শেষ থেকে শুরু ২ পর্ব -০২+৩

#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_২
#নন্দিনী_চৌধুরী

২.

ড্রইং রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে মুগ্ধ। তার সামনে তার চাচা বসে আছে। টেবিলের উপর পড়ে আছে মুগ্ধের ডিভোর্স পেপার, আর তার অক্ষমতার রিপোর্ট। মুগ্ধের চাচা চুপ করে আছে। মুগ্ধ নিজেও চুপ করে আছে। সালমা ইতিমধ্যে মুগ্ধকে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছেন।

কিছুক্ষন আগে,

মুগ্ধ অনেক সাহস নিয়ে চাচার বাসায় এসে কলিং বেল বাজায়। দরজা মুগ্ধের চাচাই খুলেন। এতোদিন পর প্রানপ্রিয় ভাতিজিকে দেখে অনেক খুশি হন তিনি। মুগ্ধকে ভিতরে আসতে বলেন তিনি। মুগ্ধ ভিতরে ঢোকার পর ওর চাচা আরিশের খোঁজ করেন, কিন্তু মুগ্ধ কিছু বলেনা। এই সন্ধ্যায় মুগ্ধকে বাসায় দেখে অবাক হয় সালমা। সামিয়া এসেছে বাসায়। সামিয়া ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট। তাই মায়ের বাসায় কিছুদিন থাকতে এসেছে। সামিয়া মুগ্ধকে দেখে ওর সাথে কথা বলতে যায়। মুগ্ধ সোফায় বসতেই ওর চাচা ওকে প্রশ্ন করে…

মাহফুজ: কি ব্যাপার? মুগ্ধ জামাই কই? আর তুই এই সন্ধ্যায় একা আসলি যে?

মুগ্ধ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ওর ব্যাগ থেকে ডিভোর্স পেপার আর ওর অক্ষমতার ফাইলটা বের করে মামার সামনে দেয়। মাহফুজ দুটোই দেখে অবাক হয়ে যায়। সালমা তো মুগ্ধের রিপোর্ট দেখেই শুরু করে দেয় মুগ্ধকে গাল মন্দ দেওয়া।

সালমা: দেখলা তো? আমি আগেই জানতাম এই মেয়ে একটা অপয়া। ছোট বেলায় তো মা বাবাকে খেয়েছে। তারপর আমাদের ঘাড়ে এসে উঠেছিল। যাও একটা বিয়ে হয়েছিল সেটাও কপালে টিকল না। তার ওপর এই মেয়ে বাজা বন্ধ্যা। একদম অলক্ষ্যি এই মেয়ে। এবার আবার আসছে আমাদের বাড়িটা নষ্ট করতে। আমার মেয়েটা প্রেগন্যান্ট এবার আমার মেয়েটার ক্ষতি করবে এই মেয়ে। আমি বলে দিলাম এই অপয়া অনামুখ কে যেনো এই বাড়িতে কোনো জায়গা দেওয়া না হয়।

সালমা বেগমের বলা প্রত্যেকটা কথা তীরের মতো গিয়ে লাগছে মুগ্ধের বুকে। কিন্তু মুগ্ধ চুপ করে আছে। আজ কিছুই বলার নেই তার। সালমা মুগ্ধকে গালি দিতে দিতে সামিয়াকে ওর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

বর্তমানে,,

মাহফুজ মুগ্ধকে উদ্দ্যেশ করে বলে,

মাহফুজ: মেয়েটা কে কিছু জানতে পেরেছিস?

চাচার কথায় অবাক হয় মুগ্ধ! সাথে চিন্তায় ও পরে যায়। কারন সে কিভাবে বলবে সায়মা যে তার ঘর ভেংগেছে। একেই তো প্রথমে সায়মা বিগড়ে গেছে নেশা পর্যন্ত করেছে যার জন্য চাচা ওকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এখন যদি এটা জানতে পারে তবে যে চাচা মরে যাবে। মুগ্ধ আস্তে করে বলে,

মুগ্ধ: না জানতে পারিনি।

মাহফুজ: আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না। কারো ঘর কেউ ভেংগে ভালো থাকতে পারেনা। উপরে আল্লাহ আছেন। তুই এখানেই থাকবি।

সালমা সামিয়াকে রুমে দিয়ে এসে নিচে এসে স্বামীর মুখে এই কথা শুনে রেগে যায়। রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,

সালমা: তুমি এই অপয়া মেয়েটাকে বাসায় রাখবা? তোমার কি মান সম্মানের ভয় নেই? কাল যখন পাড়া প্রতিবেশি জানবে যে বাজা বলে ওকে ওর স্বামী ছেড়ে দিয়েছে তখন আমরা সমাজে মুখ দেখাবো কিভাবে?

