শেষ বিকালের আলো
তানিশা আহমেদ
পর্ব ২৪
মেয়েকে নিয়ে একবার নিচে একবার উপরে ছুটছে সামান্য জায়গা খুজতে একটু ঘুম পাড়াবে।আজকে তৃষা থাকলে অবশ্যই এমন কিছু হত না। ইহানের সাথে দেখা হতেই ইহান বলল “কি ব্যপার রাতের ৩ টা বাজে আর তুমি ও কে নিয়ে এখানে ওখানে ঘুরছ কেন? ”
রুমাইসা চুপ করে রইল। মুখ টা কালো হয়ে আছে। রাগে এমনেই সারা গা কাঁপছে আবার ইহানের প্রশ্ন। ইহান আবার জিজ্ঞেস করল “কি হইসে বল না কেন? ”
রুমাইসা এবার নিজের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। “কি হবে আর? ওর মা থাকলে আজ এমন কিছু করত? নাতনী নাতনী বলে চিল্লায় সবাই অথচ সারা ঘরের এক ফোটা জায়গা রাখে নি যে মেয়েকে নিয়ে শুবো বা খাওয়াবো। আপনার বিশাল গুষ্ঠি তো পুরা বাড়ি দখল করে বসে আছে। আমি মেয়েকে নিয়ে কই বসব হ্যা? জানেন সন্ধ্যা থেকে একটু বসে খাওয়াতে পারছি না। আমার ও তো ক্লান্তি লাগছে। এভাবে নিয়ে বসে থাকা যায়। সবাই যেয়ে বিছানা পেতে শুয়ে আছে। নিজের ঘরে পর্যন্ত যাওয়ার যো নেই।”
এক রকম চেচিয়ে চেচিয়ে কথা গুলো বলল রুমাইসা। ইহান খুব কষ্টে প্রতিটা কথা সহ্য করল। এই মুহুর্তে ওর করার মত কিছুই নেই। কারণ বাসা ভর্তি সব মেহমান।কাকে বলবে উঠে যেতে। চুপচাপ ঠায় দাড়িয়ে রইল রুমাইসার সামনে। ইহান কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুমাইসা বলল “সরি, আসলে রাগ উঠে গিয়েছিল কি বলে ফেলেছি। ”
ইহান তবুও চুপ। মুখে যেন তালা লাগিয়ে আছে। রুমাইসা ওর এমন অবস্থা দেখে বলল “আপনি কি খুব রাগ করেছেন ইহান?
ইহান মাথা নিচু করে বলল ” আমি আসলে কোন মুখে উত্তর দিব নিজেও জানি না। শুধু এইটুক ই বলব শেষ বারের মত মানিয়ে নেও। আর এত মেহমান তো হচ্ছে না। সবাই সেটেল হয়ে গেছে। সরি। ”
রুমাইসার এই কথার পর কথা নেই আর। তাই চুপচাপ সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর ইহান বলল “রুমাইসা দাড়াও।”
রুমাইসা তখন দুই হাতের প্রচন্ড ব্যথায় দাঁত চেপে সহ্য করছিল। ডাক শুনে পেছনে ঘুরে তাকালো। ইহান এগিয়ে এসে হাত ধরে বলল “চল আমার সাথে। ”
রুমাইসা অবাক চোখে চেয়ে রইল। ব্যাপার টা বুঝল না, তবে প্রশ্ন করতেও ইচ্ছে করল না। বরং মনে হচ্ছিল লোক টা যদি এই আবছা আলোমাখা অন্ধকার এ কোথাও নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আসে তবেও যেন এ মনে শান্তি পাবে এখন। মন্ত্রমুগ্ধের মত একদিকে তাকিয়ে হাটতে লাগল রুমাইসা। হাত দুটো খালি ওর। ইহিতা এখন ইহানের কোলে। এক হাতে বাবু এক হাতে রুমাইসা। বাহ কি সুন্দর ভাবে লোকটা ম্যানেজ করে যাচ্ছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলল “আল্লাহ, এ জীবনে আমি হয়ত সব পাই নি, পাব না, পাওয়ার ইচ্ছাও নেই। কিন্তু যেই লোক টা সারাদিন আমাকে ভালো রাখতে ব্যস্ত, সেই লোক টা কে সারাজীবন ভালো রেখ তুমি। ”
সিড়ি পেরিয়ে মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখল ইহান গাড়ির চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলছে। রুমাইসা কৌতুহল হয়ে বলল “এত রাতে কই যাচ্ছি আমরা? ”
“ঘুমাতে যাচ্ছি। ”
রুমাইসা “হ্যা!! ” বলে খুব জোরে চেচিয়ে উঠল।
ইহান ওর কথায় খেয়াল না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসল ড্রাইভিং সিটে। রুমাইসা তখনো দাড়িয়ে আছে। ইহান গাড়িতে চাবি লাগিয়ে বলল “কি দাড়িয়ে থাকবা শুধু নাকি একটু ভেতরে এসে বসবা? ”
