সমাধি পর্ব-২১

#সমাধি ❤️
#পর্ব —২১
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_________________________________

“এদিকে অনুকে দেখতে না পেয়ে রাসেদ বেশ ঝারা ঝারছে শেফাকে।
শেফার নিরবতা রাসেদের গরম মেজাজটা আরো পাকা পুক্ত করে তুলছে।
মেয়েটার শরিল ভালোনা রুমেও নেই।জিজ্ঞেস করলাম কোথায় জবাবও কি নেই!!!

—- তর প্রশ্নের জবাব ওর কাছে নেই।
” শেফা মাথা নত করে চুপ চাপ সেখান থেকে দূরে সরে দাড়ালো।কারন শেফা লজ্জিত রাসেদের দেয়া দায়িত্ব সে পালন করতে অক্ষম হয়েছে।সামান্য একটা কাজ পারল না।এই রাসেদের প্রতি অনুগত্য?

“রাসেদের মা হন হন করে রাসেদের কাছে চলে এসেছে।
রাসেদের বাবা কোন রকম উঠে এসে নিজের রুমটার দরজার সামনে দাড়িয়েছে।কি হচ্ছে বা হতে চলছে জানা দরকার।কারন ছেলেটা তো ওর একার নয় আমারও।
— রাসেদের হাজার প্রশ্ন সূচক চোখ তার মায়ের দিকে তাক করা।তাহলে মা অনুর কোথায় জানে!!
” মা অনু!!!
— দেখ রাসেদ তর সব ছেলে মানুষি সজৎ করেছি।এখন আর পারছিনা। আমাদের বয়স হয়েছে, আজ আছি কাল নেই। আর বয়স তরও তো কম হয়নি।
তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক সপ্তাহের মধ্যে শেফাকে বিয়ে করে সংসার শুরু করবি।
— রাগের আগুনে মা ঘি ঢালার কাজ নিয়েছে নাকি। শেফা ঢুক গিলে আরো চার কদম দূরে সরল। কারন রাসেদের চোখ ওকে আস্ত গিলতে পারে।
‘ মা বাজে কথা রেখে যা জিজ্ঞেস করলাম তার উওর দাও না।
অনু কোথায়!!

—- চলে গেছে…★
“চোখ দুটো ছোট করে কপালে ভাজ টেনে রাসেদ ওর মাকে পুনরায় প্রশ্ন করল। মা কি বললে আমি তো অনুর কথা জিজ্ঞেস করেছি।
অনু মা অনু আমার অনু কোথায়???
— চলে গেছে।
মায়ের থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে রাসেদের রাগান্বিত স্বরে আবারও অনুর খুজ।
মা অনু কোথায়?
– শক্ত পুক্ত হয়ে তার মায়ের সেম জবাব ” চলে গেছে।

তিন তিন বার রাসেদ একই প্রশ্ন করেছে যার উওর রাসেদের মা একটাই দিয়েছে।
— দাঁতে কটমট করে চেয়ারটা একটা আছরে ফেলে তার মাকে আবার সেম প্রশ্ন – আমি আবার জিজ্ঞেস করছি মা অনু কোথায়??
” ছেলের কান্ডে এবার একটু ভয় ভয় ভাব এসেছে রাসেদের মায়ের মুখে।

ওরা নেই।
-নেই মানে কি?
“- আর পারছেনা এক প্রশ্ন বার বার করছে উওর দিতে দিতে ক্লান্ত।এটা সেই উওর নয় যা রাসেদ শুনতে চায়। এটা ঐ উওর যা রাসেদকে জানাতে চায়।তবে রাসেদের কান এটা মানতে নারাজ।

— বললাম তো নেই নেই নেই।
চলে গেছে ওরা, আমিই ওদের তারিয়ে দিয়েছি। হয়েছে শান্তি হলি?আর কত রে আর কত? তর শান্তি ওদের সজৎ হয় না। তাই তো তোকে না তখন শান্তি তে থাকতে দিয়েছে না এখন।
” আরেকটা চেয়ার নিয়ে কাঁচের ডায়নিং টেবিলটা ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে।
সব তছ নছ করতে মন চাইছে।
— মা কে তো আর কিছু বলতে পারছে না তাই।
রাসেদেরই এই রাগ কবে জন্মালো? ওকে জন্ম দিয়েছি ঠিক তবে আজ অবদি তার এই রূপ চোখে পরেনি।
তুমি অনুকে তারিয়ে দিলে??
আমার অনুকে!!
সব শেষ করে দেবো আজ সব।
আমার অনু ওকে হারিয়েও আবার পেয়েছিলাম। একটু শান্তির ঘুম ঘুমাতে শুরু করেছিলাম আর তুমি আমার সেই ঘুম শেষ করে দিলে???

নিজেকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।আজ কেমন তার মরন দিন লাগছে।
রাসেদের মা বার বার রাসেদের কাছে আসতে চাইছে তবে রাসেদ ওর মায়ের থেকে দূরেই সরে আসছে।

মাহ!!তুমি না মা??
তুমিও তাই করলে যা অনুর মা এর আগে করেছিলো।তোমার আর অনুর মায়ের মধ্যে তফাত কি রইলো?
তোমায় নিয়ে কত গর্ব করতাম। আমার মা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মা।

আর তুমিই কিনা তিন জন অসহায় মানুষকে তারিয়ে দিলে?
এটাও ভাবলেনা অনু আমার জন্য কি? ওকে ছারা আমি বাঁচবো কিনা!!

— হাত খানিকটা কেটে গেছে রক্ত ঝরছে। শেফা সইতে না পেরে রাসেদের হাতটা ধরতেই গরম চোখ জোরা ওর দিকে ভর হয়েছে।
তুমি!!
তোমায় তো বলেছিলাম ওকে দেখে রাখতে। এই তোমার দেখা?? আমার অনুকে আটকাতে পারলেনা! একবার বললেনা রাসেদ আসা অবদি থেকে যাও অনু।

——- শেফা আপু বাড়িতে ছিলোনা ভাই।
মিহা!!
রাসেদ হন হন পায়ে মিহার দিকে এগিয়েছে।
মিহা কি হয়েছে বলতো। মা কি এমন করে পারলো ওদের তারাতে??

” ভাই মা শেফা আপুকে ঔষধ আনার বাহানায় বাজারে পাঠিয়ে দিয়ে মা অনু আপুর রুমে যায়।
আর যা তা বলে বসে।আসলে তোমার কষ্ট দেখে…….

— আমার কষ্ট নাহ? আমার কষ্ট যদি বুঝতি তরা তাহলে অনু বাড়ির বাহিরে নয় অনু আমার পাশে থাকতো।

আমি যাচ্ছি ওদের খুজতে।
অনু অসুস্থ।না জানি কোথায় আছে??
যদি ওদের পাই তাহলে এ বাড়িতে আর আনব না। এত বড় বাড়িতে যখন একটি কোনা ওদের জন্য হল না, চাইনা এমন বাড়ি।

আগে আমাদের তো এত বড় বাড়ি ছিলোনা মা। না টাকা পয়সা।তবে মায়া মমতা ছিলো মন ভরে।
তুমি টাকার মুখ দেখে পাল্টে গেলে মা?? ঠিক ওদেরই মত অহংকারী হয়ে উঠলে।

বাকা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে, রাসেদের কলিজা ছেরা মুখটার দিকে তাকিয়ে ওর মা।
রাসেদ আমি তো তর সুখের আশাই করেছিলাম বাবা।
শেষ কালে এসে ছেলের সংসারের মুখ দেকতে চাওয়া পাপ?? আমাদের কি ইচ্ছে হয়না ছেলেকে সংসার পেতে বৌ বাচ্চা সহ বেঁচে আছে দেখতে।
যদি পাপ হয় সেই চাওয়া, তবে দে আমায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দে।

— হুহহহ হা হা হা।
বিকট শব্দে হেসে উঠেছে রাসেদ। মা তোমায় ফাঁসিতে ঝুলানোর মত দূসাহস নেই, তবে ওদের না পেলে নিজে ঝুলতে পারব।

—————-★★

রাসেদ শত কষ্ট বুকে চেপে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। এখন কোথায় যাবো? সকালে বের হলেও ঢাকা হয়তো পৌছায়নি।পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হবে কারন ওরা বাসে যাবে।
অনুর আর তপুর ফোন ট্রাই তো করছে তবে জানা কথা বন্ধ পাবে।
কতটা ভরসা করে অনু আমার হাত ধরে এসেছে।এমন অপমান হওয়ার চাইতে তো ওরা ওখানেই ভালো ছিলো।

— ★★★

রাসেদের মা এসে স্বামীর চরনে বসেছে। কাঁন্নার গতী কমার চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
আমি তো ছেলের একটু সুখ চেয়েছিলাম।
বলো না তুমিই বলো অনু থাকলে রাসেদ কোন দিন শেফাকে নিয়ে ঘর বাধতো???

” হয়তো শেফাকে নিয়ে বাঁধতো না।তবে অনুকে নিয়ে তো নতুন করে শুরু করতে পারত!!
আর রাসেদের মা বলো তো, তুমি শেফাকে পুত্রবধূ হিসেবে চাও? নাকি রাসেদের জন্য বৌ?
যদি শেফাকে বিয়ে করতে জোর করো হয়তো রাসেদ তোমার আদেশ ফেলবেনা। কারন তোমার জেদের কাছে ছেলে মাথা নত করতে বাদ্ধ, তবে এমন না হয় বৌ মা ঘরে এলে ছেলেই না হারিয়ে যায়!!!
– একটু ভাবো রাসেদের মা।
যদি মনে করো অনুর চলে যাবার পর, রাসেদের সাথে শেফার বিয়েই সব মিটাবে। তাহলে ঐ বিয়েতে আমিও খুশি মনে হাজির হব। আর যদি মনে করো সব ধংশ হবে তাহলে অনুকে রাসেদ ফিরিয়ে আনলো তাকে বধূ রুপে বরন করো।
এক নারীই পারে ঘরকে নরক আর বেহেস্ত বানাতে।আল্লাহতাআলা দুইই নারীর হাতে দিয়েছেন।

