শেষ পাতার তুমি পর্ব ৯

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৯

রায়ান–আপনার এজ কতো??

আয়ানা ভ্রু কুঁচকে বলল–২০!!কেন??

রায়ান–এজন্য!!বন্ধুত্বের কোনো বয়স হয় না!!সবাই বন্ধু হতে পারে!!বন্ধুত্বের কোনো সীমাও হয় না!!অপরিসীম বিশ্বাসই এর ভীত!!

আয়ানা ভাবুক হয়ে বলল—এমন তো জানিই না আমি!!

রায়ান–পিচ্চি তো!!অনেক কিছুই জানেন না!!

আয়ানা চোখ গুটিগুটি করে তাকাতেই রায়ান চোখ বুজে নেয়!!

আয়ানা পাশে রাখা আরেকটা ছোট্ট বেডে বসে পড়ল!!

আচমকা মাথার চুলে টান পড়াতে রায়ানের ভাবনাতে ছেদ পড়ে!!

রায়ান উঠে বসে বলে–বরের এতো দারুণ চুল গুলো এমন করে টানছো কেন??

আয়ানা–অসহ্য!!একে তো কোলে শুয়েছেন তারওপর আবার কোমড় জড়িয়ে ধরছেন!!ঘুমিয়ে ও পড়ছেন!!

রায়ান–তো??

আয়ানা–সহ্য হয় না আমার এগুলো‌!!কষ্ট হচ্ছে থাকতে এখানে!!গরম লাগছে!!

রায়ান– শ্বশুড় বাড়ি আছো!!এখন একটু মানিয়ে নেও!!কয়েকদিন পর আমি এসি লাগিয়ে দিবো!!

আয়ানা–বাড়ি দিয়ে আসুন আমায়!!থাকবো না এখানে!!

রায়ান আয়ানাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলল–আরেকবার বলো!!

আয়ানা ছুটোছুটি করতে করতে বলল—বাড়ি যাবো!!

রায়ান আয়ানার নাকে কুট করে কামড় দিয়ে বলল–বাড়িতেই আছো!!মাঠে না!!

আয়ানা কিছু বলবে তার আগেই রায়ান আরেকটু চেপে বলল–থ্রিপিচ পড়লে কেন??শাড়িতে অনেকদিন দেখি না তোমায়!!

আয়ানা–ছাড়ুননন!!!আমি শাড়ি পরবো না!!

রায়ান–ওকে না পরো!!তোমাকে এমনিই ভালো লাগে!!

বলেই আয়ানাকে জড়িয়ে ধরল!!

আয়ানা ধাক্কাধাক্কি করলেও রায়ান একফোঁটা ও নড়ল না!!

ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে রায়ান আয়ানার কাঁধে দাঁত বসিয়ে দিল!!

আয়ানা এবার আরও বকতে শুরু করল!!

রায়ান–আরে আস্তে!!এতো খামচি দিচ্ছো কেন!!!

আয়ানা–বেয়াদব পুরুষ!!

বলেই ওয়াশরুমে চলে গেল!!রায়ান হাসতে হাসতে বিছানাতে বসে পড়ল!!

ফোন বাজাতে রায়ানের হাসির প্রকোপ থামল!!

রায়ান–বলুন মা!!

আয়ানার মা–আয়ু কেমন আছে বাবা?

রায়ান–ভালো আছে মা!!

আয়ানার মা–তুমি??

রায়ান–আর ভালো মা!!সব ঝামেলা না মিটলে আপনার মেয়েকে নিয়ে ভালো থাকি কেমনে বলুন!!!

আয়ানার মা–সব ঠিক হবে বাবা!!আল্লাহ ভরসা!!রাখছি বাবা!!

রায়ান–জি মা!!

ফোন রেখে রায়ান সটান হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানাতে!!

তার আর আয়ানার ছোট্ট মুহুর্তের কিছু কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল!!

অতীত,,

হাসপাতালে ৪ দিন থাকার পর রায়ানকে বাড়িতে আনা হয়!!

রায়ান আধশোয়া হয়ে বসে আছে আর আয়ানা চকলেট খাচ্ছে!!

রায়ান–আপনার পরীক্ষা কবে?

আয়ানা–২৫ তারিখ!!

রায়ান–ভালো করে পড়ুন!!

আয়ানা–পড়ব তবে আমার!!

অর্ধেক কথা বলেই কিছু একটা ভেবে থেমে গেল আয়ানা!!

রায়ান–কি আপনার??

