সন্ধ্যামালতী পর্ব -১৩+১৪

#সন্ধ্যামালতী (১৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________

পরের দুদিন কেটে গেলো আয়াশের ব্যস্ততায় আর সন্ধ্যার অস্থিরতায়। আজ আয়াশেরা চলে যাবে। সব কাজ কমপ্লিট করেছে তারা দু’দিনেই। শুধু রহস্যের সমাধান পাইনি কেউ। যা করার যতটুকু খোঁজ নেওয়ার এবার শহর থেকেই নিতে হবে। গ্রামটা যেমন জটিল সাথে গ্রামের মানুষগুলোও। আয়াশের জরুরি কল আসায় বাড়ির পেছনের দিকে গেছে। রানা নিজের কাপড় গোছাচ্ছিলো তখন লিজা আসে। লিজা বিষন্ন মন নিয়ে বলে,

‘দোস্ত দুদিনে তো আয়াশ কিছুই বলেনি উল্টো ব্যস্ততাতেই সময় কাটলো সবার। আয়াশ কি তাহলে সন্ধ্যাকে ভালোবাসে না?’

রানা হেঁসে বলে, ‘আয়াশের সাথে আমি ছোট বেলা থেকে আছি। ছেলেটা বড্ড চাপা স্বভাবের। আছে শুধু পকেট ভর্তি রাগ আর জিদ। কখনো কাউকে মনের কথা বলতে পারে না তবে এক্ষেত্রে ‘ও’ নিজেই বুঝতেছে না নিজের অনুভূতি গুলো। আমি দেখেছি সেদিন হসপিটালে যখন সন্ধ্যা পাগলামি করছিলো তখন আয়াশ অনুভূতিশূণ্যের মতো তাকিয়ে ছিলো। আমরা এভাবে কখন তাকায় জানিস? যখন আমাদের কষ্ট হয়।’

লিজা উত্তরে বলে, ‘সে সব তো বুঝলাম। কিন্তু আমরা এই দুই জুটিকে মিলাবো কিভাবে? তাছাড়া আয়াশের ওই খা’টাশ ফিয়ন্সে তো আছেই। আবার সন্ধ্যারও ২ দিন পরই বিয়ে।’

রানা নিজের কাজ করতে করতে বলে, ‘দেখতে থাক কি হয়! কিছু কিছু সময় দুরত্ব অনুভূতি বুঝাতে সাহায্য করে। আমরা চাইলেই আয়াশকে আটকাতে পারি যাওয়া থেকে কিন্তু এতে ‘ও’ সন্ধ্যার শূণ্যতা, সন্ধ্যার প্রতি ওর দুর্বলতা টা টের পাবে না। আমার শুধু একটাই চাওয়া আয়াশের বুঝতে যেনো দেড়ি না হয় আর সন্ধ্যাও যেনো কোনো রকম ভুল না করে।’

‘আই উইস দোস্ত এমনই যেনো হয়। আয়াশ যেনো সঠিক সময়েই নিজেকে বুঝতে পারে।’

‘হুম এখন জলদি রেডি হ। আমাদের কিন্ত তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।’

লিজা ‘আচ্ছা’ বলে রুম ত্যাগ করে। নিজের সব কাপড় ঠিক মতো গুছাতে শুরু করে। আয়াশ কথা বলা শেষ করে এসে নিজের সব কাপড় গুছায়। রানা পাশ থেকে হাই তুলতে তুলতে বলে,

‘দোস্ত গ্রাম থেকে যেতে পারবি তো নাকি আবার বেঁকে বসবি!’

আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায় রানার দিকে। রানা গলা পরিষ্কার করে বলে, ‘না মানে গ্রামটা অনেক ভালো লাগছে। তাাই বলতেছি।’

‘তোর ভালো লাগছে তুই থেকে যা।’

‘তোর ভালো লাগেনি?’

আয়াশ কপালে ভাজ ফেলে। কাপড় ছেড়ে ঠিক মতো তাকায় রানার দিকে। বলে, ‘কি বলতে চাচ্ছিস ক্লিয়ার করে বল!’

রানা নিজেকে সামলে কয়েক হাত দুর গিয়ে দাঁড়ায়। দাঁত কেলিয়ে বলে, ‘না মানে বলতে চাচ্ছিলাম যে সন্ধ্যাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে না দোস্ত?’

