শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ১৩+১৪

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

পুতুলটা ফেলে দিয়ে আমি বারান্দা থেকে রুমে এস পড়লাম। অনেক ভয় লাগছে আমার। কেনো যে ভূতের মুভিটা দেখতে গেলাম কে জানে ? আসরের আজান হওয়ায় নামাজটা পড়ে নিলাম। উনিও মসজিদ থেকে নামাজ পরে আসলেন।উনার একটা জিনিষ তো ভালই যে অন্তত নামাজটা পড়ে। যদি এর ওসিলায় আল্লাহ উনার মাথায় সুবুদ্ধি দেন। আমি নামাজ পরে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে ছিলাম। উনি মসজিদ থেকে এসে সোজা বারান্দায় এসে বললেন,

” ব্যাগ প্যাক করো। এখন চলে যাবো আমরা। ”

আমি উনার কথা শুনে অনেক অবাক হয়ে উনার দিকে ফিরে তাকালাম। কাল যাওয়ার কথা তো আজ কেনো ? কিছু কি হয়েছে উনার ? আমি তাই বলি,

” কেউ কি কিছু বলেছে আপনাকে ? ”

উনি আমার কথা শুনে রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন। এতে আমি ভরকে গেলাম। উনি দাতে দাত চেপে বললেন,

” আমি কি এখনও ছোটো যে আমাকে কেউ বকবে আর তার জন্যে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো ইডিয়ট ? ”

আমি কাচুমাচু গলায় বললাম,

” তাহলে ? চলে যেতে বলছেন কেনো ? কাল তো যাওয়ার কথা ছিল তাহলে আজ কেনো ? ”

” বড্ড বেশী কথা বলো তুমি। যেটা বলছি সেটা করো । আমার কাল অফিসে যেতে হবে। দিনের পর দিন তো আর শ্বশুরবাড়িতে থাকতে পারবো না গাধা। ”

” তো কি হলো ? আপনার বাবার ফ্রেন্ডের বাড়ি বলে তো থাকতেই পারেন তাইনা ? ”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলেন,

” তুমি কি ব্যাগ প্যাক করবে না আমি একাই চলে যাবো ? অবশ্য তুমি না গেলেও আমার খুব একটা আসবে যাবে না। সো সিদ্ধান্ত তোমার। ”

বলেই উনি রুমে চলে গেলেন। আমি আর কি সিদ্ধান্ত নিবো উনার সাথে না গেলে পরে আন্টি খারাপ মনে করবেন । তাই আমিও বারান্দা থেকে রুমে এসে লাগেজ বের করে সকল কাপড় আর বাকি জিনিস ব্যাগে ভরে নিলাম। ব্যাগ প্যাক করা শেষে মার রুমে গেলাম। মা বিছানায় বসে টিভি দেখছেন। আমি গিয়ে উনার পাশে বসে ক্ষীণ আওয়াজে বলি,

” আমরা চলে যাচ্ছি। ”

মা আমার কথা টিভির থেকে মনোযোগ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক গলায় বললেন,

” কিন্তু কেনো ? তোদের না কাল যাওয়ার কথা ছিল তাহলে ? ”

” উনার অফিসে কাজ আছে। তাই আজই যেত হবে। ”

” তাহলে তুই থেকে যা। সৌরভ না হয় আজ চলে যাক। ”

আমি মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বলে উঠি,

” না না। আন্টি খারাপ মনে করবেন। বাদ দাও। অন্য একদিন এসে অনেক বেশি দিন থেকে যাবো। ঠিক আছে। ”

মা আমার কথা শুনে মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন,

” অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেছিস তুই। ”

আমি মার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। মা আর কিছু বললেন না। তাই আমিও রুমে গিয়ে রেডী হয়ে নিলাম। উনি আগে থেকেই রেডী ছিলেন। আমাকে রেডী হওয়া দেখে উনি লাগেজ টা ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। কাজিনরা আসার সময় সবগুলা মুখ ফুলিয়ে ছিল। ওদের মতে আমার কাল যাওয়া উচিত ছিল। আপুর আসলে ওরা একসাথে আরো মজা করতে পারতো। কিন্তু আমার হাতে তো কিছু করার নেই। আসার সময় মার মুখটা অনেক বিষন্ন হয়ে ছিল। মা আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আচল দিয়ে নিজের চোখ টা মুছে নিলেন।

