#সমাধি ❤️
#পর্ব —-১৫
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________________________
“-আকলিমার হাত পা কাঁপনি দিয়ে উঠছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে দেখে রাসেদ আকলিমা বেগমকে ঘরের কোনায় রাখা চেয়ারটায় বসিয়ে দেয়। আর নিজেও তার পদতলে বসে যায়।
আর সব জানতে চায়। জানতে চায় কেন এমন হল? অনুর মত মেয়ের জীবন তো হেসে খেলে যাবার কথা ছিলো। তবে সব উল্টো হল কেন???
——–
“- রাসেদ যখন অনু তোমায় ঘিন্না করতে শুরু করল।তপু মাঝে মধ্যে অনুর সাথে কথা বলতো। আর কথায় কথায় তোমার নাম উঠলে অনু জ্বলে উঠতো।
আমাদের বাড়িতে না আসতে চাইলেও অনুর খবর আমরা ঠিকই পেতাম।
” অনুর স্বামী বেশ ভালো মানুষ ছিলো,অনুকে অনেক ভালোবাসত। অনুর অতীত সম্পর্কে না জানলেও কিছুটা আন্দাজ করেছে।তবুও অনুর প্রতি ভালোবাসার কমতি হয়নি।
প্রথম প্রথম অনু ওর স্বামীকে সজ্জ করতে না পারলেও পরে সব ঠিক হয়ে যায়।
অনুর ভাসুরের সাথে ওর স্বামীর কি সব গন্ডগল হয় আর সব পাল্টে যায়।
“- অনু ওর স্বামীর বাড়ি ছেরে চলে এলো কেন আন্টি??
ওর স্বামীর তো বেশ ছিলো।তাহলে এখানে এসে এত কষ্ট করছে কেন????? স্বামীর বাড়িতে ওর ঠাই হয়নি!
আর ওর স্বামী মারা যাবার পর ওরা কেউ আসেনি??
——- এর উওর আপুর কাছে চাও রাসেদ ভাই।
” তপু আবারও তাদের কথার মধ্যে হাজির। কারন সে সব জানে আর রাসেদকে সবটা জানাতে চায়।শুরু থেকে।
” মানে!!
— তপু রাসেদের পাশে দাড়িয়ে এবার অনুর ঘরের বন্ধ দরজায় তাকিয়ে রইলো।
রাসেদ ভাই আপু সব জানে.৷
সব জানে মানে? রাসেদ উঠে দাড়িয়েছে তপুর কথাটার মানে বুঝতে পারছে না। কি জানার কথা বলছে তপু! বিমর্ষকর চাহনি তার।
– কি বলতে চাইছিস তপু??
” রাসেদ ভাই ঐ দিন কেন তুমি আপুকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে সব জানে আপু।
পারলে আপুর সাথে কথা বলো।আপুর মন হালকা করো। আপু যে পাপের বুঝা নিয়ে মরতে চায়না।
“———————★★
“- তর ভাই ফোন ধরল??
— এই নিয়ে মিহা মনে হয় শত বার ফোন দিয়েছে রাসেদ কে। ফোন তো তুলছেনা। ছেলেটা কাল বেরোলো কোন খরব না পেলে যে চিন্তা হয় তা সে বুঝেনা??? একটা ফোন দিয়েতো জানাতে পারে কোথায় আছে কি হচ্ছে!!
-” তখন ড্রাইভিং করছিলো তাই বাড়ির ফোন তুলেনি।আর তার পর অনুর খেয়ালে এত টা মজেছে আর মনেই নেই কল ব্যাক করার কথা। এখন ফোনটা গাড়িতে পড়ে রয়েছে।
-শেফা মিহার পাশেই দাড়িয়ে যদি একটু রাসেদের গলার স্বর শুনতে পায় তাতেই হবে।জানতে তো পারলো সে ঠিক আছে।
কি খেলো না খেলো তাও জানা নেই।আগে জানলে কিছু খাবার প্যাক করে দিতাম।
—————–★★★
“- অনুর রুমের সামনে এসে দরজায় ধাক্কা দিতেই কাঠের দরজাটা ক্যার ক্যার শব্দ করে মেলে গেলো।মানে অনু দরজা এমনি মিশিয়ে রেখেছিলো বন্ধ করেনি…..