মাহফুজ: চুপ করো সালমা। তখন থেকে এই নিচু ভাষা গুলো বলেই যাচ্ছ! ভুলে যেওনা তোমার ও একটা মেয়ে আছে। আপন না ভাবো অন্ততপক্ষে ওকে এভাবে বলো না যে মেয়েটা মরে যায়। ও এখানেই থাকবে। আর এটাই আমার শেষ কথা। মুগ্ধ তুই তোর আগের রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে নিচে খেতে আয়।

মুগ্ধ চাচার কথায় আস্তে করে উপরে ওর সেই আগের রুমে চলে যায়। আর সালমা নিচে বসে রাগে ফুঁসতে থাকে।

মুগ্ধ নিজের রুমে আজ ২ বছর পর আসল। বিয়ের পর ২/৩ বার আসছিল এরপর আর আসে নাই। মুগ্ধ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় আসে। সন্ধ্যা গিয়ে রাত এসেছে ধরনীর বুকে। শীতের রাত বলে অনেক ঠান্ডা বাতাস বইছে। মুগ্ধ চোখ বুজে একটা কথা ভাবতে লাগল,

“স্বামীরা প্রেমিক হতে চায় ঠিকই তবে সেটা তার নিজের স্ত্রী বাদে অন্য সব নারীর প্রেমিক হতে চায়।”

হ্যাঁ আরিশ প্রেমিক হয়ে গেছে তবে মুগ্ধের নয়। সে হয়ে গেছে সায়মার প্রেমিক। স্বামী ছিল মুগ্ধের আর প্রেমিক হলো সায়মার! হায়! ভাগ্যের কি পরিহাস! আজ তার এই অপূর্ণতার কারণেই আজ তার স্বামী তাকে ছেড়ে দিলো সমাজের কাছে আজ সে এক বন্ধ্যা ডিভোর্সি নারী। এই সমাজে টিকে থাকা যে বড্ড কঠিন হয়ে যাবে তার জন্য। সে কি জানে সে কিভাবে তার জীবনের শেষ থেকে শুরু করবে?

এসব কথা ভাবতে ভাবতেই মুগ্ধের চোখে পানি জমে আসল। না চাইতেও বেহায়া চোখ গুলো তার ভিজে যায় বার বার।

মুগ্ধ চোখের পানি মুছে রুমে আসে। খুব ক্লান্ত লাগছে আজ তার। সারাদিন এতো চাপ নিয়ে শরীল এখন ছেড়ে দিয়েছে। মুগ্ধ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ণ আর ডুব দিলো ঘুমের রাজ্যে।

৪.

একটা ৩ মাসের বাচ্চাকে কোলে করে ঘুম পারাচ্ছেন মিসেস খান। নাতনি তার ঘুমানোর নামই নিচ্ছে না। মিসেস খান কত চেষ্টা করছেন কিন্তু মেয়েটা ঘুমাচ্ছেনা, উল্টো কেঁদেই যাচ্ছে। সারাদিন পর বাহির থেকে মাত্র আসল সাদাফ। বাসায় ঢুকেই মাকে মেয়েকে এভাবে দেখে অবাক হলো সাদাফ। সাদাফ মাকে ডেকে বলল,

সাদাফ: মা কি হয়েছে? প্রাপ্তি এভাবে কাঁদছে কেন?

সাদাফের মা সাদাফ এসেছে দেখে খুশি হয়ে বলে,

মিসেস খান: যাক তুই আসলি তাহলে! দেখ না? দিদিভাইকে সেই কখন থেকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুমাচ্ছেই না কেঁদেই যাচ্ছে।

সাদাফ: আচ্ছা তুমি একটু দাঁড়াও। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ওকে নিচ্ছি।

সাদাফ তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে মেয়েকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে রুমে আসে। মেয়েকে বুকের সাথে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে সাদাফ। প্রাপ্তি সাদাফের বুকে আসতে আসতে করে ঘুমিয়ে গেলো। সাদাফ মেয়েকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে নিচে গেল। মিসেস খান খাবার রেডি করছে সাদাফের জন্য। সাদাফ খাবার টেবিলে বসল। মিসেস খান প্লেটে খাবার দিলো। সাদাফ খাচ্ছে তখন মিসেস খান বলেন,

মিসেস খান: এভাবে আর কত?

