সমাধি পর্ব-১৬

#সমাধি
#পর্ব —-১৬
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
______________________________
“– ডেপ ডেপ করে রাসেদ অনুর দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর মুখ দেখে বুঝার বাকি নেই ও কি ভাবছে।
—, আমার ভালোবাসাকে দয়া ভেবে ভুল করিস না অনু।
” অনুর মুখটা এবার দেখার মত। কি করুন চাহনি দিয়ে রাসেদকে দেখছে। মরা হাসি দিয়ে অনুর অভিমানি স্বর।
যখন ভালোবাসতে বললাম তখন বাসলে না, আর আজ যখন সময় শেষ তখন ভালোবাসা দেখাতে এলে??
— কোন সময় শেষ নয় অনু।সবে তো শুরু।
তুই চল আমার সাথে। তর কোন অসুবিধা হবে না। রাইমা এমন নোংরা পরিবেশে বড় হলে ওর বড় ধরনের অসুক করতে পারে।

” অনু রাসেদের আবদার বার বার ফিরিয়ে দিচ্ছে। তা হয় না রাসেদ ভাই, এখানে আমরা ভালোই আছি, মাথা গুজার জন্য উপরে চাল রয়েছে।
আরামের জন্য রয়েছে চোখ ভর্তি ঘুম।
দুইবেলা খাবার আল্লাহর দয়ায় খাচ্ছি।বেশ আছি রাসেদ ভাই, বেঁচে থাকার জন্য আর কি চাই?
আমাদের নিয়ে ভেবো না। মাঝে মধ্যে এসো দেখা করতে এতেই অনেক।

—– রাসেদ অনুর থেকে জেদি নাকি অনু! তা আজ পরিক্ষা হক।
খাটের নিচে একটা লাগেজ চোখে পরতেই।তা বার করে রুমের সব কিছু অগোছালো ভাবেই ভর্তি শুরু করল।

” আকলিমা বেগম আর তপু এই ঘরটায় চলে এসেছে।কিসের শব্দ এত দেখা দরকার।
সব আছরে আছরে রাখছে আর বার বার অনুর দিকে রাগী ভাব নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
মা ছেলে নিরব দর্শকের মত দাড়িয়ে।
“লাভ নেই রাসেদ ভাই। এগুলো গোছাতে আমার কষ্ট হবে না।কারন আমার অভ্যাস আছে।
তবে আমাদেরকে তোমার সাথে নিয়ে তোমার গোছানো জীবন টা নষ্ট করোনা।
তখন তা আগের মত করে আর নাও গোছাতে পারো।

” রাসেদ সব ছেরে অনুর পাশে দাঁড়িয়েছে। কি বললি তুই আমার সাথে গেলে আমার জীবন নষ্ট হবে?
আর কিসের গোছানো গোছানো করছিস! যা গোছিয়েই নেইনি তা অগোছালো হবার ভয় কি!!!

— অনু এবার সরাসরি কথাটা বলেই দিলো।অনেক তো ইঙ্গিত দিলো রাসেদ বুঝলো না।
তবে ওকে না বললে মনে হয় না বুঝবে।
দেখো রাসেদ ভাই,আমরা গেলে তোমার ফ্যামেলি মানে নতুন করে যাদের আপন করে নিয়েছো তাদের অসুবিধা হতে পারে।আর তোমারও…..৷

—(- অনুর কথার উওর রাসেদের কাছে নেই।ওওহ তাহলে অনুর ভাবনা আমি বিয়ে করে বৌ বাচ্চা সমেদ আছি।আহহ আমার অনু রে।না তুই সেদিন আমায় বুঝলি না আজ।)

” রাসেদ কিছু কথা না পেয়ে শুকনো হাসি হেসে খাটের কোনায় বসে রইলো।
আর রাসেদের শুকনো হাসি অনুকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাসেদ কতটা একা।

তবে ওকে যে একলাই থাকতে হবে। পারবনা ওর সঙ্গী হয়ে থাকতে।তা আর কপালে নেই। বিধাতা আমাদের এক করতে নয় বরং যন্ত্রণা দিতে পাঠিয়েছে।

” অনু! আমার কথাটা রাখ। চল আমার সাথে। তোদের কোন কষ্ট হবেনা আমি আছিতো।
যা অগোছালো ছিলো চল না গিয়ে একটুখানি গোছিয়ে দিবি।

(— মনের মধ্যে কত আশা তোমার রাসেদ ভাই।তবে আমিকি সেই আশা রাখতে পারব? আমি যে অন্যের ভালোবাসায় ডুবে ছিলাম।সেখান থেকে সরে এসে কি করে পারব এসব। আর চাইলেও তো সম্ভব নয়।)

“- অনু একটু চিন্তায় পরল।কি করবে রাসেদকে ফিরিয়ে দেবার ইচ্ছে ও নেই।আর না ওর সাথে গিয়ে ওকে মিথ্যা আশায় রাখার।

