ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -১৮

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_আঠারো
[#গান]

–” নে, তুই তো আবার অসুস্থ হয়ে পরবি, এটা খা!”

স্বর্ণার কাছে শ্রাবণের স্নিগ্ধার প্রতি কেমন একটা কেয়ার কেয়ার ভাব লাগছে।স্নিগ্ধা খাবার খেয়ে মহিমার সঙ্গে একসাথে আলাদা রুমে চলেগেল, মৃত্তিকা আর স্বর্ণা আলাদা রুমে।

রুমে এসেই স্নিগ্ধা শাওয়ার নিয়ে নিল। চেয়েছিল শাওয়ার নিয়ে তারপর খাওয়া দাওয়া করবে কিন্তু শ্রাবণ আগেই খাওয়ার ব‍্যবস্থা করেনিল। তাই বাধ‍্য হয়ে খেয়ে নিতে হলো। পাচঁতারকা রিসোর্টটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার পরিবেশ। স্নিগ্ধা খুব ভালোভাবে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। এসে দেখল মহিমা ফোনে কথা বলছে, স্নিগ্ধা সেখানে না দাড়িয়ে বেলকনিতে চলেগেল দাড়িয়ে অবাক হয়েগেল সে। নিচ থেকে দেখা যাচ্ছে শ্রাবণরা সবাই সুইমিং পুলে সবাই মিলে দুষ্টুমি করছে। তাদের দিকে তাকিয়ে সে এবার পরিবেশটা উপভোগ করতে লাগল। স্তরে স্তরে সাজানো চা বাগান!
পাহাড়ের খাজে খাজে যেন সাজিয়ে রেখেছে বাগান গুলো।

” প্রকৃতি এত সুন্দর কেন? হারিয়ে গেলোও যেন আফসোস হবে না, বিকেল গড়িয়ে আসছে প্রায়,
স্নিগ্ধা রুমে এসে আবার শুয়ে পরল বিছানায়। ঘুম আসছে তার আরেকটু ঘুমোতে হবে।

_____________________

জানো বাবা কখনোই আমাকে আসতে দিত না, একা একদমই ছাড়তে চাইতো না। আমি বলেছি বাবা শ্রাবণের সঙ্গে যাবো আরও অনেকে আছে। জানো বাবা শ্রাবণকে খুব পছন্দ করে, বাবার মনে হয় শ্রাবণ খুব ভালো ছেলে।
আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদের তালিকায় শ্রাবণ ফার্স্টবয়!
তোমার কোন বেস্টফ্রেন্ড আছে?

–” না, আমার কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নেই, মানি ছেলে বেস্টফ্রেন্ড নে! আর তাছাড়া এমনি কয়েকজন ছিল ক্লাসের ওদের সাথে পড়া নিয়ে আলোচনা হতো।

–” ও, তো বয়ফ্রেন্ড নিশ্চয়ই আছে?”

–” আমি আর বয়ফ্রেন্ড! ইম্পপসিবাল! আই হেইট রিলেশন শীপ!

” উমম নিজেই রিলশনে আছো,” বিড়বিড় করে মহিমা বলল।

–” রিলেশনের আগে প্রত‍্যেকটা মেয়ের জীবনে নিজের পথ তৈরি করা উচিৎ ! জীবনের মোড় সব সময় এক থাকে না, যেকোন সময় জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে। আজ যে সময়টা আমি বয়ফ্রেন্ডের বা হাসবেন্ডের পিছনে ঘুরেঘুরে কাটিয়ে দিব। এমন এক সময় হবে সে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। অথবা দেখাগেল সম্পর্কে ফাটল ধরল তখন? তখন তুমি কার উপর নির্ভরশীল হবে? জীবন সঙ্গি সব সময় তোমার ছায়া বা কায়া হয়ে থাকবে এমন নয়! সবাই সব সময় পাশে থাকবে এমন নয়।”

–” হুম, তোমার খুব বুদ্ধি আছে বুঝা যায়। যে বয়সে মেয়েরা আবেগে ভেসে বেড়ায় সে বয়সে কলম হাতে নিচ্ছ!
যাক,শ্রাবণ তার কাজিনের জন‍্য প্রাউড ফিল করবে একদিন নিশ্চিত!”

