#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_পনেরো
[#পার্টনার]
ইদানিং পড়ার টেবিলে ও মন বসে না শ্রাবণের মনে হয়
প্রেম প্রেম ভাব তার এখনও কাটেনি! খুব ইচ্ছে হয় মনের খাচায় বন্দি করে রাখতে। খুব ইচ্ছে হয় মেঘলা দিনে দুজনে মিলে কোন বকুল তলায় বকুল ফুল কুড়িয়ে নিতে। নিজেদের মধ্যে সুখ কুড়াতে। আবার মনে হয় স্নিগ্ধার বলা কথা! পাখি ছেড়ে দিলে যদি ফিরে আসে তাহলে বুঝবে সে পাখির মনে মায়া জন্মেছে! “আসলেই কি মায়া জন্মে? যদি তাকে ধোকা দিয়ে উড়ে যায়?”
শ্রাবণ কিছুক্ষণ উশখুশ করে স্নিগ্ধার রুমের পাশে দাড়ালো। স্নিগ্ধা তখন সবেমাত্র গোসল করে ভিজে চুল গুলোকে তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ভেজা চুলগুলোকে শুকিয়ে নিচ্ছে আর লোশন হাতে পায়ে মেখে নিচ্ছে। কেউ একজন তাকে চোখে হারাচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই নিজের মত গুনগন করতে ব্যস্ত।
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে দেখতে দেখতে আপন মনে বলে উঠলো
–“উড়ো চিঠি নও গো তুমি!
নও কোন ভুল!
তুমিই আমার প্রাণের প্রিয়া!
তুমিই আমার সুর!”
বেলকনির থাই গ্লাস খুলে দিতে গেলেই মনে হলো কোন প্রতিচ্ছবির হঠাৎ প্রস্থান হলো। স্নিগ্ধা পেছন ফিরতেই সেই ব্যাক্তি আর তার প্রতিচ্ছবি লুকিয়ে পরল। স্নিগ্ধা দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
লুকিয়ে চুরিয়ে কষ্ট করে প্রিয়তমার মুখখানা দেখতে ও দিল না! ভিতর থেকে স্নিগ্ধা দরজা বন্ধ করে শয়তানি হেসে বলল –
–” খুব ইচ্ছা আমাকে দেখার, পড়ার সময় বেত্রাঘাত করার সময় মনে থাকে না মাষ্টার মশাই? ওরফে মিস্টার শ্রাবণ, কি ভেবেছো কিছুই বুঝি না আমি? সব বুঝি হুহ!”
শ্রাবণ বেচারা দুঃখি মনে নিজের রুমে প্রবেশ করল। রুমে ঢুকে বন্ধু তাশদীদকে ফোন লাগল। যে করেই হোক স্নিগ্ধাকে তার পটাতে হবেই, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপকার করতে পারে উৎপল। উৎপলকে ফোন করল শ্রাবণ,
–” হ্যালো, শ্রাবণ বল কি বলবি!”
–” তোকে একটা বুদ্ধি দিতে হবে, দোস্ত!”
–” কি বুদ্ধি?”
