শেষ থেকে শুরু ২ পর্ব -১০+১১

#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১০
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৮.
মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে মেহেরের রুমের সামনে কেন জানি ভিতরে যেতে পারছেনা। মুগ্ধ এভাবে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে তখন মেহের রুমের ভেতর থেকে বললো,
মেহেরঃভিতরে আয় বাহিরে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবি?
মেহেরের কথায় চমকে যায় মুগ্ধ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরলো সে। মেহের বোনকে দেখে হাসিঁমাখা মুখে বললো,
মেহেরঃভাইয়ের রুমে আসতে কি এতো ভাবা লাগে নাকি রে?
মেহেরের কথায় মুগ্ধ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা,তাও আমতা আমতা করে বলে,
মুগ্ধঃ না মানে,,, তুমি কিভাবে জানলা ভাইয়া আমি বাহিরে দাঁড়ানো?
মেহেরঃআমি বারান্দা দিয়ে দেখেছি যে তুই এসেছিস। আর গার্ড আমাকে কল করে বলেছে যে তুই আসছিস। আমি জানি তুই সরাসরি তো আমার রুমে আসবিনা। ভাই হয়ে বোনের সব কিছু যদি না জানি তাহলে কি হয় বল। যদিও অনেক কিছু থেকে তোকে রক্ষা করতে পারিনাই। এটা আমার অনেক বড় ব্যার্থতা। তবে সামনে আগামীতে তোকে সেফ রাখার দায়িত্ব আমার।
মুগ্ধ এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। হামলে পরে ভাইয়ের বুকে। অজরে চিৎকার করে কান্না করে ভাইকে বলে,
মুগ্ধঃ আমাকে ক্ষমা করে দেও ভাইয়া। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। কি করবো বলো তুমি যাওয়ার পর থেকে জীবনটা একদম বিষিয়ে গেছিলো। রোজ চাচির অত্যাচার সয্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম। জানিনা চাচির সাথে আমার কিসের শত্রুতা সে আমাকে মানতে পারেনা। তবে আমি তাদের সবাইকে অনেক ভালোবাসি। চাচার কথায় আরিশকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাই। চেয়েছিলাম তুমি আসলে বিয়ে করবো কিন্তু সেই তোমার কোনো খবর ছিলোনা তখন। তাই তুমি ছাড়াই বিয়েটা করে নিলাম। ভাবলাম এবার হয়তো সুখের দিন আসবে আমার,কিন্তু না সেই ২বছর পার হতে না হতেই আরিশ ও আমাকে ছেড়ে দিলো আমারই চোখের সামনে আমারই চাচাতো বোনকে….. সায়মা ছোট থেকে আমাকে দেখতে পারেনা। একদম চাচির মতো হয়েছে ও। সেই সায়মা আমার সংসার কেড়ে নিলো। আমার অক্ষমতাকে কেন্দ্র করে আমার সব কেড়ে নিলো। আমি একদক শেষ হয়ে গেলাম ভাইয়া। পাড়া প্রতিবেশি আত্মিয় সজন সবাই আমাকে বাজা বন্ধ্যা ডিভোর্সি বলে অপমান করে। এমন কাউকে দরকার ছিলো যে এই সময়টা আমার পাশে আমার মাথায় হাত রেখে বলতো আমি আছিতো পাশে ভয় নেই। কিন্তু কেউ ছিলোনা। তুমিও ছিলেনা ভাইয়া। তাই তোমাকে এখন এভাবে আসতে দেখে এক চাপা অভিমান কাজ করছিলো। কিন্তু বিশ্বাস করো ভাইয়া তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটুও কমেনি।
বোনের এতো কষ্ট এতো হাহাকার শুনে মেহেরের চোখেও পানি চলে এসেছে। বোনটা তার কতটা কষ্টে ছিলো তার কোনো আন্দাজ করতে পারবেনা মেহের। মেহের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
মেহেরঃআমাকে তুই মাফ করে দিস। তুই এতো কিছু সয্য করেছিস যা আমার কল্পনার বাহিরে। আমার অবর্তমানে তোকে যে এতোটা টর্চার সয্য করতে হবে আমি ভাবতে পারিনি। মামা আমাকে যদি তোর বিয়ের কথাটা বলতো তবে আমি এই বিয়ে হতে দিতাম না। কিন্তু মামা কেন এমন করলো সেটা জানিনা তবে জেনে যাবো খুব শীঘ্রই। তোকে যারা এতোটা কষ্ট দিয়েছে তাদের জীবন আমি জাহান্নাম বানিয়ে দিবো আমি তোকে কথা দিলাম। তোর পা ধরে ক্ষমা চাইবে ওই আরিশ তুই দেখে নিস।
মেহের মনে মনে আরো বলতে লাগলো,
তুই যদি জানতে পারিস ওই সালমা খান কেন এমন করেছে তাহলে তুই যে সেটা সয্য করতে পারবিনা। তাই এখন তোকে কিছু আমি জানাবোনা। আর সায়মা তার ব্যবস্থাও আমি করবো অনেক তাড়াতাড়ি।
মেহের বোনকে শান্ত করে বলে,
মেহেরঃচড়ুইপাখি যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোকে খাইয়ে দেবো যা।
মেহের সার্ভেন্টকে ডেকে মুগ্ধকে নিয়ে যেতে বলে ওর রুমে আর ওর যা যা প্রয়োজন সব গুছিয়ে দিতে বলে। মুগ্ধ চলে যেতে মেহের একজনকে কল দেয়,
মেহেরঃহ্যা শোনো আরিশদের কম্পানির সব ডিটেইলস আমার কালকের ভেতরে চাই আর ওর সব সম্পত্তির ডিটেইলস ও। হ্যা আগামীকালের ভেতরে সেগুলা আমার টেবিলে দেখতে চাই। আর হে এতোদিন সালমা খানের একাউন্টে যত টাকা যেতো আজ থেকে আর তা যাবেনা। এতোদিন মুগ্ধ ছিলো বলে ওদের টাকা দিতাম এখন আর না। আমার বোনকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। ওই একাউন্ড ফ্রিজ করে দেও।

