শেষ বিকেলে এলে তুমি পর্ব -০৬+৭

#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_৬
#Tahmina_Akhter

যথারীতি ক্লাস শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেলো।আয়াত ভাই কিছু ফর্মালিটিস পূরণ করে চলে গেলেন উনার অফিসে। উনি একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার।আয়াত ভাই সম্পর্কে রায়হান আঙ্কেলের কি হয় তা এখনো আমার কাছে ধোঁয়াশা!
তবে উনাদের সম্পর্ক বেশ গভীর।

যখনি কথাগুলো ভাবছিলাম ঠিক তখনি ম্যাম প্রবেশ করলেন।

আমরা সব স্টুডেন্টরা দাঁড়িয়ে ম্যামকে সালাম জানালাম।ম্যাম, সালামের উত্তর নিয়ে আমাদের সবাইকে বসতে ইশারা করলেন। সবাই বসতেই ম্যাম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-আমি ডা.সুলতানা তমা।পেডিয়াট্রিসিয়ান অথবা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ।অনেক পরিশ্রম এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টার পর আজ তোমরা এই মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট।আশা করছি তোমরা আগামীদিনের দেশের সবচেয়ে ভালো ডাক্তার হবে এবং মানুষদের নিস্বার্থ ভাবে সেবা প্রদান করবে।একে একে তোমরা সবাই নিজেদের পরিচয় বলো। ডান পাশ থেকে তুমি শুরু করো।

-আসসালামু আলাইকুম, আমি রিধিমা আহসান। আমার বাবা একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার এবং আমার মা কলেজের শিক্ষিকা।

-আসসালামু আলাইকুম, আমি মিসবাহ চৌধুরী। আমার বাবা এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসায়ী। আমার মা গৃহিণী।

একে একে সবাই সবার পরিচয় দিতে লাগলো। আমি মনে মনে নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছিলাম ঠিক কিভাবে নিজের পরিচয় দেয়া যায়। অবশেষে আমার পালা চলে এলো।

-হ্যা, এবার তুমি বলো তোমার পরিচয়। এতে করে সবার সাথে পরিচিতি হতে পারবে আর সখ্যতাও গড়বে।

ডা.সুলতানা ম্যামের আদেশে নিজের পরিচয় দেয়ার জন্য দাঁড়ালাম।হৃদয়ের ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে আতংকে এত এত বড়লোকের মাঝে আমার মতো মেয়ের পরিচয় তাদের কাছে নিশ্চয়ই নাক সিটকানো টাইপ!

-আসসালামু আলাইকুম। আমি রুশা হাসান। আমার বাবা আমার জন্মের পরে মারা যান এবং আমার মা’কে তার পরিবার অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি আমার মামা-মামীর কাছে বড় হয়েছি।সোজা হিসেবে আমি এতিম। আর বেশ কিছুদিন হলো আমার ডিভোর্স হয়েছে।

সবাই রুশার কথা শুনে হা করে আছে। মানে ওদের সাথে এইরকম মেয়ে পড়বে যে একেবারে চালচুলোহীন।এরইমাঝে কারো করতালি শোনা গেলো। রুশা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো সুলতানা ম্যাম হাতে তালি দিচ্ছেন। ম্যামের সাথে সাথে আরো কয়েকজন স্টুডেন্ট যোগ হলো।বাকি রইলো মিসবাহ এবং রিধিমা।

-রুশা, তোমার নিজেকে দেয়া পরিচয় পর্ব আমার কাছে বেশ চমৎকার লেগেছে। কারণ অনেকে আছে যারা নিজেদের পরিবারের সম্পর্কে এতটা নিখুঁতভাবে বর্ননা করতে চায় না। এতে যদি তাদের প্রেস্টিজ কমে যায়।তোমার বাকি জীবন গল্প আমি পরে একদিন শুনবো অনেক সময় নিয়ে।

তাহলে এবার পড়াশোনা শুর করা যাক। ক্লাসে বেশ মনোযোগী হলাম। কে কি বলছে ওসবে আর কানে দেই নি? কি দরকার তাদের কানাকানি শোনার? তাদের কাজই হচ্ছে নিচু শ্রেনীর মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করা।

