সাত সমুদ্রের তিমির পর্ব ১৭+১৮

#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ১৭
#সুমাইয়া_আফরিন

‘তুই রাফতের সাথে দেখা করবি?’

‘হুম কেন?তোকেও সাথে নিতে হবে নাকি?’

‘আমি মরে গেলেও যাব না।’

অনু এতক্ষন আয়নার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। লারার এমন উদ্ভট টাইপের কথা শুনে পেছন ঘুরে তাকালো অনু। কিন্তু ইতিমধ্যে লারা চলে গেছে ঘর থেকে৷ মনের অজান্তেই ফিক করে হেসে দিল অনু। লারাটা একটু বাচ্চাদের মতো। ওর মা প্রতিনিয়ত ওর বিয়ের কথা জানায় অনুকে। কিন্তু লারা যতবার বিয়ের কথা শোনে ততবার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় তার। ভেংচি কেটে দাঁত খিচিয়ে বলে ওঠে,

‘আমি এখন বিয়ে করবো না। আগে প্রেম করব তারপর বিয়ে করব বুঝতে পেরেছিস শাকচুন্নির দল।’৷

____________

অনু বসুন্ধরা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যেতে প্রচন্ড ভয় করছে তার। অধিক সংকোচ আর জড়তা কজ করছে তার মধ্যে। প্রতিনিয়ত অদ্ভুত এক অনুভুতি সৃষ্টি হচ্ছে তার হৃদয়ে। ধীরে ধীরে অনুর নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।

অনু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল চারটা বেজে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনু বড় বড় পায়ে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে গেল। রেস্টুরেন্টের দুই তালায় গিয়ে রাফাতকে খুজতে লাগল অনু। হঠাৎ অনু নিজের ডান পাশের টেবিলে তাকিয়ে দেখল রাফাত ও তার সাথে দুইজন ভদ্রলোক বসে আছে। অনু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে।

রাফাত ওই দুইজন ভদ্রলোকের সাথে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে। মুহূর্তেই অনুর মাথায় রাগ উঠে গেল। এখানে তার সাথে দেখা করতে এসে বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রাফাত? অনু অগ্নিবর্ষন করে তাকিয়ে আছে রাফাতের দিকে। অনুর ইচ্ছা করছে এক ঘুষি দিয়ে রাফাতের নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু রেস্টুরেন্টে আরো অনেকে আছে যার কারনে এটা করতে পারবে না সে।

অনু রাফন্বিত হয়ে রাফাতের পাশের টেবিলে বসে পড়ল। দুই জন ভদ্রলোকের মধ্যে একজন রফাতের সমবয়সি আরেকজন মধ্যবয়ষ্ক একজন পুরুষ। অনু দাঁত কিটমিট করতে থাকলো। চারটা বেজে গেছে অথচ রাফাতের মনেই নেই যে আজকে তারা দেখা করতে চেয়েছে।

‘এই লোকটা যদি একটুও আমাকে ভালোবাসতো তাহলে তো এতক্ষনে আমাকে খোজা শুরু করে দিত। সালা বজ্জাত লোক,, মিথ্যা নাটক,সব মিথ্যা নাটক। নাটক করছে যে সে তার বাবাকে শাস্তি দিতে চায়। কেন যে বিশ্বাস করছি লোকটাকে কে জানে!’

কথাগুলো আপনমে আওয়াচ্ছিল অনু। একজন ওয়েটারকে ডাক দিয়ে নিজের জন্য কফি আনতে বলল অনু। বসুন্ধরাতে কফির দামও অনেক। অনু এখানে মোটেও আসতে চায়নি কিন্তু বসুন্ধরা রেস্টুরেন্টের পেছনে অনেক বড় একটা লেক আছে। অপরুপ সৌন্দর্য দিয়ে ঘিরে রয়েছে লেকটি। লেকের শান্ত পরিবেশ অসম্ভব ভালো লাগে অনুর।লেকের ঠান্ডা ও শ্রান্ত বাতাস হানা দেয় এই রেস্টুরেন্টে। যার কারনেই আজকে অনু এখনে এসেছে।

রাফাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৪ঃ০৫ বেজে গেছে। রাফাত চারদিকে তাকিয়ে অনুকে খুজতে লাগল। নিজের পাশের টেবিলে তাকিয়ে দেখতেই চমকে উঠল সে। পাশের টেবিলে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ফোনের দিকে তাকিয়ে নিউজ পড়ছে। অনুকে এভাবে বসে থাকতে দেখবে এমনটা আগে আশা করেনি রাফাত।

কিছুক্ষন পরেই রাফাতের মিটিং শেষ হয়ে গেল। রাফাত মিটিং শেষ হওয়ায় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুর টেবিলে গিয়ে বসে পড়ল। আচমকা রাফাত অনুর সামনের টেবিলে বসায় অনু একটু চমকে গেছে। কিন্তু তা প্রকাশ না করে অনু ক্ষীণ স্বরে বলে উঠল,

‘আপনার কাজ শেষ?’

রাফাত অনুর কথায় বুঝতে পারল এই সময়ে মিটিং থাকায় অনু প্রচন্ড বিরক্ত হয়েছে। রাফাত শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনুর দিকে। অনু বিব্রত কন্ঠে বলে উঠল,

‘লেকের পাড়ে যাবেন?’

রাফাত মাথাটা একটু নিচু করে ছিল। অনুর এমন কথায় মাথা উচু করে অবাক চক্ষুতে তাকালো তার দিকে। অনু নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফাতের দিকে। অনুর এমন দৃষ্টি যেন রাফাতকে একটু বিপদে ফেলে দিল। এক নেশ্য আবদ্ধ হয়ে পড়ছে রাফাত। কোনোরকমে মাথা ডানদিকে ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো রাফাত।

লেকের পাড়ে রাফাত ও অনু পাশাপাশি হাঁটছে। দুজনের মধ্যে যেন এক অদৃশ্যমান দুরত্ব বিরাজ করছে। ভয়াবহ ধরনের নিরাবতা পালন করছে তারা। লেকের ঠান্ডা বাতাসে রাফাতের অবাধ্য চুলগুলো বারবার তার কপালে এসে আছড়ে পড়ছে। অনু তাদের দুইজনের মাঝের নিরবতা ভেঙে দিয়ে বলে উঠল,

‘সরি, না জেনে এতগুলো কথা আপনার ব্যাপারে বলা ঠিক হয়নি আমার।’

রাফাত একটু ইতস্তত বোধ করতে লাগল অনুর সাথে কথা বলতে। রাফাত কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলে ঘাবড়ায় না কিন্তু এই একজন মেয়ে যার সাথে কথা বলতে গেলেই প্রতিনিয়ত ঘাবড়াতে থাকে সে। রাফাত অনুকে উদ্দেশ্য করে চাপা গলায় বলে উঠল,

‘এইসব কথা বাদ দাও না প্লিজ।’

অনু এবার থমকে গেল। বড় বড় পা ফেলে রাফাতের সামনে এগিয়ে গেল সে। রাফাত ভ্রু কুচকে অনুর দিকে তাকিয়ে রইল। রাফাত অনেক লম্বা, প্রায় ছয় ফুটের মতো। কিন্তু অনু মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। যার কারনে রাফাতের সাথে কথা বলতে গেলে মাথাটা অনেক উচু করে কথা বলতে হয় তাকে।

অনু মাথা উচু করে রাফাতের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাফাত অনুর থেকে চোখ সরিয়ে আবার তার দিকে তাকালো। অনু ভাবলেশহীন স্বরে বলে উঠল,

‘তাহলে এখানে থেকে কি করব? আমি এই কথাটা বলতেই আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।’

রাফাত অনুর কথায় অনেকটা অবাক হলো। সামান্য এই কথা বলার জন্য তাকে দেখা করতে বলেছে অনু?অনু আর কিছু না ভেবে চলে যেতে নিল। কিন্তু এক পা বাড়িয়ে আর এগোতে পারলো না সে। রাফাত শক্ত করে অনুর হাত চেপে ধরে আছে। এমন কিছুর জন্যে অনু প্রস্তুত ছিল না তাই বর্তমানে তার কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না সে।

রাফাত অনুর হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শ্লেষ্মা জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,

‘আরেকটু কি থাকা যায় না?’

