সমাধি পর্ব-১৭

#সমাধি
#পর্ব —-১৭
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
________________________________

“- অনু আর ওর মা ভাইকে রেস্ট করার জন্য রুমে নিয়ে গেলো শেফা।
বাড়িতে রুমের তো অভাব নেই,তবু শেফা নিজের রুমটার পাশেই অনু জন্য রুম সিলেক্ট করল।
আকলিমা বেগম আর অনু একই রুমে” তপু আর রাসেদ এক রুমে বাস হয়ে গেলো।

রাসেদের আদেশেই অনুদের শেফা নিয়ে এসেছে।বেশ মধু নিয়ে রাসেদ শেফাকে বিনয় করেছে- শেফা ওদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা করো বহু দূর পাড়ি দিয়ে এসেছে।

“———–

ওদের থাকার যায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে মূহুর্তের মধ্যেই নিচে চলে এলো। রাসেদ কি বলছে নতুন আগমন হওয়া মানুষদের বিষয়ে তা জানা দরকার,
“রাসেদের কথা শুনে ওর বাবা মা দুজনই বাকরুদ্ধ।
আল্লাহ চাইলে মানুষকে কি থেকে কি করতে পারেন।
কতকি ছিলো আর আজ কিনা বস্তিতে থাকার উপক্রম হল।
প্রথম গরীব থাকলেও তো এতটা ছিলোনা।

— তবে রাসেদের মা রাসেদের থেকে সোজা সোজি উওর জানতে চায়।
যা জানা খুব জরুরি,
“ওদের এখানে আনলি কেন রাসেদ???
– রাসেদ তো ভেবেছিলো, মা খুশি হবে।সারা জীবন অপরের উপকার করেছি শুনলেই কতটা খুশি হত,তবে আজ কেন এমন কথা মায়ের মুখে!!!
অনু ওর পরিবার সহ এসেছে এতে মা অখুশি! মা ও কি অনুর বাবা মায়ের মতই টাকার মোহে পাষান হয়ে উঠেছে??

– মা ওরা বিপদে রয়েছে। ঐ অবস্থায় রেখে আসি কি করে।
অনু ওর বাচ্চাকে নিয়ে থাকার মত ঐ পরিবেশ নয়। মানাতে পারবেনা কোন দিন না।
ও অন্য রকম পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছে।

———তাহলে তুই অন্য কোথাও থাকার ব্যাবস্থা করে দিতি….
“- রাসেদের বাবা রাসেদের কথায় সায় দিলেও ওর মা দিলো না। রাসেদ কেউ কোথাও থাকলে সেই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে।শিখতেই হয়।
আর অনুকেও শিখতে হবে।এ বাড়িতে না হয় দু-চার দিনের মেহমান হয়ে এসেছে।

(*মায়ের কথাটা শুনার পর রাসেদের শান্ত মনটা আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। আবার নতুন করে অনুকে হারানোর ভয় জাগছে। কেন দু-চার দিনের মেহমান হবে? ওরাকি এখানে থাকতে পারেনা? আগেতো ছোট্ট দুই রুমে কত মানুষ ঠাই পেতো আমাদের বাড়িতে।তবে আজ কেন এত বড় বাড়িতে তিনজন মানুষের ঠাই হবে না!!
মায়ের মুখের উপর তো নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেনা রাসেদ। সেই শিক্ষা সে পায়নি।তবে মা-কে আদর করে মানিয়ে বুঝিয়ে নেয়াটা কষ্ট হবে না।)*

” কথাগুলো নিজের ভিতরেই গেঁথে রেখেছে রাসেদ। বেয়াদবি করে মায়ের মুখের উপর তর্ক সে করবে না।
– ছেলের মুখটা মলিন দেখে রাসেদের মা ওর পাশে দাড়িয়েছে।
দেখ রাসেদ তুই আমাদের এক মাএ ছেলে।তর ভালো কিসে তা আমরা জানি।দ্বিতীয় বার ঐ ভুল করে নিজের জীবনের সাথে সাথে সবার জীবন শেষ করিস না।
ওরা এসেছে যেমন মেহমানের মত ঠিক তেমনই জেনো থাকে।
ওদের থাকার একটা ব্যাবস্থা করে দে। আর ওর ভাইটাকে একটা কাজ জোগার করে দে।
প্রতিবেশীদের থেকে আর কি আশা রাখবে ওরা!!!