-১ম বর্ষ ও ২য় বর্ষ: এখানে মূলত ৩ টা বিষয় পড়ানো হবে।এনাটমি,ফিজিওলজি,বায়োকেমিস্ট্রি।কলেজে ক্লাস নেওয়ার জন্য আলাদা তোমাদের এই ডিপার্টমেন্ট।এসব বিষয়ে নিয়মিত মাথায় সেট থাকার জন্য মাঝে মাঝে হালকা কিছু পরীক্ষা থাকবে।সবচেয়ে ছোট পরীক্ষা আইটেম,যেটা প্রতিদিনই থাকে,এটা ভাইভা।বেশ কয়েকটা আইটেম মিলে একটা কার্ড হয়।যা রিটেন ও ভাইভা।সমস্ত আইটেমে পাশ করা সাপেক্ষে কার্ড পরীক্ষায় বসার অনুমতি মেলে।তারপর কয়েকটি কার্ড পরীক্ষা মিলে একটি টার্ম পরীক্ষা হবে।রিটেন,ভাইভা ও প্র‍্যাক্টিক্যাল হবে।এবং সবশেষে ৩ টা টার্ম মিলে ১ টা প্রফেশনাল পরীক্ষা হয়।১.৫ বছরের ১ম ও ২য় বর্ষের সিলেবাস মিলে এই পরীক্ষা হয়।
অতএব, ১ম ও ২য় বর্ষের তোমাদের সিলেবাস একই ।পড়াশোনা মন দিয়ে করবে। আজ আসছি কাল আবার দেখা হচ্ছে।

ক্লাস শেষ হতেই সুলতানা ম্যাম চলে গেলেন। ম্যাম চলে যেতেই সবাই আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো যেন আমি ভীনগ্রহের প্রাণী। সকাল আট থেকে ক্লাস শুরু হয় আর শেষ হয় দু’টো বাজে।

আজ আর বেশি ক্লাস হয়নি। কোন স্যার নাকি আজ হসপিটালে আসেনি?তাই ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে।

বইখাতা গুছিয়ে ব্যাগে ভরে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। কে যেন আমার ব্যাগ পিছন থেকে টেনে ধরলো? পিছু ঘুরে তাকাতেই দেখলাম মিসবাহ নামের ছেলেটি, রিধিমা সাথে আরো দু’জন ছেলে। আমি মিসবাহ’র হাত থেকে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে বললাম,

-ব্যাগ ধরে টানছেন কেন? ডাক দিলেই তো শুনতে পারতাম!

-তোমার নাম মুখে নিলে মুখ নষ্ট হয়ে যাবে তাই ডাক দেই নি।

-ও তাহলে তো ভালোই হলো। যান গিয়ে হাতটা চেক করে আসুন পচন ধরলো কি না?

বলে আমি সেখান থেকে চলে এলাম। চোখের পানি গুলো পড়ার আগে মুছে নিলাম। কারণ, চলার পথে এমন দুষ্ট লোকদের সাথে দেখা হবে।তাই ভেঙে পড়লে চলবে না।

——————–

-কি রে আজ হসপিটালে গেলি না কেন, আদিল?

-গায়ে বোধহয় জ্বর এসেছে, তাই যাইনি। ম্যাম কিছু বলেছে আজ যায়নি দেখে?

-না, উনি কি বলবেন তোকে? উনি তো তোকে মনে মনে মেয়ের জামাই ভেবে বসে আছে।তাছাড়া, তোর অ্যাবসেন্স এপ্লিকেশন তো আমি জমা করে দিয়েছি সো কে কি বলবে?

-থ্যাংকস দোস্ত। তুই না থাকলে কি যে হতো আমার?

-আমি না থাকলে তোর মাধুর্য থাকতো। তোর শরীরে জ্বর এলে গা মুছিয়ে দিতো। নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিতো।

-ওর কথা বাদ দে সুলতানা। ভাবলেই কেমন যেন জ্বর জ্বর লাগে? কখনো একতরফা ভাবে ভালোবাসিস না নয়তো বিনা জলে ডুবে মরবি আমার মতো। তা তোর হবু জামাই আসবে কবে?

-আজ রাতের ফ্লাইটে আসবে। আমি চলি তাহলে। কাল শরীরটা ভালো লাগলে চলে আসিস। নবীন স্টুডেন্টরা এসেছে পরিচিত হলে তোর কাছেই ভালো লাগবে। বিশেষ করে রুশা হাসানের সাথে।

-কেন? রুশা হাসানের মাঝে আলাদা কিছু এড করা আছে না কি?