সাদাফ: কি কত?

মিসেস খান: এভাবে আর কত চলবে? মানুষের জীবনে অনেক কিছু হয়, তাই বলে কি তার জীবন থেমে থাকে? কত করে বললাম যে তুই আবার তোর জীবনটা নতুন ভাবে শুরু কর। নিজের জন্য না হলেও অন্ততপক্ষে মেয়েটার জন্য হলেও কর। অতটুকু মেয়ে মাকে ছাড়া আছে। আমি একা আর কত ওকে সামলাব? আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। আমি চলে গেলে কে দেখবে তোকে ওকে?

সাদাফ খাওয়া রেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

সাদাফ: মা আমি তোমাকে আগেও বলেছি, আমি আমার পুরোটা জীবন একজনকেই ভালোবেসেছি আর তাকেই ভালোবাসবো।
আজ সে নেই বলে আমি আরেকজনকে এই মনে জায়গা দেব? এটা আমি পারব না। আমি মীরাকে ভালোবাসি মা। আর সবসময় বেসে যাবো। আর আমি চাইনা অন্য কেউ এসে প্রাপ্তিকে সৎ মেয়ের মতো ট্রিট করুক। আমি প্রাপ্তির গাঁয়ে একটা আচড় দিতে চাইনা। আমার জীবনে আর কোনো শেষ থেকে শুরু হবে না। আমি আমার মেয়েকে নিয়েই হ্যাপি থাকবো মা। আমার মেয়ের মাও আমি বাবাও আমি।

সাদাফ খাওয়া রেখে চলে যায় হাত ধুয়ে। মিসেস খান ডাকতে চেয়েও ছেলেকে আর ডাকলেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব গুছিয়ে তিনি রুমে চলে যান।

সাদমান খান সাদাফ। একজন ২৮ বছরের যুবক। পেশায় একজন ভার্সিটির প্রফেসর। সাথে বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করে। সাদাফের বাবা মারা গেছে ৩ বছর আগে। সাদাফের একটা বোন আছে। সাদিয়া যার বিয়ে হয়ে গেছে। সাদাফও বিয়ে করেছিল ভালোবেসে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সাদাফ প্রিয়া। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে আশার সংবাদ পায় তারা। কিন্তু প্রেগনেন্সির ৮ মাসের মাথায় অসাবধানতার কারনে পরে যায় প্রিয়া যার ফলে ইমার্জেন্সি ডেলিভারি করা লাগে। যেখানে বাচ্চা বাঁচলেও প্রিয়াকে বাঁচানো যায় নি! অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছিল প্রিয়ার। প্রিয়ার মৃত্যুর পর সাদাফ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেয়। সাদাফের মা অনেকবার বলেছে বিয়ে করতে আবার। কিন্তু সাদাফ একদম স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সে আর বিয়ে করবে না।

সাদাফ নিজের রুমে এসে মেয়েকে একবার দেখে তারপর বারান্দায় গিয়ে বসে। এই নিস্তব্ধ রাত তার সঙ্গী এখন। এই রাত জানে সাদাফের সব কষ্ট। সাদাফ রকিং চেয়ারে বসে। প্রিয়ার জায়গা কাউকে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। হ্যাঁ, মানুষ মরনশীল আজ হক কাল সে বা তার মাও মারা যেতে পারে কিন্তু সে আরেকজনকে বিয়ে করলে সে যে প্রাপ্তিকে ভালোবাসবে তার গ্যারান্টি কি? সাদাফ আকাশপানে চেয়ে আছে আর নিজ মনে বলছে,

“খুব তো মজায় আছো তাইনা আমাকে একা রেখে? আচ্ছা স্বার্থপরের মতো আমাকে বাবুকে একা রেখে চলে গেলে কেন? তুমি তো জানো, আমি পারবোনা তোমাকে ভুলে অন্য কাউকে জীবনে আনতে। তবে কেন চলে গেলে কেন?”