বাসায় আসার পর সবার সাথে দেখে করে রুমে চলে এলাম। মাগরিবের আজান হওয়ায় নামাজটা পড়ে নিলাম। রুমে কেউ নেই এখন। আর উনি মসজিদে। আমার অনেক ভয় লাগার কারণে আমি কোনমতে নামাজটা পরেই রান্নাঘরের দিক ছুটলাম। আসলেই আজকের মুভির রেশ টা অনেকদিন পর্যন্ত যাবে মনে হয়। আর এদিকে আমার অবস্থা পুরো বেহাল। কেনো যে মুভিটা দেখতে গেছিলাম কে জানে ? রান্নাঘরে গিয়ে সবার জন্যে চা বানিয়ে যার যার রুম দিয়ে আসলাম। আর আমি সুরভীর রুমে এসে ওর সাথে চা খাচ্ছি। আর ও ওর স্কুলের যত কথা আছে সব একেরপর এক বলে যাচ্ছে। আর আমি একজন বিজ্ঞ শ্রোতার মত করে সব শুনছি। একসময় সুরভী বলে উঠে,

” আচ্ছা ভাবী , তোমার আর ভাইয়ার তো লাভ ম্যারেজ। তো আমাকে তোমাদের লাভ স্টোরি টা বলো না। প্লিজ প্লিজ । ”

আমি ওর কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। এখন কিভাবে বানিয়ে বানিয়ে কোন লাভ স্টোরি বলবো আমি ? উফফ কি মসিবত। আমি বলে উঠি,

” আরে তেমন কিছু না। আমরা দুজন দুজন কে পছন্দ করতাম। কিন্তু কখনো বলা হয়নি। আপুর বিয়ের এক সপ্তাহ আগে উনি প্রপোজ করছেন। এই আরকি। ”

সুরভীর হয়তো আমার উত্তর টা পছন্দ হয়নি। ও অতি হতাশ ভঙ্গিতে বলে,

” ব্যাস এইটুকু। নো রোমাঞ্চ ? ”

আমি ওর কথা শুনে বিষম খেলাম। এইটুকু মেয়ে বলে কি। ভাইয়ের রোমান্স জানতে চাচ্ছে। তাই আমি ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে বলি,

” না। এইটুকুই। আর ভাইয়ের রোমান্স জানতে হয় না জানোনা ? ”

সুরভী আমার কথা শুনে আর কিছু বললো না। আর আমিও চা টা শেষ করে ওর রুমেই বসে একটা বই হাতে নিয়ে তা পড়তে লাগলাম। আর সুরভী আমার পাশে বসে স্কুলের পড়া পড়তে লাগলো।

বেশ কিছু সময় পর বাসায় বেল বাজলো । সৌরভ ভাইয়া এসেছেন বোধ হয়। আমি শাড়িটা ঠিক করে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। উনি আমাকে দেখে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। উফফ কি ভাব। আমি রান্নাঘরে গিয়ে উনার জন্যে এককাপ চা বানিয়ে রুমে নিয়ে এলাম।কিন্তু উনি রুমে নেই। মনে হয় ওয়াশরুমে। আমি চা টা টি টেবিলে রেখে ঘর গুছাতে লাগলাম। হটাৎ রুমের লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। আর আমি চমকে উঠলাম। বিকালের ভূতের মুভির কথা বারবার মনে হতে লাগলো। আর আমি ঘামতে লাগলাম। কোনোমতে নিজেকে সামলে ওয়াশরুমে কাছে গিয়ে দরজায় বারবার ধাক্কাতে লাগলাম। আর জোরে জোড়ে উনাকে ডাকতে লাগলাম। আমি রীতিমতো এখন কান্না করছি। আমাদের লাইটের সুইচ ওয়াশরুমে কাছে দেওয়া। আমি বারবার সবগুলা সুইচ দিচ্ছি কিন্তু একটা সুইচ অন হচ্ছে না। আর এতে আমি আরো ভয় পেয়ে দরজায় আরো জোড়ে ধাক্কাতে থাকি। উনি আমার ডাক শুনে একসময় ওয়াশরুমে দরজা খুললেন। আর আমি এখনও একটা ঘোরের মধ্যে আছি। উনাকে দেখে আমি ঝাপটে উনাকে জড়িয়ে ধরি। উনি প্রথমে ভরকে যান। উনি চারিদিকে একবার চোখ বুলান। উনি বুঝতে পারেন যে আমি অনেক ভয় পেয়েছি কিন্তু হটাৎ সবজায়গার লাইট ওফ হওয়ার ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারছেন না। আমি উনার বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে কাপা কাপা গলায় বলতে থাকি,