অনু জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে থাকল। তার হৃৎপিন্ড যেন গলায় এসে আটকে গেছে। অনু রাফাতের থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে বলল,

‘কেন কিছু বলবেন?’

রাফাত রাগান্বিত হয়ে বলল,

‘কেন? থাকলে কি হবে? আমি বাঘ না ভাল্লুক যে এখানে বেশিক্ষন থাকা যাবে না?’

অনু রাফাতের কথায় অনেকটা অবাক হয়ে গেল। এসব কি বলছে রাফাত? সে বাঘ ভাল্লুক হতে যাবে কেন? অনু ভ্রু কুচকে রাফাতকে উত্তর দিল,

‘আমি কি বলেছি আপনি বাঘ আর নয়তো ভাল্লুক?’

‘তুমি এমন ভাব করো যেটাতে এটাই মনে হয়।’

অনু কি বলবে বুঝতে পারছে না। সামান্য বিষয়ে যে রাফাত এত রেগে যাবে তা কখনো বুঝতে পারেনি সে। অনু একটা গলা খাকারি দিয়ে রাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘আমি এমনই। আচ্ছা চলুন ওইদিকে যাই।’

অনু আঙুল দিয়ে সামনের দিকে ইশারা করল। মুহূর্তেই রাফাতের চোখে মুখে আনন্দের আভা ছড়িয়ে পড়ল। অনু খেয়াল করল, রাফাতের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট আনন্দ, ঠোটের কোণায় এক ফিচলে হাসি। অনু একটু মুচকি হাসি দিয়ে রাফাতের পাশপাশি হাঁটতে থাকল।

অনেক বিষয় নিয়ে গল্প হলো রাফাত আর অনুর মাঝে। অনেক হাসাহাসি আর কিছু মিষ্টি মুহূর্ত আবদ্ধ হলো একে অপরের কাছে। আচমকা এক মেয়েলী কন্ঠস্বর ভেসে আসল পেছন থেকে। মেয়েলী কন্ঠস্বরের সাথে ভেসে আসছে রাফাতের নাম। রাফাত আর অনু পেছন ঘুরতেই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরিধানকারী একজন মেয়ে জড়িয়ে ধরল রাফাতকে। রাফাত এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। অবাক হয়ে হাবলার মতো দাঁড়িয়ে রইল সে।

অনু এমন কিছু দেখে দুই পা পিছিয়ে গেল। বিব্রত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। মেয়েটি ভীষন লজ্জাজনক ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে রাফাতকে। অনুর ভেতরটা যেন দুমরে মুচরে যাচ্ছে। কান দিয়ে গরম হাওয়া বের হতে শুরু করল তার। চোখে অশ্রুজল বিদ্যমান। এক শুকনো ঢক গিলে চোখ সরিয়ে নিল তাদের থেকে।
#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ১৮
#সুমাইয়া_আফরিন

‘তুমি আমাকে না বলে এখানে কেন এসেছো রাফাত। তুমি জানো না, তোমাকে এক মুহূর্ত না দেখলে আমার কি অবস্থা হয়।’

রফাতকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা সুরে কথাগুলো বলল সায়মা। রাফাত রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে সায়মার দিকে। তার ইচ্ছা করছে এক থাপ্পরে সায়মার সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে। রাফাত অনুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখল অনু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। এক রাশ ঘৃনা ছড়িয়ে পড়েছে তার সর্বত্র মুখে। রাফাত এক ধাক্কা দিয়ে সায়মাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিল। সায়মা রাফাতের এমন কান্ডে অনেকটা অবাক হয়ে যায়। পর মুহূর্তেই অনুর দিকে নজর যায় তার। শক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।

অনু ঠোট কামড় দিয়ে কোনোরকমে নিজের কান্নাকে থামিয়ে দেয়। রাফাতের জন্য এক অদ্ভুত অনুভুতি অনুভব করছে সে যা সাত বছর আগেও করেছিল। অনু কান্নামিশ্রিত চোখে রাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘আমার মনে হয়, এখানে আমার আর থাকা উচিত নয়। আমার চলে যাওয়া উচিত।’

অনুর কথাকে পশ্রয় দিয়ে সায়মা কর্কশ গলায় বলে উঠল,

‘ঠিক বলেছো তুমি। আমাদের মধ্যে কাবা…….