রুমাইসা গাড়ির সিটে বসতেই ইহান দরজা বন্ধ করে লক করে দিল। গাড়ি স্টার্ট দিতেই দারোয়ান এগিয়ে এসে বলল “বাবা কোথাও যাচ্ছো? ”
ইহান খুব অমায়িক ভাবে বলল “হ্যা কাকা। একটু বাইরে যাচ্ছি। বাবা জিজ্ঞেস করলে বইলেন। ”
এটা বলেই দুজন দুজনের দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বের হয়ে গেল। ইহান গাড়ি চালাচ্ছে আর রুমাইসা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছে কই যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কখন আসব, কি দরকার। ইহান এক সময় রাগ করে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল। তারপর গাড়িতে নীরবতা। রুমাইসা গাড়ির জানালার হালকা খোলা অংশ দিয়ে বাইরের নিকশ অন্ধকারের সৌন্দর্য দেখছে। কত মানুষ ফুটপাতে শুয়ে আছে। কত মানুষ এত রাতেও হাটছে রাস্তার মাঝে দিয়ে। বড় বড় কার্গো গাড়ি, ট্রাক আর বাস ছাড়া তেমন কিছুই নেই। বাইরে থেকে বাতাস আসছে অনেক। মেয়ের জন্য ভারী কিছু আনে নি। যদিও খুব আরাম লাগছে রুমাইসার তবুও মেয়ের জন্য জানালার কাচ বন্ধ করে দিল। মা হলে বুঝি এভাবেই সেক্রিফাইস করতে হয়। ইহান রুমাইসার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। রুমাইসা ও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। মুখে কপট রাগ।
“ইহিতা কে খাইয়ে দেও। এখন তো সুযোগ পাচ্ছো কেউ নেই। ”
রুমাইসা কপালে ভাজ ফেলে দিল এটা শুনে। খুব জোরে চেচিয়ে বলল “নেই মানে কি? আপনার নিজেকে কি নিজের কাছে মানুষ মনে হয় না? ”
“আরেহ ধ্যাত আমি তাই বলছি নাকি! আমি জাস্ট বললাম এখন তো জায়গা পেয়েছ খাওয়ানোর। খাইয়ে দেও ওকে। ”
“আমিও তাই বলছি জনাব।আপনার সামনে ওকে কিভাবে খাওয়াব। আপনি তো ছেলে মানুষ। ”
“কি আজব। আমি কি বাইরের মানুষ নাকি। তোমার হাজবেন্ড হই। আমার সামনে লজ্জা কি? ”
“এই যে দেখুন, আমাদের ওই রকম সম্পর্ক নাই। আপনি জানেন তো। ”
“ও মাই গড, তুমি এত কাহিনি প্যাচাতে পারো। মনে হচ্ছে আমার সামনে ও কে খাওয়াও না? ”
“আপনি সামনে থাকলে কোন দিন খাইয়ে দিয়েছি? ”
“রাতের বেলা, সকাল বেলা তখন কি তোমার বেডে ভূত ঘুমায়? ”
“হ্যা! তাহলে আপনি সব দেখে ফেলেছেন। হায় হায়। ”
ইহান রুমাইসার এমন চেহারা দেখে হাসি থামাতে পারল না। মেয়েটা আসলেই পাগল আর কিছু না। সামান্য এইটুক মজা ও বুঝে না। এমন সময় ইহিতা হাত পা নেড়ে উপরের দিকে চেয়ে রইল।বারবার হাত মুখে দিচ্ছে।
রুমাইসা ইহানের দিকে তাকিয়ে অভিমানী স্বরে বলল “শুনেন এইদিকে একটুও তাকাবেন না। আমি মেয়ে কে খাওয়াব। আর না হয় আমাকে পেছনে পাঠিয়ে দিন।”
ইহান কেবল হাসল আর কিছু না। রুমাইসা বারবার আড়চোখে দেখছিল ইহান তাকায় কিনা। অথচ ইহানের চোখ একটি বারের জন্য এদিকে আসে নি। রুমাইসা ইহানের দিকে শেষ বার যখন তাকাল চোখ সরাতে পারল না।কিছু একটা জিনিস চুম্বক এর মত ওর দিকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু তারপর ও মনে হয় ওদের মাঝের হাজার টা কিছু পেরিয়ে কাছে যেতে হবে। তারচেয়ে বরং এ দূরত্ব টা সুন্দর।