মেহের কল কেটে নিচে চলে আসলো। মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে মেহের খাবার নিয়ে বসে আছে। মুগ্ধ গিয়ে মেহেরের সামনে বসলো। মেহের হেঁসে ফোন এগিয়ে দিলো মুগ্ধের দিকে। মুগ্ধ গেম খেলা শুরু করলো আর মেহের তার চড়ুইপাখিকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো।
ছোট বেলায় এভাবেই খাইয়ে দিতো মুগ্ধকে মেহের। মুগ্ধ খেলায় বিজি থাকতো আর মেহের ওকে খাইয়ে দিতো। খাওয়া শেষে মুগ্ধ মেহেরকে একটা চুমু দিতো আর মেহের বোনকে একটা চোকলেট দিতো। আজকেও তাই করলো খাওয়া শেষে মুগ্ধ মেহেরকে চুমু দিলো কপালে আর মেহের একটা চোকলেট দিলো মুগ্ধকে।
মেহেরঃএখন গিয়ে শুয়ে পর যা।
মুগ্ধ মাথা নেড়ে চলে গেলো শুতে রুমে। মুগ্ধ যাওয়ার পর মেহের ওর রুমে চলে আসে। তারপর সেও শুয়ে পরে বিছানায়।

১৯.
~পরেরদিন~
মুগ্ধ সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে রান্না ঘরে আসে। নাস্তা যদিও সার্ভেন্ট যদিও নাস্তা বানায় কিন্তু মুগ্ধ আজকে নাস্তা বানাবে। যেহুতু ঠান্ডা বাহিরে অনেক তাই মুগ্ধ খিচুড়ি বর্তা বানালো। খাবার টেবিলে সার্ভ করে ভাইয়ের জন্য কফি নিয়ে রুমে গেলো। মেহের শাওয়ার নিচ্ছে। মুগ্ধ কফি রেখে নিজের রুমে এসে রেডি হলো। মেহের শাওয়ার নিয়ে এসে টেবিলে কফি দেখে খুশি হলো। কফি খেয়ে রেডি হয়ে নিচে আসলো মেহের। মুগ্ধ রেডি হয়ে নিচে আসলো। মেহের এখনো মুগ্ধকে খাইয়ে দিলো। খাওয়াতে খাওয়াতে বললো,
মেহেরঃতুই কি এখনো ওই বেবিকেয়ার জবটা করবি?
মুগ্ধঃহ্যা ভাইয়া। আমি চাইলেও জবটা ছাড়তে পারবোনা। কারন এক মায়ায় বাঁধা পরে গেছি আমি। জানো ভাইয়া বাচ্চাটা যখন আমার কাছে থাকে তখন অনেক শান্তি পাই মনে। তাই আমি জবটা ছাড়বোনা।
মেহেরঃআচ্ছা কার বাচ্চা দেখা শুনা করছিস?
মুগ্ধঃসাদমান হাসান সাদাফ। তার মেয়ে প্রাপ্তিকে দেখা শুনা করি।
সাদাফের নাম শুনে চমকে যায় মেহের। তার বোন সাদাফের মেয়েকে দেখা শুনা করে জেনে অবাক হলো মেহের। মুগ্ধকে খাইয়ে নিজে খেয়ে একসাথে বেরিয়ে পরে ওরা। মুগ্ধকে ক্লাসে দিয়ে মেহের অফিসে চলে আসে।