— মাথাটা নত করে রাসেদ রুম ছেরে চললো।
এখন মায়ের মন ভালোনা পরে কথা হবে।
তবে রাসেদের হাতটা কেউ শক্ত করে চেপে ধরে ওর যাওয়া আটকে দিয়েছে…
ওর মনের ভাষার শব্দ হয়ে ওর ইচ্ছা পূরনে লেগে পরেছে।

———————-

“- দেখলে মা যে ছেলেকে বাড়ির বিড়ালের চেয়ে নিকৃষ্ট ভাবতে আজ সেই ছেলে আমাদের মাথার মণি করে তার নিড়ে ঠাই দিয়েছে।
আকলিমা বেগম এমনিতেই লজ্জিত তার উপরে অনুর কথায় মাটিতে মিশে যাওয়ার উপক্রম।
অনু তার মাকে কথাটুক বলে রাইমাকে কোলে তুলে একটু বারান্দার দিকে চলে এলো।
আর ভাবনায় মজলো।আজ যদি রাসেদ ভাই আর আমি এক হতাম তাহলে আমাদের জীবনটা কত রঙিন হত। টাকা না থাকতো কষ্ট ছিলোনা রাসেদ ভাইতো আমার হয়ে থাকতো।
শেফাকে দেখার পর থেকে অনুর একটু হিংসা জন্ম নিচ্ছে।কি করবে ভালোবাসার মানুষ তো।সে হবে না জেনেও কেন অনুর মনে ভয়।

_________________

” খালা!
— শেফার হাতটা রাসেদের হাতটা কে শক্ত করে আকরে ধরেছে।আর ওর হয়ে আজ লরতে এসেছে।দালাল বা উকিল যাই ধরুক।
” অনু রাসেদের শান্তি,আর আপনি হয়তো চাইবেন না ছেলের শান্তি ভঙ্গ হক!!!
— শেফা তুই!!
” খালা আমার অনুরুধ অনুকে থাকতে দিন যতদিন ওরা চায়। রাসেদের থেকে অনুকে দূর করবেন না প্লিজ।আমার অনুরুধ বলুন বা বেয়াদবি , আমার কথাটা রাখতে হবে খালা।

এত দিনে মেয়েটা কিছু চাইলো।তাও নিজের জন্য নয়। আমার ছেলের জন্য নিজের সুখ ভঙ্গ করতে চাইলো।
হায়রে মেয়ে মানুষ, একটা মেয়ের কত রূপ হয়।কখনো মা / বোন/ প্রেমীকা/ বান্ধবী/
মেয়ে/ স্ত্রী।
একেক রূপ ধারন করে পুরুষের জন্যেই কাঁদে। তাদের সুখের কথা ভেবে কত বলিদান দেয়।
রাসেদের বাবা কথাটুক ভেবেই নিরব।
এখানে তার কথার দাম দেবেনা, দেখা যাক রাসেদের মায়ের মন!!

—শেফা!
তুই কি বলছিস ভেবে বলছিস তো!!
হ্যা খালা ভেবেই বলেছি। প্লিজ অমত করবেন না।

রাসেদের ইচ্ছে করছে শেফাকে কাঁধে তুলে নাচি।আজ কত একটা উপকার করল।অনুকে এখানে রাখতে মায়ের কথার উপরে কথা বললো।
কৃতজ্ঞতার হাসি রাসেদ শেফাকে দিয়ে সেখান থেকে অনুর কাছে ছুটে গেছে।মনে শান্তির ছায়া।তার অনু আর কোথাও যাচ্ছে না।সে এখানেই থাকবে আমার চোখের সামনে।

—- রাসেদের মা অবাক নয়নে শেফার পানে তাকিয়ে।
মেয়েটা কত উদার। আর গাধাটা এই মেয়েটার দিকে তাকায়ও না।
” এটা কেন করলি শেফা?
– খালা রাসেদের থেকে অনুকে আলাদা করার আমরা কে?
হয়তো চোখের আরাল করতে পারবো মন থেকে আদোও কি সম্ভব হবে?
আর না অনু চলে গেলে আমার জন্য ওর মনে কোন জায়গা তৈরি হবে।
আগে খুজ জানতো না তাও অনুর নেশায় ডুবে থাকতো।আর এখন তো সব জানে।তার পরেও ওকে ফেরানো মুসকিল।

