সন্ধ্যালয়ের প্রণয় পর্ব -০৬+৭

#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| ষষ্ঠ পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

“ঘুমিয়ে আছো?
এত কেন নিষ্পাপ।
তাকিয়ে দেখো!
দাঁড়িয়ে আছি অপেক্ষায়।
ছুঁয়ে দেই!
চলে যাবে কী অজানায়?
হবে কী আবারো
সন্ধ্যালয়ের প্রণয়।”

সন্ধ্যাবতী ঘুমিয়ে আছে সন্ধ্যা লগ্নে। কেউ একজন ঘুমন্ত সন্ধ্যার অগোচরে এসে মুগ্ধ নয়নে হেসে তার প্রতিচ্ছবি মুঠোফোনে বন্দি করে চলে গিয়েছে তার অজান্তে। সন্ধ্যাবতী যদি জানতো তাহলে তুলকালাম বাজিয়ে ফেলতো।

সন্ধ্যা নেমেছে। সূর্যিমামা দূর আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যাবতীর শরীর পূর্বের তুলনায় ভালো। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। সরকার বাড়ির ফটকে ইতিমধ্যে দুইটা গাড়ি এসে থামে। একটি গাড়ি থেকে আরিফ সরকার নেমে আসেন। অপরটি থেকে সন্ধ্যা, সুমি এবং সুমির সাহায্যে নীরব নেমে আসে। নীরব একাই হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে সামনে আগাচ্ছে। সুমি সাহায্য করতে চাইলে বাঁধা দেয় সে। পনের বছর পর বাহিরে বের হয়ে আসে নীরব। সরকার বাড়ির বাগানের একপাশে আসে সে। ঘর থেকে এত বছর বাগানের এই দিকটা প্রতিদিন দেখতো সে। এই পাশের প্রত্যেকটা গাছ,পাতা গোনা তার। হাত দিয়ে ফুল, পাতা ছুঁয়ে দেখেছে। গতকাল রাতের বি’স্ফো’র’ণ যেই পাশটায় হয়েছিল সেখানে কিছু পুলিশ এবং বোম স্কোয়াড লোকেরা এসেছেন তদন্ত করতে। নিলয়ও সেখানে উপস্থিত হয়েছে। গতকাল রাতে এখানে কি ঘটেছিল তা একমাত্র সন্ধ্যা জানে। নিলয় পুলিশদের সাথে কথা বলে সকলের দিকে এগিয়ে আসে। নীরব মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিলয় কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল।

আরিফ সরকার গম্ভীরভাবে রাজকীয় চেয়ারে বসে রয়েছেন। এই চেয়ারটা আরিফ সরকারের দাদা মরহুম শেখ আলতাফ সরকারের। সেই কালে সত্তর গ্রাম চলতো আলতাফ সরকারের কথায়। সময়ের প্রত্যাবর্তনে গ্রাম থেকে শহরে পরিণত হয়েছে আর সরকার বাড়ির ক্ষমতাও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবে আরিফ সরকারের বাবা লতিফ সরকার ; সরকার বাড়ির নাম সকলের মুখে থেকে যাওয়ার জন্য খুব পরিশ্রম করেন। অর্থ সম্পদ সঞ্চয় করে কঠোর পরিশ্রমে নিজের চারটা কাপড়ের কারখানা তৈরি করেন। পরবর্তীতে দেশ বিদেশে আরিফ সরকারের মাধ্যমে ডাক নাম ছড়িয়ে পড়ে। আরিফ সরকার চারটা কারখানা থেকে আরো পাঁচটা কারখানা স্থাপন করেন এবং সেখানের সব হিসাব নিকাশ, ডকুমেন্ট এসব কিছু হিসেবের জন্য নিলয়ের অধীনে একটি কোম্পানিতে কর্মচারী রাখেন। নিলয় দাদার কথামত নিজের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশে এই কোম্পানি এখন শহরে টপ হয়েছে।
আরিফ সরকারের তিন ছেলে। নিলয়ের বাবা অর্নব সরকার পনের বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গত হোন। মেজো ছেলে নীরব সরকার। প্রচন্ড জেদী, একরোখা, নিজে যা বুঝে তাই করে। কারোর পরোয়ানা করে না। আরিফ সরকারের ছোট ছেলে ফারুখ সরকার। বিভিন্ন নেশা, জুয়া খেলায় মশগুল থাকেন।
আরিফ সরকার বড়ো ছেলে গত হওয়ার পর অবশ্য মেজো ছেলেকে দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোন এক অজানা কারণে মেজো ছেলে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আর ছোট ছেলের উপর ভরসা করা মানে সরকার বাড়ি ধ্বংস হওয়া সেই ভয়ে প্রাণ প্রিয় বড়ো নাতি নিলয়কে দায়িত্ব প্রদান করেন।

নীরব সুমির সাহায্যে সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠতে নিলে আরিফ সরকার হাঁক ছাড়েন,

” এতবছর নিজেকে গুটিয়ে রেখেছ কিছু বলিনি। নিজের মেয়েকে আপনজনের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছ তবুও কিছু বলিনি। এতবড়ো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার কারণ জানাওনি, তবুও কিছু বলিনি। তবে আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, শুনেছি পাগলও নিজের বুঝ বুঝে। কীভাবে পাড়লে এমন সাংঘাতিক খেলা খেলতে? নিজের মেয়েকেও ছাড় দিলে না?”