“- যেতে পারি একটা শর্তে..
—- রাসেদের নিরাসা জনক মুখে একটু আশার আলোর ঝলক দেখা দিয়েছে।
তর সব শর্ত আমার মাথার মণি হবে অনু। একবার বলে তো দেখ।

“- বলবো রাসেদ ভাই সময় হলেই বলবো। তোমার থেকে কিছু চাওয়ার আছে সেই চাওয়ার সাথেই না হয় শর্তটা জানাবো।

— এত কিছু বুঝিনা তর যা শর্ত বা চাওয়ার আছে সবই পাবি।আমার যে শ্বাসটা আছে সেটাও তর নামে তুই শুধু বলিস কি চাস। রাসেদের আবেগী স্বর অনুর মন বার বার নরম করে তুলছে। সে যে স্থির করতে পারছেনা নিজের মন কে।বার বার কেন রাসেদ ভাই ঝড় তুলছে???

” অনু রাসেদের পানে এক পলক তাকিয়ে একটু ভাবনায় মজলো। তোমার শ্বাসের চাইতেও দামী কিছু চাইবো রাসেদ ভাই।
আজ তো বললে শ্বাসটাও আমার যদি কথা টুকু সময় মত বলতে….

– ভাবনা রেখে রাসেদের দ্বিতিয় বার বলার আগেই অনু নিজে থেকে সব গুছিয়ে নিচ্ছে।
” এসব ছেরা ফাটা জামা নিস না অনু। রাইমার বিশেষ কিছু থাকলে নিয়ে নে। আমাদের মাঝে সব নতুন করে শুরু হবে।তাই সব নতুন হবে।
তুই আমি রাইমা একটা আলাদা জগত করব অনু।
থাকবি আমার সাথে সেই জগতে!!!!
অনুর অশ্রুসিক্ত নজর এবার দরজায়—-

— দরজায় তপু আর আকলিমা বেগম দাড়িয়ে, তাদের কিছু বলার আছে তবে অনুর জন্য সাহস হচ্ছেনা।
“আপনারাও চলুন আমার সাথে।
রাসেদের মুখে কথাটা শুনতেই আকলিমার উজ্জল হাসি। ভেবেছিলো শুধু অনুই ওর সঙ্গী হবে।

———————-★★

“- রাইমাকে কুলে করে নিজর গৃহে হাজির রাসেদ।সদর দরজাটা খুলা তাই অনায়াসে ভিতরে ঢুকে গেলো।
ভিতরে ঢুকার আগেই অনুর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে নিলো।কারন অনুর হাত পা তো কাপঁছে, এটা কি ভয়ে!!।।।

“- রাসেদের মা বাবা সহ বিশেষ একজন ও হা হয়ে আছে।
শেফা……….

– শেফার সব সপ্নগুলোকে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে রাসেদ। এক নিমিষে সব শেষ হয়ে গেলো। অনু আর রাসেদ কে হাতে হাত ধরে রাখতে দেখে।

” আকলিমা আর অনুর সাথে পরিচয় আছে রাসেদের মা বাবার।তপুকে দেখেনি।আর অনু তাদের প্রথম দেখছে। ছোট বেলার কথা কার মনে থাকে। আগে দেখা হয়েছে বলে মনে হয় না। আর বড় হবার পর কেউ কাউকে দেখেনি।ধরতে গেলে নতুন দেখাই বলতে পারেন।

— আকলিমা মরা হাসি দিয়ে রাসেদের মায়ের কাছে গেলো। তবে আকলিমার মত রাসেদের মা এত নিষ্ঠুর নয়। রাসেদের সাথে যা করেছে তার পরেও হাসি মুখে বরন করেছে তাদের।
” শেফা অনুর মাথা থেকে পা অবদি দেখে নিলো।
এই তাহলে আমার রাসেদের অনু!!
“—— আমি যাকে চাইলাম সে আমার নয়।
আর সে যাকে চাইলো দেখা যাক সে কার হয়??
— রাসেদের কোলের বাচ্চাকে দেখে সবার মনে কৌতুহল। এটা অনুর মেয়ে!!! বিয়ে হয়েছে যেহেতু বাচ্চা হবারই কথা।

” রাসেদ শেফার দিকে নজর দিয়েও দিলোনা। কেমন জানি অপরাধীর কাঠগরায় দার হয়েছে ওর চোখে। নিজেকে অপরাধীই মনে হচ্ছে।

রাসেদ তার মায়ের কাছে গিয়ে রাইমাকে দেখিয়ে বললো।মা ও আমাদের অনুর মেয়ে।

রাসেদের মা তো আপন করে রাইমাকে কোলে তুলে নিলো।এই দূৃশ্য দেখে আকলিমা বেগম বেশ লজ্জা পাচ্ছে। সেকেন্ট এর মধ্যে সকলে আপন করে নিলো।আর এমন আমাদের সাথে হলেতো কুকুরের মত তারিয়ে দিতাম।
সত্যি শুধু রাসেদ নয় ওর পরিবারের মনটাও বিশাল।

