সংসার, পর্ব:২

#সংসার
২.
#WriterঃMousumi_Akter

আজ আহনাফ নতুন বউ নিয়ে এসেছে।আমাদের ঘর মানে আমার আর আহনাফের ঘর আজ আবার ও বাসর সজ্জায় কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিঃশ্বাস নিতে।বুকের উপোর মনে হচ্ছে পুরা পৃথিবীর ভার দেওয়া হয়েছে।পুড়া বাড়ির মানুষ ভীষণ ভাবে বিজি।নতুন বউ কে গাড়ি থেকে নামানোর সময় সবাই খুব খুশি মনে বরণ করতে গেলো।আমি বারান্দার এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি।নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছি নতুন কাপল জোড়ার দিকে।

ফুফু শ্বাশুড়ি নতুন বউ বরণ করতে যাওয়ার সাথে তাড়াহুড়ো তে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেল চলে গেলো।উনি আমাকে দেখে মারাত্মক বিরক্তি নিয়ে বলেন এইভাবে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে মানুষ জন কিভাবে যাবে শুনি?রান্না ঘরে যাও।নতুন আত্মীয় এসছে আপ্যায়ন এর জন্য ত্রুটি হয় না।নতুন বৌমার ফ্যামিলির কাছে এমনিতেই আমরা কৃতজ্ঞ।ঘরে আরেক টা বউ আছে জেনেও তারা তাদের মেয়ের বিয়ে দিয়েছে।তাদের একটু বিশেষ খাতির যত্ন করতে হবে তো নাকি।আর তুমি সবার সামনে যেও না।তোমাকে দেখলে আবার কত গুলো প্রশ্ন জাগবে তাদের মনে।প্রথম দিনেই তাদের মন ভেঙে যাবে।আর শোণো নতুন বৌমা জানে তুমি আহনাফের সাথে থাকো না।মাঝে মধ্য এখানে আসো।তাই দয়াকরে নতুন বউ এর সামনে যেও না।

“আমি তাহলে কোথায় যাবো ফুফু।আহনাফ যে আমি ছাড়া থাকতে পারে না”

চুলোয় যাও সমস্যা নেই।তুমি বেশি ন্যাকা কাঁন্না করে আহনাফ কে ভোলানোর চেষ্টা করো না।আহনাফের যদি নতুন বউ এর সাথে ভালো রিলেশন না হয় তাহলে সন্তান হবে কিভাবে শুনি।এমনি তে তো আহনাফের জীবনের অনেক গুলা বছর নষ্ট করেছো।এত দিন ওর একটা ছেলে থাকলে কত বড় হয়ে যেতো।

ফুফু শ্বাশুড়ির কথা শুনে চোখ দিয়ে অঝরে বৃষ্টি ঝরলো আমার।আহনাফ কে অন্য কারো সাথে জুড়ে দেওয়ার জন্য আমাকে কত কটু কথা শোনানো হচ্ছে।

রান্না ঘরে মুরগীর রান্না কষাচ্ছি।এমন সময় আহনাফ এসে বলে আশা কি রান্না করছো।আমি চোখ মুছতে মুছতে বললাম মুরগী।

কিছু কি রান্না হয়েছে আমায় খেতে দাও আশা।

তুমি খেয়ে আসো নি।

তুমি সকাল থেকে না খেয়ে আছো। আর আমি মাছ মাংস খাবো।সেটা কিভাবে সম্ভব।আজ ও আমি তোমায় ছাড়া কি কিছু খেয়েছি আশা।

অন্য দিন আর আজকের দিন কি এক আহনাফ।

সবার কাছে আজ বিশেষ দিন হলেও আমার কাছে নয় আশা।চলো কোথাও পালিয়ে যায় আশা।আমার এসব ভালো লাগছে না।

নতুন বউ কিন্তু ভারী মিষ্টি হয়েছে আহনাফ।আমি দেখেছি কিন্তু।ভারী মানিয়েছে।

প্লিজ আশা! আমি নিতে পারছি না।

আহনাফের চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে।
আমাকে প্লিজ খাইয়ে দিবে আশা।সারাদিন না খেয়ে আছি।
বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষের সোরগোল তার মাঝে রান্নাঘরে আমি আর আহনাফ।ভাত মাখিয়ে মাত্র আহনাফ কে খাইয়ে দিবো….গালে দিবো দিবো এমন ভাব এমন সময় আহনাফের নতুন বউ এর ছোট ভাই ৮-১০ বছর হবে বয়স আহনাফের হাত ধরে টানে। দুলাভাই আসুন সবাই আপনাকে খুজছে।দুলাভাই আসুন আপুর সাথে ছবি তুলতে হবে।আমার মাথার মাঝে ঘুরে উঠলো।হায় আল্লাহ!আমার আহনাফ এভাবেই আমার থেকে দূরে চলে যাবে।এভাবে কি আমার সব অধিকার চলে যাবে।আহনাফ বাধ্য হলো চলে যেতে।আমার চোখের কোনার পানি মুছে দিয়ে বললো প্লিজ খেয়ে নিও।এই দশ টা বছর আমাকে ছাড়া খাও নি তুমি।আমার জন্য খাবার বেড়ে বসে থেকেছো।আজ তুমি খাবে না জানি।প্লিজ আশা খেয়ে নিও।

