সবটাই_তুমিময় পর্ব ৩২+৩৩

#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩২

অঙ্কুরের গাড়ির ব্যাকসিটে লাল বেনারসি,ভারি গয়না পরে,একদম বিয়ের কনে সাজে তানহা অজ্ঞান হয়ে আছে।তিহান কিছুটা ইতস্তত করে ওকে জরিয়ে ধরে রেখেছে।বড়বড় চোখে তানহা তিহানকে দেখে চলেছি আমি।প্রশ্নের পাহাড় মস্তিষ্কের নিউরনগুলোতে জট পাকাতে লাগলো নিজেদের মতো করে।আর আমি শুধু তব্দা মেরে দাড়িয়ে রইলাম।

সেদিন ভার্সিটি থেকে বেরোনোর পর তানহার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।মাঝখানে আরো দুদিন কেটে গেছে।তানহা না ফোন রিসিভ করেছে,না ভার্সিটি এসেছে।আস্থাকে বলেছি পরদিন ওর বাসায় যাবো।দাদু দাদীমার‌ সাথে ডিনার সেরে সবে রুমে ঢুকেছি,তৎক্ষনাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো।অঙ্কুরের নাম্বার!কান্না পাচ্ছিল্য।অশ্রু সামলে নিলেও নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছিলো।চারবার রিং হয়ে কেটে গেলো কলটা।নিরবে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে ছিলাম ফোনের দিকে।পঞ্চমবারের ফোন বাজতেই চিন্তা হতে লাগলো মনিমার।চোখ মুছে শক্ত হয়ে রিসিভ করলাম কলটা।অঙ্কুর বলে উঠলেন,

-বাসা থেকে বেরোও!রাইট নাও!

কিছু বলার আগেই উনি ব্যস্ততা নিয়ে বললেন,

-আসলে মা….

কল কেটে গেছে।তার এই অর্ধেক কথা!মনিমার কথা শুনে একমুহুর্ত দেরি করিনি আর।তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম বাসা থেকে।কিন্তু এসে গাড়িতে তানহা তিহানকে ওভাবে দেখে মাথা ফাকা হয়ে গেলো আমার।তানহার বিয়ের সাজ কেনো?ও অজ্ঞান কেনো?তিহান কোথথেকে আসলো?তানহাকে জরিয়ে রেখেছে ও?অঙ্কুর কোথায় পেলেন দুটোকে?কোথায়ই বা নিয়ে যাচ্ছেন?অঙ্কুর গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বললেন,

-আসলে মা তোমাকে খুব মিস করে।

তার অপুর্ন কথা এটা ছিলো।কিছু হয়নি মনিমার।কিন্তু তানহা তিহান?বিস্ময়েই তাকিয়ে রইলাম।উনি তাড়া দেখিয়ে বললেন,

-পর্বতের মতো দাড়িয়ে না থেকে জলদি গাড়িতে ওঠো পর্বতশৃঙ্গ!

ওভাবেই দাড়িয়ে রইলাম।প্রশ্ন করাও ভুলে গেছি যেনো।অঙ্কুর হাত টেনে ভেতরে তুলে নিলেন আমাকে।গাড়ির দরজা লাগিয়ে একদম ঝুকে সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলেন আমার।গাড়ি স্টার্ট দিতেই হুশে ফিরলাম আমি।চেচিয়ে বললাম,

-তানহার এই অবস্থা কেনো?কি হয়েছে ওর সাথে?

অঙ্কুর ভ্রুকুচকে তাকালেন।কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আবারো ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলেন উনি।আমি সিটবেল্ট খুলতে যাচ্ছিলাম,অঙ্কুর একহাতে আমার ওড়না টেনে পেচিয়ে নিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলেন।আবারো চেচিয়ে বললাম,

-হোয়াট দ্যা….বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু আপনি!

উনি চুপ।পিছন ফিরে তিহানকে‌ বললাম,

-কি হচ্ছে টা কি তিহান?কিছু বলছিস না কেনো?তান্নু?ওঠ!ও সেন্সলেস কেনো তিহান?কথা বলছিস না কেনো?

তিহান চুপ।অঙ্কুর বললেন,

-তানহার আজ বিয়ে ছিলো!

পুরোই জমে গেলাম আমি।মাথায় ঢুকছে না কিছুই।অঙ্কুর বলতে লাগলেন,

-এতো তান্নু তান্নু করো,এ দুদিনে খোজ নিয়েছো ওর?দুদিন আগে ওর আংটিবদল হয়েছে,এটা জানো?আজ ওর বিয়ে ছিলো,এটাও জানো না তুমি অদ্রি!

বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম তারদিকে।উনি সামনে তাকিয়েই বললেন,

-ওর বাবা আমার পরিচিত।কার্ড পাঠিয়েছিলো বিয়ের।প্রথমে তানহার বিয়ে শুনে খুশি হলেও বরের নাম দেখে খুশি থাকতে পারিনি।ছেলেটা দীপক তালুকদারের ছোটভাইয়ের ছেলে,নিহাল তালুকদার।আমি যতোদুর জানি,চাচার মতো ওর বাবারও কুকীর্তির অভাব নেই।এই ছেলে নিজেও ড্রাগ এডিক্টেড।বেআইনি গান রাখায় ও পুলিশ হেফাজতেও ছিলো কিছুদিন।এভাবে তানহার লাইফ বরবাদ হওয়া আমি অন্তত দেখতে পারবো না।তানহার বাবাকে বলেছিলাম,উনি কানে তোলেননি।বলে বড় ঘরের ছেলেরা শখ করে ওভাবেই চলাফেরা করে।ওটা নাকি ওদের স্ট্যাটাস!তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা এভাবে ভাঙতে হলো।তুলে আনলাম তানহাকে।

টপটপ করে পানি পরতে লাগলো আমার চোখ দিয়ে।কাদতে লাগলাম নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃনায়।আমার সব সিচুয়েশনে,তানহা সবসময় আমার পাশে ছিলো,আছে।আর আমি?ওর ভেতরে কি চলছিলো কিছুই আন্দাজ করতে পারলাম না?অঙ্কুর বললেন,

-নিজেকে দোষ দিও না অদ্রি।ওর বাবা চায়নি এসব নিয়ে তো‌মরা কেউ কিছু জানো।তাই ও কিছু জানায় নি।তোমাকে বা আস্থাকে।

-আপনারা এ্ এসব কিভাবে….

-তিহান এক সপ্তাহ হলো কুমিল্লা ছিলো।অফিসিয়াল কাজের নামে তানহার বাবাই পাঠিয়েছিলো ওকে।হয়তো ভেবেছিলো,তিহান এখানে থাকলে তানহার বিয়ে নির্বিঘ্নে হবে না।তাই এই সুযোগে তানহার বিয়েটা সেরে ফেলতে চাইছিলেন উনি।আজ সকালেই তিহানকে সবটা জানাই।ও ইনস্ট্যান্টলি বেরিয়ে আসে ওখান থেকে।তারপর পৌছাই বিয়েবাড়ি।এএসএ কে দেখে কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পরেছিলো সবাই।ইনফ্যাক্ট তানহার বাবাও।সে ভাবেনি বরের বিরুদ্ধে বলে সেই বিয়েতেই এএসএ চলে যাবে।বেশ আপ্যায়ন করছিলেন আমার।সে সুযোগে তানহার রুমে যায় তিহান।ওকে বলেছিলাম,যদি ওর কথাতেই তানহা বেরিয়ে আসে,তো ভালো!নইলে সেন্সলেস করে ব্যালকনি দিয়ে নিয়ে আসতে।তানহা প্রথমটা করেনি।তাই বাধ্য হয়ে….

মাথার চুল উল্টে ধরে চুপ করে রইলাম।অনেকটা সময় পর অঙ্কুর ব্রেক কষলেন গাড়িতে।ওড়না ছেড়ে দিলেন আমার।ফাকা এক ব্রিজে থামিয়েছেন উনি গাড়িটা।সামনে রাখা‌ বোতল নিয়ে নেমে ব্যাকসিটে আসলাম।তানহার মাথা তিহানের বুকে ঠেকানো।চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে কয়েকবার ডাকতেই পিটপিটিয়ে চোখ মেললো তানহা।আমাকে দেখে এলোমেলো কন্ঠে বললো,

-আ্ আন্নু?তুই?

বলতে বলতেই গাড়ির ভেতরটায় চোখ বুলালো।তিহানের বুকে নিজের মাথা ঠেকানো দেখে তৎক্ষনাৎ উঠে বসলো তানহা।চারপাশ দেখে চোয়াল শক্ত করে বললো,

-গাড়ি থেকে নাম আন্নু!

আমি নেমে গেলাম।শাড়ি আগলে তানহাও নামলো।ফাকা রাস্তার এদিকওদিক তাকিয়ে সোজা হাটা লাগালো ও।ততক্ষনে অঙ্কুর,তিহান দুজনেই নেমেছে গাড়ি থেকে।তানহার হাত চেপে ধরলাম আমি।বললাম,

-কোথায় যাচ্ছিস তুই?

-আজ আমার বিয়ে আন্নু।সবটা বলার সময় নেই।বাসায় পৌছাতে হবে আমাকে।

-এএসএ লাইফে প্রথমবার কোনো বিয়ের কনেকে নিয়ে পালালো,তার কোনো দাম নেই তানহা?

কোটটা টেনে তানহার সামনে দাড়ালেন অঙ্কুর।এতো ইনোসেন্ট হাসিমুখে কথাটা বললেন উনি,যেনো খুব মহৎ কোনো কাজ করেছেন।তানহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-দেখুন ভাইয়া,কাজটা যে ঠিক‌‌ করেননি তা আপনিও জানেন।আমাকে যেতে দিন।

-এএসএ ভুল করে না তানহা।তাছাড়া কোথায়‌ যাবে তুমি?তোমার বিয়ে তো‌ ভেঙে গেছে!বরকে স্বয়ং আমি বলেছি কনে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়েছে!এতোক্ষনে তোমার ওই হতে যাওয়া বর বাসরঘরে মাতাল হয়ে ঘুমিয়েও পরেছে হয়তো!