ভাবতে ভাবতেই রুমাইসা হেসে দিল। ইহান ও হাসছে তবে কেন সেটা রুমাইসার জানা নেই। তবে কিছু প্রশ্ন না করাই উত্তম। চোখ টা বন্ধ করে ফেলল সিটে হেলান দিয়ে। ঘুমের অতলে তলিয়ে গেল মা মেয়ে। আর তাদের পাহাড়ায় রইল ইহান। গাড়ির হর্নে রুমাইসার চোখ খুলল। খুলে ও যেন খুলতে ইচ্ছে করছিল না। তাকিয়ে দেখল ওরা বাড়ির গেটের সামনে গাড়িতে বসে আছে। রোদের প্রখর আলোতে চারিদিক আলোকিত হয়ে গেছে। ইহান তখনো পাশে বসে আছে আর বেল্ট দিয়ে ইহিতা ওর কোলে বাধা। রুমাইসার ঘুম পালিয়ে গেল সাথে সাথে। গেট খুলতেই গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকে পার্কিং করে রাখল ইহান। রুমাইসা নেমেই জিজ্ঞেস করল “আপনি কি সারারাত ড্রাইভিং করেছেন? ”
ইহান কোন জবাব দিল না। গম্ভীর হয়ে আছে। ইহিতা কে কোলে দিয়ে আগে আগে হাটতে লাগল। রুমাইসা শাড়ি পড়ে এক রকম দৌড়াচ্ছে ওর পিছু পিছু উত্তর জানতে। কিন্তু দুই তলা উঠতেই দেখা হল শ্বশুর এর সাথে।শ্বশুর প্রশ্ন করল “এত সকালে দুজন কোথা থেকে আসল? ”
ইহান জবাব দিল “একটু দরকারে বের হয়েছিলাম বাবা। ”
উনি আর প্রশ্ন করলেন না এড়িয়ে গেল দুজন দুজন কে। উপরে আসতেই দেখল সবাই ঘুম থেকে উঠে খোশ গল্পে মেতে উঠেছে। নাসিমা বেগম দেখেই উচ্চ স্বরে বলল “কই গিয়েছিলি তোরা? আমি দেখি খুজছিলাম? ”
ইহান আবার জবাব দিল। “আমার একটা কাজ ছিল। তাই রুমাইসা কে নিয়ে গেছি। ”
সবার মাঝে যেন হাসির রোল পড়ে গেল এটা শুনে। নানাজন নানা কথা বলছিল দুজনকে। লজ্জায় লাল হয়ে উঠছিল দুজনেই৷ ইহান জমায়েত ত্যাগ করে রুমে গেল। কিন্তু রুমাইসা বউ মানুষ । দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব হজম করতে হল।
দুপুর দুটায় মেহমান আসতে শুরু করল। রুমাইসার আজ ও বাজে অবস্থা। এদিক ওই দিক দৌড়াচ্ছে, আবার মেয়ে কারো কাছে যায় না। পাগলের মত লাগছে। রেডিও হতে পারছে না। ইহানের দেখা নেই একদম। কাজে ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ইহান এবার পছন্দ করে শাড়ি কিনে দিয়েছে ও কে বিয়েতে পড়তে। আবার লেহেঙ্গা ও দিয়েছে। যেটাই পড়ুক, রেডি হতে হলে ইহিতা কে তো কেউ ধরবে। না, তা তো কেউ করবেই না। উল্টো এটা দাও, সেটা আনো, এটা কই। বিরক্ত হয়ে রুমাইসা দরজা আটকে বসে রইল। বাড়ির একমাত্র বউ বলেই যেন খাটিয়ে মারছে এই বিয়েতে। মেয়েকে কাপড় পড়িয়ে নিজে লেহেঙ্গা পড়ে রেডি হল। বের হতেই সামনে পড়ল অভির। অভি হা করে চেয়ে রইল ওর দিকে। রুমাইসার খুব অস্বস্তি লাগছিল। সরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অভি ওর হাত ধরে ফেলল।
রুমাইসা বড় বড় চোখ করে চাইল। অভি মাতালের মত বলতে শুরু করল। “রুমাইসা, আমি আবার তোমার প্রেমে পড়েছি। চল না আমরা আবার ঘর বাধি।আমি, তুমি আর বাবু। ”
রুমাইসা এটা শুনে রেগে গেল। তবুও সংযত থেকে বলল “দেখুন, আমি আপনার ভাইয়ের স্ত্রী। তাই সম্মান দিয়ে কথা বলুন। আমি ব্যস্ত ক্ষমা করবেন ভাইয়া। ”
রুমাইসা মেয়েকে নিয়ে চলে আসল ঠিক ই কিন্তু শ্বাশুড়ি কোন ভাবে যাওয়ার সময় সাহিল আর রুমাইসার কথা টা শুনে ফেলল। ওনার বুক কেঁপে উঠল এটা শুনে।চোখ মুখ অন্ধকার হচ্ছিল এটা কি শুনল উনি।সাহিল দেয়ালে একটা ঘুষি মারল জোরে। কেন যেন রুমাইসা কে পাওয়ার জেদ ও কে চেপে বসছে।
রুমাইসা বাইরে এসে ইহান কে পেল। মেহমান দের খাওয়াতে ব্যস্ত ও। অথচ সাহিল যেয়ে ঘুরাঘুরি করছে। বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন ভুলে গেছে।
বর যাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে। তারা নাকি প্রায় পৌঁছে গেছে। সবাই ব্যবস্থা করার জন্য এগিয়ে গেল। রুমাইসা আর ইহান পেছনে দাড়ানো। বাকিরা বর কে ফিতা কেটে ভেতরে আনবে তাই সামনে লাইন ধরে আছে। ইহান আর রুমাইসা পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে । ইহান একটু নিচু হয়ে বলল “ম্যাডাম আজ আপনি কোথাও লুকিয়ে যান। ”
রুমাইসা চোখ তুলে বলল “কেন? ”
“যেই সুন্দর লাগছে। না জানি আজ ওই বরপক্ষের কেউ আপনাকে সাথে তুলে নিয়ে যায়। পরে বোন আর বউ একসাথে বিদায় দিতে হবে।”
“আচ্ছা তাই বুঝি! তাহলে ভালো দেখে একটা ছেলে দেখি। কার সাথে যাওয়া যায়। ”
“খুজব নাকি আমি? ”
“খুঁজে দেখুন। যদি ক্রাশ খাওয়ার মত হয় তাহলে কিন্তু চলে যাব। ”
“তখন আমার কি হবে ম্যাডাম! তারচেয়ে আপনি আমার জন্য ও একটা মেয়ে দেখুন। দুজন এক বাড়িতেই যাতে যেতে পারি। ”
রুমাইসা হেসে দিল ইহানের কথা শুনে। ইহান আবার ইহিতাকে দেখে বলল “আম্মু বল না তোমার মা কে, আমার জন্য কাউকে খুঁজতে। সে হলেও চলবে। একা একা ভালো লাগে না। ”
ফিতা কেটে ভেতরে ঢুকতেই সবাই দুই পাশে সরে গেল।বর পক্ষের সবাই ঢুকছে ভেতরে। ইহান রুমাইসা বর কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সামনে গেল। বরের নাম মিহাদ। মিহাদ ইহান কে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল। রুমাইসা আর বাবুকে দেখেও কথা বলল। ইহান আর রুমাইসা বরযাত্রী কে নিয়ে বসালো। মিহাদ আর সাইয়ারা স্টেজে বসল। বাকিদের টেবিলে বসিয়ে দিল। ইহান আপ্যায়ন করছে সাথে রুমাইসাও। এমন সময় একটা মেয়ে পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল “এক্সকিউজ মি, আপনাদের ওয়াশরুম টা কোথায় বলবেন? আমার বাবু কে একটু নিয়ে যাব ইমার্জেন্সি। ”
ইহান পেছনে ঘুরে তাকাতেই ওর দম বন্ধ হয়ে গেল। সামনের মেয়েটাও থমকে গেল। ইহানের মুখ থেকে বের হল “রুহি “।
রুহির অন্তরআত্মা এই নামে কেঁপে উঠল। ইহানের পাশেই ছিল রুমাইসা। ও রুহি নাম শুনেই পেছনে ঘুরল। বুক টা ধক করে উঠল।মনে হল এইমাত্র কিছু হারাতে যাচ্ছে।
শেষ বিকালের আলো
তানিশা আহমেদ
পর্ব ২৫
রুহির গলা শুকিয়ে গেছে নিজের প্রাক্তন কে সামনে দেখে। আর ইহানের যেন শরীরে এক বিন্দু শক্তি নেই ওর সেই পুরোনো ভালোবাসা কে আলিঙ্গন করবে। এমন সময় পাশে দাড়ানো ৪/৫ বছরের একটা বাচ্চা বলল “মাম্মা শুশু দিব। ”
রুহির ধ্যান ভাঙল। ও আবার জিজ্ঞেস করল “ওয়াশরুম টা কই বলবেন? ”
এমন সময় সাহস করে রুমাইসা এগিয়ে আসল। “রুহি আপু, কেমন আছো?”
রুহি ভূত দেখার মত চমকে উঠে বলল “রুমাইসা তুই এখানে? ”
রুমাইসা একবার ইহানের দিকে তাকাল। ইহান তো একদম নড়াচড়া করার কথা ভুলেই গেছে। এক মনে দেখেছে রুহি কে। বড্ড অবাক ও হচ্ছে।
রুমাইসা হেসে বলল “আমার শ্বশুর বাড়ি তো। ননদের বিয়ে। তুমি বরপক্ষের কে আপু? ”
রুহি একটু হাসি টেনে বলল “আমি মিহাদের বোনের জা হই। পাশাপাশি ই তো বাসা আমাদের প্রায়। ”
এমন সময় রুহির বাচ্চা আবার বলল “মাম্মাম৷ শুশু পড়ে গেল। ”
“রুমু রে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে চল না প্লিজ।দেখছিস ই তো। ”
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে ছেলেকে নিয়ে বের হল রুহি। রুম টা ইহান আর রুমাইসার সেটা রুমাইসা এতক্ষনে বলে দিয়েছে। রুহি রুমের চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে। রুমাইসার এদিকে সারাটা শরীরে যেন আগুন জ্বলছে। না রুহির কারণে না বরং ইহান কে হারানোর ভয় টা প্রচন্ড ভাবে আঘাত করছে ও কে। সাপের মত বারবার সারা গায়ে ধংশন করছে।