-হয়তো এড করা আছে। তুই আগে পরিচিত হ, এরপর আমায় বলিস ওর মাঝে বিশেষ কিছু আছে কি না? এখন চলি আমি। ভালো থাকিস আদিল।

সুলতানা চলে গেলো আর আমি বসে বসে রুশা হাসান নামটি নিজের মস্তিষ্কে গেঁথে নিলাম।

—————–

-আজ প্রথমদিন কেমন কাটলো রুশা?

-ভালো, আয়াত ভাই।

-ভালো হলে এত মনমরা হয়ে বলছো কেন? ফ্রেন্ড ক’জন হলো আজ?

-একজনও না। আমার পরিচয় শুনে ওদের ফ্রেন্ড হওয়ার ইচ্ছে হয়তো চলে গেছে।

-রুশা, তোমার স্ট্যাটাস দেখে যে বন্ধুত্ব করবে সে তোমার টাকাপয়সা দেখে আসবে। যদি কখনো তোমার টাকা না থাকে দেখবে সে বন্ধুও তোমার পাশে নেই। আর যে বন্ধু তোমার কিছু না দেখে তোমায় বন্ধু ভেবেছে সে সবসময় তোমার পাশে থাকবে কোনো লেনদেন ছাড়া।

-আপনি এত সুন্দর কথা বলেন কিভাবে আয়াত ভাই? আপনি কলেজের শিক্ষক হলে ভালো হতো সবাইকে আপনি এক নিমিষেই বুঝিয়ে দিতেন।

-তুমি একটু বাড়িয়ে বলছো। আমার মাঝে শিক্ষক হবার জ্ঞান বা ধৈর্য কোনোটাই নেই। আমি চলি তাহলে কাল আবার এই সময়ে এসে পড়া বুঝিয়ে যাবো।

আয়াত ভাই চলে গেলেন। আমি উঠে গিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাইরে রাতের শহরের মানুষের ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। চারদিকে লাল, নীল, হলুদ রঙের খেলা চলছে। কত ব্যস্ততা মানুষের মাঝে কত কিছু করার? কিন্তু, একদিন এইসবের মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হবে অনন্তকালে যেখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না।
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_৭
#Tahmina_Akhter

-মা, ও, মা ;তুমি আমায় একলা রেখে কোথায় চলে গেলে? আমি যে অন্ধকারে ভয় পাই। দেখো তো আমার পেটে কিছুই নেই কেউ আমায় খেতে দেয় না। তুমি কিভাবে আমায় ফেলে খাও মা?তুমি চলে এসো আমার কাছে এরপর তুমি আর আমি একসাথে থাকবো অনেক খাবার খাবো। মা, আসবে তুমি?

-হ্যা, হ্যা, আমি আসব কই মা তুই? দাঁড়া আমি আসছি।

বিছানায় হাতড়ে দেখলাম বিছানা খালি আমার মেয়ে নেই আমার পাশে। তারমানে, এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। কষ্টে আমার বুক ভেঙে কান্না আসছিলো, কেন আমার মেয়ে স্বপ্নে এসে বললো, ওর ভয় হচ্ছে, ওর খিদা পেয়েছে তাহলে কি ও কষ্টে আছে?
হে আল্লাহ, আমি আর সহ্য করতে পারি না। দিনে যতই কঠোর থাকি না কেন বেলা শেষে আমি যে আবার দূর্বল হয়ে পড়ি?

এরইমাঝে শুনতে পেলাম দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসছে,

হাইয়া আলাস্ সালাহ্
হাইয়া আলাল ফালাহ্

যার অর্থ :নামাযের জন্য এসো, সাফল্যের জন্য এসো।

দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম তখন রাতের শেষাংশ। ফজরের আযান দিচ্ছে।
চোখের পানিটুকু মুছে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুম থেকে ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ দাঁড়ালাম।
মোনাজাতে আমার বাবার জন্য আমার মেয়ের জন্য দোয়া করলাম, যেন পরকালে উনারা শান্তিতে থাকে। সবশেষে, দোয়া করলাম আমার জন্মদাত্রী মায়ের জন্য। উনি হয়তো আমার কথা মনে রাখে নি কিন্তু উনাকে আমি আমার মোনাজাতে শামিল রেখেছি কারন, উনি যে আমার মা।

