#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_৮
#Tahmina_Akther
-হাই, আমি নাজ। তুমি আমার ফ্রেন্ড হবে,রুশা?
আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো নাজ।আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। মানে ও নিজ থেকে এসেছে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে!
ক্যান্টিনে একা বসে ছিলাম,হুট করে ও কোত্থেকে এসে এমন কথা বলে বসলো।
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,যেন ও আমার কাছে চকলেটের বাহানা করেছে যদি এনে দেই তাহলে ও অনেক খুশি হবে।
তাই আমিও হালকা হেসে ওর বাড়িয়ে দেয়া হাতে নিজের হাত রেখে বললাম,
-হুম,
ব্যস ওকে আর পায় কে?ও গিয়ে সিঙারা আর সমুচা কিনে এনে আমার পাশের চেয়ারে বসলো।
এরপর, আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-রুশা, খেয়ে নে। দেখ আমি কিন্তু ভোজনপ্রিয় মানুষ। পৃথিবীর সব খাবার আমার কাছে অমৃত।তাই আমার বান্ধবী যখন হয়েছিস তখন আমার সাথে একটু খেয়ে দেয়ে একটু নাদুসনুদুস হবি, ঠিক আছে?
-হুম, ঠিক আছে।
-তাহলে, নিকাব তুলে খাওয়া শুরু কর। এখন তো তেমন কেউ নেই ক্যান্টিনে।
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আসলে কেউ নেই।এরপর,নিকাব তুলে একটি সমুচা হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলাম।
———————–
-শোন, মিসবাহ?
-হুম,বল রিধিমা।
– রুশা মেয়েটাকে তোর কাছে কেমন লাগে জানি না কিন্তু আমার কাছে প্রচুর বিরক্তিকর লাগে।আজ শুধুমাত্র ওর জন্য আমি আদিল স্যারের কাছে বকা খেয়েছি।শুধু বাগে পাই একবার এরপর ওকে বুঝাবো কত ধানে কত চাল?
-দেখ রিধিমা, দোষ কিন্তু তোর ছিলো, রুশার না। কি দরকার ছিলো আগ বাড়িয়ে ওর সম্পর্কে স্যারের সঙ্গে কথা বলার?দেখ, ওর সাথে আমাদের কোনো প্রবলেম নেই, সো ওকে কোনোপ্রকার হ্যারাস করবি না তুই।
-ওকে, ওকে করবো না। এখন চল ক্যান্টিনে কফি খেয়ে আসি পড়ার চাপে পুরো মাথা হ্যাং হয়ে আছে।
-আচ্ছা, চল।
আমি আর রিধিমা ক্যান্টিনে প্রবেশ করতেই একটি জায়গায় আমার চোখ আঁটকে গেলো।
কালো বোরকায় আবৃত একটি মেয়ে, মাথায় কালো জিলবাবা দ্বারা আবৃত, নিকাব উঠানো থাকায় তার আদলখানি দেখা যাচ্ছে।টানা টানা হরিণি চোখ,সরু নাকে সাদা পাথরের নোজপিন জ্বলজ্বল করছে, গোলাপী রঙের পাতলা ঠোঁট। কি স্নিগ্ধ মায়াময়রূপ! সুবহানাল্লাহ!
-কি রে, তুই আবার কি দেখে সুবহানাল্লাহ বলছিস? আমাকেও দেখা।
-তুই দেখলে হিংসায় জ্বলবি রিধিমা। তবুও তোর ইচ্ছে থাকলে পিছনের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখ।বুঝে যাবি কেন বললাম, সুবহানাল্লাহ?
রিধিমা ঘুরে তাকানোর আগে রুশা তার নিকাব নামিয়ে ফেললো।আসলে ও বুঝতে পারেনি কখন মিসবাহ এসে ওদের সামনের দুই টেবিল পর এসে দাঁড়িয়েছে।
-কি রে মিসবাহ?এত দেখি রুশা। তুই কি ওকে দেখে প্রশংসা করলি?