রুহি আর রুমাইসা বসে বসে অনেক সময় নিয়ে গল্প করল।রুহির বিয়ে হয়েছে আজ ৬ বছর। ৪ বছরের ছেলে ওর। নাম আরাফ। রুমাইসার কোলের মেয়ে দেখে রুহি ভেবেই নিল ইহানের মেয়ে। আর জিজ্ঞেস করল না।কোলেও নিল মেয়েকে। রুহির কষ্ট লাগছে কিছুটা। এই জায়গা টা, এই বিছানা টা, এই সন্তান টা তো ওর প্রাপ্য ছিল যদি না ওর অন্য কারো সাথে বিয়ে হত সেদিন। পরিবারের কাছে ভালোবাসার বলি দিয়েছিল সেদিন। তবে ওর কোন কিছুর কমতি নেই। ভালোবাসা কিংবা আর্থিক শান্তি সব টাই ওর আছে। তাই ইহান এর কথা এক রকম ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু আজ যেন আবার পুরানো ঘায়ে দাগ পড়ল ইহান কে দেখে।
রুমাইসা রুহি কে নিয়ে বাইরে আসল। ইহান মুখে চিন্তার ছাপ ফেলে কাজ করছিল। দুজনেই এসে একসাথে দাড়ালো ইহানের পেছনে। রুমাইসা ইহান বলে ডাক দিল। ইহান পেছনে ফিরে দেখল রুহি গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছে। আজো কপালে শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে টিপ পড়া টা ছাড়ে নি। চুল গুলো কে এখনো কোথাও গেলে ছেড়ে যায় বোধ হয়। কাজল টানা চোখ দুটো দেখে ইহানের ভেতরের কষ্ট টা গুমরে উঠছে।
“ইহান আমার মামাতো বোন। জানেন ই তো আমার নানাবাড়ির সাথে সম্পর্ক রাখা হয় নি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচয় ছিল। ”
রুহি সালাম দিল ইহান কে।ইহান ও জবাব নিল। ইহান জিজ্ঞেস করল আগে “কেমন আছেন? ”
রুহি ওর দিকে চেয়েই বলল “ভালো আছি। আপনি? ”
“ভালো। ” ইহানের ছোট জবাব।
রুমাইসা পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে চলে গেল। সবাই এখন খাওয়া শেষ এ ছবি তুলতে ব্যস্ত। আর রুমাইসা জামাই বউ কে খাওয়াতে ব্যস্ত। ইহান আর রুহি কিছুটা দূরে একটা চেয়ারে পাশাপাশি বসে দূর থেকে তা দেখছে। দুজনের মনে উত্তাল ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
ইহান ই শুরু করল আগে।”মিহাদ কি হয় আপনার? ”
“আমার দেবরের শালা হয়। মানে আমি মৃত্তিকার জা হই। ”
ইহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পৃথিবী গোল, তাই ঘুরে ফিরে চেনা পরিচিত মানুষ গুলোর সাথে দেখা হয়েই যায়।রুহি জিজ্ঞেস করল এবার “এখনো সিগারেট খাও বুঝি? ”
ইহান চুপ করে রইল। রুহি ইহানের দিকে মুখ করে বলল “বলেছিলাম না খেতে না, তাও খাও কেন? ”
ইহান বিষন্ন মুখে জবাব দিল “যে খেতে শিখিয়েছে, সে না করলেও এখন খেতে হবে। সে ছেড়ে গেছে৷ সিগারেট ছাড়ে নি। চলছে যখন চলুক।”
“রুমাইসা কিছু বলে না তোমাকে? ”
“আমি যার কথা শুনতাম সে ই যখন চলে গেছে, আমি আর কারো কথা শুনব না সেটাই লাইফে সেদিন ডিসাইড করেছি। ”
“ইহান তুমি তো পরিস্থিতি জানতে।তুমি তখন পড়াশোনা করতে। আমাদের কারোর বাসায় ই রাজী ছিল না কেউ। তাহলে কিভাবে সব টা হত বল? ”
“আমি কি তোমায় দোষ দিয়েছি রুহি? না বলছি বিয়ে করে পাপ করেছ? তোমার পরিবার কে খুশি করেছ সেটা তোমার ব্যাপার । এখন পুরোনো কথা ঘেটে কি লাভ? সেদিন হয়ত অনেক কিছুই সম্ভব ছিল আবার অনেক কিছুই না। আমার দিক থেকে আমার কাছে উপায় ছিল, তোমার দিক থেকে ছিল না। সো সিম্পল, এটা কে কমপ্লেক্স করে লাভ নেই।”
রুহি চুপ করে রইল। ইহান ও চুপচাপ বসে আছে। রুহির ছেলেটা সামনে খেলছে। ইহান দেখছে এক দৃষ্টিতে।
“এখনো আমায় ভালোবাসো ইহান? ”
ইহান হাসল। উত্তর দিল না তখন। রুহি উত্তরের আশায় চেয়ে রইল। আবার জিজ্ঞেস করল প্রশ্ন টা।
ইহান ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে চোখে চোখ রেখে বলল “ভালোবাসলে কি তুমি আমার হবে? ”
উত্তর শুনে রুহির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মুখে যেন এক বিন্দু রক্ত ও নেই। ইহান উত্তরের আশায় আবার বলল “কি হল জবাব দেও? ”
রুহি মাথা নাড়িয়ে বলল “নাহ, আমি বিবাহিত আমার সন্তান আছে।”
“সেটাই, তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা সেটা এখন আর যাচাই করে লাভ নেই। নিজের সংসার, বাচ্চা নিয়ে সুখে থাকো। আমি আমার জায়গায় ভালো আছি।”
রুহি মুখের উপর যেন চড় খেল এই কথা শুনে। তাও কেন যেন ওর মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরছে।
“তুমি তো আমায় পাগলের মত ভালোবাসতে। বলেছিলে আমায় ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না।তাহলে আজ রুমাইসা কে নাকি নিজের পছন্দে বিয়ে করে আবার সংসার ও করছ। তুমি নিজের কথাও তো রাখতে পারো নি ইহান। ”
ইহান খুব শান্ত গলায় বলল “রুহি তোমার হিংসেমির অভ্যাস আমাকে নিয়ে এখনো গেল না তাই না? ”
রুহি আশেপাশে তাকাতে লাগল। যেন কথা টা শুনে ই নি।
“তুমি আমাকে বলেছিলে আমায় ছাড়া কারো হবে না। কই দিব্যি তো আমায় ছেড়ে সুখে আছো। ৬ বছরের বিয়ে, বাচ্চা, সুখী সংসার । আমার কথা তো ভাবো নি। আজ আমি সুখে আছি না, প্রেম করেছি সেটা ভেবে কি লাভ? ”
রুহি নিজের ঠোঁট কে দাত দিয়ে আকড়ে ধরল। এই ইহান এক সময় ওর ভালোবাসায় পাগল ছিল। আর আজ কিভাবে কথা বলছে। কেন যেন রুমাইসার উপর রাগ হচ্ছে। মেয়েটা কি জাদু করেছে ও কে যে এভাবে কথা বলছে আজ ইহান। এমন সময় ওর বাচ্চা এসে বলল “মাম্মা, বাসায় যাব কখন? ভালো লাগছে না আর। ”
রুহির মাথায় কি যেন হল। ও চটপট ইহান কে বলে বসল “আমাদের বাসায় দিয়ে আসবে একটু ? সবার তো যেতে দেরী হবে।বাইকে করে তোমার দিয়ে আসবে একটু? ”
ইহান রুহির দিকে তাকাল। মনে মনে চিন্তা করল “কিছু মানুষের স্বভাব পাল্টাবে না কোন দিন।”
ইহান উঠে বলল “আপনি বর পক্ষের লোক। আপনাকে খাতির যত্ন করা আমার দায়িত্ব।কিন্তু আপনাকে যেহেতু আমি এ বাড়িতে আনি নি তাই বাসায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব টাও আমার না। দুঃখিত মাফ করবেন।”
ইহান কথা বলার কিংবা শুনার কোন অবস্থা রাখল না আর। দ্রুত সেখান থেকে মেহমান দের দিকে এগিয়ে গেল। রুমাইসা দূর থেকে চোখে চোখে সবটা দেখেছিল। কিন্তু কোন কথা শুনে নি। ভেতর টা গুমোট বেধে যাচ্ছে দুজনকে দেখে।শত হোক স্বামীর কাছে অন্য মেয়ে দুনিয়ার কেউ ই সহ্য করতে পারে না।
সারাটা দিন যেই সেই করে পাড় হল। সাইয়ারা কে বিদায় দিয়েছে ঘন্টাখানেক আগেই। শ্বাশুড়ি মন খারাপ করে বসে আছে। রুমাইসা দুই হাতে দৌড়ে দৌড়ে সব করছে। বসার সুযোগ নেই। মেয়ে নানীর কোলে শুয়ে আছে। ডাইনিং রুমে গল্পের আসর জমে আছে। ইহানের মন টা আজ ঘন অন্ধকার জমে থমকে আছে। অতীত সামনে আসলে বুঝি এমন ই হয়। রুহির সারাদিন এর ঝামেলার সাথে সন্ধ্যার পর নতুন ঝামেলা যোগ হল জুই। মেয়েটা একা পেলেই ও কে কথা শুনাতে চাইছে। কিন্তু রুমাইসা এড়িয়ে যাচ্ছে। তার উপর সাহিল তো আছেই। মোট কথা রুমাইসার মনে হচ্ছে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ঢুকে যাচ্ছে ও। পারছে না আর এসব সহ্য করতে।
