সমাধি পর্ব-২০

#সমাধি ❤️
#পর্ব —২০
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_______________________________________________
★★

“অনুর শরিল বেশ ঠান্ডা হয়ে আসছিলো, হবেই না কেন এত ঠান্ডার মধ্যেও চাদর গায়ে দেয়নি। এটা ওর পুরোনো রোগ শীতে গরম জামা না নেয়ার।
ইশ আমারই ভুল হয়েছে, ওকে বললে হয়তো নিয়ে নিতো।
রাসেদ নিজের গায়ের ব্লেজারটা অনুর গায়ে জরিয়ে দিয়েছে।

– আশে পাশে থাকা মানুষ গুলো হুমরি খেয়ে পড়েছে তাদের কাছে এটা তামাশার মতই।উপকারের হাত না বারালেও তামাশা দেখতে মানা নেই।

আগে বাড়ি গিয়ে বাড়িতেই ডাক্তার ডাকা যাক।এভাবে ওকে আমি সামাল দিতে পারব না।

—- অনুকে সি এন জি করে বাসায় নিয়ে এসেছে রাসেদ। সবাই ঘুমের মধ্যে সবাইকে জাগিয়ে তুলার মানে হয় না।মা এসব দেখলে আরো আমার উপরই রাগ দেখাবে। কারন অনুকে এখানে রাখার সিদ্ধান্তটা আমার ছিলো।

তবে শেফার চোখে ঘুম নেই,তবে কেন তা জানার সময় এখন রাসেদের নয়।

–গালে হাত দিয়ে শেফা সোফায় বসে সদর দরজায় চেয়ে। কখন রাসেদ আসবে সেই আশায়। এসে না আবার ঠান্ডার মধ্যে বাহিরে দারিয়ে থাকতে হয় তাই জেগে থাকা।

ডাক দেয়া মাত্রই দরজা খুলে দিয়েছিলো শেফা।
অনুকে কোলে দেখে শেফার চোখের যে ঘুম টুকু ছিলো তা কেটে গেছে।
“এটাও দেখার বাকি ছিলো।
আর কত রকমের কষ্ট হয় ভালোবাসায়!!!

— তবে অনুর চোখ বন্ধ দেখে শেফার কৌতূহলে বেরিয়ে এলো।কি হয়ছে ওর?? ওর চোখ বন্ধ কেন?

” শেফা ডাক্তারকে ফোন দাও জলদি। কথাটা টুক বলে অনুকে রাসেদ নিজের রুমেই নিয়ে এলো।
হাত পা ঠান্ডা তাই হাত পা গরম করার জন্য তৈল মালিশের সাহায্য নিলো।
— ডাক্তার কে ফোন দিয়ে ডেকে শেফা রাসেদের পিছু পিছু।শেফা ওর ভাইয়ের মতই উদার। এত কিছু না ভেবে অনুর জন্যেই ভাবছে।
এই নিয়ে তো কোন মাথা ব্যাথাই নেই।রাসেদ কেন অনুকে নিজের রুমে আনলো। বা ওর এত সেবাই করছে তা সজৎ হচ্ছেনা।
রাসেদের মুখটা শুকিয়ে আসছে।
বার বার শেফার দিকে তাকিয়ে পাগল পাগল হয়ে অনু অনু করে যাচ্ছে।

হয়তো একেই বলে ভালোবাসা। রাসেদের থেকে শেখা উচিত ভালোবাসতে হয় কিভাবে।নিস্বার্থ ভাবে শুধু তাকেই ভালোবাসা, তার জন্যেই বেঁচে থাকা। তার শ্বাসের সাথে নিজের শ্বাস মিশিয়ে নেয়া।
যেমন রাসেদ অনুকে বাসে ঠিক তেমন ভালোবাসা।

“শরিলে অনেক গরম কাপর দিয়ে দিলো কম্বল দিয়ে ঢেকে ও নিলো।
তবে এই পরিস্থিতিতে আকলিমা বেগমকে না ডাকলেই নয়।
কিছুক্ষনের মধ্যে ডাক্তার হাজির, আসতে একটু লেট হলেও, এসেছেন এটাই অনেক।