-হ্যা, ওকে দেখে প্রশংসা করলাম। তুই বস আমি কফির অর্ডার দিয়ে আসি।
মিসবাহ অর্ডার দিতে চলে গেছে। আর এদিকে রুশা আর নাজ বিল দিয়ে ক্যান্টিনের বাইরে চলে এসেছে।
মিসবাহ, দু’হাতে কফির মগ নিয়ে এসে দেখলো রুশাদের টেবিল খালি। মনে মনে শিট বলে রিধিমার দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো। এরপর, অন্যান্য বিষয়ে কথা বলতে লাগলো রিধিমার সাথে।
আরো একটি ক্লাস করে বাড়িতে চলে গেলো রুশা।
——————–
আজ শুক্রবার, সকাল থেকে আজ কুঞ্জ বাড়ির প্রত্যকটি সদস্য প্রচুর পরিমানে ব্যস্ত। কারণ, আজ সকলে মিলে কাছের এক এতিমখানায় যাবে।কাজল,রুশা আর ফাহিমা খালা মিলে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্নরকমের ফলমূল,ড্রেস, কিছু বইখাতার কালেকশন প্যাকেট করছে।
সকালে বিরিয়ানি রান্না করে প্যাকেট করে দিয়ে গেছে বাবুর্চি।
ওইদিকে, রায়হান সাহেব আর আয়াত মিলে গাড়িতে একে একে সব কিছু তুলে রাখছেন। সময় খুব কম দুপুরের আগে ওখানে উপস্থিত থাকতে হবে।
সবার গোছগাছ শেষ হতে হতে প্রায় ১১:৩০ বেজে গেলো।এরপর, সবাই মিলে গোসল করে তৈরি হয়ে নিলো।একে একে সবাই ড্রইংরুমে এসে হাজির হলো।বাড়ির নারীদের পড়নে কালো বোরকা আর পুরুষদের পড়নে শুভ্ররঙা পাঞ্জাবি।
সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
এক গাড়িতে রায়হান সাহেব, ফাহিমা খালা আর ড্রাইভিং সিটে জনি। অন্য গাড়িতে কাজল, রুশা আর ড্রাইভিং সিটে আয়াত।
পিছনে বসে বসে নানান রকমের গল্প ফাঁদছে কাজল আর রুশা। সামনে থেকে মাঝে মাঝে আয়াত ওদের সাথে যোগ দিচ্ছে।
কাজলের চোখ হঠাৎ করেই গাড়ির বাইরে চলে যায়। অতি পরিচিত একটি জায়গা যেখানে জায়ানের সাথে সহস্রবার এই জায়গায় এসেছে। কতশতবার তার মুগ্ধতায় ডুব দেয়া, কতশত গল্প, হাসি, খুনসুটিতে মেতে উঠা হয়েছে এই জায়গায়। কোথায় গেলো তার আমাকে দেয়া ভালোবাসার নামে প্রতিশ্রুতি?
-জায়ান তুমি একটা ঠকবাজ।আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় কেন আমি তুমি নামক বহুরুপীকে মন দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম।
চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার আগে মুছে ফেললো। আমিও আর চাই ওই ঠকবাজের জন্য চোখের পানি ফেলতে।
কাজলের চোখ মুছার দৃশ্য রুশার কাছে দৃষ্টিগোচর হলেও আয়াতের কাছে ঠিকই ধরার পরেছে।ফ্রন্ট মিররে এতক্ষণ কাজলের দিকে বারংবার তাকিয়ে দেখছিলো আয়াত। ওর চোখে পানি দেখে আয়াতের মনে শুধু একটি কথা বললো,
-কেন, কান্না করলো কাজল?
এতিমখানায় পৌঁছে গেলাম আমরা। গাড়ি থেকে নেমে আমি, ফাহিমা খালা আর কাজল আপু চললাম, ভিতরে বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে।আঙ্কেল, আয়াত ভাই আর জনি উনারা তিনজন মিলে গাড়ি থেকে সব আস্তে আস্তে বের করে নিবে।
বাচ্চাদের জন্য যা যা এনেছিলাম সব ওদের হাতে দেয়ার পর ওদের মুখে হাসি ফুটেছিলো।এত সুন্দর হাসি!যা কোটি টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়।
জুম্মার নামায শেষে সকল বাচ্চাদের সাথে নিয়ে আমরা বিরিয়ানি খেতে বসলাম। বেশ মজা হলো, যেন আমরা সকলেই পিকনিকে এসেছি।
খাওয়া-দাওয়ার পর রায়হান আঙ্কেল আর ফাহিমা খালা চলে গেলেন। রয়ে গেলাম আমি,কাজল আপু আর আয়াত ভাই। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম এখানকার পরিবেশ। বেশ চমৎকার একটি জায়গা। দোতলা বাড়ি, চারপাশে নাম না জানা হরকে রকমের ফুল গাছ।পাশে এক ছোট ঘাট বাঁধানো পুকুর যাতে আছে লাল পদ্ম। চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য।
এই এতিমখানা মূলত এনজিওদের। উনারা বিভিন্ন দেশ থেকে তহবিল এনে এই এতিম বাচ্চাদের দেখাশোনা করছেন। মাঝে মাঝে এলাকার কিছু বিত্তবান শ্রেণির লোকেরা এই এতিমখানায় তাদের কিছু অর্থ ব্যয় করে থাকে।
হাঁটতে হাঁটতে আমি আর কাজল আপু পুকুর ঘাটে এসে বসলাম। কাজল আপুকে বেশ মনমরা দেখাচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে, আপু?মন খারাপ তোমার নাকি শরীর ভালো লাগছে না?
