#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_১৬
#নিশাত_জাহান_নিশি
,
,
তিনজনের শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। মনের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে।
এইদিকে সব মেহমানরা এক এক করে আসতে শুরু করেছে। সবাই এসেই কেবল বর আর বউকে খুঁজছে। যার চাপ এসে পড়ছে নীড়, আয়মন আর হিমেলের উপর। তিনজনই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ওরা ঠিক বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে কি করা উচিত।
হাবীব আবরার আর জামান আহমেদ কিছুক্ষন পর পর ওদেরকে প্যারা দিচ্ছে নূর সহ রেডি হয়ে নিচে আসতে। বাট ওরা ঠিকঠাক উওর দিতে পারছে না। বার বার ব্যাপারটাকে মুদ্যৃ হেসে উড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এইভাবে আর কতো ক্ষন? এক্টু পরেই তো চাঁদনীকে স্টেজে নিয়ে আসা হবে। তখন তো সবাই নূর সহ চাঁদনীকে এক সাথে দেখতে চাইবে।
নীড় ব্যাপারটা আর তিনজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না। তাই সে হাবীব আবরার আর জামান আহমেদকে আলাদা করে ডেকে সত্যিটা বলতে বাধ্য হয়। হাবীব আবরারের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। একে তো সম্মান যাবে দ্বিতীয়ত, চাঁদনীর কি হবে? জামান আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদনীর জন্য খু্ব টেনশান হচ্ছে উনার। মেয়েটা যা পাগলামী খবরটা শোনার পর কেমন রিয়েক্ট করবে সেটা ভেবেই উনি হয়রান।
নীড় চাইছিলো গাড়ি নিয়ে বের হতে। কিন্তু হাবিব আবরার থামিয়ে দিয়েছে। প্রচন্ড রেগে আছে উনি। উনি চায় নূর আজ নিজ থেকে ফিরে আসুক। কেনো বার বার সবাই কুকুরের মতো দৌঁড়ে ওর পিছনে ধাওয়া করবে? আত্নত্যাগ তো তার ও করা উচিত। সবসময় এক তরফা নিজেরটা ভাবলে তো হবে না। মাঝে মাঝে তাকে ও ছাড় দিতে হবে। যেখানে তার পুরো পরিবারের সম্মান জড়িয়ে আছে।
ঐদিকে,,,,,
চাঁদনী সেজেগুজে বেডের উপর পা তুলে গোল হয়ে বসে আছে। দুপাট্টা দিয়ে মুখটা ঢেকে রেখেছে সে। কিছু ক্ষন পর পর এলাকার মহিলারা এসে চাঁদনীকে দেখে যাচ্ছে আর প্রশংসার ফুল ঝুড়ি ছড়িয়ে যাচ্ছে। চাঁদনী তো লজ্জায় কাত হয়ে যাচ্ছে। চাঁদনীর পাশেই বসে আছে সোহানী, জায়মা আর লাবিবা। ওরা তিনজনই চাঁদনীর অবস্থা দেখে হেসে কুটিকুটি। বাচ্চা মেয়ে বউ হলে যা হয় আর কি। স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক ভঙ্গিমা। যেটাকে লজ্জা পাওয়ার ওভার এক্টিং বলা হয়!
