শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ৬+৭

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

রান্নাঘরের জানালার দিকে তাকিয়ে আছি আর নিজের এই অনিশ্চিত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছি। আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছিনা উনি কিসের জন্যে আমাকে এতটা ঘৃনা করেন ? কি করেছি আমি ? না পারছি এর প্রতিবাদ করতে। কারণ আমরা মেয়েরা ছোটোবেলা থেকে এই শিক্ষা নিয়ে বড় হই যে শ্বশুরবাড়ি তে যেইভাবেই হোক মানিয়ে চলার। বুক ফেটে যাবে কিন্তু মুখ খোলা কোনোভাবেই চলবে না। কারণ বিয়ের সময় মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে লাল শাড়ি পরে আর বের হয় সাদা শাড়ি গায়ে। আর মাঝখানে পথটা সেই বাড়ির মাটি আকড়ে পড়ে থাকতে হবে।
কাদতে কাদতে আমার চোখের জল পড়া তো সেই কখন বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন যা আছে সব শুধুই ধোয়াশা।

” ঈপ্সিতা , তুমি এই অবেলায় রান্নাঘরে কি করছো ? আজ কোনো রান্না হবে নাতো। কালকের তরকারিতেই হয়ে যাবে। আর রাতে তো রিসিপশনে খেয়ে আসবো। ”

আন্টির কথাটা বলেই হাতে রাখা চায়ের কাপটা বেসিনে রাখলেন। আমি উনার গলা শুনে তারাতারি নিজেকে সামলে ঘুরে তাকালাম। তারাতারি করে চুলার আগুন টা জ্বালিয়ে বলি,

” আসলে কালকের তরকারি গুলো গরম করতে এসেছি। নাহলে যে নষ্ট হয়ে যাবে। ”

বলেই সামনে থাকা রুই মাছের হাড়ি টা চুলোয় বসিয়ে দিলাম। আন্টি মনে হয় আমার কথা বিশ্বাস করেননি। তাই আমার দিকে এগিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকান। ভ্রুযুগল হালকা কুঞ্চিত করে বললেন,

” ঈপ্সিতা , এখন শীতকাল। তাই তরকারি নষ্ট বা গন্ধ ধরে না। ”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।

” কান্না কেনো করেছিলে ? ”

আমি আন্টির কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখের জলগুলো মুছে নিয়ে ব্যাস্ত কণ্ঠে বলি,

” কই আন্টি ? আমার চোখের সমস্যা আছে। তাই মাঝেমধ্যে পানি পড়ে এভাবে। ”

আন্টি এক নিশ্বাস ফেলে বলেন,

” সৌরভ এর সাথে সমস্যা হয়েছে ? ”

আমি উনার কথা শুনে তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে না বললাম। আন্টি আমার হাত টা নিজের হাতে নিয়ে বিষন্ন গলায় বলেন,

” দেখো ঈপ্সিতা ,আমি জানি সৌরভের সাথে তোমার বিয়েটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমি একটা কথাই বলবো মানিয়ে নেও। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এর বেশি আর কিছু বলার নেই আমার। ”

বলেই আন্টি আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে চুলার আগুনটা নিভাতে নিভাতে বললেন,

” রান্নাঘরের কাজ অনেক হয়েছে। এখন সৌরভের কাছে যাও। হয়তো ওর কোনো কিছু দরকার হতে পারে। ”

বলেই আন্টি চলে গেলেন। আর আমি সেইখানে বসে ভাবছি এখন যদি আমি উনার সামনে যায় তাহলে উনি নির্ঘাত আমার উপর চিল্লাপাল্লা করবেন। তাই আমি আর রান্নাঘর থেকে বের হয়নি।

হটাৎ ড্রয়িং রুম থেকে হট্টগোল শুনা গেলো। আমি তারাতারি করে মাথায় আঁচলটা দিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে এগুলাম। গিয়ে দেখি সৌরভ ভাইয়া আর আঙ্কেল কথা বলছেন। সৌরভ ভাইয়া ফরমাল ড্রেসাপে দাড়িয়ে আছেন। আর আঙ্কেল উনাকে কিছু একটা বুঝাচ্ছেন। আঙ্কেল রাগী গলায় বললেন,

” আজ রাতে তোমাদের রিসিপশন , আর তুমি এখন অফিসে যাচ্ছো ? কেনো বলো ? ”

সৌরভ ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলেন,

” আমি তোমার সাথে আসলে কথাই বলতে চাচ্ছিনা। তাও বলছি বিয়ে হয়েছে মানে ত এই না যে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো। চাকরি না করলে খাওয়া দাওয়া কোথা থেকে আসবে ? আর এমনিতে আমার একদিন অফিস না করলে ভালো লাগে না। ”