সরকার বাড়ি কেঁপে উঠেছে। বাড়ির সকল সদস্য একজোট হয়ে আছে। নীরব নিশ্চুপ। আরিফ সরকারের কাছে এসে প্রত্যুত্তরে বলেন, ” আমি আর যাই করি আপনজনের ক্ষতি করিনি। পৃথিবীতে অনেক পিতা আছেন যারা পক্ষপাতিত্ব করেন আমি উনাদের মতো নই। আমি আমার পরিজনদের ক্ষতি চাই না। আপনি খোঁজ করে দেখুন ঘরের শত্রু কোন কোণা থেকে আপনাকে টার্গেট করছে। ”

নীরব সরকার সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। সকলের দৃষ্টি সেখানেই নিবদ্ধ। আরিফ সরকারের হাঁপানি রোগ বেড়ে যায়। নিশ্বাসের গতি বেড়েছে। বড়ো বড়ো নিশ্বাস গ্রহণ করছে আবার ত্যাগ করছে। নিলয়ের মা রেহেনা দ্রুত ইনহেলার নিয়ে আসলেন।

পাঁচ মিনিট পর আরিফ সরকার ঠিক হলেন। বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন।

” বউ মা, এত বছর কি তোমারও এটাই মনে হয়েছে যে, আমি পক্ষপাতিত্ব করেছি কোন সন্তানের সাথে?”

” না আব্বা। আপনি এসব কিছুই করতে পারেন না। নীরব ছোট মানুষ আপনি ওর কথা ধরবেন না। আর এখন আমাদের সংসারে যা পরিস্থিতি আমাদের মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে।”

সন্ধ্যা দুর্বল শরীরে দূরে দাঁড়িয়ে সবকিছু অবলোকন করছে। দাদা এবং বাবার কার্যকলাপ সবকিছুই তার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। বাবা এবং ছেলের মাঝে কীসের এত শত্রুতা তা সন্ধ্যার অজানা। সে অনেকবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু উত্তর পায়নি। এক পর্যায়ে বাবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে নিজেকে বাবার মত গড়ে তুলেছে যেমনটা বাবা চাইতো।

আকস্মাত কেউ সন্ধ্যার হাত চেপে ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে। সন্ধ্যা হতভম্ব, গভীরভাবে কোন কিছু চিন্তা করায় উপলব্ধি করতে দেরি হয়ে যায় তার।
কেউ একজন তাকে সরকার বাড়ির প্রধান ফটকের আড়ালে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। সন্ধ্যাবতীর চোখ বন্ধ। সম্মুখে দাঁড়ানো মানুষটার ঘনশ্বাস সন্ধ্যাবতীর মুখশ্রীর উপর পড়ছে।

” চোখ খুলো।”

সন্ধ্যাবতী পিটপিট করে চোখ খুলে। নিলয় অপলক দৃষ্টিতে সন্ধ্যাকে দেখছে। সন্ধ্যাবতী সেই দৃষ্টির অতল গভীরে হারিয়ে যায়।

” দুর্বল লাগছে?”
” তাতে আপনার কি?”
” ভালো হবে না?”
” কখনোই না।”
” ফেঁসে যাচ্ছি।”
” জেলখানায় পুরে দেব।”
” মরে গেলে।”
“আমি সিংহাসনে বসবো।”

নিলয় হাসছে এমন তেজী মেয়েকে বাঘে আনতে নিলয়ের সর্বদা কাঠ পুড়াতে হয়। নিলয় সর্বদা এ বিষয়টা খুব উপভোগ করে। সন্ধ্যাবতীর নাক টেনে বলে,
” হাউ সুইট মিস ঐরাবতী। আপনার কথায় এত ঝাঁজ!শুনলে শরীর জ্বলে যায়।”

” শুনতে চান কেন? আপনি আমার শত্রু আজীবনের জন্য। আমরা কখনো বন্ধু হতে পারবো না। এমন কাছে আসলেও না।”
” বন্ধু হতে কতক্ষণ।”
” ক্ষণিকের জন্যও না।”

নিলয় দূরে সরে দাঁড়ায়। বি’স্ফো’র’ণে’র জায়গাটার দিকে তাকিয়ে বলে,

” গতকাল কী দেখেছিলে সেখানে?”