জায়মা আর লাবীবা চাঁদনীর কাছ থেকে সরে নিজেরা রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দুজনই আজ মেরুন কালার শাড়ি পড়বে। তাই ওরা নিজেদের মতো রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
এলাকার বড় বড় কয়েক জন বিজনেসম্যান রা দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে। হাত গোনা কয়েকজনকে দাওয়াত করা হয়েছে। সবাই এসেই কেবল নূর আর চাঁদনীকে দেখতে চাইছে। হাতে ফুলের তোড়া আর গিফটস নিয়ে। হাবীব আবরার কিছুটা জোরাজুরি করে ওদেরকে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়েছে। বলেছে খাবার শেষ হলে দুজনকে এক সাথে দেখে নিতে। যদি এর মাঝে নূর এসে যায় সেই আশায়।
চাঁদনী বসে থাকতে থাকতে এবার কিছুটা বিরক্ত বোধ করছে। কপাল কুঁচকে ঠোঁট দুটো উল্টে রেখেছে। এইভাবে সং সেজে বেশি ক্ষন থাকা যায় নাকি? কেমন দম বন্ধ লাগে। তাছাড়া মেকাপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ও চান্স থাকে। গরমে শরীর নেতিয়ে আসে। যার কারণে সাজটা ও কেমন অগোছালো হয়ে যায়। রুমের মধ্যে মানুষের গিজগিজ… গরম তো এমনিতে ও লাগবে।
হাবীব আবরার ব্যাপারটা আর নিজের মধ্যে চেঁপে রাখতে না পেরে সাবরিনা আবরারকে জানায়। কথা টা শোনার সাথে সাথেই সাবরিনা আবরারের চোখে জল ছুঁই ছুঁই করছে। চোখে মুখে অসংখ্য ভয় কাজ করছে। সাবরিনা আবরারের অবস্থা দেখে চাঁদনীর আম্মু আর জায়মার আম্মু কিছুটা হকচকিয়ে গেলো। মানুষের ভিড় ঠেলে সাবরিনা আবরার ড্রইং রুমের এক্টা কোনায় গিয়ে চোখের অবাধ্য জল ছাড়তে শুরু করে। চাঁদনীর আম্মু কারণটা জানতে চাইলেই উনি চাঁদনীর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয়। অনেক রিকুয়েস্টের পর সাবরিনা আবরার মুখ খুলে সত্যিটা বলে দেয়। সত্যিটা শোনার সাথে সাথেই চাঁদনীর আম্মু আর জায়মার আম্মু প্রচন্ড টেনশানে পড়ে যায়।
সবার চোখ, মুখের অবস্থা দেখে গেস্টরা কিছুটা হলে ও আঁচ করতে পেরেছে। কয়েক জন মহিলা মিলে নূরের আম্মুকে কিছুটা ঢঙ্গী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,,,,,
—“অনেকক্ষন তো হলো আপা। বর, কনে কাউকেই দেখছি না। রিসিপশানের মেইন আর্টিকেল ই যদি না থাকে তাহলে রিসিপশান কি করে জমবে? আমরা সেই কখন থেকে ওয়েট করছি বর, কনেকে একসাথে দেখব বলে! বাট কারো সাথেই পাওা নেই!”
সাবরিনা আবরার চোখের জল আড়াল করে জোর পূর্বক হাসি টেনে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“আসলে আপা….. আমার ছেলেটা এক্টু ভার্সিটিতে গেছে। কি ইম্পরটেন্ট কাজ নাকি পড়ে গেছে। তাই আসতে এক্টু লেইট হবে। অনেকক্ষন তো ওয়েট করলেন আর না হয় বিশ, এিশ মিনিট এক্টু কষ্ট করে অপেক্ষা করলেন!”
—“আচ্ছা বুঝলাম…বর না হয় কাজে আটকে পড়েছে। কিন্তু বউ তো ফ্রি আছে। অন্তত আপনার লক্ষী বউটাকে দেখান।”
সাবরিনা আবরার মুচকি হেসে বলল,,,,,
—“এখনি নিয়ে আসছি আমার চাঁদ মা কে। আপনার বসুন প্লিজ।”
কথাগুলো বলেই সাবরিনা আবরার দ্রুত পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে চাঁদনীর রুমে ঢুকে পড়ল। দু এক জন মহিলা রুমে ঢুকে চাঁদনীকে দেখছে। সাবরিনা আবরার মহিলাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“চাঁদ মা….নিচে এসো। তোমাকে সবাই দেখতে চাইছে।”
সাবরিনা আবরার চাঁদনীর থেকে ফিরিয়ে সোহানীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—“সোহা…তুমি চাঁদকে নিয়ে নিচে চলে এসো। জায়মা আর লাবিবা ও আয়।”
চাঁদনী হুট করে সাবরিনা আবরারের হাত ধরে কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,,
—” খালামণি….. নূর ভাইয়া নিচে আছে তো? আজ নূর ভাইয়া কোন রঙ্গের শেরোয়ানী পড়েছে? বিয়ের দিন তো খালি এক্টা শার্ট পড়ে কোনো রকমে বিয়ে করেছে।”
