#সমাপ্তির_প্রহরে_সন্ধি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১৮
একে একে তিন কাফ কফি শেষ করলো বর্ণ। আর সেদিকেই তাকিয়ে আছে সায়মন। তাঁর নিজের উপর নাকি বর্ণের উপর বিরক্ত হওয়া উচিত সে বুঝতে পারছে না। সে কি করে এতো ধৈর্য নিয়ে বর্ণের প্রতিটা কফির শুরু থেকে শেষ অবধি অপেক্ষা করছে সেটা বুঝে পেলো না। কখন থেকে ভাবছে,এই বুঝি কিছু বললো বর্ণ। কিন্তু না বর্ণের কফি খাওয়া শেষ হচ্ছে, না বর্ণ কিছু বলছে। বর্ণ যখন তিন নাম্বার কফি শেষ করে চার নাম্বার কফির অর্ডার দিতে যাবে! তখন ইশারায় ওয়েটারকে সায়মন তাড়িয়ে দিলো। সায়মনের এমন কাজেও তেমন ভাবান্তর নেই বর্ণের মাঝে। এবার সায়মন বুঝতে পারলো আসলে বিরক্ত সে নিজের উপর নয় বর্ণের উপর।
_ শালা আমাকে কি ডেকে এনেছিস তোর কফির কাপ গোনার জন্য?
_ নদী আমায় ফিরিয়ে দিয়েছে! আর ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ দেখিয়েছে বাস্তবতা। তোর কি মনে হয় এখন আমার কি করা উচিৎ?
_ দেবদাস হয়ে পারুর পিছনে ঘোরা উচিত, আর তা না হলে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপন মনে হাসা উচিত।
_ তোর খারাপ বা অবাক লাগছে না।
_ খারাপ লাগবে কেন?
_ আমার জন্য।
_ তোকে তো সেই কবে থেকেই এভাবে দেখছি,তাই নতুন করে খারাপ লাগার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আর অবাক হওয়ার কথা বলছিস,নদী যদি তোকে মেনে নিতো,তাহলে অবাক হতাম। আমি তো জানতাম এমন কিছুই হবে।
_ শালা বোক**** তুই আমার বন্ধু নাকি ওর।
_ রেগে যাওয়ার মতো কিছু বললাম কী? যে অকারণে রেগে যাচ্ছিস।
_ আমি মেনে নিতে পারছি না, আমার ভালোবাসা এভাবে ও ফিরিয়ে দিয়েছে।
_ সত্যি বলতে বর্ণ,তুই নদীকে কখনোই বুঝতে পারিসনি।
_ তুই—-
_ আগে আমার কথা শেষ করতে দে! তারপর না-হয় যা বলার বলিস। শোন বর্ণ, নদী চুপচাপ, গম্ভীর, চাপাস্বভাবের এটা তুই ভালো করেই জানিস আমার থেকে। তোর কখনোই মনে হয়নি, একটা মেয়ে যখন আগে থেকেই জানতো তুই ওকে পছন্দ করিস! অথচ তাঁর মাঝে কেন তোকে নিয়ে কোন রিয়াকশন ছিলো না? তোর সাথে সব সময় কেমন স্বাভাবিক ব্যবহার করেছে,আগে যেমন করতো। আমার মনে প্রশ্ন জাগলে তোর মনে কেন জাগেনি এই প্রশ্নটা? এতো বছর যে মেয়ে তোর অনুভূতির সম্পের্ক জেনেও চেপে গেছে! সে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখছে না, সেটা তুই ভাবলি কি করে? আমার মনে হয় নদী নিজের অনুভূতি চাইলেই হাজার বছর তোর থেকে আড়াল করতে পারবে। তোর মনে হচ্ছে না এমন কিছু? আমার কিন্তু হচ্ছে। নদী ওর বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। চাচ্চুর কথায় নদী নিজের জীবন দিতেও রাজি। সেখানে জীবনের এমন একটা সিদ্ধান্তে তাঁর বাবা-র আড়লে কেন তোকে হ্যা বলবে? নদী হ্যা বললে আমি তো ওকে বেঈমান উপাধি দিতাম। বলতাম অন্তত চাচার মেয়ে হওয়ার কোন অধিকার নেই নদীর। তুই কি জানিস হঠাৎ বিয়েটা কেন ঠিক হয়েছে? জানিস না। তবুও কখনো ওকে প্রশ্ন করেছিস, কেন বিয়েতে ও রাজি হয়েছে। যেখানে তোদের পরিবারের কিছু হলে,পরিবারের প্রতিটা সদস্য জানে, সেখানে নদীর বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর তোরা কেন জানলি? তোর চাচ্চু নদীকে নিয়ে এতো পজিটিভ, অথচ সে এতো তাড়াতাড়ি নিজের আদরের ছোট রাজকন্যার বিয়ে ঠিক করলেন। কেন?