#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_সতেরো
[#বিচ]
“দুজন মানুষের যুক্তি তাল সমান একটা পাল্লার মত হবে যে সংসারে দু পাল্লায় সমান ভার হবে সেই সংসার আসলেই সুখের হবে!”
এই ভাবে দুজন মানুষ যখন দুজনের ভরসা অর্জন করতে জানে তাহলেই তো সুখ আসবে। তুই যদি শ্রাবণকে একটু ভালো করে লক্ষ্য করিস, শ্রাবণের চোখে তুই তোর জন্য একরাশ মুগ্ধতা ছাড়া কিছুই পাবি না। তুই বললি না, বাবুকে পার্টনার সমন্ধ করায় বেচারা কি রেগে গিয়েছিল। একজন মানুষ যখন কাউকে মন -প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে, তার সবকিছু নিয়ে খুব ডেস্পারেট থাকে। সে তাকে কতটুকু মুল্যায়ন করে! তার পছন্দ, তার মনের গভীরতা, তার হৃদয়ের স্থান টাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে। প্রত্যেকটা মানুষের এমন একটা মুহুর্ত এমন একটা সময় আসে! তোর ও এসেছে, এই সময়টাকে উপভোগ কর। শ্রাবণকে সুযোগ দে, দেখবি ও কখনোই তোকে নিরাশ করবে না! স্নিগ্ধা সেদিন মামির মুখের উপর কিছু বলল না। মন দিয়ে মামির সব কথা সে শুনলো।মামি তো ভুল কিছু বলেনি। স্নিগ্ধার মনের কোণে শ্রাবণের জন্য সুপ্ত অনুভূতি!
স্নিগ্ধার মনে তৈরী হলো শ্রাবণের প্রতি একটু ভরসা!
সত্যিই যদি শ্রাবণ তার ভরসার মান রাখে।
পুষ্পিতা নিজের কোলে মাথা দিয়ে রাখা স্নিগ্ধার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর শ্রাবণ আর তার মধ্যাকার সম্পর্কটাকে অটুট রাখার চেষ্টা করছিল।
স্নিগ্ধার এত দিনকার যত সন্দেহ ছিল সব কেমন পরিষ্কার হয়েগেল । মামি যদি তাকে বুঝিয়ে না বলতো হয়তো সে সারাজীবন ভুলটাকে আকড়ে ধরতো।প্রত্যেকের জীবনে দ্বিধাগ্রস্ত কিছু মুহূর্ত থাকে, সেই মুহুর্তগুলো যদি সহজ ভাবে নেওয়া যায় জীবনটা সহজ ভাবেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। যদি সেই মুহুর্তগুলোকে কঠিনভাবে নেওয়া হয় তাহলে তা আরও কঠিন আর জীবনের প্রাপ্তিটাও কঠিনই হয়।
_________________________
শ্রাবণ স্নিগ্ধার রুম থেকে বেড়িয়ে দাদির রুমে উকি দিল,
দাদি ঠিক কোথায় তা বুঝার জন্য।দাদিকে না পেয়ে আস্তে করে রুমের দরজাটা পুরো খুলে আলমারি থেকে তার পোশাক গুলো সব বিছানায় নামিয়ে নিল। সব কাপড় নামানোর পরই দেখল দাদি রুমে ঢুকেছে।
–” কিরে তুই কাপড় চোপড় নিয়ে কি করছিস এখানে?
কয়েকদিন ধরেই দেখছি আলমারি ভর্তি সব তোর কাপড়।
তোদের রুমে তো আলমারি আর কেবিনেট দেখলাম।
তাহলে তুই এই রুমে আলমারিতে কাপড় কেন রাখিস?”
–” তোমার নাতনি আমার কাপড় ঐ আলমারিতে রাখতে দেয় নাকি? ওর আলমারি ভর্তি এত ড্রেস যে আমার কাপড় গুলো ওখানে জায়গা হয় না!”
–” এই মাইয়া টা! দুই জন এক আলমারিতে কাপড় গুছিয়ে রাখলে কি হয়?”
–” আমি কি করেছি, আমাকে না বকে নাতনিকে বকে দেও!”