” রাসেদের মা আর বাবার টু শব্দ বার হল না।রাসেদের বাবাতো আগেই চুপ।এবার ওর মা ও চুপ হয়ে গেলো।
ছেলের সাথে সাথে শেফার মাথাও গেছে।এদের বলে আর লাভ নেই।দেখা যাক কি হয়।

— মিহাটা মার্কেট থেকে বাড়ি এলে না আবার কান্ড ঘটিয়ে দেয়।মুখে তো যা আসে বলে দেয়। না জানি শেফার সাথে রাগ করে ওকে দু-কথা শুনিয়ে দেয়।

————★

——— কি দেখিস অনু?
বারান্দায় গ্রীলের ধার ঘেসে রাইমাকে নিয়ে দাড়িয়ে অনু।
অশান্ত লাগছে, একটা অস্থিরতা তাকে গিলে খেতে চাইছে।
এখানে কেমন একটা ভিকিরির মত ভাব আসছে।

অন্যের আলিসান নিড়ে থাকার চাইতে নিজের কুঁড়ে ঘর উওম স্থান।
তবে এখানে কারো মুখ দেখার লোভ না সামলাতে পেরেই আসা। শেষ বারের মত কয়দিন ওর পাশে থাকা যাক।

” নিজের মনের সব অগোছালো কথা সাইডে রেখে রাসেদের দিকে ঘুরে দেখা।
–, কিছুনা একটু বাহিরে চোখ বুলাচ্ছিলাম।
” রাইমাকে অনুর কোল থেকে নিয়ে রাসেদ যেতে যেতে বলে উঠলো।
চোখ বুলা ইচ্ছে হলে চোখ দুটো নিয়ে ঘুরে যায়।আমি রাইমাকে নিয়ে গেলাম।

— রাইমা নামক ছোট্ট মেয়েটা জেনো প্রথম একজন পুরুষের কোল পেলো। বেচারি ডেপ ডেপ করে রাসেদের দিকে তাকিয়ে রয়।

মামা নামের তপু ব্যাক্তিরটা একদিনের জন্যেও রাইমাকে কোলে তুলে নেয়নি।তার ধারনা রাইমা এসেই সব ধংশ করেছে।
আর ওর বোনের কাল এই মেয়ে।

– রাসেদ কতটা গুলিয়ে গেছে রাইমার সঙ্গে তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝাই যাবেনা।

অনু একচিল হাসি দিয়ে রাসেদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
আমিও চাই রাসেদ ভাই তুমি রাইমার জন্যেই থাকো।
ওর একটা শক্ত লাঠি হও।
তোমার আঙুল ধরিয়ে জেনো হাটতে শেখাও।

— নিচে নিয়ে এসে কত ধরনের গল্প রাইমার সাথে।
৬ মাসের বাচ্চা কথার জবাব তো দূর রাসেদের বক বক বুঝতে পারছে কিনা জানা নেই।

তবুও রাসেদের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে মেয়েটা।
রাসেদের গালে বার বার এগিয়ে গাল ভিজিয়ে দিচ্ছে।আর মিষ্টি হাসি হাসছে।

শেফা ওদের কান্ডে মলিন হাসিতে মেতেছে।হাসির স্বরটা কেমন জেনো।বোদনার হাসির মত রাসেদ শেফার দিকে কিছুটা সময় চেয়ে আবার রাইমাকে নিয়ে মজলো।

——— রাত ১১ টা ঘড়ির কাটায়।
ছাদে একলা বসে রাসেদ।
কাধে আজও কারো স্পর্শ অনুভব হল।
আজ সে জানে সত্যি অনুই এসেছে।ওদের সিক্রেট স্থান রাতের আকাশের নিচে ছাদটা।
আজ অনুর সাথে না বলা অনেক কথাই হবে।
বলা হবে রাসেদের মনের কথা।
আবার অন্য দিকে তাদের কথা শুনতে এক জোরা কান আরি পেতেছে।
সেটা কি রাসেদের জানা?

চলবে……❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here