সন্ধ্যালয়ের প্রণয় পর্ব -০৮+৯

#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| অষ্টম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

আকাশে মেঘ জমেছে। এই বুঝি বৃষ্টি নামবে। সন্ধ্যার আগমনে অফিসের সকলেই আনন্দিত। ডেক্সে বসতেই সকলেই এগিয়ে আসেন সন্ধ্যার সাথে দেখা করতে। নিলয় মনিটরে সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছে। সন্ধ্যাবতী হেসে হেসে সকলের সাথে কুশল বিনিময় করছে। নিলয়ের হাতে আজ নতুন প্রজেক্ট এসেছে। সকালে এক ডিলারের মাধ্যমে প্রবীন এক কোম্পানি কাজ করতে রাজি হয়েছে। সন্ধ্যা লগনে দুই কোম্পানির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।

নিলয়ের দেওয়া কাজ সমাপ্ত করে মাত্র আকাশ অফিসে প্রবেশ করেছে। সন্ধ্যার ডেক্সের সামনে ভীর দেখে মন আনন্দে নেচে উঠে। হাতের ফাইল নিচে ফেলে দিয়ে প্রফুল্লবাবু সেজে ভীড় ঠেলে সন্ধ্যার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যাবতী প্রস্তুত ছিল না। আকাশের পিঠে দুরুম দারুম থাপ্পড় বসিয়ে একপাশে টেনে নিয়ে আসে,
” আজ তোকে জীবন্ত কবর দিব আক্কাইস্সা। যখন তখন আমাকে জড়িয়ে ধরিস কেন? আমি তোর প্রেমিকা হই নাকি?”
” আর মারিস না মেরি মা! আমি তো আনন্দের ঠ্যালায় তোকে জড়িয়ে ধরেছি। তুই তো জানিসই আমি তাকেই ভালোবাসি। তুই তো আমার জানের বন্ধু।”
” ভালোবাসিস না ছাই! একজনকে ভালোবাসবি আর আমাকে জ্বালাবি।”
” মাইন্ড করিস না। কতদিন পর তোকে দেখেছি। আবেগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। বল কেমন আছিস?”
” ভালো আছি।”

সন্ধ্যাবতী কী আদৌও ভালো আছে? নিলয় মনিটরে সন্ধ্যাকে লক্ষ্য করছিল। হঠাৎ মনে হলো সন্ধ্যাকে কিছু সময় রাগানো হয়নি। নিলয় সন্ধ্যাকে জ্বালাতন করার বুদ্ধি এঁটে বাঁকা হেসে সন্ধ্যাকে ফোন করে।
সন্ধ্যা আকাশের সাথে কথা বলছিল তখন মুঠোফোন বেজে উঠায় নিজের ডেক্সের দিকে যায়। ফোনের স্কিনে অসভ্য দুর্লয় নামটা ভেসে ওঠে। সন্ধ্যা বিরক্ত হয়, ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে বলে,

” রাজার আসনে বসে কী হুকুম করতে চাইছেন শুনি?”

সন্ধ্যার ত্যাড়াবাঁকা কোথায় নিলয় হাসে। গম্ভীর স্বরে বলে,
” মুখ সামলে কথা বলুন মিস ঐরাবতী। এখনই আপনি আমার কেবিনে আসবেন। আর হ্যাঁ! অবশ্যই নিজ হাতে বানানো দুই কাপ কফি সাথে করে নিয়ে আসবেন।”
কল কেটে যায়, সন্ধ্যার মেজাজ খুবই খারাপ হয়। সন্ধ্যা খুব সুন্দর কফি বানাতে পারে। নিলয়কে জব্দ করার জন্য সন্ধ্যাবতীর মাথায় একটা দারুন প্ল্যান আসে। সন্ধ্যা জানে নিলয় কফির সাথে আধা চা চামচ চিনি খায়। অতিরিক্ত সুগারে নিলের সমস্যা হয়। সন্ধ্যা নিলয়কে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য কফির কাপে প্রায় চার পাঁচ চামচ চিনি ঢেলে দেয়।

নিলয়ের কেবিনের সামনে এসে অভ্যাস মোতাবেক প্রবেশ করতে নিলেই পূর্বের নিলয়ের করা ব্যবহার মনে পড়ে যায়। হাতে কফির ট্রে বিধায় একটু জোরেই অনুমতি চায় সে,