-না, পুতুল আমি ভালো আছি। জানো, অসুস্থ ছিলাম ভালো ছিলাম আমি। পুরোনো স্মৃতিগুলো তাড়া করে বেড়াতো না। মাঝে মধ্যে ঔষধ খাই না যদি সুস্থ হলে আগের কথা মনে পড়ে।
কিন্তু, আর না এখন থেকে নিজেকে আগে প্রাধান্য দেব এরপর বাকি সবাই।
-কি এমন স্মৃতি আপু,যার জন্য তুমি অসুস্থতাকে নিজের জন্য উপযুক্ত মনে করেছো?
-পুতুল, সবার জীবনের একটা ভালো অংশ আছে। এই ভালো অংশটা সবাইকে যেমন আনন্দিত করে ঠিক তেমনি হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়, ঠোঁটের কোণে হাসি এনে দেয়।
আর সবার জীবনে একটি মন্দ অংশ থাকে যা আপনজন ছাড়া আর কাউকে বলা যায় না নয়তো বাইরের লোকেরা জানলে যে উপহাস করবে।এই মন্দ অংশটুকু তোমার জীবনে আছে,আমার জীবনে আছে,আমার বাবার জীবনে আছে, ফাহিমা খালার জীবনে এবং আয়াতের জীবনেও আছে। কিন্তু, কেউ দেখলে বলবে আমাদের মতো সুখী হয়তো পৃথিবীতে আর কেউ নেই৷
আমার মন্দ অংশের কথা শুনবে পুতুল? আজ কেন যেন তোমায় বলতে ইচ্ছে করছে! এই মনের মাঝে যেন হাজার টন দুঃখ বোঝা হয়ে আছে। একটু কমাতে চাই এই বোঝা, নয়তো আমি শ্বাস নিতে পারছি না। মনে হয়ে এই বুঝি দেহের প্রাণ পাখিটা বের হয়ে এলো।
-বলো, আপু। আজ তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো?
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_৯
#Tahmina_Akhter
-জায়ান! তিন অক্ষরের এই নামের মানুষটি ছিলো আমাকে নতুন অনুভূতি অনুভব করার মাধ্যম। জায়ানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় এসএসসি পরীক্ষার সময়। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় ভুল করে আমার রেজিষ্ট্রেশন কার্ড, প্রবেশপত্রের ব্যাগ রিকশায় ফেলে চলে আসি।সমস্যা বাঁধলো তখন যখন আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল না। আমি যেন চোখে সরষে ফুল দেখছিলাম।পরীক্ষা তখন শুরু হয়ে গিয়েছিলো আর আমি পরীক্ষার হল রুমের বাইরে। এরইমাঝে গেট দিয়ে একটি ছেলে দৌঁড়ে এসে কি যেন খুঁজতে লাগলো?গেটের দারোয়ান উনার পিছনে এসে সমানে বকে যাচ্ছেন কিন্তু উনি বোধহয় এসবের খেয়াল নেই। হুট করে উনার নজর পড়লো আমার উপর। আমার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে হাতে থাকা কাগজের দিকে তাকিয়ে আমার কাছে দৌঁড়ে এসে বললেন,
-এই মেয়ে,মাথায় কি একটুও কমনসেন্স নেই!এত ইর্মোটেন্ট কাগজপত্র কিভাবে রিকশা রেখে আসতে পারো। ভাগ্যিস, আমি রিকশায় উঠে দেখেছিলাম নয়তো অন্য কেউ হলে তোমার এই কাগজ থাকতো ডাস্টবিনে আর তুমি হতে দেউলিয়া। এখন ধরো এইগুলো আর ভিতরে যেয়ে পরীক্ষা দাও। অল দি বেস্ট।
বলে চলে গেলেন। আমি আর কিছু না ভেবে হলে প্রবেশ করে পরীক্ষা দিতে বসে পড়লাম। আর মনে মনে অচেনা ছেলেটির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলাম।
এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবার পর সকল ফ্রেন্ডরা মিলে গিয়েছিলাম ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানায়। সেখানে গিয়ে দেখা হয়ে যায় ওই অচেনা ছেলেটির সঙ্গে। সেই সাক্ষাতের সময় তার নাম জেনেছিলাম জায়ান মাহমুদ। সে নাকি তার বোনের বাচ্চাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছিলো আর কাকতালীয় ভাবে তার সাথে আমার দেখা।