কথাটা আয়াশের কানে যেতেই পাশ থেকে শার্ট ছুড়ে মারে রানার দিকে৷ রানা এক দৌড়ে বাহিরে। বাহিরে এসে শব্দ করে হাসতে থাকে। বিড়বিড় করে বলে, ‘কষ্ট হয় কি না তা তো ঢাকা গেলেই বুঝবো।’

এর মাঝেই সেখানে দৌড়ে আসে বকুল। রানাকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাক দেয় তাকে। বকুলের কন্ঠ শুনে আয়াশও বের হয়ে আসে। রানা আর আয়াশ বারান্দায় আসলে বকুল আস্তে করে বলে,

‘সন্ধ্যা আসছিলো ভাইয়া?’

রানা ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘কই না তো। কেন?’

‘আসলে ‘ও’ কে কোথাও দেখতেছি না। ভাবলাম এখানে আসছে হয়তো! দেখি হয়তো কবরস্থানের কাছে গেছে।’

আয়াশ বিড়বিড় করে বলে, ‘এই মেয়ে কবরস্থানের কাছে কেন যায় সবসময়!’

রানা বলে, ‘বকুল ২ দিন পর না সন্ধ্যার বিয়ে আজ ‘ও’ এভাবে ঘুরতেছে কেন?’

বকুল হেঁসে বলে, ‘সন্ধ্যার মতো উড়নচণ্ডী বাড়িতে বসে থাকতে পারে নাকি? ওর পুরে এলাকা দৌড়ে বেড়ানো স্বভাব। বুঝছেন?’

রানা হেঁসে বলে, ‘তা ঠিক৷ বাদল ভাই কেমন আছে এখন? উনার এ অবস্থাতেই বিয়ে হবে? মানে ডেট পিছাবে না?’

‘না ভাইয়া। বিয়ে ২ দিন পরই। কাল আমাদের রেজাল্ট দেবে। আর বাাদল ভাইয়া এখন ভালো আছে।’

‘ওহ আচ্ছা।’

‘আপনারা নাকি চলে যাবেন?’

‘হ্যাঁ। একটু পরই বের হবো।’

‘ওহ আচ্ছা। আমি গিয়ে সন্ধ্যাকে খুঁজে আনি।’

রানা মাথা নাড়ায়। আয়াশ এক পলক বকুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রানার দিকে তাকায়। রানা ঠোঁট চেপে হেঁসে শিষ বাজাতে বাজাতে লিজা আর জেরিনের রুমের দিকে যায়।

বাদল একটু হাঁটার জন্য বের হয়েছে। পুরো গ্রামে একবার নজর বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে৷ তাকে কেউ কেনো অ্যাটাক করলো? সে কি করেছে? এতো গুলো খু’ন তারপর তাকে অ্যাটাক! কেনো? বাদল হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা দুর এসে জমির আইল ডিঙিয়ে একটা আম গাছের নিচে বসে। জীবনের কিছু হিসাব মিলাতে ব্যস্ত ছিলো এমন সময় হাজির হয় রিনি। রিনিকে দেখে খানিকটা চমকায় বাদল। রিনির চোখের মুখের অবস্থা বিশেষ ভালো না। চোখের নিচে কালি জমে গেছে। বাদল হেঁসে জিজ্ঞেস করে,

‘কি হয়ছে রিনি? চোখ মুখের এ অবস্থা কেন? আর এখানে কেন?’

‘আপনার সাথে কথা আছে আমার।’

বাদল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই চোখ ছলছল করে ওঠে রিনির। চোখের জল লুকাতে মাথা নিচু করে নেয়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, ‘এ বিয়েটা করবেন না বাদল ভাই।’

বাদল অবাক চোখে তাকায় রিনির দিকে। কাল বাদে পরশু বিয়ে আর আজ এ মেয়ে বলছে বিয়ে না করতে! পাগল হলো নাকি! বাদল কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

‘২ দিন বাদেই আমার বিয়ে আর তুমি বলছো বিয়ে না করতে! কেনো করবো না বিয়ে? সন্ধ্যার মধ্যে কি সমস্যা?’