” আসবো?”
” কে?”
সন্ধ্যার রাগ উচ্চ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দেয়,
” ঢং না করে দরজা খুলুন। আমার দুই হাত বন্ধ।”
নিলয় হাসে। সন্ধ্যার কথা শুনে মনে হচ্ছে পাক্কা গৃহিণী। নিলয় নিজে এসে দরজা খুলে দিয়ে চেয়ারে এসে বসে। সন্ধ্যা মুখে ভেংচি কেঁটে টেবিলের উপর কফির ট্রে রাখে।
” আপনার কফি। দুটোই খান। গিলে গিলে খান, গলা ভর্তি করে খান। আমি এখন যাই।”
” আমি কি আপনাকে যেতে বলেছি, মিস ঐরাবতী? বসুন, আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, একা একা কফি পান করতে পারি না। সঙ্গর প্রয়োজন। আজ না হয় আপনি আমার সঙ্গী হয়ে পাশে বসে কফি পান করেন।”

সন্ধ্যা এটাই চাইছিল। নিজ চক্ষে নিলয়ের অস্থিরতা দেখবে আর মজা নিবে। নিলয় কফির কাপে চুমুক দিতেই ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা মুচকি হাসছে। নিলয় বুঝতে পারে সন্ধ্যা ইচ্ছে করেই কফিতে চিনি মিশিয়েছে। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে, ” কফি ঠিক আপনার মত তেতো হয়েছে, মিস ঐরাবতী।”

সন্ধ্যা ভরকে যায়। নিজের কফিতে চুমুক দিয়ে পরীক্ষা করে নেয়, কাপ অদলবদল হলো কি না। সঠিক কাপ নিলয় নিয়েছে এবং মজা করে খাচ্ছে। তার দৃষ্টি সন্ধ্যার দিকেই নিবদ্ধ। সন্ধ্যা শুকনো ঢোক গিলে। নিলয় শাস্তি দিবে ভেবে এক নিশ্বাসে কফি পান করে ফেলে।

” আমার হয়ে গেছে। অনেক কাজ বাকী আছে। আমি যাই?”

নিলয়ের শরীর খারাপ করছে। অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে পেটের ভেতর সব গুলিয়ে যাচ্ছে যেন এক্ষুনি বমি করে দিবে। সন্ধ্যার কথার প্রত্যুত্তরে “বসো” বলে চলে যায় ওয়াশরুমে।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর নিলয় বের হয়ে আসে। সন্ধ্যা চেয়ারে বসে তখন দাঁত দিয়ে নখ কাটছিল। নিলয়কে দেখে সে দাঁড়িয়ে যায়। নিলয় ঢুলুঢুলু শরীরে কোনরকম কেবিনের একপাশে রাখা বড়ো সোফায় গা এলিয়ে দেয়। সন্ধ্যা এবার প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। আলগোছে নিলয়ের দিকে এগিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

” আমি দুঃখিত অসভ্য দুর্লয়। আমি দুষ্টুমির ছলে আজ একটু বেশিই করে ফেলেছি।”

নিলয় হাসে। দুর্বল স্বরে প্রত্যুত্তরে বলে,
” প্রতিশোধ নিলে?”
” একদম না।”
” তাহলে আমার কষ্ট দেখে আনন্দ পেলে?”
” ইয়ে মানে,,,,,
বমি করায় নিলয় অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। মাথায় সন্ধ্যার হাতের উপর হাত রেখে বলে, ” মাকে ফোন করে আসতে বলো।”

সন্ধ্যা তাই করতে যায়। নিলয়ের কাছ থেকে উঠে বড়ো মাকে ফোন করবে বলে কেবিন থেকে বের হতে নেয়। তখনই নিলয়ের দুর্বল স্বর আবারো সন্ধ্যাবতীর কর্ণধারে আসে।

” দাঁড়াও সন্ধ্যাবতী! আগে শাস্তি স্বরূপ বাথরুম পরিষ্কার করে নাও। না করলে ডাবল শাস্তি হবে।”

সন্ধ্যা রেগে যায়। কিছুক্ষণের জন্য নিলয়ের জন্য মনে আসা মায়াকে বিসর্জন দিয়ে বকতে বকতে চলে যায় বাথরুমে।

চলবে……

————

আমি সন্ধ্যার পর মূলত লিখতে বসি। আজকে বড় পর্ব দিতে পারিনি তার জন্য দুঃখিত। আরহাম অনেক জ্বালিয়েছে। প্লিজ রাগ করবেন না কেউ।#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| নবম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

