শেষ বিকালের আলো
তানিশা আহমেদ
পর্ব ২৮
রুমাইসার মাথায় প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে। এত জোরে সাহিল চুল টেনে ধরেছে সহ্য করতে পারছে না।নাসিমা বেগম এসব গালি গালাজ আর কথা শুনে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কিছু বলতে চাইছে। রুমাইসা শ্বাশুড়ির দিকে তাকাল। শ্বাশুড়ি স্ট্রক করছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। রুমাইসা সাহিল কে আকুতি মিনতি করে বলছে, ‘দয়া করে ছেড়ে দেও আমাকে৷ আম্মা স্ট্রক করছে। ‘
ততক্ষনে সুস্থ নাসিমা বেগম মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। সাহিল রুমাইসা এক রকম টেনেই নাসিমা বেগমের শরীরের উপর দিয়েই রুমাইসা কে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সাহিল। রুমাইসা কে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে দরজার বাইরে অনেক মানুষের চিৎকার চেচামেচি শুনা যাচ্ছে। আশেপাশের, উপরে নিচের সবাই চলে এসেছে ওদের চিৎকার শুনে। সবাই দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। সাহিল রুমাইসা কে টানছে আর গালিগালাজ করছে। মিলি বাচ্চা কে নিয়ে রুমের ভেতর ভয়ে কাপঁছে। এমন দৃশ্য আগে কোন দিন চোখে দেখি নি। টিভি সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখেছে কিন্তু একজন নেশাখোর যে কেমন করতে পারে আজ স্ব চক্ষে সেটা দেখছে। সাহিল মিলির রুম টা ক্রস করে সামনে আগাতেই মিলি এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে মেইন গেট খুলে দিল। বাহির থেকে হুড়মুড় করে সবাই ভেতরে ঢুকল। কি হয়েছে কি হয়েছে বলে সবাই চেচামেচি করতে লাগল। রুমাইসা তখনো বাইরে চেচাচ্ছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আর এক পা আগালেই রুমের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে সাহিল। রুমাইসা হাত জোড় করে সবার কাছে বিনতি করছে সাহায্য করতে। মিলি ই এবার সাহস করে বাচ্চা কে একজনের কাছে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে আসল। সাহিল রুমাইসা কে ভেতরে নিয়ে দরজা আটকাতে যাবে আর মিলি এসে বটি দিয়ে সাহিলের হাতে এক কোপ দিল।
ঘটনাটা এতটাই আকষ্মিক ছিল যে দাড়ানো সবাই হা করে রইল। রুমাইসা সাহিল কে রুমের ভেতর ধাক্কা দিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকে দিল। নাসিমা বেগমের তখন জ্ঞান নেই একটুও।রুমাইসা বের হতেই মিলি কান্না করতে করতে জড়িয়ে বলল, “আফা আমার আর উপায় আসিল না আফা। ”
রুমাইসা ওর মাথায় হাত রেখে ওকে সরিয়ে দ্রুত নাসিমা বেগমের জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করল। রুমের উপস্থিত সবাই নিজেদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন সৃষ্টি করছিল। রুমাইসা চিৎকার করে বলল,”সাহায্য করতে না পারলে ভীর করবেন না। বাসা থেকে বের হন। বাতাস ঢুকতে দেন বাসায়। ”
মহিলা সহ উপস্থিত সবাই লজ্জা পেয়ে গেল। একে একে অনেকেই চলে গেল। কিন্তু সাহিলের রুম থেকে অনবরত দরজা ধাক্কাচ্ছে ও বাইরে বের হতে। ভেতরের সব ভাঙচুর করে ফেলছে। মিলির সাহায্য রুমাইসা শ্বশুর আর এম্বুলেন্স কল করল। অনেক চেষ্টা করেও নাসিমা বেগমের জ্ঞান ফিরল না।