সবার থেকে একটু আধটু জানার চাইতে অনুকেই জিজ্ঞেস করি কি এমন ঝড় বয়েছিলো।
– অনুর মেয়েটা ঘুমিয়েছে, রাইমার পাশেই মাথাটা গুজে এবার নীরবে কান্না করছে অনু।
সে জানে ঘরে কে এসেছে।
“- অনু!!
—- অনু!!
দুই ডাক পরতেই অনু উঠে রাসেদকে জরিয়ে ধরেছে। আর কান্নার মধ্যে কি বলছে তা বুঝার উপায় নেই।
” অনুকে নিজের বাহুতে পেয়ে রাসেদের জনমের স্বাধ মিটলো। তবে এখন অনুকে শান্ত করা দরকার।নয়তো ওর কান্না থামানো না গেলে, রাইমা না জেগে কান্না শুরু করে।
” অনু… অনুর মুখটা রাসেদ নিজের সামনে ধরেছে। কি হাল করেছিস নিজের?? তুই কি সত্যি অনু রে!!
— রাসেদ ভাই!!
” চুপ রাসেদ ভাইয়ের বোন।
এভাবে তো বাচ্চারাও কাঁদেনা। আগে কান্না বন্ধ কর নয়তো আমি চলে যাবো।
রাসেদ চলে যাক তা তো অনু চায় না।তাই কান্নার গতী কমিয়ে নিলো। রাসেদ অনুর এলোমেলো চুল গুলো হাতের আঙুলের সাহাজ্যে পিছনে ঠেলে দিলো। শার্ট টা ইন করা থেকে টেনে বার করে অনুর চোখ মুখ মুছে দিচ্ছে আর ওকে হাসানোর চেষ্টা করছে।
– মেয়ে হলেই ভালো।অন্তত চোখ মুখ মুছার জন্য শাড়ির আঁচল বা উরনা পাওয়া যায়।
আর আমায় দেখ শার্টের কোনা দিয়ে ঠিক মত সব মুছতেই পারছিনা।
” এত কিছুর মাঝে রাসেদের এমন কথায় অনুর মুখের কোনায় একটু হলেও উজ্জলতা দেখা দিয়েছে।
—-
অনু কি হয়েছে তর, আমায় বল না অনু।
“রাসেদ ভাই আমার যে সব শেষ হয়ে গেছে গো। তুমি কোথায় ছিলে এত দিন।
— আমি সব সময় তর সাথেই ছিলাম তুই দেখিস নি। এবার এসে গেছিনা সব ঠিক করে দেবো।
বল আমায় তর স্বামী মূত্যুর পর তুই এখানে!!
” নিজেকে সামলে রাসেদের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছে অনু। ওর যে বহু কথা জমা হয়েছে সব তো বলতে হবে।
রাসেদ ভাই আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি কেন সে দিন তোমায় বুঝলাম না। আমার বুঝা উচিত ছিলো আমার রাসেদ ভাই এমনটা করতে পারেনা, কিছুতেই না। তোমার উপরে রাগ করে আমি বিয়েতে মত দিয়ে দিই।
— জীবনের প্রতি মায়াই উঠে গিয়েছিলো।
যার সাথে বিয়ে হল সে বড় উদার মনের ছিলো।ঠিক তোমার মত, যে যাই চাইতো বিলীন করে দিতো।
প্রথমে তাকে পছন্দ না হলেও ধীরে ধীরে একটা মায়ায় পরে যাই। ওর চলাফেরা। কথা বলার ধরন। ওর মনের অফুরন্ত ভালোবাসা আমায় বাদ্ধ্য করেছে ঐ মানুষটাকে ভালোবাসতে।
আয়ান আমায় বেশ বুঝতো জানো।
কখনো কোন কিছুর জন্য জোর করেনি।না স্বামীর অধিকার নিয়ে আমার সামনে এসেছে।
তবে ওর প্রতি মুগ্ধ হয়ে আমিই ওর কাছে ধরা দিয়েছিলাম। সপে দিয়েছিলাম নিজের মন প্রান।
দেশে আসার কোন ইচ্ছেই হত না। কারন এখানে এসে তোমার থাকার ঘরটা দেখে আমার কষ্ট হত। আর মনে হত তোমার সেই পাষন্ড রূপের চেহারা। যা বার বার তোমায় ঘেন্না করতে বাদ্ধ্য করত।আর আমি চাইতাম না তোমায় ঘেন্না করি।