হাত মুঠো করে রইলো তানহা।পরপরই কেদে দিলো ও।কাদতে কাদতে বললো,

-কেনো এমন করলেন ভাইয়া?কেনো করলেন এমন?জীবনে প্রথমবার পাপা আমার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।সেটাও রাখতে পারলাম না।আপনি রাখতে দিলেন না আমাকে।কেনো করলেন এমন?

-তোমার পাপা কি তোমার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো‌ তানহা?সে তো তার বিজনেসের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।জানো তো তুমি সব!জানিনা তোমার পাপা কি করে তাদের একমাত্র মেয়েকে এমন কারো সাথে বিয়ে দিতে যাচ্ছিলো।শুধু নিহালের বাবার বিজনেস দেখে?তোমার পুরো লাইফ বরবাদ হয়ে যেতো তানহা।

তানহা কিছুক্ষন চুপ করে রইলো।আমি ওর কাধে হাত রাখলাম।ও জলভরা চোখে তাকিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে শান্তভাবে বললো,

-লাইফে প্রথমবার পাপা আমার জন্য কোনো ডিসিশন নিলো আন্নু!সেটাও এমন!আমার কি দোষ বলতে পারিস?কি দোষ আমার?

আমি জরিয়ে ধরলাম ওকে।ও বললো,

-ভার্সিটিতে পাপা ওইদিন ফোন করে বলেছিলো,নিহালের সাথে সেদিনই আমার এনগেইজমেন্ট ঠিক করেছে সে।আমি রাজি না হলে তিহানের জবটা নাকি নিয়ে নেবে।তিহানের চাকরিটা অনেক বড় ফ্যাক্ট ছিলো।কিন্তু বিশ্বাস কর আন্নু,আমি রাজি হয়েছিলাম এই খুশিতে,প্রথমবার পাপা আমাকে নিয়ে ভেবেছে।সেটা আমার মত হোক বা অমতে।আমি হাসিমুখে বিয়েটাতে রাজি ছিলাম।কিন্তু এই বিয়েটাও পাপার বিজনেস ডিলের মতো ছিলো রে।আমার ভালো থাকা না ভেবে,যার সাথে বিয়েটা হবে সে ভালো ছেলে কি না,না ভেবে তার বিজনেস পার্টনারের সাথে সম্পর্কটা ভালো করার জন্য এসব করেছে পাপা আন্নু!সবটা তার বিজনেসের জন্য!আমার জন্য না আন্নু!আমার জন্য না!

এবার চিৎকার করে কাদতে লাগলো।ফাকা ব্রিজটায় ওর কান্না মিশে যেতে লাগলো কুকাতে থাকা ডাহুকের ডাকের মতো।চোখ দিয়ে পানি পরছে আমারো।অনেকটা সময় কাদার পর ও ছেড়ে দিলো আমাকে।নাক টেনে চোখ মুছে বললো,

-যা হওয়ার হয়ে গেছে।তোরা..তোরা বাসায় চলে যা এবার।

-মানেহ্?

-মানে আমার সাথে থাকলে তোদের সমস্যা হবে।পাপা হয়তো এতোক্ষনে পুলিশ কমপ্লেইনও করে ফেলেছে।

-যা করে করুক!তুই আমার সাথে যাচ্ছিস,ব্যস!

-না ইয়ার!প্লিজ!ঝামেলা বাড়াস না!তুই চলে যা ওনাদের সাথে নিয়ে!

-আর তুই?পাগল হয়ে গেছিস?তোকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না আমি!আমার সাথে চল তুই!

-আন্নু!জেদ করিস না!তোর সাথে যাবো না আমি।আমি চাইনা আমার জন্য তোরা কোনো‌ ঝামেলায় জরিয়ে পর।

-তানহা!

-ঠিকই বলছি।

-তুই যাবি আমার সাথে!

-বোকার মতো কথা বলো না অদ্রি।তানহা ঠিকই বলেছে।সন্দেহের তালিকায় তুমি,তিহান,আস্থা।পুলিশ সোজা তোমাদেরই তাক করবে।আর তোমার রায়বাহাদুর দাদু বাসায় পুলিশ দেখলে লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে দেবে একদম।ইউ নো দ্যাট!তানহা বুদ্ধিমতি মেয়ে।ঠিকই বুঝেছে ব্যাপারটা।তা কোথায় যাবে কিছু ভাবলে তানহা?

অঙ্কুরের কথায় প্রচন্ড রাগ হলো আমার।কিছু বলার আগেই তানহা বলে উঠলো,

-দেশের বাইরে যাবো ভাইয়া!

-তান্নু?