দুপুর দুইটা। হসপিটালের করিডোরের বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে নাসিমা বেগমের খবর জানতে। তালুকদার সাহেব মাথায় হাত দিয়ে কান্না করছে। ঘণ্টাখানেক হল ভেতরে নিয়েছে নাসিমা বেগম কে। রুমাইসা মেয়েকে আকড়ে ধরে শ্বশুড়ের পাশে এসে বসল। তালুকদার সাহেব চোখ মেলাতে পারছেই না রুমাইসার সাথে।
“আব্বা এত কান্না করলে কিভাবে হবে, আপনাকে শক্ত হতে হবে বাবা। ”
তালুকদার সাহেব চোখের পানি মুছে বলল, “আর কত শক্ত হব রে মা। আল্লাহ কি আমাকে এই দিন দেখাতে রাখছিল। আজকে আল্লাহ না করুক কত বড় অঘটন ঘটতে যাচ্ছিল। আমি আমার ছোট ছেলেকে কি বলব বল। আমাকে আমানত দিয়ে গেসে তোদের। আর আমি পারলাম না রে মা পারলাম না।”
তালুকদার সাহেব পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখ মুছছে বারবার। রুমাইসার বলার মত কথা নেই মুখে। যতটা শক্ত হয়ে আছে বাইরে থেকে ভেতরটা তত টা নরম হয়ে আছে ওর। ভয়ে এখনো আতঙ্কিত ও। আজ সে ওই মানুষের কাছেই রেপ হচ্ছিল যাকে কিনা এক সময় ভালোবাসার কারনে সব বিলিয়ে দিচ্ছিল। ভাবতেই গা শিউড়ে উঠল রুমাইসার। ইহান কে অলরেডি ফোন করা হয়েছে। ইমার্জেন্সি টিকিটে একদিন আগেই চলে আসবে ও। রুমাইসা ইমতিত মুখের দিকে তাকাল। রুমাইসার ওড়না ধরে আছে শক্ত করে। একদম বুকের সাথে লেগে আছে মেয়েটা। রুমাইসা তাকিয়ে দেখল ইমতি কে। একটু আগে জন্মদাতা বাপ ওকে মেরে ফেলেতে চেয়েছিল। কি ভয়ানক ভাবে এইটুক বাচ্চার গায়ে আগুন দিতে চেয়েছিল। রুমাইসা ভয়ে মেয়েকে কপালে চুমু দিল। দুনিয়াটা বড্ড অদ্ভুত। এখন বুঝি নিজের বাপের কাছেও সন্তানের নিরাপদ আশ্রয় নেই। ইহান সব শুনেছে, না জানি বাসায় এসে কি করে। রিহ্যাব থেকে লোক নাকি বাসায় গেছে। সাহিল কে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়িতে তুলে নিয়েছে। মিলি ফ্লোরে বসে আছে আতঙ্কিত মুখ নিয়ে। একটু আগে রুমাইসার ইজ্জত বাচাতে বাড়ির মালিক কে কোপ দিয়েছে ও। নাসিমা বেগম বেচে ফিরলে হয়ত ওর আর এখানে থাকা হবে না।নিশ্চয়ই পুলিশে ফাসিয়ে দিবে। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে ও।
ডক্টর বের হয়ে বলল, “কপাল ভালো এ যাত্রায় বেচে গেছেন উনি। কিন্তু খারাপ সংবাদ টা হল ওনার ডান পা প্যারালাইজড হয়ে গেছে আর মুখ কিছুটা বাকা হয়ে গেছে। মারাত্মক রকমের হার্ট এট্যাক করেছে। আরেকটু দেরী হলে আমরা রোগী কে হারাতাম। বয়স হয়েছে অনেক, আপনারা রোগীকে স্ট্রেস দেওয়ার চেষ্টা কম করবেন। ”
তালুকদার সাহেব বেঞ্চের উপর ঝিম মেরে বসে রইল। গত কয় মাস ধরে সংসার টার উপর দিয়ে এক রকম ঝড় যাচ্ছে। দুটো নিষ্পাপ প্রাণ গেল, আজ ছেলের এই কান্ড, সহধর্মিণীর প্যারালাইজড অবস্থা, নাতনী আর ছেলের বউ কে আপন ছেলের ধারাই অত্যাচারীত হওয়া সবকিছু যেন তালুকদার সাহেব কে অস্থির করে তুলছে। বড় ছেলে টা কে সবচেয়ে ভালো ভাবত উনি। ভেবেছিল ছোট ছেলেটা বখে গেছে ছোট থেকে ই।পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে দেয় নি বলেই হয়ত ওনার প্রতি টান কম ছেলের। অথচ এই ছোট ছেলেই যে ওনার মান সম্মান বাচিয়েছে প্রতিবার। বড় ছেলেটা একটা কমতি রাখে নি ওনার বিশ্বাস কে ভাঙার। কোন পাপের ফল এগুলো উনি নিজেও জানে না। সারাজীবন সৎ টাকায় ব্যবসা করেছে।ভেবেছিল শেষ দিন গুলোয় ছেলে মেয়ে নাতী নাতনীর মুখ দেখেই কাটিয়ে দিবেন সুখে। কিন্তু সুখের আর দেখা মিলল না।
