সমাধি পর্ব-১৮

#সমাধি
#পর্ব —১৮
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
____________________________

“- কিরে ঘুমাসনি!
— অনু চোখ গুলো ভাবনা সূচক করে নিয়েছে।কপালে কিছু ভাজ পরেছে।
পিছন না ফিরে জানলে কি করে আমি এসেছি!!

” কি ভাবিস তর স্পর্শ আমি অনূভব করতে পারিনা? নাকি শরিরের গন্ধ আমার চেনা নয়।

— রাসেদের এক উওর অনুর জন্য হাজার প্রশ্নের জবাব হয়।
অনু রাসেদের পাশে বসে দুজনেই আকাশের পানে।
দুজনের চোখে পানি ছল ছল।
কত দিন পর আবার দু’জনে এভাবে ছাদে এক সাথে বসে।

— রাইমা!!
“ও ঘুমিয়ে আছে। মা আছে পাশে।
ওহহ!!
” রাসেদ ভাই!!
হুম।
– তুমি কি রোজ এভাবেই বসে থাকো ছাদে?
আর তোমার পাশে এই চাদর বালিশ এগুলো কেন??
” রাসেদ অনুর প্রশ্নের উওর কিছু এমনটা দিলো যে অনুর মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।
— রুমে আমার ঘুম আসেনা অনু। ছাদে বসে থাকলে মনে হয় এই তুই এলি বলে।এসেই কোন বায়না নিয়ে হাজির হবি।
মুখ ভেঙচি দিয়ে চলে যাবি।

আর তখন যদি আমায় ছাদে না পাস? সেই ভয়ে রাতে এখানেই মাথা গুজি। মনে হয় আমি চলে যাবার পর তুই আসবি…

” (রাসেদ ভাই, বড্ড দেরি করে ফেলেছো। আমার যে তোমার সাথে ঘড় বাঁধা হবে না। তবুও কেন বার বার তোমার কথায় সেই মৃত্য ইচ্ছেটা জাগিয়ে দাও।
আমি যে আর পারিনা।
কেন এত ভালোবাসো আমায়!!
এই ভালোবাসা ছেরে যে আমার যেতে ইচ্ছে করবে না।
আর এতই ভালোবাসা কখনো তারিয়ে দাও কখনো আগলে নাও)

” কিরে কি ভাবছিস!!
— না কিছুনা ঐ এমনিই।
অনু চোখের পানিটা আরাল করতে পারছেনা তাই এখানে থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েও পারলোনা।

” বাঁধা হয়ে রাসেদ ওর সামনে।
কত কিছু লুকাতে শিখেছিস অনু!!
এখন আমার সামনে কান্না করতেও তর সমস্যা হয়??

কথাটা শেষ করতে না করতেই অনু রাসেদের বুকে লুটিয়ে পরেছে। রাসেদের পরনের সাদা পান্জাবি টা আকরে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠেছে।

রাসেদ দু- হাতে অনুকে নিজের বুকেই আগলে ধরেছে।
– তুই তো এমন করে কাঁদছিস জেনো মরন কান্না।
কিছুতো একটা চাপা তর মনে যা আমায় না বলতে পেরে তর চোখের পানিতে বুঝাচ্ছিস।

” অনু নিজেকে সামলে নিয়েছে।রাসেদের সামনে কান্না মানে নিজেকে দূর্বল করা। আর সাথে রাসেদ ভাইকে কষ্ট দেয়া।

— উওর দে!!
রাসেদ কে ছেরে অনু আবার চুপচাপ বসেছে।রাসেদও চুপচাপ বসেছে।
কিরে অনু.. এমন ভাব করে আছিস জেনো আমাদের প্রথম আলাপ হচ্ছে, তাই তর কথা বলতে সংকোচ হচ্ছে।

কথা শুরু টা হল শেফা কে নিয়ে। তোমার বাড়িতে ঐ মেয়েটাকে রাসেদ ভাই।
যে আমায় দেখে বলেছিলো আমি সেই ডায়রির পাতার অনুর কিনা।