-আমাকে আটকাস না প্লিজ।এবার এসব থেকে মুক্তি চাই আমি।নিজের মতো করে বাচতে চাই।আমি নিজের জীবনের উপর তিক্ত আন্নু।এখানে থাকলে,হয়তো সবটা ভেবে ভেবে দম আটকে মারা পরবো।এ নিয়ে কথা বাড়াস না!

একবার তানহার দিকে তাকিয়ে তিহানের দিকে তাকালাম আমি।এতোক্ষন মাথা নিচু করে বেশ অনেকটা দুরে দাড়িয়ে ছিলো ও।এবার চোখ তুলে তাকিয়েছে।তানহার দিকে।কাছেই থাকা ল্যাম্পপোস্টের উজ্জল আলোতে স্পষ্ট দেখলাম ছলছল করছে ওর চোখ।অঙ্কুর ঠোট টিপে হেসে থুতনিতে হাত রেখে সিরিয়াসনেস দেখিয়ে বললেন,

-ও রিয়েলি?কিভাবে?আইমিন,পাসপোর্ট?টাকা?

-গায়ের গয়নাগুলো এনাফ!

অকপটে জবাব দিলো তানহা।অঙ্কুর শব্দ করে হেসে দিলেন এবার।এই মুহুর্তে ওনার হাসি দেখে পায়ের নিচের মাটিটাও গরম হয়ে গেলো আমার।চেচিয়ে বললাম,

-হাসা বন্ধ করুন!

অঙ্কুর থেমে ঠোটে আঙুল দিয়ে থেমে গেলেন।আমি তানহার হাত ধরে হাটা লাগিয়ে বললাম,

-আগে এখান থেকে চল।তারপর বাকিটা দেখা যাবে।

অঙ্কুর দুহাত ছড়িয়ে পথ আগলে দাড়ালেন আমাদের।বললেন,

-ওয়েট!তানহার সাথে কথা আছে আমার অদ্রি!নাইস প্লান তানহা।সবকিছু থেকে দুর!ফ্যামিলি,বন্ধুবান্ধবী,ভালোবাসার মানুষ!

-এসবের কোনোটাই আমার কপালে নেই।পিছুটান রেখে কি লাভ?

-যাইহোক,কোথায় যাবে তুমি?এটা তো বলে যাও?

-কানাডা।

-কার কাছে?

-আমার এক ফ্রেন্ড থাকে।

-আবার ফ্রেন্ড?আই উইশ বলতে পারতে বয়ফ্রেন্ড!নিশ্চিন্তে ছাড়তে পারতাম তোমাকে।যাইহোক,ইফ ইউ ওয়ান্ট,আমি তোমাকে স্পন্সর করতে পারি!কানাডাতে আমারও চেনাজানা আছে কিছু।ভাইয়া বলে ডেকেছো,আমি চাই তোমার কিছু কাজে লাগতে।যখন ঠিকঠাকমতো সেটেলড্ হয়ে যাবে,তখন না হয় ফেরত দিয়ো?

রাগ হচ্ছিলো।উনি বিয়েটা থেকে তানহাকে বাচিয়েছেন ঠিকই,কিন্তু বিদেশ যাওয়ায় সম্মতি দিচ্ছেন?যা খুশি হয়ে যাক,তানহাকে আমি কোথাও যেতে দেবো না।সবে বলার জন্য মুখ খুলেছি এরমাঝেই তিহান বলে উঠলো,

-কোথাও যাবে না তানহা!

ওরদিকে তাকালো সবাই।বিস্ময়ে।হাত মুঠো করে ও এগোলো তানহার দিকে।আমি ওর পাশেই দাড়িয়ে ছিলাম।অঙ্কুর হাত টেনে সরিয়ে দিলেন আমাকে।তানহাও অবাক চোখে দেখছে তিহানকে।একটা দম নিয়ে তিহান বললো,

-তুই কোথাও‌ যাবি না।

-আমি যাবো তিহান!যেতে আমাকে হবেই!

-না তুই‌ যাবি না!

-কিসব বলছিস তুই?

তিহান এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের জল আটকালো।হুট করেই তানহার দুহাত মুঠো করে নিলো ও।বড়বড় চোখে তাকালাম আমি।অঙ্কুর টান লাগালেন আমার হাতে।অনেকটা পিছিয়ে নিয়ে এসেছেন আমাকে।পেছন থেকে জরিয়ে ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বললেন,

-কথা বলিও না।নড়াচড়াও করিও না।শুধু দেখো।

-ছাড়ুন!

-ছাড়বো না!সামনে দেখো!দেখো!

তারদিকে আড়চোখে রাগ নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম।উনি ধমকে থুতনি ধরে সামনে ফেরালেন আমাকে।নড়াচড়া করতে করতেই তানহা-তিহানের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলাম।অঙ্কুর আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,

-দেখো অদ্রি,ল্যাম্পপোস্টের আলোতে,চাঁদের অনুপস্থিতিতে এ কষ্টমন্ডিত রাতে প্রেমিক পুরুষটি লাল বেনারসিতে সজ্জিত তার প্রিয়তমাকে কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করবে।দেখো?বেস্ট ফিলিং ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড!যাকে ভালোবাসি,তাকে ভালোবাসি বলা!বেস্ট ফিলিং!

