শেষ_বিকেলের_মায়া (১৩)

#শেষ_বিকেলের_মায়া (১৩)

আদীব শিক্ষিত ছেলে। তবে তেমন কাজ কর্মের সাথে নেই। সে মূলত পার্থিব কিছু সৃজনের চেষ্টায় আছে। বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ এর সমস্যাটা একটু বেশিই যেন। দেশের আনাচে কানাচে হাহাকার। অল্প খরচে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ই তার লক্ষ্য। জীবনে অনেক টা সময় এতে ব্যয় করেছে সে। এর সফলতা ও ফেলে দেওয়ার মতো না। ইতোমধ্যে সে কিছু তৈরি করে ফেলেছে। সেটাই প্রকাশ পেয়েছে সংবাদ পত্রে। সাধারণত নিউজ পড়া হয় না রিহানের। আদীবের বিষয়ে ইদানীং সে বেশ খোঁজ খবর রাখছে। সেই জন্যেই কথা টা তার কানে এসেছে। নিউজটা শেষ করে পাশে রেখে দিল সে। ফারিহাকে আগামী এক বছরের জন্য তার চাই। এখানে যদি কোনো ভাবে আদীব চলে আসে তবে সমস্যার দেখা দিবে। সেটা আরেকটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। মিনিট খানেক পর একজন নক করলেন। রিহান অন্যমনস্ক ভাবেই বলল,”কাম।”

লোকটা প্রবেশ করলেও ধ্যান নেই। সে বাইরের দিকটায় তাকিয়ে।

“স্যার। টিকেট বুকিং করা হয়েছে। আর রোগীর সাথে দুজনকে দেওয়া হবে। তারা সমস্ত কিছুর দায়িত্বে থাকবেন।”

কথাটা শুনে নি রিহান। ভদ্রলোক একটু নড়েচড়ে ডাকলেন।

“স্যার। আমি কি পরে আসব?”

“হুম?”

“পরে আসব?”

“না। কি বলছিলেন?”

পুনরায় কথা গুলো বলল সে। রিহান সবটা শুনে টিকেট সহ কাগজ পত্র পরখ করে নিল।

“সব ঠিক আছে। আগামী সপ্তাহেই তো ফ্লাইট?”

“জি স্যার।”

“আপনি এখন আসতে পারেন।”

“ওকে স্যার। থ্যাংক ইউ।”

ফারিহাকে কল করে বিষয়টা জানানো হলো। মেয়েটি নীরব কৃতজ্ঞতাটা বুঝেছে রিহান। তবু ওর ভেতরটা অশান্ত। একটা বছর কীভাবে সামাল দিবে এটাই ভেবে চলেছে। বিকেলের দিকে কফি শপে দেখা করল ওরা। ফারিহার মন আজ ফুরফুরে। রিহানের সাথে কিছুটা সহজ হয়েছে বোধহয়।

“আপনাকে ধন্যবাদ রিহান স্যার।”

রিহান নিরুত্তর। এতে কিছুটা বিভ্রান্তের মধ্যে পড়ল ফারিহা। খানিক বাদে রিহান বলল,
“লিসেন ফারিহা। আমি তোমাকে বড়ো ভরসা করে চলছি। তুমি জানো আমার পরিস্থিতিটা কতটা জটিল। এমন কিছু যেন না হয় যাতে করে আমার মম ড্যাড আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমি এই একটা বছর সব কিছু লুকাতে চাই।”

“বুঝি নি ঠিক।”

“সরাসরি বলছি। আদীব ছেলেটা সম্ভবত তোমাকে পছন্দ করে। সে করতেই পারে। তবে মনে রাখবে আগামী এক বছর তুমি আমাকে সময় দিচ্ছ। জগতের সমস্ত ভাবনা থেকে দূরে থাকতে হবে তোমায়।”

আদীবের ব্যাপারটা শুনে আনমনা হয়ে উঠল মেয়েটা। তার কখনো এমন মনে হয় নি। বরং মনে হয়েছে আদীব তাকে স্নেহের চোখে দেখে।

“ফারিহা।”

“জি।”

চমকে উঠল করল মেয়েটি। রিহান কিছুটা বিরক্ত সাথে ভীষণ চিন্তিত।
“আমার বিষয়টা মাথায় রেখো। আমি টেনশনে আছি।”

“আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা হবে না রিহান।”

“গুড।”

দুজনেই কফি শেষ করল। ফারিহাকে ড্রপ করার কথা থাকলেও কিয়ার ফোন কলের জন্য সেটা হলো না। রিহান তৎক্ষণাৎ অন্য কোথাও চলে গেল। যাওয়ার পূর্বে শুধু বলল,
“বাসায় পৌছে কল কোরো।”

চোখের সামনে নিজ প্রিয়তমা দাঁড়িয়ে। রিহানের পা চলল না যেন। কিয়া ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল রিহানকে।
“সারপ্রাইজ।”

উত্তেজনায় কথা বলতে পারছে না রিহান। সে শুধু কিয়াকে শক্ত হাতে আলিঙ্গন করল।
“অবিশ্বাস্য। তুমি সত্যিই এলে কিয়া?”