“রাসেদ একটু চুপ থেকে শেফার পরিচয় জানালো।
মানুষ তো ছিলো মতি ভাই যে কিনা আমার মত পথের পথিক কে নিজের মনে ঠাই দিয়েছিলো।
আর তার বিনিময়ে আমি তার জান নিয়ে ওর বোনটাকে এতিম করে দিয়েছি।

— রাসেদ সব ঘটনা খুলে বললো।ঐদিন অনু চলে যাবার পর রাসেদের জীবন কিভাবে পাল্টে গেলো।আর শেফা তার জীবনের সামিল হল।

অনু সব শুনে এটা তো বুঝলো শেফার সাথে রাসেদের একটা সম্পর্ক তৈরি হতে পারত।
তবে হল না কেন??
নাকি হয়েছে বা হবার সম্ভবনা!!!

“- বড় বিশ্বাস করে ওর ভাই ওকে তোমার হাতে সপেছে।তা সেই হাতটা শক্ত করে ধরছোনা কেন??
— অনুর মুখে এমন কথাটাই আশা করছিলো।
কারন অনু একটু রেগেই যাবে জানতো।
তবে ওর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছেনা রাগ করেছে।বেশ শান্ত হয়েই কথাটা শেষ করেছে।

— কি বলছিস অনু!
দেখ শেফা আর আমি ভালো বন্ধু। ঐ চোখে শেফা কেন কাউকেই দেখিনি।
নিজের করে শুধু একজনের মুখ ভাসে আর সেটা হল…….

” অনু জানে কার নাম উচ্চারিত হবে, তবে নামটা সে শুনতে চায়না। সেখান থেকে ভো ভো করে চলে গেছে।
বেশ অপরাধী মনে হচ্ছে।আমি না এলে হয়তো শেফা আর রাসেদ ভাই একটা বাঁধনে বাঁধতো।আমি এসে ঐ মেয়েটার সুখের বাধা হলাম না তো!!

‘কেন মিছে আশায় নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে।
এসেছি যখন এবার সত্যি রাসেদ ভাইয়ের জীবনটা গুছিয়ে দিয়েই যাবো।
রাসেদ এখনও পিছন ফিরে. হুমমম শেফাকে হিংসা হচ্ছে।
পাগলি কোথাকার।এক বাচ্চার মা হলে কি হবে এখনও বাচ্চামু তো ওরই কাটেনি।
হালকা হেসে এখানেই মাথা হেলিয়ে দিয়েছে রাসেদ।

— শেফাও অনুর চলে যাবার পর সেখান থেকে চলে এসেছে। আজ শেফা তাদের ভালোবাসা নিজ চোখে দেখেছে।তাদের চোখে পানি থাকলেও বেশ উজ্জলতা ভাব ছিলো। মুখ দিয়ে শব্দ না বের হলেও তাদের হার্টবিট শুনতে পারছিলাম একে অপরের বাত্রা নিয়ে ছুটছিলো।

অনু তো ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে ছিলো রুমে যায়নি। পা চলছিলোনা।
তবে সিরি দিয়ে এবার শেফাকে নামতে দেখে একবারে ঘেমে একাকার হয়ে গেলো।
উনি ছাদে ছিলো?
কেন?
আমাদের কথা আরি পেতে শুনতে???
— শেফা অনুর সামনা সামনি হবে ভাবতে পারেনি। দু’জনই মাথা নত করে যে যার রুমে।
ঐ দিকে রাসেদ ভাবছে উল্টোটা। অনুর ভালোবাসায় বিভুর হয়ে রাত পার করার চিন্তা।

