শেষ থেকে শুরু ২ পর্ব -১২+১৩

#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১২
#নন্দিনী_চৌধুরী

২২.
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে মুগ্ধকে। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেহের সাদাফ। মেহেরের শার্টের অর্ধেক ভিজে গেছে মুগ্ধের রক্তে। মেহেরের চোখের পানি থামছেইনা। সাদাফ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সব কেমন জানি এলোমেলো লাগছে তার। রাত এখন ১:৩০ বাজে। সাদাফ আর মেহের মিলে মুগ্ধকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে মেহেরদের বাসায় আসার পিছনের রাস্তায় মুগ্ধকে রক্তাক্ত অজ্ঞান অবস্থায় পায় মেহের। মেহেরেরতো কলিজার পানি শুকিয়েগেছিলো বোনকে এভাবে দেখে। মেহের জেনো রাস্তায় পরে যাবে এমন অবস্থা। সাথে সাদাফ থাকায় সাদাফ মেহেরকে সামলে মেহেরকে বলে মুগ্ধকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে চলতে। মেহের বোনকে কোলে নিয়ে ছুঁটে আসে হাসপাতালে। হাসপাতালে আসতেই ডাক্তার মুগ্ধকে দেখে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে নেয়।

বর্তমানে,,
মেহের চেয়ারে বসে আছে বিধ্বস্ত লাগছে তাকে। মেহের বার বার নিজেকে দোষ দিচ্ছে কেন সে বোনের সাথে গার্ড রাখলোনা। আজ গার্ড থাকলে তার বোনের এতো বড় বিপদ হতোনা। কিছু সময়ের মাঝে ডাক্তার বেরিয়ে আসে বাহিরে। ডাক্তারকে দেখে উঠে দাঁড়ায় মেহের। এগিয়ে যায় ডাক্তারের দিকে মেহের সাদাফ। মেহের উদ্বিগ্ন কন্ঠে ডাক্তারকে জিজ্ঞেশ করে,
মেহের:ডাক্তার আমার বোন?
ডাক্তার: দেখুন ওনার মাথায় ভাড়ি কোনো জিনিশ রোড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে যা অফ করা সম্ভব হচ্ছিলোনা। তাও আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। ২৫%চান্স আছে ওনার বেঁচে ফেরার চান্স। আল্লাহ আল্লাহ করুন আল্লাহ চাইলে ওনাকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
মেহের একদম পাথর হয়ে যায় ডাক্তারের কথা শুনে। মেহের গিয়ে চেয়ারে বসে। চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে এসেছে ওর। মেহের ওর একজন গার্ডকে ডাক দেয়।
মেহের:২৪ঘন্টার মাঝে আমি তাকে আমার সামনে চাই যে আমার বোনের এই অবস্থা করেছে।
গার্ড:আচ্ছা স্যার।

মেহের উঠে আইসিউতে যায় মুগ্ধের কাছে। সাদাফ বাসায় ফোন দিয়ে কল করে জানায় মুগ্ধের কথা। সাদাফের মা সব শুনে কষ্ট পেলো। সাদাফ জানালো আগামীকাল বাসায় আসবে সে আজকের রাতটা সে মেহেরের কাছে থাকবে। সাদাফ ফোন রেখে বসে থাকলো। কোথাও একটা তার ও খারাপ লাগছে কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে রাখছে সে।