রিনি বিষাদের সুরে হেঁসে বলে, ‘সমস্যা তো সন্ধ্যার নেই। সমস্যা তো আামার আছে। আমি যে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি বাদল ভাই।’

অবাকে সপ্তম পর্যায়ে বাদল। কি বলবে বুঝতে পারে না। চোখের দৃষ্টি এদিক ওদিক করে। রিনির গাল বেয়ে ততক্ষণে নোনাজলের স্রোত। বাদল নিজেকে শান্ত করে বলে,

‘দেখো রিনি তুমি ভালো করেই জানো আমার ব্যাপারে সবটা। আমি কাকে ভালোবাাসি আর কাকে বাসি না! আমার পক্ষে সম্ভব না তোমার কথাটা শোনা। আমি সন্ধ্যাকেই বিয়ে করবো।’

‘ভালোবাসতে পারবেন ওকে?’

বাদল মুচকি হেঁসে বলে, ‘বাসি তো।’

রিনি চোখ তুলে তাকায়। চোখ ভর্তি জল। বাদল উঠতে উঠতে বলে, ‘তুমি খুব ভালো রিনি। তুমি আমার থেকে অনেক ভালো ছেলে পাবে। যেটা তুমি ডিজার্ভ করো। শুধু শুধু আবেগে গা ভাসিয়ে নিজের লাইফ টা নষ্ট করো না কেমন!’

বলেই বাদল সামনের দিকে হাঁটা দেয়। রিনি শব্দ করে কেঁদে ওঠে। বাদলের কানে যায় সে শব্দ তবুও পিছু ফিরে তাকায় না। পিছনে ফিরলেই মেয়েটি আবার তার আশা করবে যা সে চায় না। তার মাঝে সবটা জুড়ে থাকবে সন্ধ্যা। আর দুটো দিন বাদে যে তার বউ হবে।

বকুল খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যাকে পেলো কবরস্থানের সামনে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একটা কবরের দিকে। রাগে যেনো জ্বলে উঠলো বকুল। এগিয়ে এসে ধমক দিয়ে বলে, ‘এই মেয়ে তোর কি হুশ জ্ঞান নাই? দু’দিন পর তোর বিয়ে আর তুই এই মুহুর্তে এখানে কবরের সামনে এসে বসে আছিস?’

সন্ধ্যা অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বলে, ‘মানুষের আসল ঠিকানাই তো এটা। যত যায় করি দিনশেষে আমাদের সকলের এ জায়গায় আসতে হবে।’

‘যখন আসতে হবে তখন আসিস। এখন বাড়ি চল। সবাই তোর বিয়ে নিয়ে এতো এতো ব্যস্ত।’

সন্ধ্যা আর বকুল পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। বকুল কথায় কথায় বলে, ‘জানিস আজ না শহর থেকে আসা ডাক্তাররা চলে যাবে!’

সন্ধ্যা চমকে তাকিয়ে বলে, ‘আজ কত তারিখ?’

‘৩০ তারিখ।’

সন্ধ্যা বুকের বাম পাশে হুট করে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে। এ ব্যাথা কেমন ব্যাথা? অনুভূতি ঘিরে যে মানুষটা সে দুরে চলে যাবে বলে তার এ ব্যাথা? সন্ধ্যা কোনোরকম নিজেকে সামলায়। বকুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘তুই বাড়ি যা। আমি আসতেছি।’

‘আরেহ কিন্তু..

‘বেশিক্ষণ লাগবে না। চলে আসবো।’

বকুল ‘আচ্ছা’ বলে চলে যায়। সন্ধ্যা আয়াশদের থাকা বাড়ির রাস্তার দিকে দৌড় লাগায়। কিছুটা যেতেই দেখা পায় আয়াশের। হাতে লাগেজ। আয়াশের পেছনেই লিজা, জেরিন, আকাশ, তমাল, সাফি। সবাই হেঁসে এগিয়ে আসে সন্ধ্যার কাছে। লিজা হেঁসে বলে,

‘চলে যাচ্ছি তোমাদের গ্রাম ছেড়ে। তোমাকে ভীষণ মিস করবো।’

জেরিন বলে, ‘হ্যাঁ। তোমাদের সাথে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি সব স্মৃতি হয়ে থাকবে আর আমাদের কোনো বন্ধু যদি তোমাদের গ্রামে বিয়ে করে তবে আবার দেখা হবে।’