——————

” সপ্তাহ হল। তপুকে শাড়ির দোকানে লাগিয়ে দিয়েছে।
শেফার সাথে টুকটাক কাজ আকলিমা বেগমও করে। তবে শেফাতো বাঁধা দেয়। আর আকলিমা বেগম চায় এখানে থাকছি একটু কাজ করেই না হয়….৷।
এত দিন হল তবুও শেফা আর অনু কোন কথাই বলেনি।সত্যি তাদের একটু কথা বলার দরকার।
আসলে ওরা সামনা সামনি হলে কেমন একটা হাসি দিয়ে এরিয়ে চলে।দু’জনই দুজনের চোখে অপরাধী ভাবছে।

” রাসেদ রাইমার সাথে ঘুলমিলিয়ে গেছে।আর রাসেদের বাবাও।আমার ছেলেটা বিয়ে করে যদি আমায়ও নাতি নাতনিদের সুখ দিতো।

রাইমার ছোট্ট আঁখি দুটো রাসেদকেই খুজে বেড়ায়।কারন বেশি সময় তো দিতে পারেনা বাড়িতে।
তবে এক গাদা খেলনা এনে রেখেছে।রোজ রোজ আনে। ওর ভালো লাগে রাইমার জন্য কিছু আনতে।আর বাধা হয়ে অনু দাড়ায়। তাই রাসেদ সোজা বলে দিয়েছে।আমার মেয়ের জন্য কিছু আনবো তুমি বাধা দেবার কে??

“- তোমার মেয়ে??
প্রশ্ন টা করলেই রাসেদ নিজেকে আরাল করে নেয়।কারন এর উওর কি দিবে।মুখ ফসকে কি বলে দিলাম, রাইমা আমার মেয়ে না হলেও মেয়ের মতই তো।
এবার অনু রাইমার বাবা বলাটার অনুমতি দিলেই হল।

তবে রাসেদ এবার অনুর সামনে ঐ নীল শাড়িটা নিয়ে হাজির হবে আর ওর চোখে কষ্ট দেখতে পারবেনা।ওকে এবার সত্যি অর্থে সুখের অনুভব করাবে।
অনুকে নিজের করে পেতে আর্জি নিয়ে হাজির হবে ওর কাছে।

_________________________°°°°♥

“— একটু ফাকে রাইমাকে নিয়ে অনু শেফার রুমে পা রেখেছে।
“আপু! আসবো??
— কিছু একটা দেখছিলো শেফা অনুর শব্দে ভয় পেয়ে বালিশের নিচে রেখে হুর মুর করে উঠে বসেছে।
হ্যা এসো অনু।
শেফা অনুর চাইতে বড় তাই অনু শেফাকে আপু বলেই সম্মোধন করল।

– এক গাল হাসি দিয়ে রাইমাকে নিজের কাছে নিয়ে গেলো শেফা।
আসলে রাইমার সঙ্গে খেলায় ব্যাস্ত দেখাতে চাইছে।আর যে প্রশ্ন করতে অনু এসেছে তা এরিয়ে জেতে চাইছে। ওর চোখ দেখেই বুঝতে পারছে অনু কিছু প্রশ্ন নিয়েই হাজির হয়েছে।

— আপু!
” তুমি রাসেদ ভাইকে ভালোবাসো???
অনুর আচমকা এমন কথায় শেফা বেচারি বিচলিত।
অনু এসব কি বলছে??

– আমার থেকে লুকিয়ে লাভ নেই আপু।আমায় ছোট বোন হিসেবে মনে করো আর সত্যিটা বলো।
সত্যিটা জানা যে বেশ দরকার।

” শেফা একটু ভেবে অনুর সাথে সব শেয়ার করতে রাজি হল।কারন অনুরও কিছু জিনিস জানা দরকার।
— আমি বাসলেই কি না বাসলেই কি রাসেদ তো আমায় ভালোবাসেনা।আর না কোন দিন বাসবে।
“এত দিন ওর পাশে ছিলে তবুও কেন ওর মনের মানুষ হতে পারোনি আপু???
——- অনু তুমি একথা বলছো?
পাশে থাকলেই ভালোবাসা তৈরি হয় নাকি? তুমিও তো এত দিন রাসেদের থেকে দূরে ছিলে তা ওকে ভুলতে পেরেছো? না ঘিন্না করতে পারছো??
” অনুর মুখ বন্ধ।