আঙ্কেল সৌরভ ভাইয়ার কথা শুনে বিষন্ন মনে বললেন,

” সৌরভ , তুমি সেই কলেজ লাইফ থেকে আমার থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকো। কি হয়েছে তোমার আমাকে বলো ? না বললে সমস্যা তো কমবে না উল্টা বাড়বে। আমাকে বলো আমার সাথে তোমার কি সমস্যা। ”

সৌরভ ভাইয়া নম্র গলায় বলেন,

” অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু এত কিছুর পরও যে আমি তোমার সাথে ভালোভাবে কথা বলছি এটাই অনেক। ”

আঙ্কেল সৌরভ ভাইয়ার কথা শুনে রেগে গিয়ে উনার উপর হাত তুলতে গেলে আন্টি উনাকে আটকে ফেলেন। আর আমি ভয় পেয়ে দু হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরে আছি। আন্টি আঙ্কেলকে কিছুটা শাসনের স্বরে বলেন,

” এত বড় ছেলের গায়ে হাত তুলবে তুমি ? আমি দেখছি তুমি একটু শান্ত হও। ”

আঙ্কেল কিছু না বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সোফায় বসলেন। সৌরভ ভাইয়া এক নজর আংকেলের দিকে তাকিয়ে আবার কিছু মনে করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন। আন্টি সৌরভ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলেন,

” সৌরভ এসব কি ধরনের ব্যাবহার ? বাবার সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে। দিন তো দিন বেয়াদব কেনো হচ্ছো তুমি ? ”

সৌরভ ভাইয়া আন্টিকে যথেষ্ঠ শ্রদ্ধা করেন। তাই তিনি আন্টির কথার উত্তরে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছেন। আন্টি এক নিশ্বাস ফেলে বলেন,

” তোমার অফিস আছে , তাইতো ? তো যাও । গিয়ে টাকা রোজগার করো। আর একটা কথা মনে রেখো এই মেয়েটাকে আর এই পরিবার কে তুমি যে হারে কষ্ট দিচ্ছ তাতে তুমি একদিন ঠিকই পস্তাবে। মনে রেখো কথাটা। ”

আন্টি কথাটা বলেই সৌরভ ভাইয়ার থেকে মুখ ঘুরিয়ে আংকেলের কাছে এসে বসলেন। সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে করুন নজরে তাকিয়ে আবার নিজের চোখ মুখ শক্ত করে নিয়ে বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। আঙ্কেল আহত গলায় বলেন,

” কি করেছি আমি ? সৌরভ কে তো আমি ছোটোবেলা থেকেই অনেক ভালবাসতাম। কিন্তু ও কি করে আমার থেকে এতোটা দূরে চলে গেলো ? কি করে ? ”

আন্টি আঙ্কেল কে আশ্বস্ত করে বলেন,

” দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করোনা। ”

সুরভী আমার পাশে দাড়িয়ে ছিলো। এসব শুনে আমার কানে কানে বলে,

” ভাইয়া আনরোমান্টিক জানি , তাই বলে এতটা ? বিয়ের পরেরদিন কি কেউ অফিসে যায় বলো তাও এত কিউট একটা বউ রেখে। ”

বলেই আমাকে চোখ টিপ দেয় ও। আর আমি সুরভীর কথা শুনে কিছু না বলে আমার রুমে চলে আসলাম। আমার সবকিছু অসহ্য লাগছে। এই লোকটা কতোটা খারাপ । নিজের বাবার সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে ? আমার সাথে নাহয় বলে তাই বলে আংকেলের সাথেও ? কি চলছে উনার মনে ?

***********

রাতে পার্লারের লোক এসে আমাকে সাজিয়ে রেখে গেছে। এরইমধ্যে পুরো বাড়ি মানুষের গিজগিজ করছে। আর আমি আমার রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছি। আর আমার চারপাশ ঘিরে মেয়েরা বসে আছে। হটাৎ ইরা ভাবী বলে উঠেন,

” তো ঈপ্সিতা , এত সুন্দর করে যে তোমাকে সাজালাম। তোমার পতি দেব তো সোজা হার্টফেল করবে। ”

বলেই অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লেন ভাবী। আর আমি একঝাঁক অস্বস্তিতে মাথা নিচু করে আছি। সুরভী বলে উঠে,

” এক কাজ করা যায় ভাবী ,ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসি এই ঘরে। বেচারা সেই কখন থেকে নিচে বসে আছে। এইখানে ডেকে এনে ভাবীকে দেখে ভাইয়ার রিয়াকশন টা কি হয় দেখা যাবে। ”