” ও.ওই পুতুল। ও.ওই প.পুতুল এসে গেছে। ”

উনি আমার কথা বুঝতে পারেন নি। তবুও আমাকে শান্ত করতে ধীরে ধীরে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার চুলে হাত বুলাতে থাকেন। একসময় আমাদের রুম থেকে আন্টির আওয়াজ শুনা গেল। কিন্তু ঘর পুরো অন্ধকার থাকার কারণে কিছু বুঝা যাচ্ছে না। আমি উনাকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে চোখ মুখ খিচে দাড়িয়ে আছি। আন্টি একটা টর্চ নিয়ে রুমে আসলে আমি আলো দেখে ভয়টা একটু কমে তাই আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাড়াই। উনি আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন। হয়তো বুঝতে পারছেন না আমার এতটা ভয় পেয়ে যাওয়ার কারণ। আন্টি উনার সামনে গিয়ে বলেন,

” সৌরভ দেখতো ঘরের কার্ড শেষ হয়ে গেছে বোধ হয়। তাই সব সুইচ বন্ধ হয়ে গেছে। ”

সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে আন্টির দিকে তাকান। বলেন,

” আচ্ছা আমি দেখছি। তুমি এই মেয়েটার কাছে একটু দাড়াও। অনেক ভয় পেয়েছে ও। আর তোমার হাতের টর্চ টা দেও আমাকে। ”

আন্টি উনার হাতে টর্চ টা দিলে উনি সেটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান। আর আন্টি আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছেন । আমি চুপচাপ উনার বুকে মুখ লুকিয়ে দাড়িয়ে আছি। বুঝলাম না আমাদের বাসায় কার্ড গেলে এতটা ভয় পাইনা আমি যতটা আজ পেয়েছি। হয়তো সব ওই পুতুলটার জন্যে। তওবা করেছি আর কখনো ভূতের মুভি দেখবো না। আমার মত দূর্বল হার্ট মানুষের জন্যে এসব মুভি নয়। কিছুসময় পর রুমে লাইট জ্বলে উঠলো। এখন আমি একটু স্বস্তি পেলাম। উফফ কি ভয়টা পেয়েছিলাম। এখনও বুকটা ধড়ফড় ধড়ফড় করছে। সৌরভ ভাইয়া রুমে এসে টর্চ টা আন্টির হাতে দিলেন। আন্টি আমাকে বলেন,

” এত ভয় পাওয়ার কি আছে। এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। ”

বলেই উনি রুম থেকে চলে গেলেন। আর আমি বিছানায় বসে মাথা নিচু করে আছি। উনি নিশ্চই এখন অনেক প্রশ্ন করবেন। যেইভাবে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। না জানি কখন কোন রাম ধমক টা দিয়ে বসেন। আমি উনার হাত থেকে বাঁচার জন্যে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম। চায়ের কাপ টা নিয়ে রুম থেকে চলে যেতে নিলে উনি শক্ত গলায় বলেন,

” রুম থেকে এক পা বে করলে পা ভেংগে হাতে ধরিয়ে দিবো ইডিয়ট। ”
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

