সিঙ্গেল মাদার পর্ব ৩

#সিঙ্গেল_মাদার
#ফারিন
পর্ব: ০৩

সামনে নজরুল জয়ন্তী ইরিনের মঞ্চ নাটকের রিহার্সাল চলছে ।
ইরিনের হলে ফিরতে একটু লেট হয়ে গেল , রাস্তায় হাঁটছে হঠাৎ দেখতে পেল রাহাত আর সৌমিক কিছুটা দুরত্বে হাঁটছে কিন্তু রাহাতের হাত থেকে রক্ত পরছে অনেক ।
ইরিন একটু জোরে ডাক দিল
– রাহাত ভাইয়া
পেছন ফিরে দেখলো ইরিন ওরা থামলো
ইরিন কাছে এগিয়ে আসতেই বললো
– হাতের এই অবস্থা কেন ??
– না মানে !
– সৌমিক রাগ করে বললো
“সে আর কি বলবে সে মারামারি করতে গেছিল”
গায়ে অনেক জোর তো !
– ইরিন একটু হেসে ফেললো সৌমিকের বন্ধুর প্রতি কপট রাগ দেখে –
আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু এটা তো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে বাঁধতে হবে ,নয়তো রক্ত পরেই যাবে
– বাঁধার কিছু নেই
– ইরিন বাঁধা লাগবে না বোন এখনই ব্যান্ডেজ করে নিব ।
– ততক্ষণে অনেক টা রক্ত চলে যাবে আচ্ছা দাঁড়ান একটু , ইরিন ব্যাগ থেকে খাতার কাগজ বের করে কাঁটা জায়গায় চেপে ধরলো
– সৌমিক বলে উঠলো “এটা কি করছো” ??
– যেকোনো পৃষ্ঠা রক্তাক্ত জায়গায় চেপে ধরলে রক্ত পরা বন্ধ হয়ে যায় ।
– কে বললো ?
– আমি পড়েছিলাম এমনটা ।
সত্যি সত্যি রক্ত পরা বন্ধ হয়ে গেল
ইরিন ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে যত্ম সহকারে বেঁধে দিচ্ছে রাহাতের হাত মনে হচ্ছে যেন সত্যি ইরিন ওর নিজের বোন, সৌমিক অবাক হয়ে মেয়েটির করা কাজ গুলো দেখছে ।
– রাহাত চুপ চাপ থেকে বলে উঠলো আমাকে মাফ করে দিও বোন আমি অনেক বড় একটা ভুল করেছিলাম তোমাদের সাথে , আমি মিথির কাছেও ক্ষমা চেয়েছি ।
– বোন বলে ডাকলে কি বোনের কাছে ক্ষমা চাইতে হয় ?
– অপরাধ যেহেতু করেছি তাই ক্ষমা চাওয়া আমার দায়িত্ব মাফ করে দিও আমাকে ।
– “খারাপ স্মৃতি বেশি দিন ধরে রাখতে নেই তবে ভালো স্মৃতি গুলো কেও নষ্ট করে দেয়” , ঠিক যেমনটা এক গ্লাস দুধে একফোঁটা লেবুর রসের মতো ।
ইরিন হাসি মুখে বললো আমি ভুলে গেছি ভাইয়া , আপনিও ভুলে যান, আচ্ছা আসি তবে এখন ।
ইরিন চলে গেল
– সৌমিক বিরবির করে বলে উঠলো ” এ কোন ধাঁচে গড়া মেয়ে যতো দেখছি আবাক হয়ে যাচ্ছি ”
– কি মাম্মা আগেই কইছিলাম বাতাসের সুর ভালো না ।
– তোরে লাথি দিমু চল ।
বলেই ওরা হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল ।

ইরিন হলে ফিরেই সবটা বললো আলো , মিথি কে
– আলো বললো “রোমিওর সাথে দেখা হলো তবে” ।
– ইরিন দুঃখ করে বলল “হ্যা হয়েছে কিন্তু ক্যাবলা কান্ত আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল আমি আর বেশী তাকে দেখতে পায় নি ”
– আহা গো আমাদের ইরিন রানী কতো কষ্ট পেয়েছে
বলেই ওরা হাসাহাসি শুরু করলো ।

আকাশ পানে দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে সৌমিক ভাবছিল ইরিনের বড্ড গোছালো স্বভাবের কথা, মেয়েটার মধ্যে ভালো রাখার আর ভালো থাকার মতো একটা মন মানসিকতা আছে , যা অন্য সবার মধ্যে থাকে না আবার হয়তো থাকে কিন্তু খুব সহজে তা দৃষ্টি গোচর হয় না ।

এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ইরিনের নাম্বার থেকে ফোন এলো
– আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছেন ?
– বাঁচবে অনেক দিন !
– বুঝলাম না ভাইয়া !
– আসলে তোমার কথায় ভাবছিলাম ।

ইরিনের হার্টবিট যেন একটু বেশিই বেড়ে গেল

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো
– কেন জানতে পারি ??
– কিছু কিছু মেয়েদের মধ্যে ম্যাগনেটাইজম কাজ করে তাদের মধ্যে তুমি একটা ।

– হঠাৎ এভাবে বলছেন যে !