–” দোয়া করো আমার জন‍্য!”

–” হুম, অবশ‍্যই!”

দরজায় নক হতেই মহিমা দরজা খুলে দিল। শ্রাবণরা সবাই বাইরে দাড়িয়ে আছে। শ্রাবণের কাধে গিটার ঝুলানো, চিরচেনা হাসিতে শ্রাবণ বলে উঠল –

–” তা দুজনে মিলে গল্প শেষ হলে এবার কি আমাদের সঙ্গে আসবেন?”

–” কোথায় যাবো?”

–” জ্বী আপনাদের দয়ায় আমি এবং আমরা নিচে বারবি কিউ পার্টির আয়োজন করেছি। যদি মহিমা বেগমের একটু দয়া হয় তাহলে আপনি আমাদের সঙ্গে আসতে পারেন।”

–” মহিমা প্লিজ টাইম ওয়েস্ট করো না, শ্রাবণ আমাদের জন‍্য এত বড় আয়োজন করেছে সত‍্যিই খুব ভালো লাগছে শ্রাবণ তোমার সঙ্গে এসে।” স্বর্ণা একদম গদগদ হয়ে শ্রাবণকে বলল।মহিমা একটা ভেংচি কেটে স্নিগ্ধার হাত ধরে চলল।

রিসোর্টের যে পাশে সুইমিংপুল সেইদিকেরই একটা কোণে শ্রাবণ ম‍্যানেজারকে বলে একটা বার-বি-কিউ পার্টির আয়োজন করেছে। সবাই মিলে ঘাসের উপর বসে পরল। শ্রাবণ গিটার নিয়ে বসেছে, স্বর্ণা সবাইকে পাশ কাটিয়ে শ্রাবণের সঙ্গে বসে পরল। তারপর শ্রাবণের হাত জড়িয়ে বসে পরল, শ্রাবণের দিকে চেয়ে বলল –

–” শ্রাবণ তোমার মনে আছে? ইউনিভার্সিটির ফাংশনের প্রায় কয়েকদিন আগে তুমি তোমার পছন্দের গানটা মাঠে বসে গেয়েছিলে। স‍্যারেরা তোমার কন্ঠে গানটা শুনে তোমাকে গাইতে কত করে বলেছিল তুমি ফাংশনে গাইতে চাইলে না, পরে মাহিন স‍্যার রেগে গিয়ে তোমাকে বলেছিল তুমি যদি গান না গাও তাহলে স‍্যার তোমার ম‍্যাথের খাতায় রসগোল্লা দিয়ে দিবে। তারপর তুমি গান গেয়েছিলে ফাংশনে। ”

–” মনে থাকবে না কেন? মনে থাকারই কথা! হঠাৎ এই কথার মানে?

–” তুমি আবার সেদিনের মত গানটা গাও না প্লিজ!”

শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল –

–” তুমি যখন বলবে আমি একটা না হাজারটা গান গাইবো!”

–” ওহ, সুইট! প্লিজ গাও!”

শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে তারপর সবার দিকে ফিরে বলল –

–” কি গাইবো?” বলতেই শ্রাবণের মোবাইলে রিং হলো, সে উঠে চলেগেল।

–” ডং! গিটার কাধে নিয়ে বসে আছে আবার প্রশ্ন করছে গাইবে কিনা!” মহিমা বলেই ভেংচি কাটলো।
তাশদীদ মহিমার দিকে চিপসের প‍্যাকেট ধরিয়ে দিল।
তারপর তার পাশে বসে পরল, স্নিগ্ধা তাশদীদের দিকে তাকাতেই তাশদীদ স্নিগ্ধার দিকে হেসে তার হাতে দুটো ডেইরী মিল্ক ধরিয়ে দিয়ে বলল এগুলো তোমার।
স্নিগ্ধা ডেইরী মিল্ক গুলো নিয়ে কৃতজ্ঞতার স্বরে হাসি দিল।

আয়মান স্নিগ্ধার পাশে বসে বলল-

–” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, চাদেঁর আলোয় চাদঁকুমারী মনে হয়!”