সেদিন, উনি আমার নাম্বার কালেক্ট করে রেখেছিলেন। এরপর থেকে তার সাথে আমার প্রায় কথা হতো। কত রাত নির্ঘুম কেটেছে শুধু তার সাথে কথা বলে!এসএসসি পরীক্ষায় আমি জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হলাম।
এরপর,শুরু হলো ভর্তিযুদ্ধ টিকে গেলাম বেস্ট কলেজে। কলেজে ভর্তি হবার পর থেকে জায়ানের সাথে প্রতিদিন দেখা হতো।
আমার ১৯তম জন্মদিনে জায়ান আমাকে প্রপোজ করে।তাকে ফিরিয়ে দেই নি কারণ তাকে আমি ভালবাসতাম।
ইন্টার পরীক্ষা দেবার পর আম্মার আকস্মিক মৃত্যু ঘটলো।আব্বা তখন একা মানুষ কি করবেন আমাকে নিয়ে ভেবে পাচ্ছিলেন না। আব্বার কলিগরা পরামর্শ দিলো আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য। আব্বা যখন উনাদের বললেন,তাহলে কাজলের পড়াশোনা? আরে এখনকার যুগে পড়াশোনা বিয়ের পরও করা যায়।
আব্বা অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলেন কন্যাদান করবেন।
এদিকে, আমি বারবার জায়ানকে বলছিলাম,
আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য।
জায়ান সব শুনে বলেছে,
আগে তোমার বাবাকে জানাও এরপর যদি উনি রাজি হয়ে তবে আমি আমার পরিবারকে নিয়ে এসে তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী বানিয়ে নিয়ে যাবো।
জায়ানের কথা শুনে মন ঠান্ডা হলেও এককোনায় খোঁচাখুঁচি চলছিলো।
এরইমধ্যে কোনো এক রাতে আব্বা আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
-মা’রে, তোকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার আমার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু উপর ওয়ালা বুঝি অন্য কিছু চাইছেন।তোর কি পছন্দের কেউ আছে? থাকলে আব্বাকে বল;কারণ এখন তোর মা আমি এবং বাবাও আমি।
-আব্বা, জায়ান নামের একজন আছেন উনি আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন এবং আমিও উনাকে পছন্দ করি।
আব্বা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন আর আমি জায়ানকে কল করে সব কথা ওকে জানিয়ে দিলাম। আর খুব শীঘ্রই যেন ও ওর পরিবারকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে।
আগষ্টের ৫ তারিখ
জায়ানের পরিবারের লোক আজকে আসবে আমায় দেখতে। তাদের আপ্যায়নে যাতে কোনো প্রকার ত্রুটি না হয় সেদিকে ছিলো আব্বার কঠিন দৃষ্টি।
যথারীতি, উনারা আসলেন এবং আমাকে উনাদের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।একে একে সবাই আমার দিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।আমার বেশ অস্বস্তি হতে লাগলো কিন্তু কিছু করার উপায় নেই। আঁড়চোখে একবার জায়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম দেখলাম ও মুখ মলিন করে মাথ নিচু করে রেখেছে।
এরই মাঝে জায়ানের মা আব্বাকে বললেন,
-তা রায়হান সাহেব, আপনার মেয়েকে তো দেখলাম কিন্তু মেয়ে তো কালো। আর দেখেন আমার ছেলে আগুন ফর্সা। মানে বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি? তবুও আমার ছেলের পছন্দ হয়েছে তাই কিছু বললাম না। কিন্তু, আমার একটা কথা আছে?