এদিকে_
সালমা খানের মেজাজ খুব খারাপ। মুগ্ধ মেহেরের কাছে চলে গেছে তাই মেহের তার একাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে। সালমা খানের অনেক রাগ লাগছে তাই।
সালমা খানঃ সেদিন ওদের সাথে সাথে ওই মুগ্ধকেও মেরে দিলে ভালো হতো। তারপর মেহেরের একটা ব্যবস্থা করাই যেতো। এখন তো আমার গলায় কাঁটার মতো আটকে আছে এই দুই ভাই বোন। না পারছি বের করতে না পারছি গিলতে। এদিকে সায়মাটা কই আছে কে জানে। অনেকদিন ধরে কথা হচ্ছেনা।

সায়মা আর আরিশ ঘুরতে এসেছে চট্টগ্রাম। মুলতো হানিমুনে এসেছে তারা। সায়মাতে আরিশ এতোটাই মজে আছে এখন আর মুগ্ধের কথা মাথায় আসেনা তার।

এদিকে,,
রুহি মেহেরের কেবিনে বসে বসে গান গাচ্ছে,
আকাশেতে লক্ষ্য তারা চাঁদ কিন্তু একটারে হেইয়া। 😶
রুহি গান গাচ্ছে আর কফি বানাচ্ছে। মেহের কেবিনে ঢুকে এমন গান শুনে অবাক হয়ে রুহিকে বলে,
মেহেরঃকি সব গান গাচ্ছেন এগুলা।
আচমকা মেহেরের এমন কথায় চমকে যায় রুহি। গান থামিয়ে সামনে ফিরে বলে,
রুহিঃস.স্যার আপনি!
মেহেরঃহ্যা আমার কেবিনে আমি আসবোনাতো কে আসবে।
রুহিঃ না না আপনিই তো আসবেন। আসুন বসুন আমি কফি দিচ্ছি।
মেহের গিয়ে চেয়ারে বসলো।
রুহি এসে ওকে কফি দিলো। মেহের কফি নিয়ে খেতে লাগলো আর ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো। রুহির এখানে কাজ নেই দেখে নিজের কেবিনে চলে আসলো। নিজের কেবিনে এসে আবার গাইছে,
আকাশেতে লক্ষ্য তারা মেহের কিন্তু একটাইরে হেইয়্য্যা।
রুহি নিজে গান গেয়ে নিজেই হেঁসে ফেললো। তারপর কাজে মন দিলো।

.
.
.
.
.
.
~অন্যদিকে~
মুগ্ধ ক্লাস করে প্রাপ্তির জন্য কিছু জিনিশ কিনলো দরকারি। তারপর চলে আসলো সাসাফের বাসায়। বাসায় এসে দেখে সাদিয়া আসছে। সাদিয়াকে মুগ্ধ চেনে দেখেছে আগেও আর সাদিয়াও মুগ্ধকে চেনে। দুজনে দুজনের সাথে ভাব বিনিময় করে নিলো। তারপর মুগ্ধ প্রাপ্তির কাছে গেলো। প্রাপ্তিকে ঘুম থেকে তুলে ভালো করে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিলো। তারপর প্রাপ্তিকে নিয়ে নিচে গিয়ে গল্প জুরে দিলো।