আয়ানা হালকা হেসে বলল–থাক আমার বাবা আসলে বলব!!

রায়ান বুঝে নিল আয়ানা নিজের অভিমান থেকে কথা বলেছে!!

রায়ান একটু উঠে বসে বলল–সরি আয়ানা!!প্লিজ!!মাথা গরম ছিল!! ভুল কথা বলে ফেলেছি!!সরি!!আপনি বলুন কি লাগবে আপনার!!

আয়ানা মাথা নিচু করে বলল–কিছু লাগবে না!!

রায়ান–প্লিজ!!মাফ করে দিন!!প্লিজ!!

আয়ানা মাথা নিচু রেখেই বলল–আরে এতো মাফ চাইতে হবে না!!আপনার কথাতে আমি কিছু মনে করি নি!!আপনি তো সত্যি কথাই বলেছেন!!

রায়ান আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোন বেজে উঠল!!

নাবিলা কান্নাসুরে–রায়ান!!!

রায়ান–তুমি আবার কাঁদছো কেন??

নাবিলা–তুমি কেমনে পারলে??

রায়ানা একনজর আয়ানার দিকে তাকাতেই আয়ানা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল!!

রায়ান–তোমার দোষে!!সবসময় উল্টো জেদ করো!!বাবার সাথে বেয়াদবি করেছো!!কাউকে ভালোবাসলে তাকে সম্মান দিতে হয় নাবিলা!!তুমি মনে করে দেখো তো তোমার আর আমার রিলেশনে কোনোদিন সম্মান নামক জিনিসটা ছিল কিনা!!

নাবিলা ফুপিয়ে উঠে–রায়ান প্লিজ!!আম সরি!!

রায়ান–এই সরিটা বিনা দোষে ও আমি কতোবার বলেছি আজ বসে হিসেব করো!!সম্পর্কে ইগো থাকলে তার ভবিষ্যত থাকে না নাবিলা!!

নাবিলা–তারমানে কি তুমি আর আমায় ভালোবাসো না রায়ান??

রায়ান–অবশ্যই বাসি!!তুমি আমার ১ম ভালোবাসা!!যা কখনো ভুলতে পারব না!!তবে এমন কোনো কথা নেই যে ২য় বার ভালোবাসতে পারব না!!!

নাবিলা–প্লিজ রায়ান!!আমি একদম ভালো হয়ে যাবো!!একটু সময় দাও!!

রায়ান ফোন কেটে দিল!!!

কারণ নাবিলার একটু বোঝার দরকার!!

রায়ান শুয়ে পড়ল!!কোনোকিছুই তার ভালো লাগছে না,,দোটানায় ফেঁসে গিয়েছে মনে হচ্ছে!! একদিকে আয়ানার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারছে না!!অপরদিকে নাবিলাকেও ছাড়তে পারছে না!!!

আয়ানা খট করে ঘরে এসে বলল–নাবিলাপু কি এখনো রেগে আছে??

রায়ান চোখ খুলে গুটি করে তাকিয়ে কিছু না বলে

আবারও চোখ বুজে নিল!!

আয়ানা আঁতেলের মতো তাকিয়ে রইল!!

অপরদিকে,,

শান্ত –আয়ানার বিয়ে দিয়ে দিয়ছে এটা জানি কিন্তুু কার সাথে??

শান্তর বাবা—রেদোয়ান!! আব্রাহাম(আয়ানার বাবা)এর কোম্পানির কর্মচারীর ছেলের সাথে!!

শান্ত কপাল কুঁচকে মুখ বাকিয়ে বলল–লাইক সিরিয়াসলি!!!

শান্তর বাবা–হুমম!!

শান্ত মুখ বাকিয়ে বের হয়ে গেল!!

শান্ত ঘরে এসে বাকা হেসে বলল–ব্যাপার না আয়ু!!বি রেডি!!তুমি আমার অনেক বড় একটা ডিল!!১ সপ্তাহ ভালো থাকো!!তারপর তোমার জীবনে এমন মোড় আসবে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না!!

আয়ানা সোফাতে বসে আছে!!

রায়ান রেডি হচ্ছে!! আজ ৩ দিন পর তার চেকাপের ডেট!!

আয়ানা বিরক্ত হয়ে–উফফ!!মা ৫ বার ফোন করেছে ইতিমধ্যে!! আপনার এতো সময় কেন লাগে রেডি হতে??মেয়ে মানুষের মতো!!

রায়ান–আর ২ মিনিট প্লিজ!!

