সাইকো লাভার পর্বঃ৯

0
2287

সাইকো লাভার পর্বঃ৯
#সাদিয়া সিদ্দিক মিম(লেখিকা)

ঘুম থেকে উঠে দেখি আদি আমার পাশে নেই,সেটা দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম,,,,,তারপর ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে একটা কালো থ্রী পিছ পড়ে বের হলাম।এর মধ্যে মিনহা এসেও হাজির।

মিনহাঃ আরে বাহ্ ভাবি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

দিয়াঃ থ্যাংকু ননদীনি।(হেসে বললাম)

মিনহাঃ ভাবি,,,,,ভাইয়া তোমাকে রাতে কিছু বলে নি ত।

দিয়াঃ না গো ননদীনি কিছু বলে নি,,,,,আর তোমার ফোনটা একটু দিবা,,,,বাড়িতে কল দিব একটু,,,,আমার ফোনটা কাল কই যেন পড়ে গেছে।

মিনহাঃ হে নেও না,,,,,তুমি কথা বলে নিচে এসো,,,,সবাই ডাইনিং এ অপেক্ষা করছে।

দিয়াঃ আচ্ছা,,,,,”মিনহা রুম থেকে চলে যায়,,,,আমি ব্যালকনিতে গিয়ে চাচ্চুর নাম্বারে ডায়াল করি,,,,দুই বার কল দেয়ার পর চাচ্চু ফোন তুলে”।

চাচ্চুঃ হ্যালো,,,,,কে বলছেন?

দিয়াঃ আমি আপনার আম্মাজান বলতাছি।

চাচ্চুঃ আরে দিয়া মামনি,,,,তুই ঠিক আছিস মা,,,কাল ঐ আদি তোর গায়ে হাত তুলে নি ত,,,,তুই ভালো আছিস মা।(চিন্তিত হয়ে)

দিয়াঃ আরে চাচ্চু শান্ত হও তুমি,,,,আমি এক্কেবারে বিন্দাস আছি,,,,কিন্তু তোমার গলা এমন লাগছে কেন?তুমি নিশ্চয়ই কবরস্থানে বসে কাঁদছো।

চাচ্চুঃ আরে বাদ দে ত এসব,,,,,বাড়িতে আসবি কখন?

দিয়াঃ চাচ্চু তুমি কবরে যাও ঠিক আছে কিন্তু এভাবে কান্না করো কেন?তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে কী আমার খুব ভালো লাগে।

চাচ্চুঃ মামনি রে আমি ঠিক আছি,,,,তুই কষ্ট পাস না,,,,আর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আয়,,,,তুই ছাড়া বাড়িতে একদম ভালো লাগে না রে।

দিয়াঃ হে চাচ্চু আমি পারলে এখনই এসে পড়তাম কিন্তু আমার ঐ হিটলার আব্বাজানের জন্য পারছি না।

চাচ্চুঃ একদম আমার ভাইকে হিটলার বলবি না,,,,,,আমার ভাই মোটেও হিটলার না।

দিয়াঃ হ জানি আমি,,,,আচ্ছা চাচ্চু পরে কথা হবে এখন রাখি।

চাচ্চুঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,,তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসে পড়িস।

দিয়াঃ আচ্ছা চাচ্চু,,,,”বলেই ফোনটা রেখে নিচে নেমে এলাম,,,,নিচে এসে দেখি সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে শুধু ঐ বজ্জাত কলার কাদি বাদে।আমাকে দেখেই আমার শ্বাশুড়ি আম্মু ইশারা করলেন বসতে।আমিও বসে পড়লাম।
তখন কোথা থেকে আদি এসে আমার পাশে বসে পড়ল।আমি এক পলক আদির দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।তারপর যেই খাবার মুখে দিতে যাব ওমনি আদি আমার হাত ধরে খাবারটা অর মুখে নিয়ে নিল,,,,,আমি ড্যাবড্যাব করে আদির দিকে তাকিয়ে আছি,,,,আর আদির ঠোঁটে বাঁকা হাসি,,,,,আমি সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই যে যার মত খাচ্ছে কারো কোন হেলাদোলই নেই।আদি এখনও আমার হাতটা ধরে আছে,,,,ছাড়ছেও না শয়তান একটা।