~অন্যদিকে~
আরিশ সায়মা ঢাকা ফিরে এসেছে। আরিশ এই কয়েকদিনে মুগ্ধের কথা একদম ভুলে গেছে। অবশ্য সায়মা তাকে মনে করার মতো সুযোগ ও দেয়নি। ইদানিং সায়মার মাঝে অনেক চ্যাঞ্জ খেয়াল করেছে আরিশ। সায়মার শরীরে তার ছোঁয়া ছাড়াও অন্য কারো ছোঁয়ার চিহ্ন সে দেখে কিন্তু সায়মা তা অশ্বিকার করে। তাই আর আরিশ কথা বাড়ায় না। ইদানিং সায়মা রাতে বাহিরে যাওয়াও শুরু করেছো প্রথম এগুলা আরিশ পাত্তা না দিলেও এখন এগুলা ভালো লাগছেনা তার। ঘরের বউ রাত বিরাত এমন বাহিরে থাকাটা একদম ভালো দেখায় না।আরিশ সায়মাকে কিছু বললেও সে কানে নেয়না। তার কথা এটাই “বিয়ে করে সা কারো দাসি হয়ে যায়নি,তার যা ইচ্ছা সে তাই করবে।”
আরিশ রাতে শুয়ে ছিলো এর মাঝে সায়মা ক্লাব থেকে ফিরেছে। আজকে নেশা অন্যদিনের থেকে কম করেই এসেছে। সায়মা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরিশ চুপচাপ শুয়ে আছে। সায়মা আরিশের পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে,
সায়মা:কি হয়েছে তোমার?
আরিশ:কিছুনা।
সায়মা:রেগে আছো নাকি। তুমি এমন কেনো বলোতো।
আরিশ:আমার একটা বেবি চাই সায়মা!
আরিশের এমন কথায় অবাক হয়ে যায় সায়মা। অবাক আর রাগী কণ্ঠে আরিশকে বলে,
সায়মা:কি! পাগল হয়ে গেছো তুমি! বিয়ে হয়েছে মাত্র ৬মাস এর মাঝেই বেবি চাইছো তুমি। এখন বেবি নিলে আমার ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে। আমি কোথাও যেতে পারবোনা। মজা করতে পারবোনা। সো এই বেবি টেবি এখন নিতে পারবোনা আমি। ২বছরের আগে এসব আবদার নিয়ে আমার কাছে আসবেনা।
সায়মার কথায় চমকে যায় আরিশ। একটা মেয়ের কাছে মা হবার থেকে বেশি জরুলি বা আনন্দের আর কি থাকতে পারে। আরিশ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সায়মার দিকে।
আরিশ:একটা মেয়ের কাছে মা হতে পারার থেকেও বেশি দরকারি তার ফিগার নাইট ক্লাব কিভাবে হতে পারে। সেটা তোমাকে না দেখে জানতাম না। আসলে আমার মনে হয় বাচ্চা না নেওয়ার কারণ এসব না কারণ অন্য কিছু। অন্য কাউকে জুটিয়েছো নাকি আবার। তার জন্যই তো রাত বিরাত বাসার বাহিরে থাকো।
আরিশের কথা শুনে সায়মা বসা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে,
সায়মা:আরিশ! মুখ সামলে কথা বলো। আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার আগে নিজের দিকে তাকাও। বউ রেখেও আমাকে নিয়ে ফুর্তি করতে। নিজের ঘরের বউকে রেখে আমার সাথে থেকেছো। হাহ আর নিজে আসছো আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলতে। তুমি এতো ভালো হলে বউ বাচ্চা দিতে পারবেনা জেনে তাকে রেখে আমার কাছে আসতেনা। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মেশিননা আমি। আমার যখন ইচ্ছা হবে সেই সময় বাচ্চা কনসিভ করবো আমি তার আগে নয় বেশ! আর এতে তোমার সমস্যা থাকলে আর একটা কাউকে নিয়ে এসে তাকে দিয়ে তোমার বাচ্চা জন্মিয়ে নেও।
সায়মা ঘটঘট করতে করতে অন্য রুমে চলে গেলো। আরিশ সায়মার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এটা কোন সায়মাকে দেখছে সে। আরিশ উঠে বারান্দায় আসে। আসলে সে হয়তো অনেক বড় একটা ভুল করেছে। সন্তানের লোভে সে মুগ্ধকে ধোঁকা দিয়েছে। আর আজ দেখো সেই সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো মানুষ থেকেও সন্তান পাবেনা সে।

