সাদাফুল পর্ব -০১

১.

‘ আপনার বিড়ালটাকে একটু আদর করি?’

তীব্রের হাতে থাকা ধবধবে সাদা বিড়ালের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল স্কুল ড্রেস পরুয়া শুভ্রতা। মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা সূচক জবাব দিলো তীব্র। কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে উচ্ছাসে বিড়ালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো শুভ্রতা, বিড়ালও ছোট হাতের পরম আদর পেয়ে চোখ নিভিয়ে ফেলল। সামনে থাকা যুবকটি অপলক তাকিয়ে আছে তার সামনের আদুরে মেয়েটির দিকে। রাস্তার অপর পাশ থেকে এক বালক জোরে ডেকে বলল,

‘ শুভ্র!মা যদি জানে তুই বাসায় বিড়াল নেওয়ার চেষ্টা করছিস বিড়ালের সাথে তোকেও বাইরে ফেলে দিবে’

রাস্তার মাঝে এহন কান্ডে বেশ লজ্জায় পড়ল শুভ্রতা সাথে মায়ের ভয়। বিড়ালের দিকে একপলক তাকিয়ে দৌড়ে অপর পাশে চলে গেলো শুভর কাছে আর রেখে গেল সদ‍্য ফোটা এক যুবকের অনূভুতি। শুভ্রতা যাওয়ার
ক্ষানিক বাদেই অয়ন এসে দাড়ালো তীব্রর পাশে। রাস্তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল

‘মেয়েটা কে তীব্র ?’

তীব্র বিড়ালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

‘জানিনা’।

ভ্রু কুচকে কিছু একটা ভাবল অয়ন। পরক্ষনেই মনে পরল মিঠাই তীব্রের হাতে যে কিনা বিড়াল পছন্দ করে না। হাত বাড়িয়ে বলল,

‘মিঠাইকে দে।এখন বাসায় ফিরতে হবে, বিকেলে চৌরাস্তায় আড্ডা দিবো।

বিড়ালের দিকে একনজর তাকিয়ে তীব্র বলল,

‘ও আমার কাছেই থাকুক। তোর বোনকে অন‍্য একটা বিড়াল এনে দিস’।

‘কিন্তু তুই তো বিড়াল পছন্দ করিস না’

মুচকি হেসে জবাব দিলো তীব্র,

‘এখন থেকে করি’!

সন্ধ্যার লাল আভা ছড়িয়ে পরে রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে নীল সাদা আকাশ। ক্ষানিক বাদেই মাগরিবের আজান দিবে। বাড়ির পাশের মাঠে বরফ পানি খেলছে শুভ্রতা,শুভ আরো অনেকে। বাঁশের কঞ্চি হাতে নিয়ে তেড়ে আসছেন শুহানা বেগম, সন্ধ্যা হয়ে আসছে অথচ ছেলেমেয়ে মাঠে খেলছে এখনো। লায়লা শুহানা বেগমকে দেখে দৌড়ে শুভ্রতার কাছে এসে ব‍্যস্ত কন্ঠে বলল,

‘শুভ্ররে দৌড় দে! মামিমা লাঠি নিয়ে আসছে।’

সামনে তাকিয়ে মা কে আসতে দেখে মূহুর্তেই দৌড় লাগালো বাড়ির পথে শুভ্রতা। বোনকে বাড়ির দিকে দৌড়াতে দেখে শুভও দিলো ভো দৌড়। বুঝতে বাকি নেই আজকে পিঠের ছাল একটুও থাকবে না।বাড়িতে এসে ভাই বোন দুজনে থামলো, শুভ্রতার হাত পা কাঁপছে অনবরত। পেছন থেকে মায়ের উঠানে আসার শব্দ পেয়ে শুভ শুভ্রতা লুকিয়ে পরল জাহানারা বেগমের পেছনে। শুহানা বেগম কঞ্চি হাতে নিয়ে কোমরে দু হাত উঠানে দাঁড়িয়ে বলল,

‘একদম লুকাবি না,বেরিয়ে আয় বলছি’

শুভ পেছন থেকেই বলল

‘না! তুমি মারবে’।

‘তো কি আদর করবো তোদের! বেরিয়ে আয় সামনে। আম্মা অপনি সরে যান। কত বড় সাহস দুটির সন্ধ্যা হয়ে যায় বাড়ি ফেরার নাম নেই তাদের।’

বেশ ঝাঝালো কন্ঠে কথাটি বললেন শুহানা বেগম।জাহানারা বেগম দুহাত দিয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আহা থাক না শুহানা। বাছা দুটিকে আর বইকো না। কেমন লাল হইয়া গেছে। এত রোদে রোদে দৌড়াস ক‍্যান তোরা আব্বা আম্মা’?