–” এখানে নয়, আমি আসছি ফুডপ্যালেস ক্যাফেতে। তুই ও সময় মতো আসিস।
_____________________
পুষ্পিতা দুধ জাল দিয়ে স্নিগ্ধার রুমে আসলো।
স্নিগ্ধা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে। স্নিগ্ধার সামনে দুধের গ্লাসটা রেখে বলল –
–” স্নিগ্ধা দুধ টুকু খেয়ে নে মা! ”
স্নিগ্ধা পড়ছিল তখন মামির কথা তার শুনা হলো না।
পুষ্পিতার দুধের গন্ধে কেমন গা গুলিয়ে আসছে। অনেক কষ্টে তিনি নিজেকে চেপে রেখেছিলেন। হঠাৎ করে যেন সব একদম ভিতর থেকে উলটপালট হয়েগেছে তার, সহ্য করতে না পেরে স্নিগ্ধার রুমের ওয়াশরুমের বেসিনে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দিল।
স্নিগ্ধা ও তার পিছু পিছু চলে এলো। হঠাৎ করে মামির এমন অবস্থা তার ভালো লাগছে না। কি হলো মামির? শরীর খারাপ করলো কেন হঠাৎ? প্রশ্ন যেন তার কমছে না। পুষ্পিতাকে ফ্রেশ করিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল সে।
দূর্বল হয়ে পরেছে মামি, বাসায় শ্রাবণ ও নেই একটু আগেই বেড়িয়েছে। মাথায় পানি দিয়ে মুছিয়ে বসিয়ে সে মামাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পুষ্পিতার শরীরের অবস্থা।
কিছুক্ষণের মধ্যে সাজ্জাদ সাহেব চলে এসেছেন। পুষ্পিতার হঠাৎ হঠাৎ এমন অসুস্থতা তার বুকের ভেতরটা কেমন শিউরে উঠে।
____________________________
মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে সাজিয়ে রাখছে স্নিগ্ধা, আজ তার খুশির সিমা নেই! কালো – সাদা রঙ্গের মিষ্টির মাঝে কোনটা রেখে কোনটা খাবে তা নিয়ে মনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
শ্রাবণ সবেমাত্র ঘরে ঢুকেছে, উৎপল বেটা আজ যে বুদ্ধি দিয়েছে এই বুদ্ধি যদি কাজে লাগে একদম কেল্লাহফতে।
আবার কাজ না হলে উৎপলের কপালে শনি গ্রহের
ঘুর্ণয়মান চরকা ও আছে।
স্বর্ণার সঙ্গে কথা বলতে তার মেজাজ গরম হয়ে যায়। মেয়েটার বড্ড গায়ে পরা স্বভাব, কিন্তু স্নিগ্ধা যদি এই কারনে তার কাছাকাছি আসে তাহলে ক্ষতি কি? আর স্বর্ণাকে সরাতে স্নিগ্ধাই যথেষ্ট, নাহলে শ্রাবণের পক্ষে সম্ভব নয় স্বর্ণাকে সরানো। মেয়েটা আজকাল খুব জ্বালাচ্ছে, স্নিগ্ধার সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিকঠাক হলে স্বর্ণাকে জানিয়ে দিবে তাদের বিয়ের কথা। এসব ভাবতে ভাবতেই সে দেখতে পারল তার প্রিয়তমা মিষ্টির প্যাকেট থেকে কালোজাম একবার রাখছে তো আরেকবার সাদাটা দেখছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল-
–” এত মিষ্টি কেন?”
স্নিগ্ধা কোন উত্তর করল না, সে নিজের মত খেয়ে যাচ্ছে।
শ্রাবণ আবারও প্রশ্ন করল -” এত মিষ্টি কেন? কেউ কি বলবে আজ কি উপলক্ষে মিষ্টি আনা হয়েছে?”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাত ধরে টেনে নিয়ে একপাশে দাড় করিয়ে বলল –
–“আমার পার্টনার আসছে।”
–” তোর পার্টনার?”
–” হ্যা, আমার পার্টনার।”
–” তোর পার্টনার কে?’
–” আমার পার্টনার যখন আসবে তখন দেখবেন!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে কর্ণারে নিয়ে বলল ”
–” তোর পার্টনার তো আমি, আরেকজন কোথায়?”
–” আরেকজন, আরেকজন করছেন কেন? সে আপনার খুব আপনজন! আমার পার্টনার আমাকে কোলে বসাবে থুক্কু আমার কোলে বসবে।
আমি তাকে আদর করবো, তার গাল টেনে দিবো, তার সুন্দর সুন্দর হাত-পা গুলোকে মালিশ করে দিব। তাকে খাইয়ে দিবো। আপনি তো আমাকে বকা দেন সব সময়, আপনি কথায় কথায় পিটেন আমাকে। আমার পার্টনার আমাকে আদর করবে, ইশশ, কি যে ভালো লাগবে!