আয়ানা–এই ২ মিনিট লাস্ট ২০ মিনিট থেকে শুনছি!!

রায়ান–হয়ে গিয়েছে আসছি!!

আয়ানা-মনে হচ্ছে মেয়েদের মতো করে সাজছে!!এতো সময় লাগে!!

রায়ান–চলুন!!

রায়ান আর আয়ানা হাসপাতালে যাচ্ছে!!

ডাক্তার–মাথার সেলাইটা কাটা দিলাম!!হাতের এক্সরে লাগবে!!পা দিয়ে হাঁটতে পারছো তো??

রায়ান–হ্যাঁ বাট বেশি না!!

ডাক্তার–নো প্রবলেম ম্যান!!ইউ উইল বি ফাইন ছুন!!ওষুধ আগের মতোই চলবে!!

রায়ান–ওকে!!

রায়ান আর তার মা বেরিয়ে দেখল আয়ানা চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!

রায়ানের মা–কি হয়েছে রে মা??

আয়ানা–মামনি একটুও পরিষ্কার না এই জায়গাটা!!

রায়ান –সরকারি হাসপাতাল এমনই!!

রায়ানের মা–বাবু!!তুই আজ বৌমাকে নিয়ে একটু ঘুরে আয়!!

রায়ান–কই যাবো??

রায়ানের মা–এটাও আমি শিখিয়ে দিবো!!

রায়ান হেসে বলল–দোস্ত তো তুমি!!শিখিয়ে দিতেই পারো!!

রায়ানের মা রায়ানের কাঁধে চড় বসিয়ে বলল–বাদর!!

রায়ান আয়ানাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল হাসপাতাল থেকে!!

রায়ান–চলুন,,ওই সামনের দোকান থেকে নাস্তা করে আসি!!

আয়ানা উঁকি দিয়ে তাকিয়ে বলল–ওটা তো মিষ্টির দোকান!!!

রায়ান–হুমম!!ওখানে পরোটা,ভাজি খাবো!!আর শেষে মিষ্টি!!

আয়ান ফিসফিস করে–সিরিয়াসলি!!

রায়ান আর আয়ানা মিষ্টির দোকানের ভেতরে একটা ছোট্ট টেবিলে বসে আছে!!!

আয়ানা গুটিশুটি দিয়ে অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে!!!

এরই মধ্যে দোকানের একজন ভেজা কাপড় দিয়ে টেবিলটা চিপচিপে মুছে দিয়ে গিয়েছে!! টেবিলের ওপর ময়লা লেপ্টে থাকা ফ্যাকাশে লাল জগ!!আর হালকা ভেজা লবণভর্তি একটা কৌটা!!!!

ইতিমধ্যে একজন ছেলে ২ প্লেট পরোটা, ভাজি আর গরম ছানার রসগোল্লা দিয়ে গেল!!

রায়ান খাওয়া শুরু করে দিয়েছে!! আয়ানাকে বসে থাকতে দেখে বলল–খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে!!

আয়ানা হালকা হাতে রসগোল্লার বাটিটা কাছে টেনে নিল!!একটুকরো পরোটা ছেড়ে রসগোল্লার রসে ভিজিয়ে মুখে পুড়ে নিল!!

আরো কয়েকটুকরো খেয়ে দেখল তার বেশ ভালোই লাগছে!!এর মধ্যে আয়ানা রায়ানের জন্য রাখা রসগোল্লা ও খাওয়া শুরু করেছে!!

রায়ান হালকা হেসে দোকানের ছেলেটাকে আরও মিষ্টি দিতে বলল!!

ছেলেটা সামনে কালো চমচম রাখতেই আয়ানা বলল–আরে বাহ!!কালো মিষ্টি!!

ছেলেটা–আফা!!এইডা হইল ইসপেসাল চমচম!!

আয়ানা মুচকি হেসে চমচম টা তুলে মুখে নিল!!

রায়ান—খাবারটা কেমন??

আয়ানা–সেই মজা!!

রায়ান–চলুন আজ আরো মজার খাবার খাওয়াবো!!

#চলবে

১০৬৩ শব্দের পর্ব♥️😊

বিঃদ্রঃ আমার পরীক্ষা চলছে!!সবাই যদি ইনবক্সে এভাবে আমাকে বলেন তাহলে তো সমস্যা!!! আমার পরীক্ষা না শেষ হওয়া অবধি এমন সমস্যা হবে!!তার জন্য সরি!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here