ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -১৬

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_ষোল
[#জীবনসঙ্গী]

–” তোর চাচি কন্সিভ করেছে। আমাদের পরিবারে আরও একজন সদস‍্য আসতে চলেছে রে শ্রাবণ ।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে সাজ্জাদ সাহেবের দিকে তাকালো আরেকবার স্নিগ্ধার দিকে, স্নিগ্ধা তার সঙ্গে এই অতিথির কথা বলেছে? তার সঙ্গে ফাজলামি করেছে।
স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখল, স্নিগ্ধা ততক্ষণে তার রুমে দৌড়ে চলেগেছে। মনেমনে শ্রাবণ বলছে –
আমাকে বোকা বানিয়ে খুব মজা পাস না! সব বুঝেও বুঝিস না। সামনে থেকে তোকে ও আমি নাচাবো!
_________________________

দুদিন ধরে শ্রাবণ স্নিগ্ধার সঙ্গে আবারো একই রুমে থাকছে।তার কারন পুষ্পিতার প্র‍্যাগন‍্যান্সির কথা শুনে বাড়ি থেকে কাজের লোক সমেত এসেছে স্নিগ্ধার নানু, সঙ্গে গ্রামের থেকে ফল, সবজি নিয়ে এসেছেন। গ্রামের বাড়িতে লোক খাটিয়ে নিজেদের জমির ফলফলাদি খাওয়াবেন। এর স্বাদই আলাদা, বাজারের জিনিসগুলোতে বেজাল দিয়ে ভর্তি।ছোটছেলের বউয়ের ঘরে নতুন মুখ আসছে, তাকে কি করে বেজাল জাতীয় খাবার খাওয়ায়। এই চিন্তায় স্নিগ্ধার নানু সবকিছু এনে রেখেছেন। কাজের মহিলা পার্মানেন্ট গ্রাম থেকে আনিয়েছেন। বাচ্চা যেন সুস্থ সবলভাবে জন্ম নেয় তার জন‍্য।

স্নিগ্ধার ফার্স্ট ইয়ারের পরিক্ষা শেষ হয়েছে, সে ও এখন কিছুটা সময় কাটাচ্ছে নিশ্চিন্তে। শ্রাবণ তাকে আগের থেকে পড়াতে খুব একটা চাপ দিচ্ছে না, তবে একদম ছাড় ও দেয়নি পড়তে বসলে ঠিক করে পড়া না পারলে বেত্রাঘাত কম পড়ে না একটি ও। ঘুম আসছে তার, পড়া এখনো শেষ হয়নি, তাই চা খাওয়া প্রয়োজন মনে করল স্নিগ্ধা। রান্নাঘরের কেবিনেট থেকে চা পাতার বক্স টা নামিয়ে পাশে রাখছিল এর মধ‍্যেই শ্রাবণ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।

চা বানানোর জন‍্য স্নিগ্ধা চায়ের পাতিলে ঘন দুধ গুলো জ্বাল দিতে লাগল। এই ঘন দুধের মালাই মিশ্রিত চায়ের স্বাদ তার কাছে অমৃত! দুধ টাকে ঘন করে জ্বাল আগেই দেওয়া বলে সে দুধের ফুটন্ত অবস্থায় চা-পাতি দিয়ে আবার ফুটাতে লাগল। শ্রাবণ স্নিগ্ধার সামনের কিচেনের কর্নারের টাইলসে বসে পরল।
তারপর বলল -.

–” একটা কথা ছিল,”
ফুটন্ত চা টাকে চায়ের কাপে ঢেলে স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে ভ্রু-কুচকে তাকালো, তারপর বলল –

–” কি কথা?”

–” আমি ভাবছি, তোর পরিক্ষা তো শেষ, সামনে অনেক চাপ থাকবে। ভর্তি পরিক্ষা, তারপর মেডিক্যাল, ভার্সিটির জন‍্য চেষ্টা করতে হবে। আমার ও মাস্টারসে ভর্তি তারপর চাকরি এসব নিয়ে দৌড়তে হবে। এই মুহূর্তে যদি আমরা একটু বাইরে ঘুরতে যাই কেমন হবে বলতো?”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো তারপর জেরে ফেলার ভঙ্গিতে বলল –

–” চায়ে চিনি কত চামচ দিব?”

