সাইকো_লাভার পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম
রায়ান আর রিয়াজ, দিয়াকে হসপিটালে নিয়ে আসে,,,দিয়ার জ্ঞান হসপিটালের কাছাকাছি এসেই ফিরেছে।এখন ডাক্তার দিয়াকে দেখছে,,,রিয়াজ নিচে গেছে সীমা আর আশরাফকে নিয়ে আসতে।রায়ান দিয়ার পাশেই একটা চেয়ারে বসে আছে।কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার দিয়ার কপালে ব্যান্ডেজ করে চলে যায়।
রায়ানঃ এখন কেমন লাগছে তোমার।(নরম গলায়)
দিয়াঃ ঠিক আছি আমি,,,,,কিন্তু আপনি এখানে কেন ভাইয়া,,,,,আপনি ত একটা কেসের জন্য ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন।
রায়ানঃ হে,,,,,কাল রাতেই ফিরে এসেছি,,,,আশরাফ আঙ্কেল ফোন দিয়ে ছিল কতদিন আগে বলেছে ঢাকা ফিরলে উনার সাথে দেখা করতে,,,,তাই আজ কলেজে এসেছিলাম,,,,আর এসেই তোমাকে এত বড় আঘাত দিয়ে ফেললাম,,,,আই এম সরি মিম।(মাথা নিচু করে)
দিয়াঃ আরে না না,,,,সরি কেন বলছেন,,,এতে আপনার কোন দোষ নেই,,,আপনি এটার জন্য অপরাধ বোধ করবেন না।
রায়ানঃ হুম হয়েছে আর পাকা পাকা কথা বলতে হবে না,,,,তুমি একটু রেস্ট নাও আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝানোর পর রায়ান ভাইয়া বাইরে চলে যায় কেবিন থেকে।রায়ান ভাইয়া আমার চাচ্চুর বন্ধু ফাহিম আঙ্কেলের ছেলে,,,,রায়ান ভাইয়া একজন সিআইডি অফিসার।
ভাইয়া যাওয়ার একটু পরে চাচ্চু,সীমা আর রিয়াজ ভাইয়া প্রবেশ করে কেবিনে।চাচ্চু দৌড়ে এসে আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আমি গালে হাত দিয়ে টলমল চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছি চাচ্চুর দিকে,,,,চাচ্চু রেগে আছে ভীষণ।
চাচ্চুঃ সবসময় তোর দুষ্টুমি করতেই হবে তাই না,,,,আমাদের চিন্তায় না ফেললে কী তোর ভালো লাগে না।(রেগে চিৎকার করে)
চাচ্চু আর কিছু বলবে কিন্তু চাচ্চুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি আর দেরি না করে চাচ্চুকে জড়িয়ে ধরি।আমি জানি চাচ্চু আমাকে কতটা ভালবাসে,,,আমি ব্যাথা পেলে আমার থেকেও বেশি ব্যাথা চাচ্চু পায়।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর চাচ্চু শান্ত হয়,,,তারপর কান্নাজড়িত কন্ঠে চাচ্চু বলে উঠে,,,,
চাচ্চুঃ কেন এমন করিস বলত,,,,তোর যদি কিছু হয়ে যায় তখন তোর এই ছেলেটার কী হবে বলত।( আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)
আমি কিছু না বলে চাচ্চুকে ওভাবেই জড়িয়ে ধরে বসে রইলাম।
সীমাঃ এখন কেমন আছিস।(আমার কাঁধে হাত দিয়ে)
দিয়াঃ পুরা বিন্দাস আছি,,,,কিন্তু তুই এমন ওপ করে আছিস কেন হে?
রিয়াজঃ আর বলো না,,,,সীমা ভাবছে অর জন্য তুমি পড়ে গেছো,,,সীমা যদি তোমাকে ধাওয়া না করত তবে নাকি তুমি পড়তে না,,,,এটা ভেবেই এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
আমি এবার সীমার হাত দুটো আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে নরম গলায় বললাম,,,,,,” এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল দোস্ত,,,,তুই এটা নিয়ে এভাবে গাল ফুলিয়ে থাকিস না প্লিজ,,,,এভাবে গাল ফুলিয়ে থাকলে কিন্তু তরে পুরাই পেত্নী লাগে।”
সীমা এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়,,,,”সরি ইয়ার,,,,আমি বুঝতে পারি নি তুই পড়ে যাবি ওভাবে।”
দিয়াঃ ঐ পেত্নী ছাড় আমাকে,,,,কান্না থামা নয়ত তরে উল্টা ঝুলাইয়া পিডামু।
সীমা এবার আমাকে ছেড়ে বলল,,,,”তুই এখনও আমার সাথে এমন করবি।”
দিয়াঃ ভাইয়া এই পেত্মীরে এখান থেকে নিয়ে যান ত,,,,ভ্যা ভ্যা করেই যাচ্ছে,,,,এই মাইয়ার এই ভ্যা ভ্যা শুনতে শুনতে আমি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি।
আমার কথা শুনে চাচ্চু আর রিয়াজ ভাইয়া মুখ টিপে হাসছে আর সীমা গাল ফুলিয়ে বাইরে চলে গেলো।
দিয়াঃ ভাইয়া একটু অর সাথে যান।দেখেন একটু কই গেল।
রিয়াজঃ ঠিক আছে সে না হয় যাচ্ছি,,,,কিন্তু তুমি নিজের খেয়াল রেখো কেমন।
দিয়াঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