সাইয়ারা এক রকম দৌড়ে হসপিটালে আসল। রুমের সামনে আসতেই দেখল বাবা, ভাবী আর মিলি বসে আছে। সাইয়ারা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করল মায়ের কি অবস্থা কেমন আছে, কি হয়েছিল। সাথে সাইয়ারার জামাই আর শ্বশুর বাড়ির কয়জন লোক। লজ্জায় ঘটনা বলতে পারল না। কোন মতে বলল, “আম্মা হঠাৎ সকালে বাথ্রুমে পড়ে গিয়েছিল স্ট্রক করে। ডক্টর বলল ডান পা প্যারালাইজড ওনার। আর মুখ বাকা হয়ে গেছে। ”
সাইয়ারা এগুলো শুনে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল। “আমি আম্মুর কাছে যাব। আমার মায়ের কাছে যাব। ”
রুমাইসা আর মিহাদ সাইয়ারা কে সামলে নিল। বিকাল নাগাদ সবাই বিদাই হলেও হসপিটালে সাইয়ারা আর রুমাইসা রয়ে গেল। মিলিকে ঘর পরিষ্কার করতে আর শ্বশুর কে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়াতে পাঠিয়ে দিল। সবাই যেতেই সাইয়ারা রুমাইসা কে জিজ্ঞেস করল, “ভাবী আসল কাহিনি বল এবার। ”
রুমাইসা আশ্চর্য হয়ে বলল, “মানে? ”
“ভাবী মিলি আমাকে কিছুটা বলেছে, বাকিটা তুমি বল। ”
রুমাইসা মাথা নিচু করে সব কাহিনি বলে দিল। সাইয়ারার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এসব শুনার আগে মারা যেত তাও ঠিক ছিল।যেই বড় ভাই কে ইহান ভাইয়েত চাইতে শ্রদ্ধা সম্মান আর ভালোবাসত সে কিনা এত বড় জঘন্য কাজ করে বসল। সবচেয়ে বড় কথা এসব খবর এক কান দুকান করে ছড়িয়ে পড়বে। সাহিল ভাইয়ের কারনে ওদের হাসিখুশি পরিবার টা ধ্বংস হয়ে গেল। সাইয়ার কোন মুখে রুমাইসা কে সরি বলবে নিজেও জানে না। তাছাড়া ওর শ্বশুর বাড়িতে আজীবন কথা শুনানোর ব্যবস্থা করে দিল ওর ভাই।
সকালে বেলা রুমাইসার কেমন যেন ভয় লাগছে। অভি নাকি রিহ্যাবে পাগলের মত করছে। বারবার শুধু বলছে আমি ওই মেয়েকে খাব। আমি ওকে চাই আমার করতে চাই।রুমাইসা সেই থেকে ই কেন যেন ভয় কমাতে পারছে না। বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি অভি আসল আর ওকে নিয়ে যাবে টেনে নিজের মনের লালসা মেটাতে। ভয়ে চিন্তায় সারা রাত ঘুমায় নি। মেয়েকে নিয়ে কেবিনে বসে ছিল ও আর সাইয়ারা। সাইয়ারা নিজের শ্বশুর বাড়ির কত দুঃখ বলল বসে বসে। এতদিন রুমাইসার কষ্ট বুঝত না। আজ বুঝে, কারন ওর ও একি অবস্থা। সকাল বেলা রিহ্যাব থেকে ফোন এসেছিল শ্বশুর এর ফোনে। ও ই ধরেছিল, আর অভির চিৎকার শুনছিল ফোনের ওপাশ থেকে। ভয়ে আত্মা উড়ে যাচ্ছিল ওর।
ইহান আসল বেলা ১২ টায় সরাসরি হসপিটালে।রুমাইসা মেয়েকে নিয়ে বাসায় যাবে তখনি গেটে দেখা হল ইহানের সাথে। ইহান কে দেখেই দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরল রুমাইসা। এতক্ষন পর মন খুলে কান্না করার ও সুযোগ পেল যেন। ইহান জানে সারাটা রাস্তা ও কিভাবে পাড়ি দিয়েছে। রুমাইসা, বাচ্চা আর মায়ের ভয়ে ওর দম আটকে আসছিল। রুমাইসা কে দেখে ভেতরে শান্তি লাগছে। শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু রুমাইসার হাতে বাবু ছিল। ইহান এক হাতে বাবু কে কোলে নিয়ে রুমাইসা কে আরেক হাতে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। দুজনের কপালেই চুমু একে দিল। রুমাইসা ও শক্ত করে ধরে বলল, “এতক্ষন পর আমার আত্মা ফিরে পেলাম। জানেন না এত ভয়ে ছিলাম। আমাকে একা ছেড়ে কোথাও যাবেন না প্লিজ। ”
ইহান আরো শক্ত করে ধরে বলল, “আজকের পর আর না। আমার কলিজা ছিড়ে নিতে চাইলো ভাই, আমি ভাই কে ছাড়ব না। ”
রুমাইসা কান্না করে দিল।