-প্রিয়তমার মৃত্যু মানে এই না সে চলে গেছে। সে আছে আপনার পাশে ছায়া হয়ে।”
[নন্দিনী]

সাদাফ উঠে চলে আসে রুমে। মেয়েকে কোলে করে খাটে শুইয়ে দেয়। তারপর নিজেও শুয়ে পরে পাশে।
#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

৫.
শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বৃষ্টির আনাগোনা। বৃষ্টি পাল্লা দিয়ে নিয়ে আসছে শীতকে। চারিদিকের কুয়াশা মিশ্রিত কালো মেঘে ঘেরা।

আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো মুগ্ধ। শীতে কুঁকড়ে যাচ্ছে সে। আস্তে করে কম্বলের থেকে পা বের করে উঠে দাঁড়ালো মুগ্ধ। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। এসে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ৬ টা বাজে। বাহিরে এখনো বৃষ্টি পরছে। মুগ্ধ আলমারি থেকে চাদর নিয়ে গায়ে জরিয়ে নিলো। তারপর চলে গেলো রান্না ঘরে। এই শীতের দিনে সাথে বৃষ্টি! চাচা তার ভুনাখিচুড়ি খুব পছন্দ করে সাথে ভর্তা আর ডিম ভাজি। মুগ্ধ তাই রান্না চাপালো চুলায়। চাচি উঠার আগেই রান্না করে দিচ্ছে। মুগ্ধ এক চুলায় খিচুড়ি বসিয়ে এখন ভর্তা বানানোর কাজে বসেছে। একে একে আলু, ধনেপাতা, সরিষা, মরিচ, শুটকি, সিম, ডিমের ভর্তা বানিয়ে নিলো। সাথে আচারের তেলও নিলো একটা বড় বাটিতে। সব রান্না শেষ করে মুগ্ধ চা বানিয়ে ফ্লাক্সে রেখে দিলো। তারপর সব খাবার টেবিলে রেখে নিজের জন্য পরিমাণ মতো প্লেটে নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে খেয়ে নিলো। খাবার খেয়ে সব গুছিয়ে রেখে আসলো। এর মাঝেই ওর চাচি চাচা উঠে গেছে। মুগ্ধ আর নিজের রুম থেকে তাই বের হলোনা।

~এদিকে কানাডায়~

মেহের নিজের রুমে কফি মগ হাতে নিয়ে বসে আছে আগামীকাল সে বাংলাদেশে যাবে। তার চড়ুইপাখির জন্য অনেক কিছু কিনে নিয়েছে সে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। মেহেরের মেনেজার আসলো তার রুমে।

মেনেজার: স্যার আসবো?
মেহের: হ্যাঁ, আসুন।
মেনেজার ভিতরে এসে মেহেরকে বললো,

মেনেজার: স্যার আমাদের বাংলাদেশের অফিসে আপনি যে যাবেন আপনার জন্য একটা পিয়ন নিয়োগ দিবো কি?
মেহের: হ্যাঁ, দিন।
মেনেজার: আচ্ছা আমি আজকেই ফোন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে বলছি।

মেনেজার রুম থেকে চলে যায়। মেহের কফি নিয়ে ল্যাপ্টপ নিয়ে বসে।

~অন্যদিকে~

হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে মায়ের রুমে আসে রুহি। গ্লাস হাতে নিয়ে রুমে এসে মায়ের পাশে বসে রুহি। রুহির মা মেয়েকে দেখে উঠে বসে।

রুহি মাকে বলে,

রুহি: মা নেও দুধটা খেয়ে নেও।
রুহি মাকে দুধটা খাইয়ে দিলো। তারপর মেডিসিন খাইয়ে দিলো। এর মাঝেই ওদের বাড়ির দরজায় কেউ টোকা মারলো। রুহি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে পাওনাদার এসেছে। রুহি তাকে দেখে মাথা নিচু করে নিলো। পাওনাদার রুহির মাথা নিচু করা দেখে সে চিল্লিয়ে বললো,
পাওনাদার: আজকেও মাথা নিচু করে নিচ্ছেন। ৫ মাসের পাওনা আছে আপনাদের কাছে। এতো পাওনা রেখে ঘুমান কিভাবে আপনারা? আপনাদের কাছে রোজ আসলেই বলেন আজ না কাল দিবো। বলি কি দেহ বেইচ্চা হলেও আমার টাকা আমাকে ফেরত দেন। এতো টাকা দেনা আর ওনারা সুখে বসে আছে।

পাওনাদার গালি দিতে দিতে চলে গেলো। আর রুহি নিরবে চোখের পানি ফেললো।

রুহাইতা ইসলাম রুহি। মা বাবার বড় মেয়ে সে। অনার্স শেষ করে এখন একটা চাকরির জন্য হাহাকার করছে সে। রুহির বাবা মারা গেছে ৫ মাস আগে। তারপর থেকে তাদের দুঃখের সিমা নেই। রুহিদের কাছে যা জমানো ছিলো তা প্রায় শেষের পথে। মাথার ওপর এই ছাদটুকু ওর বাবা বানিয়ে রেখে গেছে। রুহির একটা ছোট ভাই আছে ক্লাস টেনে পড়ে। রুহির মাও অসুস্থ। হার্টের রোগ আছে তার। ডাক্তার বলেছিলো অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু তাতেও অনেক টাকা লাগবে। রুহির এখন একটা চাকরির খুব প্রয়োজন।

রুহির মা ঘরে শুয়ে সব শুনলেন। মেয়েটাকে এতো বাজে কথা বলে গেলো লোকটা হায়!

