পর্ব-২(বিস্বাদময় প্রহর)
#সাদা_ফুল
#ফারিয়া_আক্তার_নূপুর
২.
পরপর তিনদিন সকাল থেকে বিকাল অব্দি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা পাইনি তীব্র। অথচ সে জানেই না তার প্রিয় মানুষটি প্রচণ্ড জ্বরে বিছানারত। নাম পরিচয় না জানার কারনে তীব্রও দেখা করার মতো কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। রাতে বাড়িতে ফিরে কারো সাথে কোনো কথা না বলেই নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে পরে। ক্যামেলিয়া রুমেই ছিলো তীব্রকে দেখে তার গাঁ ঘেঁষে বসে ম্যাও ম্যাও করে ডাকে। তীব্র একবার ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেই। ক্ষানিক পরেই হু হু করে কেঁদে উঠে তীব্র। ছেলেরাও কাঁদে? হ্যা কাঁদে। ছেলেদের কাঁদতে নেই এটি সমাজের দেওয়া এক কঠোর এবং অবাস্তব নিয়ম। কেনো শুধু মেয়েরা সবার সামনে কাঁদতে পারে আর ছেলেরা নয়? তাদেরও কষ্ট হয় তারাও কষ্ট বহিঃপ্রকাশ করতে চায়! তীব্রকে কাঁদতে দেখে ক্যামেলিয়া কোলে উঠে তীব্রের সম্মুখে বসে মুখ তুলে জোরে জোরে ডাকতে থাকে। অবুঝ প্রানীটিরও বোধহয় খুব কষ্ট হচ্ছে কান্না দেখে। তীব্র হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে। খুব কষ্ট হয়েছে তার এই তিনদিন।তিথি রহমান ছেলের পরিবর্তন লক্ষ করেছেন। সবসময় হাসিখুশি ছেলের মলিন মুখ আর বিস্বাদে ভরা চাহনি কিছুই এড়ায়নি তার চোখ থেকে। তাই নিজেই এসেছেন ছেলের কাছে। দরজার ওপাশ থেকে মায়ের কন্ঠ শুনতেই দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে নেয় তীব্র তারপর দরজা খুলে দেয়। তিথি রহমান ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলেন,
‘বাবুসোনা আজকে তোর সাথে গল্প করবো তোর সমস্যা হবে না তো?’
‘একদম না’!
মেকি হাসি দিয়ে উত্তর দিলো তীব্র। ছেলের চোখের দিকে তাকাতেই আতকে উঠেন তিথি রহমান। ফরসা মুখে চোখ গুলো লাল হয়ে আছে, চুলগুলো অগোছাল। বিছানায় বসে ক্যামেলিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,
‘তুই কেঁদেছিস কেনো?’
মায়ের উত্তর না দিয়েই বিছানায় গুটিশুটি হয়ে কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকে তীব্র । তিথি রহমান ছেলের মাথার চুলে বিলি কাটছেন। অনেক সময় পর জিজ্ঞেস করলেন,
‘মনটা কি ঢাকা রেখে এসেছিস?’
‘উহু এখানেই!’
‘তবুও কেনো এতো মন খারাপ যার মাত্রায় আমার ছেলেটা কাঁদে?’
তীব্রর চোখগুলো অস্পষ্ট হয়ে আসে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে খুব দ্রুত তা মুছে ফেলে। ছেলের কান্না দেখে তিথি রহমানের বুকটা কেপে উঠে। ইংরেজিতে অনার্স পরুয়া এক যুবকের এভাবে কান্নাটা যেন একটু বেশিই বেদনাময়। নিজ থেকে আবারো জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে তীব্রও এবার সব বলল। সবকিছু শুনে ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বলেন,
‘ভালোবাসিস?’
‘এভাবেও ভালোবাসা হয়?’