তার কথা শেষ হতেই তিহান জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে উঠলো,

-আমি তোকে বিয়ে করতে চাই তানহা।
#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৩

যে মেয়েটা একটা মানুষের কাছ থেকে শুধু ভালোবাসি শোনার জন্য মরিয়া হয়ে আছে,সেই মানুষটার কাছ থেকেই বিয়ের কথা শুনতে পেয়েছে।তার মনে কতোটা সুখ অনুভুত হতে পারে তার আন্দাজ হতেই মুখ চেপে ধরে ডুকরে কেদে উঠলাম আমি।খুশিতে।তানহার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।শ্বাস থামিয়ে অনেকটা সময় পাথরের মতো দাড়িয়ে শুধু তিহানের দিকে তাকিয়ে রইলো ও।চোখের জলধারা বইছেই ওর।একটসময় ঠোটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে আস্তেকরে তিহানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো হাত।বললো,

-মজা করছিস?

-ন্ না তান্নু।আ’ম…আ’ম সিরিয়াস।আমি তোকে বিয়ে করতে চাই।

-কেনো?

একটু থেমে গেলো তিহান।তারপর বাচ্চাদের মতো করে বলতে লাগলো,

-আমি চাই তুই আমার কাছে,আমার সামনে থাক।ওই বিদেশ টিদেশ যেতে হবে না তোকে।বিয়েটা হয়ে যাক,তুই আমার কাছেই থাকবি।

তানহা দমে গেলো।সাথে আমিও।ভেবেছিলাম আজ তিহান তানহাকে বলবে ওকে ভালোবাসে,ওকে ছাড়া থাকতে পারবে না ও,এজন্য ওকে বিয়ে করতে চায়।কিন্তু তেমনটা হয়নি।ও শুধু চায় ওর বন্ধু,তানহা এদেশেই থাকুক।ওর দায়িত্ববোধ মুহুর্তেই অঙ্কুরের বিয়ে করার কারনটাকে মনে করিয়ে দিলো।উনি জরিয়েই ছিলেন আমাকে।ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিলাম নিজেকে।তানহার দিকে এগোতে যাবো,অঙ্কুর হাত ধরে আটকে দিয়ে বললেন,

-ওদের নিজেদের মতো করে কনফেস করতে দাও অদ্রি।অন্তত আমাদের মতো লুকোচুরি দিয়ে শুরুটা নাইবা হলো।

-এখানে কনফেস করার কিছুই নেই তো!তিহান শুধুমাত্র তানহাকে যেতে দেবে না বলে বিয়ের কথাটা বলেছে।

-তিহানের যেতে না দিতে চাওয়ার কারন যে শুধু বন্ধুত্ব,সেটা তোমার অতিরিক্ত যে ব্রেইনটা,সেটা বলছে।তিহান না।সো স্টপ রাইট হেয়ার!

উনি একটানে আবারো কাছে টেনে জাপটে ধরলেন আমাকে।ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি।তানহা নাকটা ডলে বললো,

-শুধুমাত্র এজন্য বিয়ের কথা বললি তুই।দয়া করছিস আমাকে তিহান?

তিহানের বিস্ফোরিত চাওনি।তানহা চোখমুখ মুছে মুখ ফিরিয়ে নিলো।একটা শুকনো ঢোক গিলে শক্তভাবে বললো,

-আজ আমি বাড়িছাড়া,কেউই নেই আমার,কিছুই নেই।এজন্য দয়া হচ্ছে তোর।যাইহোক,এসব কথা থাক।বাড়ি যা তুই!বন্ধু হিসেবে অনেক ভেবেছিস।আর ভাবতে হবে না।চিল ইয়ার!যোগাযোগ হবে তো আমাদের!

-তানহা প্লিজ।এভাবে বলিস না!

-কিভাবে বললাম?আরেহ্!তুইই বা এমন কেনো করছিস?দেশ ছেড়ে যাবো,পৃথিবী ছেড়্…

-তানহা!

তানহা মুচকি হাসলো।তিহানের চেহারায় স্পষ্ট,ওই হাসিটা ওর ভালোলাগেনি একদমই।পান্জাবীর হাতাটা টেনে একপা এগিয়ে বললো,

-আমাকে ঘিরে আমার অনেক অভিযোগ তান্নু।তোকে ছাড়া কাউকে বলার নুন্যতম ইচ্ছে নেই।হয়তো এজন্য,কারন আমি বুঝে গেছি,তুই ছাড়া অন্য কারো শোনারও নুন্যতম আগ্রহ নেই।তাই তোকেই বলবো।তোকে ভালোবাসি কথাটা স্বীকার করতে পারছি না এটা যেমন সত্য,গত এক সপ্তাহ আমার শুধু তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় হয়েছে তানহা।এটাও তেমনি সত্য।যার কোনো কারনই খুজে পাইনা আমি।তোকে নিয়ে তো তোর বাবার ইন্সিকিওর হওয়ার কথা।তবে আমিও ইন্সিকিওর ছিলাম কোথাও।বারবার মনে হতো,তোকে হারিয়ে ফেলবো।আচ্ছা তান্নু,এটা বল,আমিতো আন্নুকে ভালোবাসি,ভার্সিটিতে এমন কতো দিনই ছিলো,ও গায়েব হয়ে যেতো,দেখা হয়নি,যোগাযোগ হয়নি ওর সাথে,তবুও ওর অনুপস্থিতিতে কিন্তু এমন হারানোর ভয় হয়নি আমার।ওর বিয়ে হয়ে গেছে শুনে ভেঙে পরেছিলাম,কতটা,তা তুইও জানিস।তুইতো এটাও জানিস তারপরও নতুন করে জুড়তেও শুরু করেছি নিজেকে।কিন্তু তোর ক্ষেত্রে?তোর বিয়ের কথা শুনে মনে হলো আমার চারপাশ যেনো অন্ধকার হয়ে আসছে।এমনটা তো হওয়ার কথা না।আমি তো…

-থাম তিহান!আর বলিস না।তোর এ সবটার কারন বন্ধুত্ব।শুধুই বন্ধুত্ব।আন্নুকে হারিয়ে এতোটা ভীতু হয়ে গেছিস যে,তোকে শান্তনা দেওয়া বন্ধুটাকে হারানোর ভয়টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।আর কিছু না!

-তবে এই বন্ধুত্বটাকেই আমি সুযোগ দিতে চাই তানহা!সারাজীবন নিজের করে আগলে রাখতে চাই তোকে।নিজেকে সপতে চাই তোর কাছে।আমাকে সামলানোর দায়িত্ব নিতে পারবি না তুই তানহা?

তানহার চোখ আবারো ভরে উঠলো।কান্না আটকাতে ঠোট কামড়ে ধরে বললো,

-তুই যেটাকে সুযোগ দেওয়া বলছিস,সেটা শুধুই তোর দায়িত্ববোধ তিহান।

-কথা দিচ্ছি,তা ভালোবাসায় মুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা আমি করবো।তানহা?তুই তো ভালোবাসতি আমাকে।আজ বুঝি তোর জীবনের মুল্য,টাকার মুল্য মনে পরছে?আজ বুঝি বুঝতে পারলি?আমি তোর যোগ্য নই।আজ বুঝি তিক্ত সত্যিটা মেনে নিচ্ছিস?আমার সাথে ওই কুড়েঘরে থাকা সম্ভব না তোর।আজই সব বাস্তবতা অনুভব হলো তোর?আমার আর তোর মাঝের আকাশ পাতাল ব্যবধানটা এক হবার নয়!আজই সবটা বুঝে গেলি তুই?

তানহা অবাক চোখে তাকালো।তারপর জোর করে হাসিমুখ করে বলতে লাগলো,

-ভালোবাসতাম?ভালোবাসি তিহান।ভালোবাসি।তোকে এতোটাই বেশি ভালোবাসি যে,আমার জীবনের সবচেয়ে অমুল্য জিনিস এই ভালোবাসাটাই হয়ে আছে।আর টাকার মুল্য?তোর হাত ধরে জীবনের পথ পারি দেওয়ার ইচ্ছা আমার।জীবনের মুল্যও তো সেখানেই।ভালোবাসায়।যোগ্যতা?যে মানুষটা ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের মাঝে সম্মানটাকেও পুরোপুরি জিইয়ে রাখতে পারে,তার চেয়ে অসাধারন ব্যক্তিত্বের মানুষ পৃথিবীতে হয় না তিহান।তোর কুড়েঘর তো আমার কাছে তিক্ত সত্য কোনোদিনই ছিলো না।ওটা তো ভালোবাসায় জড়ানো এক বলয়।যার মাঝে এমন কয়েকটা মানুষ বাস করে যারা একে অপরকে ভালোবাসে,যত্ম করে।তোর আর আমার মাঝের আকাশপাতাল তফাৎটা বাস্তবতা না তিহান,এই দুরুত্বটা আমাদের টেনে দেওয়া।তুই যেটাকে টাকা আর দারিদ্রতা দিয়ে বিচার করেছিস,আমি সেটাকে বন্ধু হারানোর ভয় দিয়ে,দুরুত্ব একে,আরো কাছে টানার চেষ্টা করেছি।এগুলোই আমার জীবনের চরম সত্য তিহান।আজীবন থাকবে।তোর জন্য আমার ভালোবাসাটা কোনোদিনও বদলাবে না তিহান।কোনোদিনও না।বন্ধু হিসেবে আমি তোকে শান্তনা দেওয়ার অধিকার খাটাতে পারবো।কিন্তু তা বলে,শুধু দায়িত্ববোধের জন্য বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনকে অপমান করে,তোকে সামলানোর অধিকার নিতে পারবো না রে।পারবো না।