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরিশ বসে আছে অফিসে তার পাশে বসে আছে সায়মা। একদম আরিশের গায়ের সাথে মিশে বসে আছে। আরিশের কেন জানি ভালো লাগছেনা কিছু। মুগ্ধকে ছাড়া কেমন জানি খালি খালি লাগছে সব। সায়মা আরিশকে অন্যমনস্ক দেখে আরিশের গালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে বলে,,

সায়মাঃ কি ভাবছো বাবু।
আরিশঃ হ্যাঁ,না কিছুনা।
সায়মা: (আমিতো জানি তুমি কি ভাবছো। ওই মুগ্ধের কথা ভাবছো তুমি। কিন্তু তোমাকেতো তা ভাবতে দেবোনা আমি৷ মুগ্ধের জন্য আমাকে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো। ওর জীবন থেকে সব সুখ আমি কেড়ে নেবো। যেমন তোমাকে কেড়ে নিয়েছি।)
সায়মা আরিশের গালে হাত রেখে বলে,
সায়মাঃ আরিশ আমরা বিয়ে করবো কবে?
আরিশঃ খুব তাড়াতাড়ি করবো।
সায়মাঃ আচ্ছা। তাহলে চলো ঘুরতে যাই।
আরিশঃ এখন?
সায়মাঃ হ্যাঁ, এখন চলো চলো।
আরিশঃ আচ্ছা চলো।

আরিশ সায়মার জোরাজোরিতে আরিশ চলে গেলো সায়মাকে নিয়ে ঘুরতে।

~এদিকে~
সামিয়া মুগ্ধের কাছে আসে গল্প করতে। বাসায় সারাদিন একা একা ভালোলাগেনা তার। সামিয়া মুগ্ধের রুমে এসে দেখে মুগ্ধ হুমায়ন স্যারের একটা বই পরছে। সামিয়া মুগ্ধের পাশে এসে বসলো। সায়মাকে দেখে মুগ্ধ অবাক হলো আর খুশি হলো। সামিয়া মুগ্ধকে বললো,

সামিয়াঃ কি করছিস?
মুগ্ধঃ এইতো বই পড়ছিলাম হুমায়ন স্যারের।
সামিয়াঃ ওহ। আচ্ছা মুগ্ধ আরিশের কাছে জানতে চাসনি কেন তোকে ঠকালো। শুধুই তোর অপূর্ণতাই কি কারন?
মুগ্ধ সামিয়ার কথা শুনে একটু চুপ করে থেকে বলে,

মুগ্ধঃ না কারণ আমি জানতে চাইনি। এই জন্য জানতে চাইনি কারন আমি তাকে ভালোবেসেছি বিশ্বাস করেছি। আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম সে এমন ছিলোনা। আমি আবারো বলছি আমি তাকে ভালোবেসে ভুল করিনি কারন ভালোবাসাটা আমার। কিন্তু আমি ওকে বিশ্বাস করে ভুল করেছিলাম কারন বিশ্বাসের অংশীদার সে ছিলো। আর সে আমার বিশ্বাসটা রাখতে পারেনি। সে মানুষটা সময়ের সাথে চ্যাঞ্জ হয়ে গেছিলো। আমার অপূর্ণতা ছিলো আসল কারণ। সব ছেলেই চায় বাবা ডাক শুনতে। তাই সে বাবা ডাক শোনার জন্য অন্য কারো কাছে চলে গেছে।
সামিয়াঃ কষ্ট হচ্ছে তোর তাইনা।

মুগ্ধ আবার বলে,,
জানোতো হুমায়ন আহমেদ স্যারের একটা উক্তি আছে,,

“যাকে হারিয়েছো তার জন্য কখোনো আফসোস করোনা
কারণ সে কখোনই তোমার ছিলোনা
তাকে মনে করে এক বিন্দু চোখের পানি ফেলা বোকামি
কারন,
সে যদি তোমার হতো তাহলে তোমার কাছে থেকে তার পালানোর সাধ্য কখোনই হতোনা।”

সামিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই সালমা আসে সেখানে এসেই শুরু করে গাল মন্দ মুগ্ধকে।
সালমাঃ কত বড় সাহস আমার মেয়েকে এই খানে নিয়ে আসছিস কেন অপয়া মেয়ে। বাজা মেয়েদের গর্ভবতী মেয়েদের কাছে থাকতে হয়না জানিস না। এতে গর্ভবতী মায়ের ক্ষতি হয়। নিজে তো বাজা এখন আমার মেয়েটাকে খেতে আসছে৷ এই তুই এই রুমে কেন আসছিস আয় তোর রুমে আয়।
সামিয়াঃ মা তুমি ভুল বুঝতেছো।
সালমাঃ চুপ একদম।

মুগ্ধ সালমার কথা শুনে সামিয়াকে বলে,
মুগ্ধঃ সামিয়া আপু আমার রুমে আর এসোনা তুমি। বলা যায়না যদি সত্যি কিছু হয়ে যায়। প্লিজ আর এসোনা আমার রুমে।
সালমা সামিয়াকে নিয়ে চলে গেলো। আর মুগ্ধ চোখের জমানো পানি ছেড়ে দিলো।

মুগ্ধ কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমিতো ইচ্ছা করে বন্ধা হইনি। আমারতো ইচ্ছা করে মা ডাক শোনার। আল্লাহ আমারো তো একটা বাচ্চার খুব শখ। আমিতো ইচ্ছা করে বন্ধ্যা হইনি।”

~এদিকে~

সাদাফ মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে চলে আসে ভার্সিটির ক্লাস নিতে। তারপর চলে যাবে অফিসে। সাদাফ ক্লাস শেষে গাড়িতে বসে ভাবছে,
মেয়ের জন্য একটা কোনো বাচ্চা দেখাশুনা করে এমন কাউকে আনবে। কিন্তু এমন বিশ্বস্ত কাউকে কই পাবে? সেটাই ভাবছে সাদাফ। ভাবতে ভাবতে চলে আসে অফিসে। অফিসে এসে সে তার মেনেজারকে জানালে সে বলে সে দেখছে বিষয়টা। বিসস্ত কাউকে সে খুঁজে দেবে।

রাতে,,,,

মুগ্ধ তার চাচার রুমে আসলো কথা বলার জন্য। মুগ্ধকে দেখে কাছে ডাকলো মাহফুজ। মুগ্ধ চাচার কোলে মাথা রেখে বললো,,

মুগ্ধ: চাচা আমি কি আবার পড়াশুনা শুরু করতে পারি?
মাহফুজ: হ্যাঁ তুই চাইলে আবার শুরু করতে পারিস।

মুগ্ধ বাকি কথা বলার আগেই সালমা বাহির থেকে বলে,,
সালমা: বাহ বাহ কি সুন্দর। এতো বছর আমাদের ঘারে খেয়ে। এখন জামাইয়ের লাথি খেয়ে এসে এখন আবার আমাদের টাকা পয়সা ধ্বংস করার ইচ্ছা। আমি বলে দিচ্ছি এই অপয়ার পিছনে আর একটা টাকাও তুমি নষ্ট করলে তোমার খবর আছে।
মাহফুজ: আহ! সালমা থামো।
মুগ্ধ: না চাচা চাচি ঠিকই বলেছে। ভয় নেই চাচি। তুমি আমাকে ঘরে থাকতে দিয়েছো খেতে দিচ্ছো এই অনেক। আমি যেভাবে পারি টাকা জোগার করে পড়ালেখা করবো।

মুগ্ধ আর দাঁড়ায় না চলে আসে তার রুমে। আজ বড্ড ভাইয়ের কথা মনে পরছে তার। বাবা মায়ের পর বড় ভাই হয় আপন ছায়া। সেই ভাই থেকেও নেই। খুব অভিমান জমে আছে তার মেহেরর উপর।

মুগ্ধ আকাশ পানে তাকিয়ে বলে,

“মা বাবা মরে গেলে আপন বলতে কেউ থাকেনা। নিজের ভাইও না।”

মুগ্ধ আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,

“কাউকে কাঁদিয়ে কেউ ভালো থাকতে পারেনা। কারো চোখ থেকে পানি ঝড়ালে তার জবাব আল্লাহ তায়ালার কাছে দিতে হয়।”

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here