সন্ধ্যার মুখের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। এতক্ষণে মুখশ্রীতে লেপ্টে থাকার তেজী ভাবটা উধাও হয়ে যায় এবং সেখানে চলে আসে কিছুটা ভয় এবং সংশয়। নিলয় সবকিছু খেয়াল করে। সন্ধ্যাবতীর দিকে ফিরে বলে,

” বাঘিনীর তেজ যেন কখনো না ফুরায়। মুখে যেন আঁধার ছেয়ে না আসে। অন্তরের সংশয় না থাকে। সকলের সামনে তুমি যেমন তেজী মানবী আড়ালেও তেমনি তেজী এবং সাহসী মানবীর হয়ে থাকবে। এবার বলো।”

সন্ধ্যাবতী নিলয়কে একে একে সকল ঘটনা বলে। সব কিছু শুনে নিলয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। গম্ভীর মুখে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,

” চলো আমার সাথে।”

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সন্ধ্যাবতী বারবার নিলয়কে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, ” আমরা কোথায় যাচ্ছি?” নিলয় নিরুত্তর।
সন্ধ্যার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। এক পর্যায়ে রেগে নিলয়ের হাত খামচে ধরে এবং বলে,

” আগে আমার সাথে কথা বলুন। আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমাকে বলতে হবে নয়তো আমি এখনই গাড়ি থেকে নেমে যাব।”

নিলয় গাড়ি ব্রেক করে।
” পৃথিবীতে কাকে বেশি ভালোবাসো এবং কাকে বেশি বেশি বিশ্বাস করো?”

” অবশ্যই বাবা মাকে ভালোবাসি। নিজে ব্যতীত অন্য কারো উপর আমার বিশ্বাস নেই।”

” যদি তুমি কখনো শুনো তোমার ক্ষতি করার পিছনে তোমার একজন ঘনিষ্ঠ মানুষ দায়ী, তখন কি করবে?”
” খু’ন করে ফেলবো। এই পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার কোন প্রয়োজনই নেই।”

নীলের মুখে বাঁকা হাসি দেখা ফুটে উঠে। সন্ধ্যাবতীর কন্ঠনালী থেকে এই কথাগুলোই শুনতে চাচ্ছিলসে।

” নামো।”

পুরনো একটি গোডাউনের সামনে নিলয়দের গাড়ি থেমেছে। সন্ধ্যাবতী গাড়ি থেকে নেমে আশপাশটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ভয়ে নিজের শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। এমন একটা স্থানে নিলয় কেন তাকে নিয়ে এসেছে মনে প্রশ্ন জাগে। নিলয় কী তাকে মে’রে ফেলতে এখানে এসেছে?

নিলয়ের মুখশ্রী স্বাভাবিক। কিছুক্ষণ পূর্বের রাগটা এখন নেই। সন্ধ্যাবতী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এই ভেবে যে নিলয় সন্ধ্যাবতীর কোন ক্ষতি করবে না।

“এসো আমার সাথে।”

নিস্তব্ধ পরিবেশে গোডাউনের শ্যাটার খোলার শ শব্দে ভয়ঙ্কর আওয়াজ তৈরী হয়। সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। নিলয়ের সাথে প্রবেশ করে। জনমানবশূন্য গোডাউন দেখে সন্ধ্যাবতীর গাছ ছমছম করে। নিলয় সন্ধ্যার হত চেপে ধরে বলে,

” কেউ একজন তোমার ক্ষতি করতে চায়। তাকে এখানে আটকে রেখেছি। গতকাল রাতের সে ভয়ানক বি’স্ফো’র’ণে’র পেছনেও তার হাত রয়েছে। আমার গার্ডরা তাকে পলায়নের সময় ধরে ফেলেছিল।”

গোডাউনের ভেতরেও তিন থেকে চারটি কক্ষ রয়েছে। আসবাবপত্র চকচকে। এগুলো গোপন কক্ষ। নিলয় সর্বশেষ কক্ষটিতে সন্ধ্যাবতীকে নিয়ে যায়।

দরজা খুলতে কেউ একজন এসে নিলয়ের মাথায় আ’ঘা’ত করে বসে। সন্ধ্যা আতকে উঠে, আঘাতকারী লোকের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে।

” সাংবাদিক সাহেব? তুমি এখানে কি করছো? তোমার এই অবস্থা কেন?”