চায়ের কাপ টা নিয়ে রুম থেকে চলে যেতে নিলে উনি শক্ত গলায় বলেন,

” রুম থেকে এক পা বের করলে পা ভেংগে হাতে ধরিয়ে দিবো ইডিয়ট। ”

আমি উনার কথা শুনে থমকে গেলাম। ভয় ভয় মন নিয়ে উনার দিকে ফিরে তাকালাম। ক্ষীণ আওয়াজে বললাম,

” চা টা গরম করে নিয়ে আসি। ”

উনি চোখ রাঙিয়ে বললেন,

” না। লাগবে না। এখানে আসো। ”

” আগে চা গ..”

উনি ধমকে বলেন,

” আমি বলছি এখানে আসো। কথা বাড়াচ্ছ কেনো ? ”

আমি উনার কথা শুনে ধীর পায়ে উনার পাশে গিয়ে বসি। উনি আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলেন,

” তোমার পুতুলে কি সমস্যা ? বলো ? ”

” কিছু না। এমনেই। ”

হালকা হাসার ভান করে বলি আমি। উনি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

” Don’t lie.. আমি জানি তোমার মধ্যে কিছু একটা চলছে। নাহলে তোমার প্রিয় পুতুল ফেলে দিতে না ।তার উপর আজ পুতুল এসে গেছে বলে কাপতে না। ”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম। আজ আর রক্ষে নেই। উনি এবার রাম ধমক দিয়ে বলেন,

” তুমি কি বলবে ? না দু চারটা থাপ্পর দিবো ? কোনটা ? ”

আমি উনার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বলি ,

” বলছি বলছি। আসলে আমি এনাবেলা মুভি দেখছিলাম। তাই আরকি …”

উনি বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” সামান্য ভূতের মুভি দেখে এই অবস্থা। আরে গাধা ওটা মুভি রিয়েলিটি না। এতটুকু কমনসেন্স নেই তোমার ? ”

আমি কি বলবো । জানি তো ওটা যে ফেক। বাট ভয় তো ভয়ই হয়। উনি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

” আর জীবনেই যাতে তোমাকে হরর ফিল্ম না দেখতে দেখি। আর যদি দেখেছ .. ”

উনি বলার আগেই আমি বলে দেই,

” তাহলে আমাকে আপনার সো কোল্ড থাপ্পর দিবেন। ঠিক আছে ? ”

উনি কিছু না বলে আমার কাছ থেকে উঠে দাড়ালেন। কাউকে ফোন দিতে দিতে বললেন,

” আর যাতে না দেখি। তাহলে তো জানোই কি হবে?”

আমি মাথা নেড়ে চায়ের কাপটা নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।

রান্নাঘর থেকে আরেক কাপ চা বানিয়ে উনার রুমে নিয়ে গেলাম। উনি কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। আমাকে দেখে ফোন রেখে আমার দিকে ফিরে তাকালেন। আমি উনার সামনে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলি,

” আপনার চা। ”

উনি চায়ের কাপটার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” তোমাকে না বলেছি যে আমি তোমার হাতে বানানো চা খাবো না। ”

আমি উনার কথা শুনে ঝাঁকালো গলায় বলি,

” হ্যা হ্যা আমি জানি আপনি বলেছিলেন। কিন্তু আমি আন্টির কাছ এই নিয়ে জবাবদিহিতা করতে পারবো না। বহু কষ্টে বানিয়ে এনেছি। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন। ”

আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকালে আমি ভরকে যাই। খানিকটা মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলি,

” না মানে খেয়ে নিন না। প্লিজ। .”

