#সিঙ্গেল_মাদার
#ফারিন
পর্ব: ০৪
ইরিনের সব কিছু মনে করতে করতে একটু চোখ লেগে গিয়েছিল ঘুম ভাঙলো অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে , পাশের সিটের লোকটার ডাকে
এই যে আপু শুনছেন ?
– ইরিন ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলো একটা লোক তার পাশের সিটে বসে আছে সে ডাকছে
– জ্বি বলুন
– বিরক্ত করার জন্য মাফ করবেন
– না সমস্যা নেই বলুন
– আমাকে কিছুটা সময়ের জন্য জানালার পাশে বসতে দেবেন ?
– ইরিন একটু ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করল “কেন” ?
– আসলে আমার একটু খারাপ লাগছে আধা ঘন্টা মতো সময় দিলেই ঠিক হয়ে যাবে ।
অসুস্থতার কথা বললে তো আর কিছু বলার যায় না ইরিন ও মেনে নিল
– সামানে স্টপে এসে দুজন সিট বদলে নিল ।
ইরিনের জানালার পাশে ছাড়া ঘুম হয় না ও ফোন এ চেকিং দিল সৌমিক কে ফোন দিল কিন্তু সৌমিক ঘুমেই বিভোর ফোন উঠালো না ।
আধা ঘন্টা পার হয়ে গেল অথচ ঐ বেটার ওঠার নাম নেই , আরামে ঘুম দিচ্ছে ।
ইরিন নিজেই মনে মনে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করলো ঐ লোকের “কারোর উপকার করতে নেই ইরিন, এবার নিজের ঘুম হারাম করে অন্যের ঘুম দেখ ” ।
বাস যখন কুমিল্লায় হোটেলে যাত্রি বিরতি দিল তখন ঘুম ভাঙলো আতিকের , চোখ খুলে দেখল মেয়েটা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে , দেখতে কিন্তু বেশ লাগছে অগুছালো গুটি কয়েক চুল মুখের উপরে পড়েছে , বাকি চুল গুলো কাঁটা দিয়ে উঁচু করে বাঁধা রয়েছে , ঘুমের মধ্যেও সাইড ব্যাগটা শক্ত করে ধরে আছে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই কেউ নিয়ে নেবে , একটু হেসে ফেললো আতিক ।
আতিক আবারো ডাকলো ইরিন কে
– ম্যাডাম শুনছেন ??
– ইরিন একরাশ বিরক্তি চোখে জবাব দিলো “আপনি কেমন লোক মশাই , সাহায্য করার জন্য জায়গা দিলাম আর সারারাত কাটিয়ে দিলেন” ?
– আতিক বিন্দু মাত্র রাগ করলো না , হাসি মুখে বললো মাফ করবেন আসলে আমি কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল করি নি ।
– “আচ্ছা ঠিক আছে , এখন তো নিজের সিটে আসবেন না কি” ??
– হ্যা অবশ্যই ।
ইরিন ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে সাইড ব্যাগ নিয়ে বাস থেকে নেমে গেল ।
আতিক বসে থেকে ইরিনের চলে যাওয়া দেখছে আনমনে ভাবছে “মেয়েটার মধ্যে কোথায় যেন একটা দম আছে” ।
ইরিন ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা খেয়ে নিজের সিটে এসে বসলো , আতিক এখনো আসেনি ইরিন বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে এখন আর রাগ নেই তার কোনো ।
আতিক হাতে কিছু চকলেট এনে ইরিনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো “ঘুমোনোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাখতে পারেন ”
– মাফ করবেন আমি অপরিচিত দের থেকে কিছু নেই না ।
– আচ্ছা আমি আতিক আহমেদ , চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিউরোলজি ডিপার্টমেন্টে আছি ১বছর যাবত ।
– তবুও নিবো না আপনার চকলেট আপনার কাছেই রাখুন ।
– আপনার নাম টা জানতে পারি ? যদি কোন সমস্যা না হয় বলতে !
– ইরিন ।
– ধন্যবাদ, এবার আমি একটু ঘুমাই ?
– আতিক ইরিনের বাচ্চামি স্বভাব দেখে একটু মুচকি হেসে বললো “হুম অবশ্যই” ।
আতিক ইরিনের আগেই নেমে পড়লো তাই আর দেখা হলো না ।
ইরিন হলে পৌছে একটা টানা ঘুম দিয়ে বিকেলে উঠলো ।
– ঘুম ভাঙলো ?