আহনাফ তার নতুল শালার সাথে চলে গেলো।বুকের মাঝে যে মারাত্মক যন্ত্রণা হচ্ছিলো সেটা ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো সম্ভব নয় আমার পক্ষে।বুকের এক সাইড ভেঙে চুরমার হয়ে গুড়িয়ে যাচ্ছিলো।

সেদিন আমার খাওয়ার খোজ আর কেউ নিলো না।সব আত্মীয়ের জন্য রান্না করে চলেছি কেউ একটা বার ও খোজ নিলো না আমি খেয়েছি কিনা।একটা মানুষ ও জানতে চাই নি আমার মনের খবর।একটা মানুষ আমাকে স্বান্ত্বনা পর্যন্ত দেই নি।আমার বন্ধ্যা হওয়ার অপরাধে কেউ জানতে চাই নি আমার হৃদয় পুড়ে দাউ দাউ হওয়া যন্ত্রণার কথা।

আমার শ্বাশুড়ি আমাকে বলেন একটা ভালো প্লেটে মুরগীর রান সহ মাংস গুলো তুলে দাও।আমি নিশ্চুপ হয়ে সেটাই করলাম।আহনাফ আর নতুন বউয়ের খাবার রুমে দেওয়া হবে।তারা আজ থেকে তাদের রুমে এক সাথে খাবার খাবে।

একটা মেয়েই এটা উপলব্ধি করতে পারে স্বামির দ্বীতীয় বিবাহের যন্ত্রণা।

আমার আর আহনাফের ঘরের দরজা টা আজ অফ হয়ে গেলো ভিতর থেকে।আমার চোখে ছিলো শুধু অঝরে পানি।কিছুক্ষণ পরে রুমের লাইট টাও অফ হয়ে গেলো।দম বন্ধ কষ্টে ছারখার হয়ে যাচ্ছে আমার হৃদয়। আমি যে আহনাফের বুকে মাথা না দিয়ে ঘুমোতে পারি না।

একটা বাচ্চার জন্য আমাকে এটা মেনে নিতেই হবে।আমি তো জেনে বুঝেই বিয়ে দিয়েছি।আমার কষ্ট পাওয়া ও উচিত না।সেটা হবে বড়ই স্বার্থপরের মতো কাজ।আহনাফের বাচ্চা তো আমার ই বাচ্চা হবে।আমাকে মা বলে ডাকবে।এই পাওয়ার মতো বড় পাওয়া পৃথিবীতে আর কোনো কিছুতে নেই।নিজের মন কে বোঝালাম।

সেদিন রাতে না খেয়ে ফ্লোরে পাশের রুমে ননদদের সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।চোখের পানি কাউকেই বুঝতে দিলাম না।

রাত ২ টাই আহনাফ মেসেজ করেছে বাড়ির বাগানে এসো।আমি ওর মেসেজ দেখে চমকে গেলাম।উঠে গিয়ে দেখি আহনাফ। আমাকে দেখেই ও জড়িয়ে ধরে।আমি আর পারছি না আশা।আমি অন্য একটা মেয়ের রুমে আমাকে বিষাক্ত সাপে কাটলে যেমন যন্ত্রনা হতো তার থেকে বেশী যন্ত্রনা হচ্ছিলো।আমি পারছিনা আশা।আহনাফ রান্নাঘর থেকে খাবার এনে নিজে খেলো সাথে আমাকেও খাইয়ে দিলো।

কষ্ট হলেও আহনাফ কে বোঝালাম। আহনাফ বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে।তোমাকে সব সাইড ই খেয়াল রাখতে হবে যাও প্লিজ নিজের ঘরে যাও।

আহনাফ কে আবার ও তার রুমে পাঠিয়ে দিলাম।

পরের দিন সকালে আহনাফ এর নতুন বউ কে বললাম দেখো আমাদের মিলেমিশে থাকতে হবে।আমাকে তোমার বোন ভেবো।বলে আমার হাতের বালা তাকে দিয়ে দিলাম।

সতীন কখনো বোন হয় না।আহনাফের নতুন বউ সেটা আমাকে প্রমান করে দিয়েছিলো।

চলবে,,,

(গল্পটা জীবন থেকে নেওয়া)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here