সপ্তাহ খানেকের মাঝে নাসিমা বেগম কে বাসায় আনা হল। উনি কথা বলতে পারেন তবে কষ্ট হয়। হাটা চলায় অনেক কষ্ট হয়ে যায়। রুমাইসা আর মিলি সাহায্য করে। কারো সাথে কথা বলে না, চুপচাপ বিছানায় পড়ে থাকে। তালুকদার সাহেব একদম চুপসে গেছে। সারাদিন ই মসজিদে থাকে আর প্রয়োজন এ বাড়িতে আসে।
রাতের বেলা রুমাইসা বসে আছে বেলকনিতে। আজকে খুব সুন্দর বাতাস আর হাসনাহেনার ঘ্রাণ এ পুরো বাড়ি মৌ মৌ করছে। এমন সময় ইহান আসল সেখানে। এক সপ্তাহ পর আজ ইহান তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরল।
রুমাইসা দোলনার এক কোনে বসে আরেক কোন ইহানের বসার জন্য ছেড়ে দিল। ইহান বসে অন্যদিকে চেয়ে আছে। এত সুন্দর পরিবেশ এ যেন নীরবতা টাই সবচেয়ে মানানসই। বেশ খানিকটা সময় চুপ থেকে ইহান বলল, “সেদিনের জন্য দুঃখিত। আমি সেদিন তোমার পারমিশন ছাড়াই কপালে চুমু নিয়েছি। ”
রুমাইসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সেদিনের জন্য।আবারো নীরবতা। তবে ইহানের ইচ্ছে করছে মন খুলে কথা বলতে। রুমাইসা দোলনা ঝোলাতে ঝোলাতে বলল, “আচ্ছা ইহান, একজন পুরুষের কাছে শারীরিক সম্পর্কের বাইরে কি কোন সম্পর্ক থাকে না? ”
ইহান অবাক হয়ে বলল, “মানে? হঠাৎএ প্রশ্ন? ”
“উত্তর দেন না তারপর না হয় বলব। ”
“থাকবে না কেন, শুধু শারীরিক সম্পর্কে যদি দুনিয়ার বাকি সম্পর্ক হত তাহলে প্রতিটা মানুষ একজন আরেকজন এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেত। এই দুনিয়ায় বিশ্বাস, ভালোবাসা , ভরসা থাকত না। ”
রুমাইসা আবার প্রশ্ন করল , “আসলেই কি এগুলো আছে আজ কাল? আপনার ভাই এত বছর সংসার করল, অথচ তার আড়ালে আমার সাথে সম্পর্ক গড়ালো। তাতেই ক্ষান্ত নয়, সে আবার তৃষার মৃত্যুর পর আমাকে চায়। তাও শারীরিক সম্পর্কে যেতে আর কিছু না। তাহলে আপনার তারপর ও মনে হয় এমন কিছু আছে?”
“তোমার প্রশ্ন অযৌক্তিক কিছু নয়। তবে এই যে আমার বাবা বল,তোমার ফুপু ফুপা বল এদের বিয়ের আজ কত বছর পাড় হল, অথচ এরা আড়ালে কয়জন বিয়ে করে ফেলেছে বউ রেখে। এদের দেখলি কি আসলেই শারীরিক সম্পর্ক টা কেই মূল মনে হয় তোমার ? ”
রুমাইসা মাথা ঝাকাল। “নাহ সেটা ঠিক, তবে আগের দিনের কথা ছাড়ুন। বর্তমানে এসব অহরহ কি ঘটছে না? ”
শুন রুমাইসা, “এই পৃথিবীতে সবাই অনুভূতিতে তৈরি এক একজন মানুষ । আমাদের সবকিছুর প্রয়োজন আছে। তুমি খুজে দেখ এই বর্তমান যুগেও অনেক পুরুষ , একজিন অব্ধ, খোড়া, কিংবা বধির কে নিয়ে দিব্যি সংসার করছে। আবার একজন বড়লোকের সংসার আর গরীবের সংসার দেখ। বড়লোকদের অর্থ বিত্তের অভাব নেই, কিন্তু অভাব আছে সুখ শান্তির। গরীবের কিন্তু সারাদিন ঝগড়া করেও দিন শেষ এ তার পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে চায়। তাদের অল্প তেই সন্তুষ্টি। বড়লোকের আছে বলেই ওরা আরো চায়। এই জগৎ এ তুমি হাজার রকম পুরুষ পাবে। তুমি কি বলতে পারবে যে এই সমাজের সব পুরুষ ই শারীরিক সম্পর্কের শেষ এ বউ কে ছেড়ে দেয়?তা অবশ্যই ভুল, যদি ভাবো তুমি এটাই সত্যি। শারীরিক সম্পর্ক ক্ষনস্থায়ী সুখ আর বাকিটা হচ্ছে চিরসস্থায়ী। এই যে আমি একজন পুরুষ , আমার কি চাহিদা নেই? অবশ্যই আছে, কারন আমিও মানুষ। তবে আমি স্বামী কিংবা ছেলে বলেই সেটা জোর করে আদায় করে নিব কেন। স্বামী স্ত্রী দুজনের সম্মতিতে যেখানে সম্পর্ক হয় সেটা চিরস্থায়ী হয়, সেখানে একজন আরেকজন কে বুঝে। সম্পর্ক টা একটা পর্যায় যেতে পারে।জোর করে কোন সম্পর্ক তে বাধা যায় না। সেখানে কেবল তীব্র আর্তনাদ আর কিছু না বলা কথা তিক্ততার সাথে দুজনের মাঝে বসে যায়।”