প্রশ্ন জেগেছে মনে? আমি জানি জাগেনি। আগে নদীকে বুঝতে চেষ্টা কর, তারপর ভালোবাসার দাবি নিয়ে ওর সামনে দাঁড়াস। যেখানে তুই ওকে বুঝিসই না,সেখানে ভালোবাসা দাবি করা বোকামি। সেদিন তো তুই বললি,তোদের আপন কেউ ওকে আঘাত করছে,তোদেরি অগোচরে, যেটা তোর বড় ফুপির মুখে তুই শুনেছিস! একবারও ওকে জিজ্ঞেস করেছিস মানুষটা কে? কে ওকে কষ্ট দিচ্ছে তোদের আড়ালে। খোঁজ নে কে সে? নদীকে আর ওর পরিবারকে এটা বোঝা তুই সব থেকে বেশি ওকে আগলে রাখতে পারবি। নদী তোর কাছে সব থেকে বেশি ভালো থাকবে। নদীর পরিবারকে তোকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য কর। তাঁদের বংশের ছেলে হিসেবে তোকে তাঁরা পছন্দ করে,নিশ্চয়ই মেয়ে জামাই হিসেবে নয়। তাঁদের সেই চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দে,তাঁরা চাইলে তুইও নদীকে বিয়ে করতে পারিস।
তাঁরা নিশ্চয়ই শাওনের মাঝে এমন কিছু দেখেছে,যেটা তোর মাঝে নেই। আমরা নিজেরা বলি কিন্তু! লাভে লোহা বয়,বিনা লাভে তুলাও কেউ বয় না। যেখানে শাওন এতো সুন্দর করে তাঁদের মেয়েকে আগলে রাখছে,সেখানে তুই তো নদীকে বুঝিসই না! তাহলে কি দেখে নদীকে তোর সাথে তাঁরা বিয়ে দিবে! আর নদীই বা কেন তোকে ভালোবাসবে। আর আমার মন বলছে,নদী তোকে ভালো না বাসলেও,তোর প্রতি ও দূর্বল।
_ আমি তোর সব কথা মেনে নিলেও,নদী আমার প্রতি দূর্বল এটা মেনে নিতে পারছি না।
_ তুই ভালোবাসলেও,ভালোবাসার অংক গুলো সমাধান করতে শিখিসনি। সময় যখন কথা বলবে,সর্বপ্রথম আমার কথাটা মনে করিস।
_ আমার করণীয় কী সে ব্যাপারে বল।
_ নদীকে সময় দেওয়া,ওকে বোঝার চেষ্টা করা।
_ কীভাবে? পরিবার, চাকরি সব থেকে হুট করেই ওর কাছে কীভাবে যাবো। আর ওকে সময়ও বা কীভাবে দিবো?
_ তুমি গাছের আগাও খাবে,গোড়ার জন্যও অপেক্ষা করবে এটা কীভাবে সম্ভব?
_ দেখ ঘুরিয়ে পিছিয়ে কথা না বলে সরাসরি বল?
_ দুই মাসের জন্য চাকরি ছেড়ে দে। বাড়িতে বল,নতুন চাকরির জন্য প্রিপ্রারেশন নিচ্ছিস। বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাইছিস। আর শুরুটা খুলনা দিয়ে করতে চাইছিস। নিজের খেয়ে আর কত পরের মহিষ তাড়াবো বলতো। স্যারের সাথে আমরা কথা বলে, বাড়ির কাজগুলো তোকে সাজেস্ট করবো। তুই সেগুলো অবসরে করে রাখবি। হয়তো বেতন কম পাবি! কিছু পেতে হলে তো কিছু হারাতেই হবে তাই না।
_ তোর কী মনে হয় কাজ হবে?
_ এতো বুদ্ধি দেওয়ার পরেও যদি তুই কাজটা করতে বৃথা হয়ে যাস,দোষ কি তাহলে আমার?
_ আমি সেটা বলিনি। আচ্ছা সেটা না-হয় করলাম,কিন্তু– আচ্ছা বাকিটা আমি দেখছি।
_ হুম এই তো বুদ্ধি এসেছে মাথায়।
_ তুই যতোটা সহজ ভাবে বলছিস ওতোটা সহজে কি কাজটা হবে?
_ সহজ হবে তোকে কে বললো? সহজ করে নিতে হবে।
_ সহজ করতে হবে।
_ হুম
_ কীভাবে?
_ আঙ্কেলকে,মানে তোর বাবাকে রাজি করাতে হবে তোকে।
_ বাবাকে,মানে কেমনে কী?
