ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -১৪

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_চৌদ্দ
[#মায়া ]

–” কিরে পালাচ্ছিস কোথায়? এভাবে তো পালাতে দিব না! আমার পাওনা কোথায়?”
স্নিগ্ধার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়েগেছে পুরো! স্নিগ্ধার শ্বাস দ্রুত গতিতে উঠা নামা করছে। হায় কোন পাগলে পেয়েছে তাকে শ্রাবণের কাছে আসতে।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার গাল ধরে মুখটা কাছে এনে ঠোটে চুমু বসিয়ে দিয়েছে। স্নিগ্ধা ঠাস করে খাট থেকে পরে গিয়েছে। সঙ্গে বিকট চিৎকার করে উঠল সে নিজেই।

স্নিগ্ধার চিৎকার শুনে পুষ্পিতা দৌড়ে এলেন। তার পিছু পিছু শ্রাবণ ও ছুটে এসেছে । শ্রাবণকে দেখে স্নিগ্ধা অনেকটা হা হয়ে চেয়ে রইল!”

শ্রাবণ তো একটু আগে তাকে পড়াচ্ছিল। পড়াতে গিয়েই তো শাস্তি স্বরুপ শ্রাবণ স্নিগ্ধার ঠোটে চুমু দিতে এসেছিল।
তাহলে এখন কিভাবে রুমের বাইরে আসলো?
স্নিগ্ধা নিজেকে ভালো করে দেখতে লাগল না সে তো বিছানায় এসে পড়তে বসেছিল। তার মানে সে পড়তে ঘুমিয়ে পরেছিল!
পুষ্পিতা স্নিগ্ধার মুখের দিকে চেয়ে আছে। তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। আরেকটু এগিয়ে এসে বললেন –

–” কিরে চিৎকার করছিস কেন?”

–” আহ, মামি হঠাৎ কিভাবে যেন পরে গিয়ে ব‍্যাথা পেয়েছি নিজেই বুঝতে পারছি না।”

–” উফফ তুই ও না, কিভাবে চলিস বলতো?
এখানে পরেযাস, ওখানে পরে যাস। ঠিক করে হাটতে ও শিখিসনি।

–” ও আর হাটা? হাহাহা, চাচিআম্মু ভুলেগেছো ও আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কাদা জলে গড়াগড়ি করে পরেযেত তখন। হা, হা,হা,

–” মামি কিছু বলবে তুমি?”

–” আচ্ছা, ঠিক আছে, এই শ্রাবণ কি শুরু করেছিস তুই? মেয়েটাকে একটু কম জ্বালা তো।”
আর স্নিগ্ধা তোর নাকি পড়তে অসুবিধা হচ্ছে, পড়া বুঝতে পারছিস না তাহলে ওর কাছ থেকে পড়া বুঝে নিচ্ছিস না কেন?”
স্নিগ্ধার কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলো মনে পরেগেল শ্রাবণ যদি আবার ও একা পেয়ে এমন করে?

–” কিরে কিছু বলছিস না কেন?”

–” হুম, শ্রাবণ ভাই হয়েছে কি আমার না একটা চাপ্টার কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না, একটু বুঝিয়ে দিবে?”
শ্রাবণ কিছুটা চমকে গেলো । তারপর বলল-

–” হ‍্যা পড়াতে পারি, পড়া না পারলে শাস্তি পাবি!”

–” কি শাস্তি?”

–“বলা যাবেনা,”

–” তাহলে আমি পড়বো না,”

–” তাহলে আমি ও তোকে পড়াবো না! এবার বুঝ তুই কি করবি!”

–” আহ শ্রাবণ কি শাস্তি বলে দে না!”

–” শাস্তি টা হলো পড়া না পারলে ওর মোবাইল টা আমাকে দিতে হবে!”
স্নিগ্ধা শাস্তির কথা শুনে স্বস্তি পেলে ও। ওর মাঝে স্বস্তিটাই গায়েব হয়েগেল। শ্রাবণ সব সময় কিছু না কিছু গন্ডগোল করবেই। এত এত শাস্তি থাকতে তার কিনা এই শাস্তির কথাই মনে পরল?
কিছুক্ষণ ভেবে সে বলল-