-” আয়ান যেদিন জানতে পারে ও বাবা হবে খুশির অন্ত ছিলোনা ওর। অফিসে যাওয়াই বন্ধ করে দিলো।সব ওর বড় ভাই সামলাতে শুরু করল। জয়েন্ট ফ্যামেলি ছিলো।সবাই সামনে তো ভালো তবে মনের খবরটা জানতে পারিনি।
মা হব শুনে ঐ দিন বড় কান্না পাচ্ছিল। যা সুখ অনুভব করছিলাম কি বলবো তোমায়। রাসেদ গালে হাত দিয়ে অনুর মুখটাই দেখছে। একবার হাসি মুখ তো একবার কান্নার মুখ।রং বদলানো মুখটায় ওর অনুকে খুজছে।
ওর কপালে একটা চুমু দিতে ইচ্ছা করছে তবে তা সম্ভব নয়। সে আরেকজনের। তাও আমায় মানবে কিনা জানিনা।
যদি অনু ফিরতে চায় তাহলে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ওকে বরন করব আমার জীবনে।
— জানো রাসেদ ভাই। যখনই আমার মায়ের চালের কথা জানতে পারলাম, তখন ইচ্ছে হচ্ছিলো ছাদ থেকে লাফিয়ে পরি,আমার মা হয়ে আমারই মন বুঝলোনা কেন? তপুই আমায় সব জানায়।সেও প্রথম না জানলেও মা বাবার কথা শুনে সব বুঝতে পারে। আর আমায় সব বলে দেয়।
পরেই জানতে পেরেছিলাম। তোমার তারিয়ে দেয়ার কারন। তখন অনেক দূরে চলে গেছিলাম রাসেদ ভাই।অনেক দূরে, চাইলেও ফেরা মুসকিল ছিলো।আমি যে অন্য কারো বাঁধনে আটকে গেছিলাম।
না পারছিলাম ওর সাথে সুখে ঘর করতে আর না পারছিলাম তোমায় ভুলতে।দুই মিলে আমায় পাগল করে তুলছিলো।
রাইমা গর্ভে এসেছিলো বলেই আত্মহত্যার পথ বাছতে পারিনি। নয়তো সত্যি সত্যি কিছু একটা করে বসতাম।
একটু খান্ত হয়ে অনু আবার বলা শুরু করল। কারন রাসেদ যে কান পেতে রয়েছে অনুর মুখের বুলি শুনতে।
“- আর অন্য দিকে আয়ানের ভাই জানায় ব্যাবসায় অনেক লোকসান হয়েছে।আর বহু দেনা পরেছে। আয়ান ব্যাপারটা শুনে কেমন হয়ে উঠলো। আমার কষ্ট হবে জেনে—
বাবা সাত পাঁচ না ভেবে নিজের সর্বস্ব বেঁচে দেয়।বাড়িটাও বন্ধক দিয়ে দেয়।আর সব টাকা তুলে দেয় আয়ানের ভাইয়ের হাতে।
আর এটাই জীবনের কাল হল, এই টাকাই সব শেষ করবে ভাবতে পারিনি। টাকার লোভ ওর ভাই সামলাতে পারেনি। সব তো শেষ এখন এই কয়টা টাকা হলে সে নতুন করে ব্যাবসা করার চিন্তায় সব হাতিয়ে নিলো।
— আয়ান তো ব্যাবসা থেকে দূরেই ছিলো।কারন আমার শরিল ভালো থাকতো না।আর এই সোজগ কাজে লাগিয়ে ওর ভাই আমার বাবা দেয়া সব টাকা নিজের ব্যাংকে রেখে দিলো।
কোন দেনা না শোধ করে সব আয়ানের ঘারে চাপালো।
— ওর মনের অশান্তি কি কম ছিলো আমার জন্যে। তার উপরে আবার এই আহাজারি।
” আয়ান কি করবে কিনা বুঝতেই পারছিলোনা।বাবা তো নিস্ব হলোই সাথে আয়ান।
— দুজনেই কষ্টের জোয়ারে ছিলো সাথে আমি আর মা এই টেনশনে মরছিলাম।এবার কি হবে?