দিয়াঃ কী হচ্ছে টা কী হাত ছাড়ুন,,,এসবের মানে কী?এখন কী শান্তিতে খেতেও দিবেন না নাকি?(আস্তে বললাম যাতে কেউ না শুনে)

আদিঃ খাও না ধরে রাখছে কে,,(ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে)

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার,,,,ইচ্ছে করতাছে খাবারের প্লেট এই কলার কাদির মাথায় ভাঙ্গতে।কিন্তু এখানে সবাই আছে বলে বেঁচে গেলো।

দিয়াঃ দেৎ খাবই না,,,”বলেই উঠে আসতে নিলে আদি খপ করে আমার হাত ধরে বসিয়ে আমার মুখে খাবার দিয়ে দেয়”।

আদিঃ চুপচাপ খাও,,,,নয়ত দুপুর অবধি না খেয়ে থাকতে হবে,,,,আমি জানি তুমি খিদে শয্য করতে পারো না।তাই চুপচাপ খাও এন্ড কোন সিনক্রিয়েট না করে।

কী আর করা চুপচাপ খাচ্ছি,,,,কারন আদি ঠিকই বলেছে আমি একদম খিদে শয্য করতে পারি না,,,,আর রেগে খাব না বললে তখন আরও বেশি খিদে লাগে,,,,থাক বাবা রিক্স নিয়ে কাজ নেই চুপ করে খেয়েই নেই।

দিয়াঃ আমি আর খাব না,,,,এবার আপনি খেয়ে নিন।

আদিঃ তোমার কাছে জানতে চাই নি,,,,হা করো।(গম্ভীর মুখে)

দিয়াঃ প্লিজ,,,,(কিউট ফেস করে)

আদিঃ 😠।

দিয়াঃ এমন করেন কেন?খাব ত আমি,,,,এমনি মজা করছিলাম,,, হি হি হি (বোকার মত একটা হাসি দিয়ে)।

আদিঃ গুড গার্ল।

খাওয়া শেষ করে আমি আর মিনহা হাঁটতে বের হয়েছি বাগানে,,,আদিদের বাগানে নানা ধরনের ফুলের গাছ আছে,,,,,ফুল গুলো দেখে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো,,ভাইয়াদের কথা খুব মনে পড়ছে।এভাবে কতক্ষণ ঘুরাঘুরি করে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি আদি আলমারি থেকে কিছু বের করছে,,,,আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিব তখনি আদি ডাক দিল।আমি আদির দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকানোর পরেই আদি আমার কাছে এসে বলে উঠল,,

আদিঃ আজ বিকালে বাড়িতে যাচ্ছো,,,কাল থেকে কলেজেও যাবে,,,,কোন ছেলের সাথে একদম কথা বলবে না,,,,ছেলেদের আশেপাশেও যাতে তোমার ছায়া না দেখি,,,,আর যখনি আমি ফোন দিব চুপচাপ ফোন তুলবা,,,,প্রথম ফোন না তুললে ২য় ফোন তোমার বাড়িতে গিয়ে দিব,,,,তারপর তোমাকে উওম মধ্যম দিব,,,,,এসব মেনে চলবে,,,এসব কথাগুলো যাতে ২য় বার আমাকে বলতে না হয়।

দিয়াঃ আচ্ছা,,,,,,(“মানব না তোর কথা,,,তোর কথা মেনে চলতে আমার বয়েই গেছে,,,,আজ খালি বাড়িতে যাই তারপর আমার নাগালও পাবি না হুহ”,,,,মনে মনে ভেংচি কেটে)

হঠাৎ আদি আমাকে জড়িয়ে ধরল,,,,উফফ এই ছেলেটা এমন কেন?হঠাৎ করে অ্যাটাক করে বসে,,,,এভাবে চলতে থাকলে কবে যেন স্টোক করে ইন্না-লিল্লাহ হয়ে যাই।

আদিঃ আমার কথার অমান্য করো না জান,,,,,আমার কথার অমান্য করলে আমি যে কতটা হিংস্র হতে পারি সেটা তোমার থেকে ভালো হয়ত কেউ জানে না,,,,,আমি ভালোর সময় খুবই ভালো,,,,,আর যখন রেগে যাই তখন খুব হিংস্র হয়ে যাই।

আদি কথাগুলো বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার গালে হাত রেখে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলো।