– হুম ভাঙছে ।
– সৌমিক ভাই ফোন দিয়েছিল
– কখন ? কি বললি ?
– ভাইয়া বললো ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শহীদ মিনারের কাছে যাইতে
– আচ্ছা ঠিক আছে , আলো কোথায় রে ?
– ও কাল আসবে , তুই খাওয়া দাওয়া করে নে আগে
– হুম উঠছি ।
অনেক দিন পর দেখা হচ্ছে সৌমিকের সাথে তাই একটু স্পেশাল তো দেখাতেই হবে, একটা সোনালী রঙের ড্রেস পরে নিল , লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিল , ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক , চোখে কাজল দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ।
সৌমিক আইসক্রিম নিয়ে বসে আছে ইরিনের আইসক্রিম অনেক পছন্দের, কালো একটা শার্ট পড়ে এসেছে ।
দূর থেকে ইরিন কে দেখছে ইরিন ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে আসছে , ইরিন কাছে আসতেই বললো
” গোধূলির সব রং তোমায় দেখে নুয়ে যাবে মায়া কন্যা ”
– হুম শুধু তোমার চোখেই –
– হুম আমার চোখেই তুমি পুরো পৃথিবী টা দেখবে ।
– ” তুমি চোখ বন্ধ করলে যে আমি অন্ধ হয়ে যাব ” !!
– অন্ধকারেও আলো আছে ইরিন তুমি আমার সেই আলো , অন্ধকার দেখে কখনো ভয় পাবে না , তুমি জানবে তুমি সৌমিকের চোখের অন্ধকারের আলো ।
– তুমি ছাড়া আমার পৃথিবীটা একদম আলোহীন হয়ে যাবে , আমি পারবো না কখনো সেই অন্ধকারে আলো হয়ে উঠতে ।
– ভুল বললে কোনো ভীড়ে যদি তুমি নুয়ে পড়ো তবে এটা মনে রাখবে তুমি আমার আলো এতো সহজে নুয়ে পড়া তোমার মানায় না ।
– “কতোদিন পরে এলাম আর কি সব বোঝাচ্ছো আমাকে বলোতো , আমি কখোনোই একা হবো না সবসময় তোমার কাছে থাকবো” বলেই সৌমিকের হাত ধরলো ইরিন
– তোমাকে ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না ইরিন কেন এতো দেরি করো আসতে বার বার
– আচ্ছা সারাবছর তো এখানেই থাকি বাবা- মা এর কাছে যাবো না ??
– হুম যাবে তো কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারবেনা মায়া কন্যা
– এতো ভালোবাসো আমাকে ??
– এক পৃথিবী উজাড় করে দিলেও ভালোবাসা কমতি পরে যাবে ।
– এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে !!
– সৌমিক চোখ টিপ দিয়ে বললো ” না সইলে না হয় সতিন আনবো তোমার চলবে তো”
– ইরিন রাগ দেখিয়ে বললো “আমার কোনো সতিন চাই না”
– কেনো গো দুই বউ এর সেবা যত্ন আহ কি মজাটাই না আমার হবে !
– “ভালো হচ্ছে না কিন্তু”
বলেই এলোপাথাড়ি কিল দিতে লাগল সৌমিক কে ।
– ইরিন থামো থামো , আমার মায়া কন্যা রণচন্ডী হয়ে গেছে ।
ইরিন থামলো কিন্তু মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রেখেছে
– আমার অভিমানী টার এতো অভিমান !!
ইরিনের মুখ ধরে এদিকে ফিরিয়ে দেখে চোখের পানি কান্না হয়ে নেমেছে
– এই পাগলি কান্না করে না , আমি তো মজা করছিলাম
সৌমিক চোখের পানি মুছিয়ে দিল
– ইরিন সৌমিকের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বললো ” আমি সব ভাগ দিতে পারি সৌমিক কিন্তু ভালোবাসার ভাগ আমি দিতে পারি নে ঐ জায়গা টা শুধুই আমার নামে লেখা থাকবে , অন্য কারোর প্রবেশ অধিকার নিষেধ” ।
– “ইরিন আমার পৃথিবীটা শুধুমাত্র তোমার নামেই লেখা সেখানে অন্য কারোর আনাগোনা নেই” ।
মান অভিমানের গল্পগুলো হয়তো খুব সহজে মিটে যায় কিন্তু হঠাৎ আসা দমকা ঝড় সব কিছু এলোমেলো করে দিয়ে যায় ।
চলবে …