সারাদিন শেষে ক্লান্ত শরীরে সাসাফ বাসায় আসলো। বাসায় রুমে এসে মুগ্ধকে দেখে অবাক হলো সাদাফ। কারন মুগ্ধ একটা নীল কালারের শাড়ি পরে আছে। চুল গুলো খোলা। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে খেলছে তাই সাদাফ এসেছে সেটা খেয়াল করেনি। সাদাফ কিছু সময়ের জন্য মুগ্ধকে নিজ অর্ধাঙ্গিনীরূপে ভেবে নিলো। কিন্তু প্রতিমূহূর্তে প্রিয়ার কথা মনে পরতেই সাদাফ নিজেকে শক্ত করলো। নাহ সে শুধু প্রিয়াকে ভালোবাসে। সে প্রিয়ার জায়গা কাউকে দেবেনা। সাদাফ রুমে এসে সোজা শাওয়ার নিতে গেলো। শাওয়ার নিয়ে এসে খেতে চলে গেলো। খেয়ে এসে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। সারাদিন কলিজারটুকরাটাকে কাছে পায়না যে। মুগ্ধ বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখছে দূর থেকে। মুগ্ধ সাদাফকে প্রশ্ন করলো,
মুগ্ধঃআপনি কিন্তু কালকে বললেননা আমার ভাইয়াকে কিভাবে চেনেন আপনি?
সাদাফ যেনো জানতো মুগ্ধ এমন একটা প্রশ্ন করবে তাই সাদাফ সাথে সাথে উত্তর দিলো,
সাদাফঃতোমার ভাইয়া আর আমি বিজনেস ডিল করি। তাই আমরা একে অপরকে চিনি।
মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে চমকে যায়। মানে তার ভাই আর সাদাফ আগে থেকেই পরিচিত।
মুগ্ধঃওহ! আচ্ছা আমি আসি আজকে তাহলে।
মুগ্ধ ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আর সাদাফ মুগ্ধের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_চৌধুরী

২০.
দেখতে দেখতে মাস চলে গেলো অনেক গুলো। আজ প্রায় ৬মাস হলো মুগ্ধ প্রাপ্তির দেখাশুনার কাজ করছে। এই ৬মাসে সাদাফ মুগ্ধ অনেক ঝগড়া খুনসুটি করেছে তার সবটাই ছিলো প্রাপ্তিকে ঘিরে। সাদাফের মা তা দেখে আর হাঁসে আর ভাবে ইসসস যদি আজ সাদাফ মুগ্ধ প্রাপ্তি একটা পরিবার হতো। সাদাফের ইদানিং মুগ্ধকে খারাপ লাগেনা অনেকটা ভালোই লাগে। কোথাও এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে তার মুগ্ধের জন্য। এই ৬মাসে সাদাফ মুগ্ধকে যত দেখছে ততটাই অবাক হয়। একটা মেয়ে কত কষ্ট মনে চেপে রেখে খুশি থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে রোজ। সাদাফের অচেতন মন কোথাও বলে,
“হয়ে যা ওর খুশির কারণ। ফিরিয়ে আন ওর সত্যি হাঁসিটা। ওকে নিয়ে শুরু কর আবার নতুন একটা জীবন। হয়ে যা ওর শেষ থেকে শুরু।”
নিজের মনের কথায় সায় দিতে পারেনা সাদাফ কেন জানি। এসব ভাবলেই প্রিয়ার কথাও মনে আসে। একটা সময় তো সে প্রিয়াকে ভালোবাসতো আর এখনো বাসে। তাই মুগ্ধকে নিয়ে এসব চিন্তা করা উচিত নয় বলেই তার মনে হয়।
সাদাফের এসবের চিন্তার মাঝে ওর মা আসে ওর রুমে। সাদাফের মা রুমে এসে সাদাফকে বলে,
সাদাফের মা: সাদাফ!
মায়ের কন্ঠে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে সাদাফ। মাকে দেখে সাদাফ বলে,