অঙ্কুর ছেড়ে দিয়ে হাত ধরলেন আমার।দু আঙুল কপালে স্লাইড করে বিড়বিড়িয়ে বললেন,

-দুজনে মিলে সবটা ঘেটে দিলো আবার!কথা একটাও জানে না ঠিকমতো।

আমি এগোচ্ছিলাম।উনি হাতে টান মেরে বললেন,

-শোনো অদ্রি,এখন আমি কথা বলবো।তুমি একটু টু শব্দও করলে…

-আমি বলবো!তানহা যা ভেবেছে,ঠিক ভেবেছে!কোনো দরকার নেই,এই দায়িত্ব নামের বিয়ের আর বিয়ে নামে ছেলেখেলার!কোনো দরকার নেই!

কোমড়ে দুহাত রেখে গাড়ির সাথে চেপে ধরলেন উনি আমাকে।ছেড়ে দিন বলে ধাক্কাধাক্কি করতে লাগলাম।উনি ঘাড় বাকিয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন।তারপর ঠোটের বাকা হাসিটা প্রসারিত করে বললেন,

-আমাকে আমার কাজ করতে দাও অদ্রি।ভুলে যেওনা,আমার বউ তুমি।সো ডোন্ট টক সো মাচ!নইলে বেশি কথা বলা ওই ঠোটজোড়া পরম আদরে আটকে দিতে এতোটুকো আটকাবে না আমার।মাইন্ড ইট!

আমাকে ছেড়ে দিয়ে তানহা তিহানের দিকে এগোলেন অঙ্কুর।মুর্তির মতো দাড়িয়ে রইলাম ওভাবেই।উনি তানহার কাছে গিয়ে গলার টাইটা ঢিল করে বললেন,

-আচ্ছা তানহা?তুমি তো তিহানকে ভালোবাসো।আজ যখন ও নিজেকে তোমার কাছে,তোমার মতো করে গুছিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দিতে চাইছে,কেনো মানা করছো বলোতো?রাজি হচ্ছো না কেনো বিয়েতে?

-দায়িত্বের বিয়ে!তার পরিনতি চাক্ষুস দেখলাম তো ভাইয়া।

অঙ্কুর মৃদ্যু হাসলেন।তানহার তাচ্ছিল্য বুঝেছেন উনি।বললেন,

-সে তুমি যাই দেখে থাকো না কেনো,চোখে যা দেখা যায়,তাই কিন্তু সবসময় বাস্তব না।বর যদি বন্ধু হতে না পারে,সেটা যেমন একটা মেয়ের জন্য চরম দুর্ভাগ্যের,তেমনি বন্ধু যদি বর হয়,একটা মেয়ের জন্য সেটা কিন্তু চরম পাওয়া তানহা।

-আমি নিজেকে কারো কাছে দায়িত্বের বোঝা বানাতে চাইনা।অনেক ছোট হয়েছি জীবনে।তা বলে এতোবড় অপমান মানতে পারবো না।

তিহান ব্রিজের উপর হাত রেখে দাড়িয়েছিলো।অন্ধকারে ঘেরা পানির দিকে একধ্যানে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-ওকে ওর সিদ্ধান্ত নিতে দিন স্যার।

-ফাইন,এজ ইউ উইশ।

ঠোট উল্টে,দুকাধ উচিয়ে কিছু করার নেই বুঝালেন উনি।তারপর পকেটে দুহাত গুজে গাড়িতে হেলান দিয়ে তানহা তিহানের দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমি এগিয়ে গিয়ে তানহার কাধে হাত রাখলাম।মাথা নেড়ে বুঝালাম ওর সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে।ও‌ জরিয়ে ধরলো আমাকে।নিরবে কেদে যাচ্ছিলো।অঙ্কুর তখনো ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে।যেনো মজার কিছু ঘটেছে।এমন সময় হাসা যায়?খানিকটা নিরবতার পর উনি উত্তেজিত হয়ে বললেন,

-ওহ্!একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম।তিহান?আমি কিন্তু তানহার বিয়ের আসরে বলে এসেছি কনে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়েছে।এতে ওর পাপা হয়তো তোমাকেই সন্দেহ করছে।কেসটেস ফাইল করলে সেটা তোমার এগেনিস্টেই হবে।একটু মানসিকভাবে প্রস্তুত থেকো।

তিহান ওভাবেই দাড়িয়ে চুপচাপ।তানহা ছেড়ে দিলো আমাকে।অঙ্কুর বললেন,

-এখন তুমি ভাবছো,প্রমান নেই,কিছু করতে পারবে না,ইত্যাদি,ইত্যাদি!কিন্তু তিহান,এমনটা কিন্তু একদমই না!একটু ক্রিয়েটিভ কাজ তানহার পাপাও করে রেখেছে।আর আমিও তাকে আন্ডারেস্টিমেট করে ছোট একটা ভুল করেছি।

তিহান পিছন ফিরলো।ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলো অঙ্কুরের দিকে।তানহা এগিয়ে গিয়ে বললো,

-মানে?কি করেছেন আপনি?