—– আকলিমা বেগম অনুর পাশে বসে চোখের জল ঝরানো ছারা আর কিছুই করতে পারছেনা।
“শরিল অনেক দূর্বল। খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছুই হয়তো ঠিক মত হয়না। তাই এই অবস্থা।
হালটা চেকটেক করে ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে বিদায় নিলো।

রাসেদের শ্বাস জেনো ফিরে এলো।আল্লাহ অনুর তেমন কিছু হয়নি। তোমার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।কালকেই ওকে হাসপাতালে নিয়ে বড় ডাক্তার দেখিয়ে নিবো।
– রাসেদের মুখে শান্তির বাসাত দেখে শেফার উতলা মনটাও শান্ত হল। অনুর শরিলটা এবার একটু গরম হয়েছে।হবে না কেন শেফা আর রাসেদ যে অনুর হাত পা মালিশ করতে করতে নিজেদের ঘামিয়ে নিয়েছে।

— শেফা নিজের প্রান বাঁচাতে অনুর সেবা করেছে।
রাসেদের ভিতর শেফার প্রান আর রাসেদের প্রান অনুর মধ্যে তাই সোজা হিসাব রাসেদকে শান্তিতে দেখতে চাইলে অনুকে ওর জন্যে চাই।সুস্থ সবল ওর সামনে চাই।

“- আকলিমা বেগম মেয়ের পাশে এখনও বসে। সব হারা মেয়েটা আমার। কোন দিন কপালে আর হয়তো সুখ নেই।
— রাসেদ অনুর মাথার পাশে বসে। এবার রাইমার কথা মাথায় আসতেই আকলিমা বেগমকে ঝারি দিয়েই রাইমার কথা জিজ্ঞেস করল।
” রাইমা! ও ও কি ঘুমিয়ে আছে? আপনি এখানে বসে কেন? ওর তো খিদে পেয়েছে হয়তো।আর অনুতো……
— চিন্তা করোনা রাসেদ রাইমার ফিডার দুধ খাওয়ার অভ্যাস আছে। তাই ওটাই খাইয়ে দিয়েছিলাম।
“নিশ্চুপ হয়ে রাসেদ আবার একটু বসলো।
শেফার দিকে তাকিয়ে কিছু ভেবে বলে উঠলো।
তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পরো। এখন আর সমস্যা নেই।

—- রাসেদ অনুর মাথার এক পাশে বসে।আকলিমা বেগমকে এক রকম জোর করেই রাইমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখানেতো কোন প্রয়োজন নেই।
শেফা রাসেদের প্রশ্ন এরিয়ে অনুর পায়ের পাশে বসেছে।
একবার অনুর পা ছোঁয়ার ইচ্ছা করছিলো। ভালোবাসার এমন মানুষ পাওয়া এই ভ্যাগবতী নারীর পা ছোয়ে দিলে হয়তে আমায়ও কেউ এত ভালোবাসতে।

নিরবতায় সবাই রাত পার করেছে রাত টা বেশ ভয়ংকর ছিলো।রাসেদের মনে কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা মনে হচ্ছিলো।
একটু চোখ বুঝলেই অনুকে হারিয়ে ফেলার মত নানান সপ্নে বিভুর হচ্ছে।
যে ঘুমের জন্য সপ্ন দেখা হয়। আর সেই সপ্নে অনুকে হারানোর ভয় হয়। চাইনা এমন সপ্ন চাইনা এমন ঘুম দরকার হলে সারা জীবন জেগে কাটাবো।

——————————___________-★

“- সবাই ঘুমিয়ে ছিলো মরে যায়নি। যে বাড়িতে কি হচ্ছে খবর পাওয়াই যাবেনা।
রাসেদের পরিবার সব জানে, আর একটু রেগেই রয়েছে। উটকো ঝামেলা জুটলো ছেলে টা আমার, অশান্তি তে আছে। আমার ছেলেটার জীবন কবে নরমাল হবে।??