মুহূর্তেই সাবরিনা আবরার চাঁদনীর হাতটা ছেড়ে মলিন হেসে বলল,,,,,
—“নূর এক্টু বাইরে গেছে চাঁদ। এক্টু পরেই ফিরে আসবে। তুই তাড়াতাড়ি নিচে চলে আয়।”
কথা গুলো বলেই সাবরিনা আবরার রুম থেকে প্রস্থান নিলো। চাঁদনী মুখটা কালো করে বসে আছে। আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,
—“আর সময় পেলো না বাইরে যাওয়ার? বেছে বেছে আজকের দিনটাতেই বাইরে যেতে হলো? আমি কি না ভেবে রেখেছি নূর ভাইয়া স্ট্যাজে বসে থাকবে, আর আমি এক এক করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামব নূর ভাইয়া আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে। আমি লজ্জায় কিছুটা মুর্ছা যাবো। যেমনটা ফিল্মে হয়। কিন্তু না, তা আর হবে না। বিষপাতার মতো হেঁটে হেঁটে স্ট্যাজে গিয়ে বসতে হবে। আমার ক্ষেএেই হবে কেবল উল্টোটা। আমি স্ট্যাজে বসে হা করে নূর ভাইয়াকে দেখব আর নূর ভাইয়া সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামবে। হোয়াট এ্যা কচুপোড়া লাক আমার! থুর থুর লাকটা এক্টু টুরু হলে কি হতো? টুরু লাক আমার এই জন্মে হবে না।”
চাঁদনীর বিড়বিড়ানি দেখে সোহানী কৌতুহলী দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—“কি বিড়বিড় করছিস কখন থেকে? এই অভ্যাস তোর জীবনে ও যাবে না। হুদাই বিড়বিড় করবি।”
চাঁদনী মুখটা বেকিয়ে সোহানীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—“তোমার তো জামাই নাই। তাই কিচ্ছু বুঝবা না। জামাই হলে এরপর বুঝবা কেনো বউরা বিড়বিড় করে।”
সোহানী কিছুটা ঢঙ্গী ভাব নিয়ে চাঁদনীর গাল টেনে বলল,,,,,
—“ওলে বাবা লে। কি আমার জামাই ওয়ালা হয়েছে রে! এখনো তো নাক টিপলে দুধ বের হবে, এসেছে আবার জামাই জামাই করতে। যওোসব ঢং।”
চাঁদনী কিছুটা রেগে বলল,,,,,
—“এই সোহা চুপ কর। ঢং তো তুই করছিস। নীল শাড়ি পড়ে এসেছিস নীড় ভাইয়াকে ইমপ্রেস করতে। আমি মনে হয় বুঝি না।”
সোহানী কিছুটা থতমত খেয়ে কথা ঘুরানোর জন্য চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“চুপ কর অসভ্য মেয়ে। কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি নিচে চল।”
কথাটা বলেই সোহানী চাঁদনীকে খাট থেকে নামিয়ে সামনে হাঁটা ধরল। পিছু পিছু জায়মা আর লাবীবা ও আছে। চাঁদনী সিঁড়ি বেয়ে নামছে আর ঘোমটার নিচ থেকে পুরো বাড়িটাকে চোখ বুলিয়ে দেখছে। ফুলের ঘ্রাণে ম ম করছে বাড়িটা। চাঁদনী চোখ বন্ধ করে নাক টেনে ফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে।
বাড়ি ভর্তি মানুষ চাঁদনীর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ঘোমটার নিচ থেকেই চাঁদনীকে দেখতে এতোটা শুভ্র লাগছে। হয়তো ঘোমটা খুললে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। সোহানী চাঁদনীকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। পাশেরর সোফা টা শূন্য হয়ে আছে। পাশে চোখ ফেরাতেই চাঁদনীর মনটা কেমন বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেছে। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেমন। অজানা ভয়ে চাঁদনীর বুকটা কেঁপে উঠল। বার বার মনে হচ্ছে নূর হয়তো আসবে না। নূর তার দেওয়া কথা রাখবে না।
চাঁদনী নিজেকে শান্তনা দেওয়ার জন্য জোর পূর্বক হাসি টেনে মনে মনে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,
—“আমি জানি, নূর ভাইয়া ঠিক আসবে। হয়তো এক্টু দেরি হবে, কিন্তু আসবে। কথা দিয়ে কথা খেলাফ করার ছেলে আমার নূর ভাইয়া না। বিশ্বাস করি আমি আমার নূর ভাইয়াকে। খুব খুব খুব বিশ্বাস করি।”