—— সবার কোলে রাইমা চরলো।দূর থেকে শেফা দেখা শেষ করল।এবার কাছে আসার পালা।
অনুতো এলো ওর স্বামীও এসেছে!! আর এই ব্যাগ পএ নিয়ে কেন? প্রশ্নটা সবার মনেই জেগেছে।
শুরুটা শেফাই করুক।

রাসেদের কাছে এসে রাইমাকে হাত বারিয়ে কাছে টানলো। রাসেদের মুখে যে কি উজ্জল হাসি তা এই প্রথম শেফা দেখলো।রাসেদ খুশি হলে কতটা খুশি হতে পারে তা আন্দাজ হয়েছে।

আজ রাসেদের মুখে এক অন্য চমক।
—- শেফা!!
“ও…
জানি রাসেদ। ও অনু। তোমার ঐ ডায়রির পাতার মধ্যে বন্দি থাকা অনু।
– হালকা হাসি দিয়ে রাসেদ মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলো।
” রাসেদের মা এবার লক্ষ করল। ওরা তো ব্যাগ পএ নিয়ে এসেছে। আর সব এলো কামাল ভাই আর অনুর স্বামী কোথায়? ওরা আসেনি???
এত বড় লোক মানুষ তাই হয়তো আমাদের এখানে চরন ঠেকায়নি।

— শান্ত পরিবেশটা একটু গরম হয়ে উঠলো।কারন রাসেদের মা না জেনেই একটা প্রশ্ন করে বসলো।
অনু তোমার স্বামী আসেনি??
আর ভাবি আপনার স্বামীই বা কোথায়???
কামাল ভাই কি আমাদের এই ছোট্ট কুটিরটাকে বসতিস্থল ভাবেনা।

মা মেয়ের চোখের পানি একাকার। তারা যে বিধবা স্বামী সহ সব হারিয়ে এক অবলার মত আছে।

” অনুর তাও ধৈর্য্য শক্তি রয়েছে। শক্ত গলায় রাসেদের মায়ের প্রশ্নের উওর জানালো।
আন্টি আমার স্বামী দুনিয়ায় নেই উনি মারা গেছে….৷
আর আমার বাবাও।
দুজনই দুনিয়া থেকে আমাদের থেকে চিরবিদায় জানিয়েছেন।

—— কথাটা রাসেদের মায়ের বুক চিরে নিলো।
অনুর স্বামী নেই। আর কামাল ভাইও বেঁচে নেই!!
একটু কষ্টতো পেলো আর—

রাসেদের সাথে কি আবার নতুন করে বাসা বাধার সপ্ন বুনছেনাতো?
তা না হলে ব্যাগ পএ নিয়ে এই বাড়িতে কেন?
আর রাসেদ।সেও কি ছেলে মানুষ? যদি রাসেদ আর অনু এক হতে যায় তাহলে যে একটা নিষ্পাপ মেয়ের মরন হবে।তার কে রবে দুনিয়ায়। রাসেদকি কিছুই বুঝেনা।

—না না রাসেদের জীবনে নতুন করে অনু চাইনা। যে ভুল বুঝে চলে গেছে, ভালোবাসা না ছাই, মুখের কথা কে সত্যি ভেবেছে। তার আসার দরকার নেই।
যে মেয়েটা সব জেনে আমার রাসেদকে বুঝেছে জেনেছে এমন মেয়েই রাসেদের জন্য ঠিক। আর সে শুধু শেফা।

— শেফার মনে কোথাও না কোথাও আশা একটু হলেও ধরে ছিলো।যা অনুর কথায় চিরতরে শেষ।
যেহেতু অনু ফিরে এসেছে তাহলে রাসেদের জীবনে আমার প্রয়োজন শেষ। রাসেদ কে তো আগেই মানানো মুসকিল ছিলো।আর এখন তো ভাবাও অসম্ভব।

সে কি অনুকে নিয়েই নতুন জীবন শুরু করবে?
অনুকি মেহমান হয়ে এসেছে? নাকি আমায় মেহমান করতে??

—কি হবে আমার। ভাইয়ারে তুমি যাবার বেলা আমায় নিয়ে যাওনি কেন???

আমি এবার কার আশায় রবো।রাসেদতো আমার হবে না।তাও মেনে নিয়েছিলাম।তবে সে অন্য কারো হয়ে আমায় না পর করে দেয়।তখন আমার কি হবে???
আমি কি ওর বাড়ির একটা কোনায়ও ঠাই পাবোনা। ওদের নতুন সংসারে ওর অনু আমায় মানবে? নাকি চিরতরে বের করে দেবে শেফা নামটাকে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here