-জি বলুন,
আব্বা নিচুস্বরে বললেন।
– আপনার গুলশানের ফ্ল্যাটটি আমার ছেলের নামে দিতে হবে। বুঝতে পারছেন আপনার ওমন কালো মেয়েকে আমার ছেলের বৌ বানিয়ে নিবো তার একটা দাম আপনি দিবেন না,?
সেদিন আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝেছিলাম, মেয়ের বাবারা বুঝি এমন অসহায় হয়। যদি আব্বা উনাদের কাছে মেয়ের বাবা না হয়ে ডক্টর রায়হান হিসেবে দাঁড়াতো তবে কি উনারা সাহস পেতো এসব কথা বলার?
-আম্মু, আমি কাজলকে বিয়ে করতে চাই না আর তুমি কি না ফ্ল্যাট চাইছো!আঙ্কেল, আসলে কিভাবে বলবো কথাটা তারপরও বলি আসলে আপনার মেয়েকে আমার পছন্দ না সে জায়গায় বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না। পারলে আমাদের মাফ করে দিবেন চলি আমরা।
-জায়ান, দাঁড়াও। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোথাও যাবে না।
-এই নাও দাঁড়ালাম। এখন তাড়াতাড়ি তোমার প্রশ্ন করো।
-এত বছর কি তবে আমার সাথে অভিনয় করেছো তুমি?এই না তুমি গতকাল রাতে আমাকে বলেছো,
বিয়ে করলে আমাকে করবে অন্য কাউকে না। তবে আজ কেন এই কথা বলছো?
-আমি জাস্ট মজা করে তোমার সাথে গতকাল রাতে ওই কথা বলেছি।
-মজা? আমার সাথে তুমি মজা করেছো? কিন্তু কেন?কি এমন ক্ষতি করেছি তোমার যার জন্য আমার জীবন নিয়ে এভাবে খেললে তুমি?
-কোনো অপরাধ তোমার নেই। যদি তুমি সুন্দরী হতে অনায়াসে আমি তোমাকে আমার স্ত্রী বানাতাম।
-কেন,আগে দেখোনি আমি কালো নাকি সুন্দর?
-দেখেছি, কিন্তু আমি পারছি না তোমার সাথে এডজাস্ট হতে। আই এ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি কাজল। তুমি ভালো কাউকে ডির্জাভ করো।
সেদিন আমাকে মাঝপথে রেখে চলে যায় জায়ান।আব্বা কিছু বলেন নি। শুধু আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন,
-মা’রে কাঁদিস না তুই। এই ছেলে তোর উপযুক্ত না। দেখবি তোর আব্বা তোর জন্য একটি রাজকুমার আনবে যে তোকে মাথায় রাখবে কোনো অভিযোগ ছাড়া। ঠিক আমার মতো করে।
এরপর, থেকে আমার মন খালি একটি প্রশ্ন জাগ্রত হতে লাগলো,
– আমার অপরাধ ছিলো আমি কালো।
কিন্তু, প্রেমের সাড়া প্রথমে ওর দিকে থেকে এসেছিলো আমার দিক থেকে নয়।
ওই দিনের ঘটনার পর থেকে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলাম। এরপর,
হঠাৎ, করে কাজল আপু কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম উনি পড়ে যাচ্ছেন। আপুকে ধরার আগে পুকুরে পড় গেলেন আমি আতংকে চিৎকার করলাম। এরইমাঝে পিছন থেকে কে যেন পুকুরে ঝাঁপ দিলো?
আয়াত ভাই পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছেন। আপুকে পানি থেকে কোলে তুলে ঘাটের সিঁড়িতে শুইয়ে দিলেন। মাথার হিজাব খুলে দিয়ে কাজল আপুর পেটে বেশ কয়েকবার চাপ দিতেই পানি বের হয়ে গেলো।
এরপর, আয়াত ভাই আপুকে কোলে তুলে আমাকে ইশারা করলেন তাড়াতাড়ি কারের দরজা খুলতে।আমি এক দৌঁড়ে গেটের বাইরে এসে কারের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলাম।আয়াত
ভাইয়ের পুকুর ঘাট থেকে পাঁচমিনিট লাগলো গাড়ির কাছে আসতে। আপুকে বেক সিটে বসিয়ে দিলো আমি আপুর মাথাটি আমার কাঁধে রেখে দিলাম। আয়াত ভাই দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলেন উদ্দেশ্য হসপিটাল।
#চলবে
(