গেস্টরা সব চাঁদনীর চারপাশে ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘোমটার নিচ থেকে চাঁদনীকে দেখছে। একজন মহিলা গেস্ট সোহানীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“নতুন বউ এর মুখটা তো দেখাও। অনেক অপেক্ষা করেছি সাবরিনার পুএবধূকে দেখার জন্য। এবার অন্তত এক্টু দর্শন করাও।”
সোহানী এক গাল হেসে চাঁদনীর ঘোমটা টা সরিয়ে দিলো। চাঁদনীর মুখটা মলিন হয়ে আছে। মাথাটা নিচু করে চাঁদনী চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ শুনছে। চুড়ি গুলোকে এক এক করে ছুঁয়ে দিচ্ছে চাঁদনী। যার কারণে চুড়ি গুলো ঝুনঝুন আওয়াজ করছে।
মহিলা গুলো চাঁদনীকে দেখে মুচকি হেসে বলল,,,,,
—“মাশাআল্লাহ্ বউ তো দেখতে ভারী মিষ্টি। নাদুস নুদুস চেহারা। শ্যামলা গড়নে অসম্ভব সুন্দুরী। নূরের ভাগ্যটা বেশ ভালো। এওো কিউটি এক্টা বউ পেয়েছে।”
এই মুহূর্তে চাঁদনী নিজের প্রশংসা শুনতে একদমই নারাজ। সে এখন নূরকে পাশে চাইছে। নূরের মুখ থেকে সে প্রশংসা শুনতে চাইছে। উপস্থিত সবাই নানা রকম ভাবে চাঁদনীর প্রশংসা করছে। চাঁদনীর এতো কোন মাথাব্যাথা নেই।
সোহানী ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে চাঁদনীর থেকে কিছুটা দূরে সরে সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা নীড়ের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। নীড়ের পাশে আয়মন আর হিমেল ও আছে। ওরা তিনজনই ব্যাপক ভয়ে আছে। কারণ সব গেস্ট রা নূরকে দেখতে চাইছে। সোহানীকে দেখে নীড় কিছুটা নড়ে চড়ে দাঁড়াল। সোহানী কৌতুহলী দৃষ্টিতে নীড়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—“নীড় ভাইয়া…. নূর কি আসলেই ভার্সিটির কোনো কাজে গেছে নাকি অন্য কোনো কাহিনী আছে? প্লিজ আমাকে ব্যাপারটা ক্লিয়ারলি বলো। চাঁদ খুব আপসেট হয়ে আছে। যখন তখন কেঁদে দিতে পারে।”
নীড় মাথাটা নিচু করে সোহানীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“নূর কোথায় গেছে আমরা কেউ কিছু জানি না। ফোনে ও পাওয়া যাচ্ছে না। বার বার সুইচ অফ আসছে। এক্টু পরেই মান সম্মান নিয়ে টানা হেছড়া শুরু হবে। আব্বু আর আঙ্কেল অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে গেস্টদের হ্যান্ডেল করছে। এই মুহূর্তে কি করা উচিত সঠিক মাথায় আসছে না।”
সোহানী কিছুটা পেরেশান হয়ে বলল,,,,
—“দাঁড়িয়ে না থেকে নূরকে খুঁজে নিয়ে এসো। এতোদিন চাঁদ অনেক সহ্য করেছে। মনে হয় না আজ এমন কিছু সহ্য করতে পারবে।”
নীড় করুন কন্ঠে বলল,,,,,
—“আব্বুর ঘোর আপওি নূরকে খুঁজতে যাওয়া। তাই এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।”
সোহানী আর কথা না বাড়িয়ে মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদনী গম্ভীর মুখটা এক্টু উঁচু করে আশে পাশে নজর দিলো। সদর দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চাঁদনী। চোখ গুলো কেমন ছলছল হয়ে উঠছে। এক্টু পরেই হয়তো সাগরের মতো উওাল হয়ে উঠবে।
অপেক্ষা জিনিস টা বড্ড খারাপ। আপনাকে ভিতর থেকে নিগূড় ভাবে ভেঙ্গে দিবে। সে আসবে, সে আসবে এমন করতে করতে আপনার মনটা এক্টু এক্টু করে পিষে যাবে। অথচ তার আসার সাথে কোনো খবর ই থাকবে না। কিন্তু বেহায়া চোখ দুটো তার আসার পথেই দৃষ্টি স্থির করে রাখবে। মাঝে মাঝে মনে হবে চোখ দুটো এতো বেহায়া কেনো? কেনো সেই মানুষটার জন্যই অপেক্ষা করে যে মানুষটা আদৌ আমার কথা ভাবে না? কেউ একজন যে তার জন্য অপেক্ষা করে পথ চেয়ে আছে সে কি তা কখনো বুঝবে না? নাকি বুঝে ও অবুঝের মতো থাকে? দূরত্বটা কি সময়ের নাকি দুটো মনের? এক্টু ভালো করে খেয়াল করলে হয়তো দেখবেন, বসন্তের অপেক্ষা করতে করতে শরৎকালে এসে পাতা এবং, ফুল দুটোই ঝড়তে শুরু করে। তখন প্রকৃতিটা কেমন প্রাণ হারিয়ে বসে। নিরাগ নিরাগ লাগে। অপেক্ষা জিনিসটা কতোটা খারাপ তা একমাএ প্রকৃতি আপনাকে সঠিকভাবে বিশ্লেষন করে বুঝাতে পারবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই চাঁদনীর চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। জায়মা আর লাবীবা কিছুটা মন খারাপ করে চাঁদনীর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,