রাব্বির অবস্থা নাজেহাল। র’ক্তা’ক্ত হয়ে আছে পুরো শরীর। ঠোঁট কে’টে র’ক্ত বের হচ্ছে। কপাল থেকে র’ক্ত ঝ’র’ছে।

“আমাকে বাঁচাও উষসী? এই লোকটা আমায় মেরে ফেলবে।”

নিলয়ের হাতে লোহা। কপোল বেয়ে র’ক্ত ঝড়ছে। লোহা হাতে এগিয়ে যাচ্ছে রাব্বির দিকে। এদিকে সন্ধ্যা চিৎকার করে বলছে,
” আগাবেন না নিলয়। সে আমার ভালোবাসা। সে কখনো আমার ক্ষেতি করবে না।”

নিলয় শুনেনি। লোহা দিয়ে পর পর আ’ঘা’ত করে রাব্বির বাহুতে। একসময় রাব্বি নিজেকে বাঁচাতে পাল্টা আ’ঘা’ত করে। সন্ধ্যা দৌঁড়াচ্ছে। চিৎকার করে সাহায্য চাইছে। আকস্মাত পুরো গোডাউনে সাদা ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। নিলয় বুঝতে পারে কেউ স্মোক বোম ছড়িয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
” এই ঘর থেকে বের হও সন্ধ্যা! নিজেকে বাঁচাও। গাড়িতে গিয়ে বসো।”

সন্ধ্যা শুনেনি। আর্তনাদ করে বলছে, ” দোহায় লাগে নিলয়। আমার সুখকে ক্ষতি করবেন না। ওর কিছু হলে আমি কখনো আপনাকে ক্ষমা করব না।”

সন্ধ্যা হাঁপিয়ে গেছে। ধোঁয়ার কারণে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। শুধুমাত্র ধস্তাধস্তির আওয়াজ কানে আসছে। হঠাৎ বিকট শব্দ সন্ধ্যার কানে আসে এরপর নীরবতা। নিলয়ের কন্ঠস্বরে “শিট” শব্দটা ভেসে উঠে।

সন্ধ্যা জানে সেই আওয়াজ কীসের। দুর্বল শরীরে জমিনে বসে পড়ে। উভয় পাশে পীনপতন নীরবতা। স্মোক বোমের সময়সীমা শেষ। চারদিকে সবকিছু স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। অদূরে নিলয় বসা তার সামনে রাব্বির র’ক্তা’ক্ত দেহ। সন্ধ্যার দৃষ্টি শান্ত, দুর্বল স্বরে বলে,

” শেষ করে দিলেন?”

[বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]

চলবে…………#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| সপ্তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

নিলয়ের বাহুতে সন্ধ্যাবতীর ছোট্ট দেহখানা আবদ্ধ। সন্ধ্যাবতীর দৃষ্টি স্থির। বারবার রাব্বির র’ক্তা’ক্ত মুখশ্রী সন্ধ্যার দৃষ্টিতে ভেসে উঠছে। পুলিশ এসেছিল, রাব্বির লা’শ এবং অ’স্ত্র নিয়ে গেছে ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করার জন্য। পুলিশের সামনে নিলয় পুরো ঘটনাটা এক্সিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরেছে। সন্ধ্যা পুলিশকে রাব্বিকে খু’ন করা হয়েছে বলে দাবী করেছিল কিন্তু আফসোস পুলিশকে নিলয় মিথ্যা বলে পুরো ঘটনাকে এক্সিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরেছে।

সন্ধ্যার নীরবতা নিলয়ের সহ্য হচ্ছে না। গোডাউনের অভ্যন্তের স্থান সুবিধাজনক লাগছে না। বাহিরের কেউ এখানে উপস্থিত আছে ধারণা করছে সে। সন্ধ্যাকে কোলে তুলে নিলয় বের হয়ে আসে।

এই প্রথম নিলয় সন্ধ্যাকে ভয় পাচ্ছে। সন্ধ্যা চুপ করে থাকার মেয়ে না। নিলয় সন্ধ্যার রাগ দেখেছে, ভয় দেখেছে, কিছুক্ষণ আগে কান্নাও দেখলো আর বর্তমানে নিশ্চুপতা। নিলয় আফসোস করছে, আজকের দিনটা তাদের জীবনে যদি না আসতো! তাহলে আগাম ভয় মনে ভর করতো না। জোরে গাড়ির ব্রেক করাতে সন্ধ্যা কিছুটা সামনে ঝুঁকে পড়ে। নিলয় বাম হাতে সন্ধ্যাকে আগলে নেয়। সন্ধ্যা একবার নিলয়ের দিকে তাকায় পরমুহূর্তে সম্মুখে দৃষ্টিপাত করে বলে,

” আপনি কী কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন?”

সন্ধ্যার আকস্মাত প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
নিলয়ের ত্রিশ বছর বয়সের জীবনে প্রেম একবার এসেছিল। কিছু সময় থেকেও ছিল কিন্তু একদিন সব শেষ করে চলে গেলো। এই কথা সন্ধ্যাবতীকে কীভাবে বলবে সে?

” হঠাৎ এই প্রশ্ন? প্রতিশোধ নিবে নাকি?”