-আসলে,তোমাদের বাসার গেইটের যেপাশে সিসিক্যামের মুখ করা,ওইপাশ দিয়েই তিহান কোলে করে গাড়িতে তুলেছে তোমাকে।সো,ওই ফুটেজ দেখলে তারা কনফার্ম,তুমি পালাও নি,তিহান তুলে নিয়ে গেছে তোমাকে।

তানহা বড়বড় চোখে তাকালো অঙ্কুরের দিকে।উনি ঘাড়টা চুলকে বললেন,

-ইয়ে,আমি তো আর জেনেবুঝে গাড়িটা ওখানে দাড় করাই নি!পরে আসার সময় দেখি,ওইদিকেই তোমার পাপার সিসিক্যাম তাক করা!ওটা নষ্ট করার সুযোগ হয়নি।তারআগেই…

-আপনি….

তানহা তেড়ে এগোলো অঙ্কুরের দিকে।উনি দুপা পিছিয়ে ভয়ার্ত চেহারা করে বললেন,

-আরে আরে,রাগ করছো কেনো?বললাম তো,ইচ্ছে করে করিনি।তাছাড়া তিহান ফাসলে তোমার কি?

-ও আমার বন্ধু!

-ধুরু!ছাড়োতো!কানাডা গেলে ওর চেয়ে ভালো অনেক বন্ধু পাবে!

অঙ্কুরের গা ছাড়া জবাব।তানহা মাথা চেপে ধরে চেচিয়ে বললো,

-এতোবড় ভুলটা কি করে করলেন আপনি?

অঙ্কুর গাল ফুলিয়ে মাথা নিচু করে নিয়ে বিড়বিড় করে বললেন,

-ভুলটা তো তুমি চাইলেই শুধরে নিতে পারো।এখন তুমি যদি তিহানকে বিয়ে করে নাও,পুলিশ তো ওর কিছু করতে পারবে না।ইউ বোথ আর এডাল্ট।নিজেদের ইচ্ছেমতো বিয়ে করতে পারো তোমরা।এটা বলে তিহানকে ছেড়ে দেবে।

তানহা মাথা তুলে তাকালো।তিহান বললো,

-দেখুন স্যার,যা হবার,হয়ে গেছে।আমার সাথে যা হবার,হবে।এসব নিয়ে ভেবে আর কোনো লাভ নেই।আমি আসছি।টেক কেয়ার তানহা।যেখানেই থাকিস,ভালো থাকিস।

ও হাটা লাগালো।তানহা কি একটা ভেবে চেচিয়ে বললো,

-দাড়া তিহান!

ও দাড়িয়েছে।তবে পেছন ফেরেনি।তানহা অঙ্কুরের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো,

-আমার তিহানের সাথে কিছু কথা বলার আছে।একা!

-বলো।কিছু কথা কেনো?অনেক কথাই থাকা উচিত তোমাদের।আফটার অল,বন্ধুকে ছেড়ে চিরতরে বিদেশ চলে যাবে বলে কথা।বলে নাও কথা,শেষবারের মতো।চলো অদ্রি।

অঙ্কুর কথা শেষ করে আমার হাত ধরে টেনে আবারো গাড়ির অন্যপাশে নিয়ে আসলেন।এদিক থেকে ওদের দেখা যাচ্ছে না,কোনো কথাও শোনা যাচ্ছে না।উনি গাড়িতে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে দাড়ালেন।আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-শুনলাম গ্রামে যাওয়ার কথা বলেছো দাদুর কাছে?

-আপনি এখন এইসব কথা বলছেন?ওদিকে তানহা তিহান…

-ওদের বিয়েটা হচ্ছেই।আর দেখবে,ওরা খুব তাড়াতাড়ি দুজন দুজনের ভালোবাসাটাও বুঝতে শুরু করবে।এতো ভেবো না তো!

কথাটা বলে কলার কোটটা দুবার ঝাড়লেন উনি।হাতাটাও টেনে গুটিয়ে নিলেন।ওনার এই চরম আত্মবিশ্বাস প্রতিবার বিস্মিত করে আমাকে।বলেই ফেললাম,

-আপনি এতোটা নিশ্চিত কিভাবে?

অঙ্কুর আমার দিক ফিরলেন।মুচকি হেসে বললেন,

-কারন এটা আমার বিশ্বাস অদ্রি।আর তুমি তো জানোই,অঙ্কুরের বিশ্বাস কোনোদিন হারেনি।দেখে নিও,তেমনটাই হবে,যেমনটা আমি ভেবেছি।হারবে না আমার বিশ্বাস।না আজ তানহার ভালোবাসার ক্ষেত্রে,নাইবা আমার ভালোবাসার ক্ষেত্রে।

#চলবে…
#চলবে….

[ রি-চেইক হয়নি।ভুলত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি রিডিং♥]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here