উনি আমার কথা না শুনে ঝট করে চায়ের কাপটা আমার হাত থেকে নিয়ে সোফায় বসে যান। আমি আর কি বলবো এই অ্যাটিটিউড এর বস্তা কে। বীরবির করে খানিক বকা ঝকা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

রাতের খাবার শেষে আমি সবকিছু পরিষ্কার করে রুমে চলে আসি। উনি এখনো স্টাডি রুমে আছেন। আসলেই ইঞ্জিনিয়ার হলে যে এত পড়া লাগে তা জেনেই আমি এই সাইন্স নিয়ে পরিনি। কিন্তু সমস্যা হয়েছে রুমে আমি একা। বাসর সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আর আমাদের রুম টা একেবারে ঘরের কর্নারে। তাই ভয়টা একটু বেশি লাগছে। আমি আর না পেরে শুয়া থেকে উঠে দাড়াই। স্টাডি রুমে গিয়ে দেখি উনি ফাইল ঘাটছেন। আমি গিয়ে উনার সামনে দিয়ে বলি,

” ঘুমাবেন না ? ”

উনি ফাইল ঘাটতে ঘাটতে বলেন,

” একটু পর। তুমি গিয়ে ঘুমাও। আমার দেরি হবে। ”

আমি তবুও উনার সামনে দাড়িয়ে রইলাম। উনি ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকান। বলেন,

“কি হয়েছে ? ভূত আসর করেছে ? ”

আমি ক্ষীণ আওয়াজে বলি,

” রুমে এসে কাজ করুন না। আমার ভ.ভয় লাগছে।”

উনি আর কিছু বললেন না। হাতে করে ফাইল টা নিয়ে রুমে চলে গেলেন। আর আমি উনার পিছু পিছু রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি। উনি সোফায় বসে কাজ করছেন। আর এরইমধ্যে আমি ঘুমিয়ে গেছি।

সকালে তারাতারি করে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। আজ আবার পায়েস রান্না করতে হবে। দাদীর আদেশ বলে কথা। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে এলাম। আমি আবার সকল ধরনের নাস্তা খুব ভালো বানাতে পারি। তাই ঝটপট করে পায়েস রেধে নিলাম। সেই সাথে পরোটা আর মুগডাল করে নিলাম। বেশ কিছু সময় পর আন্টি ঘুম থেকে উঠে আসেন। আমাকে রান্না করতে দেখে বলেন,

” তুমি এত সকাল রান্নাঘরে কি রাধছো ? ”

আমি পরোটা সেকতে সেকতে বললাম,

” আজ পায়েস রাধার কথা ছিল না ? তাই ওটাই করছি। আর সকালের নাস্তা টা এখন থেকে আমিই বানাবো। আপনি গিয়ে রেস্ট নিন । ”

আন্টি কিছু বলতে চাইলে আমি বলি,

” প্লিজ মা। ”

আন্টি আর কিছু বললেন না। মুচকি হেসে রুমে চলে গেলেন। আমি আর শেলি মিলে ডাইনিং এ খাবার রেডি করে নিলাম। শেলি দাদীকে ডেকে আনতে চলে গেলে আমি উনার রুমে গেলাম। আমার ফোনে এখন যেই টাইম সেই টাইম এর অ্যালার্ম দিয়ে উনার বালিশের কাছে রেখে দিলাম। একটু পর অ্যালার্ম বাঝলে উনি বিরক্তি নিয়ে ঘুমঘুম চোখে তাকান। আমার মোবাইলে অ্যালার্ম বাজতে দেখে বিরক্তি কণ্ঠে বলেন,

” What the… তুমি নিজের ফোন অ্যালার্ম দিয়েছ আমাকে উঠানোর জন্যে ? What rubbish..

আমি খানিকটা গর্ব করে বলি,

” তো আমি কি করবো । আপনি বলছেন আপনাকে যাতে না ডাকি । এতে অধিকারবোধ প্রকাশ পায়। তাই এই পথ নিলাম। ভালো না ? ”

উনি দাত দাত চেপে রাগী গলায় বলেন,

” হুমম। খুব ভালো। একদম তোমাকে মতই রিডিকিউলাস। ”

বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলেন ফ্রেশ হতে। আর আমি বিছানা টা গুছিয়ে রুম থেকে চলে গেলাম। ডাইনিংয়ে গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। আমি গিয়ে সবাই কে খাবার সার্ভ করে নিজেও নাস্তা নিয়ে বসে গেলাম চেয়ারে। দাদী হটাৎ বলে উঠেন,