রিয়াজ ভাইয়া চলে যায় এবার চাচ্চু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,”দিয়া রায়ান না এসেছিল,,,,সে কই”।
দিয়াঃ ভাইয়া ত খাবার আনতে গেলো চাচ্চু।
চাচ্চুঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একটু রেস্ট করো,,,,আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি।
দিয়াঃ ঠিক আছে চাচ্চু।
চাচ্চু চলে যায়,,,,আমিও শুয়ে পরলাম,,,,আদির কথা মনে পড়ছে এখন,,,,সে কী জানে যে আমি ব্যাথা পেয়ে হসপিটালে আছি,,,জানলে ত পুরা হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলবে।যে ছেলেরে বাবা,,,,পুরাই সাইকো।আমি এসব চিন্তা ভাবনায় মগ্ন তখন কেবিনে রায়ান ভাইয়া আসে খাবার নিয়ে।
রায়ানঃ উঠে পড়ো দিয়া,,,,স্যুপটা খেয়ে নাও উঠো।(আমার কাছে বসে)
দিয়াঃ ভাইয়া আপনি এত উত্তেজিত না হয়ে একটু বসুন,,,,আমি খেয়ে নিচ্ছি।
রায়ানঃ আমি একদম ঠিক আছি,,,,তুমি উঠো খেয়ে নাও।
দিয়াঃ ঠিক আছে ভাইয়া দিন আমার কাছে,,,,আমি খেয়ে নিচ্ছি।(শোয়া থেকে উঠে বসে)
রায়ানঃ তুমি খাবে মানে,,,,,চুপচাপ বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
দিয়াঃ ভাইয়া আমি মাথায় ব্যাথা পেয়েছি হাতে নয়,,,,ত স্যুপটা আমার হাতে দিন আমি খেয়ে নিচ্ছি।
রায়ান ভাইয়া আমার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল,,,,আমি সেটা বুঝতে পেরে উনাকে আর কিছু না বলে উনার হাত থেকে স্যুপটা নিতে যাব তখন বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ভেষে আসছে।রায়ান ভাইয়া স্যুপটা টেবিলে রেখে বাইরে গেলো দেখতে কী হচ্ছে বাইরে।কিন্তু আমার বুঝতে বাকি নেই যে কে এমন তুলকালাম করছে।তাই আমিও বেড থেকে নেমে বাইরের দিকে এগিয়ে গেলাম।
কিন্তু আমাকে বেশিদূর যেতে হয় নি তার আগেই জনাব আমার কেবিনে হাজির,,,,আমাকে দেখেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল,,,,কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর আদি আমার চোখে,,মুখে অজস্র চুমু একে দিল।আমি আদিকে কিছু বলছি না কারন অর এই অবস্থা দেখে আমার কিছু বলাটা ঠিক হবে না।চুল উসকোখুসকো,সারা শরীর গামে একাকার হয়ে আছে,আর মুখে ফুটে উঠছে কিছু হারানোর ভয়।রায়ান ভাইয়া নিরব দর্শকের মত দাড়িয়ে সবটা দেখছে।
রায়ানঃ এই যে মিস্টার কী করছেন আপনি?ছাড়ুন মিমকে।
আদি এবার আমাকে ছেড়ে রায়ান ভাইয়ার দিকে রাগি চোখে তাকাল।আদি এবার আমাকে ছেড়ে রায়ান ভাইয়ার কাছে গিয়ে রায়ান ভাইয়ার কলার চেপে ধরে রেগে চিৎকার করে বলল।
আদিঃ তোর জন্য,,,তোর জন্য আমার দিয়া আজ কষ্ট পাচ্ছে।(চোখের পানি ফেলে)
দিয়াঃ আদি ছাড়ো ভাইয়াকে,,,,উনি কিছু করে নি,,,,উনিই আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে,,,উনাকে ছাড়ো আদি।
আদি এবার রায়ান ভাইয়াকে ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল,,,,”জান ততোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না,,,,খুব ব্যাথা করছে তোমার,,,,কেন আমি তোমাকে একা রেখে গেলাম,,,,আমি খুব কেয়ারলেস।”
রায়ান ভাইয়া এবার আদিকে আমার থেকে সরিয়ে আদিকে ঘুসি মারল,,আদি আবার ঘুসি খেয়ে আমার উপর এসে পড়ল।
রায়ানঃ তোর সাহস হল কী করে মিমের গায়ে হাত দেয়ার,,,,তকে ত আজ মেরেই ফেলব।
বলেই রায়ান ভাইয়া আবার আদিকে মারতে আসল এবার আমি রেগে গিয়ে রায়ান ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে ঠাস করে একটা গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।
দিয়াঃ আপনার সাহস হল কী করে,,,আমার হাজবেন্টের গায়ে হাত তোলার।(ভীষন রেগে)
রায়ান দিয়ার কথা শুনে অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে,,,,,রায়ান গালে হাত দিয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,,,,,”হহাজবেন্ট মানে।”
দিয়াঃ হে হে হাজবেন্ট,,,,আমার হাজবেন্ট উনি।
রায়ান আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।আদি অবাক চোখে দিয়াকে দেখে যাচ্ছে,,,আদির মনে হচ্ছে আদির আগের দিয়া ফিরে এসেছে।
#চলবে…