সপ্তাহ খানেক কাটল রুমাইসার শরীর ঠিক হতে। বিয়ের প্রোগ্রামের পর একদম শরীর ভেঙে পড়েছিল। ইহান পাশে না থাকলে আরো পড়ে থাকত। লোকটা এই কয়দিন ও কে এত সেবা করেছে যে রুমাইসা আগের মত শক্তি, মনোবল খুঁজে পেয়েছে আবার। কিন্তু আজ কাল ইহান রাতে ঘুমায় না। রুমাইসার ঘুম ভাঙলে প্রায় ই ইহান কে বারান্দায় সিগারেট খাওয়া অবস্থায় পায়। অতীতের স্মৃতি যে কতটা ভয়ানক রুমাইসা জানে। কিন্তু ইহান কে একটুও বুঝতে দেয় নি ও কিছু জানে। ওর মনে হল ইহান কে কিছুটা স্পেস দেওয়া উচিত। মাঝে মাঝে , মানুষের খারাপ সময় গুলোতে পাশে দূর থেকে দাড়ানো যায় তাকে কিছুটা স্পেস দিয়ে।হুট করে লাইফে এসে ঢুকতে চাইলে সে হয়ত সেভাবে নিতে না ও পারে ব্যাপার টা। এতে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ে।
একদিন সন্ধ্যায় সব কাজ সেরে রুমাইসা বাবু কে শুইয়ে ডায়েরি টা বের করল পড়ার জন্য। ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে প্রতিদিনের গল্প গুলো পড়ছিল। কত খুনশুটি ভালোবাসার গল্প। কিন্তু কিছু পেজ পড়েই হঠাৎ একটা পেজ সামনে এল। সেখানে লিখা “আজ রুহি আমার সাথে চিট করেছে। আজ আমি ওকে একটা ছেলের সাথে কথা বলা অবস্থায় হাতে নাতে ধরেছি। আর এটা যেই সেই কথা ছিল না। ও ছেলেটার হাত ধরে বসে ছিল। ছেলেটার নাম নাকি জাবির। আমার বন্ধু বলল। ”
রুমাইসার চোখ আকাশে উঠল। জাবির তো রুহির বর্তমান হাজবেন্ড এর নাম। রুমাইসার গলা শুকিয়ে গেল। আবার পড়া শুরু করল পরের পেজ। প্রায় ২০ দিন পরের লেখা। কিন্তু পেজের উপর রক্তের দাগ অনেক।
“আমি ভুল ছিলাম। সেটা রুহির কিছু ছিল না। ওর বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড ছিল জাবির। জাবির যে ওর বান্ধবী কে ধোঁকা দিচ্ছিল তার প্রমান করতেই আমার জান পাখি টা এত কিছু করেছে। অথচ আমি অকারনেই সন্দেহ করলাম। জান পাখি জানো এখন আমি হাত কে ইচ্ছা মত ব্যথা দিচ্ছি। এই যে রক্তের দাগ লাগিয়ে রাখলাম।”
রুমাইসা যত আগাচ্ছিল তত ভয় পাচ্ছিল। এর পর আর কোন কিছু লেখা নাই অন্য রকম। তবে ভালোবাসার মুহুর্ত গুলো খুব সুন্দর করে ইহান ডায়েরি তে বন্দি করেছে। ডায়েরি টা শেষ । পরের ডায়েরি টা খুলতেই দেখল ইহান আর রুহির ছবি। খুব সুন্দর লাগছিল ইহান আর রুহি কে তখন। বাট এখন ইহান কে আরো ভালো লাগে। আবার প্রতিদিন এর দুষ্ট মিষ্টি প্রেমের গল্প। কয়েক পেজ নেই। আবার লিখা শুরু।
“আজ রুহি বলল ওর বাসায় আমাকে মানছে না কেউ। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি পালিয়ে যেতে বললাম। কিন্তু রুহি ওর পরিবার কে কষ্ট দিবে না। আমি কতবার বললাম কিন্তু কেউ শুনে নি। বাবা মায়ের কাছেও বললাম। কিন্তু বাবার এক কথা আমায় এখন বিয়ে করাতে পারবে না। সাহিল ভাই ও রাজী না। আমি এই পরিবারে থাকব না। ”
আবার এক মাস পরের লেখা।
“রুহির কাল বিয়ে। রবিন নামের কোন ছেলের সাথে যেন বিয়ে। রুহি আজ অনেক কান্না করল। কিন্তু ফ্যামিলি কে কষ্ট দিয়ে আমার কাছে আসবে না। আমিও আর ফেরাই নি। ও সুখে থাকুক। আজ থেকে আমি যেন প্রতি রাতে মরন যন্ত্রনায় জ্বলি। কারন আমি ভালোবাসার মত পাপ করেছিলাম। শাস্তি আমায় পেতেই হবে। তবে আমি আমার ভাই কে কোন দিন মাফ করব না। বাবাকে আমার বিরুদ্ধে বুঝিয়েছে সে ই। সে চায় না , তার আগে আমি কিছু করি লাইফে। ভাইয়া আমিও একদিন এটার শোধ তুলব। ”
আবার ৪ মাস পরের লিখা।