সবাই এই কথায় তাল মিলিয়ে সম্মতি জানায়। কিন্তু আমি জানি আমাকে দেখে কখনোই ওদের ভাইয়ার মুখ কোনো রিয়াকশন দেখা যাবে না। কখনোই না। একেক করে সবাই রুম থেকে চলে গেলো। যাওয়ার আগে ইরা ভাবী আমাকে কানে কানে বলে গেলেন,

” আসছে তোমাকে পতি দেব। দেখো আবার রোমান্সের জোয়ারে ভেসে না যাও। নদী কিন্তু খুব গভীর। ”

উনার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। কি বেশরম রে বাবা। রোমাঞ্চ আর উনি। অসম্ভব। ইরা ভাবী আমাকে চোখ টিপ দিয়ে দরজা টা বাইরে দিয়ে লাগিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।

ওরা চলে যাওয়ার পর আমি বিছনায় থেকে উঠে দাড়ালাম। এতক্ষণ বসে থাকতে থাকতে পা টা পুরো মেজমেজ করছে। জানালার কাছে দাড়িয়ে আছি। আর ক্ষণে ক্ষণে ঠান্ডা বাতাসে কেপে কেপে উঠছি। হটাৎ দরজা খুলার শব্দে আমি পিছন ফিরে তাকাই। সৌরভ ভাইয়া রুমে ঢুকতেই পিছন থেকে কেউ দরজাটা আটকে দেয়। আর উনি রাগে কয়েকবার সুরভী বলে ডাক দেন। ওপাশ থেকে সুরভী বলে,

” আমার আনরোমান্টিক ভাই , সুযোগ দিয়েছি কাজে লাগা। এরকম সুযোগ বারবার পাবি না। ”

বলেই দরজার সামনে থেকে সবাই চলে যায়। সৌরভ ভাইয়া বিরক্তিতে পিছন ফিরে তাকান। আর আমি চুপচাপ গিয়ে বিছানায় মুখ ভার করে বসে পড়ি। আজ থেকে উনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। যে মানুষটা আমাকে এতটা ঘৃনা করতে পারে তার সাথে আমার কিসের এত কথা থাকতে পারে। উহু একদমই না। হটাৎ সৌরভ ভাইয়া হটাৎ খুব জোড়েই বলে উঠেন,

” মাশা আল্লাহ। ”

আমি খানিকটা অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাই। উনি আমার দিকে কিরকম ভাবে যেনো তাকিয়ে আছেন। উনার এই চাহনির সাথে আমি একদমই পরিচিত নই। আমি উনার এই চাহনি উপেক্ষা করে দ্বিধান্বিত গলায় বলি,

” আপনি কি দেখে মাশা আল্লাহ বললেন ? ”

উনি আমার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলেন। জলদি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন। তারপর মুখটাকে সিরিয়াস বানানোর চেষ্টা করে বললেন

” কাকে আবার ? এই ঘরকে। কেনো তুমি কি ভেবেছিলে ? ”

আমি উনার কথা শুনে ঘরের দিকে একবার চোখ বুলালাম। ঘর টাতো আগের মতই আছে। কোনো এক্সট্রা সাজানো কিছু নেই। শুধু রুমের চারিদিকে ওয়ালপেপার লাগানো। এর চেয়ে বেশি কিছু নেই। এসব ভেবেই আমি উনার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাই। চোখ গুলা ছোটো ছোটো করে বলি,

” কিন্তু ভাইয়া , রুমে তো সাজানো কোনো কিছু নেই । তাই এখানে আপনি মুগ্ধ হলেন কি করে ? ”

সৌরভ ভাইয়া আমার পাশে বসে আমার চোখে চোখ রেখে বলেন,

” শুধু কি সাজলেই মানুষ মুগ্ধ হয়। মুগ্ধ হওয়ার কোনো প্রকার নেই। আর না এর কোনো শুরু আছে। মানুষ তো সমসময় তার প্রিয় জিনিসের উপর বারবার মুগ্ধ হয়। হোক না সেই জিনিসটা এলোমেলো , অগোছালো। মুগ্ধ হয় তার একেকটা বৈশিষ্ট্যে । কারণ সেই জিনিসটা তৈরীই হয় তার কাছের মানুষটাকে মুগ্ধ করতে। একবার নয় বারবার। ”

আমি উনার কথা শুনে অনেক বেশিই অবাক হলাম। একটা রুমের উপর মানুষ কি করে এতটা মুগ্ধ হয় আমি তা ভেবে পাচ্ছিনা। কি আছে এই রুমে যেটা আমার নজরে ধরা দিচ্ছে না। আমি অত্যন্ত কৌতহল নিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করি,