–” তুই যাবি?”

–” চা ঠান্ডা হয়ে যাবে, চা টা পান করুন আগে,তারপর ভাবা যাবে কোথায় ঘুরতে যাবো।” শ্রাবণ স্নিগ্ধার কথা শুনে নিজের মাথা ঠান্ডা করে বলল –

–” এক চামচের অর্ধেক!”

–” এত কম!”

–” এটা হচ্ছে সতর্কতা! চায়ে চিনি বেশি খেয়ে মজা বাড়ানোর কি দরকার? শুধু শুধু সুগার টা বেড়ে যাবে।
আর এমনিতেই সুন্দরী মেয়ে তারপর তার হাতে মালাই ভর্তি চা! এত মজা কি হজম হয়?”

–” চিনির টপিকে ছিলাম, সুন্দরী মেয়ের টপিকে ছিলাম না।”

–” ও, হ‍্যা ভুলে গিয়েছিলাম, তা যাবি নাকি? শুন, চাচ্চু, চাচিআম্মুর দোহাই দিস না।”

–” বাহ! আগেই ম‍্যানেজ করে এসেছো, তাহলে আর আমার অনুমতি নিতে এলে কেন?”

–” ওমা, তুই যাবি কিনা তা ও জানতে হবে না, ওটা তো তাদের মত। যাবি? চল তোকে নিয়ে ঘুরে আসবো, খুব মজা হবে!”

–” কোথায় যাবে?”

–” সিলেট!”

–” সিলেট?”

–” হুম, মোটামুটি সব জায়গায় গেলেও সিলেট যাইনি।
চল সেখানে গিয়ে ঘুরে আসি।”

–” আমার পরিক্ষা…

–” পরিক্ষা শেষ, এই পাচঁ ছয়দিন কিছুই হবে না। চল নাহয় ঘুরে এলাম চায়ের দেশে, মেঘমালা ও মেঘালয় রাজ‍্যেরপাশে, রং বেরঙ্গের পাথরের আর ছোট ছোট টিলার ঠিকানায়!”

–” আচ্ছা,এত করে যখন বলছো যাবো।”

–” উফফ! চা টা খুব মিষ্টি হয়েছে রে পাগলি!”

বলেই স্নিগ্ধার গালে হঠাৎ করে চুমু দিয়ে, দুগাল ধরে টান দিয়ে দিল। হতভম্ব স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকাতেই চোখ টিপ দিয়ে সে চলেগেল রান্নাঘর থেকে। শ্রাবণের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতে থাকতে তার নজর পরল ডাইনিং য়ে দাড়ানো নানুর দিকে। তিনি স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল –

–” কলি কাল আসছে, পোলা মাইয়ার গো লাজ-লজ্জা সব উইঠা গেছে গা আল্লাহ! আর কত কি দেখাইবা!ঐ ছেমড়ি তোগো ঘর দুয়ার নাই? দিনে দুপুরে!”…..
স্নিগ্ধা নানুর দিক থেকে লজ্জায় চোখ সরিয়ে ফেলল।
শ্রাবণটা দিন দিন একদম পাগল করে ছাড়ছে তাকে।
রাত হলে স্নিগ্ধাকে জ্বালিয়ে মারছে। আর নানু এসে একদম তার জ্বালানো বেড়ে যায়।এই যেমন রাতের বেলায় স্নিগ্ধা পড়ে একটু ঘুমোবে সে হুটহাট গিটারে সুর তুলে গান শুনিয়ে যাবে। কখনো স্নিগ্ধার হাতদুটোতে চুমু দিয়ে দিবে। শ্রাবণের হুটহাট পাগলামি গুলো এখন তেমন একটা বিরক্ত নয় স্নিগ্ধা।
কারন একদিন মামি বলেছিল –