_ তুই আঙ্কেলকে বলবি তুই একটা মেয়েকে পছন্দ করিস, এবং ভালোবাসিস। কিন্তু তুই বর্তমানে যে পজিশনে আছিস,তাতে সেই মেয়ে পাওয়া অসম্ভব। তাই তোকে আরো ভালো পজিশনে যেতে হবে।
_ তোর মাথা খারাপ হয়েছে, আমি বাবাকে এসব বলবো।
_ না বললে থাকো পরে! ভালোবাসা অন্য কারো হয়ে যাক সেটা দেখো,আর আঙুল চো**সো
_ প্লিজ ভাই
_ শোন আমরা যাকে সব থেকে বেশি ভয় পেয়ে মনের গোপন কথা বলতে নারাজ! আসলে বিপদে সেই আমাদের বেশি সাহায্য করে।
_ তুই বলতে চাইছিস আব্বু আমায় সাহায্য করবে।
_ হুম করবে,এবং বিষয়টা গোপনও রাখবে। শুধু মেয়েটা যে নদী এটা বলবি না,হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ যেখানে তাঁর ভাইয়ের সম্মান জড়িয়ে আছে, সেখানে সে কখনোই চাইবে না নিজের ছেলের সুখের জন্য তাঁর ভাইয়ের অসম্মান হোক।
_ আচ্ছা, যদি কাজ না হয়।
_ ১০০% কাজ হবে,আমি গ্যারান্টি সহকারে বলছি। শুধু কাজটা যদি তুই সঠিক ভাবে করতে পারিস
_ বুঝিস কিন্তু
_ এতো বুদ্ধি দিলাম তোকে,কোথায় তুই বায়োবাহ্ দিবি,তা না করে তুই–
_ ঠিক আছে, কি খাবি বল।
_ আপাতত লাঞ্চ করবো,কাজ হলে না-হয় মিষ্টিমুখ করবো।
_ ইয়ার তুই না হলে আমি আজ কি করতাম জানি না।
_ হয়েছে আর সুনাম করতে হবে না। ফ্রীতে এতো পরামর্শ দিয়ে যে আমার পেট খালি করলাম,তাঁর বদলে সুনাম না করে আপাতত পেট ভর তাতেই হবে।
বন্ধুর কথায় বর্ণ হেঁসে ফেললো। সত্যি এরকম বন্ধু থাকলে জীবনে হাজারবার বিপদে পরতে রাজি আছি। কারণ বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য এমন একটা বন্ধু আছে তো?
————-
অহেতুক আমার কান ভারী করো না পারভীন, কারণ এবার আমি তোমার কোন কথাই শুনছি না।
_ আমি তোমার কান ভারী করছি, এতো বড় অপবাদ তুমি আমায় দিতে পারলে।
_ না দেওয়ার মতো কিছু করেছো পারভীন। আমি সেদিনের ঘটনা কিন্তু ভুলিনি। তোমার একটা ভুলের জন্য আমার বাবা সমতুল্য ভাইটা মরতে মরতে বেঁচে গেছে। শুধুমাত্র ভাইয়ের আদেশে তোমায় কিছু বলিনি। সেদিন যদি তুমি আমায় একটা ফোন করতে, আমার ভাইকে টানা দু’দিন হাসপাতালের বেডে কষ্ট পেতে হতো না।
_ এখন সব দোষ আমার হয়ে গেলো। তুমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে! সেদিন যা করেছি আমি ভুল করেছি ?
_ হ্যা তুমি ভুল করেছো।
_ না আমি ভুল করিনি। অন্য কারো ভালো করতে গিয়ে আমি নিজের ক্ষতি করতে পারি না।
_ অন্তত আমায় একটা বারের জন্য ফোন করতে?
_ ফোন করলে কী হতো,টাকা কোথায় পেতে?