‘ভালোবাসার সংজ্ঞা এবং রূপ একেকজনের কাছে একেক রকমের। কারো সামনে শত বছর থাকলেও ভালোবাসার জম্ম হয় না আবার কয়েক মিনিটের মাঝেই না চাইতেই হয়ে যায়। তোকে শুধু তোর মনের অনুভূতি বুঝতে হবে ভালোলাগা আর ভালোবাসার মাঝে পার্থক্য বের করতে হবে। সময় নে দূরত্বে থেকে বুঝ নিজের
অনুভূতি।’
তীব্র খুব মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনল। তার মায়ের মনে ভালো করার মতো এক অদ্ভুত গুন রয়েছে। কিছুক্ষণ পর বলল,
‘কাল ঢাকা ফিরবো আম্মা।’
তিথি রহমানও আর কিছু বলেননি।এক দেখাতেই ভালোবাসা বিষয়টা নিয়ে উনিও বেশ দ্বিধান্বিত ।
–
আজ চারদিন পর শুভ্রতার জ্বর সেরেছে। এই চারদিন সে স্কুলে যেতে পারেনি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের আদেশে দুই ভাই বোন টেবিলে বই নিয়ে বসেছে। শুভ্রতা এবছর ক্লাস এইটে অার শুভ সিক্সে। জানুয়ারির শেষ দিক তাই শীত শীত ভাবটাও একটু কম। শুহানা বেগম রান্নাঘর থেকে এসে ঘড়িতে সময় দেখে ছেলেমেয়েকে নাস্তা সেরে স্কুলের জন্য তৈরি হতে তাড়া দিতে লাগলেন। নাস্তা শেষে দাদির হাতে বেনুনি করে স্কুলের পথে রওনা দেয়।
‘তুই ওই সাদা বিড়ালটিকে দেখেছিস আর?’
‘আমি কীভাবে দেখবো আমিও তো চারদিন স্কুলে যাইনি।
‘আমার সাথে জোড়া বেধে তুইও স্কুলে যাবিনা!’
‘শোন ওই বিড়ালের মালিক আছে আর ভুলেও বাড়িতে নেওয়ার কথা ভাবিস না মা তোকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে।’
‘বিড়ালটা খুব সুন্দর ছিলো একদম তুলোর মতো নরম।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাটি বলল শুভ্রতা।
৩.
তীব্র ঢাকাতে ফিরেছে আজ ২০ দিন। ঢাকাতে ফিরার পথে ক্যামেলিয়াকে সাথে নিয়ে আসে তীব্র। নিজের ফ্ল্যাট সাথে ভার্সিটির দুজন ফ্রেন্ড থাকার কারনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি । পড়ার পাশাপাশি দুটি টিউশনও করায় তীব্র । এক্ষেত্রে পরিবারের সবাই মানা করলেও তীব্র শুনেনি। দিনের বেলা নিজেকে পুরোদমে ব্যস্ত রাখছে কিন্তু রাত বাড়তেই বুকের মধ্যে প্রখর ব্যাথা অনুভব করে।ফ্লাটে ফিরে ক্যামেলিয়াকে খাবার দিয়ে নিজের সাথে ঘুমাতে যায়। গভীর রাতে ঘুম ভাঙার কারনে বেলকনির পর্দা সরিয়ে বেলকনিতে এসে এক কোণায় রাখা চেয়ারে বসে পরে।স্বচ্ছ আকাশের দিক অপলক তাকিয়ে আছে। বারবার মনে পরছে মেয়েটির মুখখানা, একলাইনের বলা সেই বাক্যটি। তৃষ্ণা বেড়ে গেছে তীব্রের, গলা বারংবার শুকিয়ে আসছে কিন্তু তীব্র জানে এই তৃষ্ণা পানীয় কিছুর জন্য নয় বরং প্রেয়োসীকে দেখার জন্য ব্যাকুল হওয়া মনের আকাঙ্ক্ষা । তাদের মধ্যে বার্তা আদান প্রদান অতি ক্ষুদ্র, পরিচয় নেই বললেই চলে তবু সবকিছুর পূর্ণতা তীব্র এইটুকুর মাঝেই খুজছে।এভাবেও অনূভুতি ভালোলাগা শুরু হয় বুঝি?
চলবে।
[তীব্রর চরিত্রটি কার কার ভালো লাগছে? ভালো না লাগার কারনটিও অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং]