শ্রাবণ ধারা পর্ব -০৪

#শ্রাবণ_ধারা
//পর্ব_৪//
#সাদিয়া

বাড়িতে এসে এই যে রুমে ঢুকেছে আর রুম থেকে বের হয় নি ধারা।এতোটা অপমানিত সে জীবনে কখনো হয়নি।আচ্ছা তার কি এসব প্রাপ্য?কোন পাপের এমন শাস্তি ধারা পাচ্ছে তা সে নিজেও জানে না।হয়তো শ্রাবণকে ভালোবাসার শাস্তি এটাই!ধারা অনবরত কেঁদে চলেছে। তার কান্না কিছুতেই থামছে না।তার জীবনটা এমন এলোমেলো কেন হয়ে গেলো তা-ই বোধগম্য হলো না ধারার।কাদঁতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে ধারার।
কান্নার মাঝেই ধারার ফোনটা বেজে উঠে।ধারা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তার বেস্টফ্রেন্ড তিথি ফোন করেছে।ধারা ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই অপর পাশ থেকে তিথির উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।

—ধারা তোর নাকি শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে বিয়ে হয়ে গেছে?

—হুম।

—কি বলছিস এইসব?কিভাবে?

—তিথি বলতো আমি কি খুব খারাপ মেয়ে রে তিথি? আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে কোন পাপের এমন শাস্তি দিলো বলতো?কি এমন পাপ করেছিলাম যার জন্য আমার জীবনের ধারা এমন ভাবে পাল্টে গেলো?বিশ্বাস কর তিথি ওরা যা বলছে আমি ওমন নইরে তিথি।আমি কিচ্ছু করিনি। আমি ফাঁসাইনি শ্রাবণ স্যারকে।বরং উনিই মিথ্যা বলেছে।আমার সাথে উনার কোনো সম্পর্ক নেইরে তিথি।আমি খারাপ মেয়ে নই।

এতটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে ধারা।
—চুপ চুপ কর ধারা। কান্না করিস না।আমি জানি তুই কিছু করিসনি।কোনো দোষ নেই তোর। আমি জানি।কান্না করিস না সোনা।কান্না করলে অসুস্থ হয়ে যাবি তো।

—কেউ আমাকে বিশ্বাস করছে না।বাবা-মাও না।আমি তো উনাদের নিজের মেয়ে বল তাহলে উনারা কেন আমার কথা বিশ্বাস করছে না।উনারা একটা বাইরের মানুষের কথায় আমায় এতো বড় একটা শাস্তি দিয়ে দিলো।উনাদের কি নিজের মেয়ের উপর একটুও বিশ্বাস নেই?তারা কি জানে না তাদের মেয়ে কেমন?এতো বড় শাস্তি কেন দিলো তারা আমাকে?আমার এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে।আমার কি এগুলোই প্রাপ্য ছিল বল তো তিথি?

অপর পাশ থেকে অতিথির ধমকের আওয়াজ ভেসে এলো,
—চুপ!একদম আজেবাজে কথা বলবি না।তুই কেন মরে যাবি?তুই তো কিছু করিসনি।

—কিছু না করেও তো আমি এখন মহা দোষী রে তিথি।মহা দোষী আমি।

ধারা যখন তিথির সাথে নিজের কষ্টের কথা বলায় ব্যস্ত তখনই পিছন থেকে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ পাওয়া গেলো।ধারা আওয়াজ অনুসরণ করে ঘাড় ঘুরাতেই ধারা দেখতে পেলো তার বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছে।নিজের বাবার চোখের দিকে তাকাতেই ভয়ে আঁতকে উঠল ধারা।ধারার বাবার চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি ভীষণ রেগে আছেন।ধারা কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে তার মায়ের দিকে তাকালো।তার মা দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন।এবার ধারার দুই ভ্রুয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব কমে আসে।ধারা ভাবছে কি হয়েছে তাদের দুজনের।একজন প্রচন্ড রেগে আছে আর আরেকজন কাঁদছে!ধারা গভীর ভাবনায় ডুবে যায়।
—আকিবা শ্রাবণ কে ফোন করে বলো ওর বাবা আর ভাইকে নিয়ে এক্ষুনি এখানে আসতে।আর আমি আবিরকে ফোন করছি।
অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠে কথাটা বলে প্রস্থান করলেন ধারার বাবা জনাব আনোয়ার শেখ।

ধারার কান্না সেই কখন থেমে গেছে।এখন সে নিজের বাবা মায়ের মুড বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত।
‘না জানি আবার কোন ঝড় অপেক্ষা করছে আমার জন্য।উফফ আর ভালো লাগে না এইসব।দুই দিনে জীবনটা নরকে পরিনত হয়েছে। দেখা যাক আবার কোন তুফান আসে!’
.
ধারাদের বাসার ড্রয়িং রুমের সিঙ্গেল সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে শ্রাবণ।শ্রাবণের শার্ট এলোমেলো হয়ে আছে।তার সামনের সোফায় আনোয়ার শেখ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।পাশের সোফায় শ্রাবণের বাবা জনাব সৈকত রহমান আর শ্রাবণের ভাই শিহাব হতভম্ব হয়ে বসে আছে।
ডাইনিং টেবিলের চেয়ার বসে পানি পান করছে আবির আর পাশে দাঁড়িয়ে আবিরের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন ধারার মা।আবির ক্ষনে ক্ষনে কটমট করে শ্রাবণের দিকে তাকাচ্ছে। তার এখন শ্রাবণকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে মন চাচ্ছে। রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আবিরের।

ড্রয়িং রুমের পিন পতন নিরবতা ভেঙে দিয়ে আনোয়ার শেখ গম্ভীর কণ্ঠে শ্রাবণেরর উদ্দেশ্য বলে,
—কেন করলে এমন?