_ দরকার হলে ধার করে আনতাম, চুরি করতাম, ডাকাতি করতাম তবুও ভাইকে কষ্ট পেতে দিতাম না।
_ বাহ্ ভাইয়ের জন্য দেখছি দরদ একদম উতলে উঠছে। সেদিন মেয়ের সর্বনাস হতে পারতো,সেটা কেন ভুলে যাচ্ছো।
_ আয়শার অপারেশন দু’দিন পরে করলেও কোন ক্ষতি হতো না।
_ আমার মেয়ে এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথায় হাসপাতালের বেডে কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলো আর তুমি বলছো দু’দিন পরে করলে অসুবিধা হতো না।
_ না হতো না। আমার ভাই ব্রেনস্টোক করেছিলো। তাঁর মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছিলো! ইমারজেন্সি অপারেশন না করালে তিনি মুহূর্তেই মা-রা যেতো।তোমার ছোট্ট ভুলের জন্য আমার বড় ভাই আজ কারো কাছে ঋণী হয়ে গেছে। আর সেই ঋণ শোধ করতে হচ্ছে—–
_ আব্বু আসবো
শাহজাহান নিজের কথা শেষ করতে পারলেন না,তাঁর আগেই বর্ণের কন্ঠে চুপ হয়ে গেলেন। ছেলেকে দেখে রাগে গদগদ করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন পারভীন। হয়তো সকালের ঘটনার জন্য মা রেগে আছে এটাই ভাবলো বর্ণ। কিন্তু আসল রাগের কারণ বর্ণের কাছে অজানা। পারভীন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই শাহজাহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বর্ণকে ইশারায় কাছে ডাকলেন।
_ কিছু বলবে
_ আসলে আব্বু
_ কথা শেষ করো বর্ণ,অর্ধেক কথা বলা আমার পছন্দ না। এমনই মেজাজ বিগড়ে দিয়েছে তোমার মা,তুমি বাকিটা বিগড়ে দিও না।
_ আব্বু আমি বিপদে পরেছি,যদি তুমি সাহায্য করতে।
_ বিপদে পড়েছো তুমি।
_ হ্যা আব্বু
_ কেমন বিপদ
খুব সিরিয়াস মুখ করে বর্ণের দিকে তাকালেন শাহজাহান। বাবাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সঞ্চয় করে আনা সকল সাহস হারিয়ে গেলো। তবুও তাঁকে তো শেষ একটা চেষ্টা করতেই হবে। যেহেতু নদী পিছিয়ে আছে,তাহলে বর্ণকেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই বুকে ফুঁ দিয়ে মনে মনে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়লো।
_ আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করি,ওকে বিয়ে করতে হলে আমাকে আরো ভালো পজিশনে এগিয়ে যেতে হবে। ওই মেয়ের বাবা খুব কড়া একজন মানুষ। তাঁর মেয়েকে বিয়ে করতে হলে,আমাকে এই চাকরি করলে হবে না। আরো ভালো চাকরি করতে হবে। আর ভালো চাকরি পেতে হলে আমায় প্রিপ্রারেশন নেওয়ার প্রয়োজন। ইন্টারভিউ দিতে হবে বিভিন্ন জায়গায়। আমি শুরুটা খুলনা থেকে করতে চাই। মানে চাচ্চুদের ওখানে। ওখানে ডিসি অফিসে প্রথমে ইন্টারভিউ দিবো,তাঁর জন্য আগে চাচ্চুদের বাড়িতে বসে রিলাক্স নিতে হবে। মা রেগে আছে,এখানে বসে আমার তেমন কোন প্রিপ্রারেশন নেওয়ার প্রবণতা থাকবে না। এই কথা মা’কে বলতে পারবো না,তাই তোমায় বললাম। এবার তোমাকেই আমায় সাহায্য করতে হবে।
একদমে কথাগুলো বলেই বর্ণ নিজের বাবা-র পা জড়িয়ে ধরলো। মাথা নিচু করে বাবা-র পা জড়িয়ে বসে পড়লো। এসব কথা বলার পর বাবা-র চোখের দিকে তাকানো অসম্ভব। আর ছেলের এমন কান্ডে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শাহজাহান। তিনি দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে পারছে না, বারবার ছয় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুইয়ে দুইয়ে তো চারই হওয়ার কথা ছয় নয়। তাহলে তাঁর শান্ত ছেলে এমন অভদ্র হলো কখন। যে ছেলে নিজের প্রয়োজনও কখনো মুখ ফুটে বলেনি,সেখানে প্রেমের কথা গরগর করে বলে দিলো। তাহলে কি শোনা কথাটা সত্যি! প্রেমে পড়লে মানুষ মিথ্যাবাদি আর বেহায়ায় পরিণত হয়। মনের কথা গুলো মনে চাপিয়ে তিনি মুখ খুললেন।
_ কিন্তু–
_ দয়া করো আব্বু,তুমি না করো না। আমি সত্যি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি আব্বু। আমি সামান্য কারণে ওকে হারাতে চাই না। তুমি আমার শেষ ভরসা। মাত্র দু’মাস আব্বু,এই দু-মাসে ওর যোগ্য হয়ে আমি ওর সামনে দাঁড়াতে চাই। তুমি দয়া করে মা’কে বোঝাও। আমি নিতে পারছি না আব্বু এই মানুষিক যন্ত্রণা। তুমি আমায় একটু সাহায্য করো। তুমি—
_ যে কথাগুলো তুমি একদমে বললে তা কারো সাজানো কথা তাই না বর্ণ?