সবাই হেসে ওঠে। আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায় সবার দিকে। আকাশ বলে, ‘তোমাদের গ্রামের ভুতকে ভীষণ মিস করবো সন্ধ্যা। এই ভুত ভুত করে সাফি আমার পিঠের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে গেছিলো।’

সাফি ভেংচি কেটে বলে, ‘সন্ধ্যা ওর কথায় কান দিও না। তুমি কিন্তু বিয়ের পর ঢাকায় আসলে আমাদের ওখানেও আসবে।’

তমাল আয়াশের পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিয়ে দেয় সন্ধ্যাকে। আয়াশ হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে তমালের দিকে। তমাল বিনিময়ে ৩২ টা দাঁত দেখিয়ে দেয়। সবাই সন্ধ্যার থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। শুধু থেকে যায় আয়াশ আর সন্ধ্যা। দুজনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াশ কি বলবে বুঝে ওঠে না। সন্ধ্যা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘আপনারা সত্যিই চলে যাচ্ছেন শহুরে ডাক্তার?’

আয়াশ মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘যেতে তো হবেই৷ আমরা এসেছিলাম কাজে সেই কাজ তো শেষ।’

‘ওহ।’

‘হুম।’

তারপর আবাার দুজনে চুপ। দুজনের মনেই অনেক কথা অথচ দুজনেই জড়তায় ভুগছে। অস্বস্তিতে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আয়াশ নিজেই আবার জিজ্ঞেস করে, ‘কাল তোমার রেজাল্ট দিবে?’

‘হুম।’

‘গুড। ভালো করে পড়াশোনা করবে। বাদল ভাইকে দেখে যতটুকু মনে হয়েছে উনি অনেক ভালো তুমি বলে দেখতে পারো।’

‘হুম।’

আবারও নিরবতা। আয়াশ লাগেজ হাতে নিয়ে দুপা এগিয়ে বলে, ‘আচ্ছা ভালো থেকো। আর নিজের খেয়াল রেখো।’

‘আপনি কি শহরে গেলে আমাকে ভুলে যাবেন শহুরে ডাক্তার? একটুও মনে পড়বে না আমাকে?’

আয়াশের পা থেমে যায়। সন্ধ্যার প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে বুঝে ওঠে না। লাগেজ নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়। সন্ধ্যা ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। যতটুকু দেখা যায় ততটুকু তাকিয়ে থাকে সন্ধ্যা। চোখের আড়াল হতেই মাটিতে বসে পড়ে। চোখ থেকে টুপটাপ কয়েক ফোঁটা জল গড়ায়। ভীষণ কাতর স্বরে আওড়ায়,

‘আপনাকে ভালোবেসে সন্ধ্যামালতী নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে শহুরে ডাক্তার। নিজের অজান্তেই কয়েকটা দিনে আপনাকে কিভাবে ভালোবেসেছি আমি জানি না তবে আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি শহুরে ডাক্তার। ভীষণ বেশি। আপনি আমাকে ভালেবাসলে কি খুব ক্ষতি হতো শহুরে ডাক্তার?’

পেছন থেকে এই ভীষণ কাতর স্বর শোনে রানা। সন্ধ্যার কষ্টে জড়ানো কন্ঠ যেনো ভেতরটাকে পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। রানা নিজেকে সামলে এগিয়ে আসে সন্ধ্যার কাছে। সন্ধ্যাাকে পেছন থেকে ডাকতেই সন্ধ্যা তাড়াহুড়ো করে চোখ মুছে নেয়। তারপর হেঁসে তাকায় রানার দিকে। রানা নিঃশব্দে হাসে। পিচ্চি মেয়েটা কষ্টও লুকাতে জানে! সন্ধ্যাকে বলে,

‘চলো। আমরা বড় রাস্তায় গিয়ে গাড়ি নেবো। এগিয়ে দেবে না আমাদের?’