ওর ভাই নিজের সব গুছিয়ে বাড়ি ছেরে চলে যায়।আর আয়ান তার বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
– এই দিকে আমার অবস্থা খারাপ। মা পাশে ছিলো বলে রক্ষা হয়। হাসপাতালে আছি শুনে পাগলের মতই ছুটে আসছিলো আয়ান।
বাস… এক্সিডেন্ট সব শেষ করে দিলো।
নিজের মেয়েকে দেখতেও পেলো না। কতইনা খুশি ছিলো। একটি বার মেয়ের মুখ দেখতে পারলো এটা আমায় অনেক কাঁদায় রাসেদ ভাই।আমার মেয়েটা পিতার আদর থেকে বঞ্চিত হল। বাবা কি জিনিস তা বুঝার আগেই বাবার ছত্র ছায়া থেকে দূর হল। ওর ভাই জানাজায় শরিক তো হয়েছে তবে চুরের মত।
আর এদিকে ওর দেনা এতই ছিলো ওর বাড়ি বিক্রি করেও পুষালোনা।
বাবা ও সব সইতে না পেরে আমাদের ছেরে চলে গেলো।
শেষ আমাদের বাড়িটা বিক্রি করে যা পেয়েছি।আর আমার সব গয়না পত্র দিয়ে আয়ানের রেখে যাওয়া দেনা শোধ দিয়েছিলাম। কারন চাইনি আমার স্বামীর নাম নেবার সময় কারো মুখ গুমরা হক। সে নেইতো কি আমি তো ছিলাম।তাই তার কর্তব্য আমি পালন করেছি। না করতে পারলে কেমন স্ত্রী হলাম।
রাসেদ অনুর কথায় অবাক। অনু এত আবেগী! ওর ভিতরে এত ভালোবাসা জন্মেছিলো স্বামীর প্রতি।এবার তো আমারই হিংসা হচ্ছে।
—- দেশে এসে তোমার অনেক খুজ করেও পাইনি।আর না তেমন ঘটা করে তোমায় খুজেছি।আর এভাবেই দিন চলতে লাগলো আমাদের।
” সব শুনে রাসেদ একটা জিনিস বুঝলো ওর স্বামী বড় ভালো মানুষ ছিলো।আর ভালো মানুষ গুলোই জীবনের প্রতিধাপে ঠকে যায়।
আর অনুর জীবনে কম ঝড় বয়ে যায়নি। স্বামী সংসার সব হারিয়ে মেয়েকে আকরে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।আর সেই চেষ্টায় রাসেদ অনুর পাশে থাকতে চায়।
নেবে কি অনু রাসেদকে পাশে??
“— রাসেদ যা সিদ্ধান্ত নেবার নিয়ে নিয়েছে।
অনুকে এখানে থাকতে দেবে না।নিয়ে যাবে ওর সাথে ওর নতুন শহরে।
ঘুমন্ত রাইমাকে কোলে তুলে অনুর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছে রাসেদ।
চল…..
“- কোথায় রাসেদ ভাই!!
— যেখানে তর রাসেদ ভাই সেখানেই তো অনু। চল আমার সাথে….
” অনু রাসেদের থেকে তো দয়া চায়নি।তাহলে দয়া করছে কেন? বিধবা বলে এখন ও দয়ার পাত্র হইনি।
– অনু কিছুটা শক্ত গলায় জানালো সে কোথাও যাবে না।
যা রাসেদের জন্য বেদনা দায়ক।
চলবে…… ★★
অনু কি যাবে রাসেদের হাত ধরে? নাকি রাসেদ কে ফিরিয়ে দেবে ওর দুনিয়ায়???