বাবা-র কথায় ভেজা চোখ তুলে তাকালো বর্ণ। বর্ণের চোখ মুছিয়ে শাহজাহান ছেলের মাথায় হাত রাখলেন। চুলে হাত বুলিয়ে বললেন–
_ আমার পা জড়িয়ে ধরে যে কথাগুলো তুমি বলেছো, সেগুলো তোমার অনুভূতি প্রকাশ করেছো। আর তাঁর আগে যে কথাগুলো তুমি বলেছো,তা কারো শিখিয়ে দেওয়া। শিখিয়ে দেওয়া ভাষা কখনো কারো মন ছুঁতে পারে না! কিন্তু আমরা যে ভাষাগুলোকে ভাবি এলোমেলো, আসলে সেই ভাষাগুলোই কারো অন্তর ছুঁয়ে দিতে সক্ষম। মনে রেখো বর্ণ, কারো মন ছুঁয়ে দেওয়া বড় কঠিন কাজ। আর একবার যদি তুমি কারো মন ছুঁয়ে দিতে সক্ষম হও,তাহলে তাঁকে নিয়ে পুরো পৃথিবী জয় করতে পারবে। আমি জানিনা তুমি ওই মেয়ের মন জয় করতে পেরেছো কিনা? কিন্তু বাবা হিসেবে আমি তোমায় সাজেস্ট করবো,মেয়ের বাবা-র চোখে হিরো হওয়ার আগে, তুমি ওই মেয়ের চোখে হিরো হও! কারণ একজন মেয়ের চোখে সর্বপ্রথম হিরো তাঁর বাবা। তাঁর বাবা-র মতো হিরো হওয়া সহজ নয়। আমি তোমায় সাহায্য করবো। আমার দিক থেকে তোমায় আমি সব রকমের সাহায্য করবো। এই ভরসা আমি তোমায় দিলাম। কিন্তু আমায় কথা দিতে হবে,যে কাজে তুমি যাচ্ছো,সে কাজে তোমায় সফল হতে হবে। কারণ আমি একজন বাবা হয়ে কখনোই চাই না অন্য কোন বাবা-র চোখে তুমি খারাপ হও। আমার কাছে তুমি যে-মন বেস্ট একজন সন্তান, তেমনি ওই মেয়ের বাবা-র চোখেও যেন তাঁর সন্তানের জন্য বেছে নেওয়া বেস্ট একজন সন্তান হতে পারো। তুমি কী কথা দিচ্ছো আমায়।
বাবা-র মুখে এমন আবেগ প্রবণ কথা শুনে বর্ণ শাহজাহান সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো। অতি খুশির কারণে শিশির বিন্দুর মতো জল গড়িয়ে পড়লো। মাথা দুলিয়ে কথা দিলো, সে পারবে। তাঁকে যে পারতেই হবে।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,#সমাপ্তির_প্রহরে_সন্ধি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১৯
কিছু অপেক্ষা দীর্ঘ হোক।
তবুও মানুষটা আমারি হোক।
রাখবো আদর যত্নে,
মনের খুব গহীনে।
হাঁটি হাঁটি পায়ে এগিয়ে চলছে বর্ণ তাঁর ভালোবাসার মানুষের কাছে। আসার পথে অনেকটাই ঝামেলা করেছেন পারভীন। কিন্তু সকল বাঁধা পেরিয়ে অবশেষে বর্ণ নদীদের বাড়ির সামনে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ফোনে যা বলার তাঁর বাবা বলেছেন তাঁর ভাইকে। তিনিও বেস খুশি হয়েছে ভাইপো তার বাড়িতে থেকে নতুন কিছু করবে এটা শুনে। হাতের ধূসর রঙের ঘড়ি টায় একবার চোখ বোলালো বর্ণ,সাতটা ছত্রিশ। ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে এবার জোর পায়ে দরজার সামনে এগিয়ে গেলো। কলিং বেল বাজালো। অনেকটা সময় হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ দরজা খুলছে না দেখে একটু অবাক হলো বর্ণ। এমনটা তো হওয়ার নয়!কোন সমস্যা কী? কি ভেবে আরে একবার দরজায় হাত দিয়ে টোকা দিলো। এবার দরজা খুলে দিলো মোহন। মোহন বর্ণকে দেখে হাসিমুখে বললো।
_ বর্ণ ভাইয়া আসেন,আসলে ঘরে পড়ছিলাম তো, তাই দরজা খুলতে একটু দেরি হলো।
_ না ঠিক আছে সমস্যা নেই। বাড়িতে কেউ নেই?
_ না,ছোট আপুর জ্বর এসেছে গায়ে। ওকে নিয়ে মা ডাক্তারের কাছে গেছে। বড় আপু বান্ধবীর বাড়ি,ভাবি আর ভাইয়া ঘুরতে গেছে, বাবা হয়তো ঘরেই আছে।
নদীর জ্বর এসেছে শুনে বর্ণের হাসিখুশি মুখটা নিমিষেই মিহিয়ে গেলো। হঠাৎ অস্থির লাগতে শুরু করলো বুকের ভেতরে। নিজের অস্থিরতা লুকিয়ে মোহনের উদ্দেশ্যে বললো–
_ আমি যে আসবো তুই জানতি?