রুমাইসা ইহানের শেষ কথায় বড্ড দ্বিধায় পড়ল। ইহান ও তবে ওর কাছে চায়! রুমাইসার এটা ভাবতেই মনের ভেতর তিক্ততা চলে আসল। কিন্তু কথাটা যে রুমাইসা বুঝতে ভুল করল সেটা না এ পক্ষ জানল না ওই পক্ষ।
শেষ বিকালের আলো
তানিশা আহমেদ
পর্ব ২৯
রুমাইসার দিন গুলো খুব ব্যস্ততার সাথে কাটছিল। শ্বাশুড়ির সেবা, ঘরের কাজ, বাচ্চার দেখাশোনা । কিন্তু সবকিছুর মাঝে যে ও নিজের আর ইহানের মাঝে বিশাল দূরত্ব তৈরি করে ফেলছে সেটা ও একদম ই বুঝতে পারত না। সারাদিন কাজ শেষ এ ইহান আর রুমাইসা দুজনেই ক্লান্ত থাকত। ইহান তবুও চাইত রাতে অত্যন্ত দুজন একটু গল্প করে কাটাবে কিছু সময়। কিন্তু রুমাইসা এই সময় টা ও কে মোটেও দিত না। রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে যেত। সকাল হলে আবার নাশতা বানাতে চলে যেত। প্রায় সময় তো ডাইনিং এ ও একটা বার দেখা পেত না ইহান রুমাইসার।
ইহান প্রচন্ড ভুগছিল এ ব্যাপার গুলো নিয়ে। বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু ক্রমেই ও কে সবকিছু খুব ভাবাচ্ছে। ওর মাথায় হাজার ধরনের কারন আসছিল এগুলোর জন্য। শেষ পর্যন্ত মনে হল যে, রুমাইসা হয়ত ওর থেকে দূরেই থাকতে চায়। ইহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল একটা। ভালোবাসা টা কে আরো একবার নিঃস্বার্থ ভাবে বিলিয়ে দিয়েও আবার ওর কাছে না পাওয়া রয়ে গেল। মন খারাপ হয়, ভেতরে প্রচন্ড কষ্ট হয়। তবুও, রুমাইসা ওর স্ত্রী মাত্র আর কোন পরিস্থিতি তে বিয়ে হয়েছে সব টাই তো বুঝে ইহান। তাই নিজের অধিকার টা কে ছেড়ে দিল।
মাস খানেক পর ইহান লক্ষ করল রুমাইসা ফোনে কারো সাথে কথা বলে বারান্দায় যেয়ে। প্রায় রাতেই দেখে বারান্দা থেকে ফিসফিস আওয়াজ আসে। কিন্তু ওদের মাঝের সম্পর্ক টা ঠিক সে রকম নয় যে, হুট করে জিজ্ঞেস করবে আর রুমাইসা উত্তর দিবে। ইহানের মনে সন্দেহ জাগে, কিন্তু সাথে সাথে আত্মবিশ্বাস। তবুও মনের কৌতুহল মেটাতে একদিন রুমাইসার নাম্বার থেকেই ফোন দেওয়া হল সেই কাঙ্ক্ষিত নাম্বার টিতে। কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন ধরল একজন পুরুষ কন্ঠের লোক। আর সেই গলা টা ইহানের অচেনা নয়। এটা সাহিলের গলা। ইহান মুহুর্তের মাঝে দুমড়ে মুচড়ে যেন চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল।ফোন টা কেটে দিল এপাশ থেকে। মুহুর্তের মাঝে আবার কল আসল ফোনে। রুমাইসা সবেমাত্র রুমে এসেছে আর ইহানের হাতে ওর ফোন দেখে রুমাইসা ভ্রু কুচকে বলল “কে ফোন দিয়েছে ধরুন তো। ”
ইহান ফ্যাকাশে কন্ঠে বলল, “সাহিল ভাই ফোন দিয়েছে। কথা বল। ”
মোবাইল টা বিছানায় রেখে ইহান দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করল।রুমাইসার মুখ টা লজ্জায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল।কিন্তু মুখে কিছু বলল না রুমাইসা। কারন জানে সময় এখন ঠিক না।রুমের ভেতর পায়চারি করছিল রুমাইসা আর ইহানের কথা ভাবছিল। সম্পর্ক জিনিসটা ই বুঝি খুব নাজুক হয়। হালকা টোকা পড়লেই ভেঙে যায় কিংবা ফাটল ধরে। রুমাইসা জানে ইহান ঠিক ই ওকে সন্দেহ করবে, করছে। করা টা অমূলক নয় মোটেও।তবে সত্যি টা কি ইহান জানার চেষ্টা করবে না একটুও!!