“জানো রুহি, এখন তুমি না থাকলেও সিগারেট আমার কাছে আছে। প্রতি দিন ১০/২০ বক্স সিগারেট খাই আর ঘুমের ওষুধ । মাথা যেন কেমম ভো ভো করে সারাদিন। চারিদিকে তোমাকে দেখি। তাই আজ ২ মাস ঘরের বাইরে বের হই না। তুমি কি সুখে আছো রুহি? আমায় একবার কল ও দিলে না।সম্পর্ক টা কি তোমার কবুল বলার সাথে সাথেই ভুলে গেলে। আমি খুব কষ্ট পাই রুহি। আমার হাত এ অজস্র দাগ পড়ে গেছে তোমার নামের। আমার তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করে রুহি। একবার ফিরে আসো রুহি।”
লেখার কালি গুলো কেমন যেন ছড়িয়ে গেছে। আর পেজ টার নিচের অংশ পুড়ে গেছে। সম্ভবত সিগারেট এ পুড়িয়ে দিয়েছে।
আবার ১ বছর পরের লেখা।
“অনেক চিন্তা করলাম রুহি। প্রতিটা মানুষ কে এগিয়ে যেতে হয়। প্রিয় মানুষ টা মনের কোনে বুঝি সারাজীবন ই থেকে যায়। আর তাই নিয়েই দিনের পর দিন এই পৃথিবীর লাখো কোটি মানুষ চলছে প্রতি নিয়ত। আমিও আজ মুভ করলাম। সবকিছু তে আগের মত মন দিচ্ছি। তবে তোমার স্মৃতি থাকলে আমি আগাতে পারব না। তাই আজকের পর আর কিছুই এই ডায়েরি তে লেখা হবে না । ফেলে দিলাম তোমায় এক কোনে। তুমি অযতনে ময়লা ধূলা পড়ে বেচে থাকো আমার ভালোবাসায়। তবে কখনো আবার যদি থেমে যাই কিংবা তোমাকে আমার কাছে পাই তবে তোমার ভালোবাসার উপরের ধূলা বালি মুছে আবার সেটাকে ঝকঝকে করে ফেলব। ডায়েরির উপর হয়ত ময়লা পড়ে থাকবে। কিন্তু আমার ভালোবাসাটার উপর সব সময় আমি মখমলের আস্তরন দিয়ে, বুকের গভীরে ঢেকে রাখব।ভালো থেকো প্রিয়। ছোট এই পৃথিবীর কোন এক কোনে হয়তবা আবার দেখা হয়ে যাবে প্রথম দিনের মত কিন্তু সেদিন তুমি আমি আর সবকিছু অন্য রকম থাকবে। ”
ডায়েরি টা বন্ধ করে রুমাইসা স্তব্ধ হয়ে গেল। ভালোবাসা টা এত গভীর হয় সে জানে কিন্তু এত বেশি ভাগ্যবতী বা কয়জন হয় যাকে একটা মানুষ বছরের পর বছর দূর থেকে ই ভালোবেসে মনের অন্তস্থলে লুকিয়ে রাখে।রুমাইসা ভাবনার দুনিয়ায় ব্যস্ত ছিল কখন যে ইহান রুমে চলে আসল ও নিজেও জানে না।
ইহান এসেই ছো মেরে ডায়েরি গুলো নিয়ে নিল। রুমাইসা হকচকিয়ে দাড়িয়ে গেল সাথে সাথে। ভয়ে আত্মা আর সাথে নেই। ইহানের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। গা থেকে প্রচন্ড সিগারেট এর গন্ধ আসছে। আর চোখ দুটো যেন লাল হয়ে আছে। ইহান প্রশ্ন করল “এই ডায়েরি কই পেলে? ”
রুমাইসা চুপ করে রইল। ইহান খুব জোরে এক ধমক দিয়ে বলল “উত্তর দিতে বলছি। ”
রুমাইসা থতমত খেয়ে উত্তর দিল “আলমারির উপর থেকে বই খাতা গুছাতে গিয়ে। ”
“ভেতরে পড়েছ সব? ”
“জ্বি। ”
“কে অধিকার দিয়েছে পড়ার? কার অনুমতি নিয়েছ? ”
রুমাইসা এটার জবাব দিতে পারল না। কিন্তু ইহান আবার ধমক দিয়ে কথাটা পুনরায় জিজ্ঞেস করল।
রুমাইসা ভয়ে ভয়ে বলল “পেয়েছিলাম তাই পড়েছি। সমস্যা কি? ”
ইহান রুমাইসা কে খুব জোরে একটা চড় মেরে দিল এটা শুনে। রুমাইসা স্তব্ধ হয়ে গেল। মাথা তুলে তাকাতে পারছিল না।ইহান রাগে কাপঁছিল রীতিমতো।
“আমার জিনিস আমার পারমিশন ছাড়া পড়েছ আবার বলছ সমস্যা কই? লিমিটে থেক রুমাইসা। বিয়ে করেছি মানে আমার উপর অধিকার দেখাবে আর নিজের অধিকার আদায় করতে চাইবে সে চেষ্টা কর না। তোমার মেয়ের জন্য তোমাকে আমি বিয়ে করেছি। যেহেতু মেয়ে নাই তাই অযথা আমার কাছাকাছি থাকার চেষ্টাই কর না। ডিসটেন্স মেইনটেইন করবে এখন থেকে। ”
রুমাইসার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। গালের থাপ্পড় আর কথার ধার দুটোই কাটার মত বুকটায় বিধছে। সুখ বুঝি এ যাত্রায় কপালে নেই ওর।