–” আচ্ছা ঠিক আছে, আমি শাস্তির জন‍্য প্রস্তুত।”
পড়তে বসেছে স্নিগ্ধা সঙ্গে শ্রাবণ আরেক চেয়ারে বসে তাকে পড়াতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধা খেয়াল করল স্বপ্নের শ্রাবণের থেকে বাস্তবের শ্রাবণ খুব ভদ‍্র এখন পর্যন্ত তাকে কোন প্রকার ডিস্টার্ব করেনি।

শ্রাবণ যেভাবে পড়িয়েছে স্নিগ্ধা ও ঠিক সেই ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়েছে। দুজনের একজন ও পড়ার বাইরে কিছুই বলেনি। পড়ার পর শ্রাবণ স্নিগ্ধৃর রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।
________________________________

দিনগুলো বেশ ব‍্যাস্ততায় কাটছে স্নিগ্ধার। এইতো কিছুদিন আগেও সে খুব একটা ব‍্যস্ত ছিল না, পড়তে ইচ্ছা হলে পড়তো না হলে ঘুরাঘুরি আর মোবাইলে গেমস খেলে সময় কাটিয়ে দিত। এখন তার সবকিছুতে দখল দারি আর শাসন চলে । আর সেই ব‍্যক্তিটি আর কেউ নয় শ্রাবণ। ছেলেটা আজকাল উঠতে বসতে সব সময় তাকে
চোখে চোখে রাখে।এই তো কয়েক মাস আগে শ্রাবণ স্নিগ্ধার কোচিং সেন্টারে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ছলে দাড়ালেও এখন সরাসরি তার সঙ্গে এসে কোচিংয়ে পৌছে দেয়। আবার সময় মতো তাকে নিয়ে ও আসে, ভাবা যায়?স্নিগ্ধা আনমনে ভাবতে ভাবতেই কলেজ গেইট দিয়ে বের হচ্ছিল। এর মধ‍‍্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েগেল।

হঠাৎ বৃষ্টি! ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টির ফোটাগুলো পরতে লাগল।
স্নিগ্ধা আজ ছাতা নিয়ে আসেনি। বড় বড় বৃষ্টির ফোটায় সাদা কলেজ ড্রেস একদম ভিজে গায়ে লেপ্টে গেছে।
স্নিগ্ধা দৌড়ে কলেজের পাশে যাত্রী ছাউনিতে দাড়িয়ে পরল। ইশশ ভিজে একাকার হয়েগেল তার শরীর।
পাশে দাড়ানো অনেক ছেলে তারা সবাই চোখগুলো দিয়ে যেন গিলে খাচ্ছে। স্নিগ্ধার পাশে দাড়ানো আরেকটি মেয়ে বলে উঠলো –

–” স্নিগ্ধা, তোর আশিক এসেছে!”

–” কই? কিরে মিতু কোথায় স্নিগ্ধার আশিক?
পাশ থেকে মিতু দেখিয়ে দিলে উর্মি বলল –

হ‍্যা রে স্নিগ্ধ এটাই তোর আশিক না মানি কাজিন?”
স্নিগ্ধা রাগি চোখে তাকাতে সবগুলোর মুখ বন্ধ হয়েগেল। মুচকি মুচকি হাসতে লাগল সবাই। যেন স্নিগ্ধা কোন হাসির পাত্র।

শ্রাবণ গাড়ি থেকে নেমে ছাতা হাতে এলো। যাত্রী ছাউনির প্রায় সব ছাত্রীরা শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে।
খুব মিষ্টি চেহারা ছেলেটার। একদম ফর্সা ও না শ‍্যাম ও না উজ্জ্বল বর্ণের। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে আজ শ্রাবণ স্নিগ্ধার পছন্দের রঙ্গ পরেছে। সাদা রঙ্গের টিশার্ট পরে এসেছে শ্রাবণ।
শ্রাবণ ছাতা নিয়ে সামনে এগিয়ে এসে বলল –

–” তাড়াতাড়ি আয়, আজ হঠাৎ খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ”
পিছন থেকে শ্রাবণের কথা শুনে স্নিগ্ধার বান্ধবীরাও তাল মিলিয়ে বলে উঠলো – হ‍্যা স্নিগ্ধা তাড়াতাড়ি যা, খুব বৃষ্টি হচ্ছে! বাজ পরবে, আমাদের কথা চিন্তা করিস না!
স্নিগ্ধা তাদের সবার দিকে রাগী চোখে তাকালে সবাই চুপ হয়ে যায়।
স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে তার ছাতার নিচে এসে দাড়িয়ে পরল। দুজনে মিলে বৃষ্টিতে গাড়িতে উঠে পরল।
পিছন থেকে স্নিগ্ধার বান্ধবীরা যে যার মত আলোচনা করতে ব‍্যাস্ত।

–” কি করেছিস তুই? ভিজে একদম কি বিশ্রী দেখাচ্ছে!”