” প্রতিশোধ নেওয়ার আমি কে? তবে যার যার কর্মের ফল সে একদিন পাবে।”

উভয়ের মধ্যে নিশ্চুপতা। সন্ধ্যা জানালার বাহিরে সূর্যোদয় দেখছে। জীবনের এই মুহূর্তটা বড্ড পুড়াচ্ছে তাকে। রাব্বির সাথে কিছু দুষ্টু মিষ্টি মুহূর্তের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় সে। সরকার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এসে নিলয় গাড়ি থামায়। ঘুমন্ত সন্ধ্যাবতীকে মন ভরে দেখে নেয় সে।

” তোমার দুঃখ সব আমার হোক, তোমার দুয়ারে যেন আঁধার না নামুক। তুমি হাসলে মুক্ত ঝড়ুক, তোমার হাসিতে আমার অন্তর সিক্ত হোক।”
—————–

ধরণীতে নতুন দিনের আগমন ঘটেছে। যেখানে পুরো পৃথিবীর মানুষ কর্মস্থলে যাওয়ার তাগাদায় মগ্ন সেখানে নিলয় বাগানে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যাবতীর জানালায় আড়চোখে তাকাতে ব্যস্ত। নিলয় সন্ধ্যার জানালার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

” আমি কেন তোমার কথা ভাবছি! তোমাকে দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি। তুমি তো আমার নও, নও বন্ধু। তবুও তোমার তেজে পুড়েছি, ছাই হয়ে যাচ্ছি। বাতাসে মিশে এসে দেখো, উড়ে যাবো।”

নীলিমার ঘুম আজ দেরীতে ভেঙেছে। স্কুল ড্রেস পরিধান করে মুখে পরোটা গুঁজে তাড়াহুড়োয় বের হয় সে। বড়ো ভাইয়াকে দণ্ডায়মান অবস্থায় দেখে অবাক হয়। নিলয় বাড়ি থেকে আরো বিশ মিনিট পূর্বে বের হয়েছে। মুখের খাবার চিবোতে চিবোতে এগিয়ে আসে ভাইয়ের দিকে।
” কী ব্যাপার? আমার ভাই তো কখনো কাম চোর ছিল না? আজ বিশ মিনিট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভাইয়ের অফিসে যাওয়ার কোন খোঁজ খবর নেই যে?”

” কাম চোর কে? একদম ঠাটিয়ে দেব চড়। আমি তো ব্যায়াম করছিলাম।”

” হ্যাঁ খুব করে দেখতে পাচ্ছি। পর-নারীর জানালায় তাকিয়ে কেমন ব্যায়াম করা হচ্ছে। তোমাকে বলে রাখি! আজ আপু অফিসে যাবে না।”

” তুই কিভাবে জানলি যে সন্ধ্যা আজ অফিসে যাবে না?”

” বলবো না। আগে আমার পকেট গরম করো তাহলে খবর পাবা।”

নীলিমা কোথায় নিলয় ভ্রু কুঁচকে ফেলে। আড় চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে মানিব্যাগ থেকে একশত টাকার একটা নোট দিয়ে বলে, “এবার বল।”

” আজকাল কাউকে দেখেছো? ছোট বোনকে একশত টাকা দেয়?”
” আমি কীভাবে দেখবো।”
” এত কথা জানি না। জলদি জলদি পাঁচশত টাকার নোট বের করো। নয়তো খবর এই নীলিমার মুখ থেকে বের হবে না।”

নিলয় দাঁতের দাঁত চেপে পাঁচশত টাকার একটা নোট বের করে নীলিমার দিকে এগিয়ে দেয়। নীলিমা একশত টাকা সহ পাঁচশত টাকা একসাথে হাতে নিয়ে দেয় ভৌ দৌড়। নিলয়ের কাছ থেকে দূরে গিয়ে চিৎকার বলে,

” উল্লু বানায়া বারা মাজা আয়া।”

নিলয় তাজ্জব বনে গেল। নিজের থেকে পনের বছর বয়সের ছোট বোন তাকে বোকা বানিয়ে চলে গেলে আর সে কিছুই করতে পারলো না বলে আফসোস করতে লাগলো।

নিলীমার দুষ্টুমিতে নিলয় সন্ধ্যার কথা ভুলে যায়। সন্ধ্যার জানালার দিকে আনমনে দৃষ্টিপাত করে দৃষ্টি সরাতে দেখতে পায়, কেউ একজন পর্দা একটু ফাঁকা করে তার পানে তাকিয়ে আছে। নিলয় জানে মানুষটা কে? চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলে,

” অফিসে দেরি করে আসলে কিন্তু রিজাইন লেটার লিখতে হবে বলে দিলাম, মিস ঐরাবতী।”
————-