.
.
.
..
.
.
.
.
২৩.
সকালের দিকে রুহিও চলে আসে হাসপাতালে। রুহি অফিসের মেনেজারের থেকে জানতে পেরেছে মুগ্ধের কথা। রুহি সেই সময়েই চলে আসে হাসপাতালে। রুহি হাসপাতালে এসে দেখে মেহের আইসিউর বাহিরে এসে বসে আছে। রুহি গিয়ে মেহেরের পাশে গিয়ে বসে। নিজের পাশে কারো আভাস পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি বসে আছে ওর পাশে। মেহের রুহিকে দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা নিজেকে।
রুহিকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয় মেহের। আচমকা এমন হওয়ায় রুহি অবাক হয়ে যায়। মেহের কান্না করতে করতে বলে,
মেহের:মিস রুহি বলেনতো আমার সাথে কেন এমন হয়। কেন আল্লাহ আমার সব আপনজনদের কেড়ে নেয় আমার থেকে। কেন সবাইকে এভাবে কেড়ে নিচ্ছে। আমার বাবা মাকে প্রথমে নিয়ে গেলো। তারপর এখন আমার বোন। আমার বোনের কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো মিস রুহি আমি মরে যাবো।
মেহেরের কান্না দেখে রুহির চোখও ভিজে উঠে। রুহি মেহেরের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
রুহি:স্যার কান্না করবেননা। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। দেখবেন মুগ্ধ ঠিক হয়ে যাবে। আপনার মতো ভাই থাকতে মুগ্ধের কি কিছু হতে পারে বলুন।
মেহের:আমি আমার বোনকেতো রক্ষা করতে পারলাম না। যেখানে আমি জানি ওর উপড় কোনো বিপদ আসতে পারে। আমার উচিত ছিলো ওকে সাবধানে রাখা। সব আমার দোষ।
রুহি:এটা একটা দূর্ঘটনা স্যার। এখানে আপনার কিছু করার ছিলোনা। আপনি নিজেকে দোষ দিয়েননা স্যার।
সাদাফ এতোটা সময় বসে মেহেরের কান্না দেখছিলো। সাদাফ ভেবে পায়না একজন ভাই কিভাবে তার বোনকে এতোটা ভালোবাসতে পারে।
এর মাঝে নার্স আসে ওদের কাছে।
নার্স:আপনাদের পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। তাকে একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে।

নার্সের কথা শুনে মেহের অনেক খুশি হয়। মুগ্ধকে কেবিনে সিফট করা হয়। মেহের আগে যায় মুগ্ধের কেবিনে। মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মেহের গিয়ে মুগ্ধের পাশে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মুগ্ধ মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। চোখ মেলে ভাইকে দেখে মুচকি হাঁসে।
মেহের:কেমন লাগছে এখন তোর?
মুগ্ধ আসতে করে বলে,
মুগ্ধ:এইতো ভালো।
মেহের এবার কেঁদে দিলো আর বললো,
“আমাকে ক্ষমা করে দিস চড়ুইপাখি। আমি তোকে সেফ রাখতে পারলাম না। আমি তোকে যদি আমি একা না যেতে দিতাম তাহলে এমন হতোনা।
মুগ্ধ ভাইয়ার কথা শুনে বলে,
মুগ্ধ:এতে তোমার দোষ কোথায়? অহেতুক নিজেকে দোষ দিওনা প্লিজ। আমি ঠিক আছিতো। তোমার ভালোবাসা থাকতে আমিকি মরতে পারি এতো তাড়াতাড়ি।
মেহের মুগ্ধের কথা শুনে ওর কপালে একটা চুমু দিলো।