— সকাল সকাল রাসেদকে বেরুতে হবে। ইশশ অনুকে ছেরে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। তবে ইমারজেন্সি।
না পারছি থাকতে না যেতে। দোকানের জন্য ইন্ডিয়া থেকে যে শাড়ি গুলো এনেছি, সেই শাড়ি সহ ট্রাক পুলিশের হাতে। কিসব ঝামেলা হয়েছে। না গেলে আম ছালা সব যাবে।

” এক কাপ চা নিয়ে শেফা রাসেদের সামনে হাজির। আর রাসেদের সমস্যার সমাধান নিয়েও।
-তুমি যাও রাসেদ। অনুকে আমি দেখে রাখবো।
“চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাসেদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। শেফা আরেকটা কথা…
জানি এটাইতো বলবে কোন রকম সমস্যা হলেই জেনো তোমায় জানাই”

রাসেদের মাথায় কিছু ঢুকলোনা শেফা রাসেদের মনের খবর এত ভালো ভাবে বুঝে কেন??
আমায় বুঝার কোন বই বাজারে পাওয়া যায়??
নাকি আমায় নিয়ে শেফার আগ্রহ বেশি তাই সেই আগ্রহয়ে আমাকে জানা হয়ে গেছে।

— খালি পেটে জেতে নেই।তাই না খাইয়ে শেফা ছারলই না। ঝটপট কিছু বানিয়ে রাসেদের পেট ভর্তি করল।কখন না কখন খায় আর বাহিরের খাবার না খাওয়াই ভালো।
যাবার আগে অনুকে আরেকবার দেখে গেলো। অনুর কপালে একটু ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে রাইমাকে বায় বলেই বেরিয়ে গেলো।

———★★

” নাস্তা রান্নায় ব্যাস্ত শেফা। অনু উঠে গেছে।মাথাটা এখনও ঝিম ঝিম করছে। নিজেকে রাসেদের রুমে পেয়ে একটু ভাবুক হয়ে উঠলো।কালকের সকল ঘটনা মনে হতে থাকলো। আমার একটু অসুস্থতার জন্য রাসেদ কতটা পাগল পারা হয়েছিলো।
আর কাল থেকে আমার ছোট্ট মেয়েটার খুজ নেই
তাই রাসেদের ঘরটা ছেরে রাইমার কাছে পৌছেছে অনু।

শেফা কাজ করছে আর বার বার অনুকে দেখতে ছুটে আসছে। রাসেদ ওকে যে অনুর দায়িত্ব্য দিয়ে গেছে।
সেই দায়িত্ব্যের অবমাননা করে রাসেদ কে কষ্ট দিতে চাইনা। আমি চাই রাসেদ সব সময় হাসি খুশি টেনশন ফ্রি থাকুক।

“- আকলিমা অনুর পাশে বসে অনুকে কিছু বুঝানোর চেষ্টায় ব্যার্থ কারন শত বুঝিয়েও ফলাফল –০। রাসদের থেকে আর কত দিন নিজেকে আরালে রাখবি!
কাল আমি নিজ চোখে দেখিছি অনু।রাসেদ তর জন্য কতটা পাগল কতটা উতলা হয়ে উঠেছিলো, কতটা ভয়ে ছিলো তোকে না আবার হারিয়ে ফেলে।তাহলে কেন ওর কষ্ট বারাতে চাস তুই!!!!
আকলিমা বেগমের কথার উওর তো অনুর কাছে নেই তবে অনুর শরিলটা এখন পুরো পুরি ঠিক নয়। বার বার বমি আসছে।

——————–***★
★★

” শেফা! মা যাতো তর খালুর ঔষধ গুলো ফুরিয়ে গেছে, তুই গিয়ে নিয়ে আয়না।
– শেফা রান্নায় মনযোগী হয়েই কাজ করতে করতে মানা করে দিলো।খালা অনুকে জলদি নাস্তা দিতে হবে। ওর ঔষধ খাওয়ার সময় হয়েছে।আর এখনও নাস্তা তৈরি হল না, যাই কি করে বলুন। অন্য কাউকে পাঠান না ।
” তুই ঐ মেয়েটার জন্য আমায় মানা করলি শেফা!!
ইমোশনাল ড্রামা পার্ট।
আহ খালা ঔষধ আনতে গেলে এসব কে করবে।আর মানা করলাম কই।
আমি কাউকে পাঠিয়ে ঔষধ আনাচ্ছি তাহলেই হল।

— রাসেদের মায়ের শেফার কথায় মন খুশি হল না। শেফাকে বাড়িতে থেকে বের না করলে ওর প্লেন কাজ করবে না।