_ হুম,বাবা বলেছেন। চলো ভেতরে চলো! মা তোমার ঘর গুছিয়ে রেখে গেছে। আসলে আম্মু একটু ব্যস্ত। তুমি তো জানোই নদী আপুকে নিয়ে সবাই কেমন পজিটিভ সেখানে আপুর আজ দু’দিন ধরে জ্বর,কমার নামই নিচ্ছে না। তাই রাতের রান্নাটা করেই আম্মু আপুকে নিয়ে ছুটেছে ডাক্তারের কাছে।
_ হুম,তুই গিয়ে পড়তে বস। আমি ঘরে যাচ্ছি।
_ তোমার কিছু লাগবে?
_ না না,লাগলে বলবো।
_ আচ্ছা
মোহন চলে গেলো। বর্ণ ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। যতোটা আনন্দ নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছিলো,তা যেন নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে গেছে। কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে আয়নার মাঝে নিজেকে দেখতে রইলো। ভাবতে রইলো জীবনের কিছু অতীত। বর্ণ ছোট থেকেই নদীর প্রতি দূর্বল ছিলো। সবাই যখন ওকে নিয়ে মন্দ মন্তব্য করতো,তখন ওর খুব খারাপ লাগতো। কখনো কখনো ঘরের মধ্যে লুকিয়ে কাঁদত। একদিন নদীকে নিয়ে ওর স্কুলে গিয়েছিলো বর্ণ,সায়মনের সাথে দেখা করাতে। বর্ণ সব সময় নদীর গল্প সায়মনের সাথে করতো । একদিন ছোট্ট সায়মনও আবদার করেছিলো নদীকে দেখার। নদীকে নিয়ে যখন বড় চাচিরা তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে এলো,তখন বর্ণ বায়না করলো ওকে স্কুলে নিয়ে যাবে। ছোট্ট নদীও বর্ণের কোল থেকে নামবে না। সেদিন স্কুল থেকে শুরু করে পুরোটা সময় সায়মন আর বর্ণ নদীকে নিয়ে ঘুরেছে। আর ছোট্ট নদীও কেমন দু’টো মানুষের সাথে মিশে গেছে। সায়মন নদীর দু’টো আঙুল নেই এই সম্পর্কে জানতো না। ভুল করেই সে বর্ণকে জিজ্ঞেস করেছিলো! তোর বোনের দু’টো আঙুল নেই কেন বর্ণ? বর্ণ কি বলবে যেন খুঁজে পেলো না। তাই টানা দু’দিন স্কুলে যায়নি,এমনকি সায়মনের সাথেও কোন কথা বলেনি। বর্ণ ভেবেছে,সায়মন ইচ্ছে করে নদীকে ছোট করতে চেয়েছে। কিন্তু বর্ণ জানতো না,নদীর এই বিষয়ে সায়মন অবগত নয়। পরে সায়মন নিজেই বর্ণের সাথে কথা বলে সবটা পরিষ্কার করেছিলো। সায়মন বর্ণের রাগ হওয়ার ব্যপারটা সহজে ধরে ফেলেছিলো! তাই তো বন্ধুকে শান্ত করতেও তাঁর সময় লাগেনি। সেই থেকে আজও সায়মন নদীর সব বিষয়ে বর্ণকে হেল্প করে। সেদিনের সেই বোকামির কথা ভেবে ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। শুধু সেদিন কেন? এমন অনেক বোকামি সে করেছে। সব কিছু সে অল্পতেই বুঝে ফেললেও কেন জানি, নদীর বিষয়ে সে সব সময় বোকাই রয়ে গেছে। চোখেমুখে আরো একবার পানি দিয়ে বেরিয়ে এলো বর্ণ। হাতমুখের পানি মুছে বিছানায় শরীরটা বিছিয়ে দিলো। চোখ বুজতেই নদীর হাসিমাখা মুখটা স্পষ্ট ভেসে উঠলো। কি নিশ্বাপাপ সেই মুখের হাসি। যে হাসিতে না কেউ মুগ্ধ হবে,না কেউ খুন! তবুও এমন হাসি দেখার জন্য বর্ণ যা খুশি তাই করতে পারে। সায়মনের কথা যদি সত্যি হয়,সত্যি যদি নদী বর্ণের উপর দূর্বল হয়! তখন কি বলবে নদীকে বর্ণ? কি নাম দেবে ওই কঠিন হৃদয়ের মেয়ের? মন খারাপ আর ক্লান্তি ঘুম হয়ে ধরা দিলো বর্ণের চোখে। খুব মন খারাপে হয় কারো ঘুম পাবে না-হয় কারো কান্না পাবে। কেন এমন হয়, এই আজব অভিযোগ কখনোই কাউকে করা হয়নি। একদিন ঠিক করবো আপন কারো কাছে।
——————-
_ তুমি কার অনুমতি নিয়ে আমার ছেলেকে তোমার ভাইয়ের বাড়ি পাঠালে।
_ ছেলে কী তোমার একার?