এর মাঝে রুহি আসলো হাতে করে খাবার নিয়ে।
রুহি:এই যে সারারাত আপনারা না খাওয়া। এখন খাবার খেতে হবে। স্যার আপনি এটা খান আর আমি মুগ্ধকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছি।
মেহের:আচ্ছা।
রুহি মুগ্ধকে স্যুপটা খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়া শেষে রুহি মুগ্ধকে রেখে বাহিরে গেলো। আর মেহের ও বাহিরে আসলো। এবার সাদাফ আসলো মুগ্ধের কাছে। সাদাফকে দেখে মুগ্ধ অবাক হলো। সাদাফ মুগ্ধের পাশে এসে ওকে জিজ্ঞেশ করলো,
সাদাফ:কেমন আছেন এখন?
মুগ্ধ:আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি এখন।
আপনি এখানে?
সাদাফ:হ্যাঁ দেখতে আসলাম আপনাকে।
মুগ্ধ:ওহ আচ্ছা।
সাদাফ:হুম।
দুজনেই চুপ করে আছে। সাদাফ আড়চোখে মুগ্ধকে দেখছে। একটু পর উঠে চলে আসে সাদাফ। মেহেরকে বলে বাসায় চলে আসে সাদাফ।

~এদিকে~
সালমা খান মেয়েকে ফোন দিলো। কিছু সময় কল হবার পর সায়মা কল ধরলো।
সালমা:হ্যালো।
সায়মা:হ্যাঁ মা বলো।
সালমা: কই তুই কি অবস্থা তোর?
সায়মা:এইতো আছি কেন হইছে?
সালমা:কোথায় আছিস?
সায়মা:তোমার ভাসুরের মেয়ের স্বামীর সাথে আছি।
সালমা:কি! তুই আরিশের সাথে।
সায়মা:হ্যাঁ।
সালমা:তার মানে তোর জন্যই আরিশ মুগ্ধকে ছাড়ছে।
সায়মা:হুম। গাঁধা ওই আরিশ একটা বুঝলা মা। আমি ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ওকে পটালাম। আর ও সেটা টের ও পেলোনা।
সালমা:সর্বনাশ এখন যদি মেহের জানতে পারে এই কথা তবে তো ও লংকা কান্ড করে ফেলবে।[মনে মনে]
আচ্ছা শোন তুই কাল বাসায় আসিস। কাল তোর বাবা বাসায় থাকবেনা। সামিয়া ডাক্তারের কাছে যাবে। কাল আসিস বাসায়।
সায়মা:আচ্ছা ঠিক আছে।
সালমা কল রেখে চিন্তায় পরে গেলো।
#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

২৪.
সায়মা ওর মা বসে আছে একসাথে সোফায়। দুজনের মুখেই চিন্তার ছাঁপ স্পষ্ট। সালমা মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে আর সায়মা তার পাশে চুপচাপ বসে আছে। কিছু সময় পর সায়মা ওর মাকে বলে,
সায়মা:এখন কি করবো মা?
সালমা মেয়ের কথা শুনে রেগে বলে,
সায়মা:এখন কি করবো আমাকে জিজ্ঞেশ করছিস কেনো। যখন আরিশের গলায় টোপকে ছিলি তখন আমাকে জিজ্ঞেশ করেছিলি একবারও।
সায়মা:আরে আমি তো তখন বুঝিনি যে মেহের ভাই চলে আসবে। আমিতো ভেবেছিলাম মুগ্ধকে কষ্ট দিবো আর ও কষ্টে অপমানে উলটাপালটা কিছু করবে। তানা ও যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে লাগবে আবার মেহের ভাই চলে আসবে তাতো বুঝতে পারিনি। আর মা তুমিই বলো আমার প্রতিশোধ আমি নিবোনা। আমি ওকে বলেছিলাম বাবাকে বলিস না আমি নেশা করি সেটা। কিন্তু না ও বাবাকে বলে দিলো আর বাবা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো। ওর জন্য আমাকে আমার ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে। সেই ওকে আমি সুখে থাকতে দেই কিভাবে বলো মা।
সালমা:তুইতো কয়েক বছরের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিস আর আমি! আমিতো সেই ২০ বছরের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছি। আমার অর্ধেক প্রতিশোধ তো নেওয়া হয়েগেছিলো বাকিটাও নিয়ে নেওয়া হতো যদিনা মেহের এখন চলে আসতো। [মনে মনে]
সায়মা:ওমা কি ভাবছো?
সালমা:ভাবছি কি করবি এখন। শোন তুই বাচ্চা নিয়ে নে। আরিশ বাচ্চা চায়। আর এই বাচ্চাই পারবে তোকে বাঁচিয়ে দিতে। মেহের জানতে পারলেও কিছু করতে পারবেনা যদি শোনে তুই প্রেগন্যান্ট। আর তুইতো বললি আরিশ জানেনা যে তুই মুগ্ধের চাচাতো বোন। তাহলে আরিশকে নিয়ে আর চিন্তা থাকবেনা বাচ্চা এসে গেলে।
সায়মা:কি বলছো মা এখোনি বাচ্চা নিয়ে নেবো। তাহলে আমার ফিউচার তো শেষ এই বাচ্চা নিয়াই।
সালমা:চুপ! কিছু কিছু সময় আমাদের না করতে চাওয়া জিনিশ ও করলে কাজে লাগে। তুই বাচ্চা নে দেখিস সব ঠিক থাকবে।
সায়মা:আচ্ছা।
সালমা:খুব দ্রুত বাচ্চা নে তারপর ওই মেহের তোর কিছু করতে পারবেনা।
সায়মা:ঠিক আছে।