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে রাগী চোখে চেয়ে আছে। মনেহচ্ছে ভষ্ম করে দিবে।
–” কোন হারামজাদা তোর পার্টনার হবে?”
–” চুপ, মুখ সামলে কথা বলবেন! আমার পার্টনার আপনার মত অভদ্র হবে না, অসভ্য ইতর, আমার পার্টনার মিষ্টি হবে, দেখতে নাদুস-নুদুস হবে।”
–” তোর পার্টনারের হাত- পা ভেঙ্গে দিব, সঙ্গে তোর হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিব। আর এগুলো যদি না করি আমার নাম
শ্রাবণ নেওয়াজ খান নয়! ”
–” ইশশ, আপনি আমার পার্টনারের সামনে দাড়াতেও পারবেন না! আমার পার্টনার আপনার থেকেও বড় খান! ”
–” বড় খান মানি? কোন খান সে? ”
–” এত ডিটেলস এ বলতে পারবো না, মিষ্টি আছে খাইলে খান না খাইলে জান! থুক্কু যান! শ্রাবণ নাওয়াজ খান!”
শ্রাবণ রাগী চোখে চেয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে। রেগেমেগে সে রুমের ভিতর ঢুকে পরল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ফেটে পরছে। পুষ্পিতার রুমে ঢুকে দেখল পুষ্পিতা বিছানায় বসে ফোনে হেসে কথা বলছে। হয়তো মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করার আনন্দ সবার কাছে প্রকাশ করছে। ফোন রেখে স্নিগ্ধার পাশে ফিরে বললেন –
–” কিরে হাসছিস কেন এত?”
–” তোমার ভাতিজাকে রাগিয়ে এসেছি,”
–” কি বলেছিস আবার?ভ্রু কুচকে,
স্নিগ্ধা হাসতে হাসতে বলতে লাগল সব কথা, তা শুনেই পুষ্পিতা বলে উঠলেন –
–” দুষ্টু মেয়ে কোথাকার, আমার বাবুটা না আসতেই তার শত্রু বানিয়ে দিলি!”
–” আমি কি করবো, আমার ভালোই লাগছিল, রেগে জানো মামি উনার চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছিল।”
বলেই হাসতে লাগল স্নিগ্ধা।”
রাতের খাবার খাওয়ার জন্য শ্রাবণকে ডেকে আনা হলো।
সে আড়চোখে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে, সত্যিই স্নিগ্ধার মুখে আজ হাসির সিমা নেই সে আরও অবাক হলো সাজ্জাদ সাহেব আর পুষ্পিতার মুখ দেখে তাদের মুখ ও আজ খুব উজ্জল। খাবার খেয়ে উঠবে এমন সময় সাজ্জাদ সাহেব বলে উঠলেন –
–” শ্রাবণ মিষ্টি খেয়েছিস? আমাদের নতুন অতিথি আসছে।”
শ্রাবণ জিম খিচিয়ে, নিজেকে ঠান্ডা করে বলল –
–” কে আসছে?”
–” তোর চাচি কন্সিভ করেছে। আমাদের পরিবারে আরও একজন সদস্য আসতে চলেছে রে শ্রাবণ ।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে সাজ্জাদ সাহেবের দিকে তাকালো আরেকবার স্নিগ্ধার দিকে, স্নিগ্ধা তার সঙ্গে এই অতিথির কথা বলেছে? তার সঙ্গে ফাজলামি করেছে।
স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখল, স্নিগ্ধা ততক্ষণে তার রুমে দৌড়ে চলেগেছে। মনেমনে শ্রাবণ বলছে –
আমাকে বোকা বানিয়ে খুব মজা পাস না! সব বুঝেও বুঝিস না। সামনে থেকে তোকে ও আমি নাচাবো!
চলবে।