শ্রাবণ মাথা নিচু থাকা অবস্থাতেই জবাব দেয়,
—এ যারা আমার কাছে আর কোনো পথ ছিলো না।

এবার তেতে উঠে আবির,
—ইউ ব্লাডি..কি এমন হয়েছিলো যার জন্য তুই আমার বোনকে এমন বদনাম করেছিস?বল?
বলেই শ্রাবণের দিকে তেড়ে আসে। মিসেস আকিবা তাকে আটকে নেয়।
আবিরের কথায় শ্রাবণ শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়,
—আমি ধারা কে ভালোবাসি।
শ্রাবণের কথায় আবিরের রাগ দ্বিগুন হলো।রাগে সে ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। একজন তার বোনকে বদনাম করে তাকে বিয়ে করে এখন এসে বলছে সে নাকি তার বোনকে ভালোবাসে।মগের মুল্লুক নাকি!

শ্রাবণের ভাই শ্রাবণকে প্রশ্ন করে,
—তুই পাগল?তুই যদি ধারাকে ভালোই বাসবি তাহলে ওকে এভাবে সবার সামনে ছোট করলি কেন?তোর কোনো ধারণা আছে মেয়েটার উপর দিয়ে এই দুই দিনে কি তুফান বয়ে গেছে।তুই রীতিমত মেয়েটার জীবন বিষিয়ে তুলেছিস।তুই এইটাকে ভালোবাসা বলছিস?

—এটা করা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো পথ খুলা ছিলো না।

এবার আনোয়ার শেখ মুখ খুলেন,
—কি এমন হয়েছিলো যার জন্য তুমি আমার মেয়েটাকে বদনাম করলে?

বুক ভরে দম নেয় শ্রাবণ।চোখ তুলে একবার ধারার রুমের দিকে তাকায়।শ্রাবণ তাকাতেই ধারা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।এতক্ষণ সে দরজার ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কথা শুনছিলো।শ্রাবণ যখন বললো সে ধারাকে ভালোবাসে তখন ধারা ভীষণ অবাক হয়েছিলো।শ্রাবণ তাকে ভালোবাসে এটা যেন ধারা কল্পনা করতে পারছে না।ধারা ভাবছে এটা কি করে হতে পারে?শ্রাবণ স্যার তাকে কি করে ভালোবাসতে পারে?হাউ?
ধারাকে সরে যেতে দেখে শ্রাবণ আলতো হাসে।মেয়েটা হাতে পায়ে বড় হলেও স্বাভাবে এখনো বাচ্চামির আভাস পাওয়া যায়।ধারার বাচ্চামি রূপটা শ্রাবণের ভীষণ প্রিয়।শ্রাবণ ধারার এই বাচ্চামির প্রেমে বার বার শতবার পড়তে রাজি।

—কি হলো আব্বুর কথার জবাব দিচ্ছো না কেন?
শ্রাবণকে চুপ থাকতে দেখে শক্ত কণ্ঠে বলে উঠে আবির।

—ওই দিন কলেজে আমার নাজমুল ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিলো। উনি আমার কাছে ধারার কথা জানতে চাইলেন।আমি যতটুকু জানতাম বলেছি।তারপর উনি আমাকে বললেন উনি নাকি ধারাকে ভালোবাসেন।
এতটুকু বলে থামলো শ্রাবণ।

—নাজমুল ধারাকে ভালোবাসলে তোমার সমস্যা কোথায়?

—আমিও তো ধারাকে ভালোবাসি।এখন আমি নিশ্চয় চাইবো না আমার ভালোবাসার মানুষকে অন্য একজন ভালোবাসুক।নাজমুল ভাইয়ের কথায় অবাক হয়েছিলাম।কারণ আমাদের ক্যাম্পাসের সবাই জানতো নাজমুল ভাই আর নাবিলা আপুর কথা।তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিলো আট বছরের।আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না।যখন আমি তাকে নাবিলা আপুর কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তিনি বললেন নাবিলা আপুর সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে যেখানে সামনের মাসে তাদের বিয়ে হবার কথা ছিলো।কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন নাবিলা আপুকে তিনি আর ভালোবাসেন না।নাবিলা আপুর থেকে তার মন উঠে গেছে।এখন তিনি ধারাকে ভালোবাসেন আর ধারাকে বিয়েও করতে চান।তখন আমি নাজমুল ভাইকে বললাম ধারা আর আমার মধ্যে সম্পর্ক আছে।তা শুনে তিনি রেগে গেলেন।বললেন যেভাবেই হোক তিনি ধারাকে বিয়ে করেই ছাড়বেন।

এতটুকু বলে থামলো শ্রাবণ। সবাই শ্রাবণের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবার চোখে এক প্রশ্ন কেন শ্রাবণ এতো বড় একটা মিথ্যা কথা বললো?কি ছিলো শ্রাবণের এতো বড় একটা মিথ্যা বলার পিছনের আসল কারণ?ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই তা জানতে চায়।

#চলবে……ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here