গত কয়দিন ধরেই সাহিল ওকে ফোন দিচ্ছে। রিহ্যাব থেকে পালিয়ে বংশাল এর কোন জায়গায় যেন আছে। প্রতিদিন একি কথা আমি তোমাকে চাই না হয় ইহান কে মেরে ফেলব।তুমি জানো আমার কাউকে মারতে হাত কাঁপবে না একটুও। রুমাইসা পাত্তা দিতে চায় না। কিন্তু রুমাইসা সারাদিন চিন্তিত থাকে ইহান কে নিয়ে।ইহানের সাথে দূরত্ব বজায় রাখলেও মন তো ইহান কে ছাড়তে নারাজ। ইহান ওর অভ্যাস, ইহান ওর প্রয়োজন। আজ পর্যন্ত এত শক্তি তো ইহান ও কে দিয়েছে। প্রতিটা পদে পদে সামলেছে ইহান ও কে। তবে আজ যে সেই ইহানের বিপদ টাকেই আচ পেয়ে দূরে সরে আছে রুমাইসা।রুমে এসে ইহান কে দেখে গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে পাশ ফিরে ঠিক ই। কিন্তু এ বুকের মধ্যখানের আগুন যে দাউ দাউ করে জ্বলছে সেটা দেখানোর সাধ্য ইহান কে হয় না।রুমাইসা জানে, একবার এইটুক আগুন এর এক ছিটাও দেখলে ইহান পুরো পৃথিবী এলোমেলো করে দিবে। ইচ্ছে করে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে। ও চলে গেলে ইমতিকে, কে দেখবে? ইহানের খেয়াল নেওয়ার জন্য নতুন কেউ কি আসবে? নাকি লোক টা আবার কষ্ট পাবে আগের বারের মত। কলিজা ছিড়া কষ্ট টা বুকে চেপে বসছে। দম টা বন্ধ হয়ে আসছে রুমাইসার।
মোবাইল টা খুলে গানের প্লে স্টোর ঘাটতে লাগল। গান শুনবে এখন। খুঁজতে খুঁজতে পছন্দের গান টা খুঁজে পেল।
ওহে কি করিলে বল পাইব তোমারে
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।
আমার সাধ্য কিবা তোমারে
দয়া না করিলে কে পারে
তুমি আপনি না এলে
কে পারে হৃদয়ে রাখিতে
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাইনা
আর কারো পানে চাহিব না
আর করিব হে আমি প্রাণপণ
আর কারো পানে চাহিব না।।
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন…
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাইনা।।
গানের শেষ লাইন গুলো যখন সম্মোহিত হয়ে রুমাইসা শুনছিল তখন ইহান রুমে ঢুকল। রুমাইসা দরজার বরাবর উল্টা দিকে মুখ দিয়ে শুয়ে ছিল চোখ বন্ধ করে। ইহান রুমাইসার মাথা যে পাশে রাখা সে পাশে দাড়ালো। রুমাইসার গাল বেয়ে তখন পানি পড়ছে। ভেজা চোখের পাতা চোখ টা কে চেপে ধরছে আরো। ইহান হাটু গেড়ে নিচে বসল রুমাইসার মাথা বরাবর। মাথায় একটা হাত রাখতেই রুমাইসা চোখ খুলে তাকাল। ইহান ঝুঁকে রুমাইসা কে বলল, “শুয়ে থাকো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ”
ইহান চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুমাইসা যে কি শান্তি লাগছে এখন। এতক্ষনের শত যন্ত্রণা, জ্বালা যেন একবারের এক নিমিষেই কোথাও হারিয়ে গেছে। রুমাইসা নাক টেনে অনুনয়ের স্বরে বলল, “আমার পাশে এসে শুবেন একটু? ”
ইহান খুব অবাক হল তবে খুব আনন্দ লাগছে। চট করে বিছানায় উঠে রুমাইসার পাশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে। রুমাইসা প্রথম মুখ খুলল।