আরো একটি বার আয়াশকে দেখার লোভ যেনে সন্ধ্যা ছাড়তে পারলো না। রানার সাথে এগিয়ে আসলো বড় রাস্তা পর্যন্ত। আয়াশের চোখে মুখেও বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট। এই বিষণ্ণতা কেনো? সন্ধ্যাকে ছেড়ে যাওয়ায়? সন্ধ্যার শূণ্যতায় নাকি অন্য কোনো কারণ? রানা আর সন্ধ্যা এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। সবাই কিছুক্ষণ হাসাহাসি করতেই গাড়ি চলে আসে। একে একে সবাই সন্ধ্যার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে। আয়াশ গাড়িতে উঠার আগে একবার তাকায় সন্ধ্যার দিকে৷ বুকের বাম পাশ টা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ২ দিন আগের জড়িয়ে ধরার অনুভূতিটা আঁকড়ে ধরে। গাড়িতে উঠে চুপচাপ সামনের দিকে তাকায়। সন্ধ্যার চোখ বেয়ে আবারও এক ফোঁটা অশ্রু গড়ায়…..
#সন্ধ্যামালতী (১৪)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________

সন্ধ্যা বাড়ি ফিরে মন খারাপ নিয়ে। বকুল আর তার মা তখনো বসে আছে। সন্ধ্যাকে দেখে দৌড়ে আসে বকুল। সন্ধ্যা একপলক সেদিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে এগিয়ে আসে বকুলের মায়ের কাছে। বকুলের মা হেঁসে সন্ধ্যাকে বলে,

‘সেই কুন বেলা থেইকা বইসা রইছি তোর তো খবর ওই নাই। আয় দেহি এইদিহে আয়।’

সন্ধ্যা কাছে আসতেই বকুলের মা একটা বেনারসি শাড়ি সন্ধ্যার গায়ে জড়িয়ে দিলো। সন্ধ্যা একবার নিজের গায়ে জড়ানো বেনারসির দিকে তাকায় তো আরেকবার বকুলের মায়ের দিকে। আর মাত্র ২ দিন তারপরই সে অন্য কারো হয়ে যাবে। আর বদলে যাবে তার ভালোবাসার ধরন৷ হয়তো সময়ের টানে ভালোবাসার মানুষটাও বদলে যাবে। সন্ধ্যার ভাবনার মাঝেই বকুলের মা সন্ধ্যার থুতনি উচু করে বলে,

‘মাশাল্লাহ। মাইয়াডারে কি সুন্দর লাগতাছে!’

তারপর সবাই গল্প শুরু করে। বকুল আর বকুলের মা চলে যায়। সাহেদা ভীষণ ব্যস্ত নিজের মেয়ের বিয়ে নিয়ে। সাহেদা বসা থেকে উঠতে গেলে সন্ধ্যা হাত ধরে আটকায়। সাহেদা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সন্ধ্যা মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। চোখের কোণ ভিজে আসলেও নিজেকে সামলে নেয়। সাহেদা বলে,

‘কি অয়ছে আম্মা? শরীর ভালা না তোর?’

সন্ধ্যা অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বলে, ‘ভালো।’

সাহেদা বুঝে মেয়ের মন খারাপ তাই মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। সন্ধ্যা ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না সংবরণ করে।

৬ ঘন্টা জার্নির পর ঢাকা এসে পৌঁছায় আয়াশরা। নিজের শহরে এসে যেমন সবার ভালো লাগছে তেমনই গ্রামে কাটানো দিন গুলোও খারাপ লাগা তৈরী করছে। সবাই নিজেদের মতো কথা বলায় ব্যস্ত থাকলেও আয়াশ চুপচাপ। রানা একবার আয়াশের দিকে তাকায়। তারপর কাছে এসে ধীর কন্ঠে বলে,

‘মন খারাপ?’

আয়াশ চোখ তুলে তাকায়। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। হুট করেই রানার মনে হলো আয়াশকি কেঁদেছে? রানা ব্যস্ত কন্ঠে বলে, ‘তুই কি কেঁদেছিস? তোর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন?’