–” তাই নাকি? জানা ছিল না তো!”

–” নিজের সৌন্দর্য কি মানুষ নিজে ধরতে জানে? অন‍্যরাই তো জানে তার সৌন্দর্যের কথা! এই যেমন তুমি হয়তো নিজেকে তেমন সুন্দর ভাবো না, বা গুনি ও ভাবতে পারো না। কিন্তু অন‍্যরা ঠিকই তা দেখতে পারে। কি ভুল বললাম?”

–” না,”

–” তোমার ফেসবুক আইডি আছে?

–” না”

–” হোয়াটসআপ?”

–” নো, কিছুই নেই!”

–” হোয়াট! কিছুই নেই? মানি ফোন চালাও কি করে তুমি?”

–” আমি তো ফোনই চালাই না!”

–” তুমি ফোন চালাও না? মজা করছো রাইট?”.

–” সত‍্যিই শ্রাবণ ভাইয়ার কাছে মাঝেমাঝে ফোন পাই!”

–” তোমার নিজের সেলফোন কিনে নিতে পারো না?”

–” শ্রাবণ ভাই বলেছে আমার পরিক্ষা ভালো হলে নতুন মোবাইল কিনে দিবে।”

–” আমি যদি তোমায় মোবাইল কিনে দেই?”

–” আমি মোবাইল চাই না!”

–” বাট আমার মনে হয় তোমার মোবাইল ইউস করা উচিৎ! বিকজ আই লাই…

–” ঐ শালা এইদিকে আয়! ব‍্যাটা যেখানে যাস, সেখানে মাইয়া মানুষের সঙ্গে বইসা থাকোস! একটু জীবনডারে উপভোগ কর! বলেই দুটো কিল দিয়ে দিল উৎপল।

–” যা ভাগ! সব জায়গায় তুই আমার পিছনে পরে থাকিস!”

–” ভাইরে জায়গা বুঝে ফ্লার্ট করতে হয়!”

–” উৎপল, চুপ কর হারামি। উৎপলকে টেনে নিয়ে গেল আয়মান এই উৎপলটা সব সময় সব জায়গায় একটা গন্ডগোল পাকাবেই।”

শ্রাবণ গান গাইতে গিটার নিয়ে বসেগেল।

তুমি এলে জানি,
পাখিরা উড়বে।
ছুঁয়ে দিবে তাঁরা অনন্ত!

তুমি এলে জানি,
ফুটবে ফুলেরা,
সব দিন হবে বসন্ত!

তুমি এলে দেখো,
পুর্নিমা চাঁদ জোছনা,
বিলাবে সব রাতে!

তুমি আর আমি, আমরা দুজন,
এক হয়ে যাবো একই সাথে!

প্রানহীনতার শোরগোলে আমি
অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না,
একলা থাকার যন্ত্রণাতে
কোথাও আমি থাকছি না!

প্রানহীনতার শোরগোলে আমি
অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না।
একলা থাকার যন্ত্রণায়,
কোথাও আমি থাকছি না!

–” ইয়ে! সবাই হাত তালি দিচ্ছ না কেন? হাত তালি দেও!
শ্রাবণ ভিষণ ভালো হয়েছে !

–“এই তোমাদের মধ‍্যে একজন গান গাও তো! এই তোমার নাম কি? স্নিগ্ধা? তুমি একটা গান গাও তো দেখি!” মৃত্তিকা বলল।

–” আমি গান পারি না!”