স্নিগ্ধা ডেকে এনে ইচ্ছে মত বকে দিলেন নানু। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে রাগী চোখে চেয়ে আছে।
স্নিগ্ধা রাগ করে বেলকনিতে রাখা সোফায় বসে আছে।
শ্রাবণ তা দেখে বেলকনিতে এসে দাড়ালো তারপর স্নিগ্ধার পাশের সোফায় বসে ডাকলো –
–” স্নিগ্ধা!”
—-
–” এই স্নিগ্ধা!”
—
–” এই কালি ”
স্নিগ্ধা কোন উত্তর করল না। শ্রাবণ হুট করে স্নিগ্ধার খুব কাছে চলেগেল, কানের পাশে চুলগুলোকে সরিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল-
–” কথা বলবি না?”
—-
জবাব না পেয়ে হাতের মুঠোয় হাতদুটো নিয়ে বলল –
–” কাল আমরা সিলেট যাবো, আর আজই রাগ করে আছিস। ভালো লাগে বল গিন্নির রাগ দেখতে?”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের থেকে সরতে চাইলে, শ্রাবণ স্নিগ্ধার কাধে মাথা রেখে হাতদুটোকে জড়িয়ে ধরে বলল সরবি না।
দেখ আকাশে কেমন সুন্দর চাদঁ উঠেছে।
এমন রাত্রিতে কোন কাপল রাগ করে থাকে গাধি?
প্রেমের সময় এটা বুঝিস না? প্রগাড় ভাবে জড়িয়ে ধরে গান ধরল শ্রাবণ –
–“এখন অনেক রাত
তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়!
ছুঁয়ে দিলে হাত
আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়!
এখন অনেক রাত
তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়!
ছুঁয়ে দিলে হাত
আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়!
কেন যে অসংকোচে অন্ধ গানের কলি
পাখার ব্লেড-এর তালে সোজাসুজি কথা বলি!
আমি ভাবতে পারিনি, তুমি বুকের ভেতর ফাটছো,
আমার শরীর জুড়ে তোমার প্রেমের বীজ!
আমি থামতে পারিনি, তোমার গালে নরম দুঃখ,
আমায় দুহাত দিয়ে মুছতে দিও প্লিজ!
তোমার গানের সুর…….
গান গাইতে গাইতে শ্রাবণের মনে হলো ষোড়শীনির তপ্ত শ্বাস তার ঘাড়ে পরছে। জড়িয়ে রেখেই সে স্নিগ্ধার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল –
–” আমার অভিমানি বউ!”
বলেই কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল স্নিগ্ধাকে।
বেলকনির দরজাটাকে বন্ধ করে দিয়ে স্নিগ্ধার সামনের টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে, স্নিগ্ধার গায়ে চাদর টেনে দিতে গেলে স্নিগ্ধা তার হাতটা জড়িয়ে ধরল ঘুমের ঘোরে।
শ্রাবণ টেনে নিতে গিয়ে ও টানলো না, ঘুমন্ত স্নিগ্ধার পাশে শুয়ে পরল তাকে জড়িয়ে ধরে।
স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে তার ভালো লাগছে।
_______________________
স্নিগ্ধা মেজেন্ডা রঙ্গের গাউন পরেছে, চুলগুলোকে বেধে নিয়েছে। স্যুটকেস ভর্তি কাপড় চোপড় নিয়ে শ্রাবণ গাড়ির সামনে দাড়িয়ে পরল। চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সীটে বসে পরল। স্নিগ্ধা উপরের দিকে তাকিয়ে মামিকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসে পরল।
শ্রাবণ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল, গান চালিয়ে দিয়ে দিল।
কিছুদূর যেতেই শ্রাবণ গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বলল তুই বস আমি তশদীদ, আর মহিমাকে ডেকে আনছি।
–” কেন?
–” তাশদীদ আর মহিমা আমাদের সঙ্গে যাবে বাকিরা আয়মানের গাড়িতে করে যাবে।”
–” ও,”
স্নিগ্ধা গাড়ি থেকে নামার পর কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে বলল –
–” তুমি স্নিগ্ধা?”