” তুমি বসে গেলে যে ? সৌরভ কই ?? ”

আমি ক্ষীণ আওয়াজে বলি,

” উনি আসছেন। ”

” তো ও আসার পর খাবার খেতে বসবে না ? তার আগেই যে বসে গেলে ? ”

সুরভী বলে উঠে,

” আহ্ দাদী। এখনও কি এই নিয়ম কেউ মানে ? বলো ? ”

দাদী চোখ মুখ খিচে বলেন,

” এসব নিয়ম কখনো পুরনো হয়না। বুঝেছিস। ”

আমি কিছু না বলে খাওয়া বন্ধ করে মাথা নিচু করে আছি। কিছুসময় পর সৌরভ ভাইয়া এসে চেয়ারে বসলে আমি উনাকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে নিজে আবার খাওয়া শুরু করলাম। সবার খাওয়া শেষ হলে আমি ছোট ছোট বাটিতে পায়েস নিয়ে সবাইকে দিলাম। সবার আগে দাদীকে দিলাম। বুড়িটা শান্তি থাকুক এই পায়েস টা খেয়ে। সৌরভ ভাইয়াকে দিলে উনি সাফসাফ বলেন,

” আমি খাবো না। ”

এই কথা শুনে সবাই উনার দিকে খুবই উদ্ভুত ভাবে তাকায়। আন্টি বলেন,

” কেনো ? তোর না পায়েস খুবই পছন্দ। সবসময় তো আমাকে পাগল করতি পায়েস বানানোর জন্যে। তাহলে আজ কি হলো ? ”

সৌরভ ভাইয়া নির্লিপ্ত গলায় বলেন,

” মা সবার রুচি সবসময় সমান থাকে না। আমার এখন পায়েস ভালো লাগে না। তাই খাবো না। ”

আন্টির যেনো উনার কথা বিশ্বাস হয়নি। তাই কিরকম ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছেন। আঙ্কেল বলেন,

” আজ আর খেয়ো না। কিন্তু মেয়েটা এত কষ্ট করে যখন বানিয়েছে একটু মুখে দাও। ”

” প্লিজ। তোমার খাও। কিন্তু আমাকে জোড় করো না। আমি যাচ্ছি। ”

বলেই উনি চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন। কাধের
ব্যাগ টা ঠিক করে বেড়িয়ে গেলেন। আর আমি এখনও উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি কেনো এই পায়েস মুখে দেন নি তা আমার খুব জানা আছে। আমার হাতের বানানো খাবার কি এত জঘন্য। যায় হোক এটাই তো হওয়ারই ছিল। বিয়ের সময় তো আমি এটাই জানতাম। উনার থেকে ঘৃনা ছাড়া আর কিইবা আশা করা যায়। আন্টি আমার মুখের দিকে বিষন্ন মনে তাকিয়ে বলেন,

” সৌরভের মনে হয় ভালো লাগছে না খেতে। বুঝোইত সবসময় তো আর রুচি সমান থাকে না। তুমি মন খারাপ করো না। ”

আমি উনার কোথায় মলিন হাসলাম। সবার খাওয়া শেষ হলে টেবিল পরিষ্কার করে নিজের রুমে চলে গেলাম। বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছি। এই বাড়ির সামনে বিশাল জায়গা আছে। আর সেখানে নানা ধরনের ফুলের গাছ আছে। ফুলের সুগন্ধে রুমটা মৌ মৌ করছে। হটাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি রুমে গিয়ে বিছানার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করলাম। ফোন কানে লাগিয়ে হেলো বলতেই ওপাশ থেকে কারো চেনা গলা শুনে আমার মন টা বিষন্ন হয় গেলো। এতদিন পর আমার কথা মনে পড়েছে তার। আমি কোনো কথা না বলে চুপ কর থাকলাম। ভীষণ অভিমান হয়েছে আমার।

চলবে..
চলবে…

[ কি লিখেছি জানিনা। অনেক তাড়াহুড়া করে লিখেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।

হ্যাপী রিডিং😊 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here