মায়ের সাথে কথা শেষ করে সায়মা চলে আসে। আর সালমা ভাবতে থাকে এরপরে কি করবে।

~এদিকে~
মুগ্ধকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসছে মেহের। সাথে দুইটা নার্স নিয়ে আসছে দেখা শুনার জন্য। নার্স থাকলেও রুহি একদম পারলে পার্মানেন্ট থাকে মুগ্ধের সাথে। ওর সব দেখা শুনা করে যাচ্ছে রুহি। মেহের এটা দেখে অনেক অবাক হয়। আবার কোথায় জানি একটু ভালোলাগাও কাজ করছিলো।
মুগ্ধকে ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছে রুহি পাশে মেহের বসে আছে। খাওয়ার মাঝে হালকা পাতলা কথা বলছে ওরা। এমন সময় সার্ভেন্ট আসলো ওদের রুমে।
সার্ভেন্ট:স্যার আসবো?
মেহের:আসো।
সার্ভেন্ট:স্যার মুগ্ধকে ম্যামের সাথে দেখা করতে এসেছে দুইজন।
মেহের:কে?
সার্ভেন্ট:সাদাফ নাম তার মা।
মেহের:তো তুমি তাদের বাহিরে রেখেছো যাও উপড়ে নিয়ে আসো তাদের।
সার্ভেন্ট:ওকে স্যার।
সার্ভেন্ট চলে গেলো। মুগ্ধ সাদাফের নাম শুনে অবাক হলো। সাদাফরা তাকে দেখতে আসছে। কিছুসময়ের মাঝে সার্ভেন্ট সাদাফদের নিয়ে রুমে আসলো। মেহের সাদাফকে দেখে উঠে গেলো। গিয়ে সাদাফের মাকে সালাম করলো। সাদাফের মা মেহেরকে জরিয়ে ধরে আদর করলো। তারপর মুগ্ধের কাছে গেলো। সাদাফের কোলে প্রাপ্তিকে দেখে মুগ্ধের অনেক আনন্দ লাগলো। কতদিন পর বাচ্চাটাকে দেখলো। রুহি মুগ্ধকে খাওয়ানো শেষ করে রুম থেকে বাহির হয়ে আসলো। সাদাফের মা মুগ্ধের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
সাদাফের মা: এখন কেমন আছে শরীর মা?
মুগ্ধ:জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। আপনার শরীর কেমন?
সাদাফের মা: হ্যাঁ আমিও ভালো।
ওদের কথার মাঝেই প্রাপ্তি কান্না শুরু করে দিলো। সাদাফ প্রাপ্তির কান্না থামানো শুরু করলো। মুগ্ধ সাদাফকে বললো,
মুগ্ধ:দিন আমার কাছে দিন।
সাদাফ:কিন্তু আপনি এই অবস্থায় ওকে কিভাবে কোলে নেবেন?
মুগ্ধ:দিনতো কথা কম বলে।
সাদাফ প্রাপ্তিকে মুগ্ধের কোলে দিলো।
মুগ্ধ প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।
মুগ্ধ:এইতো মা কাঁদেনা। কাঁদে কেনো আমার আম্মুটা। আমার সোনা মেয়েটা।
সাদাফের মা: দুইদিন তোমাকে না দেখে যেই কান্না করেছে সামলানো অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। তোমাকে অনেক ভালোভাবে চিনে ফেলেছে।
মুগ্ধ:আমিও ওকে অনেক মিস করছিলাম।
সাদাফের মা: আচ্ছা তোরা কথা বলে আমি বাহিরে যাই।
সাদাফের মা উঠে নিচে আসলো।
সাদাফ সোফায় বসে মুগ্ধ আর প্রাপ্তির ভালোবাসা দেখছে। প্রাপ্তিকে আদর করছে মুগ্ধ আর প্রাপ্তি শান্ত বাচ্চার মতো আদর খাচ্ছে।
সাদাফ:!কেনো জানিনা এখন এই জায়গায় আর প্রিয়াকে আপনাকেই কল্পনা করি আমি।”