” একটু কড়া গলায় বলে দেখবো? না না মেয়েটা মনে কষ্ট পাবে এমনিতেই কি কষ্ট কম!
শেফাকে বের করে রাসেদের জীবনটা সুন্দর জেনো হয় সেই কাজটিই করব। তাই তো বাহানায় পাঠাতে চাইছি।আর মেয়েটা জেদ ধরেছে ঐ অনুর জন্যে।

” ওহহ।
হ্যা আমরা তো বুড়ো হয়ে গেছি।বুড়ো মানুষের কথার দাম আছে নাকি।থাক আমিই যাই কি করব স্বামী অসুস্থ আমিতো আর বাহানা দিয়ে বসে থাকতে পারিনা।
—- শেফা চামচটা রেখে রাসেদের মায়ের পাতা ফাঁদে পা টা দিয়ে বসলো।
আহ রাগ করবেন না খালা উম্মাহহ। এখনই এনে দিচ্ছি।
রাসেদের মায়ের গালে একটা চুমু দিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টায় শেফা।
“- তবে জেতে জেতে শেফা পিছন তাকিয়ে রাসেদের আদেশ জানালো।খালা!
রাসেদ কিন্তু আমায় অনুকে দেখে রাখতে বলেছে।আমি যতক্ষন না ফিরি অনুকে একটু…..

আরেহ হ্যা হ্যা সে বলতে হবে? তুই যা না। আর এত হরবরিতে যাসনা ধিরে সুস্থে যা, নয়তো কোন কান্ড বাঁধাবি।
“- শেফা তো সরল মনে রাসেদের মায়ের কাঁধে অনুর দায়িত্ব্যটা দিয়ে বার হল।তবে সেই দায়িত্ব্য পালন হবে তো???

—————

এই নিয়ে তিন বার ওয়াস রুমে ছুটলো অনু। মুখে নাকে কি লাল লাল দেখা যাচ্ছে। আকলিমা বেগম ভয় পেয়ে রাসেদকে ফোন দিতে গেলেই বাধা।
না না মা রাসেদ ভাইকে ফোন দিও না ওকে কিছু বলোনা।
— অনু তর ব্যাপারটা রাসেদকে আর না জানিয়ে পারলাম না।তুই ছার ওকে জানাতেই হবে সব ।
” আহ মা ও একটা কাজে গেছে, কেন ওকে টেনশন দিচ্ছো আমি ঠিক আছি।

— যাক দেরিতেই সই বুঝলেতো রাসেদকে তোমরা কতটা টেনশনে রেখেছো!!! কাল হয়ে আমার ছেলেটাকে আর কতটা গিলতে খেতে চাও মা মেয়েরা???

” মা মেয়ে অবাক নয়নে দরজায় দাড়িয়ে থাকা মানুষটার পানে তাকিয়ে।
এমন বললো কেন উনি? রাসেদ ভাইকে আমরা টেনশনে রাখছি, আর উনার কাল আমরা?। আর মিথ্যাও বলেনি।

—————————————★★

” দুপুর গরিয়ে এলো হন্ত দন্ত হয়ে রাসেদ বাড়িতে ফিরল এসেই অনুর খুজ করতে ছোটলো।
তবে অনু না ওর রুমে না নিজের।
কোথায় অনু???

– রাসেদ আবার নিচে আসার জন্য পা বারাতেই শেফার দেখা।
শেফা অনু কোথায়? ওর শরিল এখন কেমন???
” নিরব শেফা রাসেদের চোখে চোখ রাখতে পারছেনা কি বলবে শেফা।বলার তো কোন ভাষাই পাচ্ছে না।

শেফার চুপ চাপ থাকা আর ওর এমন মুখ দেখে রাসেদের মেজাজ খারাপ।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি অনু কোথায়!

—- রাসেদের ধমকে শেফা ভয়ে চুপসে গেছে—-
রাসেদ অনু আসলে আমি…

(চলবে)

( কয়দিন ধরে পেজে ঢুকতে পারছিলাম না , পেজে ঢুকতে গেলে আবার হোমে ফিরে আসা হয়।
কাল ঠিক হল সমস্যা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here