_ তোমার এতো বড় সাহস কোথা থেকে এলো,আমারি অগোচরে ছেলেকে আমার বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছো। তোমার জন্য আমার ছেলেকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন যদি ভেঙে যায়,আমি কিন্তু তোমায় ছেড়ে কথা বলবো না।
_ তোমার দিনকে দিন সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি পারভীন। আবারও সাবধান করছি,তোমার ভারি দায়িত্বের ভার আমার সন্তানদের ঘাড়ে চাপাপে না।
_ সন্তান তোমার একার নয়।
_ হ্যা ঠিক বলেছো। আর এতোক্ষণ ধরে এটাই আমি তোমাকে মনে করাচ্ছি, সন্তান তোমার একার নয়।
_ তোমার ভাইয়ের ছোঁয়া লেগে যদি আমার সন্তানের ক্ষতি হয় আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব—
_ তুমি সব সময় বড় চাচ্চুকে নিয়ে এমন ভাবে বলো কেন মা? আজ পর্যন্ত চাচ্চু আমাদের ভালো ছাড়া কখনো খারাপ করেছে,করেনি।আর তোমার কিনা তাঁর প্রতিই এতো অভিযোগ। আচ্ছা মা তুমি এতো খারাপ কেন? তোমার মা-বাবা যোগ্য মানুষকে যোগ্য সম্মান দিতে শেখায়নি?
_ আয়শা—-ঠাসস। তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমার মা-বাবা তুলে কথা বলছো। তুমি আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বলছো,তোমায় তো আমি—
এই কথা বলেই এলোপাতাড়ি আয়শাকে মারতে রইলো পারভীন। শাহজাহান স্ত্রীর এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। স্ত্রীকে ধাক্কা মেরে মেয়েকে নিজের কাছে টেনে নিলেন।
_ নিজের সিমা লঙ্ঘন করো না পারভীন। হিতে ফল বিপরীত হতে পারে৷ চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যাও!না হলে আমি বাধ্য হবো তোমার গায়ে হাত তুলতে। এই বয়সে মা’র খাওয়ার নিশ্চয়ই ইচ্ছে নেই তাও আবার মেয়ের সামনে।
রাগে থরথর করে কাঁপছে শাহজাহান সাহেবের শরীর। স্বামীকে এভাবে রেগে যেতে দেখে পারভীনও কিছুটা দমে গেলো। রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। আয়শা বাবা-র বুকের মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মেয়েকে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসলেন শাহজাহান সাহেব। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
_ মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে নেই মামনী। তোমার বড় চাচ্চু যদি জানতে পারেন,তাঁর জন্য তুমি তোমার আম্মুর শিক্ষা নিয়ে কথা শুনিয়েছো,তাহলে তিনি খুব কষ্ট পাবে। কারো ভুল শিক্ষা তাঁর বাবা-মায়ের সাথে যুক্ত নয় মামনী। কারণ কোন বাবা-মা তাঁর সন্তানকে ভুল শিক্ষা দেয় না। আমি কখনোই বলবো না, তুমি বড়দের অসম্মান করো, খারাপ ব্যবহার করো ছোটদের সাথে। তেমনি তোমার নানা-নানুও কখনো খারাপ শিক্ষা দেয়নি। তাঁরা সব সময় ভালো শিক্ষাই দিয়েছেন। ভালো খারাপ বেছে নেওয়া আমাদের কাজ।
_ আব্বু মা সব সময় চাচ্চুকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে। আমার একদম ভালো লাগে না চাচ্চুর সমোন্ধে খারাপ কিছু শুনতে।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কথাগুলো বললো আয়শা। মেয়েকে আরো একটু বুকে টেনে নিলো শাহজাহান। তিনি চেয়েও কিছু বলতে পারলেন না। কারণ গোপন কিছু তথ্য, গোপন থাকাই শ্রেয়।
—————
ভাইয়া,ও ভাইয়া মা ডাকছে তোমায়। ভাইয়া শুনতে পাচ্ছো।