অফিসের সকলে খুবই চিন্তিত। বিশেষ করে, অফিসের পুরাতন কর্মীরা কিছু আশঙ্কায় আছে। নিলয় অফিসে প্রবেশ করে সকলের দিকে একবার তাকায়। পুরাতন কর্মকর্তাদের বিষন্ন মুখ তার চোখে এড়ায় না। কাউকে কিছু না বলে নিলয় কেবিনে প্রবেশ করে।
নিলয়কে একটা বিষয় খুব ভাবাচ্ছে। সন্ধ্যা যে লা’শের কথা বলছে সে লা’শ মূলত কার? নিলয় টেলিফোনে আকাশকে কেবিনে আসার জন্য খবর পাঠায়।
আকাশ মাত্র নিজের কাজে হাত দিচ্ছিল। নিলয়ের ফোন পেয়ে কেবিনে প্রবেশ করে।

” অফিসের সকল কর্মচারীদের লিস্ট চাই। তোমার কাছে আধা ঘণ্টা সময় আছে। উপস্থিত অনুপস্থিত সকলের খোঁজ খবর নিবে তুমি নিজে। দ্রুত।”

আকাশ সম্মতি জানিয়ে চলে যায়। সকলের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে শুকনো ঢোক গিলে বলে,

” বস আর কাউকে পেল না দায়িত্ব দেওয়ার জন্য। এই সন্ধ্যা আজকে আসছে না কেন? কই ম’রে আছে কে জানে।”

সমর পার হয়েছে কিন্তু সন্ধ্যা অফিসে আসেনি। নিলয় আপাতত সন্ধ্যাবতীর ব্যাপারটা ভাবছে না। ভাবছে সরকার বাড়ির বি’স্ফো’র’ণে’র কথা।

দরজায় কড়াঘাতের আওয়াজে নিলয়ের ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটে। আকাশ এসেছে হাতে একটা ফাইল নিয়ে।

” স্যার সন্ধ্যা এবং সাত্তার আঙ্কেল ব্যতীত এখানে সবাই উপস্থিত আছেন। সাত্তার আঙ্কেলের বাসায় খোঁজ নিয়েছিলাম উনি বাসায় নেই। এমনকি গতকাল রাত থেকে উনি বাসায় ফিরেনি। মানে আপনাদের বাড়ির অনুষ্ঠানের পর থেকে উনি বাসায় ফিরেনি।”

নিলয় মনোযোগ সহকারে লিস্ট গুলো দেখছে। সাত্তার সাহেব অনুপস্থিত। চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করছে সাত্তার সাহেবের চেহারা এবং সন্ধ্যার বলা সেই লাশের বর্ণনা। নিলয় চেয়ারে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়,
” আকাশ, সাত্তার সাহেব কিন্তু আমাদের অনেক পুরনো কর্মচারী। তোমার কি মনে হয় সাত্তার সাহেব নিজ ইচ্ছায় গা ঢাকা দিয়েছেন?”

” কখনোই না স্যার। উনি খুব ভালো মানুষ। পরিবারকে ভালোবাসেন। পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া একজন মেয়েও আছে।”
নিলয় কিছুক্ষণ ভেবে আকাশের উদ্দেশ্যে বলে,

” তোমাকে কিছু কাজ দিব। আশা করি নিষ্ঠার সাথে পালন করবে এবং এই কথা যেন বাহিরে কেউ জানতে না পারে।”
আকাশ এবং নিলয়ের কথার মাঝে নিলয়ের ফোনে একটি ইমেল এর প্রজ্ঞাপন আসে। নিলয়ের চোখ বড় হয়ে আসে। তরতর করে ঘামতে থাকে সে। আকাশের উদ্দেশ্যে বলে,” তুমি যাও এখান থেকে।”

আকাশ চলে যায়। নিলয় ভাবতে থাকে, তার দ্বারা এমন কাজ কীভাবে হতে পারে?
————

সে ঘটনা আর দুই মাস পার হয়ে গিয়েছে। নীরব সরকারের বাড়ি পুরোই নিস্তব্ধ। ভেতরে কোন পাখ পক্ষী আছে কিনা সন্দেহ। এদিকে আরিফ সরকারের বাড়ি একদম জীবন্ত। মানুষজনের হৈচৈ চলছে, আনন্দ ফুর্তি চলছে, বিনোদন চলছে।
আজ দুই মাস পর সন্ধ্যা ঘর থেকে বের হবে। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় এতদিন নিজেকে শক্ত করে তুলতে চেয়েছে এবং পেরেছও। অনেক হিসাব-নিকাশ বাকি আছে সেগুলো আদায় করতে হবে তার। লাল টকটকে রংয়ের একসেট থ্রি পিস পরিধান করে সন্ধ্যা, চুলগুলো মাঝখানে সিঁথি করে ছেড়ে দেয়, কপালে ছোট কালো টিপ, চোখে গাঢ় কাজল, আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। মেয়েকে তৈরি হতে দেখে সুমি এগিয়ে আসে। টেবিলের উপর থেকে কাজল নিয়ে কিছুটা কাজল সন্ধ্যার কানের লতিতে একে দিয়ে বলে,

” আমার মেয়েটার উপর কারো নজর না লাগুক। এত সাজগোজ করে কোথায় যাচ্ছো?”