আয়াশ হালকা হেঁসে বলে, ‘কাঁদিনি। এমনিতেই চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। আচ্ছা শোন তোরা সাবধানে যাস আমি দ্রুত বাড়ি যায়।’

তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির রাস্তায় হাঁটা লাগায় আয়াশ। পেছন থেকে তার বন্ধুমহল হাসে। আয়াশ গলি পেড়িয়ে নিজেদের বাড়ি চলে আসে। দরজা খোলে আয়াশের মা আফরা। আফরা তো ছেলেকে দেখেই খুশি। আয়াশ কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে যায়। কতগুলো দিন পর নিজের রুমকে দেখেও তার প্রশান্তি মেলে না। এত অস্থিরতা, এত শূণ্যতা কিসের? কেন মনে হচ্ছে তার কোনো এক অংশ নেই। তার বুকের বাম পাশে কিসের ব্যাথা? লাগেজ ছুড়ে মারে ফ্লোরে। মাথা চেপে ধরে দুহাতে। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সন্ধ্যার মুখ। দ্রুত চোখ খুলে বসে পড়ে। সে যে ফেসে গেছে তা তার বুঝতে বাাকি নেই। কোনো রকম একটা শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুমে বসে আছে তার ফিয়ন্সে সানজিদা। সানজিদা আয়াশকে দেখে হেঁসে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। আয়াশ বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দেয় তাকে। সানজিদা ন্যাকা স্বরে বলে,

‘কি হয়েছে আয়াশ? এতগুলো দিন পর আসলে তাও আমাকে পাত্তা দিচ্ছো না!’

‘দেখো সানজিদা আমি অনেক ক্লান্ত এখন এসব ভালো লাগতেছে না। তুমি আসতে পারো।’

‘বেবি আমি…

‘যেতে বলেছি।’

সানজিদা অপমানে চোখ মুখ কালো করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আয়াশ দরজা লাগিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। ২ দিন পর সন্ধ্যার বিয়ে, তারও তো বিয়ে এ মাস পেরোলেই। তবে? তাদের বুঝি বিচ্ছেদ লিখা কপালে!

_______________

দিনটা অস্থিরতা আর কারো শূণ্যতা অনুভবে কেটে গেলো আয়াশ-সন্ধ্যার। আজ সন্ধ্যার রেজাল্ট দেবে। সকাল সকাল আয়াশরা যেখানে থাকতো সেখানে এক চক্কর কেটে এসেছে। সব স্মৃতি গুলো যেনো জ্বলজ্বল করে উঠে চোখের সামনে। সন্ধ্যা ১২ টার দিকে রেডি হয়ে সাহেদার কাছে আসে। সাহেদা কাজ অর্ধেক রেখেই এগিয়ে আসে মেয়ের কাছে। চোখে মুখে তার বিষন্নতা। সন্ধ্যা মায়ের মুখ দেখে কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বলে,

‘কি হয়ছে আম্মা? মন খারাপ কেন তোমার?’

সাহেদা মলিন হেঁসে বলে, ‘আজকা তো তোর রেজাল দিবো পরে আমি তোরে কলোজে ভর্তি করমু। তুই মন দিয়া পড়বি।’

‘আমার কি আর পড়া হবে আম্মা? বিয়ে হয়ে গেলে তো মেয়েদের পড়াশোনা শেষ।’

‘বিয়া অইবো না তোর। তুই যা।’

সন্ধ্যা অবাক চোখে তাকায় মায়ের দিকে। তার মা বেশি খুশি ছিলো এ বিয়ে নিয়ে তাহলে কি এমন হলো যে তার মা বিয়ে দিবেন না বলছে? সাহেদা মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে, ‘সাবধানে যাইস আম্মা।’

সন্ধ্যা হেঁসে মা’কে জড়িয়ে ধরে। তারপর বের হয় বাড়ি থেকে। হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা দুর গেলেই দেখা হয় রিনির সাথে। রিনিকে দেখে নিঃশব্দে হাসে সন্ধ্যা। রিনি মলিন হেঁসে তাকায়। কিছু বলে না সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা পাশাপাশি এসে হাঁটতে হাঁটতে বলে,

‘স্কুলে যাচ্ছিস?’

‘হুম।’

‘আজ তোর কি হলো? অন্যদিন হলে তো বলতি ‘তোর মতো ফ’কিন্নির সাথে কথা বলার ইচ্ছে নাই’।’

রিনি মলিন হাসে। সামনে তাকিয়ে সন্ধ্যাকে বলে, ‘সব সময় কি সবাই এক থাকে?’

সন্ধ্যা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে। বলে, ‘হুম সেই তো। তা কোন কারণে তোর মন খারাপ? আমার হবু স্বামীকে ভালোবেসে নাকি সবাই জেনে গেছে তুই ফরিদ কাকাকে মে’রেছিস!’

