আমি ধীর পেয়ে উনার কাছে গিয়ে বিষন্ন গলায় বলি,

“আন্টি ৪ টা বেজে গেছে। উনি এখনই আসেন নি। কখন যাবি আমরা। ”

আন্টি আমার কথা শুনে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

” জানিনা সৌরভ এর কি হয়েছে। আজ এতক্ষণ ধরে দিন দিচ্ছি। রিসিভ করছেই না। ওর মনে কি চলছে আল্লায় ভালো জানেন। একটি অপেক্ষা করো আমি আবার ফোন দিচ্ছি ওকে। ”

বলেই আন্টি বালিশের কাছ থেকে ফোন নিয়ে উনাকে ফোন দিলেন। আর আমি উৎসুক দৃষ্টিতে আন্টির দিকে তাকিয়ে আছি কি বলেন উনি ফোন ধরে তা জানার জন্যে।
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আন্টি ফোনটা হাতে নিয়ে সৌরভ ভাইয়াকে কল দিলেন। রিং হচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আন্টি ফোনটা কেটে দিয়ে আরেকবার কল দিলেন। অনেকবার রিং হওয়ার পর সৌরভ ভাইয়া ফোন রিসিভ করেন। রিসিভ করার সাথে সাথে আন্টি রাগী গলায় বলেন,

” কিরে কই তুই ? আজ মেয়েটার বাবার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। ৪ টা বেজে গেছে এখনও আসার নাম নিচ্ছিস না। হয়েছেটা কি তোর ? ”

আন্টি ফোনটা লাউস্পিকারে দিলে আমি শুনতে পাই সৌরভ ভাইয়া বলছেন

” মা , আমার আজ দেরি হবে। ঈপ্সিতা কে ড্রাইভারের সাথে চলে যেতে বলো । রাখছি। ”

আন্টি উনার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বলেন,

” এই একদম ফোন রাখবি না। তোর আক্কেল বুদ্ধি দিনদিন এতটা লোপ কেনো পাচ্ছে ? হে ? এক্ষণি বাসায় আয় তুই। ঈপ্সিতা তোর সাথে যাবে মনে তোর সাথেই যাবে। আমি বলছি এক্ষণি বাসায় আয়। ”

” মা সবসময় এরকম কেনো করো। ওকে চলে যেতে বলো। আমি রাতের দিকে ওদের বাসায় যাবো। I promise। বাট মা এখন না। প্লিজ বুঝার ট্রাই করো । অফিসে অনেক কাজ আছে। শেষ না করলে পড়ে বিরাট প্রবলেম হবে। ”

আন্টি আর কি বলবেন উনি এমনভাবে কথা বলছেন আন্টি আর মানা করতে পারেন নি। আন্টি ফোনটা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে অনুরোধের গলায় বলেন,

” ঈপ্সিতা আজ তুমি ড্রাইভারের সাথে চলে যাও। সৌরভ তো বলছেই ও রাতে যাবে তোমাদের বাসায়। ওর সাথে নাহয় কাল ফিরো। ঠিক আছে ? ”

আমি বিষন্ন মনে উনার কথায় সম্মতি দিলাম। কিন্তু আমি জানি উনি এসব ইচ্ছে করে করেছেন। আমার থেকে দূরে দূরে তাহলে এটা একটা ফন্দি তাছাড়া আর কিছুই নয়। আমি কি বোকা ? উনার কাছে ভালো ব্যাবহার আশা করাটাই আমার ভুল হয়েছে। উনি তো কখনোই শুধরবার মানুষ নন। আমি আর কিছু না বলে আন্টির রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসলাম। এই নিকৃষ্ট লোকটার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই। অনেক হয়েছে আর না। আর কত সহ্য করবো আমি উনার এই বদ ব্যাবহার গুলা। আমি তারাতারি করে রেডী হয়ে আন্টির রুমে গিয়ে বললাম,

” আন্টি আমি চলে যাচ্ছি। ”

আন্টি আমাকে ইশারায় নিজের কাছে ডাকলেন। আমি গিয়ে উনার পাশে বসলে আন্টি বলেন,

” ঈপ্সিতা , রাগ করো না । এই ছেলেটা এরকমই। প্লিজ কিছু মনে করো না। আমি আসলে বুঝতে পারছি না সৌরভ তোমার সাথে এমন কেনো করছে ? কি হয়েছে ওর ? যায় হোক সাবধানে যাবে আর গিয়ে ফোন করবে । ঠিক আছে ? ”

আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়ে দাদীর রুমে আসলাম। দাদী পান এর প্লেট থেকে পান একটা রেডী করে মুখে পুরে আমার দিকে তাকালেন। আমি গিয়ে উনার সামনে দাড়িয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বলি

” দাদী আমি বাবার বাসায় যাচ্ছি। ”