“আচ্ছা একটা কাজ করবেন? ”
ইহান মৃদুস্বরে বলল, “কি কাজ? ”
“চলেন দুজনেই পা দুটো দেয়ালের উপর উঠাই।”
ইহান অবাক হয়ে বলল, “মানে! পা কেন দেয়ালে উঠাবো! ”
“আরেহ নাহ সেটা না। আপনার পা আর আমার পা দুটো দেয়ালে রাখব, দেখব কার পা বেশি লম্বা। ”
“এটা নির্দ্বিধায় আমার পা হবে। কারন তুমি আমার থেকে লম্বায় ছোট। ” ইহান খুব গর্ব নিয়ে কথা টা বলল।
রুমাইসা বলল, “আচ্ছা দেখাচ্ছি আমি আপনার থেকে লম্বা। পা দুটো উপরে তুলুন না। ”
ইহান লম্বা করে পা কে দেয়ালের উপর রাখল। রুমাইসা ইহানের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে একটা হাসি দিল। তারপর ঠোঁট কামড়ে ইহানের বুকের বরাবর মাথা দিয়ে পা দুটো তুলে দিল দেয়ালে।
“এই দেখুন আমি আপনার সমান হয়েছি। ” পুরো রুমা রুমাইসার হাসি তে কেঁপে উঠল।
ইহান বিষ্মিত হয়ে বলল “বাহ বাহ, এত চোরা বুদ্ধি মাথায় আসে কোথা থেকে তোমার! দাড়াও আমি তোমার সমানে আসছি তারপর লম্বা কে দেখাচ্ছি। ”
ইহান নিচে নামার আগেই রুমাইসা মুখ ফিরিয়ে ইহানের বুকে মাথা রাখল। ইহান একদকম আকষ্মিক এ ঘটনায় অবাক হয়ে গেল। রুমাইসা ইহান কে শক্ত করে চেপে ধরে বলল,”আমি জানি আজকের ঘটনার পর হাজার টা প্রশ্ন আর সন্দেহ ঘুরছে আপনার মনে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার বিশ্বাস ভাঙার মত কাজ আমি করি নি।”
ইহান ডান হাতে রুমাইসার চোখের পানি মুছে বলল, “আমার তোমার উপর এইটুক বিশ্বাস আছে। ”
রুমাইসা মাথা তুলে বলল, “সত্যি বিশ্বাস করেন আমাকে! ”
ইহান রুমাইসা মাথা টা আবার বুকের সাথে শুইয়ে দিয়ে বলল “এতদিনে এই টুক চিনো ইহান কে? তবে তো তোমার আমার স্ত্রী হওয়াটাই বৃথা।”
“জানেন খুব ভয় আর খারাপ লাগছিল। আমি আপনাকে হারাতে চাই না, আপনাকে কষ্ট ও দিতে চাই না। কিন্তু আমি নিরুপায় ইহান, আমার হাতে যে কোন অপশন নাই। ”
ইহান রুমাইসার হাত টা নিজের হাতে নিয়ে বলল, “রুমাইসা তুমি তো নামাজ পড়, কুরান পড়। তুমি তো আল্লাহ কেও পূর্ন বিশ্বাস কর তাই না? ”
রুমাইসা অবাক হয়ে বলল, “হ্যা কেন? ”
“তাহলে আমাকে নিয়ে তোমার ভয় কেন? হ্যা দুশ্চিন্তা, কেয়ার, ভালোবাসা প্রতিটি মানুষ এর মাঝেই থাকে। কিন্তু তাই বলে এটা কেন ভুলে যাও আমাদের প্রতিটা জিনিস ই ওই উপরের একজন ঠিক করে রেখেছে। আজ আমাকে কেউ ক্ষতি করুক বা যাই হোক সেটা তো ওনার প্লান করা। যেটা হবে সেটাকে কি আমরা যত যাই করি আটকাতে পারব? ”
রুমাইসা উৎকন্ঠা জড়িত কন্ঠে বলল, “জানি সব ওনার হাতে। কিন্তু প্রিয় মানুষের জন্য মানুষ সব ই করতে পারে তাই না। তার জন্য নিজেকে সেক্রিফাইজ করাটা তো তেমন কিছু না। ”
“মানলাম, তোমার কথা টা ঠিক। তবে তুমি সেক্রিফাইজ করলে কি আমার কোন ক্ষতি হবে না কখনো? নাকি আমি চির অমর? ”
“তা কি বলেছি, তবুও মানুষ টার জন্য চিন্তা হয়।”