—“বোকা মেয়ে, কাঁদছিস কেনো? খালামনি তো বলেছে নূর ভাইয়া এক্টা কাজে বাড়ির বাহিরে গেছে। দেখিস এক্টু পরেই ফিরে আসবে।”
“এক্টু পর” কথাটা বলা খুব সহজ। কিন্তু এর সঠিক তাৎপর্য সে ই বুঝে যে কিনা অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অনেক গুলো মুহূর্তের সমন্বয়ে “এক্টু পর” কথাটার আবির্ভাব হয়। যেখানে এক মুহূর্ত ও সেই মানুষটাকে ছেড়ে থাকা দায় হয়ে পড়ে সেখানে অনেক গুলো মুহূর্ত দম আটকে আসার মতো মনে হয়। চাঁদনী এখন দম আটকে যাওয়া মুহূর্তে নিজেকে আবিষ্কার করছে।
গেস্ট রা এবার নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে আর বলছে,,,,
—“নূর মনে হয় এই বিয়েতে রাজি ছিলো না। হয়তো বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছে। তাই এমন এক্টা গুরুত্বপূর্ণ দিনে ও নূরকে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো ইচ্ছে করেই দূরে সরে আছে। আহা মেয়েটার জন্য কষ্ট হচ্ছে। এতো সুন্দুরী হয়ে ও স্বামীর মন জোগাতে পারল না।”
ফিসফিসানির আওয়াজ চাঁদনীর কান অব্দি ভেসে আসছে। চাঁদনী আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না। কেঁদে কেটে সাজ গোজ নষ্ট করে ফেলছে। অনেক গেস্ট রা তো হাবীব আবরারের উপর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বিদায় নিয়ে এক এক করে চলে যাচ্ছে। দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হতে চলল গেস্ট রা আর কতক্ষন এভাবে ওয়েট করবে? সবার ই তো নিজস্ব সুযোগ, সুবিধা বা কাজ কর্ম থাকতে পারে।
হাবীব আবরার লজ্জায় মাথাটা নিচু করে রেখেছে। মুখের উপর এতো অপমান সহ্য করতে পারছে না। মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। শুধু হাবীব আবরার কেনো দুই পরিবারের লোকজনই লজ্জায় মাথাটা নিচু করে রেখেছে।
চাঁদনী এসব সহ্য করতে না পেরে সোফা থেকে উঠে কাঁদতে কাঁদতে এক ছুটে নীড়, আয়মন আর হিমেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওদের উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—-“সত্যি করে বলো নূর ভাইয়া কোথায় গেছে? তোমরা আমার থেকে কি লুকাচ্ছ?।”
ওরা তিনজনই মাথাটা নিচু করে রেখেছে। চাঁদনী হিচকি তুলে কেঁদে নীড়কে দুহাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,
—“নীড় ভাইয়া প্লিজ বলো নূর ভাইয়া কোথায় গেছে?”
আয়মন চোখে এক গাধা জল নিয়ে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—“আমরা কেউ কিছু জানি না চাঁদ। যাওয়ার সময় নূর আমাদের কিছু বলে যায় নি।”
চাঁদনী চিৎকার করে কেঁদে বলল,,,,,
—“আমি খুঁজে আনব আমার নূরকে। তোরা একেকটা অপদার্থ।”
কথাগুলো বলেই চাঁদনী শাড়িটা দুই হাত দিয়ে উপরে তুলে এক ছুটে বাড়ির মেইন গেইটের সামনে চলে গেলো। চাঁদনীর পিছু পিছু বাড়ির সবাই দৌঁড়াচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে,,,,
—চাঁদ থেমে যা। তুই একা নূরকে খুঁজে আনতে পারবি না।”
হুট করেই মেইন গেইটের সামনে এসে চাঁদনী থেমে যায়। চাঁদনীর উওাল চোখ দুটো স্থির হয়ে যায়। তবে এক্টু আগের অস্থির চোখের জল গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। চাঁদনী খিলখিল করে হেসে পিছনে তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—“আমি বলেছিলাম না, সে আসবে! তাকে আসতেই হবে। কারণ, কেউ একজন তার জন্য অধীর আগ্রহে সময় গুনছিলো। আমি জানতাম এই মানুষটা কখনো তার কথার খেলাফ করবে না।”
#চলবে,,,,,,,,,,,,,্