মুখে রুমাল চেপে বর সেজে বসে আছে নিলয়। চোখে মুখে তার চরম বিরক্তি ভাব। পাশেই গোমড়ামুখো হয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে সন্ধ্যাবতী বসে আছে। লাল জামায় সন্ধ্যাকে নতুন বউ লাগছে। নিলয়ের মা রেহানা বেগম গালে হাত দিয়ে দুজনকে মন ভরে দেখছেন আর মিটিমিটি হাসছেন।

” মা, তোমার দেখা শেষ হলে আমি যেতে পারি? পেটের ভেতর থেকে সব বের হয়ে আসছে।”

রেহানা বেগম এবং সন্ধ্যা মুখ চেপে হাসছে কেননা নিলয় কথা বলে আর দাঁড়ায়নি, দৌড়ে চলে গেছে বাথরুমে। আধা ঘণ্টা যাবত এমনই চলছে। মানুষের ডায়রিয়া হলে যেমন একটু পরপর বাথরুমে যায় নিলয়ের তেমন অবস্থা হয়েছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতেই রেহেনা বেগম একটু জলপাইয়ের আচার নিলয়ের মুখে তুলে দেয়। প্রায় দশ মিনিট পর নিলয় কিছুটা স্বাভাবিক হয়। আর কিছুক্ষণ পূর্বে দুজনকে বর বউ হিসেবে বসিয়ে রাখার কারণ হচ্ছে, নিলয় অসুস্থ অবস্থায়ও সন্ধ্যাকে রীতিমতো ধমকে যাচ্ছিল। বেচারি সন্ধ্যা নিলয়ের ধমক খেতে খেতে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে রেহানা বেগম এসে দুজনকে ধমকিয়ে একসাথে বসিয়ে রাখে। এদিকে বাতাসে সন্ধ্যার চুলগুলো উড়ছিল বিধায় মাথায় ঘোমটা টেনে গোমড়ামুখো হয়ে বসেছিল। আর রেহেনা বেগম মনে মনে দুজনকে একসাথে বসিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে মুচকি হাসছিল।

আবহাওয়ার পরিবর্তন টা খুবই বিরক্ত লাগছে নিলয়ের কাছে। আকাশ পরিপূর্ণ মেখে ঢাকা।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে। নিলয়ের মা বিদায় নিয়েছেন সে অনেক আগে। নিলয় ল্যাপটপে কিছু কাজ কমপ্লিট করে নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে আসে। উদ্দেশ্যে এখান থেকে সরাসরি কাউকে নিয়ে মিটিংয়ে যাবে।

আকাশ একটা ফাইলে ভুল করে সন্ধ্যার নিকট আসছিল সংশোধন করার নিয়তে। ফাইল মূলত বাহানামাত্র আধঘণ্টা যাবত সন্ধ্যার সাথে তার কথা হয় না। ফাইল দেখানোর ফাঁকে সন্ধ্যার সাথে আড্ডা দিয়ে আসবে সে। ফাইলের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল সে। কারো সাথে ধাক্কা লেগে ফাইল সহ আকাশ নিচে পড়ে যায়। কন্ঠনালী থেকে প্রায় কঠিন বকা বের হয়ে আসছিল কিন্তু নিলয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চুপ হয়ে যায়। নিলয় আকাশকে দেখছে। হাতে ফাইল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল ছেলেট। আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই ছেলেটা উঠে আসে। নিলয় নিজের ব্লেজার ঠিক করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

” মিস্টার আকাশ। এখন এই কথা বলবেন না যে, স্যার লাঞ্চ টাইম তাই সন্ধ্যার কাছে যাচ্ছি তার তুলতুল হাতে খাবো বলে।”

আকাশ জিহ্বা কাটে। মাথায় না বোধক ইশারা করে বলে,
” না স্যার, আমি তো আমার গার্লেফ্রেন্ডের হাতেও কখনো খাইনি। আর সন্ধ্যা তো ধানি লঙ্কা, দেখা যাবে কখনো যদি বন্ধু হিসেবে আবদারও করি তাহলে মাছের জায়গায় বোম্বাই খাইয়ে দিবে।”

আকাশের কথা শুনে নিলয় না চাইতে হেসে ফেলে। এদিকে নিলয়ের হাসি শুনে আশেপাশের ডেক্স থেকে কিছু কর্মচারী এগিয়ে আসে তাদের মধ্যে সন্ধ্যাবতীও একজন। আকাশের হাতে ফাইল দেখেই বুঝতে পারে এই ভম্বল নিশ্চয়ই ফাইলের বাহানায় তার কাছে আসছিল আর এখন নিলয়ের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। সন্ধ্যা মনে মনে আকাশকে ভয়ানক গালি দিয়ে নিলয়ের কাছে এসে দাঁড়ায়। নিলয়ের হাসি দেখে অফিসের সকলেই অবাকপ্রায়।
” অসভ্য দুর্লয়ের আজ মাথা গেছে।”