–” জ্বী,”
–” ও মাই গড! সিরিয়াসলি তুমি বাস্তবে দেখতে খুব সুন্দর! কিন্তু এই বাদড়টা বলতো তুমি নাকি কালি!
আইমিন আমাদের সাথে বসলে ও তোমাকে ফোনে প্রায় সময় কালি বলে সমন্ধ করতো!”
–” হুম,”
–” বাই দা ওয়ে আমার নাম মুমতাহিনা মহিমা! ও হচ্ছে তাশদীদ! আমাদের জিগরি দোস্ত! দোস্ত মিট উইথ হার! ”
–” হুম, এবার চুপ কর, জ্ঞানের দেবী!”
–” তুই চুপ থাক! স্নিগ্ধা চলো আমরা ভিতরে গিয়ে বসি আর গল্প করি।
–” হ্যা, চলুন!”
স্নিগ্ধা আর মহিমা গাড়ির ভিতরে বসে পরল। স্বর্ণা শ্রাবণের সামনে ছুটে এসে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরল। শ্রাবণ কিছুটা উশখুশ করে সরিয়ে দিতে চাইলে বলল –
–” শ্রাবণ, আমি না খুব এক্সাইটেট! আমরা সবাই মিলে অনেক মজা করবো! শ্রাবণ তোমার গাড়িতে কি জায়গা নেই?”
–” না, আমার কাজিন আছে গাড়িতে।”
–” তাই? ওকে আয়মানের গাড়িতে পাঠিয়ে দেও!”
–” ও কে আমি অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতে পারব না!
ও কাউকে চিনে না, তুমি চিনলে ও একদম ওদেরকে চিনে না।” স্বর্ণা মন খারাপ করে আয়মানের গাড়িতে উঠে বসল।
উৎপল, স্বর্ণা, মৃত্তিকা ওরা সবাই আয়মানের গাড়িতে উঠেছে, শ্রাবণের গাড়িটা আগেই যাচ্ছে। স্নিগ্ধাকে পেয়ে মহিমা যেন ছাড়ছেই না, দুজনের কথার ঝুড়ি শেষ হচ্ছেই না একদম।
–” শ্রাবণ তোর এত মিষ্টি কাজিন থেকে ও তুই আমাদের সাথে পরিচয় করালি না! খুব বাজে কজ করলি তুই!”
–” তোকে পরিচয় করিয়ে দিলে তুই ওকে সব বাদড়ামো শিখিয়ে দিতি সেই সুযোগ পেয়ে। তাই শিখাই নি!”
–” দেখলে স্নিগ্ধা! এই শ্রাবণটা সব সময় হিংসে করে এই ধরনের কথা বলে আমার সমন্ধে! তুই আসিস আমার কাছে আমার সঙ্গে কথা বলতে!”
–” আমি আর তোর সঙ্গে কথাই বলবো না! আমার ভবিষ্যৎ বউকে তোর সঙ্গে মিশতে দেবো না। নাহলে বেচারি সব দুষ্টু বুদ্ধি তোর থেকে শিখে যাবে!”
মহিমা শ্রাবণের কথায় ভেংচি কেটে স্নিগ্ধার সঙ্গে গল্প করতে লাগল।
তাশদীদ কানে হেডফোন গুজে বসে আছে, তার এসব জার্নিতে এভাবে হেডফোন দিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে।
প্রায় সাত ঘন্টার ব্যবধানে সিলেটের গ্রান্ড সুলতান রিসোর্টে গিয়ে পৌছল।
গাড়ি থেকে সবাই নেমে পরেছে, স্নিগ্ধা মহিমারা গাড়ি থেকে নেমে একপাশে দাড়িয়ে পরল।
পরের গাড়ি থেকে স্বর্ণা, উৎপল, আয়মান, মৃত্তিকা নেমেগেল।
সবাই মিলে রিসেপশনে এসে দাড়ালো শ্রাবণ মেয়েদের জন্য আলাদা রুম এবং ছেলেদের জন্য আলাদা রুম নিল।
হোটেল সার্ভিস ম্যানদের হাতে লাগেজ আর ব্যাগগুলো ধরিয়ে দিয়ে, তারা সবাই রেস্টুরেন্টে চলেগেল খাবার খাওয়ার জন্য।
স্বর্ণা স্নিগ্ধাকে দেখে প্রশ্ন করল–” তুমি শ্রাবণের কে হও?”