রাতের আঁধার পেড়িয়ে আবছা আলোয়ে চারপাশ আলোকিত হতে শুরু করলো।এখন আর ঘুম আসবে না তাই বই হাতে নিয়ে ছাঁদে চলে গেলাম। সকালের স্নিগ্ধ বিশুদ্ধ বাতাস যেন দেহ-মন প্রফুল্ল হয়ে যায়।বই এনেছি ঠিকই কিন্তু পড়ায় মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না।

আমার সামনে কে যেন চায়ের কাপ এগিয়ে ধরলো?চোখ উপরে মেলে তাকাতে দেখতে পেলাম আঙ্কেলকে।চোখে ইশারা করলেন কাপটি হাতে নেয়ার জন্য আমিও হাতে নিলাম কারণ চা খেলে হয়তো মাথার দুশ্চিন্তার জট খুলে যাবে আর পড়ায় মনোযোগ দিতে পারবো। আঙ্কেল আরেকটি মোড়ায় বসে নিজেও চা পান করতে লাগলেন।

চায়ে একচুমুক দেয়া শেষ হতেই আঙ্কেল অতি উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

-চা কেমন হয়েছে মা?

-খুব ভালো হয়েছে। একচুমুকে মাথার দুশ্চিন্তার দল পালিয়ে গেছে।

-এত ছোট মাথায় এত দুশ্চিন্তা জায়গা দিস কেন? ভুলে যা পুরনো কালো স্মৃতি।সামনে তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যেত তোকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।পুরনো স্মৃতি মনে করে বর্তমান-ভবিষ্যত নষ্ট করার কোনো মানে নেই। আর তোর চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে কান্না করেছিস? কেন কাঁদিস বলবি আমায়?

-জানেন আঙ্কেল, আজ স্বপ্নে আমার মেয়ে আমাকে বলছে ওর ভয় লাগে একা থাকতে ওকে আমি কোথায় রেখে এসেছি?ও না খেয়ে আছে। আমাকে বলছে আমি যেন ওর কাছে চলে যাই।

বলে আবারও চোখের পানি ছেড়ে দিলো রুশা।

-আরে বোকা মেয়ে এতে কান্না করার কি হলো?তুই তো মা, তোর মেয়েকে নিয়ে তোর মনের কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। একটা কাজ করি আগামী শুক্রবারে আমরা নাহয় এতিমখানায় গিয়ে বাচ্চাদের কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে আসি। কি বলিস যাবি তুই?

আঙ্কেলের কথা শুনে খানিকটা অবাক হলেও খুশি হয়ে গেলাম।

-হ্যা, আমি যেতে রাজি আছি। তবে কাজল আপু কি যাবে আমাদের সাথে?

-যাবে। কাজল আগের থেকে এখন অনেক সুস্থ আছে। আল্লাহর কাছে খালি দোয়া করি যেন আমার মেয়েটা সুস্থ হয়ে যায়।

আঙ্কেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, আমার বাবা থাকলেও হয়তো আমার জন্য এভাবে দোয়া চাইতো আল্লাহর কাছে। বাবারা বুঝি এমনই হয় নিরবে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করে যায় আর কেউ কিছুটি টের পায় না!

———————–

সকালে নাশতা খেয়ে বের হয়ে পড়লাম হসপিটালের উদ্দেশ্য। আজ আয়াত ভাই আসে নি তাই সিএনজি নিয়ে হসপিটালে যেতে হচ্ছে। হসপিটালে এসে পৌঁছাতে সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে চললাম আমাদের ক্লাসরুমের দিকে।ক্লাসরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে দেখতে পেলাম আগে থেকে একজন স্যার ক্লাস করাচ্ছেন। আমার কি তবে দেরি হয়ে গেলো?ভয় পেয়ে গেলাম যদি স্যার বকা দেয় তাহলে তো বেঁচে যাওয়া সম্মান লুটে যাবে। সাহস নিয়ে বলে ফেললাম,

-আসসালামু আলাইকুম। মে আই কাম ইন স্যার?