সন্ধ্যার বিড়বিড় কথাও নিলয় শুনে ফেলে। হাসি থামিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
” আপনারা সকলেই জানেন, আমাদের হাতে নতুন একটি প্রজেক্ট এসেছে। আজ সেই প্রজেক্টের ফাইনাল ডিল হবে। ডিলটা খুব ব্যাক্তিগতভাবে করতে চাইছি আমরা। আপনাদের মধ্য থেকে একজন আমার সাথে যাবে যে খুব চঞ্চল আর বুদ্ধিমান। এখন বলুন কে যাবেন?”

অনেক ভীড়ের মধ্যে যখন কোন ভয়ংকর মানুষ আসে তখন সকলে তাকে রাস্তা করে দেয় বা দূরে সরে দাঁড়ায়, ভয় পায়। নিলয়ের কথা শেষ হতেই উপস্থিত সকলেই দূরে সরে দাঁড়ায়। আকাশ নিলয়ের কথার মর্মার্থ ভাবছিল। সকলে সরে যেতেই তার স্তম্ভিত ফিরে আসে আশেপাশে তাকিয়ে সে ও সরে যায়। সন্ধ্যা চারপাশে লক্ষ্য করে দেখে সে আর নিলয় ছাড়া কেউ নেই। নিলয় সন্ধ্যাকে দেখে বাঁকা হাসে। চোখে সানগ্লাস পরে বলে,
” আমার সাথে থাকতে থাকতে বুদ্ধিমাতী হয়ে গেছে মিস ঐরাবতী। তার জন্যই সকলে আপনাকে ইঙ্গিত করেছে আমার সাথে যেতে।”

সন্ধ্যা কপাল কুঁচকায়। দুই হাত বুকে গুঁজে প্রতুত্তুরে বলে,
” আসছে, বুদ্ধিমান বেশে হনুমান।”

—————————-

শহরের সবচেয়ে নামকরা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নিলয় গাড়ি থামায়। সন্ধ্যা এত বড়ো রেস্টুরেন্ট দেখে মুখে ভেংচি কা’টে। দুজন একসাথে প্রবেশ করে রেস্টুরেন্টের ভিতরে।
দুজন ছেলে এসে নিলয় এবং সন্ধ্যাকে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানায়। ডিল ফাইনাল করার জন্য একটা কেবিন বুক করা হয়েছে। নিলয় এবং সন্ধ্যা সেখানেই বসে অপেক্ষা করে। প্রায় দশ মিনিট পর কাঙ্খিত মানুষগণ আসেন। নিলয় তাদের দেখে দাঁড়িয়ে যায় সন্ধ্যা তখন ফোন ঘাঁটছিল। নিলয়কে দাঁড়াতে দেখে সেও দাঁড়ায়। সোনালী বর্ণের চুল ওয়ালা দুই লোক তাদের সামনে। দেখতে অনেকটা ভিনদেশি। পুরো শরীর সাদা, দেখে মনে হচ্ছে মেকআপের স্তূপ সারা শরীরে। সন্ধ্যা লোক দুটোর পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে। সামনে দাঁড়ানো লোকটার চোখের কাছে আসতেই সন্ধ্যা থমকে যায়। পূর্ব পরিচিত চোখ জোড়া সন্ধ্যাকে টানছে। সন্ধ্যা এগিয়ে যেতে চায় লোকটি দিকে কিন্তু নিলয় তাকে বাঁধা দিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দেয়। দুজন লোকের একজনের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি আর একজনের বয়স ত্রিশ বা বত্রিশ হবে। বয়স্ক লোকটির নাম হচ্ছে হ্যারি আরের জনের নাম হচ্ছে রাফসান।

প্রায় তিন ঘণ্টা মিটিংয়ের পর ডিল ফাইনাল হয়। পুরোটা সময় সন্ধ্যা রাফসানের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছু তো আছে রাফসানের মাঝে যা সন্ধ্যার খুব পরিচিত। সন্ধ্যা একবার ইচ্ছে হয় রাফসানকে ছুঁয়ে দেখতে। আবার ভাবে, যদি তাকে বেয়াদব বলে! সবচেয়ে বড় কথা নিলয় তার পাশে। এখন যদি সন্ধ্যা কিছু করেও বসে তাহলে নিলয় তাকে সারাজীবন খোঁচাবে।