— ভেবেছিলো নিজের স্বামী
তার মন বুঝতে তবে উনিও হাত উঠিয়ে নিলো?
তার মানে আমি ভুল করেছি?
ছেলের জীবন সাজাতে গিয়ে জীবনটা আরো নষ্ট করেছি?? যদি ছেলের সুখ অনুর সাথে থাকায় হয় তাহলে ঐ মেয়েটা?
যে একটু একটু করে মরন পথে চলছে,শুধু রাসেদের জন্য।

শেফাকে তো জলে ভাসিয়ে দেয়া যায়না।আর না রাসেদ বিহিন কাউকে বিয়েও করবে।
আচ্ছা ইসলামে তো চারটে বিয়ের সম্মতি দিয়েছে।তাহলে অনুকে আমি মানতে পারলে রাসেদ শেফাকে মানতে পারবেনা??
— তবে এতে অনুর মত/ রাসেদের মত/ দরকার। আর্থিক সমস্যাও নেই। তাহলেই তো হয়???

— রাসেদের মায়ের মাথায় কিছু পেচ ঘুরছে তা রাসেদের বাবা বুঝতে পেরে আগেই থামিয়ে দিলো।
আর মাথা ঘামিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করোনা রাসেদের মা। পরে সব হারিয়ে না বসতে হয়।

★★

শেফা সব কাঁচের টুকরো উঠাচ্ছে।মিহাও সাথে রয়েছে।আচমকা শেফা একটা টুকরো হাতে নিয়ে বলে উঠলো মানুষের মনটাও কি এভাবেই টুকরো হয়? নাকি আরো ছোট ছোট টুকরো হয়??
যদি মন টা সামনে এনে দেখতে পারতাম কত টা টুকরো হয়েছে।
বাড়িতে সবাই নিরব। রাসেদের মা সদর দরজায় দাড়িয়ে ছেলেটা বাড়ি ফিরলে সব ঠিক করে দেবে।
– শেফা ফ্লোরে বসে হাটুতে মাথা গুজেছে।মিহার স্বামী শব্দ ছারা চলাচল করছে। একেই ঘর জামাই এখন মুখ ফসকে কিছু বের হলে সবাই নিজেদের রাগ আমার উপরে ঝারবে।
তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।

“———–★★

কোন দিক যাবে রাসেদ ভাবতে পারছে না। তাই অনুর রাস্তায় হাটা শুরু। ওদের ঐ বাড়িতে যাওয়া যাক যেখান থেকে ওদের এনেছি।না পৌছালেও আমি যাবার আগে তো পৌছাবেই।যাবে আর কোথায়।

– চোখের পানি মুছে গাড়ি চালানো শুরু।অনুকে মা তারিয়ে দিলো।আর আমার ব্যাবহারটাও তেমন ঠিক হয়নি মাকে কি সব বলেছি।
শেফা বেচারি… আমার কারনে সবাই কষ্টে।কাউকেই সুখে রাখতে পারছিনা কাউকে না।
না পরিবার না অনু।

” যেতে যেতে ফোনটা হাতে নিয়ে শেফার ফোনে ছোট্ট মেসেজ —
টুং শব্দ হতেই শেফা ফোনটা হাতে নিতেই মুখ উজ্জল।

“- sry safa…
Onu ke antey jacii.. Joldi firbo….
ma kee dekeko.

শেফার সাথে ব্যাবহারটা বাজে হয়েছে তা বুঝতে পেরেছে।
মাথাটা কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে রাসেদের। অনুকে মিথ্যা আশা দিয়ে এনেছিলাম।
তবে এবার.. একেবারে নিজের বৌ করেই বাড়িতে উঠবো।
অনু রাজি না হলে জোর করে বিয়ে করব।আমার অনুকে চাই।
হয় অনু জীবনে ফিরবে নয়তো আমার জীবন বিধাতার কাছে।

মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন মা কেন এমনটা করল?
আর অনু? ওর কি একটু ভরসা ছিলোনা ওর রাসেদ ভাইয়ের উপর।
একটু অপেক্ষা তো করত।
নাহ মা বললো আর এমনি সব নিয়ে চলে গেলো।একবার ভাবলিনা অনু, তোকে একবার হারিয়ে আবার পেয়ে কতটা সুখ পেয়েছিলাম। একবার আমার সুখের কথা ভাবলিনা।
দাড়া আসছি থাপরিয়ে গাল ফাটিয়ে দিবো অপেক্ষায় থাক তর রাসেদ ভাই আসছে।।

( চলবো?)

রাদেসকি অনুর দেখা পাবে? নাকি দ্বিতিয় বারের মত হারিয়ে মায়ের কাছে পরাজীত হয়ে শেফাকে বিয়ে করতে বাদ্ধ হবে?
অনু আর রাসেদের এতটুকই সাথে চলা ছিলো? বিধাতা এর আগে ওদের জীবনে কিছু লিখছে? বা লিখবে? নাকি সব শেষ করে নুতন অধ্যায় শুরু করবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here