” একটা রুমের এত ক্ষমতা যে আপনার মত পাষাণ হৃদয়কে এতটা মুগ্ধ করে ফেলেছে। ”

সৌরভ ভাইয়া আমর কথা শুনে বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলেন। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছনায় থেকে উঠে দাড়ালেন। কাউকে ফোন দিয়ে দরজা খুলতে বলে ফোনটা কেটে দিয়ে আমার ডাক তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলেন,

” এসব মুগ্ধতার বিষয় তুমি বুঝবে না। যেদিন কারো উপর সত্যিকার অর্থে মুগ্ধ হবে সেইদিন বুঝবে। ”

বলেই গটগট করে রুম থেকে চলে গেলেন উনি। আর আমি সেখানটায় বসে বসে ভাবছি উনার কথার মানে টা কি ? কি বলতে চাইলেন উনি? কার উপর উনি সত্যিকার অর্থে মুগ্ধ ?
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

রাত প্রায় ৭ টার দিকে আমরা রিসিপশনের জন্যে বাসা থেকে বের হলাম। আমাকে আর সৌরভ ভাইয়াকে আলাদা গাড়িতে দেওয়া হয়েছে। আর বাকি লোকজন আরো কিছু গাড়িতে করে হলে যাবেন। আমাদের গাড়ি সবার আগে ছিল। গাড়িতে উঠার কিছুক্ষণ পর হটাৎ সৌরভ ভাইয়া আমাকে খুবই নরম স্বরে বলেন,

” ঈপ্সিতা , একটু এদিকে তাকাও। ”

আমি জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। উনার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকাই। আসলে উনার এই নরম গলা আমার হজম হচ্ছে না। সবসময় তো রাগে গজগজ করে কথা বলে। আজ এত দরদ কিভাবে উতলিয়ে পড়ছে কে জানে ? উনি আমার চোখে খুব গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে হটাৎ আমার চোখ থেকে নিজের আঙ্গুল দিয়ে কিছুটা কাজল নিয়ে নেন। তারপর কাজল টা আমার কানের নিচে লাগিয়ে ঝটপট অন্যদিকে ফিরে যান। আর আমি উনার এই ব্যাবহার দেখে থমকে বসে আছি। একটু আগে উনি যেই কাজটা করলেন তার মানে তো ….. কিন্তু উনি কেনো আমাকে নজর ফোঁটা লাগাবেন। উফফ উনার এই চরিত্রে এত রহস্য কেনো ? আমি কেনো উনাকে এখনও বুঝতেই পারিনা। হটাৎ সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে ফিরে শক্ত গলায় বলেন,

” এত ভেবে কাজ নেই। কানের নিচে লাল রাস দেখা যাচ্ছিল তাই কালো কাজল দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। নাথিং এলস। তাই বেশি বুঝা বন্ধ করো । ”

বলেই ফোনটা বের করে ফেসবুক স্ক্রল করতে লাগলেন। আমি উনার কথা শুনে হালকা অবাক হলাম। কানের নিচে রেস , কিভাবে ? আর জায়গা পেল না রেস হওয়ার। আমি তাই কানে হাত দিতে গেলে সৌরভ ভাইয়া ঝটপট আমার হাতটা ধরে ফেলেন। রাগী গলায় বলেন,

” একদম মুছবে না। এত কৌতহল ভালো না বুঝলে ? যেখানে কৌতুহল দেখানোর দরকার সেখানে তো দেখাও না যত্তসব আজগুবি কাজেই তোমার যত কৌতহল। রিডিকিউলাস । ”

বলেই আমার হাত টা ছেড়ে দিয়ে আবার ফোন নিয়ে মশগুল হয়ে পড়েন উনি। আর আমি এক লম্বা শ্বাস ফেলে জানালার দিকে ফিরে তাকাই। সারাদিন এই লোকটা শুধু আমার সাথে চিল্লাপাল্লা করে। যত্তসব।