“অস্বাভাবিক না এটা। তবে এটা মাথায় রাখো যে যেটা আমার ভাগ্য তে লিখা আছে তাই হবে। আর তোমাকে ও সেটা মানতে হবে। কারো হুমকি তে দমে গেলে তো নিজের ক্ষতি করবে সাথে যেই মানুষ টার ভালো থাকার জন্য এত কিছু করলে, কে জানে সেই মানুষ টাই তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। ”
রুমাইসা ভাবতে থাকে। আরো গভীরভাবে চিন্তা করে। লোকটা এত সুন্দর করে সব বুঝে যায়, বুঝিয়ে দেয়। কত সুন্দর ওর সকল অতীত নিয়েও ও কে জড়িয়ে লাইফ টা কাটিয়ে দিতে চাইছে। আর ও ইহান কে ছেড়ে যেতে চাইছে। নাহ এটা সম্ভব না। কখনো ই না, যা হোওয়ার হবে।এমন সময় দরজায় নক হল।
রুমাইসা উঠে যেয়ে দরজা খুলে দেখল মিলি বাবুকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে দরজায়। রুমাইসা মেয়েকে নিয়ে দরজা টা আটকে দিল। সময় টাকে একান্ত ভাবে কাটাতে চায়। রুমাইসা বাবু কে ইহান আর ওর মাঝে শুইয়ে আবার আগের মত পা উঁচু করে দেয়ালে উঠিয়ে দিল। বাবু ও হাত পা নাড়িয়ে উপরে উঠাচ্ছিল বারবার।
“ইহিতা থাকলে আজ ওর থেকে একটু বড় হত না ইহান? ”
ইহান চুপ করে রইল। পুরোনো স্মৃতি তে আবার দাগ লেগেছে। রুমাইসা ইহান কে আবার একি কথা ই জিজ্ঞেস করল। এবার ইহান বাধ্য হয়ে উত্তর দিল, “হুম। ”
“ইহান আমি জানি না ভবিষ্যত টা কেমন হবে বা কাল সকালে কি হবে। কিন্তু আমি এই ছোট জীবন টার ভবিষ্যত টা সিকিউরড রাখতে চাই।যাতে ওকে কোন দিন কিছু নিয়ে খোটা দিতে পারে না। ”
“চিন্তা মুক্ত থাকো। আমার ভাতিজি তো, আমার মেয়ে তো। ইহান বেঁচে থাকতে ইমতির কিছু হবে না।”
“বাংলা ছবি দেখে আসলেন নাকি মাত্র বাইরে থেকে? ”
রুমাইসার খোচা শুনে ইহান এক হাতের উপর ভর দিয়ে কাৎ হয়ে রুমাইসার দিকে তাকাল।
“কেন আপনার এটা কেন মনে হল?”
“নাহ ডায়লগ টা পুরা বাংলা ছবির মত ই তো ছিল। তাই একটু সন্দেহ লাগল।যেভাবে বাইরে গেছেন ভাবলাম বাংলা ছবির বাপ্পারাজ হয়ে গেলেন।”
ইহান এক ভ্রু কপালে তুলে রুমাইসার দিকে চেয়ে বলল, “আচ্ছা আমি বাপ্পারাজ তাই না? ”
“হ্যা কিছুটা, ছ্যাকা খাওয়া পাব্লিক। ”
ইহান পায়ের নিচ থেকে বালিশ তুলে রুমাইসার উপর ছুড়ে মারল। রুমাইসা ইহানের রাগ দেখে হাসতে হাসতে শেষ। রুমাইসা ওকে চটাতে আবার বলল “বাপ্পারাজ দ্যা ছ্যাকাখোড় ইহান কি অবস্থা আপনার? ”
ইহান আবার ওর উপর বালিশ ছুড়ে মারল। রুমাইসা বিছানা থেকে নেমে গেল আরো একবার মা’র খাওয়ার আগে। ইহান ও ছুটল রুমাইসার পেছনে। বেশিদূর যাওয়ার আগেই হাত দিয়ে ধরে ফেলল রুমাইসা কে।কোমড়ে ধরে উচু করে ঘুরতে লাগল দুজন। রুমাইসা চেচিয়ে বলছিল, “ছাড়ো ইহান, মাথা ঘুরাচ্ছে। আরেহ ভুল হয়েছে ছাড়ো আমাকে। ”
প্রায় ২ মিনিট ঘুরার পর দুজন যখন স্থির হল, মাথা এমন ঘুরাতে লাগল কেউ কিছু দেখছিল না। তবে এত মজা পেল দুজন হাসি ঠাট্টায় মজে উঠল। ভালোবাসা টা এভাবেই দুজনের মাঝে মান অভিমান দিয়ে চলতে লাগল।
(চলবে)