সায়মা তার কথাটি শেষ করতে পারল না। সায়মার কথা অগ্রাহ্য করে রাফাত অনুকে উদ্দেশ্য করে উচু স্বরে বলে উঠল,

‘অনু, ও হচ্ছে সায়মা। আমার খালাতো বোন এক কথায়… তোমার খালাতো ননদ।’

মুখে এক ফালি হাসি নিয়ে কথাগুলো বলল রাফাত। আনন্দের আভা ছড়িয়ে আছে তার চোখে মুখে। রাফাত ঠোটের কোণায় হাসি ঝুলিয়ে সায়মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘আর সায়মা ও হচ্ছে আমার বিউটিফুল ওয়াইফ অনু। অনু একজন ডক্টর। প্রায় মেয়েরাই তো বাবার টাকায় বসে বসে খায় কিন্তু ওর বাবার টাকায় বসে বসে খাওয়ার প্রয়োজন বোধ হয় না।’

শেষের কথাটি যে সায়মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে রাফাত তা সায়মার বুঝতে বেশি কষ্ট হলো না। সায়মাকে তার বাবা মা বিদেশে পাঠিয়েছিল পড়াশোনা করাতে কিন্তু পরপর দুইবার ফেল করায় নিজের পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি সায়মা। সায়মা রাফাতের কথায় যে অনেক পরিমান কষ্ট পেয়েছে তা সায়মার মুখে ভাসমান। সায়মা রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে রাফাতের দিকে।

রাফাত এখনো খিলখিল করে হাসছে। যেন সায়মাকে কথাটা বলতে পেরে অনেক খুশি হয়েছে সে। অনু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে রাফাতের হাস্যজ্জল মুখস্রির দিকে। রাফাত যে এমন কিছু বলবে তা অনু কল্পনাতেও ভাবেনি। রাফাত অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। রাফাত অনুকে এতটা কাছে নিয়ে আসায় অসস্থিতে পড়ে গেল অনু। অনু রাফাতের থেকে দূরে যেতে চাইলেও যেতে পারছে না। কারন রাফাত শক্ত হাতে ধরে রেখেছে তাকে।

রাফাত একটি শ্লেষ্মা জড়ানো কন্ঠে সায়মাকে বলল,

‘সায়মা, আমরা একটু ওই দিকে ঘুরতে যাচ্ছি। তো তুমি এখানে একা একা কিই বা করবে! তুমি বরং বাড়ি চলে যাও।’

এই কথা বলেই রাফাত অনুর হাত ধরে সামনে হাঁটে শুরু কতে দিল। অনু রাফাতের দিকে অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে। রাফাত এত জোড়ে হাঁটছে যে আর কিছুক্ষন পর অনুর হয়তো দৌড়াতে হবে। অনু রাফাতের গৌন্তব্যবিমুখ মুখস্রির দিকে তাকিয়ে বলল,

‘রাফাত প্লিজ স্টপ।’

রাফাত চোখ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনুর কথার ভ্রুক্ষেপ করছে না সে। অনু কোনোরকমে পেছনে তাকিয়ে দেখল সায়মার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে পড়ছে। আর একটু পর হয়তো ভ্যা ভ্যা করে কেদেই দেবে মেয়েটা। অনুর সায়মার জন্য একটু খারাপ লাগতে শুরু করল।

প্রায় অনেকটা দূরে এসে রাফাত যেন তার পা থামালো। অনু একটা সস্তির নিশ্বাস নিল। অনুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। অনুর বুক ধুকপুক করছে, এত জোড়ে করছে যেন তার মনে হচ্ছে রাফাতও শুনতে পাচ্ছে তার ধুকপুকানি। অনু জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে বিব্রত গলায় বলল,

‘এত জোড়ে আসার কি মানে? আর এভাবে টানতে টানতে নিয়ে এলেন কেন আমায়?’