সাদাফ:হ্যাঁ মা বলো।
সাদাফের মা:তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার।
সাদাফ:বলো।
সাদাফের মা সোফায় বসে সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
সাদাফের মা: দেখ সাদাফ মানুষের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে। অনেক কাঙ্ক্ষিত অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু ঘটে। তাই বলে কিন্তু জীবন থেমে যায়না। অনেক কিছু মানিয়ে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। মানছি তুই প্রিয়াকে অনেক ভালোবাসিস, কিন্তু একবার ভেবে দেখ তুই একা কি পারবি প্রাপ্তিকে মানুষ করতে। আজ প্রাপ্তি ছোট কাল সে বড় হবে সবার মা দেখার পর সে যখন তোকে প্রশ্ন করবে, “বাবা আমার মা কোথায়?” তখন তুই কি উত্তর দিবি ওকে। মানছি তোর ভয় যদি নতুন কেউ এসে ওকে অবহেলা করে, কিন্তু বাবা সবাই এক হয়না। মনে রাখিস সব আপন আপন হয়,সব পর পর নয়। এমনো হতে পারে নতুন কেউ এসে প্রাপ্তিকে তার মায়ের মতো আগলে নিলো। দেখ বা জীবনে কেউ সারা জীবন বাঁঁচবেনা। তুই আমি সবাই মারা যাবো। তাই তোকে বলছি বাবা জীবনকে আরেকবার সুযোগ দে। আবার নতুন ভাবে শুরু কর সবটা। দেখিস আমার মন বলে তোর নতুন শুরু অনেক সুখময় হবে তোর জন্য।
সাদাফ:মা তুমি আসলে কি বলতে চাইছো?
মাদাফের মা: আমি চাইছিলাম তুই মুগ্ধকে বিয়ে কর। প্রাপ্তির সাথে মুগ্ধের সম্পর্ক কতটা সুন্দর।
সাদাফ:মা! তুমি কি বলছো তুমি ভেবে দেখছো? মুগ্ধের আগে পরের কিছু তুমি জানোনা। মুগ্ধের স্বামী তার সাথে প্রতারণা করেছে কারন মুগ্ধ মা হতে পারবেনা বলে। মুগ্ধ এই ধাক্কাটা এখনো ভালো করে সামলে উঠতে পারেনি। আর তুমি যেটা চাইছো সেটা সম্ভব নয়।
সাদাফের মা: কেনো সম্ভব নয়। যে মুগ্ধকে ঠকালো তার দেখা উচিত মুগ্ধ খারাপ না ভালোই আছে। আর সেই ভালোটা কেন তোর সাথে থাকতে পারবেনা।
সাদাফ:মা প্লিজ। তুমি এসব কথা রাখো মুগ্ধ আসলো বলে এখনি। এসব কথা কোনোদিন ওর সামনে বলবেনা মা।
সাদাফের মা হতাশ হয়ে চলে আসে ছেলের রুম থেকে।

২১.
~মেহেরর বাসায়~🌸
মেহেরের বাসায় আসছে আজকে রুহি। মুলত অফিসের কাজের জন্য আসতে হয়েছে। কারন মেহেরের সর্দি জ্বর এসেছে তাই অফিসে যেতে পারবেনা। রুহি বাসায় মেহেরের রুমে এসে দেখে মুগ্ধ মেহেরকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। রুহি দরজায় দাঁড়িয়ে ভাই বোনের ভালোবাসা দেখছে আর খুশি হচ্ছে। খাবার খেতে খেতে মেহেরের চোখ যায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা রুহির দিকে। রুহিকে দেখে মেহের বলে,
মেহের:আরে মিস রুহি আসুন ভিতরে আসুন।
রুহির মেহেরের কথা শুনে ভিতরে আসে। ভেতরে এসে মুগ্ধকে দেখে সালাম দেয়। মুগ্ধ সালামের উত্তর দেয়। রুহি মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো,
রুহি:স্যার আপনার শরীল এখন কেমন?
মেহের:আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি এখন। আজকে অফিসে যেতে চাইছিলাম কিন্তু এইযে আমার চড়ুইপাখি আজকে যেতে দিলোনা। বললো আজকেও বিশ্রাম নিতে।
রুহি:ভালো কথাইতো বলেছে মুগ্ধ। শরীলের জ্বর কমলো মাত্র আজকেও বিশ্রাম নিন আপনি।
মুগ্ধ:আচ্ছা আমি গেলাম। তোমরা থাকো। আমার ক্লাস আছে।
মেহের:আচ্ছা তুই যা আমি ড্রাইভার আর গার্ডকে বলে দিছি তোর সাথে যাওয়ার জন্য।
মুগ্ধ প্লেট হাতে নিয়ে চলে গেলো।
রুহি মেহেরের থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে বসলো। তারপর বললো,
রুহি:স্যার এই ফাইলগুলো একটু দেখে দিন। মেনেজার স্যার আজকে এগুলা সাবমিট করবেন।
মেহের:আচ্ছা দিন দেখে দিচ্ছি।
মেহের ফাইলগুলো নিয়ে দেখতে লাগলো। আর রুহি বসে রইলো। মেহের ফাইল দেখার মাঝে রুহিকে বললো,
মেহের:দুই কাপ কফি নিয়ে আসেন তো মিস রুহি। সার্ভেন্টকে বললেই সে বানিয়ে দেবে।
রুহি:আচ্ছা স্যার।
রুহি কিচেনে আসলো আর নিজেই কফি বানালো সার্ভেন্টদের বললোনা। কফি বানিয়ে নিয়ে আবার রুমে আসলো। একটা মগ মেহেরকে দিলো আরেকটা রুহি নিলো। কফি খেতে খেতে মেহের ফাইল দেখা শেষ করলো।
মেহের:নিন ফাইল সব ঠিক আছে।
রুহি ফাইল নিয়ে মেহেরকে বললো,
রুহি:স্যার একটা কথা বলি?
মেহের:হ্যা বলুন।
রুহি:স্যার আপনার বোনের কি বিয়ে হয়েছে?
মেহের:হ্যা হয়েছিলো। আমি যখন বাহিরে ছিলাম আমাকে না জানিয়ে আমার বোনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যার সাথে বিয়ে দিয়েছিলো সে আমার বোনের সাথে চিট করেছে। তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে।
রুহি:ওহ আচ্ছা। তাহলে এখন কি ওকে আবার বিয়ে দেবেন?
মেহের:২য় বিয়ে করার ইচ্ছাটা সম্পুর্ন ওর ইচ্ছা। আমি ওকে ২য় বিয়ের জন্য জোর করবোনা। আমি চাই ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হক। আর আল্লাহ আমাকে কম দেয়নাই। আমি সারাজীবন আমার বোনকে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো। আমি যদিও জানি যে ও বসে খাবেনা। ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। আমি চাই এইযে এই সমাজ ওকে যে চোখে দেখে একদিন তারাই যেনো ওকে দেখে অবাক হয়। তবে আপনি কেন এই কথা জিজ্ঞেশ করলেন?
রুহি:না মানে আমি যখন এখানে আসছিলাম আপনাদের এলাকার কিছু মহিলাদের বলতে শুনছিলাম তাই আরকি।
মেহের:অহ তাদের কাজ এগুলা করা।
রুহি:আচ্ছা স্যার আজকে আমি আসি তাহলে।
মেহের:আচ্ছা।

রুহি চলে আসে মেহেরের বাসা থেকে।

.
.
.
.
.
.
.
.
সারা দিনরাত প্রাপ্তির খেয়াল রেখে মুগ্ধ এখন বাসায় ফিরছে। রাস্তায় দিয়ে হেঁটে আসছে মুগ্ধ। আজকের আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা। কুয়াশা দিয়ে এখোনি সব ঢেকে যাচ্ছে। মুগ্ধ হাঁটছে আর ভাবছে সামনে কি করবে। অনার্স শেষ করে কোন দিকে যাবে। এসব ভাবার মাঝেই মুগ্ধের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো ভাড়ি কোনো বস্তুর বারি অনুভব করতে পারছে তার মাথায়। মুগ্ধ পিছনে ঘুরে দেখার আগেই সব ঝাপসা হয়ে আসে তার। খুব কষ্টে মুখ দিয়ে “ভাইয়া” শব্দটা করতেই মাটিতে লুটিয়ে পরে মুগ্ধ।

দেয়ালের মুগ্ধের ছবিটা হঠাৎ করেই পরে গেলো মাটিতে। মেহের বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চমকে গেলো ছবিটার পরে যাওয়া দেখে। মেহেরের মনটা কেন জানি খচখচ করছে আজকে। মেহের ফোন নিয়ে মুগ্ধের নাম্বারে ডায়েল করছে কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে। মেহেরের এখন চিন্তা লেগে গেলো। মেহের সোজা সাদাফের নাম্বারে ফোন লাগালো।
সাদাফ বসে আছে মেয়েকে নিয়ে এর মাঝে ফোন আসলো তার। সাদাফ ফোন হাতে নিয়ে দেখে মেহের ফোন করেছে। সাদাফ ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো,
সাদাফ:আসসালামু আলাইকুম।
মেহের:ওয়ালাইকুমুস সালাম।
সাদাফ:কি হয়েছে মেহের চিন্তিত লাগছে কেন তোমাকে?
মেহের:সাদাফ মুগ্ধ কি বেড়িয়েছে তোমাদের বাসা থেকে?
সাদাফ:হ্যাঁ মুগ্ধ চলে গেছে ২০মিনিট হয়েগেছে। কেনো কি হয়েছে?
মেহের:মুগ্ধ এখনো বাসায় আসেনি। ওর ফোন ও বন্ধ। ওর বাসায় আসতে এতো সময় লাগেনা কখোনো।
সাদাফ:কিহ!
মেহের:হ্যাঁ।
সাদাফ:তুমি তাহলে বাহিরে আসো আমিও আসতেছি ওকে খুঁজতে।
মেহের:আচ্ছা।
সাদাফ ফোন রেখে মায়ের কাছে প্রাপ্তিকে দিয়ে বেরিয়ে পরলো মুগ্ধকে খুঁজতে।

#চলবে🌸
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here