– কারোর সম্পর্কে ভালো অথবা খারাপ কমপ্লিমেন্ট করতে ইচ্ছে হলে আমি এর ওর কাছে বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি না সরাসরি বলতে পছন্দ করি ।

– আমি এভাবে সরাসরি কখনো প্রশংসা শুনি নি ।

– সবার ব্যাক্তিত্ব তো আর এক নয় ।
– সময় বলে দেবে আমার ম্যাগনেটাইজম ঠিক কতোটা কাজ করছে , সেদিন না হয় আপনার দেওয়া কমপ্লিমেন্ট টা সাদরে গ্রহণ করা যাবে ।

– আমি কথার প্যাচে ফাঁসিয়ে দিয়েছি , তুমি কি কিছু বলবে ??
– “ইচ্ছে করে কাউকে ফাঁসানো যায় না যদি সে ফাঁদে পা না দেয় ”
– সৌমিক একটু হেসে বললো “বলছো তবে তুমি ইচ্ছে করে আমার ফাঁদে পা দিচ্ছো” ??
– ইরিন নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল কথা বলতে বলতে সে কি বলে দিয়েছে
” আসলে তেমন টা না উফফ আপনি সত্যি কথা প্যাচান ”

ইরিনের এমন হযবরল অবস্থা দেখে একটু উচ্চ শব্দেই হেসে দিল
– আচ্ছা আর প্যাঁচাবো না হয়েছে এবার বলো কোনো দরকারে ফোন দিয়েছিলে ?
– হ্যাঁ আসলে রাহাত ভাইয়া কেমন আছে জানার জন্য ।
– ও ভালো আছে এখন তিনটা সেলাই পড়েছে হাতে ,ঘুমের ওষুধ দিয়েছে ডাক্তার খেয়ে ঘুমোচ্ছে ।
– রাহাতের নাম্বার লাগবে ??
– না আপনি বলে দিয়েন তাহলেই হবে আমি রাখছি ।

বলেই ফোন টা কেটে দিল
সৌমিক আনমনেই হেসে উঠলো
হয়তো রাহাতের আগমনী বার্তা সত্যি হতে চলেছে ।

রাহাত কে কেন্দ্র করে রোজ নিয়ম করে দুবেলা কথা হচ্ছে সৌমিক ও গন্ডি পেরিয়েছে তার , শুধু দুজনের বলার অপেক্ষা ।

নজরুল জয়ন্তী তে মঞ্চ নাটক শুরু হয়েছে আজ ইরিনের , সৌমিক ,আলো , মিথি সবাই দেখছে ।এমন একটা দৃশ্য আছে যেখানে একটা ছেলে ইরিনের হাত ধরে বসে আছে , সেটা দেখে সৌমিকের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল পাশেই মিথি বসে ছিল
– মিথি ও এসব নাটক করতে আসছে ??
– কেন ভাইয়া ?
– সৌমিক রাগ করে বললো “আগে জানলে আমি কখোনোই আসতাম না এমন নাটক দেখতে” বলেই উঠে চলে গেল।
– এই মিথি কি হলো রে ??
– মিথি হেসে বললো “আগুন লেগেছে বৎস প্রেমের আগুন”

ইরিনের নাটক অনেক ভালো হয়েছে সবাই তো ইরিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।
ইরিন ড্রেস চেঞ্জ করে আলো মিথির কাছে এলো
– ঐ সে কই ??
– আগুন ধরেছে বান্ধবী আগুন
– ঠিক করে বল আলো কি হয়েছে ?
– তোর যে প্রনয়ের আবেগ মাখা দৃশ্য ছিল কাজল ভাইয়ার সাথে সেটা আর নিতে পারে নি সৌমিক ভাই , রাগ করে চলে গেছে ।
– ইরিন অবাক হয়ে বলল “বলিস কি রে” !! তার সাথে দেখা করতে হবে নয়তো রাগ ভাঙবে না কিন্তু আমার বেশ পৈশাচিক একটা আনন্দ হচ্ছে এই প্রথম সে আমার জন্য জেলাস ”
হাসতে হাসতে সবাই বেরিয়ে এলো অডিটোরিয়াম থেকে ।

ইরিন ফোন দিল সৌমিক কে তিন বারের বার রিসিভ করলো
– আসসালামু আলাইকুম
– ফোন দিয়েছিস কেন ??