চমকে তাকায় রিনি। অবাক কন্ঠে বলে, ‘কি বলছিস এসব? মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি?’

সন্ধ্যা ফের হাসে। রিনি মুগ্ধ নজরে তাকিয়ে দেখে সে হাসি। মনে মনে আওড়ায়, ‘তোর এই স্নিগ্ধ মুখের হাসি দেখলে যে কেউ তোর মায়ায় বেধে যাবে সেখানে বাদল ভাই তো কিছুই না।’

সন্ধ্যা রিনিকে কিছু ভাবতে দেখে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে বলে, ‘মিথ্যা কিছু কি বলেছি রিনি? এটা তো সত্যি ফরিদ কাকা তোরেও ছাড় দিতো না। তোরেও বাজে নজরে দেখতো!’

রিনি মাথা নিচু করে নেয়। সন্ধ্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘যা করেছিস ভালো করেছিস। ওমন মানুষ ম’রাই ভালো৷ তা বাদল ভাইকে এতো ভালোবাসিস কেন?’

রিনি ব্যস্ত স্বরে বলে, ‘না না সন্ধ্যা তুই…..

সন্ধ্যা রিনির কথার পিঠে খিলখিল করে হাসে। আর কিছু বলার আগেই বকুলও চলে আসে। রিনি আর সন্ধ্যা দুজনেই চুপ হয়ে যায়। ৩ জনে গল্প করতে করতে চলে আসে স্কুলে। রেজাল্ট দিবে দুপুর ২ টার দিকে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

রেজাল্ট দেওয়ার পর সবাই খুশি। ১২ জন শিক্ষার্থী আর ১০ জন ছাত্র A+ পেয়েছে আর ৫ জন গোল্ডেন মার্ক। তার মধ্যে সন্ধ্যাও আছে। বকুল আর রিনি + মার্ক পেয়েছে। সবাই খুশিতে হৈচৈ করে বাড়ির পথে রওনা দেয়। পথে দেখা হয় বাদলের সাথে। রিনিকে সন্ধ্যাদের সাথে দেখে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। সন্ধ্যা তা দেখে মুচকি হাসে। রিনি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সন্ধ্যাা আর বকুল বাদলের সাথে কথা বলতে দাঁড়ায়। বাদল হেঁসে বলে,

‘রেজাল্ট কি দুজনের?’

বকুল খুশিতে গদগদ হয়ে বলে, ‘আমি A+ আর সন্ধ্যা গোল্ডেন মার্ক।’

সন্ধ্যাা হেঁসে বলে, ‘রিনিও A+ পেয়েছে।’

বাদল ফের অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে বলে, ‘চল বাড়ির দিকে।’

বকুল আর সন্ধ্যাও তাতে সায় দেয়। বকুল নিজেদের বাড়ির দিকে গেলে সন্ধ্যা আর বাদল একসাথে হাঁটতে থাকে। দুজনেই চুপ। নিরবতা ভেঙে সন্ধ্যাই বলে, ‘আপনি কি রিনিকে ভালোবাসেন বাদল ভাই?’

বাদল অবাক চোখে তাকায়। সন্ধ্যার কথা মানে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘মানে? বুঝলাম না তোর কথা!’

সন্ধ্যা হেঁসে বলে, ‘কিছু না।’

তারপর আবার দুজনে নিশ্চুপ। দুজনে একসাথে বাড়ি পর্যন্ত আসে। টিনের গেইট খুলে বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই থমকে দাঁড়ায় সন্ধ্যা আর বাদল। বারান্দার ওপরে পড়ে আছে তার মা আর দাদার নিথর র’ক্তাক্ত দেহ। সন্ধ্যা দৌড়ে আসে সাহেদার কাছে৷ বাদলও ছুটে আসে। সন্ধ্যা বার বার ডাকতে থাকে সাহেদা আর তার দাদাকে। কিন্তু ততক্ষণে দুজনের শরীরই শীতল, বরফ হয়ে গেছে। বাদল পালস চেইক করে দুহাত পিছিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তাকাতেই দেখে সন্ধ্যা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাদল কাপা কাঁপা গলায় বলে,