আমি আদির বলা কথাগুলো সবই শুনেছি কিন্তু এক কান দিয়ে শুনছি আরেক কান দিয়ে বের করে দিছি,,,,আজ খালি বাড়িতে যাওয়ার অপেক্ষা তারপর দেখো কী করি বাছাধন।

সারাদিন মিনহা আর শ্বাশুড়ি আম্মুর সাথে গল্প করেই পার করে দিলাম।আদি আজ অফিসে যায় নি,,,,ঘরে বসে কী ছাতার মাথা কাজ করছে,,,,,বিকালে ভাইয়ারা এসেছে আমার শ্বশুর বাড়িতে।তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসছি তখন আবার কলার কাদি পথ আটকাইছে,,,,শালা হাতির নাতি শান্তিতে একটা কিছু করতেও দেয় না,,,,আমার হাত টেনে নিয়ে আদি সবার আড়ালে নিয়ে এল তারপর আমার হাতে একটা গিফট এর বক্স ধরিয়ে দিল।

দিয়াঃ এটা কী?

আদিঃ বাড়িতে গিয়ে খুলে দেখো,,,,সাবধানে যেও আর যা বলছি মনে থাকে যেন,,,,,,আমি কতক্ষণ পরে ফোন দিব ফোনটা ধরো নয়ত কী করব জানোই ত।

আমি মাথা নাড়ালাম যার অর্থ জানি আমি কী করবে।তারপর আদি আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল আর গাড়ি চলল আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।ড্রাইভার চাচা গাড়ি চালাচ্ছে আর আমরা তিনভাই বোন পিছনে বসেছি,,,,দুই ভাইয়ের মাঝে আমি বসেছি।

দিয়াঃ ভাইয়া তোমাদের না আমি এত্তগুলা মিস করেছি(দুই হাত মেলে)।

সাফয়ানঃ আমরাও আমাদের বোনকে খুব মিস করেছি।(আমার নাক টেনে)

দিয়াঃ ভাইয়া চলো আজ লং ড্রাইভে যাই,,,,আর বিটকেল মামু,চাচ্চুকেও নিয়ে যাব।

সায়ানঃ পাপা জানলে সবগুলোকে বাড়ি থেকে বের করবে,,,এত পাকামি করতে হবে না।

দিয়াঃ ভাইয়া কিছু হবে না,,,,চাচ্চু মেনেজ করে নিবে,,,এখন চাচ্চু আর বিটকেল মামুকে ফোন লাগাও।

সাফয়ানঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর আমরা চলে গেলাম আমার কলেজের সামনে এখানে আমার চাচ্চু প্রিন্সিপাল,,,তাই আমি এই কলেজেই ভর্তি হয়েছি।আমার চাচ্চুর সাথে আমি খুব ফ্রি,,,,আমার চাচ্চু আমার খুব ভালো বন্ধু🤗।

সেখান থেকে চাচ্চুকে নিয়ে ড্রাইভার চাচাকে বিদায় দিয়ে আমরা চললাম বিটকেল মামুকে আনতে।তারপর বিটকেল মামুকেও নিয়ে নিলাম আমাদের সাথে।ড্রাইভ করছে সাফয়ান ভাইয়া,তার পাশে চাচ্চু আর পিছনে সায়ান ভাইয়া আর বিটকেল মামু।বিটকেল মামু সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে,,,,আমার মামুর আরামটা একদমি শয্য হচ্ছে না,,,তাই আর কী শয়তানি শুরু করে দিলাম,,,,আমার পার্স থেকে লিপস্টিক,আইলেনার বের করে মামুকে সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম,,,,আমার কান্ড দেখে ভাইয়ারা হাসছে আর চাচ্চু আমাকে ধমক দিয়ে বলল,,,,,”দিয়া এসব কী করছিস,,রাখ ঐগুলো”।

দিয়াঃ আহ্ চাচ্চু তুমি ত দেখছি আমার হিটলার বাপের মত পেনপেন করতাছো।

চাচ্চুঃ 😠।

দিয়াঃ আরে ভাইয়া গাড়ি থামাও,,,,,গাড়ি থামাও(আমি চিৎকার করে ভাইয়াকে গাড়ি থামাতে বললাম,,,আমার চেঁচামেচি তে মামু উঠে গেছে)

সাফয়ানঃ কী হয়েছে এভাবে চিৎকার করছিস কেন?(গাড়ি থামিয়ে)

আমি ভাইয়াকে কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড় লাগালাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here