মোহনের ডাকে ধরফরিয়ে উঠে বসলো বর্ণ। এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করলো। চোখটা কচলে মোহনের দিকে একবার তাকালো। মোহন তখনোও বর্ণের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ণ দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। মোহনকে ইশারায় চলে যেতে বললো। মোহন চলে যেতেই চোখের ঘুম সরাতেই একটু পানি ছিটাতে চলে গেলো ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে খাবার ঘরে চলে গেলো। প্রায় সবাই আছে,শুধু নদী আর মিম বাদে। নদীর তো জ্বর। জ্বর কথাটা মনে পড়তেই চোখ ঘুরিয়ে একবার নদীর ঘরের দরজার কোণে তাকালো। দরজা বন্ধ। বন্ধ দরজা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে বর্ণ তেমন কিছুই দেখতে পেলো না। সে ধীরে গতিতে সামনে এগিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। খাবার টেবিলে তেমন কথা হলো না আজ। কারণ এই বাড়ির তোতা পাখিটা যে খাবার টেবিলে অনুপস্থিত। তাই প্রয়োজন ছাড়া কথা হলো না কারো সাথে। খাওয়া শেষ হতেই যে যাঁর রুমে চলে গেলেন। বর্ণ দরজা লাগিয়ে পায়চারি করতে রইলো। একটু আগে ঘুম থেকে উঠার জন্য এখন তাঁর চোখে ঘুম নেই। সে রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষা করছে। সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর একবার হলেও তাঁকে নদীকে দেখতে হবে। যতোক্ষণ নদীকে সে না দেখবে,ততোক্ষণে শান্তি নেই।
ঘড়ি তখন তিনের সংমিশ্রণে এগিয়েছে। বর্ণ তখনও জেগে আছে। তাঁর মন যে শান্ত হচ্ছে না। আর শান্তও হবে না যতোক্ষণ নদীকে সে নিজের চোখে দেখবে। চুপিচুপি সে এগিয়ে গেলো নদীর ঘরের দরজার নিকট। বুকটা ধক ধক করছে। চারিদিকে হলদেটে মাখনরঙা আলোয় তেমন কিছুই স্পষ্ট না। চারিদিকে নজর বুলিয়ে নদীর ঘরের দরজা আস্তে আস্তে ধাক্কা দেয়। কিন্তু বর্ণের ভাগ্য বড্ড নিষ্ঠুরতার প্রমাণ দিলো তখন। কারণ নদীর ঘরের দরজা ভেতর থেকে লক করা। তাঁর চোখের তৃষ্ণা অনুর্বরতা করা হলো না। বেড়ে যাওয়া ধুকপুককেও প্রশ্রয় দেওয়া হলো না। দরজার সামনে হেলান দিয়েই সেখানে বসে পড়লো বর্ণ। ভেতরে অনুভব হলো এক চাপা কষ্ট। সচ্ছ কাঁচের টুকরো যেন বুকটা ক্ষত-বিক্ষত করার মিছিলে শামিল হলো। একেই বলে কী ভালোবাসা? তুমি সুখ অনুভব করবে সাথে দুঃখের সাধ গ্রহন করবে। একটা মিষ্টি তো অন্যটা তিতা। কিন্তু দু’টো এক থালাতেই পাবে।
————–
সকালের উষ্ণতা অনুভব করলো নদী। চোখ বুঁজেই রোদের মিষ্টি ছোঁয়া উপভোগ করলো। কিছুতেই এমন সুখ সুখ অনুভূতি থেকে নিজেকে সরাতে ইচ্ছে করছে না। আজ শরীরটাও বেস ঝরঝরে লাগছে। গত দু’দিনের জ্বরে তাঁর শরীর যেন আর চলছিলোই না। কিন্তু আজ অনেকটা সুস্থ লাগছে নিজের কাছেই। হুট করেই গিটারের টুংটাং ধ্বনি ভেসে এলো তাঁর কানে। তাঁর ছোট ভাই এতো সকালে গিটার বাজাচ্ছে। বাবা কী তাহলে বাড়িতে নেই? ধপ করেই নদী চোখ খুলে বসে পড়লো। আর ঠিক তখনই ভেসে এলো কারো মিষ্টি কন্ঠের মিষ্টি একটা গান।
কেন রোদের মতো হাসলে না?
আমায় ভালোবাসলে না?
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।
এই মন কেমনের জন্মদিন, চুপ করে থাকা কঠিন! তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন।
নতুন সকাল-গুলো কপাল ছুঁলো তোমারই।
দূরে গেলেজ এটাই সত্যি তুমি আমারই,শুধুই আমারই।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,
রেসপন্স নেই,তাই হয়তো লেখার আগ্রহও নেই।
কাল আমি বাড়িতে এসেছি রাত পৌঁনে দশটায়। তাই গল্প লেখার সময় পাইনি। আজ কিন্তু অনেক বড় পর্ব দিয়েছি। আসলে কি বলুন তো গল্পের রেসপন্স দেখে লেখার আগ্রহ হারিয়ে গেছে।