‘চাচি আর দাদা মা’রা গেছে সন্ধ্যা।’

কথাটা শুনতেই সন্ধ্যার সব পাগলামি বন্ধ হয়ে যায়। সাহেদার থেকে দু হাত দুরে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে লা’শ দুটির দিকে। পৃথিবীর শেষ আশ্রয় ছিলো তার মা আর দাদা। তাদেরকেই কেউ কেড়ে নিলো? ফরিদ, মুন্নি এদের যে মে’রেছে সেই কি তবে তার মা আর দাদাকে? কিন্তু কেন? এতদিন সে ভাবতো এসবের পেছনে রিনি আছে কিন্তু রিনি তার মা আর দাদাকে কেন মা’রবে? আর আজ তো সে সাথেই ছিলো রিনির। তাহলে? মাথাা ঘুরিয়ে আসে সন্ধ্যার। বাদল এসে আগলে নেয় সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা ওভাবেই জ্ঞান হারায়।

চারিদিকে আগর বাতির গন্ধ। বাড়ির পরিবেশ থমকে গেছে। বকুল আর বকুলের মাও কান্না করছে। লাশ ধুইয়ে পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যার জ্ঞান ফিরেছে একটু আগে। তখন থেকেই সে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মা আর দাদার লাশের দিকে। বকুল বার বার সন্ধ্যাকে ধাক্কাচ্ছে কিন্তু সন্ধ্যার এসবের হুশই নেই। আজ খুব করে তার আয়াশকে মনে পড়লো! এই মুহুর্তে তার আয়াশকে ভীষণ দরকার। অন্তত একটু কেঁদে মন হালকা করার জন্য হলেও তার আয়াশকে প্রয়োজন ছিলো। বাদল এসে সন্ধ্যাকে নিজের দিকে করে৷ ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,

‘সবাই চাচিদের নিয়ে যাবে। তুই একবার চাচির কাছে যাবি?’

সন্ধ্যা ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকায় বাদলের দিকে৷ তারপর উঠে এসে সাহেদার খাটিয়ার কাছে বসে। লম্বা চুল গুলো তখনো মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সন্ধ্যা সাহেদার মুখ আজলে নিয়ে আস্তে করে বলে,

‘আম্মা দেখো না আমার চুল গুলো খুব জ্বালাচ্ছে তুমি একটু বেঁধে দাও না! আম্মা তাকাও না। এতো ঘুমালে হবে। দাদার তো এতক্ষণে খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়!’

তারপর সাহেদাকে ছেড়ে নিজের দাদার খাটিয়ার কাছে আসে। দাদাকে ডেকে বলে, ‘দেখো দাদা আম্মা উঠতেছে না। তুমি কিছু বলো তো। তোমার খিদে পেয়েছে তাই না? আসো আমরা এক সাথে খাবো। উঠো!’

বকুল এসে সন্ধ্যাকে ধরে সরিয়ে দেয়। কান্নার দমকে বকুল নিজেই কথা বলতে পারতেছে না। সে তো জানে, বুঝে এই মেয়েটার এই দুজন ছাড়া যেমন কেউ নেই তেমনই ভালোবাসার মানুষগুলোকে তো মেয়েটা হুটহাট এভাবে হারিয়ে নিজের মাঝে কষ্ট পুষেছে। সন্ধ্যা বকুলের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘দেখ সই আম্মা আর দাদা কেউ উঠতেছে না। এমন করলে কিন্তু আমি বেশি বেশি করে পুরো গ্রামে দৌড়াবো।’

বকুলের মা সন্ধ্যাকে ধরে দুরে আনে। বলে, ‘তোর মা’রে ওরা নিয়া যাইবো এহন। আর কাছে যাইস না মা।’

সন্ধ্যা ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। মায়ের খাটিয়ার কাছে দৌড়ে এসে ওভাবেই জড়িয়ে ধরে। পাগলের মতো শুরু করে। শেষে কয়েকজন মিলে ধরে সরিয়ে রাখে সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যার চিৎকারে যেনো পুরো গ্রাম থমকে যায়। আহাজারিতে ভরে যায় সন্ধ্যামালতীর স্বর। সেই আহাজারিতে যেনো কেঁদে উঠে পুরো গ্রামবাসী…

চলবে..

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)
চলবে..

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here