দাদী আমার দিকে কঠোর নজরে তাকিয়ে বলেন,

” তা একাই ? সৌরভ কই ? ”

আমি কাঠ কাঠ গলায় বলি,

” উনি কাজে আছেন। বলছেন রাতে আসবেন। তাই আমি একাই চলে যাচ্ছি ড্রাইভারের সাথে। ”

দাদী চোখ মুখ কুচকে বলেন,

” আচ্ছা যাও। গিয়ে পারলে এই বুড়ি টারে একটা ফোন দিও। নাম্বার জানো , না বলে দিতে হবে ? ”

আমি উনার কথা শুনে মুচকি হেসে বলি,

” জিনা দাদী। জানি আপনার নাম্বার। তাই বলে দিতে হবে না। এখন আমি আসি ? ”

” হে যাও। আল্লাহর হাওলা। ”

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।

বাড়িতে যাওয়ার পর কলিং বেল বাজালাম। ময়না দিদি এসে দরজা খুলেই আমাকে দেখে খুশির চোটে জড়িয়ে ধরলো। এই মেয়েটা সবসময় আমি বলতে পাগল। আমার কখন কি লাগবে সব দেখাশুনা করে যেনো ওর ফরজ কাজ। আমিও হালকা হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।ময়না দিদি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ঘরের ভিতর নিয়ে গেলো। মা রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আমার সামনে এসে এক ফালি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরেন। অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে তারপরও আমাকে ছেড়ে সোফায় নিয়ে বসান। গদগদ গলায় বলেন,

” কেমন আছিস ? সেদিন বিয়ে হয়েছে আর আমার কাছে লাগছে যেনো কত দিন হয়ে গেছ তোকে দেখিনা। ”

আমি মার কথা শুনে হালাক হাসলাম। তারপর কিছু একটা মনে করে বিষন্ন গলায় বলি,

” মা সেদিন আমি …আসলে বিয়েটা…”

মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে শক্ত গলায় বলেন,

” এসব বিয়ে বিষয়ক ব্যাপারটা আমি ভুলতে চাইছি। তাই আমাকে ভুলতে দাও। এসব নিয়ে যাতে আর কোনো কথা হয় না এ বাড়িতে। বুঝেছ ? ”

আমি মার কথা শুনে কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। মা একটা নিশ্বাস ফেলে বলেন,

” ৪:৩০ বাজে । খেয়ে এসেছিস ? ”

” হুমম। ”

” তাহলে নামায টা পড়ে নে আসরের। আমি রান্নার দিকটা দেখছি। ”

মা উঠে চলে যেতে নিলে কি মনে করে আবার পিছন ফিরে আমার দিকে তাকান। বলেন,

” সৌরভ কই ? ও আসেনি ? ”

আমি কি বলবো মাকে। এখন উল্টা পাল্টা কিছু বললে মা নির্ঘাত সন্দেহ করবে আমাকে। তাই হালকা হেসে বলি,

” উনার কাজ আছে। রাতে আসবেন বলেছেন। ”

মা অবাক হয়ে বললেন,

” মানে কি ? তুই একা এসেছিস ? ”

আমি তাড়াতাড়ি করে বলি,

” না , না । উনি দিয়ে গেছেন আমাকে। আসলে উনার কাজের চাপ আছে। তাই আর ভিতরে ঢুকেন নি। ”

” ও আচ্ছা। আচ্ছা , তুই তাহলে নামাজটা পড়ে নে। আমি আসছি। জলদি কর। পরে ওয়াক্ত থাকবে না। ”

মা কথাটা বলেই রান্নঘরে চলে যান। আমি সোফা থেকে উঠে নিজের রুমে এসে নামাজটা আদায় করে নিলাম। বেডে শুয়ে শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখছি। মাগরিবের সময়ে নামাজটা পরেই বিছানায় পরে লম্বা এক ঘুম দিয়েছি।

রাত ৮ টা বাজে। আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। এতক্ষণে উনি নিশ্চই এসে গেছেন। আমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ঠোঁটে ভেসলিন দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলাম। সারা ড্রয়িং রুমে চিখ বুলিয়ে উনাকে কোথাও দেখতে পেলাম না। বাবা সচরাচর রাতে বাসায় আসেন। বাবা মূলত একজন উকিল। তাই কেস টেস সামলাতে রাত হয়ে যায়। উনাকে খুঁজে না পেয়ে আমি মার রুমে আসলাম। মা শুয়ে আছেন। আর ময়না দিদি উনার মাথায় ভিক্স মালিশ করছেন। আমি ধীর পায়ে মার কাছে বসে বললাম,

” মা উনি আসেন নি ? ”

মার চোখ বুজে ছিলেন। আমার কথা শুনে চোখ খুলে বলেন,

” তুইই ত বললি ওর কাজ আছে । তাই লেট হবে । ”

আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফেললাম। উনার এতো কি কাজ যে এখনও আসার নাম নিচ্ছেন না। আজ অন্তত আমার সাথে এরকম ব্যাবহার না করলেও পারতেন। অমর এখন খুব কান্না পাচ্ছে। যতই আমি উনাকে ঘৃনা করি দিনশেষে আমাকে উনার সাথেই থাকতে হবে। তাই বলে একটুও কি আমার কথা চিন্তা করা যায় না কে আমারও মন আছে। কষ্ট আছে। আমি চোখের জলগুলো মুছে নিতে বলি,

” না আমি আর উনার জন্যে কষ্ট পাবো না। উনি আমার সাথে অনেক অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছেন। তাও আমি সব ভুলে গিয়ে একজন স্বাভাবিক স্ত্রীর মত আচরণ করেছি। কিন্তু যেহেতু উনি চান না আমাদের মধ্যে সব স্বাভাবিক হোক তাহলে আমিও আর এগুবো না। থাকুক উনি উনার মত। ”

কথাগুলো বলেই আমি বারান্দায় চলে গেলাম। বারান্দায় গ্রিলের সাথে ঝুলানো গাছগুলোকে নাড়তে লাগলাম। ময়না দিদি মনে হয়ে গেছে রেগুলার পানি দেন। তাই এখনও গাছগুলো সতেজ আছে। আর কয়েকটা ফুল ফুটেছে গাছে। ইচ্ছে করছে একটা ফুল ছিড়ে কানের পিঠে গুজে দিয়ে। কিন্তু নেহাৎ গাছটার থেকে একটা ফুল কমে যাবে দেখে আর ছিরি নি। হটাত কলিং বেল বাজার শব্দ হলো। বাবা এসেছেন নিশ্চই। আমি খুশিতে জলদি করে রুম থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলার সাথে সাথে আমার মুখ টা রাগে রক্তিম হয়ে উঠল। সৌরভ ভাইয়া এসেছেন। আমি কিছু না বলে সাইড হয়ে উনাকে ভিতরে ঢুকার জায়গা করে দিলাম। উনি আমার দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ আমাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে সোফায় বসলেন। উফফ কি ভাব !! আমি দরজা টা বন্ধ করে মার রুমে গেলাম। মা আমার ডান্স বাংলা ড্যান্স দেখেছেন। আমি গিয়ে সোজা টিভি টা অফ করে দিলাম। মা আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,

“টিভি অফ করলি কেনো ? অন কর বলছি । ”

আমি উনার সামনে গিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলি,

“উনি এসেছেন । ”

মা আমার কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে বলেন,

” সৌরভ ? ”

” হুমম। ”

মা তারাতারি বিছানা থেকে উঠে শাড়িটা ঠিক করে ড্রয়িং রুমের দিকে ছুটলেন। আর আমি কিছু না বলে আমার রুমে এসে বিছানায় বসে রইলাম। আমি আর উনার মুখ টা পর্যন্ত দেখতে চাইনা। অসহ্য লোক একটা।

ঈপ্সিতা মা মরিয়ম সৌরভ কে ডেকে গদগদ গলায় বলেন,

” কেমন আছো সৌরভ ? ”

সৌরভ এর এই মহিলাকে জাস্ট অসহ্য লাগে। উনার জন্যেই আজ এতকিছু হয়েছে। উনার এজন্যেই আমাদের পরিবারে এত অশান্তি। তবুও ভদ্রতার খাতিরে সৌরভ মুচকি হেসে বলে,

” জি আন্টি ভালো। ”

মরিয়ম সৌরভের কথার উত্তরে কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কাউকে ভালো আছো জিজ্ঞেস করলে উত্তরে আপনি ভালো আছেন কিনা জিজ্ঞেস করতে হয়। কিন্তু সৌরভ করে নি। যায় হোক মনে হয় নার্ভাস আছে। তাই মরিয়ম আর ব্যাপারটা বেশি ঘাটে নি। সৌরভ কে বসতে বলে ঝটপট রান্নাঘরের দিকে ছুটেন উনি। রাত হয়ে গেছে। তবুও হালকা নাস্তা তো দিতেই হবে। জামাই বলে কথা। শুধু ভাত খাওয়াবো জিনিসটা কেমন দেখায়। তাই মরিয়ম নাস্তা বানাতে লাগলেন।

চলবে….

[ আগেই বলে দেই এখন থেকে শুক্রবার গল্প দিবো না। তাই কেউ ওয়েট করবেন না।

হ্যাপী রিডিং ]
চলবে…

[ কাল চা বানানোর বিষয়টা একটু গোলমেলে হয়ে গিয়েছিল। আমি অনেক তাড়াহুড়ো কে লিখেছিলাম তাই হয়তো। তার জন্যে সরি।

হ্যাপী রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here