ক্লাস শুরু হবে আরো দশমিনিট পর কিন্তু আমি একটু আগেই চলে আসলাম নতুন স্টুডেন্টদের সাথে পরিচিত হতে। কারণ ওদের নিয়ে আজ রাউন্ডে যাবো। সবার সাথে যখন পরিচিত হচ্ছিলাম এরইমাঝে মেয়ে কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,”মে আই কাম ইন স্যার”।

দরজার দিকে তাকাতে দেখতে পেলাম কালো বোরকা পরিহিতা একটি মেয়ে যার চোখ দেখা গেলেও চশমার রিফলেকশনে চোখ ঢাকা পড়ে আছে।আমি চোখ ফিরিয়ে বললাম,

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ইয়েস কাম ইন।

মেয়েটি ধীর পায়ে ক্লাসরুমে ঢুকে খালি চেয়ারে বসে পড়লো। এরইমধ্যে আরোও একটি মেয়ে এসে দরজার সামনে দাঁড়ালো। তাকেও ভিতরে আসতে বলে বাকি ক’জনের সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করলাম। বাকি রয়ে গেলো শেষের দুটি মেয়ে। তাই দু’জন থেকে বোরকা পড়া মেয়েটিকে বললাম, তার পরিচয় দেয়ার জন্য

-আমি রুশা হাসান।

ও এই মেয়ে তাহলে রুশা হাসান। তাহলে ওর কথা সুলতানা আমাকে বলেছে, মন মনে বললো আদিল।

-তোমার বাবা-মা উনারা কি করেন?

-স্যার, ওর কেউ নেই মানে এতিম।আবার ওর নাকি রিসেন্টলি ডিভোর্স হয়েছে। মানে বুঝতে পারছেন গরীব মানুষের নরম ট্যাগ।মুখ বেঁকিয়ে কথাগুলো বললো রিধিমা।

আদিল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রিধিমা নামক মেয়েটির দিকে। রাগে ওর কপালের সিরা ফুলে উঠলো। কোনোমতে নিজের রাগকে কন্ট্রোলে রেখে বললো,

-রিধিমা, একটা কথা বলি মন দিয়ে শুনো। কেউ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও প্রকৃত শিক্ষিত হতে পারে না। আশা করছি তুমি আমার কথাটি বুঝতে পেরেছো।
আর তুমি রুশা হাসান মন দিয়ে পড়াশোনা করবে কারো কথায় কান দিবে না। তুমি আজ যে জায়গায় অবস্থান করছো শুধুমাত্র তোমার প্রচেষ্টায়। অতএব, কারো কথায় নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলো না। বসো তুমি।

আমি বসে পড়লাম। কিন্তু আমার সাথে বসা মেয়েটি হঠাৎ করে স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-স্যার, সবার সাথে পরিচিত হলেন আমার সাথে হবেন না?

-ও হ্যা ভুলে গিয়েছিলাম। বলো তোমার পরিচয়?

-আমি তাবাসসুম নাজ। ইনশোর্ট নেইম নাজ। আমার বাবা এ্যাডভোকেট আর আমার মা নেই।
শেষের কথাটি বলার সময় মেয়েটির গলা কেমন কেঁপে উঠছিলো।

-আচ্ছা, বসো তুমি। তোমাদের সবার সাথে পরিচিত হয়ে বেশ ভালো লাগছে আমার। কিন্তু, আমি কিন্তু স্যার হিসেবে মোটেও ভালো না। আমার সম্পর্কে তোমাদের সিনিয়রদের কাছ থেকে জেনে নিও।আমার ক্লাস কখনো ফাঁকি দেয়া যাবে না।ঠিকভাবে একদিনের পড়া একদিনে শেষ করতে হবে আর ক্লাসে কেউ কাউকে বুলিং করতে পারবে না। ইট’স মাই অর্ডার। যদি আমি জানতে পারি কেউ এরকম জঘন্য কাজ করেছে। আই সয়্যার সেদিন আমি কি করবো তোমরা ভাবতেও পারবে না।
এখন চলো আমার সাথে আজ তোমাদের রাউন্ডে নিয়ে যাই। ওখানে আজ তোমাদের শেখানোর প্রথম ধাপ শুরু হবে।

-মিঃ আদিল?

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো এক সিনিয়র কলিগ ডাকছে তাকে,

-জি, বলুন মিঃ রোহান।

-আপনাকে শিউলি ম্যাম ডাকছে।আজ আমি ওদের ক্লাস নিবো। আপনি ম্যামের কেবিনে চলে যান।

-ওকে

দীর্ঘশ্বাস চেপে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে গেলো আদিল। আর মনে মনে ভাবছে, না জানি কি বলে বসে শিউলি ম্যাম?

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here