২৫.
রাতে আরিশ বসে আছে ইদানিং কিছু তার ভালোলাগেনা। সুখ যেনো তার থেকেও না থাকার মতো হয়েগেছে। সায়মা তার থেকেও নেই এমন মনে হয় তার। আরিশ বসে বসে এসব ভাবছে তখন সায়মা এসে ওকে জরিয়ে ধরে। আচমকা এমন হওয়ায় আরিশ অনেক অবাক হয়। সায়মার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে সায়মা লাল কালারের একটা পাতলা শাড়ি পরছে শাড়ি এতো পাতলা যে ওর শরীর পুরাই দেখা যাচ্ছে। আরিশ সায়মাকে বললো,
আরিশ:কি হয়েছে এতো সাজগোজ করছো আজকে কি কোনো পার্টিতে যাচ্ছো নাকি?
সায়মা:উহুম। কোনো পার্টিনা আজকে আমি আমার স্বামীর আদর নিবো তাই এতো সেজেছি।
আরিশ:স্বামীর আদর নিয়ে কি করবা।
সায়মা:সরি আরিশ। আমার সেদিন তোমার সাথে ওভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। তুমি যেহুতু বাচ্চা চাও আমি রাজী বাচ্চা নিতে।
সায়মার কথা শুনে আরিশ অবাক হলো। অবাক হয়ে বললো,
আরিশ:সত্যি! কিন্তু কাল পর্যন্ত তো তোমার মত ছিলোনা বাচ্চা নেওয়ার জন্য। বাচ্চা নিলে তো তোমার ফিগার ফিউচার সব নষ্ট হয়ে যাবে।
সায়মা:না এটা আমার ভুল ধারনা ছিলো। একটা মেয়ের কাছে মা হওয়ার থেকে বড় সুখ আর কি থাকে বলো। তাই আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চাই।
সায়মার কথায় আরিশ অনেক খুশি হয়। কাছে টেনে নেয় সায়মাকে। আজ আবার একটা মিলন হতে চলেছে তাদের মাঝে। এই মিলন আরিশের জন্য সুখের হলেও সায়মার কাছে এটা নিজেকে বাঁচানোর একটা মাধ্যম শুধু।