” অফিসে যাচ্ছি মা। বাবা কোথায়?”

” নিজের ঘরে বিষন্ন মনে বসে আছে। আমি বুঝিনা তোদের বাবা-মেয়ের মতিগতি। দুজনই একই ধরনের। মেয়ে মানুষ থাকবে দুষ্টু মিষ্টি হাসি খুশি। কিন্তু তা না হয়ে গম্ভীরভাবে থাকিস বাবার মত। এখন তো আমার তোদের সাথে কথা বলতে ভয় করে। কখন না যেন আমাকে আঘাত করে বসিস তোরা।”

মায়ের দুঃখ ভারাক্রান্ত কথায় সন্ধ্যা মাকে জড়িয়ে ধরে প্রতুত্তুরে বলে,

” পৃথিবীর সবাই একদিকে আর তুমি বাবা একদিকে। তোমাদের জন্য আমি সব করতে পারি। কারো শত্রু হয়েও সারা জীবন বেঁচে থাকতে পারি, কারো ঘৃণার পাত্রী হয়েও সারা জীবন চলাফেরা করতে পারি। কিন্তু তোমাদের অন্তরে কখনো কষ্ট দিতে পারি না। আমি তোমাকে এবং বাবাকে খুবই ভালোবাসি তোমাকে আঘাত করার আগে যেন আমার মরণ হয়।”

” একটা দিব চড়। মরণের কথা বলে না মা!”

সন্ধ্যা মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকে। আজ অনেকদিন পর পুরো পরিবার একসাথে সকালের নাশতা করেছে। আর তার সবকিছু কৃতিত্ব সন্ধ্যার। সন্ধ্যা যেমন নীরব সরকারের কথা মানে, ঠিক তেমন নীরব সরকার মেয়ের কথা শুনে। সন্ধ্যা নিজে বাবাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে খাবার টেবিলের পর্যন্ত নিয়ে আসে। অনেক বছর পর হাসিখুশি হৈ-হুল্লোড়ে সকালের নাশতা গ্রহণ করে সবাই।

নিলয় ফোনে কথা বলছিল একজন ডিলারের সাথে। আনমনে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই নিলয়ের চোখ আটকে যায়। ব্যস্ত পায়ে একজন লাল পরী কানে দুল পরতে পরতে নিচে নামছে। নিলয় হাঁ করে তাকিয়ে থাকে সে পরীর দিকে। নিলয়ের মা আসছিলেন ছেলের সাথে দুইটা কথা বলতে। ছেলেকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে। ছেলের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়।

ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নিচে নেমে আসে। চলাচলের দিকে অমনোযোগী থাকায় ধাক্কা খায় নিলয়ের মায়ের সাথে। চঞ্চল সন্ধ্যাবতীর ছোটবেলার চঞ্চলতা চলে আসে মুহূর্তে।

” মাফ করে দাও বড়ো মা! এত সুন্দর করে সাজগোজ করেছি কানের দুল না পরলে হয় নাকি? তুমিই তো আমাকে সবসময় বলতে, কানের দুল ছাড়া আমাকে বিধবা বিধবা লাগে। এই যে দেখো, আজ কানের দুল পরতে গিয়ে কি করে ফেললাম!”

সন্ধ্যার চঞ্চলতা দেখে নিলয়ের হাত থেকে ফোন প্রায় পড়েই গিয়েছিল। এদিকে নিলয়ের মায়ের চোখে জল চলে আসে। আজ এত বছর পর সন্ধ্যার বড়ো মা ডাক শুনে। তিনি নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না জাপটে ধরলেন সন্ধ্যাকে।

” আমার মেয়েটা সেই আগের মতই রয়ে গেছে। কেন এত দূরত্ব রাখছিস বলতো? আমার সাথে কথা বল! আমি তো তোর বড়ো মা। আমাকে না মা বলে ডাকিস? মায়ের সাথে কি কেউ রাগ করে থাকে?”

সন্ধ্যা নিজের কৃত্রিম সত্তাকে কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিল। বড়ো মায়ের সামনে সেই ছোট্ট বাচ্চা হয়ে গিয়েছিল। নিলয়ের মায়ের জড়িয়ে ধরার পর সন্ধ্যার চিন্তন ফিরে আসে। কপালে কারো অধরের স্পর্শ পেয়ে সন্ধ্যা সেদিকে চিন্তন করে। নিলয়ের মা তাকিয়ে আছে হাস্যজ্জল মুখে, চোখের জল চিক করছে।

” আর রাগ করে থাকিস না মা! অন্ততপক্ষে আমার সাথে কথা বল? আমি আমার সেই দুষ্টু মিষ্টি সন্ধ্যাবতীকে দেখতে চাই। এমন গম্ভীর্য তোকে একটুও মানায় না।”

সন্ধ্যাবতী কিছু বলছে না। আড়চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বড়মার উদ্দেশ্যে বলে,

” আমি যার তার সামনে কথা বলি না। তোমার ছেলেকে আগে বাহিরে পাঠাও। তারপর তোমার সাথে কথা বলব।”

নিলয়ের ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে ফোনে কল আসার বাহানায় কানে ফোন নিয়ে হ্যালো হ্যালো করতে করতে বাহিরে চলে যায় সে।
নিলের মা এবং সন্ধ্যা হাসছে নিলয়কে নিয়ে।
সন্ধ্যা এবার বড়ো মার উদ্দেশ্যে বলে,

” দুপুরে এসে তোমার হাতের গরুর কালা ভুনা খাব। এখন অফিসে যাচ্ছি। তোমার হিটলার ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে।”

” আচ্ছা যা। নিলয়ের সাথে যাস।”

নিলয় মায়ের কথা শুনে সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে যায়। সদর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

” তোমার ওই ছেলের সাথে যেতে আমার বয়েই গেছে। নিজে যেমন আমাকেও তেমন বানাতে চায়।”

” আমার ছেলে কিন্তু খুব ভাল। তোর ক্ষতি করতে চাইবে না।”
—————

গাড়িতে বসে আছে দুইজন। উভয়েই নিশ্চুপ, সন্ধ্যা চেয়েছিল দৈনন্দিন এর মত অফিসে যেতে কিন্তু নিলয় তা হতে দিল না। সন্ধাকে টেনে গাড়ির ভেতর নিয়ে আসে। সন্ধ্যা নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে না। কঠোর দৃষ্টিতে সম্মুখে তাকিয়ে আছে। নিলয় আজ গাড়ি চালাচ্ছে না। সে সন্ধ্যার ধৈর্য পরীক্ষা করবে। কতটুকু সময় সন্ধ্যা নিলয়কে সহ্য করতে পারে তা দেখে ছাড়বে।

সন্ধ্যার নিলয়ের সঙ্গ ভালো লাগছে না তাই সে বিরক্ত হয়ে নিলয়ের উদ্দেশ্যে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

” এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? আমি মানুষ, খাবারের বস্তু নই যে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন। গাড়ি চালান। অফিসের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

সন্ধ্যার ঝাঁঝালো কথা শুনে নিলয়ের ঠোঁটে হাসি ফোটে উঠে। গাড়ি স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে প্রত্যুত্তরে বলে,

” অফিসের বস তুমি না আমি? নিলয় নীলাভ সময়ের ব্যবহার করতে জানে।”

” আর সন্ধ্যাবতী সেই সময়ের সদ্ব্যবহার করতে জানে।”

” অবশেষে তুমি ফিরে এলে মিস ঐরাবতী! এখন কি করবে? রিজাইন লেটার লিখবে নাকি অফিসে কাজ করবে।”

” অন্যান্য কর্মচারীরা যেমন ভাবে চলাফেরা করে আমি ঠিক সেভাবে চলব। অন্যান্য কর্মচারীদের সাথে দুই মাস পর যে ব্যবহার করবেন আমার সাথেও তাই করবেন।”

নিলয় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সন্ধ্যার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলে, ” তোমার চোখ আজকে অন্য কথা বলছে, মিস ঐরাবতী।”

সন্ধ্যা প্রস্তুত ছিল না নিলয়ের এহেন কাণ্ডে। নিলয় কাছে আসায় সন্ধ্যার অন্তর কেঁপে ওঠে, অস্বস্তি হতে থাকে। ইতস্তুত বোধ করে সে বলে,

” কি বলছে?”

” আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো না তো ঐরাবতী?
জানো তো মিস ঐরাবতী! তোমার দুই চোখে নিজের ধ্বংস দেখতে বেশ লাগে। কি আছে তোমার ওই দুই চোখে? বাঘিনীর চোখ হয়তো হার মানবে। তোমার ওই চোখের জালে ভেসে যাবে পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিক পুরুষ। তবে আমি তাকাবো না তোমার ওই চোখে, কেননা আমি চাইনা খুন হতে।”

সন্ধ্যা হাসে। নিলয়ের থেকে কাছে গিয়ে বলে,
” আগুন নিয়ে খেলা আপনি শুরু করেছেন সমাপ্ত করব আমি। আগুনে পুরে ভষ্ম হবেন কিন্তু উড়ে যাবেন না।”

চলবে……..

[অনেকদিন পর গল্প দিলাম। ব’কা দিতে চাইলে দিতে পারেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here