শুভ্রতা মিনমিনেয়ে বলল,

‘আর হবে না দাদিমা’

‘আম্মা অপনি আর আপনার ছেলে মিলে মাথায় তুলে ফেলতেছেন অসভ‍্য দুটোকে’

এই বলে কঞ্চি মাটিতে শব্দ করে ফেলে কলপারের দিকে অগ্রসর হলেন শুহানা বেগম।

রাত ১০টা। রান্নাঘরে তিথি রহমান সাথে দুই জা অনু রহমান এবং জাবেদা রহমান রাতের খাবার গরম করছে আর লতা খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখছে। খাবার টেবিলে বসে রেণু রহমান একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর বললেন,

‘ আমার আব্বাজান কই?’

‘এই যে দাদি’

পেছন থেকে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে তীব্র বলল। বাবা আর রেণু রহমানের মাঝখানের চেয়ারে এসে বসল। তীব্রর মা তিথি রহমান প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললেন,

‘ তুই নাকি বিড়াল পালবি বাবা এমনকি ঘরেও এনেছিস!’

‘ ছোডো আব্বারে কি জিগান খালা? আমি লতা কুনোদিন মিছা কই না। আমি আব্বারে দেখছি বিলাই লইয়া ঘরে ডুকতো ধলা এক বিলাই। আমি গিয়া লইয়া আনি হগোলের সামনে?

বিরক্তি নিয়ে তীব্র লতার দিকে তাকালো মেয়েটা সব কিছুই একটু না অনেক বেশি বুঝে। তিথি রহমান বললেন,

‘ লতা তোকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেনি যা টিভির রুমে বসে টিভি দেখ।’

লতা যেতেই তিথি রহমান পুনরায় একই প্রশ্ন করেন তীব্রকে। মাথা নেড়ে হ‍্যাঁ সূচক জবাব দেয় তীব্র।টেবিলের সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মেজো চাচা ইকবাল বললেন,

‘কিন্তু তুই তো বিড়াল পছন্দ করিস না। কোনো সমস্যা হয়েছে বাবা? কেউ কি তোকে থ্রেট করেছে বিড়াল নিজের কাছে রাখতে?

‘ তোমরা এত অল্পতেই হাইপার হচ্ছো কেন? আমি নিজ ইচ্ছেতই এবং সজ্ঞানে বিড়াল আমার কাছে রেখেছি এবং হ‍্যাঁ আমি বিড়াল পালবোও।’

এরপর আর কেউ কোনো কথা বলেনি। মানুষের পছন্দ বদলাতেই পারে। আর তাছাড়া বিড়াল কেনো তীব্র যদি রহমান বাড়িতে বাঘ এনে পালে তাও কোনো অভিযোগ করবে না কেউ। সবার খুব আদরের রহমান বাড়ির একমাত্র ছেলে এই তীব্র রহমান আদি।

তীব্র নিজের রুমে গিয়ে দেখল বিছানার মাঝখানে আরামে শুয়ে আছে ধবধবে সাদা বিড়াল ছানাটি। বিড়ালের কাছে গিয়ে বসে ওর দিকে তাকিয়েই বলল,

‘আমি কিন্তু বিড়াল পছন্দ করি না আর যেহুতু তুমি আমার বেডরুমে শোয়ার অধিকার পেয়েছো নিঃসন্দেহে তুমি খুবই স্পেশাল।’

বিড়াল ছানাটি চোখ পিটপিট করে তাকালো তীব্রের পানে।

‘ তুমি তো খুব মিষ্টি তবে তোমার থেকেও সে বেশি মিষ্টি।’

বিড়াল ছানাটি কী বুঝল কে জানে সেও ম‍্যাও বলে কোমল কন্ঠে ডেকে উঠল যার অর্থ তীব্র ভেবে নিয়েছে এই ‘আপনি যা বলবেন তাই সঠিক জাহাপনা।’

বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের এমন ভাবনায় উচ্চস্বরে হেসে দিলো তীব্র। বিড়ালটি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে এক সুদর্শন পুরুষের আময়িক হাসি। আচ্ছা বিড়ালরাও কি ক্রাশ নামক কিছু গলধঃকরন করে? করলে হয়ত তার সামনে দাড়িয়ে থাকা পুরুষের উপর সে ক্রাশ খেতো। শোয়া থেকে উঠে ম‍্যাও ম‍্যাও করে চার পায়ে পুরো বিছানায় লাফিয়ে চলছে বিড়াল ছানাটি। এক লাফে তীব্রের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে উচ্ছসিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তীব্র ওকে কোলে নিয়ে দুহাত দিয়ে আগলিয়ে বলল

‘আমার দেওয়া তোমার নতুন নাম ক‍্যামেলিয়া’।

ক‍্যামেলিয়াও চোখ নিভিয়ে কোমলে স্বরে বলল

‘ম‍্যাওওও’।

চলবে
সূচনা পর্ব (ক‍্যামেলিয়া)
#সাদা_ফুল
#ফারিয়া_আক্তার_নূপুর

[সবার বিড়ালের নাম জানাবেন। আর অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য দিয়ে পাশে থাকবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here