~অন্যদিকে~
রুহি বাসায় চলে গেছে মুগ্ধকে খাইয়ে ফিটফাট করে রেখে। মুগ্ধ নিজের রুমে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। বাহিরের ঠান্ডা বাতাস পর্দা ঠেলে ভিতরে আসছে আর ঠান্ডা অনুভুতি দিচ্ছে। মুগ্ধ বসে বসে ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো তার জীবনে। আবার এখন প্রাণসংকট ও দেখা দিচ্ছে। এসব কেনো হচ্ছে মুগ্ধ জানেনা। তবে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে না চাইতেও তার কোনো শত্রু হয়ে গেছে। যে চায়না মুগ্ধ এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকুক।
মুগ্ধ:”আজ যদি আমি মা হতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমাকে ছেড়ে দিতেনা। আবার মনে হয় ভালোই হয়েছে আল্লাহ এই অক্ষমতা দিয়েছে এই অক্ষমতা না দিলে তো আমার আশেপাশের সবাইকে চিনতে পারতাম না। তবে তোমার প্রতি অভিযোগ নেই,নেই কোনো অভিমান ভালো থাকো সেটাই চাই।”

মুগ্ধ আসতে করে শুয়ে পরে। একটু পর ঘুমের রাজ্যে চলে যায় সে।

মেহের নিজের রুমে বসে কিউব মিলাচ্ছে। মেহেরের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। যেনো এখোনি কাউকে সামনে পেলে তাকে মেরে ফেলবে। মেহের রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
মেহের:আপনি আমার সয্যের সিমা ভেংগে ফেলেছেন। এবার আপনাকে আমি দেখাবো ঘুমন্ত বাঘকে জাগালে সে কতটা ভয়ংকর হতে পারে। আমার বোনের দিকে হাত বাড়িয়েছেন আপনি। কতটা সাহস আপনার।
মেহের নিজ মনে মনে এগুলা বলতে লাগলো।

.
.
.
.
.
.
.
.

১সপ্তাহ পর,,,,
মুগ্ধ এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ। ১সপ্তাহ পর আজকে মুগ্ধ ক্লাস করতে যাবে। আগামী পরশু থেকে ওদের পরিক্ষা শুরু। মুগ্ধ রেডি হয়ে নিচে আসলো। খাবার খেয়ে বেরিয়ে গেলো ক্লাস করতে।

মেহের অফিসে এসে দেখে রুহি চুপচাপ বসে আছে। মেহের রুহিকে চুপচাপ থাকতে দেখে বলে,
মেহের:মিস রুহি আপনি এতো চুপচাপ কেনো। কিছু হয়েছে?
রুহি:না স্যার তেমন কিছুনা।
মেহের:বেশি পার্সোনাল না হলে বলতে পারেন।
রুহি: না তেমন কিছুনা। আসলে মায়ের বুকে ব্যাথাটা ইদানিং বেড়েছে। ভাবছি মাকে তাড়াতাড়ি অপারেশন করিয়ে দিবো।
মেহের:এটাতো ভালো কথা। তাহলে করিয়ে নিন।
রুহি:করাবো কিন্তু..।
মেহের বুঝতে পারলো রুহি কি বলতে চাচ্ছে।
মেহের নিজের ডেস্কে বসে পাশের টেবিল থেকে একটা খাম বের করে রুহির হাতে দিলো।
রুহি মেহেরের দিকে প্রশ্নসুচোক দৃষ্টিতে তাকালো।
মেহের:এখানে ২লাখ টাকা আছে। এতে না হলে আমাকে জানাবেন আরো দেবো। আন্টির অপারেশন তাড়াতাড়ি করিয়ে নেন। আর হ্যাঁ ভাবেননা করুনা করছি। আন্টি আমার মায়ের মতো। আমার নিজের মা নেই ওনার জন্য কিছু করতে পারলে ভালোলাগবে আমার।
রুহি ছলছল চোখে মেহেরের দিকে তাকালো। আজ মেহেরের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসাটা আরোও বেড়ে গেলো। ভুল মানুষকে রুহি মনে জায়গা দেয়নি সে বুঝতে পারলো। একজন মানুষ হিসাবে মেহের সত্যিই অতুলনীয়।

#চলবে

শরীর ভালোনা। ঠান্ডা,জ্বর,কাঁশি🥺।
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here