–” তুমি গান পারবা ও না। ” স্বর্ণা নাক ছিটকিয়ে বলল।

মহিমা স্নিগ্নাকে ধাক্কা দিয়ে বলল –

–” ও কিন্তু মানুষ সুবিধার না, ও একবার কারো খূত ধরে মজা পেলে বারবার তার দূর্বল জায়গায় আঘাত করে। তুমি নিশ্চয় চাও না কেউ তোমাকে আঘাত করুক!”
স্নিগ্ধা মহিমার দিকে তাকালো তার কথা শুনে। সত‍্যিই তো সে তো দূর্বল নয়, স্নিগ্ধা শ্রাবণের সামনে দাড়ালো।

–” কি কোন সমস‍্যা?”

–” ভাইয়া গিটার টা লাগবে!”

–” গিটার লাগবে?’

–” হুম,”

–” শ্রাবণ গিটার দিতেই স্নিগ্ধা গিটার টা হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করল।

ও তোতা পাখিরে,
শিকল খুলে উড়িয়ে দেবো
মাকে যদি এনে দাও,
আমার মাকে যদি এনে দাও
ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের কোলে,
কখন যে মা গেলো চলে
সবাই বলে ঐ আকাশে,
লুকিয়ে আছে খুঁজে নাও
ও তোতা পাখি রে ..

কেউ বলে মা ভোরের বেলায়,
চাঁপার বনে ফুলের মেলায়
ফুল কুড়িয়ে কখন যেন,
ঠাকুর ঘরে আসে
ভোরের আলো ফোটার আগে,
জেগে কত খুঁজি মাকে
চাঁপা তলায় ঠাকুর ঘরে,
বাড়ির আশে পাশে

আমাকে মা ভুলেই গেছে,
পাই না তাকে আর কোথাও
ও তোতা পাখি রে..

স্নিগ্ধার গান শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিল। আবার মায়ের গান শুনে সবাই কেমন ইমোশনাল হয়েগেল।
স্বর্ণা সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল –

–” ওহ, প্লিজ! তোমরা বেড়াতে এসেছো এখানে। এসেই পরিবেশটাকে একদম গুমোট করো নাতো। একজন ইমোশনাল গান গাইলো আর ওমনই সবাই মিলে কাদতে শুরু করে দিলে। ডিসগাস্টিং!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে আছে, এত সুন্দর করে মেয়েটা গান গাইতে পারে তার জানাই ছিল না। অথচ মেয়েটা গান করেই না। অবশ‍্য সে কখনো গান পারে বা স্নিগ্ধার ভিতরে থাকা হিডেন টেলেন্ট গুলো যাচাই করেনি। এখন পর্যন্ত স্নিগ্ধার পড়া আর স্নিগ্ধার চালচলনেই নজর দিয়েছে।

–” এই তাশদীদ!

–” কি?”

–” দুজনের জুটি টা খুব ভালো না রে?”

–” কোন দুজন?”

–” স্নিগ্ধা আর শ্রাবণের?”

–” হুম,”

–” দুজনই গানের মানুষ, দুজনই ঝগড়ুটে, একজন টক মিষ্টি! একজন ঝাল! স্নিগ্ধাটা একদম অবুঝ!”

–” স্নিগ্ধা তোর থেকে ভালোই আছে! তুই তো এত বড় মেয়ে হয়ে বুঝিসই না কে তোকে চায়!”

–” কে চায়?”

–” থাক আর জানতে হবে না!”

সারারাত সবাই মিলে হইহুল্লোড় করে ঘাসের উপর বসে গল্প করল। খেয়েদেয়ে যে যার রুমে চলেগেল।স্নিগ্ধা মামির সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিছানায় শুয়ে পরল।
মহিমা ও বিছানায় বসতে চাইলো কিন্তু দরজায় নক হতেই তার শোয়া হলো না। দরজা খুলেই দেখল শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে।

–” কি চাই?”

–” আমার বউ কই?”

–” হুহ! বরের একদম সইছে না। তোর বউ ঘুমায় রে পাগলা! কেন এসেছিস কিছু বলবি?”

শ্রাবণ মাথা চুলকে, লাজুক হেসে বলল-
–” কিছু না, এমনি। কোন সমস‍্যা হলে বলিস!”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here