কথা ছিল ডিল ফাইনাল হলে উভয় পক্ষের মানুষজন রাতে ডিনার করে তারপর বের হয়ে যাবে। নিলয়ের সমর্থন করলেও আগন্তুকরা নাকজ করে। তারা কোনভাবেই খাবেনা বলে দেয়। নিলয় আর জোর করেনি। ভেবে নেয়, এখন থেকে তো একসাথে কাজ করা হবে সুতরাং এমন আমন্ত্রণ নিমন্ত্রণ অনেক দেওয়া যাবে।
নিলয় হ্যারি এবং রাফসানকে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে। সন্ধ্যা তখনও রাফসানের দিকে তাকিয়ে। নিলয় আড়চোখে সব কিছুই লক্ষ্য করছে। রাফসান এবং হ্যারিকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তারা আবার হোটেলে প্রবেশ করে। এদিকে সন্ধ্যার পেছনে তাকিয়ে গাড়ির নাম্বারটা নোট করে নেয় কোন এক কারণে।
——————

নিলয় এবং সন্ধ্যার মাঝে কথার চেয়ে বেশি ঝগড়া হয়। নিলয়ের সন্ধাকে খোঁচাতে ভালোবাসে আর সন্ধ্যা নিলের কথার প্রতিবাদে বাঁকা কথা বলতে ভালোবাসে। একসাথে কাজ করা হলেও সন্ধ্যার সাথে কখনো একসাথে খাওয়া হয়নি। রাত বেড়েছে, সন্ধ্যা ফোনে মত্ত। নিলয় আড়চোখে সন্ধ্যাকে দেখছে।
” ঐ ফোনে কী আছে মিস ঐরাবতী? আমাকে মে’রে’ ফেলার হাতিয়ার নাকি? সর্বক্ষণই যে তোমার নজরে থাকে!”

সন্ধ্যা ফোন থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে প্রতুত্তুরে বলে,
” বুদ্ধিটা মন্দ নয়। আপনার আমার পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যদি প্রতিশোধ নিতে চাই তাহলে এমন চিকুনী বুদ্ধিই প্রয়োগ করতে হবে।”

” আমি সেই সময়ের অপেক্ষায় রইলাম মিস ঐরাবতী। আপনি বাঘিনী রূপে হাজির হবেন আমি সিংহ হয়ে আপনাকে ভয় দেখাবো।”

খাবার চলে আসে। ইতিমধ্যে নিলয় খাওয়া শুরু করে দিয়েছে কিন্তু সন্ধ্যা! সে খাচ্ছে না, হাত গুটিয়ে বসে আছে। নিলয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসে। সন্ধ্যার প্লেটে খাবার পরিবেশন করে বলে,

” মায়ের কাছে শুনেছি, তুমি নাকি ছোট বেলায় গরুর মাংস দেখে খাবার খেতে চাইতে না। এখনও কী তাই করো? নাকি ভয় পাচ্ছো, যদি খাবারে বিষ টিষ মিশিয়ে দেই!”

সন্ধ্যা নড়েচড়ে বসে। খাবারের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলয়ের চোখে চোখ রেখে প্রতুত্তুরে বলে,
” আমার সামনে বসা অসভ্য দুর্লয় যা ইচ্ছা তা করতে পারে। হতেও পারে আমাকে সরিয়ে ফেলতে এখানে বিষ না মিশিয়ে দিয়েছেন।”

” সন্ধ্যাবতী! একটু বেশিই বলে ফেললে না! আমি আমার আপনজনদের কখনো ক্ষতি করব না। প্রমাণ চাই তাই তো! ওয়েট আমি প্রথমে তোমার খাবার টেস্ট করে দেই।”

সন্ধ্যা ভরকে যায়। নিলয় কী করতে চাইছে? সন্ধ্যার প্লেটে খাবার পরিবেশন করে নিলয় কিছু একটা ভাবে। হাত টিস্যু দিয়ে মুছে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,

” এটা ঠিক না মিস ঐরাবতী? আমি বস হয়ে আপনার খাবার টেস্ট করব আর আপনি বসে বসে দেখবেন? আপনার নজর তো খুব খারাপ!”
” মানে? তো কী করব?”
” প্লেটে হাত নিন এবং সুন্দরভাবে হাতে মাখিয়ে আমাকে খাইয়ে দিন।”

চলবে……….

সন্ধ্যা হোক বা সকাল! গল্প দিয়েছি তো!🤦‍♀️🤦‍♀️🤦‍♀️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here