‘ওই রাক্ষসীর থেকে পিছু হটানোর জন্য।’

‘বেচারা কেঁদেই দিয়েছে। ও তো আপনার গার্লফ্রেন্ড তাহলে ওকে রাক্ষসী বলছেন কেন?’

রাফাত চোখ বড় বড় করে তাকালো অনুর দিকে। যেন এমন আজব কথা রাফাত আর কোনো দিন শোনেনি। তাফাত দাঁত কিটমিট করতে করতে বলল,

‘তুমি এক কল্পনার জগতে বাস করো অনু। সেই কল্পনার জগতে আমার গার্লফ্রেন্ড হচ্ছে সায়মা। কিন্তু এটা কল্পনা নয়,এটা বাস্তব। কাম ব্যাক টু রিয়েলিটি অনু। এই রিয়েলিটিতে আমি হেট সায়মা। যেই মেয়েকে আমি এক সেকেন্ডের জন্য সহ্য করতে পারি না তুমি তাকে আমার গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে দিয়েছো? লাইক সিরিয়াসলি?’

কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে প্রানভরে শ্বাস নিল রাফাত। অনু অবাক চক্ষুতে তাকিয়ে আছে রাফাতের দিকে। সায়মাও যদি রাফাতের গার্লফ্রেন্ড না হয় তাহলে তার গার্লফ্রেন্ড কে?

অনু আনমনে ভাবছিল কথাগুলো। ঠিক সেই সময় রাফাত অনুর হাত ধরে নিয়ে গাড়ির কাছে চলে গেল। খুব দ্রুত অনুকে তার বাড়ি পৌছে দিয়ে গেল রাফাত। অনু কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলে গেল সে। অনু হাবলার মতো দাঁড়িয়ে রইল। রাফাত কেন এত তাড়াতাড়ি তাকে পৌছে দিল বাড়িতে? কিছুই অনুর মাথায় ঢুকছে না।

___________

সন্ধ্যায় অনু টেবিলে বসে কিছু ঔষধের নাম লিখছে। হঠাৎ শব্দ করে তার ফোন বেজে উঠল। অনু তার চোখের পাওয়ারি চশমাটি ঠিক করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল এক আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। নির্দ্বিধায় কল রিসিভ করল সে। ফোন কানে ধরতেই এক কান্না মিশ্রিত মেয়েলী কন্ঠস্বর ভেসে আসল তার কর্ণকুহরে। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘অনু তুমি রাফাতের ফাদে পড়ছো। ও তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করছে। তুমি যখনই ওকে বিশ্বাস করা শুরু করবে তখনই ও তোমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তোমার থেকে ওই রেকর্ডিংটা নিয়ে নেবে। তারপর ও তোমাকে ছুড়ে ফেলে দেবে অনু। তুমি ওর ফাদে পরো না। জীবনটা শেষ হয়ে যাবে তোমার।’

কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দিল মেয়েটা। অনু এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না যার কারনে এক প্রকার থমকে গেছে সে। পুরো পৃথিবীটা যেন অন্ধকার হয়ে আসছে তার কাছে। ভয়াবহ ধরনের নিরবতা বিরাজ করতে লাগল ঘরটায়। নিজের অজান্তেই এক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল তার চোখ দিয়ে। অনু মূর্তির ন্যায় বসে থাকল চেয়ারটায়।

ফোন রেখেই পৈশাচিক হাসিতে ফেটে পড়ল সায়মা আর কাকলি সরকার। চোখে সুস্পষ্ট আনন্দ বিরাজ করছে তাদের। অনু যে এবার তাদের কথার প্ররোচনায় পড়ে রাফাতের সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না এতে তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। এসব কথা শোনার পর কেই বা বিশ্বাস করবে একজন মানুষকে!

চলবে,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
চলবে,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here