–” জীবনে যখন কোন মানুষ তোর জন‍্য কোন মায়া অনুভব করবে, কখনো তাকে অবহেলা করবি না!
সেই তোর জীবনের সবচেয়ে মূল‍্যবান রত্ন! হতে পারেই বলবো সরাসরি রত্ন বলবো না।কারন মানুষের মনের রঙ্গ আর চেহারার রঙ্গ এক নয়! মানুষের ভিতরের যে হৃদয় আছে না! তার রঙ্গটা খুব অসচ্ছ! এই রঙ্গ বিহীন হৃদয়ে কখন কি রুপ ধারণ করে তা একদমই বুঝা যায় না। তবে জীবনকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ! যে মানুষটা তোর জন‍্য পাগলামি করে, তোকে কাছে পাওয়ার আকুল আবেদনে মরমে মরমে মরে ঘুরে বেড়ায় তাকেই তুই সেই স্থানে জায়গা দিবি।”
স্নিগ্ধার হাতদুটো ধরে বললেন –

–” শ্রাবণ ছেলেটা পাগলাটে বটে, কিন্তু এই পাগলাটে স্বভাবের ছেলেটাই তোকে সবথেকে বেশি আগলে রাখবে।
কিছু কিছু মানুষ নিজেদের জীবন নিয়ে সচেতন হলেও
নিজেদের সঙ্গীনিদের কখনোই তারা সময় দেয় না।
সঙ্গীনিদের সময় দিতে পারে না। কারন তারা তাদের পার্সোনাল লাইফকে প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে দাম্পত্য জীবনটাকে ভুলে বসে। স্ত্রীদের মধ‍্যে যে একটা প্রাণ আছে, স্ত্রীদের যে হৃদয় আছে তা তারা বুঝে না।এই দেখ না, তোর মামা আমাকে আজ পর্যন্ত একটা আচঁ ও লাগতে দেয়নি। এই মানুষটাকে সবাই বলতো এ নাকি পাগল। আসলেই পাগল ছিল, এখন কিছুটা গম্ভীর কিন্তু একদম অল্প বয়সে পাগল ছিল! সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতো। বাবার সামনে পরলে মেনি বেড়ালের মত মিউ মিউ করতো।
এই মানুষটাই আমাকে এই দশটা বছর কখনো খোটা দিয়ে বলেনি -.

–” পুষ্পিতা তুমি বাঞ্জা, বন্ধ‍্যা! এত এত মানুষের সন্তান হয় তোমার হয়না! কখনোই মানুষটা আমায় বলেনি।
বারবার বলতো আমরা চেষ্টা করবো, আল্লাহ চাইলে সব হয়। কখনো বলতো সন্তান উপরওয়ালার নিয়ামত। সন্তান পালন করা ও কষ্ট সাধ‍্য আমরা না হয় সন্তান নাই পেলাম।”

আমি আমার স্বামীর সঙ্গে না অন‍্যকারো তুলনা করতে পারিনা। তুলনা টা করা যায় না! প্রত‍্যেকের কিছু বিশেষ গুণ থাকে যা অন‍্যদের সাথে তুলনা করা একদমই বোকামি। মানুষের শারীরিক গঠন সবদিক দিয়ে মিললেও মানসিকতা কখনোই এক হয়না। কারন ঐ যে বাহিরের বাহ‍্যিক সৌন্দর্যের আড়ালে ভিতরে একটা হৃদয় ও থাকে যার নিদিষ্ট কোন রঙ্গ নেই ।তেমনই ভালোবাসার মানুষটির ভালোবাসা সব সময় যে এক থাকবে তা ও নয়,সময় যত গড়াবে সম্পর্ক তত গভীর হবে। আবার সময় যখন গড়াবে সম্পর্ক তত তিক্ততায় ভরে যাবে। আর তা সম্পূর্ণ ডিপেন্ড করে স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক জীবন যাপনের ধরন অনুযায়ী।
দুজন যদি একই তালে থাকে তাহলে সম্পর্কে ফাটল কখনোই ধরবে না।

“দুজন মানুষের যুক্তি, তাল সমান একটা পাল্লার মত হবে যে সংসারে দু পাল্লায় সমান ভার হবে, সেই সংসার আসলেই সুখের হবে।”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here