“হুম।”

এর পূর্বেও একবার দেশে ফিরেছিল কিয়া। সে কথা জানার পর ও চুপ থেকেছিল রিহান। আজ কেন যেন অভিযোগ করতে ইচ্ছে হলো না। ভালোবাসার কাছে হেরে গেল সমস্ত ভুল।

“ক্লান্ত আছ নিশ্চয়ই? বলো কোথায় যাবে।”

“যেখানে নিয়ে যাবে।”

উত্তরটা রিহানের পছন্দের। মেয়েটি কখনো দাবি রাখে না। সর্বদা তার উপর ভরসা করে। বিকেলের শেষ প্রহর বিধায় ওকে নিয়ে শান্ত একটা জায়গায় এল রিহান। চারপাশটা ভীষণ শীতল। সেই সাথে,পাখির কলতান। এমন জায়গা কিয়া ও রিহান উভয়ই পছন্দ করে। রিহানের শক্ত হাতটা মুঠোয় নিয়ে চুমু খেল কিয়া। তার চোখটা হঠাৎ ছলছল করে উঠল। রিহান কিছু বোঝার পূর্বেই বুকের কাছটায় মাথা এলিয়ে দিল।

“তোমায় কষ্ট দিয়েছি রিহান। বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি তোমায়।”

“জানি বোকা। এই সময়টায় এভাবে চোখের জল ফেলবে?”

“আমার ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে সব ছেড়ে চলে আসি।”

“আসো কিয়া। সব ছেড়ে দিয়ে চলে আসো। আমি তোমাকে রানী করে রাখব। বড়ো ভালোবাসি।”

“আসব। শুধু একটু সময় দাও।”

রিহান আর কিছু বলল না। তার ভেতরটায় উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে। সেটা গিয়ে পড়ল কিয়ার তুলতুলে অধরে। দুটি অতৃপ্ত হৃদয় কত শত দিন পর নিজেদের কাছে পেল?

পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ফাহিমা। তাকে হসপিটালে আনা হয়েছে। দেয়ালে ঘেঁষ দিয়ে আছে ফারিহা। একটু দূরে বসে আছে আদীব। মেয়েটির জন্য ওর মায়া হচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। খানিক বাদে ডাক্তার চেকাপ করে বললেন এক ঘন্টা পর ডিসচার্জ দিয়ে দিবেন। ক্লান্ত দেহ ফারিহার। সে মেঝেতে বসে পড়ল। ছুটে এল আদীব।

“এখানে কেন বসলে? উঠো, চেয়ারে গিয়ে বসো।”

ফারিহার বাহু টেনে উঠিয়ে নিল আদীব। বসিয়ে দিল চেয়ারে। ভীষণ কান্নায় মেয়েটার বুক আনচান করছে। হসপিটাল বিধায় কাঁদতে পারছে না। আদীব ভরসার হাতটা মাথায় রাখল।

“চিন্তা কোরো না।”

“চিন্তা না করে কীভাবে থাকব আদীব ভাই? পৃথিবীর সব থেকে দুঃখের চিকিৎসার অভাবে আপনজন হারানো।”

এ কথাটা আসলেই বুঝতে পারে আদীব। নিজ পিতাকে হারিয়েছে খুব ছোট সময়ে। সে সময় ছোট্ট একটা বাড়ি ছিল। যা এখন তিন তলায় রূপ নিয়েছে। পুরোটাই তার মায়ের পরিশ্রমে। ভদ্রমহিলা জীবনে বড়ো পরিশ্রম করেছেন। ফারিহা চোখ বন্ধ করে বলল,”রিহান স্যারকে কল করতে হবে। আমার মা কে হারাতে দিব না আমি। কিছু তেই না।”

তৎক্ষণাৎ কল করল ফারিহা। রিহান তখন কিয়ার সাথে ডিনারে ব্যস্ত। সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটাচ্ছে। সে কল রিসিভ করার প্রয়াস করছে না বিধায় ফারিহা টেক্সট পাঠাল। রিহান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল ফারিহার ম্যাসেজ। কিয়া এক চামচ খাবার এগিয়ে দিয়েছে। রিহান একটু হাসির চেষ্টা করে বলল,”এক মিনিট।”

কল রিসিভ করল সে। ফারিহার ভাঙা কণ্ঠ,
“রিহান স্যার। আর কত সময় লাগবে বলতে পারেন? আগামী সপ্তাহটা কেন আসছে না এখনো?”

ফারিহার কণ্ঠটা কেমন যেন। রিহান একটু বিস্মিত হলো।

“এভাবে কেন বলছ?”

“আমার মা হসপিটাল রিহান স্যার। আমার মা হসপিটালে। চোখের সামনে ধুকে ধুকে ম র ছে। আমি কিছু করতে পারছি না। কিচ্ছু না।”

ওপাশ থেকে কান্নার শব্দটি রিহানের গলায় এসে আটকে গেল। সে কল কেটে দিল।
“কি হলো রিহান? মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?”

“আমাকে যেতে হবে কিয়া। পরে কল করে জানাব।”

রিহান টিসুতে মুখ মুছে চলে গেল। কিয়ার প্লেটের খাবার এখনো শেষ হয় নি। তার দু চোখ কেমন করে উঠল। তবে কি সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে তার প্রিয় পুরুষ?

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

| আগে লেখা হয়ে গিয়েছে। সব সময় তো সন্ধ্যায় দেই। তাই আজ ভাবলাম, শেষ বিকেলেই দেওয়া যাক।|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here