🖤🖤🖤

হলের গেটের সামনে যাওয়ার পর গাড়ি থেকে নেমে দাড়াই আমরা। আর সৌরভ ভাইয়া আমার হাত টা শক্ত করে ধরে সামনে এগুতে থাকেন। আমি একটু অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালে পরক্ষণে আবার স্বাভাবিক হয়ে উনার হাত ধরে সামনে পা বারাই। জানি উনি কাউকে দেখাতে চান না যে আমাদের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক নয়। আমরা এগুলে সাইডে থেকে আমাদের উপর ফুল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। তারপর কিছু মেয়ে আর ছেলে এসে আমাদের স্টেজে নিয়ে গিয়ে বসায়। আমি আর সৌরভ ভাইয়া পাশাপাশি বসে আছি কিন্তু সৌরভ ভাইয়া একবারও আমার দিকে তাকান নি। মুখ গোমড়া করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। আচ্ছা উনি সামনে কি এত দেখছেন। এই মেয়েগুলা কে নাকি ? হয়তো এই জন্যেই আমাকে উনা চোখে পড়ছে না। এসব ভেবেই আমি এক তপ্ত নিশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে রইলাম। হটাৎ সৌরভ ভাইয়া আমার কোমরে আস্তে করে চিমটি দিলে আমি চমকে উনার দিকে তাকাই। উনি সামনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার ভান করে বলেন,

” কি হয়েছে ? মুখ এরকম পেঁচার মত করে রেখেছো কেনো ? দেখো এইখানে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে। তাই মুখ ঠিক করো । ”

আমি উনার দিকে বিষন্ন চোখে তাকিয়ে কিছু না বলে আবার মাথা নিচু করে রইলাম। ভালো লাগছে না উনার সাথে কথা বলতে। ঘরে বউ রেখে আরেক মেয়েদের দিকে নজর দেয়। কি বেশরম ! হটাত সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে একটু ঝুঁকলে আমি ভয় পেয়ে উনার দিকে তাকাই। উনি নম্র গলায় বলেন,

” কি হয়েছে তোমার ? এরকম করছ কেনো ? ”

আমি একটু হাসার ভান করে বলি,

” কিছু না । আপনি সামনে তাকিয়ে যা দেখছিলেন তাই দেখুন। ”

বলেই আবার মাথা নিচু করে ফেলি। সৌরভ ভাইয়া আমার কথা শুনে অবাক চোখে আমার দিকে তাকান। তারপর আবার সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা মনে করে তার মুখ এক নিশব্দ হাসি ফুটে উঠে। আমার দিকে ঘাড়টা হালকা ঘুরিয়ে তাকিয়ে সিরিয়াস গলায় বলেন,

” ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েদের দিকে তাকানো , এই শিক্ষাটা আমি আমার ফ্যামিলী থেকে পাইনি। তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করো , ইডিয়ট । ”

আমি মাথা নিচু করে ছিলাম। উনার কথা শুনে হাজারো কষ্টের মাঝখানেও হেসে দেই আমি। আমার হাসি দেখে উনি তারাতারি নিজের নজর আমার থেকে সরিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকান। কিন্তু কেনো আমি জানিনা ?

খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর মানুষজন সবাই চলে যান । আর আমরাও গাড়ি করে বাসায় চলে আসি। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। বাসায় গিয়ে যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। আর আমি নিজের রুমে এসে লেহেঙ্গা খুলে একটা ত্রি পিস পড়ে নেই। আর গহনা গুলা যত্নে আলমারিতে রেখে দেই। বিছানায় পড়তেই রাজ্যের ঘুম আমার চোখে এসে হানা দেয়।

সৌরভ ওয়াশরুম থেকে এসে ঈপ্সিতা কে এরকম এলোমেলো হয়ে ঘুমাতে দেখে বিরক্ত হয়। বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে ব্লেনকেট টা ইপশিতার উপর টেনে দিয়ে নিজে অন্য ব্লেনকেট নিয়ে শুয়ে পড়ে।

🖤🖤🖤🖤🖤

সকালে আমি আজ আগে আগে ঘুম থেকে উঠে গেছি। যেহেতু এই বাড়ির বউ আমি তাই এখন থেকেই আমার দায়িত্ব গুলা ঠিকঠাক বুঝে নিতে হবে। তাই ফ্রেশ হয়ে সোজা রান্নাঘরে আসলাম। এক কাপ চা চুলায় বসিয়ে , দুই কাপ চা বানিয়ে আঙ্কেল , আন্টির ঘরে নিয়ে এলাম। আন্টি আমাকে এত সকাল দেখে অবাক হয়েছেন। আমিও বলেছি যে এখন থেকে এসব কাজ আমি করবো। চুলায় বসানো চাটা তারাতারি বানিয়ে সৌরভ ভাইয়ার রুমের দিকে এগুলাম। হিটলার টাকে এখন না ডাকলে উনার আর অফিসে যাওয়া হবে না। তাই রুমে ঢুকে চায়ের কাপটা টি টেবিলের উপর রেখে আলতো কণ্ঠে উনাকে ডাক দেই আমি।

চলবে …
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here