পাশে থাকলেই ভালোবাসা জন্ম নেয় না, আর দূরে থাকলেই ভুলা যায় না অনু। তোমার অন্তত তা জানা উচিত।
শেফা তার কথা শেষ করতে চায়,জানা তে চায় সব তাই অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অনু কে জানায় রাসেদের হাল।

অনু রাসেদ তোমায় অনেক ভালোবাসে।তোমায় নিয়ে ভবনায় এতটা কাতর হয় তা তুমি জানোনা। পর পাশে থেকেও আমি চোখের আরালে ছিলাম।আর তুমি দূরে থেকেও মনের গহীনে।

যে মানুষটা অন্য কারো মুখে রাসেদ” ভাই” শব্দটা শুনতে চায়না তার মনে হবে অন্যের বাস। তা ভাবলে কি করে?

জানো অনু সব সময় ভাবতাম আমি রাসেদ ভাই বলে ডাকলে রাসেদ রাগ করত কেন? প্রথম তো ভেবেছিলাম অন্য কিছু ভাবে আমায় নিয়ে। তাই ভাই শব্দটা পছন্দ হয়না।
তার পর ওর ডায়রিটা খুলে আসল রহস্য জানলাম।

কারন রাসেদ ভাই বলে একজনই তাকে ডাকতে পারে।আর সে হল তার অনু…

“– অনু কেঁদে ভাসিয়ে ফেলছে কান্না থামছেইনা।
শেফা অনুর চোখ দুটো মুছে দিতে দিতে বলে উঠলো।বোন ডেকেছোনা?
তাহলে বোনের একটি কথা রাখবে??
— মাথা উচু করে অনু শেফার পানে তাকিয়ে।
কি বলতে চায় উনি,আমার থেকে মিথ্যা আশা উনিও রাখছেনা তো?
” পারলে রাসেদকে এবার একটু সুখ দাও।বয়স তো কম হয়নি।তবে আজ পর্যন্ত ভালোবাসাটাই কপালে জোটলোনা।
রাসেদ তোমায় অনেক ভালোবাসে অনু। তুমি যদি নাও আর ফিরতে তবুও রাসেদ তোমায় ভুলে সামনে চলতো না। সে তোমায় নিয়েই ডুবে রয় আর রবে।

আমার কথা বিশ্বাস না হলে ওর রুমে যাও।আর দেখো আলমারি থেকে বার কর ওর ডায়রিটা ।
দেখো ওর মনের আহাজারি। যা পড়ে পাথরের মন গলিয়ে দেবে।গিয়ে পড়ো পর মনের উতলা ঝর।গিয়ে পড়ো মনের মানুষের থেকে আলাদা হবার যন্ত্রণা।

গিয়ে দেখো ওর অনুর জন্য তার প্রথম বেতনের টাকায় কেনা সেই নীল শাড়িটা। যা প্রতিরাতে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
গিয়ে দেখো কতটা শূন্য রিদয়ে হাসি মাখা মুখ নিয়ে চলা ফেরা করে…..
গিয়ে দেখো অনুকে জীবন থেকে তারিয়ে সে কতটা নিশ্ব.. গিয়ে দেখো একবার ডায়রিটা খুলে।কিভাবে জীবন্ত লাশ চলা ফেরা করছে।.
এবার তো ওকে রেহাই দাও। এত দিন আরালে ছিলে, এখন দেখা দিয়ে তোমায় হারানোর ব্যাথা ভুলে যাবার নেশায় রাত কাটায়।
একটিবার আপন করে নাও।
এবার শেষ করো তোমাদের মান অভিমান আর দুজন দুজনকে আকরে ধরে শেষ থেকেই শুরু করো
অনু।

অনু হীনা তার রাসেদ ভাই মরে যাবে।
তুমি কি তা চাও!!!

★চলবে★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here