–” বিশ্রী দেখাচ্ছে মানি?”

–” কি বলছি বুঝতে পারছীস না? বৃষ্টিতে ভিজে পুরো শরীর দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টি যখন শুরু হচ্ছিল তখন কলেজ থেকে বের হতে কে বলেছিল? ঠান্ডা লেগে গেলে এখন কি করবি?”

–” তা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না!”
শ্রাবণ হঠাৎ করে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিল, স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আরেকটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল-.

—” আমি না করলে কে করবে চিন্তা?”

—” না, মানে আপনাকে চিন্তা করতে হবে আবার চিন্তা করতে হবে না। কারন আমি খুকি না, যে আমাকে ধরিয়ে দিতে হবে আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে।”

–” কথাটা ঠিক, তুই খুকি না, কিন্তু তুই হলি পাখি! পাখি বুঝিস তো? অনেকটা এরকম যে একটু ছাড়া পেলেই ডানা দুটো মেলে উড়ে যাবি!”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে অবাক হয়ে, তারপর নিজেকে সামলে বলল –

–” পাখি?”

–” হুম, পাখি! অবুঝ পাখি, পাখির মালিক কত ভাবে পাখিটাকে আগলে রাখে, কত সেবা করে কিন্তু পাখিটা বুঝতে চায় না! পাখিটা সেই নীল আকাশেই উড়ে যেতে চায়! ”

–” ছেড়ে দিন পাখিটাকে, যদি পাখির মনে মায়া জন্মায় তাহলে পাখি উড়ে আসবে আপনার কাছে।
আর যদি পাখির মনে মায়া না জন্মায় সে অন‍্য কোথাও বাসা বাধবে!”

—” পাখির উপর ভরসা নাই আমার!”

–” ভরসা যদি না থাকে তাহলে, পাখি পুষে লাভ কি?
এইটুকু ভরসা তো রাখতে হবেই।”

–” তাই?”

–” হুম,”

–” আচ্ছা, এত কথা কিভাবে শিখলি তুই?”

–” সব কথা মুখে মুখে শিখলেই হয়? কিছু কথা মনের ভিতর রয়, তাই মাঝে মাঝে প্রকাশ করি!”

–” বাহ! প্রেম করার দুরন্ত সময় পাড় করছিস!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে রইল। স্নিগ্ধার হঠাৎ বলা কথায় তার হুশ হলো। মাঝ রাস্তায় সে গাড়ি থামিয়ে রেখেছে। আবার গাড়ি চালাতে শুরু করল সে।
গাড়িতে একটি গান বাজিয়ে দিল সে। আর আড়চোখে ভিজে যাওয়া পাশে বসা সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকালো।

আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম

আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশীতে কান পেতে থাকি
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশীতে কান পেতে থাকি
তাতেই কাছে ডেকে, মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তবু ফিরিয়ে দিলাম

আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন-সুখের ভাবনা
তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন-সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে, চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম

প্রায় মিনিট বিশের পর এপার্টমেন্টের সামনে নেমে পরল তারা। স্নিগ্ধা গাড়ি থেকে নামার পর শ্রাবণ নেমে পরল।
স্নিগ্ধা আর শ্রাবণ এপার্টমেন্টের চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল।

_____________________________
ইদানিং পড়ার টেবিলে ও মন বসে না শ্রাবণের মনে হয়
প্রেম প্রেম ভাব তার এখনও কাটেনি! খুব ইচ্ছে হয় মনের খাচায় বন্দি করে রাখতে। খুব ইচ্ছে হয় মেঘলা দিনে দুজনে মিলে কোন বকুল তলায় বকুল ফুল কুড়িয়ে নিতে। নিজেদের মধ‍্যে সুখ কুড়াতে।
আবার মনে হয় স্নিগ্ধার বলা কথা! পাখি ছেড়ে দিলে যদি ফিরে আসে তাহলে বুঝবে সে পাখির মনে মায়া জন্মেছে! আসলেই কি মায়া জন্মে? যদি তাকে ধোকা দিয়ে উড়ে যায়?

চলবে।
পার্টটা আজকে খানিকটা বড় করে দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here