–” কাজিন!”
–” ও, খুব ছোট দেখতে তুমি,”
–” আর খুব মিষ্টি দেখতে! বলে উঠলো আয়মান।
–” হুম, শ্রাবণের একটা কাজিন ছিল না, শ্রাবণ প্রায় সময় বলতো বাবা নেই, মা নেই একটা কাজিনের কথা প্রায় সময় শ্রাবণ বলতো! ও, তুমি সেই? সো পুর!
শ্রাবণের বাড়ির লোকেরা খুব বড় মনের! নাহলে একটা মেয়ে মানুষকে বাড়িতে রেখে ছোট থেকে মানুষ করা।
এটা এখনকার যুগে একদমই দেখা যায় না। সত্যি আমি প্রাউড ফিল করি শ্রাবণের মত একজনকে পেয়ে।
মহিমা মনেমনে বলছে, বিচ! কোথাকার সব সময়ে শ্রাবণের পিছনে পিছনে তার ঘুরতে হবেই। মনেহয় শ্রাবণ তার একার! শ্রাবণ এখন এখানে থাকলে তার বউ নিয়ে এমন কথা কখনোই সহ্য করতো না। ভাগ্য ভালো শ্রাবণ এখানে নেই। মহিমা তাশদীদের কানের কাছে গিয়ে বলল –
—” তাশদীদ, স্বর্ণাকে বলে দেই শ্রাবণ আর স্নিগ্ধার বিয়ের কথা?”
–” না, কিছুই বলিস না, স্নিগ্ধা যে স্কুলে পড়ে সেখানে মেরিড মেয়েদের একদম এলাউ করে না, তারপর মাত্র
সেভেনটিন! ”
অসহায় মুখ নিয়ে মহিমা বলল -.
–” হুম, শ্রাবণ আর স্নিগ্ধার কেরিয়ারে সমস্যা হবে।”
–” যা বলেছি তা কর চুপ করে থাক!”
আয়ভান স্নিগ্ধার সামনের চেয়ারে বসে স্নিগ্ধার দিকে কয়েকবার তাকিয়ে বলল-
–” তুমি দেখতে ঠিক যেমন স্নিগ্ধ! তোমার নামটা ও স্নিগ্ধা! একদম মিলে গেল! ”
প্রতি উত্তরে স্নিগ্ধা কিছুই বলল না। সে খাবারের অপেক্ষা করল, খেয়েদেয়ে তারপর রুমে যাবে। তার মনে হচ্ছে স্বর্ণাটা খুব একটা সুবিধার না।আয়মান স্নিগ্ধার সামনে খাবারের ম্যানু ধরল স্নিগ্ধা যা খেতে চায় তা অর্ডার করবে সে।
–” ভাইয়া, আমি এগুলো কিছুই খাবো না, শ্রাবণ ভাই আমার জন্য অর্ডার করেছেন।”
–” আমরা ও তো আছি!”
–” থ্যাংকস! কিছুই অর্ডার করতে হবে না।”
বলতে বলতেই শ্রাবণ এসে পরল ওয়েটার কে সাথে নিয়ে।
স্নিগ্ধার হাতে সে একটা ডাবের পানি ধরিয়ে দিয়ে বলল
–” নে, তুই তো আবার অসুস্থ হয়ে পরবি, এটা খা!”
স্বর্ণার কাছে শ্রাবণের স্নিগ্ধার প্রতি কেমন একটা কেয়ার কেয়ার ভাব লাগছে।স্নিগ্ধা খাবার খেয়ে মহিমার সঙ্গে একসাথে আলাদা রুমে চলেগেল, মৃত্তিকা আর স্বর্ণা আলাদা রুমে।
চলবে।