ইরিন যেন একটু ভিমড়ি খেল এমন ব্যাবহারে সৌমিকের এই রাগের সাথে সে একদম অপরিচিত

– কোথায় আপনি ?
– জাহান্নামে !
– এতো রাগ কেন শুনি ?
– “পুকুর পাড়ে আয় জাস্ট পাঁচ মিনিটের মধ্যে” বলেই ফোন টা কেটে দিল সৌমিক

আজ আমি গেছি রে
– ভাইয়া কি বললো ?
সব কিছু খুলে বলে ইরিন ছুটলো পুকুর পাড়ে।

সৌমিক বাইকের উপর বসে সিগারেট টানছে চোখ দু’টো একদম রাগে রক্ত বর্ন ধারন করেছে ।

ইরিনের সিগারেটের গন্ধ একদম পছন্দ না ও একটু নাক সিঁটকালো ।
সৌমিক আড় চোখে একবার দেখলো ইরিন এসেছে তবুও তাকালো না ওর দিকে ।

– সিগারেট টা ফেলে দেওয়া যায় না ?
– কেন ? খাচ্ছি আমি তোর কিসের এতো সমস্যা ?
– এতো রাগ কেন করে আছেন আমার উপরে ? কি করেছি আমি ??
– নাটক করা হচ্ছে ? কাজলের সাথে এমন ঢলে পড়ে নাটক করবি আগে বলিস নাই কেন ? তাহলে যেতাম না তোর নাটক দেখতে !!
এমন কথা সৌমিক বলবে ও ভাবতেই পারে নি , এতো বাজে ভাবে এই প্রথম সে কারোর কাছ থেকে কথা শুনছে

– ইরিনের চোখ ফেটে এবার যেন কান্না আসলো চোখ মুছে
শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো
বললো “আপনি একটু বেশি বলছেন আমি এমন কিছুই করি নি শুধু হাত ধরার একটা দৃশ্য ছিল শুধু” ।
– যা খুশি কর আমার কোনো মাথাব্যথা নেই –
– “আমার কাউকে এক্সপ্লেইন করার নেই, আমাকে যে বিশ্বাস করবে সম্পূর্ণ টাই বিশ্বাস করবে, এটাই আমার ধারণা তাই আর কিছু বলার নেই আমার, আচ্ছা আমি আসছি” ।
ইরিন চলে যেতে চাইলে সৌমিক বাইক থেকে নেমে হাত ধরে ফেলল ।
– এই হাত ধরার অধিকার শুধু আমার একমাত্রই আমার , এখানে অন্য কারোর স্পর্শ আমি মেনে নিব না কখনো !!
সৌমিক কান ধরে সরি বললো একদম বাচ্চাদের মত
ইরিন তা দেখে আর হাসি থামাতে পারলো না

– আচ্ছা এতো অধিকার কে দিল আপনাকে ??

– অধিকার জিনিস টা হাতে তুলে দেওয়ার বস্তু না , যদি নিজের অধিকার টা নিজে বুঝে না নেওয়া যায় তবে সেটা অন্য কেউ নিয়ে নেয় , আর আমি সেটা চাই না , তুমি সম্পূর্ণ টাই আমার ইরিন , ভালোবেসে ফেলেছি বড্ড তোমার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করাটা একদম শরীরে এসিড দিলে যেমন দগ্ধ ক্ষতের সৃষ্টি হয় ঠিক তেমনি ।

ইরিন মুগ্ধ হয়ে শুনছে সৌমিকের কথা , একটু আগের কষ্ট গুলো যেন কোথায় উড়ে গেছে ।
ইরিন চুপ থেকে এবার বললো
— আমিও যে এই অপেক্ষাতেই ছিলাম , অনেক ভালোবাসি আপনাকে বলেই ইরিন মুখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল লজ্জায় ।
– আমিও অনেক ভালোবাসি ।

– বাইকে ওঠো আজ দিনটাকে আমরা আমাদের মতো করে আমাদের ভালোবাসার জন্য উৎসর্গ করি ।

– কোথায় যাবো‌ ?
– চলো ক্ষনিকের জন্য না হয় আমরা একটু হারিয়ে যায় ।

চলবে ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here